তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—|| ২৫ ||
এভাবেই দিনের পর দিন পার হয়ে যেতে থাকে।আশিয়ান ঊদিতার প্রতি অনেক পসেসিভ হয়েছে।ঊদিতাও বর্তমানে আশিয়ানের সাথে প্রচুর ফ্রি।দুজন বন্ধুর ন্যায় একসাথে বেশিরভাগ সময় কাটায়।ঊদিতা সবসময় আশিয়ানের সেবাযত্নে নিয়োজিত।আশিয়ানের কখন কী লাগবে না লাগবে সব না বলতেই বুঝে যায় সে।তাদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ডিং সৃষ্টি হলেও এখনো দুজন ফিজিক্যালি ইন্টিমেট হয় নি।আশিয়ান ঊদিতাকে প্রিপেয়ার হওয়ার সময় দিচ্ছে।কারণ ঊদিতার বয়স কম।এসবের জন্য সে এখনো পাকাপোক্ত হয় নি।তবে আশিয়ান মাঝেমধ্যে কন্ট্রোললেস হয়ে যায়।তখন ঊদিতাকে নিজের খুব কাছে পেতে মন চায় তার।যতটা কাছাকাছি হলে দুজন দুজনের সাথে লেপ্টে থাকবে।
ঊদিতা এই কদিনে সেলাই কাজ খুব ভালো করে শিখে গেছে।সর্বপ্রথম সে আশিয়ানের জন্য একটা পাঞ্জাবি বানিয়ে তাতে নিজের হাতে নিজের দক্ষতা দিয়ে অনেক সুন্দর করে হ্যান্ডপেইন্ট করেছিলো।আশিয়ানকে সে দেয়নি এখনো তার বার্থডে তে গিফট করবে বলে।এই পাঞ্জাবি তৈরি করার পর আরও দুইটা ভিন্ন কালারের পাঞ্জাবি বানিয়েছে সে তার জন্য।একটাতে এম্বুশে কাজ করেছে আর অপরটিতে বিভিন্ন রঙা সুই সুতোর কাজ করেছে সে।তিনটাই ভীষণ সুন্দর হয়েছে দেখতে।
ঊদিতার কবুতররা ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে।সবগুলো ঊদিতার ন্যাওটা।ঊদিতা যখন খাবার দিতে ছাদে যায় তখন প্রায় সব কবুতরই তার কাছে এসে ঘুরাঘুরি করে নয়তো তার হাতে এসে বসে।যখন কবুতরগুলো উড়ে যায় তখন সেই দৃশ্যটা দেখে মন জুড়িয়ে যায় ঊদিতার।
ঊদিতার সবজি বাগানে লাউ গাছ,ঝিঙা গাছ, চিচিঙ্গা গাছ, এগুলো সব এ কদিনেই তরতর করে সারা মাচা আষ্টেপৃষ্টে ভরে গেছে।লালশাক,পুইশাক,সরিষা পাতার শাক,কলমি শাক,ডাটা শাক সবধরনের শাক মাঝারি আকার পর্যন্ত বড় হয়েছে।নিজের গাছের লালশাক দিয়ে চিংড়ি মাছ নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খায়িয়েছে ঊদিতা।লাউ গাছে লাউ ধরেছে সাথে প্রচুর লাউয়ের ফুল এসেছে।কয়েকটা ফুলকপি আর বাঁধাকপিও খাওয়ার যোগ্য হয়ে গেছে।বেগুন ও টমেটো প্রচুর হয়েছে।অন্য মাচায় কাঁকরোল আর ঢেঁড়শও ধরেছে।মুলা ধরেছে কতগুলো।নাগামরিচ ও কাঁচামরিচের জন্য ঠিকমতো গাছের পাতাই দেখা যায় না।আরও হরেক রকম শাকসবজি রোপন করেছে সে।
ঊদিতা সকাল বিকাল দুইবার তার বাগানের যত্ন করে।নিজের হাতে পানি দেয়,আগাছা পরিষ্কার করে।বাসার সবাই শুধু অবাক হয়ে ঊদিতার বাগানের দিকে তাকায়।এমনকি মেহমান থেকে শুরু করে সবাই ঊদিতার অনেক প্রশংসা করে।
ঊদিতা বাসার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেক কিছু তৈরি করে।পুঁথি দিয়ে টিস্যুবক্স,কলমদানি,ফুলদানি,কাগজের ফুল আরও কত কী যে তৈরি করে যা বলে শেষ করা যাবে না।ঊদিতার সবকিছু খুব সহজেই শিখে ফেলার গুনটা অসাধারণ।ঊদিতার মতো স্ত্রী পেয়ে আশিয়ান মনে মনে অনেক গর্ববোধ করে।ঊদিতার কাজকর্মগুলো দেখলে সত্যিই তার মন ছুঁয়ে যায়।
এখন বেশির ভাগ সময় রান্না বান্না ঊদিতাই সামলায়।একেকদিন ইউটিউব দেখে একেক রান্নার ভিডিও শিখে তারপর নিজে সেটা ট্রাই করে।বাচ্চাদুটো থেকে শুরু করে বড়রা সবাই ঊদিতার হাতের রান্নার ফ্যান।এমনকি তারিন আর আলেয়াও।যদিও ওরা কখনো মুখে স্বীকার করে না।
তাদের বিয়ের আড়াই মাস পার হয়ে গেছে।সবকিছু অনেক সুন্দরভাবে চলছে।আশা মাঝেমধ্যে বাসায় এসে আশিয়ানের সাথে চিপকাচিপকি করতে চায় কিন্তু ঊদিতা রণমুর্তি ধারন করে আশাকে আশিয়ানের থেকে দূরে রাখে।ঊদিতাকে দেখলে সবাই বুঝবে জেলাস কাকে বলে!আশিয়ান ঊদিতার রাগী চেহারা দেখে মনে মনে হেসে লুটোপুটি খায়।এত্ত পরিমাণ জেলাসি কেউ কী করে হতে পারে জানা নেই আশিয়ানের!
ঊদিতার রেজাল্ট বেরিয়েছে একসপ্তাহ আগে।জিপিএ ৫ না পেলেও এ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। পয়েন্ট অনুযায়ী রমজান মাস শেষে আশিয়ান নিজ দায়িত্বে ঊদিতাকে তার পরিচিত ভালো একটা কলেজে ভর্তি করে দিবে বলে ভেবেছে।তবে তাকে কলেজে যাওয়ার পারমিশন দেয় নি আশিয়ান।তার সাফ কথা সব পড়াশোনা বাসায় কমপ্লিট করতে হবে।কলেজের সকল পড়া আশিয়ান নিজে তাকে সংগ্রহ করে এনে দেবে এবং নিজে গাইড করবে ঊদিতাকে।ঊদিতাও আশিয়ানের কথা অমান্য করে নি।আশিয়ানের কথামতো বাসায়ই পড়াশোনা করবে বলে সে জানায়।
এখন রমজান মাস চলছে।আশিয়ান এখন লং টাইম অফিস করে না।সকালে গিয়ে দুপুরের পর বাসায় চলে আসে।প্রথম রমজানে ঊদিতার বাসায় আশিয়ানের পরিবারের সবার দাওয়াত ছিলো।দ্বিতীয় রমজানে আলেয়ার বাসায়।তৃতীয় রমজানে কেয়ার বাসায় ও চতুর্থ রমজানে তারিনের বাসায় ছিলো সবার দাওয়াত।এবং সর্বশেষে পঞ্চম রমজানে আশিয়ানদের বাসায় কেয়া,তারিন,আলেয়া,ঊদিতা তাদের পরিবারের সবার দাওয়াত ছিলো।রমজানের প্রথম দশদিন শুধু দাওয়াতে গিয়েই কেটেছে তাদের।
ঊদিতার প্রচেষ্টার ফলে আশিয়ান এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।শুধু আশিয়ানই নয় বাসার অর্ধেককেই এই লাইনে নিয়ে এসেছে ঊদিতা।হয় ভালোভাবে বুঝিয়ে বলে নয়তো মুখের ওপর লজ্জা দিয়ে ঊদিতা তাদেরকে নামাজী বানাতে সক্ষম হয়েছে।ঊদিতার কোরআন তেলাওয়াত শুনে এনা অনেক আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো শিখবে বলে।সে কোরআন পড়তে পারলেও ঠিকমতো সুর টানতে পারতো না।ঊদিতা তাকে অনেক যত্ন সহকারে তা শিখিয়ে দিয়েছে।পিচ্চি দুটোকেও ঊদিতা নিজে তাদেরকে সঠিক নামাজ শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় সুরা এসব শিখিয়েছে।
১৫ তম রমজান আজ,,
ঊদিতা সকালেই ঘুম থেকে ওঠে সারা রুম সুন্দর করে গুছিয়ে ছাদে গিয়ে কবুতরগুলোকে খাবার দিয়ে তারপর নিচে বাসার বাইরে এসে বাগানে সকল গাছগুলোতে পানি দিলো।আশিয়ান ঘুম থেকে ওঠে ঊদিতাকে কোথাও না পেয়ে সেও আন্দাজ করে বাগানে চলে এলো।এসে দেখে ঊদিতা গাছগুলোর পরিচর্যা করছে।আশিয়ান গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালো।পাশে কারও উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ঊদিতা।আশিয়ানকে দেখে ঠোঁটের কোণে গভীর হাসি ফুটে ওঠে তার।
আশিয়ানের চোখ যায় লাউ গাছের দিকে।প্রচুর ফুল এসেছে আর কয়েকটা লাউ তো খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেছে।আশিয়ানকে লাউ গাছের দিকে তাকাতে দেখে ঊদিতা জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-লাউ খেতে ইচ্ছে করছে আপনার?
আশিয়ান হাসিমুখে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে বললো;
আশিয়ান:-বড্ড লোভনীয় লাগছে দেখতে।সেহরীর সময় বড় মাছের মাথা দিয়ে খেতে সেইই টেস্ট লাগবে।
ঊদিতা:-যদি খেতে ইচ্ছা করে তাহলে যান নিজের পছন্দমতো একটা পেড়ে নিয়ে আসুন।এই নিন কাঁচি।
ঊদিতার বলতে দেরী হলো আশিয়ানের যেতে দেরী হলো না।আশিয়ান ঊদিতার হাত থেকে কাঁচি নিয়ে লাউয়ের মাচার কাছে গিয়ে পছন্দসই একটা বড় লাউ পেড়ে নিয়ে এলো।ঊদিতা একটা ঝুড়ি এগিয়ে দিতেই আশিয়ান ঝুড়িতে লাউটা রাখলো।ঊদিতা জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-আর কিছু খেতে চাইলে বলুন!আমি পেড়ে নিয়ে আসি।
আশিয়ান:-আচ্ছা শুনো,,আজকে কী তুমি শিমের বড়া আর বাঁধাকপির বড়া বানাবে?ইফতারে সাদা ভাতের সঙ্গে খাবো।সাথে সরিষা পাতার শাক দিয়ে টাকি মাছ ভর্তা।করবে আজ?টায়ার্ড লাগলে নাহয় থাকুক।
ঊদিতা:-আপনার এত চিন্তা করতে হবে না।সন্ধ্যায় রেডি পাবেন।এখন এসব গিয়ে আপনি পেড়ে নিয়ে আসবেন নাকি আমি পাড়বো?(জানতে চেয়ে)
আশিয়ান:-না,, না,,আমিই যাচ্ছি পাড়তে।একটা ঝুড়ি দাও তো।
ঊদিতা একটা ঝুড়ি এনে দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-এই নিন।
আশিয়ান ঝুড়ি হাতে নিয়ে শিম পেড়ে আনতে চলে গেল।ঊদিতা হাসিমুখে আশিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ঊদিতা জানে আশিয়ান শাক সবজি বা ফলটল এসব নিজহাতে পেড়ে আনতে ভীষণ পছন্দ করে।তাই ঊদিতা সবসময় তাকে দিয়েই এসব কাটায়।আশিয়ান খুশিমনেই তা করে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আশিয়ান প্রায় অর্ধেক ঝুড়ি শিম পেড়ে নিয়ে আসলো।তারপর পছন্দমতো একটা বাঁধাকপি কেটে আনলো।ঊদিতা সরিষা পাতার শাক একঝুড়ি পরিমাণ কাটলো।আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি।বাগানটা ঊদিতার হলে কী হবে বরং তা আশিয়ানের ভীষণ পছন্দের।ঊদিতা আশিয়ানের মাথা থেকে কয়েকটি পাতা তুলে ফেলে দিলো।মাচার ভেতর ঢুকেছিলো বিধায় তার মাথার ওপর পাতা পড়ে চুলে আটকে গিয়েছিল।
আরও কিছুসময় বাগানে কাটিয়ে বাসার ভেতর ঝুড়ি হাতে প্রবেশ করলো দুজন।আশিয়ান রুমে চলে গেল অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে।ঊদিতা ঝুড়িগুলো রান্নাঘরে রেখে রুমে চলে এলো।দিনের বেলা রান্নাবান্নার কোনো ঝামেলা নেই।শুধু বাচ্চা দুটোর জন্য খাবার বানাতে হয়।কারণ ওরা সিয়াম পালন করার মতো উপযুক্ত হয় নি এখনো।
ঊদিতা রুমে গিয়ে দেখে আশিয়ান শার্ট প্যান্ট পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইন ঠিক করছে।ঊদিতা এগিয়ে এসে আশিয়ানকে একটা ঘড়ি নিজে পড়িয়ে দিলো।আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ঊদিতার নাকের সাথে নাক ঘষতে লাগে।ঊদিতা ড্যাবড্যাব করে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আশিয়ান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-এভাবে তাকিয়ে কী দেখাে?
ঊদিতা:-আপনি ছাড়া কী আর এখানে ২য় কেউ আছে?তাহলে??আপনাকেই দেখছি!
আশিয়ান ঊদিতার গালে স্লাইড করতে করতে বললো;
আশিয়ান:-এত দেখাে কেন?সবসময় আমার দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো?সারাদিন রাত দেখেও মন ভরে না বুঝি?
ঊদিতা:-তাতে আপনার কী?আমার জামাই আমি দেখবো না তো কী ওই আশার মতো হাভাতে মেয়েরা দেখবে?আমি বেঁচে থাকতে এটলিস্ট জীবনেও না।জানেন,,ছেলেদের যদি পর্দা করার নিয়ম থাকতো তবে আমি আপনাকেও সবসময় বোরকা পড়িয়ে রাখতাম!
ঊদিতার কথা শুনে আশিয়ান হতভম্ব হয়ে গেছে পুরো।বলে কী এই মেয়ে?তাকে বোরকা পড়িয়ে রাখতো!কী ডেঞ্জারাস চিন্তাভাবনা!আশিয়ান খিলখিল করে হেসে ফেললো।ঊদিতা চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে আশিয়ানের দিকে।আশিয়ান ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-তার আর দরকার নেই।কোনো মেয়ে আমার দিকে তাকালে তুমি তাদেরকে যেভাবে চোখ দ্বারা ভস্ম করে দাও এতে কেউ আর আমার দিকে ভয়ে ২য় বার তাকানোর সাহস পায় না।
ঊদিতা:-আচ্ছা এসব বাদ দিন,,,অফিসে যান এখন সময় হয়ে গেছে।সাবধানে যাবেন কিন্তু।
আশিয়ান:-হুম,,আর শুনো,,তুমি কোনো ভারী কাজ করতে যেও না।রোযা রেখে এত কাজটাজ করার দরকার নেই।চুপচাপ একজায়গায় বসে থাকবে আর নয়তো শুয়ে থাকবে।জানি তুমি শুনবেনা তারপরও বলছি মনে থাকবে তো?
ঊদিতা:-জ্বী আচ্ছা।আপনার কথামতো চুপচাপ বসে থাকবো।ঠিক আছে?
আশিয়ান ঊদিতার দুগালে আলতো ভাবে চুমু খেয়ে হাসিমুখে জবাব দিলো;
আশিয়ান:-হুম ঠিক আছে!টেক কেয়ার,,এন্ড বাই।
ঊদিতাকে ছেড়ে আশিয়ান গাড়ির চাবি ও ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ঊদিতার ঠোঁটে মুচকি হাসি খেলা করছে।আশিয়ানের সাথে বিয়ে হওয়ার পর ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছে সে।আশিয়ান তার জীবনের প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।আশিয়ান তার ঠোঁটের প্রানবন্ত হাসির কারণ।ঊদিতার জীবনের আনন্দ উচ্ছ্বাস হলো সে।ভালোবাসার মানুষের করা এই কেয়ারগুলো এত মিষ্টি হয় কেন?বুঝতে পারে না ঊদিতা।আশিয়ানের প্রতিটি কথাই সে মন দিয়ে শুনে।
আশিয়ানের এখন আর ইলিয়ানার কথা মনের ভুলেও মনে হয় না।কেন সেটা বুঝতে পারে না আশিয়ান।এখন তার মনপ্রাণ ধ্যান সবকিছু জুড়ে ঊদিতা বিরাজ করে।অফিসে গেলেই ঊদিতার কথা প্রচন্ড রকমের মনে হয় তার।রমজান মাস আসার আগ থেকেই আশিয়ান অফিসের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার আগে বাসায় চলে আসতো।কারণ ওখানে ঊদিতাকে মিস করতো সে।আগে আগে বারে যেত,,বাসায় মদ কিনে রাখতো খাওয়ার জন্য।ঊদিতার সংস্পর্শে আসার পর থেকে সে বারে যাওয়া পুরোপুরি রূপে ছেড়ে দিয়েছে।মদ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে ঊদিতার অলক্ষ্যে।ঊদিতাকে জানতে দেয় নি কখনো যে সে মদ খেতো।তবে বাসায় যখনই সিগারেট খেত তখন ঊদিতা বরাবরের মতো হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে ফেলে দিতো।
তবে সিগারেট ছাড়তে একটু বেগ পেতে হয়েছে আশিয়ানের।কারণ গত ৩ বছর ধরে সিগারেট খায় সে।দীর্ঘদিন খাওয়ার জন্য সিগারেটের প্রতি একটা আসক্তি জন্মে গেছিলো তার।তবে আল্লাহর রহমতে ঊদিতা আশিয়ানকে অনেক কসরত করে সিগারেট খাওয়া ছাড়িয়েছে।বিনিময়ে হাজার চুমু খেতে হয়েছে আশিয়ানের ওই কালচে লাল ঠোঁটটিতে।এখন যখনই আশিয়ানের সিগারেটের নেশায় ধরে তখনই ঊদিতা যেখানেই থাকুক না কেন তাকে বিড়াল ছানার মতো ঝাপটে ধরে নিয়ে এসে রুমে দরজা লাগিয়ে দীর্ঘক্ষণ তার টসটসা ঠোঁট জোড়ায় চুমু খায় সে।ঊদিতা তাকে বাঁধা দেয় না কখনো।সেও আশিয়ানকে পরম আবেশে আঁকড়ে ধরে রাখে।আর কিছু করতে না পারলেও ঊদিতার ঠোঁট জোড়ার ওপর সবসময় অ্যাটাক করে আশিয়ান।এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
ঊদিতা নিচে চলে আসতেই শুনতে পেল ড্রয়িং রুমে এনা,কেয়া,তারিন আর আলেয়া কী নিয়ে যেন উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলছে।ঊদিতা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে।ঊদিতাকে দেখে এনা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলে উঠে;
এনা:-মিষ্টিভাবী জানো!আজকে আমরা চারজন শপিংয়ে যাবো।আমার প্রচুর আনন্দ লাগছে।আজকে অনেক কেনাকাটা করবো আমি।
ঊদিতা:-তাই!ভালো তো?কখন যাবে তোমরা?
এনা:-এই তো বেলা ১২ টায় বেরোব।
কেয়া:-ঊদিতা!তুমি যাবে আমাদের সাথে?
ঊদিতা আমতা আমতা করে বললো;
ঊদিতা:-মনে হয় না ভাবী তোমাদের সাথে যেতে পারবো আমি!ওনি যেতে পারমিশন দেবেন না মনে হয়!
তারিন:-ওরেব্বাবা,,।কী বিনয়ী তুমি ঊদিতা!তুমি শপিংয়ে যাবে এতে সে পারমিশন দেয়ার আর না দেয়ার কে?কই আমি তো যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যেতে পারি এতে তো তামজিদের কাছ থেকে আমার পারমিশন নিতে হয় না!স্বামীকে সবদিকে লাই দিতে নেই।পরে দেখা যাবে ওয়াশরুমে যেতে হলেও পারমিশন নিতে হবে।ঢং।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
তারিনের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঊদিতা বললো;
ঊদিতা:-ইসলামে সকল স্ত্রীকে স্বামীর সব আদেশ নিষেধ পালন করার হুকুম দেয়া হয়েছে।আর স্বামীর আদেশ না মানা মানে ইসলামের হুকুম অমান্য করা।আমার স্বামী যদি আমাকে যেতে না দেয় তাহলে তাতেও আমি খুশি আছি।কারণ হয়তো তিনি বুঝতে পারছেন যে সেখানে যাওয়া আমার জন্য কল্যানকর নয়।আল্লাহ স্বামীর অবাধ্য কোনো স্ত্রীকে পছন্দ করেন না।সো তোমার কথা শুনে আমিও যে এমন মনোভাব পোষণ করবো সে আশায় গুড়ে বালি।ওনার পারমিশন ছাড়া আমি যাবো না।
তারিন ঊদিতার কথা শুনে কিছু একটা বলতে নিলে কেয়া তাকে থামিয়ে দিলো।কেয়া হাসিমাখা মুখে ঊদিতাকে বললো;
কেয়া:-তুমি একদম সত্যি কথা বলেছো বনু।আমি সকালেই আমার ওনার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিছি।ওনি মানা করেন নি আমায়।এখন তুমিও আশিয়ানকে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে নাও।এই নাও ফোন।
কেয়া ফোন এগিয়ে দিলে ঊদিতা আশিয়ানের নাম্বারে কল লাগায়।আশিয়ান সবেমাত্র নিজের চেয়ারে বসে একটা ফাইল দেখছিলো।ফোন আসায় কেয়ার নাম্বার দেখে রিসিভ করে বললো;
আশিয়ান:-হ্যা ভাবী বলো!
ঊদিতা:-আসসালামু আলাইকুম।আমি ঊদিতা বলছি।
আশিয়ান একটু অবাক হয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল;
আশিয়ান:-ঊদিতা!তোমার শরীর ঠিক আছে তো?হঠাৎ ফোন দিলে যে?কী হয়েছে তোমার?
এদিকে ফোনের স্পিকার লাউড দেয়ায় সবাই শুনতে পাচ্ছে আশিয়ানের কথা।এনা আর কেয়া মুখ টিপে হাসছে আশিয়ানের কেয়ার দেখে।ঊদিতা লজ্জা পেয়ে গেল তাদের হাসি দেখে।আমতা আমতা করে বললো;
ঊদিতা:-না আসলে আমার কিছু হয়নি!একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।
আশিয়ান:-হ্যা বলো!এত সংকোচ করছো কেন?
ঊদিতা:-আসলে,,আজকে বড়ভাবী,এনাআপু,ওনারা সবাই শপিংয়ে যাবেন!ওনারা আমাকেও বলছেন তাদের সাথে যাওয়ার কথা।এখন আমি কী যাবো ওনাদের সাথে?(জানতে চেয়ে)
আশিয়ান একমুহূর্ত চুপ থেকে সোজাসাপ্টা বলে দিলো;
আশিয়ান:-না,,কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।বাসায় থাকো।আমি ছাড়া অন্য কারও সাথে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।আমি যেদিন নিয়ে যাবো সেদিন যাবে।
ঊদিতা শান্ত কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-জ্বী আচ্ছা।
ঊদিতার হাত কেয়া ফোন নিয়ে আশিয়ানকে বললো;
কেয়া:-আশিয়ান।দিয়ে দাও না পারমিশন।আমি আর এনা তো আছিই সাথে।তোমার বউয়ের খেয়াল রাখবো আমরা তুমি চিন্তা করো না।
আশিয়ান:-না ভাবী।ওকে সাথে নেয়ার দরকার নেই এখন।তোমরা চলে যাও।ওকে নিয়ো না।
কেয়া:-কিন্তু,,,
আশিয়ান:-কোনো কিন্তু না ভাবী।আমি মানা করছি।আমি দুপুরে বাসায় আসবো,,ওকে বাসায় থাকতে বলো।কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।(ত্যাড়া কন্ঠে)
কেয়া বিরস মুখে জবাব দিলো;
কেয়া:-আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি যখন মানা করছো তাহলে থাক।তবে ওকে সাথে নিতে পারলে খুশি হতাম।
আশিয়ান আর এ কথার বিপরীতে পাল্টা কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।কেয়া মনমরা হয়ে বললো;
কেয়া:-তোমার একরোখা জামাই মানা করে দিয়েছে।
ঊদিতা:-থাক ভাবী।ওনি যখন মানা করেছেন তাহলে আর যাওয়ার দরকার নেই।আমি রোযা রেখে হেঁটে হেঁটে শপিং করতে গেলে মিইয়ে যাবো একদম।ভালো হয়েছে ওনি মানা করেছেন।
আলেয়া ভেংচি কেটে বলে উঠে;
আলেয়া:-তুই আর তোর জামাই কত যে ভং ধরোস!জাস্ট ডিজগাস্টিং গাইজ।আমার শপিংয়ে যাওয়ার কথা শুনে তাসকিনও একবার মিনমিন করে মানা করেছিলো ঠিকই কিন্তু আমার রামধমক শুনে পরে আর মানা করে নি।ডেবিট কার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে।আর ওনাকে দেখাে,,,(ঊদিতার দিকে আঙ্গুল তাক করে) ওনার স্বামী ওনাকে মানা করায় ওনিও একদম স্বামীপরায়না মহিলাদের মতো হয়ে গেছেন।হাহ্,,,যত্তসব লোক দেখানো কারবার।
ঊদিতা:-রোযা রেখে তোমার সাথে ঝগড়া করতে মন চাইছে না।তাও বলবো সবাইকে নিজের মতো মনে করো না।তাসকিন ভাইয়া আর আমার স্বামীর মধ্যে রাতদিন তফাৎ।প্রকৃত পুরুষ মানুষ তো সেই যে নিজের স্ত্রীর কাছে যেমন শ্রদ্ধেয় বাহিরের মানুষের কাছেও তেমনি সম্মানিত ব্যক্তি।আমি আমার স্বামীকে শ্রদ্ধা করি।তাই তো তার সমস্ত কথাবার্তা শুনি আমি।তোমার মতো অবাধ্য স্ত্রী নই।যে তার স্বামীকে সম্মান করতে জানে না।
আলেয়াকে মুখের ওপর জবাব দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল ঊদিতা।আলেয়া তো রাগে ফুঁসছে।তারিন চোখ বাঁকিয়ে ঊদিতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো;
তারিন:-যত্তসব ন্যাকামি।হুহ,,,
ঊদিতা গাছ থেকে পেড়ে আনা সবজিগুলো কুটতে লাগলো।মিসেস ইয়াসমিনের মাথা ব্যথা করছে তাই তিনি রুমে শুয়ে আছেন।ঊদিতা ঝটপট কুটা বাছা শেষ করে মিসেস ইয়াসমিনের রুমে চলে গেল।মিসেস ইয়াসমিন মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।ঊদিতা জলদি গিয়ে মিসেস ইয়াসমিনের কপালে বাম ডলে দিলো।তারপর মিসেস ইয়াসমিনের মাথায় ঠান্ডা তেল দিয়ে ভালো করে মাথায় ম্যাসাজ করে দিতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর মনে হলো ওনি আরাম পেলেন।এখন আর তিনি কোঁকাচ্ছেন না।মিসেস ইয়াসমিনের মাথার চুল আলতোভাবে টেনে দিলো সে।আরাম পেয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
মিসেস ইয়াসমিন ঘুমিয়ে গেছেন বুঝতে পেরে ঊদিতা রুমে ফিরে এলো।কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে গোসল করতে।দীর্ঘক্ষণ গোসল সেড়ে তারপর বেরিয়ে এলো ঊদিতা।বারান্দায় গিয়ে ফুলগাছে পানি দিলো সে।বেশ কিছু সময় বিছানার ওপর বসে কোরআনের বাংলা অনুবাদ পড়লো মনযোগ দিয়ে।তারপর ছাদে গিয়ে আশিয়ানের কাপড়চোপড় গুলো উল্টে পাল্টে মেলে দিয়ে এলো সে।যেগুলো শুকিয়ে গেছে সেগুলো রুমে নিয়ে এসে আয়রন করলো।
দুপুর একটা বাজে।ঊদিতা যোহরের নামাজ আদায় করে রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।১২ টার দিকেই কেয়ারা শপিংয়ে চলে গেছে।কিছুক্ষণ পরে রুমে প্রবেশ করলো আশিয়ান।আশিয়ানকে দেখে ঊদিতা সালাম দিয়ে এগিয়ে এলো।আশিয়ান সালামের জবাব দিয়ে বিছানায় এসে বসলো।আশিয়ানের অনেক পানির তৃষ্ণা পেয়েছে।আর ক্লান্তিও লাগছে প্রচুর।
ঊদিতা এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিল তারপর আশিয়ানের কাছে এসে শার্টের বোতামে হাত লাগিয়ে সবগুলো বোতাম খুলে শার্টটা খুলে নিয়ে পাশে রাখলো।আশিয়ানের পরনের জুতা মোজাও খুলে দিলো।আশিয়ানের হাত থেকে ঘড়ি খুলে সেটা ড্রেসিং টেবিলের ওপর জায়গামতো রেখে দিয়ে কাভার্ড থেকে একটা ফোর কোয়ার্টার টাওজার আর একটা পাতলা গেন্জি সাথে একটা টাওয়েল এনে এগিয়ে দিলো আশিয়ানের দিকে।আশিয়ান একবার ঊদিতার দিকে তাকিয়ে কাপড় নিয়ে ধীরে ধীরে ওয়াশরুমে চলে গেল গোসল করতে।
গোসল শেষে বেরিয়ে বিছানায় এসে বসতেই ঊদিতা যত্নসহকারে আশিয়ানের মাথা মুছে দিতে লাগে।আশিয়ান ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে আছে।ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরমকন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-কী হয়েছে আপনার?শরীর খারাপ লাগছে?
আশিয়ান:-উহু,,
ঊদিতা:-নামাজ পড়েছেন?
আশিয়ান:-হু,,
ঊদিতা:-আচ্ছা তাহলে এখন শুয়ে পড়ুন!আপনাকে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
আশিয়ান পেট থেকে মুখ তুলে বললো;
আশিয়ান:-একা ঘুমাবো না।তুমি আসো!
ঊদিতা:-আচ্ছা আমিও আসছি।আপনি শুয়ে পড়ুন।
আশিয়ান বিছানায় শুয়ে পড়ে।ঊদিতা বাইরে গিয়ে মিসেস ইয়াসমিনকে একবার দেখে আসে।তিনিও ঘুমাচ্ছেন।একজন সার্ভেন্টকে সে বলে আসে মিসেস ইয়াসমিনের দিকে খেয়াল রাখতে।মিসেস তারানা ক্লান্ত তাই তিনি নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছেন।ঊদিতা সদরদরজা লক করে একজন সার্ভেন্টকে সেই দায়িত্ব দিয়ে রুমে ফিরে এলো।আশিয়ান অপেক্ষা করছে ঊদিতার।ঊদিতা দরজা লাগিয়ে ওড়না খুলে বিছানায় এসে শুতেই আশিয়ান দুহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।ঊদিতা পরম আদরে আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আশিয়ান ঘুমিয়ে গেছে।কিন্তু ঊদিতার চোখে ঘুম নেই।কারণ সে ঘুমন্ত আশিয়ানকে দেখতে ব্যস্ত।
সন্ধ্যার একটু আগে কেয়ারা শপিং থেকে ফিরলো।শপিং ব্যাগের ভারে নুয়ে পড়ছে একেকজন।ঊদিতা ইফতারি তৈরীতে ব্যস্ত।সবার পছন্দের খাবার তৈরি করেছে সে মিসেস তারানার সাথে।মিসেস ইয়াসমিনকে আজ রান্নাঘরে আসতে দেয় নি ঊদিতা।আশিয়ান তার মায়ের রুমে বসে আছে।আশিয়ানের পছন্দের সকল খাবার রান্না করে ঊদিতা দম নিলো।আযান দেয়ার পাঁচ মিনিট আগে সবাই ডাইনিং রুমে সমবেত হলো।ঊদিতা সবার প্লেটে পোলাও বুট,খেজুর,ডালের বড়া,শাকের বড়া,ফলফলাদি, গ্লাসে লেবুর শরবত,ট্যাং,রুহ-আফজা এসব সুন্দর করে ঢেলে সাজিয়ে রেখেছে।
আযান দিতেই সবাই শরবত পান করে খাবার খেতে লাগে।ঊদিতাও খাচ্ছে।ঊদিতা বাসার সব সার্ভেন্ট থেকে শুরু করে ড্রাইভার,মালি,সিকিউরিটি গার্ড সবার ইফতারি নিজ দায়িত্বে দিয়ে এসেছে।এতদিন মিসেস ইয়াসমিন যা যা করতেন এখন ঊদিতাও তাই করে।মিসেস ইয়াসমিন এতে ভীষণ খুশি।
আশিয়ান তৃপ্তির সহিত ইফতার সেড়ে ওযু করে মসজিদে চলে গেল নামাজ পড়তে।তার সাথে বাকি ছেলেরাও চলে গেল।বাবা চাচা ওনারাও গেলেন মসজিদে।এতসুন্দর দৃশ্য দেখলে মনটা আপনা আপনি ভরে যায় ঊদিতার।এরাত আর পুতুলকে সাথে নিয়ে ঊদিতা নিজের রুমে চলে এলো।ঊদিতার সাথে পিচ্চি দুইটাও ওযু করে নামাজ আদায় করলো।
বাচ্চাদেরকে ছোট থেকেই ইসলাম সম্পর্কে ভালো শিক্ষা দিতে হয়।কারণ এ বয়সটাই শিখার বয়স।তারিন এরাতের তেমন একটা খেয়াল রাখে না।সে তার রূপচর্চা,ফোন,আর বেড়াতে যাওয়া এসব নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করে।ঊদিতা সেটা লক্ষ করে নিজে এরাতের খেয়াল রাখা শুরু করেছে।তামজিদ অফিসে থাকার কারণে মেয়ের
খেয়াল রাখতে পারে না ঠিকঠাক।এরাত বাবা মায়ের এত ব্যস্ততা দেখে মনমরা হয়ে থাকতো সবসময়।কিন্তু এখন ঊদিতার সাথেই সময় কাটে তার।ঊদিতার সাথে থাকলে মা বাবার কথা বেমালুম ভুলে যায় সে।
তারিনকে কেউ এসব বুঝাতে যাওয়া আর মরুভূমিতে পানি ঢালা সমান কথা।সে এসব নীতিবাক্য এককানে ঢুকিয়ে আরেককান দিয়ে বের করে দেয়।আর এখন আলেয়াও এসে জুটেছে তারিনের সাথে।তারিনের শিষ্য সে।তারিন যা বলে সেও তাতে তাল মিলিয়ে চলে।এজন্য ঊদিতা ওদেরকে মোটেও পছন্দ করে না।
নামাজ শেষে মসজিদ থেকে আশিয়ান বাসায় ফিরলো।ঊদিতা জায়নামাজে বসে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছে।তার পাশে এরাত আর পুতুল বসে মনযোগ দিয়ে তা শুনছে।আশিয়ান টুপি খুলে ঊদিতার পাশে এসে বসলো।এরাত আর পুতুল তাদের চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে ইশারা করলো,,”হুশশশ”।আশিয়ানও মুচকি হেসে ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ থাকলো।ঊদিতা আশিয়ানকে খেয়াল করে মুচকি হাসলো।আশিয়ান সবসময়কার মতো ঊদিতার কাঁধে মাথা রেখে তার মধুর সুরে তেলাওয়াত শুনতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর তেলাওয়াত শেষে ঊদিতা এরাত আর পুতুলকে বললো রুমে গিয়ে তাদের হোমওয়ার্ক গুলো কমপ্লিট করতে।বাধ্য মেয়েদের মতো তারা চলে গেল নিজেদের রুমে পড়তে বসতে।আশিয়ানের তন্দ্রা লেগে আসছিলো প্রায় ঊদিতার নড়াচড়া টের পেয়ে ওঠে গেল সে।ঊদিতা বসা থেকে ওঠে শেলফে কোরআন রেখে বিছানার ওপর গিয়ে বসলো।আশিয়ানও ঊদিতার পাশে এসে বসে।আশিয়ান ঊদিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-তুমি কী আমার ওপর রেগে আছো?
ঊদিতা:-কই?না তো?হঠাৎ এমন মনে হলো কেন আপনার?(কৌতুহলী কন্ঠে)
আশিয়ান:-ওই যে তোমায় শপিংয়ে যেতে দিই নি এজন্য!
ঊদিতা:-আলমারি ভর্তি কাপড় চোপড়ে।আর কত কিনবো?আমি মনে মনে খুশি হয়েছি আপনি মানা করায়।ওনারাই আমায় রিকোয়েস্ট করছিলেন যাওয়ার জন্য।তাই আপনাকে ফোন করেছিলাম।আপনি তো জানেনই আমি এত বিলাসিতা পছন্দ করি না।এখন আমার যে পরিমাণ কাপড় আছে তাতে আগামী ৫ বছরও মনে হয় আর কিনতে হবে না।আপনি এত এত কাপড় কিনে দিয়েছেন সাথে বিয়েতে গিফট হিসেবেও প্রচুর কাপড় পেয়েছি এতসব কী করবো আমি বলুন!আমাকে এবার ঈদের পোষাকও কিনে দিতে হবে না।তার চাইতে ভালো হবে আমার ভাগের টাকা দিয়ে পথশিশুদের কাপড় চোপড় কিনে দিলে।
ঊদিতার কথা শুনে আশিয়ান মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ আশিয়ানের মতো ঊদিতার মনমানসিকতা একদম এক।আশিয়ান যেমন গুণ সম্পন্ন মেয়ে পছন্দ করে ঊদিতাও ঠিক তেমনি একটা মেয়ে।আশিয়ান ঊদিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিশিয়ে নিয়ে চুমু খেতে লাগে।ঊদিতা আবেশে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে আশিয়ানের আদর।
#চলবে