তোমাতে বিলীন পর্ব: ২৭

0
11520

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—২৭

আশিয়ানের পায়ের সাথে পা বেঁধে পড়ে গিয়ে শক্ত পাথরের মেঝেতে মাথা ঠুকে গোলআলুর মতো ফুলে গেছে আশার কপাল।আশার চোখের সামনে অসংখ্য লাল নীল তারা ফুটে ওঠলো।তারপর সব অন্ধকার।আশিয়ান আশার এ অবস্থা দেখে ভিলেন মার্কা এক হাসি দিলো সবার অগোচরে।আশাকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে সবাই দৌড়ে এলো একপ্রকার।তাজিম আর তাসকিন আশাকে ধরাধরি করে তুলে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিলো।সাময়িক বেহুশ হয়ে গেছে আশা।তবে ভালোই ব্যথা পেয়েছে।

আশিয়ান আফসোসের ভঙ্গিতে জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বললো;

আশিয়ান:-আহারে,, কী করে পড়ে গেল ও?চোখ কী কানার মতো আসমানে রেখে হাঁটছিলো নাকি?

আশিয়ানকে কেউই সন্দেহ করছে না।সবাই ছবি তোলায় আর ঘুরাঘুরি করায় এত ব্যস্ত ছিলো যে কেউ এদিকটায় খেয়াল করে নি।আরেকটা কারণ হলো তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই।সবাই এটা স্বাভাবিকই মনে করছে কারণ আশা অনেক উঁচু হাইহিল পড়েছে।হয়তো বেখেয়ালিতে হাঁটতে গিয়ে উষ্টা খেয়ে পড়ে গেছে।ঊদিতা এখনো আশিয়ানকে একপাশ থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।ঊদিতার এখনও ভয়ে কলিজা লাফাচ্ছে।কারণ এত জোরে ধাক্কা খেয়ে যদি সে পড়ে যেত তাহলে আজ তাকে নির্ঘাত হসপিটালে এডমিট করা লাগতো।আশিয়ান ঊদিতার কোমড় শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে ড্রামা দেখছে। আশিয়ানের সাপোর্ট পেয়ে ঊদিতার ভয় কেটে গেল।

আশিয়ান মুচকি হেসে মুখ বাঁকিয়ে মৃদু বিরবিরালো,,”একটা প্রবাদ আছে না!টিট ফর ট্যাট,,,আই মিন টু সে,ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়!আমার বউকে কষ্ট দিয়ে তুমি এত সহজে পার পাবা না চান্দু।এতই যদি হাবাগোবা হতাম তাহলে আজ মাফিয়া কিং হতে পারতাম না।তুমি চলো ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়।বাঘের গুহায় এসে নাচানাচি করার ফল এটা।বলদ কোথাকার!”

তাশজিদ আশার মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হুশ ফেরালো।আশা চোখ খুলে ব্যথার চোটে কান্না করে দিলো।তাজিম কোথা থেকে গিয়ে জানি একটা মলম আর একটা প্যারাসিটামল নিয়ে এলো।তারপর আশাকে তারিন মলম লাগিয়ে দিলো ব্যথাপ্রাপ্ত স্থানে।হাতের কনুই আর হাঁটুও ছিলে গেছে তার।পানি দিয়ে প্যারাসিটামলটা খেয়ে নিলো সে।

আশা নিজেও বুঝতে পারছে না সে কীভাবে পড়ে গেল!কারণ আশিয়ানকে সে একটুও দেখে নি।তাই কাউকেই সন্দেহ করতে পারছে না আশা।পড়ে মনে মনে ভেবে নিলো যে সে নিজে থেকেই হয়তো পড়ে গেছে।হয়তো ঊদিতাকে ফেলে দেয়ার খুশিতে এত বেশি এক্সাইটেড ছিলো যে তাকে ধাক্কা মারতে গিয়ে সেই খুশিতে নিজেই পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।এমনটাই হবে, তাছাড়া আর কিছু না।

ঊদিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে আশাই তাকে ধাক্কা মেরেছে ফেলে দেয়ার জন্য।আশিয়ান সত্যিই বলে,ও আসলেই একটা জোঁক!ঊদিতা ভয়ানক শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশার দিকে।ঊদিতার চেহারার দিকে তাকিয়ে আশা একটা ঢোক গিলে চোরা চোখে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।মি.মোরশেদ শান্তনা দেয়ার ভঙ্গিতে বললেন;

মি.মোরশেদ:-চিন্তা করো না মামণি।ওই তো তারিন মা প্লাস্টার করে দিয়েছে।দ্রুতই তুমি ভালো হয়ে যাবে।

মিসেস তারানা:-একটু দেখে শুনে চলবে তো নাকি!কী দরকার ছিলো এত উঁচু জুতো পড়ে আসার?এসবের জন্যই এত বড় ব্যথা পেলে।

মি.এনামুল:-হাঁটলেই ঠিক হয়ে যাবে সব।এটা তেমন একটা বড় কিছু নয় মা।উঠে হাঁটো দেখবে ভালো লাগবে।

একেকজন একেক কথা বলছেন।আশা চুপচাপ বসে আছে।আশিয়ান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।কিছু মানুষ জটলা করে দেখতে আসছে যে এখানে কী হয়েছে!তারিন আর এনার সাহায্যে আশা বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে আস্তে ধীরে হাঁটতে লাগলো।আশিয়ান ওসব পাত্তা না দিয়ে ঊদিতার হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বললো;

আশিয়ান:-এসব ড্রামা দেখতে হবে না তোমার।তুমি আইসক্রিমগুলো খাও নয়তো গলে যাবে।

ঊদিতা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে আইসক্রিম হাতে নিয়ে খুলে খেতে লাগে।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে একটা দোলনায় বসিয়ে দিলো।এই স্থানটা একটু নির্জন আছে।যাও মানুষ আছে কয়েকজন ওনারা সব মেয়ে আর মহিলা অথবা বাচ্চা।

ঊদিতা আশিয়ানকে আইসক্রিম খেতে বললে আশিয়ান ঊদিতার আধখাওয়া আইসক্রিম থেকে একটুখানি খেলো।ঊদিতা লজ্জায় লাল হয়ে মুচকি হাসলো।আশিয়ান ঊদিতাকে আরও লজ্জা দিয়ে বললো;

আশিয়ান:-এখনই এত লজ্জা পেতে হবে না।কিছু লজ্জা রাতের জন্য জমিয়ে রাখাে।আই এম এগারলি ওয়েইটিং ফর দিস নাইট।আজকের রাতটা হবে একান্তই তোমার আমার!(ঘোরলাগা কন্ঠে)

ঊদিতা লজ্জায় আরও লাল হয়ে গেছে পুরো।আশিয়ান মৃদু হেসে ঊদিতার তুলতুলে নরম গালগুলো আলতো ভাবে টেনে দিলো।ঊদিতা শক্ত করে আশিয়ানের হাত ধরে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে।আজকের মতো আশার চ্যাপ্টার ক্লোজ।এই অবস্থায় আর ঊদিতার সাথে লাগতে আসবে না সে।ভালোই শিক্ষা হয়েছে।

আইসক্রিম খাওয়া শেষে আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে পছন্দের রাইডে চড়তে চলে এলো।ঊদিতা রোলার কোস্টার দেখে ভয় পেয়ে গেছে।কী যে স্পিডে চলছে তা দেখেই ঊদিতার মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো।আর এটাতে উঠলে কী হবে তা ভাবতে পারছে না সে।আশিয়ান বারবার আশ্বস্ত করতে লাগলো ঊদিতাকে।কিন্তু ঊদিতা সাফ সাফ মানা করছে।আশিয়ান শুনলো না সে টিকেট কাটতে গেল।রোলার কোস্টারে আশিয়ান,ঊদিতা,তারিন,এনা,তাশজিদ,তাজিম আর তাসকিন আলেয়া চড়বে।বাকিরা এসব ভয় পায়।আর আশা চাইলেও উঠতে পারবে না।কারণ সে অসুস্থ।

আশিয়ান ঝটপট টিকিট কেটে এলো।আশিয়ানকে পার্কের সবাই চেনে তাই টিকিট কাটতে তার মোটেও বেগ পেতে হচ্ছে না।ঊদিতা বারবার মানা করার সত্ত্বেও আশিয়ান নাছোড়বান্দার মতো ঊদিতাকে নিয়ে রোলার কোস্টারে উঠলো।বাকিরাও ওঠলো সাথে।রোলার কোস্টারের সিটগুলো সব ভর্তি হয়ে যেতেই কোস্টারটি চলতে স্টার্ট করে।ঊদিতা ভয়ে আশিয়ানকে দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে চুপচাপ।কোস্টারের গতি বাড়তেই উত্তেজনায় কয়েকজন উওওও বলে চিৎকার করে উঠে।সবাই ইনজয় করছে ঊদিতা বাদে।সে ভয়ে দোয়াদরুদ পড়ছে বিরবির করে।আশিয়ানকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে এত জোরে ধরেছে যে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আশিয়ান পালিয়ে যাবে।সিটবেল্ট বাঁধা তারপরও এত ভয় পাচ্ছে।

স্পিড যখন পুরোপুরি বেড়ে গেল ঊদিতা তখন ভয়ে কান্না করে দিছে।আশিয়ান তো হাসতে গিয়েও পারছে না ঊদিতার কান্না দেখে।আতঙ্কে ঊদিতার মুখ নীল হয়ে যাচ্ছে।আশিয়ান শক্ত করে ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা চিৎকার করে বললো;

আশিয়ান:-ভয় পেয়ো না ঊদিতা।আমি আছি তোমার সাথে!এই দেখো কত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি তোমায় আমি!

ঊদিতা কিছুটা আশ্বস্ত হলো ঠিকই কিন্তু তার ভয় কাটলো না।সবাই ইনজয় করছে রাইডটাকে।আশিয়ানও করছে।একমাত্র ঊদিতাই নিরামিষ।সে তো শুরু থেকেই চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

রাইড শেষে নেমে এলো ওরা।আশিয়ান ঊদিতাকে ধরে ধরে একটা বেঞ্চে নিয়ে বসিয়ে পানির বোতল হাতে দিলো।ঊদিতার সারা দুনিয়া চক্কর দিচ্ছে।মাথা ঘুরছে তার অনেক।আশিয়ান পানির বোতল দিতেই ঊদিতা ঢকঢক করে পানি খেয়ে অর্ধেক বোতল খালি করে ফেললো।আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভার করে বললো;

ঊদিতা:-এরপর আমি এরকম ভয়ঙ্কর কোনো রাইডে চড়বো না বলে দিলাম।জোর করলে আপনার সাথে আর কখনো কথা বলবো না আমি।

আশিয়ান মুচকি হেসে বললো;

আশিয়ান:-আচ্ছা ঠিক আছে।আর জোর করবো না তোমায়।

ঊদিতা একটু স্বস্থির হতেই আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো আশেপাশে।এরপর সবাই মিলে ঠিক করলো নৌকায় উঠবে।আশিয়ান আবারও গিয়ে টিকিট কাটলো।ঊদিতা ও তার নিজের জন্য আলাদা একটা বোট নিলো সে।সবাই বোটে উঠলো।আশিয়ান আগে ওঠে তারপর ঊদিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।ঊদিতা সাতপাঁচ না ভেবে আশিয়ানের হাত ধরে নৌকায় উঠে।দুজন পাশাপাশি বসতেই আশিয়ান পা দিয়ে বোট চালাতে লাগে ধীরে ধীরে।ঊদিতার অনেক ভালো লাগছে পরিবেশটা।আশেপাশে তাদের পরিবারের লোকজন ছাড়াও আরও অনেকে আছে।আশিয়ান ঊদিতাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।ঊদিতা স্বপ্নীল চোখে হাসিমুখে আশিয়ানের দিকে তাকাতেই আশিয়ান মুচকি হেসে ঊদিতার গালে আলতো ভাবে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিলো।

ঊদিতা আবারও লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকালো।আশিয়ান মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইছে।ঊদিতা আস্তে করে আশিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে মুহূর্তটাকে অনুভব করতে লাগলো।পড়ন্ত বিকেলে রোদের তীর্যক রশ্মি এসে লেকের পানিতে পড়ে সোনার মতো জ্বলজ্বল করছে।আশিয়ান রোমান্টিক গলায় গান গাচ্ছে তার অপরূপ খোলা কন্ঠে,

একটু কাছে এসে
সূর্যামুখী হাসি হেসে,,
স্বপ্নীল পরিবেশে
হুম,,বিকেল বেলার শেষে,,
বলেছিলে ভালোবাসি,,
উহুম,,একটু,,,
তারই পর থেকে
ভালোবেসে তোমাকে
দিনকে বলি রাত
রাতকে বলি দিন
এভাবে আমি আজ
তোমাতে বিলীন।

ঊদিতা মুচকি হাসলো আশিয়ানের গান শুনে।নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছে।ইশশ,,,সময়টা যদি এভাবেই থমকে যেত!খুব কী খারাপ হতো তবে?জানা নেই ঊদিতার।ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকলে দুনিয়ার সবকিছু সুন্দর মনে হয় কেন?আগে তো এত মুগ্ধতা নিয়ে কিছু দেখতো না ঊদিতা!তবে এখন কেন সবকিছু এত অপরূপ মনে হয়?তারমানে হলো সে প্রেমে পড়েছে।এটা মাথায় আসতেই আবারও লজ্জায় লাল হলো ঊদিতা।আশিয়ান সেটা খেয়াল করে বললো;

আশিয়ান:-বুঝতে পারি না এত লজ্জা আসে কোথা থেকে তোমার?সামান্য কারণে এত লাল নীল হলে তো হবে না সুন্দরী,আগে কী বলেছিলাম ভুলে যেও না।রাতের জন্য প্রিপেয়ার থেকো।আমি চাই আজ পবিত্র একটি দিন আমাদের পবিত্র সম্পর্কের সাক্ষী হয়ে থাকবে।বুঝেছো?

ঊদিতা শেষ লজ্জায়।তার এখন ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে।এত লজ্জা কেউ কাউকে দেয় শুনি?লোকটা এত ঠোঁটকাটা কেন?বুঝতে পারে না ঊদিতা।এসব কথা এভাবে কেউ বলে!অজানা আশঙ্কায় দুরুদুরু করছে তার বুকটা।ধিরিম ধিরিম শব্দে ঢাক বাজাচ্ছে তার হৃৎপিণ্ডটা।উফফ,,,অসহ্য এক অনুভূতি!

নৌকা রাইড শেষে আরও বেশ কয়েকটা পছন্দের রাইড চড়লো ওরা।সময়টা খুব ভালোই কাটলো সবার।ঘুরে ফিরতে গিয়ে খিদে লেগে গেল সবার। একটা রেস্তোরাঁতে ওঠে খেয়ে নিলো সবাই।বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।তারপরও বাসায় রান্না করাই আছে সেগুলো গরম করে ডিনারে খেয়ে নেয়া যাবে।আজ আশা আর কিছুই করতে পারলো না ঊদিতা আর আশিয়ানের।পরের দিন আশিয়ানের এক ফুপ্পির বাসায় সবার দাওয়াত আছে।দুপুরের খাবার ফুপ্পির বাসায় খেয়ে বিকেলে আশিয়ানের বন্ধু আসিফের বাসায় দাওয়াতে চলে যাবে সবাই।

ঊদিতা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই বাসায় এসে সোজা রুমে চলে গেল।ঊদিতার পিছন পিছন আশিয়ানও রুমে এলো।ঊদিতা বোরকা খুলে বিছানার ওপর আরাম করে বসেছে।আশিয়ান এসে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে নিলো।ঊদিতা ক্লান্তিতে চোখ মুদে ফেলেছে।

আশিয়ান পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে ঊদিতার পাশে বসে বাচ্চাদের মতো ঊদিতাকে একপ্রকার তোলে নিয়ে নিজের কোলে বসালো।আচমকা এরকমটা করায় ঊদিতা হকচকিয়ে গেল পুরো।আশিয়ান কিছু না বলে ঊদিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধের কাপড় সরিয়ে সেখানে নাক ঘষতে লাগে।ঊদিতা থেকে থেকে কেঁপে ওঠছে আশিয়ানের এমন করায়।ঊদিতা আশিয়ানের গালে হাত রাখলো।আশিয়ান এরকম তার নাক ঘষতে ঘষতেই ঊদিতাকে বললো;

আশিয়ান:-রাতে বিছানায় আসার আগে পরনের কাপড় চেঞ্জ করে একটা নাইটি পড়ে নিয়ো।

ঊদিতা:-নাইটি কোনটা?ওই যে সেদিন আমাকে পড়িয়ে দিয়েছিলেন শর্ট পাতলা হাতাবিহীন ড্রেস ওটা?(জানতে চেয়ে)

আশিয়ান:-হুমম,,ওসব অনেকগুলো আছে আলমারিতে।কালোটা পড়বা তুমি আজ।

ঊদিতা:-না পড়লে হয় না?(করুন স্বরে)

আশিয়ান ঊদিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-উহুম,,,পড়তে হবে!এখন থেকে রোজ রাতে পড়বে।এক্সট্রা কোনো কথা হবে না।

ঊদিতা আর কিছু বললো না।আশিয়ানের ঘাড়ে ও পিঠে হাতদ্বয় রেখে চুপ করে বসে আশিয়ানের চুমু গুলো অনুভব করছে সে।কিছুক্ষণ পর আশিয়ান মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-আচ্ছা,তোমার ওজন কত?

ঊদিতা আশিয়ানের প্রশ্ন শুনে একটু অবাক হলো। বুঝতে পারলো না সে তার ওজন দিয়ে কী করবে!ঊদিতা অনিশ্চিত ভঙ্গিতে বললো;

ঊদিতা:-কী জানি আমার ঠিক মনে নেই।এতদিন ধরে আর ওজন মাপাইনি।তবে ক্লাস টেনে ওঠার সময় আমার ওজন ৫০ কেজি ছিলো।এখন কমেছে না বেড়েছে বলতে পারবো না।

আশিয়ান:-ওহহ,,,এজন্যই তোমাকে কোলে নিলে অনেক হালকা লাগে আমার কাছে।এত কম ওজন হলে কেমনে হবে।পরে আমার বাচ্চা কাচ্চারা তোমার মতো চিকনা চাকনা হবে।আমার গুলুমুলু বেবি অনেক পছন্দ।

ঊদিতা হেসে ফেললো আশিয়ানের কথা শুনে।এক লাজলজ্জাবিহীন লোকের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।

ঊদিতা:-কী যে বলেন না আপনি!আমার সাথে বাচ্চা কাচ্চার কী সম্পর্ক?

আশিয়ান:-বোকা মাইয়া!তুমি যদি ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়া না করো তাহলে তোমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে কী করে?আর তুমি শুকনো হলে তো তোমার পেটে যে আমার সন্তানরা বেড়ে ওঠবে তখন ওরাও তো তোমার মতো হালকা পাতলা হয়ে জন্ম নেবে!কারণ তোমার পেটে তারা বেড়ে ওঠার মতো এনাফ স্পেস পাবে না।

ঊদিতা না বুঝেই জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-সবই বুঝলাম।কিন্তু বাচ্চা আসবে কীভাবে?আমি তাে জানি না!আর ভাবীও তো আমায় বাচ্চাদের ব্যাপারে কিছু বলে নি।

আশিয়ান কুটিল হেসে ঊদিতার কানের লতিতে আলতো কামড় দিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললো;

আশিয়ান:-সবকিছু ভাবীকে বুঝিয়ে দিতে হবে না।আমি তো আছি।আজ রাতেই প্র্যাকটিক্যালি সব বুঝিয়ে দিবো তোমায়।তখন তুমি এ টু জেড সব বুঝে যাবে।

ঊদিতার শরীর জুড়ে এক ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত বয়ে গেল যেন।আশিয়ানের কথা শুনে হিম হয়ে এলো তার গা।আশিয়ানের ইঙ্গিতপ্রাপ্ত কথাগুলো সে ঠিকই বুঝতে পারছে।

🌸🌸🌸

বেচারি আশা আজকে আর বাসায় যায় নি।ভালোই ব্যথা পেয়েছে সে।মাথায় যে গোলআলুটা হয়েছে ওটার ব্যথায় বাসায় আসার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেছে আশা।ওকে আর কেউ ডিস্টার্ব করে নি।তাশজিদ আর তাজিম বাসায় না এসে ফ্রেন্ডদের সাথে অন্য কোথাও চলে গেছে বেরাতে।বাকিরা বাসায় নিজের রুমে শুয়ে বসে রেস্ট করছে।

রাত প্রায় ১১ টা বাজে তখন,
আশিয়ানের কথামতো ঊদিতা কালো রঙা একটা সফট সিল্কের বেশ পাতলা হাতাবিহীন শর্ট নাইটি গায়ে জড়ালো।বিছানার কাছে আসতেই রুমে কারও প্রবেশের পর দরজা বন্ধ করার শব্দ পেয়ে ঝট করে সেদিকে তাকালে আশিয়ানকে দেখতে পেল ঊদিতা।আশিয়ান ঊদিতার দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে।আশিয়ান কাছে আসতেই ঊদিতা জলদি বিছানার ওপর চলে গেল।একটা চাদর দিয়ে নিজেকে ঢাকার বৃথা চেষ্টা করলো সে।আশিয়ান ঠোঁট এলিয়ে নেশাময় হাসি দিলো।ঠোঁট কামড়ে মাতাল করা কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-ইউ আর লুকিং সো হট বেবি!কাম অন ইনটু মাই আর্মস,,সুইটহার্ট!

মৃদু হেসে বিছানায় ওঠে পা তুলে বসে সে।তারপর ঊদিতাকে ধরে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো।ঊদিতা ভরকে গেল যেন।আশিয়ান ঊদিতাকে আস্তেধীরে কনভিন্স করে নিচ্ছিলো।ঊদিতার ভয় কিছুটা কেটে যেতেই আশিয়ান আলতোভাবে নিজের ঠোঁট জোড়া ঊদিতার ঠোঁটে মিশিয়ে নিয়ে ধীরলয়ে চুমু খেতে থাকে।আস্তে আস্তে আশিয়ানের করা স্পর্শগুলো গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে।ঊদিতা যেন এক অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে।আশিয়ান নিজের পরনের গেন্জিটা একটানে খুলে নিচে ফেলে দিয়ে আবারও ঊদিতাকে আদর করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

আজ আর দুজনের মধ্যে কোনো বাঁধা নেই।অবাধে বিচরণ চলছে দুজন দুজনার মাঝে।এত ভালোবাসাময় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষরাতে ঊদিতা জ্ঞান হারালো।

🌺🌺🌺

পরেরদিন সকালটা আশিয়ানের কাছে অনেক মিষ্টি ছিলো।এই রাতটা তার কাছে অনেক মূল্যবান ছিলো এককথায়।এই প্রথম কোনো নারীর এতটা কাছে ছিলো সে।ঘুমন্ত নারীটির গালে একটা চুমু খেলো আশিয়ান।এ সরলমনা মেয়েটিই যে তার অর্ধাঙ্গিনী।যাকে আশিয়ান নিজের সর্বশ্ব দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছে।ঊদিতাকে ঘুম থেকে জাগালো না সে।ঊদিতার গলার কালচে লাল হয়ে যাওয়া লাভবাইটগুলোতে আশিয়ান হাত বুলিয়ে দিলো।

আজ ঊদিতার ঘুম ভাঙলো সাড়ে নয়টার দিকে।এত ধকল সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গেছে সে।ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছে না।বিছানা ছেড়ে কোনোমতে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই গোসল করে চলে এলো সে।এসে আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।আশিয়ান সেই সকালেই ওঠে গোসল সেড়ে নিয়েছে।ঊদিতা ওঠে যাওয়ায় আশিয়ান নিচে গিয়ে তার জন্য ভারী কিছু নাশতা নিয়ে এলো।ঊদিতার ক্লান্তিমাখা মুখটা দেখে আশিয়ানের বুকের ভেতর ছ্যাৎ করে উঠে।নিজের কাছে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার।এমনটা না করলেও তো হতো!কী এমন ক্ষতি হতো নিজেকে একটু কন্ট্রোল করলে?

আশিয়ান নিরব থেকে ঊদিতাকে মুখে তুলে নাশতা গুলো খায়িয়ে দিলো।নিজের ওপরই রাগ উঠছে তার এখন।আজ তার জন্য মেয়েটা অসুস্থ হয়ে গেছে।ঊদিতা বুঝতে পারলো আশিয়ানের মুখ ভার থাকার কারণ।আশিয়ান বসা থেকে ওঠতে নিলে ঊদিতা তার হাত টেনে ধরে।আশিয়ান একটু ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঊদিতার গলায় কপালে হাত রেখে বললো;

আশিয়ান:-তোমার কী ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ঊদিতা?আ’ম সো সরি!আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ!আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতটা উইক হয়ে পড়বে।(করুন কন্ঠে)

ঊদিতা আশিয়ানের হাতে চুমু খেয়ে আশ্বস্ত করে বললো;

ঊদিতা:-আমি সুস্থই আছি।এত গিল্টি ফিল করার কিছু নেই।আপনিই না বললেন এরকমটা স্বাভাবিক!তবে এখন এরকম করছেন কেন?

আশিয়ান:-আমার ওপর তোমার কোনো অভিযোগ নেই তো?

ঊদিতা:-উহুম,,,অভিযোগ থাকবে কেন?আমি না আপনাকে ভালোবাসি!

আশিয়ান ঊদিতার কথা শুনে ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে তার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।নিজেকে এখন ভারমুক্ত মনে হচ্ছে।

ঊদিতাকে আশিয়ান ব্যথানাশক ঔষুধ খায়িয়ে দিলো।এতে কিছুটা সুস্থ অনুভব করছে ঊদিতা।আশিয়ান মানা করেছিলো একবার যে আজ দাওয়াতে যাবে না।কিন্তু ঊদিতা বাধ সাধলে রাজী হলো।আশিয়ান হলো তাদের পরিবারের ও আত্নীয় স্বজনদের সবার মধ্যমণী।সে না থাকলে সব অকেশানই পানসে মনে হয়।আর আজ সে দাওয়াতে না গেলে সবার মনখারাপ থাকতো।তাই ঊদিতা তাকে যেতে রাজী করালো।

ঊদিতা আজ নরমাল লিনেন কাপড়ের ঢিলাঢালা ফুলহাতা লং রাউন্ড ড্রেস পড়লো সাদার মধ্যে পারপল কালার ছোট ছোট ফুলের ডিজাইনের।সাথে অনেক ঢোলা প্লাজু ও বিরাট বড় ঘের দেয়া সেইম ডিজাইনের হিজাব ও নেকাব।ঊদিতাকে অনেক সুন্দর লাগছে এই ড্রেস আপে।আশিয়ানও ঊদিতার মতো ম্যাচ করে সেইম পাঞ্জাবি পাজামা পড়েছে।দুজনকেই ভীষণ কিউট কাপল লাগছে।

রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো ওরা।ঊদিতার একহাত আশিয়ান শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।এই ট্রেডিশনটা যে সেই বিয়ের শপিংয়ের দিন শুরু হয়েছিলো তা আজও বহাল আছে এবং আজীবন থাকবে।মৃত্যুর আগ অবধি ঊদিতার হাত ছাড়বে না আশিয়ান।

বিরিয়ানির মধ্যে এলাচি হিসেবে আশা তো আছেই।এই মেয়েটাকে আল্লাহ কেন যে তাদের পরিচিত করে পাঠালেন বুঝতে পারে না আশিয়ান।কারও জীবনটা তেজপাতা করে দেয়ার জন্য জোঁকটা একাই একশো।বিরক্তিকর একটা মেয়ে।

এত ব্যথা পাওয়ার পরও বেহায়া মেয়েটা এসে আশিয়ানের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আশিয়ানকে ইমপ্রেস করার জন্য হুদাই হা হা হি হি করছে।ঊদিতা ক্ষেপে গিয়ে আশিয়ানকে অন্য পাশে নিয়ে এসে আশাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো;

ঊদিতা:-শুনুন,, (আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে) আপনি আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের ধারেকাছেও যাবেন না বলে দিলাম।আর যেগুলো বেহায়ার মতো এসে ধারে ভিড়বে সেগুলোকে আমি দেখে নিবো।ছ্যাঁচড়ামি পুরোদমে ছুটিয়ে দিতে জানি আমি।আমি যেমন ভালোর ভালো,তেমনি খারাপের জম।(প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে)

আর কেউ না বুঝলেও আশা ঠিকই বুঝেছে যে ঊদিতা এগুলো তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে।রাগে পিত্তি জ্বলে উঠলো তার।কিন্তু কিছু বলতে পারলো না।তবে ঊদিতাকে জব্দ করার বুদ্ধি আতিপাতি করে খুঁজতে লাগলো সে।ঊদিতাকে সে দেখে নেবে।

আশিয়ানদের ফুপ্পির বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে রওনা দিলো ওরা সবাই।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসে সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট করলো।ঊদিতা আশিয়ানের সাথে টুকটাক কথা বলছে।আশিয়ান ঊদিতাকে খাওয়ার জন্য চিপস চকোলেট এসব কিনে দিলো।কারণ তাদের ফুপ্পির বাসায় অনেকটা পথ অতিক্রম করে যেতে হবে।আশিয়ান আবারও গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগে ঊদিতার ঠোঁটে আলতো একবার স্পর্শ করলো।তারপর নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে ড্রাইভ করতে লাগে।ঊদিতা মুচকি হাসলো বাহিরের দিকে তাকিয়ে।

প্রায় দেড়ঘন্টা পর ওরা তাদের ফুপ্পির বাসায় পৌঁছে গেলো।আশিয়ানের ফুপ্পি ফাহমিদা ভীষণ আন্তরিক মানুষ।তিনি ঊদিতাকে অনেক পছন্দ করেন।আর আশিয়ান তো ওনার কলিজার টুকরো ভাতিজা।তাদের অপেক্ষায় তিনি বাইরেই দাঁড়িয়ে আছেন।গাড়ি পার্ক করে ঊদিতাকে নিয়ে আশিয়ান নামতেই তিনি ছুটে এসে তাদের জড়িয়ে ধরলেন।আশিয়ানের পরিবারের বাকিরাও ১০-১৫ মিনিট আগে এসে পৌঁছেছেন।সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছেন।আশিয়ান আর ঊদিতাকে নিয়ে তিনি বাসার ভেতর প্রবেশ করলেন।ঊদিতা ও আশিয়ান বড়রা সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো সবার সাথে।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে সোফায় বসলো।

ফাহমিদার মেঝো মেয়ে রিনা আবার আশিয়ানের ওপর ক্রাশিত।অবশ্য সে আশার মতো এত বেহায়া টাইপ নয়।আশিয়ান তাকে বোন হিসেবে পছন্দ করে।রিনা এসেই আশিয়ানকে ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরলো।আশিয়ানের সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করতে লাগলো সে।আশিয়ানকে রেখে একে একে সবাইকে হাগ করলো।কতদিনপর সবাইকে দেখতে পেয়েছে।খুশিতে সে আত্মহারা।

ঊদিতা শীতল দৃষ্টিতে আশিয়ানের দিকে তাকালো একবার।আশিয়ান ঊদিতার কানে কানে বললো;

আশিয়ান:-রাগ করো না ও সম্পর্কে আমার বোন হয়।আর ও এমনই তবে ওই জোকটার মতো নয় নিশ্চিত থাকতে পারো।

ঊদিতা কিছুই বললো না।হাসিমুখে ফাহমিদার বড়ছেলে রবির বউ দিবার সাথে কথা বলতে লাগলো।

আশিয়ান ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো।ঊদিতাকে বলে ওয়াশরুমে গেল সে।ঊদিতা খেয়াল করলো না আশিয়ান যাওয়ার মিনিট দুয়েক পর আশাও পিছু পিছু সেখানে চলে গেল।

হঠাৎ ঊদিতার টনক নড়ে কারণ আশেপাশে আশা নেই। আর আশিয়ান তো ওয়াশরুমে গেছে।ঊদিতা শিওর যে আশা আশিয়ানের পিছু পিছুই গেছে।সবাই গল্প করতে ব্যস্ত।ঊদিতা ড্রয়িং রুম ছেড়ে আন্দাজ করে অন্যান্য রুমগুলোতে চোখ বুলাতে লাগে।হঠাৎ একটা বেডরুমের ভেতর আশার কাপড়ের কোণা দেখতে পায় ঊদিতা।ধীরগতিতে সেদিকে এগিয়ে যায় সে।

আশিয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আশাকে দেখতে পায়।তীব্র বিরক্তিতে ছেয়ে যায় তার চোখ মুখ।এতটা ছ্যাঁচড়া কী করে হতে পারে কেউ তা জানা নেই আশিয়ানের!আশা আশিয়ানকে ইমপ্রেস করতে ভুবন ভোলানো এক হাসি দিলো।কিছু বলতে বলতে এগিয়ে যাবে এমন সময় ঊদিতা এসে হাজির।আশার দিকে ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো;

ঊদিতা:-আপনি এখানে কী করছেন?

আশা থতমত খেয়ে গেল।কিছু বলার মুখ নেই তার।ঊদিতা তার জবাবের আশায় না থেকে আশিয়ানের কাছে এগিয়ে এসে আশিয়ানের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে এলো চুপচাপ।বেরিয়ে আসার আগে আশাকে শান্ত কন্ঠে থ্রেড দিয়ে বললো;

ঊদিতা:-ফারদার আমার হাসবেন্ডের আশেপাশে যদি ঘেঁষছেন আপনি তবে আপনি এই ঊদিতার ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পাবেন মাইন্ড ইট।বেহায়ার মতো বিবাহিত লোকের পিছু না পড়ে থেকে অন্য কাউকে গিয়ে ইমপ্রেস করার ট্রাই করুন,তাতে লাভ হবে।আরেকবার ওনার আশেপাশে দেখলে ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো।

আশা হতবাক দৃষ্টিতে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ঊদিতা তাকে পাত্তাই দেয় নি এমন একটা ভাব নিয়ে আশিয়ানকে নিয়ে সেখান থেকে এসে ড্রয়িং রুমে সবার সাথে বসে নরমালি আড্ডা দিতে লাগলো সে।

সবাই মিলে একসাথে গল্প গুজব করে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেড়ে নিলো।তারপর বিকেল পর্যন্ত চললো সবার আড্ডা দেয়া।ফাহমিদা আলেয়া আর ঊদিতাকে ঈদের সালামি হিসেবে ১০ হাজার করে টাকা এবং শাড়ি গহনা গিফট করলেন।আর আশিয়ান এবং তাসকিনকেও পাঞ্জাবি পাজামা আর ব্রান্ডেড ওয়াচ গিফট করলেন।কারণ বিয়ের পর আজ নতুন বউদের নিয়ে এই প্রথম ফুপ্পির বাসায় এসেছে ওরা।কিছু না দিলে কেমন দেখায়!

বিকেলের পর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা আসিফদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here