তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব–২৯
পরেরদিন সকালে আশিয়ানকে তার পরিবারের সবাই মিলে সারপ্রাইজ দিলো।ঘুম থেকে ওঠেই দেখতে পেল তার রুমে সবাই কেক বেলুন গিফট এসব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ঊদিতা একপাশে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আশিয়ানের ওপর পার্টি স্প্রে করে তাকে কেক কেটে খায়িয়ে দিলো সবাই।সবার সাথে হৈহল্লা করে সকালটা কাটলো আশিয়ানের।
সারা বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আশিয়ানের জন্মদিন উপলক্ষে।অফিসে একদফা বার্থডে পালন হয়ে গেছে।এতিমখানায় ও বৃদ্ধাশ্রমে সবাইকে নতুন কাপড় ও ভালো ভালো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।বন্ধুরা মিলে হাতিরঝিলে আরেকদফা কেক কাটালাটি চললো।আশিয়ানের কলেজ ও ভার্সিটি লাইফের কথা মনে পড়ে গেল।ঠিক এভাবেই ফ্রেন্ডরা তার বার্থডে সেলিব্রেট করতো।
সবশেষে সন্ধায় বাসায় ফিরলো আশিয়ান বন্ধুদের সাথে নিয়ে।ঊদিতাকে নিচে না পেয়ে জলদি রুমে গেল আশিয়ান।দেখে ঊদিতা ঘুমিয়ে আছে বিছানায়।তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে খুব ক্লান্ত।আশিয়ান ঊদিতার কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ঊদিতার গালে,কপালে,থুতনিতে,ঠোঁটে ও নাকের ডগায় চুমু খেল।চুমুর তোড়ে ঘুমটা ভেঙে গেল ঊদিতার।আশিয়ানকে দেখে শোয়া থেকে ওঠে বসলো।আশিয়ানও ওঠে বিছানায় বসে ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো;
আশিয়ান:-আই ব্যাডলি নিড ইউ সো মাচ,,,বেব!আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছো তুমি!তোমাকে ছাড়া আমার একমুহূর্তও যে কাটে না!কী এক্টা অবস্থা বলো।সারাটাসময় এত মিস করি কেন তোমায় বলো!খুব মিস করি তোমায় সোনা!
ঊদিতা মুচকি হেসে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে পিঠে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিলো।আশিয়ান ঊদিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতা ক্লান্ত অনেক তারপরও আশিয়ানকে বাঁধা দিচ্ছে না।আজ আশিয়ানের পছন্দের সমস্ত কিছু নিজহাতে ভালোবেসে রান্না করেছে সে।শুধু আশিয়ানের খুশির জন্য এতকিছুর আয়োজন।
আশিয়ান ঊদিতার সাথে বেশ কিছুক্ষণ রোমান্স করলো।তারপর রুমের দরজাতে কারও নক করার শব্দ শুনে ঊদিতাকে বাহুডোর থেকে মুক্ত করলো সে।এনা এসে বললো দুজনকে রেডি হয়ে নিচে যেতে।মেহমানরা সবাই চলে এসেছে।পার্টিও শুরু হয়ে যাবে।
এনা বলে চলে গেলে আশিয়ান ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-যাও গিয়ে রেডি হও।আমিও তৈরি হয়ে নিচ্ছি।
ঊদিতা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল কাপড় পাল্টাতে।আশিয়ান রুমে চেঞ্জ করতে লাগলো।আজ ঊদিতা কালো রঙের সাদা কারুকাজ করা লম্বা ঘের দেয়া ফুলহাতা রাউন্ড গাউন পড়েছে।সাথে লম্বা রাউন্ড হিজাব ও হিজাবের সাথে এডজাস্ট নেকাব।এইরূপে তাকে অনেক মোহনীয় লাগছে দেখতে।আশিয়ান ঊদিতার দেয়া কালো পাঞ্জাবি ও সাদা পাজামা পড়েছে।তাকে দেখতেও অস্থির লাগছে।
আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে হাসিমুখে নিচে নেমে এলো।আত্মীয় স্বজনে সারা বাসা গিজগিজ করছে।আশিয়ান আর ঊদিতাকে কেকের সামনে নিয়ে আসা হলো।আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।আশা,তারিন,আলেয়া আজকে যে হারে সাজগোজ করেছে মনে হচ্ছে তারা কারও বিয়েতে আসছে।এত লোকজনের সামনে ঊদিতা অনেক আনইজি ফিল করছে।আশিয়ান তাই জলদি করে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে কেক কাটলো।চারিদিক থেকে পার্টি স্প্রে করা হচ্ছে।আশিয়ান আর ঊদিতা দুজনে মিলে কেক কাটলো।
আশিয়ান সর্বপ্রথম তার বাবা মাকে খায়িয়ে তারপর আড়ালে ঊদিতার নেকাব তুলে তাকেও খায়িয়ে দিলো।তারপর পরিবারের সবাইকে খাওয়ালো।গিফটের কারণে ড্রয়িং রুমের একটা কর্নার উপচে পড়ছে।মি.মোরশেদ ছেলেকে সবচাইতে দামী একটা বাইক গিফট করলেন।তাহমিদ আশিয়ানকে একটা ল্যাপটপ ও একটা ফোন গিফট করলো।বাকিরাও প্রচুর দামী দামী জিনিস গিফট করেছে তাকে।একমাত্র ঊদিতাই শুধু পাঞ্জাবি পাজামা দিয়েছে গিফট হিসেবে।ঊদিতার মনটা ছোট হয়ে গেছে এসব দেখে।কেন জানি খুব অস্বস্তি হচ্ছে তার।আশিয়ান বুঝতে পারলো সেটা।
আশিয়ান সবার আড়ালে ঊদিতার হাতে চুমু খেয়ে মৃদু কন্ঠে বললো;
আশিয়ান:-একটুও মন খারাপ করবা না।আমার কাছে সবচাইতে দামী গিফট হলো আমার স্ত্রীর নিজের হাতে বানানো পাঞ্জাবি গুলো।দেখাে,,আমাকে কত সুন্দর লাগছে পাঞ্জাবিটা পড়ায়!
আশিয়ানের কথা শুনে ঊদিতার মন হালকা হয়ে গেল।আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো সে।
পার্টি শেষে খাওয়া দাওয়া সেড়ে অনেক আত্মীয় স্বজনরা বিদায় নিলেন।ঊদিতার হাতের রান্না তৃপ্তির সহিত খেয়েছে আশিয়ান।আশিয়ানের প্রশংসায় ঊদিতার মনটা তৃপ্তিতে ভরে গেছে।আশিয়ান নিজহাতে আজ ঊদিতাকে অন্য একটা রুমে নিয়ে গিয়ে খায়িয়ে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের জাঁকজমকপূর্ণতা শেষ হতেই আশিয়ানের কাজিনরা সবাই মিলে ছাদে আস্তানা গেড়েছে আড্ডা দেয়ার জন্য।আশিয়ান আর ঊদিতা পাশাপাশি বসে আছে।আকাশে আজ চাঁদ নেই কিন্তু আকাশভরা তারার মেলা আছে।ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে।পরিবেশটা অনেক সুন্দর।ধুমসে হাসিঠাট্টা চলছে।আর ঊদিতা চুপচাপ বসে শুনে যাচ্ছে।
ঊদিতা খেয়াল করলো না তবে আশিয়ান ঠিকই খেয়াল করছে যে তারিনের আপন চাচাতো ভাই রিশাদ বারবার ঊদিতার দিকে তাকাচ্ছে।মাঝে মধ্যে মিটমিট করে হাসছে তার পানে চেয়ে।ঊদিতার মুখে নেকাব লাগানো তারপরও বেহায়ার মতো উল্টেপাল্টে দেখছে তাকে।আশিয়ানের ইচ্ছে করছে ঘুষি মেরে ওর নাক ফাটিয়ে দিতে।শালা খচ্চর,বিয়াতি মেয়ের দিকে তাকায় বেহায়ার মতো।আশিয়ান ঊদিতাকে নিজের আরও কাছে টেনে আনলো।একহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখলো।রিশাদ বাঁকা নজরে একবার তাদের দিকে তাকালো।আশিয়ান কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিশাদের দিকে।যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে তাকে।
সবাই আশিয়ানকে রিকোয়েস্ট করতে লাগলো একটা গান গাওয়ার জন্য।আশিয়ান এখন আর গান টান শুনে না তেমন একটা।ঊদিতার সংস্পর্শে এসে সে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।তারপরও তাদের এত এত রিকোয়েস্ট পায়ে ঠেলতে না পেরে একটা গান ধরলো।তাজিম তার গিটারটা এনে দিলো আশিয়ানের কাছে।আশিয়ান গিটারটা টিউন করতে করতে গান গেয়ে উঠলো;
তোমার জন্য নীলচে তারার
একটুখানি আলো,,
ভোরের রং রাতের
মিশে কালো,,
কাঠগোলাপের সাদার মায়া
মিশিয়ে দিয়ে ভাবি,,
আবছা নীল তোমার
লাগে ভালো,,।(২)
ভাবনা আমার শিমুল ডালে
লালচে আগুন জ্বালে,,
মহুয়ার বনে
মাতাল হাওয়া খেলে,,
একমুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা
ভিজে মাটিতে জ্বলে নকশাকরা
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।
তোমায় ঘিরে এতগুলো রাত
অধীর হয়ে জেগে থাকা,,
তোমায় ঘিরে
আমার ভালোলাগা,,
আকাশভরা তারার আলোয়
তোমায় দেখে দেখে
ভালোবাসার পাখি মেলে
মনভুলানো পাখা।(২)
গান শেষ হতেই তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ে সবাই।আশিয়ানের কন্ঠের প্রশংসায় পঞ্চমুখ একেকজন।আশিয়ান ঊদিতার হাতে চুমু খেয়ে জোরে বললো;
আশিয়ান:-গানটা আমার স্ত্রীকে ডেডিকেট করে গেয়েছি আমি!
এ কথা শোনার পর কয়েকজন ওওও বলে উল্লাসে চিৎকার করে ওঠে,, দুয়েকজন মুখে আঙ্গুল পুরে সিটি বাজালো।কেউ কেউ বলছে,
—আরে ভাইয়া তুমি কত রোমান্টিক,,
—আবে ইয়ার তুই দেখি ভাবীর জন্য পুরাই দিওয়ানা!
—ওফফ,,,তোমাদের বন্ডিং অনেক সুন্দর!
—ওয়,,,হাউ কিউট কাপল!
—মাম্মা তুমি দেখা যায় ভাবীর ওপর ফিদা!
….ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঊদিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সবার কমেন্ট শুনে।আশিয়ান মৃদু হাসলো সবার কথার প্রতিত্তোরে।আশা তো হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে তাদের এসব দেখে।তারিন মুখ বাঁকালো।আলেয়ার কোনো ভাবান্তর নেই।সে এতটাও হিংসা করে না ঊদিতাকে।ঊদিতার ওপর তার জেদ একটাই ছিলো।সেটা হলো তার নানাবাড়ির সবার চোখের মণি ঊদিতা।সবার মুখে মুখে শুধু তারই গুনগান।এই একটা বিষয়ই সে শুধু সহ্য করতে পারতো না।এরবেশি কিছু না।তারিন আর আশা যেমনটা হিংসা করে ঊদিতাকে,আলেয়া সেরকম কখনোই করে নি।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছে আড্ডা দিতে দিতে।গতকাল রাতে আশিয়ানের জন্য ঊদিতা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে নি।তাই আজ সে চেয়েও ঘুমটা আটকাতে পারলো না।আশিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বলতেও পারবে না সে।আশিয়ান খেয়াল করে ঊদিতাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।রিশাদ তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে।
ঊদিতা ইদানীং প্রচুর ঘুমকাতুরে হয়ে গেছে।রাতে আশিয়ানের জন্য ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না তাই সারাদিন তার চোখে ঘুম ঘুম ভাব থাকে।আশিয়ান ঊদিতাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নেকাব আর হিজাবটা খুলে দিলো।তারপর সে নিজে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ঊদিতাকে কাপড় পাল্টে একটা পাতলা নাইটির মতো হাতাকাটা ফ্রক পড়িয়ে দিলো।এ মুহূর্তে ঊদিতাকে দেখতে পুরোই বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।আশিয়ান ঘুমন্ত ঊদিতার গালগুলো আলতো ভাবে টেনে দিলো।তারপর লাইট নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে ঊদিতাকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল আশিয়ান।
🍁🍁🍁
পরদিন সকালে আশিয়ান অফিসে চলে গেল।এই কয়েকদিন অফিসে একটু ব্যস্ততা আছে।ঊদিতা তার বাগান টইটই করে ঘুরে দেখছে।তার ইচ্ছে করে আশিয়ানকে বাসায় বেঁধে রেখে দিতে।একা একা ভালো লাগে না আর।সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।কারও সাথে দুদণ্ড বসে গল্প করারও সময় নেই।এনা বাসায় থাকলে ফোন নিয়ে পড়ে থাকে।মাঝেমধ্যে গল্প করে ঊদিতার সাথে সে।তারপরও সময় কাটে না তার।আর তারিন তো হিংসুটে মহিলা।ঊদিতার সাথে যার কখনো বনে না।কেয়াও ব্যস্ত থাকে কাজেকর্মে আর মেয়েকে নিয়ে।
মাঝেমধ্যে ঊদিতার ইচ্ছে করে একটা বাবুর মা হতে।ওর নিজের একটা বাচ্চা থাকলে সারাদিন তাকে নিয়েই পড়ে থাকতো সে।আশিয়ানের ইচ্ছে ছিল বেবি নেয়ার কিন্তু ঊদিতার বয়স জানার পর থেকে সেই ইচ্ছাকে মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছে সে।ঊদিতার বয়স বাচ্চা নেয়ার মতো ম্যাচুয়ের হয়নি এখনো।আরও ২-৩ বছর পর চিন্তা করে দেখা যাবে বাচ্চার ব্যাপারে।
ঊদিতা বাগানের মরা লতাপাতা তুলে একটা ঝুড়িতে ফেলছে।এমন সময় কালকের সেই ছ্যাঁসড়া ছেলে রিশাদ এসে হাজির।ঊদিতা তাকে দেখতে পেয়ে দ্রুত ওড়না দিয়ে নিজের মুখ ঢাকলো।রিশাদ হ্যান্ডশেক করার জন্য ঊদিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো;
রিশাদ:-হাই,,,আমি রিশাদ।তারিন আপুর কাজিন।তুমি তো ঊদিতা,, রাইট?
ঊদিতা হ্যান্ডশেকের ধার দিয়েও গেল না।তীক্ষ্ণ চোখে হাতের দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-সরি,,অপরিচিত কারও সাথে আমি হ্যান্ডশেক তো দূরের কথা কথাও বলি না।আর জ্বী,,আমিই ঊদিতা।মিসেস আশিয়ান তায়েফ চৌধুরী!
এই বলে ঊদিতা আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না এখানে হনহন করে বাসার দিকে চলে গেল।ছেলেটাকে দেখেই ঊদিতার কাছে লুচ্চার মতো মনে হয়েছে।কেমন ত্যাড়া ত্যাড়া চোখে তাকায় বলদটা।
ঊদিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রিশাদ আনমনে মুচকি হেসে বললো;
রিশাদ:-বাহ,,কী তেজ!ঠিক আশিয়ানের মতোই তার বউ!বাট আই লাইক ইট!বিবাহিত মেয়েদের আমার অনেক ভালো লাগে।তোমাকে তো আমি পটিয়েই ছাড়বো সুন্দরী।
ঊদিতা নিজের রুমে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে একটা উপন্যাস পড়ছে সময় কাটানোর জন্য।কিছুক্ষণ বই পড়ার পর আশিয়ানের মেয়ে কাজিন দিয়া আর প্রিয়া এসে তার সাথে গল্প জুড়ে দিলো।ওদের সাথে আরও কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলো ঊদিতা।
এভাবেই টইটই করে সারাদিন কাটলো ঊদিতার।আশা তারিনের সাথে বসে বসে পরিকল্পনা করছে কীভাবে আশিয়ান আর ঊদিতার মধ্যে বিবাদ লাগানো যায়!তারিন বেশ কয়েকটা পরিকল্পনার কথা বললো আশাকে,,কিন্তু একটাও আশার মনঃপুত হলো না।আরও ভালো কোনো চিন্তা করতে লাগলো দুজন।তবে আজকের জন্য ইস্তফা।
রাতে আশিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঊদিতা তার কোলে বসে আছে।ঊদিতা আশিয়ানকে আবদারের ভঙ্গিতে বললো;
ঊদিতা:-শুনুন না!
আশিয়ান ফোন চাপতে চাপতে বললো;
আশিয়ান:-হ্যা বলো!
ঊদিতা:-বলছিলাম আমাকে একটা বাচ্চা দেন না।আমার এভাবে একা একা নিরামিষের মতো থাকতে আর ভালো লাগে না।কেয়া ভাবীরও বাচ্চা আছে।তারিন ভাবীরও বাচ্চা আছে।আলেয়া আপুও শুনেছি বেবি নিবে।তবে আমি কেন বাদ থাকবো?আমাকেও একটা বেবি দেন না প্লিজ!
আশিয়ান ঊদিতার কপালে চুমু খেয়ে বললো;
আশিয়ান:-বাচ্চা ক্যারি করার মতো ম্যাচুয়ের তুমি হওনি এখনো ঊদিতা।সময় হলে আমিই তখন বলবো।এখন এভাবে বায়না করো না।বাচ্চা নেয়া এত সহজ না।তোমার বয়সটা পারফেক্ট নয় বউ।আমরা পরেও বেবি নিতে পারবো।
ঊদিতা আশিয়ানের বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বললো;
ঊদিতা:-উহু,,উহু,,,একটাই তো বাচ্চার কথা বলছি!এমন করছেন কেন?আমার দাদীর যখন ১৩ বছর বয়স তখন তিনি আমার বড়চাচাকে জন্ম দিয়েছেন।১৬ বছরের মধ্যে ৪ বাচ্চার মা হয়েছেন তিনি।কই ওনার তো কিছু হয়নি!এত অল্প বয়সে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন তিনি।তবে আমি তো ওনার থেকে যথেষ্ট ম্যাচুয়ের আছি।আমি কেন এখন মা হতে পারবো না?
আশিয়ান ঊদিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-ওটা আগেকার যুগের কথা।বর্তমানে এমনটা খুব কমই হয়।অল্প বয়সে বাচ্চা জন্ম দিলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।পরে অনেক সমস্যা দেখা দেয়।আমি চাই আমার বউটা যেমন সুস্থ থাকুক,আমার বাচ্চাটাও তেমনই হৃষ্টপুষ্ট হোক।দুজনের মধ্যে কারও জীবন যেন রিস্কে না থাকে।কারণ আমি এটা সহ্য করতে পারবো না।
ঊদিতা:-আমি এখন থেকেই অনেক বেশি করে খাওয়া দাওয়া করবো।ফলমূল বেশি করে খাবো।শাকসবজিও খাবো অনেক।তাহলে তো আর কোনো প্রবলেম হবে না।নিজের অনেক যত্ন করবো।সবসময় সাবধানে থাকবো।তাও দিয়ে দেন প্লিজ!মানা করবেন না।
আশিয়ান:-জেদ ধরবা না ঊদিতা।আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।সময় মতো বাচ্চা পেয়ে যাবে।এখন কোনো বায়না করবা না এ ব্যাপারে।আলেয়া ও তাসকিন বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা করছে কারণ আলেয়ার বয়স পারফেক্ট আছে।২২ কী ২৩ ওর বয়স।বাচ্চা নেয়ার মতো যথেষ্ট ম্যাচুয়ের।কিন্তু তুমি কোন আক্কেলে এই কথা বলো?তুমি মাত্র ১৭ তে পা দিছো।এটা পড়ালেখা করার বয়স।বাচ্চা নেয়ার না।আরও ২ কী ৩ বছর পর চিন্তা করবো।এখন মোটেও জেদ করবা না তুমি।(কিছুটা কঠোর গলায়)
আশিয়ানের এমন কড়া কথায় ঊদিতার কান্না পেয়ে গেল।অবশেষে আশিয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো সে।আশিয়ান ফোন রেখে ঊদিতাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট জোড়া লাগিয়ে বললো;
আশিয়ান:-কান্না করো না প্লিজ।আমি তো মানা করি নি তোমায়।তুমি এটলিস্ট ইন্টারটা দিয়ে দাও।তারপর আমরা বেবি নিই!বাচ্চাকে সামলানোর বয়স তোমার হয়নি ঊদিতা।জানো একটা মেয়ের জন্য প্রেগন্যান্সির সময়টা কত কঠিন?দশটা মাস বাচ্চা পেটে নিয়ে মেয়েরা কত কষ্ট করে তা কী জানো?তুমি এখন এসব সহ্য করতে পারবে না ঊদিতা।বোঝার চেষ্টা করো সোনা!আমরা বেবি নিবো খুব শীঘ্রই ইনশাআল্লাহ!এখন কান্নাটা থামাও দেখি।
আশিয়ান ঊদিতাকে বিছানায় শুয়িয়ে আদর করতে লাগলো।আশিয়ানের ভালোবাসা পেয়ে ঊদিতার কান্না থেমে গেছে।বাচ্চার চিন্তার ভুতটাও আপাতত মাথা থেকে নেমে গেছে তার।
✒️✒️✒️
পরদিন আশিয়ান অফিসে চলে যেতেই রিশাদ আবারও ঊদিতার সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজতে লাগলো।কিন্তু ঊদিতা যে স্ট্রিক্ট এসব বিষয়ে,,রিশাদ কথা বলার কোনো চান্সই পেল না।রিশাদের এমন ছটফটানো আর কেউ লক্ষ্য না করলেও আশা ঠিকই করলো।মুখের মধ্যে কুটিল হাসি ফুটে ওঠে তার।এখন এমন একটা কাজ করবে সে,,এতে সাপও মরবে আর লাটিও ভাঙবে না।তারিনকে নিজের বুদ্ধির কথা খুলে বললো আশা।এই বুদ্ধিতে রিশাদ আছে দেখে তারিনের তেমন একটা ভালো লাগলো না।কারণ সে তার ভাইকে কোনো ভেজালে ফেলতে চায় না।যে আশিয়ান বাপরে,, জানতে পারলে ধর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবে।প্রথমে নাখোশ নাখোশ করলেও পরে আশার কথায় রাজি হলো সে।
রিশাদ যেন আগের থেকে অনেক বেশি ঊদিতার সাথে গায়ে পড়ে কথা বলতে লাগলো।ঊদিতা এতে অনেক বেশিই বিরক্ত হয়ে কঠোরভাবে দু কথা শুনিয়ে দিলো তাকে।কিন্তু এতে রিশাদের কোনো হেলদোল নেই।সে বারবার ঊদিতাকে ডিস্টার্ব করতে ব্যস্ত।ঊদিতা মনে মনে চিন্তা করলো আশিয়ানকে খুলে বলবে এই লুচ্চাটার ব্যাপারে।আশিয়ান যদি তাকে থ্রেড দেয় তবে ঠিকই বেহায়াপনা ছাড়বে।
আশার কথামতো রিশাদ নিজে থেকে বানিয়ে খারাপভাবে একটা চিঠি লিখলো ঊদিতার জন্য।যদিও সেটা ঊদিতার হাতে দেবে না।আশা প্ল্যানমাফিক চিঠিটা নিয়ে ঊদিতা যখন বাগানে ছিলো তখন সবার অগোচরে সে ঊদিতার রুমে ঢুকে সেটা ঊদিতার কাপড়ের ভাজে লুকিয়ে রাখলো।এমনভাবে রাখলো যে হালকা একটু টান খেলেই চিঠিটা বেরিয়ে যাবে নয়তো মাটিতে পড়ে কৌতুহলের সৃষ্টি করবে।ঊদিতা বলতেও পারে না তার অগোচরে কতবড় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।তবে আশার কপালে অনেক দুঃখ আছে।সেটা সে পরে বুঝতে পারবে।
সেদিন ঊদিতা একটা কাজ করলো যার কারণে আশিয়ানের মনে তার ব্যাপারে একটু সন্দেহের সৃষ্টি হয়।আশার কাজ কিছুটা সহজ হয় কাকতালীয় ভাবে।
ঊদিতা ড্রয়ার গোছাতে গিয়ে আশিয়ানের লেখা আগের চিরকুটগুলো চোখে পড়ে তার।সে চিঠিগুলো পড়ে আনমনে মুচকি মুচকি হাসছে।আশিয়ান যে রুমে এসেছে এটা বলতেও পারে না সে।আশিয়ান যখন গলা খাঁকারি দিয়ে রুমে নিজের অস্তিত্বের জানান দিলো তখন চমকে পিছন ফিরে তাকালো সে।আশিয়ানকে এত জলদি মোটেও আশা করে নি সে।আজ আশিয়ানের মুড কিছুটা অফ।অফিসে এক কর্মচারীর ওপর মেজাজটা বিগড়ে আছে তার।তাই গম্ভীর চেহারা নিয়ে কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিজের শার্ট খুলতে লাগলো সে।ঊদিতা চিঠিগুলো ওই কাপড়ের নিচের তাকের ড্রয়ারে রেখে আশিয়ানকে একটা গেঞ্জি আর টাওজার এগিয়ে দিলো হাসিমুখে।আশিয়ান ঘড়ি খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-হাতে কিসের কাগজ ছিলো?
ঊদিতা আমতা আমতা করে বললো;
ঊদিতা:-কিছু না।এমনিই নরমাল কাগজ।
আশিয়ানের লেখা চিরকুট বললে আশিয়ান দুষ্টামি করবে তার সাথে তাই সে বলে নি।চেপে গেছে।যদি জানতো এজন্য আশিয়ান তার ওপর মেজাজ দেখাবে তবে সত্যিই বলে দিতো।
আশিয়ান আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না ঊদিতাকে।সে গোসল করতে চলে গেল।আশিয়ানকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে তার মাথা ব্যথা করছে তাই ঊদিতা তার জন্য সুগন্ধি চা বানিয়ে আনতে চলে গেল।
⚫
প্রতিদিনের মতো আশিয়ান ঊদিতার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আলতোভাবে।একটা সময় আশিয়ান ঘুমিয়ে গেল।ঊদিতারও চোখ লেগে এলো।
🍂🍂🍂
পরদিন সকালে ঊদিতা আশিয়ানের জন্য নাশতা তৈরি করতে রান্নাঘরে রান্না করছে।আশিয়ান রেডি হচ্ছে রুমে।আজ একটা মিটিং আছে।সকাল সকাল যেতে হবে।আশিয়ান কীসের একটা ফাইল রেখেছিলো আলমারিতে।সেটা বের করতে গিয়ে টান লেগে ঊদিতার কাপড়ের ভাঁজ থেকে আশার রাখা চিঠিটা মাটিতে পড়ে গেল।আশিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো নিচে পড়া চিঠিটার দিকে।
কৌতুহলবশত তুলে সেটার ভাজ খুলে পড়তে লাগলো সে।পড়তে পড়তে তার মাথার রগ ফুলে ওঠলো।
প্রিয় সুন্দরী,
এতদিন দুজন এত এত কথা বলেছি।তোমার প্রতি একটা আসক্তি জন্মে গেছে আমার প্রিয় ঊদিতা।এখন তো তোমার চিন্তায় আমার ঘুমই আসে না।শুধু ইচ্ছা করে তোমার কাছে ছুটে চলে আসি।তুমি এত সুন্দর কেন গো?এই প্রথম কাউকে দেখে ক্রাশ খেয়েছি আমি।ওফফ,,তুমি তোমার ওই খাটাশ স্বামীর সাথে কী করে থাকো বলো তো?ওই বুড়োটা কী তোমার যত্ন করে?তারচেয়ে ভালো তুমি ওকে ছেড়ে আমার কাছে চলে এসো।অনেক যত্ন নেবো তোমার আমি।তোমার স্বামীর থেকেও বেশি ভালোবাসবো।অন্য দিনের মতো কালকে সকালে আশিয়ান চলে যাওয়ার পরই ছাদে চলে এসো।দুজনে মিলে অনেক গল্প করবো।তোমাকে আমি প্রচুর মিস করি।কালকে আমার মনের কথা বলতে চাই তোমায়!প্লিজ,, জলদি চলে এসো।
ইতি তোমার সাথে সারাদিন
যে সময় কাটায় সে।তুমি চিনলেই হবে।
আমি জানি তুমি আমাকে চিনবে।
চিঠিটা পড়ে আশিয়ান দাঁত কিড়মিড় করে রাগ সংবরণ করার চেষ্টা চালালো।কোনো স্বামীই তার স্ত্রীর ব্যাপারে কোনো পরপুরুষের কাছ থেকে এমন কমপ্লিমেন্ট শুনতে চাইবে না।আশিয়ানের তো আবার রাগ সাংঘাতিক।জোরে জোরে ডাকতে লাগলো সে ঊদিতাকে।রাগ উঠলে তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।তবে যখন মেজাজ ঠান্ডা হয় তখন ঠিকই তার মাথার ধূসর কোষগুলো চালু হয়ে যায়।যেমন এখন সে নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
ঊদিতা আশিয়ানের ডাক শুনে জলদি রুমে চলে এলো।আশিয়ানকে এমন রেগে যেতে দেখে ভয় পেয়ে গেল সে।বুঝতে পারলো না সে কেন আশিয়ান এতটা রেগে গেল!রাগে আশিয়ানের চোখ জোড়া লাল হয়ে গেছে।ঊদিতা ভয়ে ঢোক গিলে বলে;
ঊদিতা:-কী হয়েছে আপনার?এতটা রেগে আছেন কেন?
আশিয়ান সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো;
আশিয়ান:-আমি যাওয়ার পর কার সাথে সারাদিন সময় কাটানো হয়?
ঊদিতা এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো;
ঊদিতা:-কী বলছেন আপনি এসব?কার সাথে সময় কাটাবো আমি?
আশিয়ান এবার বাঘের মতো গর্জে উঠে বললো;
আশিয়ান:-তাহলে এই চিঠিটা কীসের?কে দিয়েছে তোমায়?তোমার কাপড়ের ভাঁজে কী করে এলো?
ঊদিতা কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা নিয়ে পড়তে লাগে।পড়া শেষ করে কান্না করে দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-আমি এসবের কিছুই জানি না বিশ্বাস করুন!আমি জানি না এ চিঠি কে লিখেছে!
আশিয়ান:-তাই নাকি?কালকে বাসায় ফিরে রুমে ঢুকতেই দেখেছি তুমি কীসের কাগজ পড়ে মুচকি মুচকি হাসছো।আমি জিজ্ঞেস করতেই তুমি বললে কিছু না এমনি।তারমানে তো ক্লিয়ার এখন আমার কাছে।তুমি কালকে এই চিঠিটা পড়েই খুশিতে মুচকি হেসেছিলে!
ঊদিতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আশিয়ানের দিকে।আশিয়ান তাকে অবিশ্বাস করছে তা মানতে কষ্ট হচ্ছে ঊদিতার।ঊদিতা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-আপনি আমাকে অবিশ্বাস করছেন?
আশিয়ান ঊদিতার কাছে এসে ঊদিতার চুল আঁকড়ে ধরে রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো;
আশিয়ান:-বিশ্বাস তো ভেঙে দিলে তুমি!তুমিও ইলিয়ানার মতো ঠকাচ্ছ তবে আমায়?সব নিজের চোখে দেখেছি আমি।নিজের চোখকে কী করে অবিশ্বাস করি?আমি তোমার জন্য অনেক পসেসিভ তুমি তা জানো!তারপরও কী করে পরপুরুষদের সাথে আমার অগোচরে কথা বলো?
ঊদিতা হেঁচকির কারণে কিচ্ছু বলতে পারছে না।আশিয়ান কেন তাকে অবিশ্বাস করছে।কেন নিজের স্ত্রীকে বিশ্বাস করছে না!এতদিনে এই চিনেছে সে তাকে?এই তার ভালোবাসা?অভিমানে বুকটা ভার হয়ে আসে তার।
আশিয়ান ঊদিতাকে ছেড়ে দিয়ে নাশতা না করেই রেগে হনহন করে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে চলে গেল।আশিয়ানের চলে যাওয়ার পর ঊদিতা কান্নায় ভেঙে পড়ে।তাদের সম্পর্কে বিশ্বাসের অভাব রয়ে গেছে।ঊদিতা তো তাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে তবে সে কেন নিজের স্ত্রীকে বিশ্বাস করতে পারলো না?
দূর থেকে তাদের ভাঙন দেখে খিলখিল করে পৈশাচিক হাসি হাসছে আশা।এতদিনে তার স্বপ্ন পূরণ হলো তবে।
#চলবে