তোমাতে বিলীন পর্ব: ৩৩

0
8141

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—৩৩

ঊদিতা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আশিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে কফি খাচ্ছে।আশিয়ান একহাত দিয়ে ঊদিতার কোমড় ধরে বসে আছে।এরকম সন্ধ্যাতে রোমান্টিক ও ঠান্ডা পরিবেশে দুজন মিলে বারান্দায় বসে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম কফি খাওয়ার মজাটাই আলাদা।আর সেটা হয় যদি ভালোবাসার মানুষের সাথে তাহলে তো কথাই নেই।

ঊদিতা কফি খেতে খেতে হঠাৎ করে আশিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে;

ঊদিতা:-আচ্ছা শুনুন,,, চলুন না এখন কোথাও ঘুরতে যাই!

আশিয়ান একমুহূর্ত চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-কোথায় যাবে?

ঊদিতা:-আমি তো সিলেটের কিছুই চিনি না!আপনিই বলেন কোথায় যাওয়া যায়?

আশিয়ান একটু ভেবে বললো;

আশিয়ান:-সেলফি ব্রিজ যাওয়া যায়।যাবে ওখানে?ব্রিজে দাঁড়িয়ে সুরমা নদী দেখে দেখে ফুচকা চটপটি খেতে খুব ভালো লাগবে।

ঊদিতা উৎসুক হয়ে বলে উঠে;

ঊদিতা:-তাহলে চলুন না যাই!এভাবে একা বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগছে না।

আশিয়ান:-আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি কফি খাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নাও।আর হ্যা ভারী কিছু পড়বা।নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে তোমার।

ঊদিতা:-জ্বী আচ্ছা!

আশিয়ান ফোন দিয়ে কাকে জানি বললো গাড়ি পাঠিয়ে দিতে।কারণ এখান থেকে এখন এইসময়ে রিক্সা নাও পাওয়া যেতে পারে।তাই গাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার কথা বললো ম্যানেজারকে।

আশিয়ানের কথামতো ঊদিতা একটা আবায়া পড়ে নিলো।সাথে বড় হিজাব ও নেকাব।আশিয়ান একটা গাঢ় নীল শার্ট পড়েছে সাথে কালো ব্লেজার ও কালো জিন্স প্যান্ট।তাকে অনেক জোস লাগছে দেখতে বরাবরের মতো।ঊদিতার চোখ জোড়া ছাড়া আর কিছু দেখার কোনো কুদরত নেই।

বাসার দরজা জানালা লাগিয়ে সবকিছু চেক করে তারপর সদরদরজা তালা মেরে দুজন বাসার বাইরে এসে দাঁড়ালো।অফিস থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে ম্যানেজার ততক্ষণে।ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে।আশিয়ান আর ঊদিতা পেছনে বসে আছে।আশিয়ান আর ঊদিতা দুজনেই খুব ক্লোজ হয়ে বসেছে।আশিয়ান মাঝে মধ্যে দুষ্টামি করছে ঊদিতার সাথে।ঊদিতা বেচারি আর কী করবে!আশিয়ানের রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করছে বসে বসে।

প্রায় আধাঘন্টা পর সেলফি ব্রিজে পৌঁছে গেলো ওরা।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।সারা ব্রিজ জুড়ে মানুষ জন গিজগিজ করছে।বেশিরভাগই কাপল।ব্রিজের আশপাশ কৌতুহলী দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছে ঊদিতা।ড্রাইভার গাড়ি একজায়গায় পার্ক করে গাড়িতে বসে আরাম করছে।

আশিয়ান ঊদিতার হাত জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছে।ঊদিতার ভীষণ ভালো লেগেছে জায়গাটা।রাতের আঁধারে বিভিন্ন রঙা লাইটের আলোয় ও নিয়ন বাতির আলোয় এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।দুজনে ব্রিজের রেলিঙের পাশ ঘেঁষে হাঁটছে।ঊদিতা নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।মানুষজন উড়া ধুরা ফুচকা,চটপটি,আচার,চাটনি, বাদাম,মটর ভাজা এসব কিনে খাচ্ছে।ঊদিতার এসবে ধ্যান নেই।সে তার প্রিয় মানুষের হাতটি ধরে পরিবেশটা উপভোগ করছে।আশিয়ান ঊদিতাকে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-সোনা,,,ভালো লাগছে তোমার এখানে এসে?

ঊদিতা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জবাব দিলো;

ঊদিতা:-খুউউব ভালো লাগছে।ধন্যবাদ আমাকে এতসুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য।

আশিয়ান মৃদু হাসলো ঊদিতার কথা শুনে।মেয়েটা একটুতেই কত খুশি হয়ে যায়!আর ইলিয়ানাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে হলে আগে শপিং করে দিতে হতো।আগের কথা মনে পড়ায় আশিয়ান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।মনযোগ দেয় ঊদিতার দিকে।মেয়েটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে সবকিছু দেখছে।

আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে একটা ফুচকার স্টলের সামনে এসে দাঁড়ালো।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে তাকাতেই আশিয়ান জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-কী খাবে বলো?ফুচকা ওর চটপতি?কোনটা?

ঊদিতা:-ফুচকা নিয়ে আসুন।আমারটাতে ঝাল অল্প দিতে বলবেন!

আশিয়ান:-ওকে।

আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরেই ফুচকার স্টলের আরো কাছে গিয়ে ফুচকাওয়ালাকে ফুচকার অর্ডার দিলো।পাশ থেকে একটা মেয়ের কথা কানে এলো দুজনের।মেয়েটা তার অন্যান্য বন্ধুদেরকে বলছে,,

“দেখ দেখ,,,মেয়েটা এত পর্দাশীল অথচ বয়ফ্রেন্ডের সাথে এখানে ফুচকা খেতে এসেছে।তাহলে এই পর্দার কী কোনো প্রয়োজন ছিলো বল তো?যত্তসব ঢং এখনকার মেয়েদের!”

এ কথা শুনে আশিয়ানের মেজাজ চড়ে গেল যেন।না জেনে কেন উল্টা পাল্টা কমেন্ট করবে?ঊদিতা আশিয়ানের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো।হুদাই সিনক্রিয়েট করার কোনো মানে হয় না।ওদের কথাতে তো আর সত্যটা পাল্টে যাবে না।তারপরও আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে মেয়েটার সামনে গিয়ে বললো;

আশিয়ান:-এক্সকিউজ মি!উই আর নট এ বিএফ জিএফ,উই আর হাসবেন্ড ওয়াইফ!না জেনে শুনে কখনো কাউকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কমেন্ট করবেন না।সে আমার স্ত্রী হয়।আর আমরা আপনাদের মতো হারাম কাজেও লিপ্ত নই।সো প্লিজ,,সবাইকে নিজের পাল্লায় মাপতে যাবেন না।আর আমার বউয়ের পর্দা নিয়েও আপনার ভাবতে হবে না।এটলিস্ট সে আপনার থেকে হাজারগুনে ভালো আছে।

মেয়েটা লজ্জা পেয়ে গেল আশিয়ানের কথা শুনে।পাল্টা কিছু বলতে পারলো না।মেয়েটার এক ছেলে ফ্রেন্ড আশিয়ানের নিকট ক্ষমা চাইলো ওই মেয়েটার হয়ে।আশিয়ান আর কিছু না বলে ঊদিতাকে নিয়ে একটা বেঞ্চে উল্টো হয়ে বসলো নদীর দিকে মুখ করে।পিচ্চি একটা ছেলে দুই প্লেট ফুচকা এনে দিলো।একটাতে বেশি ঝাল আছে অন্যটিতে অল্প ঝাল দেয়া।আশিয়ান ঊদিতার হাতে একটা প্লেট ধরিয়ে দিলো।

ঊদিতা নেকাব ওপরে তুলে একটা ফুচকা মুখে পুরে দিলো।আশিয়ানও খাচ্ছে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ফুচকা খাচ্ছে।ঊদিতার মনে হচ্ছে সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত,,!তাহলে কতই না সুন্দর হতো।প্রিয় মানুষের সাথে ঘুরাঘুরি করার ও এরকম সন্ধ্যায় একজন আরেকজনের সঙ্গে ব্রিজের ওপর বেঞ্চে বসে ফুচকা খাওয়ার ফিলিংসটাই অন্যরকম।ঊদিতার মুখ থেকে মুচকি হাসি সরছেই না।আশিয়ান খেয়াল করে সেটা।তারপর সবার আড়ালে ঊদিতার কপালের কোণে একটা চুমু খায় সন্তপর্ণে।ঊদিতার ঠোঁটের হাসি আরও প্রশস্ত হয়।

ফুচকা খাওয়া শেষে ঊদিতার জন্য চটপটি অর্ডার করে আশিয়ান।চটপটির বাটি দিয়ে যাওয়ার পর ঊদিতা আশিয়ানকেও খায়িয়ে দেয় সাথে নিজেও তৃপ্তি নিয়ে খায়।এসব খাওয়া শেষে আশিয়ান বিল মিটিয়ে ঊদিতাকে নিয়ে আবারও হাঁটতে লাগে।ধমকা হাওয়ায় ঊদিতার পরনের বোরকার কোণ ফরফর করে উড়ছে।আশিয়ান ঊদিতাকে বাদাম ভাজা,মটর ভাজা,তেঁতুল আচার আরও টুকটাক কিছু খাবার কিনে দিলো।এসব পেয়েই ঊদিতা অনেক খুশি।আশিয়ান তো পারলে তার বউকে সারা স্টলই কিনে দিয়ে দেয়।তার বউয়ের খুশিটা যে সে খুব উপভোগ করছে।ঊদিতার হাসিমাখা মুখটা কল্পনায় এঁকে নিলো আশিয়ান।

সেলফি ব্রিজে ২ ঘন্টার মতো কাটিয়ে আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।আশিয়ান জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-আর কোথাও যাবা ঘুরতে ঊদিতা?

আশিয়ানের কথা ঊদিতার কান অবধি পৌঁছায় নি।সে একমনে একটা মনিপুরী কাপড়ের শো রুম দেখতে পেয়ে বললো;

ঊদিতা:-ওই ড্রেসটা আর শাড়িটা অনেক সুন্দর না?

আশিয়ান বুঝলো তার বউয়ের মনিপুরী কাপড়গুলো অনেক পছন্দ হয়েছে।আশিয়ান ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো।ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।ঊদিতা বুঝতে পারলো না আশিয়ান কেন গাড়ি থামাতে বললো।তবে আশিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো না এ ব্যাপারে কিছু।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে সেই কাপড়ের শো রুমটাতে এসে প্রবেশ করলো থাই গ্লাস ঠেলে।ঊদিতা এবার বুঝতে পেরেছে যে আশিয়ান কেন এখানে এসেছে।ঊদিতা আশিয়ানকে বললো;

ঊদিতা:-আরে আমি এমনি বলেছি।আপনি দেখি সিরিয়াসলি নিয়ে নিছেন।চলুন বাসায় যাই।এসব কিনতে হবে না।

আশিয়ান ঊদিতার গালে একহাত রেখে বললো;

আশিয়ান:-কোনো কিছু পছন্দ হলেই ঝটপট আমাকে বলে ফেলবা।লুকাও কেন তুমি?জানো এরকম শো রুম আমি এই মুহুর্তে চাইলে কয়টা কিনতে পারি?তুমি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত ঊদিতা।আল্লাহ তোমার স্বামীকে দুহাত ভরে খরচ করার মতো তৌফিক দিয়েছেন।এই সামান্য কিছু জিনিস কিনতে আমার তেমন কোনো খরচ হবে না।এবার বলো তোমার কোনটা পছন্দ?যেটা ভালো লাগে সেটাই নাও।ওকে?

ঊদিতা আশিয়ানের কথা শুনে মাথা নেড়ে সায় জানালো।ঊদিতার একটা শাড়ি অনেক পছন্দ হয়েছে।সে শাড়িটাই নিলো।সাথে একটা মনিপুরীরা যেরকম পোশাক পরে সেরকম পোশাক।দুইটাই ভীষণ সুন্দর দেখতে।দোকানের মালিক আশিয়ানকে চিনতে পেরেছে।লোকটা তো আশিয়ানকে পারলে এমনিতেই সব উজাড় করে দিয়ে দেয়।আশিয়ান এনার জন্য একসেট পোশাক ও শাড়ি কিনে নিলো।বাকিদের জন্যও শাড়ি কিনলো।ঊদিতাকে একটা কারুকাজ করা হাতপাখা কিনে দিলো আশিয়ান।এনার জন্যও নিলো।বাচ্চাদের জন্যও মনিপুরী পোশাক কিনলো তাদের মায়ের পোশাকের সাথে মিল রেখে।

কেনাকাটা শেষে বিল পে করে শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দোকানির থেকে বিদায় নিয়ে ঊদিতার হাত ধরে বেরিয়ে এলো আশিয়ান।লোকটা তার শো রুমে আবার যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ জানালো।লোকটা বেশ আন্তরিক।কথাবার্তাতেই বোঝা যায়।

আশিয়ান একটা খাবারের দোকান থেকে ঊদিতাকে চকোলেট,চিপস,কেক,জুস এসব অনেকগুলো কিনে দিলো।আশিয়ান রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনতে চাইলে ঊদিতা মানা করে বললো সে নিজে রান্না করবে।তাই আশিয়ান আর নাকচ করলো না।কারণ সেও ঊদিতার হাতের রান্না খেতে চায়।

দুজন বাসায় ফিরে এলো।ড্রাইভার গাড়ি রেখে আশিয়ানের হাতে চাবি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।ঊদিতা রুমে গিয়ে বোরকা খুলে বিছানায় বসে রেস্ট করতে লাগলো।বসে বসে চিপস খাচ্ছে সে।আশিয়ান তার পরনের সবকিছু খুলে শুধু একটা শর্ট টাওজার পড়ে নিলো।কারণ তার গরম লাগছে অনেক।

বাসায় ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই।আশিয়ান তো পদে পদে দুষ্টামি করছে ঊদিতার সাথে।ঊদিতা মনে মনে ভাবছে পরিবার ছাড়া থাকাটা মহা যন্ত্রণা।একা একা ঊদিতার কিছুই ভালো লাগে না।আর আশিয়ান তো আস্ত একটা ফাজিলের হাড্ডি।ঊদিতা রেস্ট নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল রান্না করতে।ঊদিতার সাথে আশিয়ানও এসেছে।

স্পিকার বক্সে রোমান্টিক গান বাজছে।রান্নাঘরে প্রয়োজনীয় সবকিছুই রাখা আছে।ফ্রিজে তাজা মাছ মাংস সব এনে রাখা হয়েছে আশিয়ান আসছে দেখে।

ঊদিতা কাটা মাছ মাংস গুলো সব ভালো করে ধুয়ে নিলো।আশিয়ান রান্নাঘরের বড় একটা তাকের ওপর বসে আপেল খেয়ে খেয়ে ঊদিতাকে দেখছে।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-রাতের খাবারে কী খেতে চান?কী বানাবো বলুন তো?

আশিয়ান একটু ভেবে নিয়ে বললো;

আশিয়ান:-উমম,,,আজকে ফুলকপি দিয়ে রুই মাছ রান্না করো,,সাথে চিংড়ি মাছ ও আলু,বেগুন,লাউ শাক দিয়ে পাতলা ঝোল করে শুঁটকির তরকারি রান্না করো।এটা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটা তরকারি।আমি খেয়েছি বহুবার।টেস্ট কিন্তু সেইই।

ঊদিতা:-আচ্ছা,,তাহলে মুরগী কী করবো?

আশিয়ান:-উমম,,,মুরগির দোপেয়াজা বানিয়ে রেখে দাও।সকালে খাওয়া যাবে নে।

ঊদিতা:-ওকে।

আশিয়ান আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-আমি হেল্প করি?একা হাতে এত কিছু কীভাবে করবে?কারও হেল্প তো লাগবেই,,,তাই না?

ঊদিতা শান্ত দৃষ্টিতে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো;

ঊদিতা:-জ্বী না!কারও হেল্প লাগে না আমার।সবথেকে বড় হেল্প হবে যদি আপনি এখানে চুপচাপ কোনো দুষ্টামি না করে বসে থাকেন তো।

আশিয়ান মুখ গোমড়া করে বললো;

আশিয়ান:-এজন্যই কারও ভালো করার কথা বলতে নেই।হুহ,,,করো তুমি তোমার কাজ।

ঊদিতা বাঁকা হেসে কাজে মনোনিবেশ করলো।আশিয়ান ঊদিতার কাজকর্ম দেখে যাচ্ছে আপনমনে।ঊদিতা সব যোগাড় করে কুটা বাছা শেষে ধুয়ে নিয়ে রান্না বসিয়ে দিলো।আশিয়ানের কাছে ঊদিতাকে দেখতে অতিরিক্ত এট্রাকটিভ লাগছে।ঊদিতার পরনে হাফহাতার একটা বেবি পিংক কালারের গেঞ্জি ও কালো প্লাজু।গায়ে ওড়না নেই।চুলগুলো প্যাচিয়ে চূড়াে করে খোঁপা বেঁধে তাতে চুলের কাটি গেঁড়ে দিয়েছে ঊদিতা।ফর্সা বিউটিবোনস ওয়ালা গলায় ও ঘাড়েও ঘাম মুক্তোর মতো চিকচিক করছে।নাক আর কপালের কোণেও ঘাম জমেছে।বেবি হেয়ারগুলো ঘাড়ে ও কপালে ঘামের সাথে লেপ্টে আছে।দক্ষ হাতে রান্না সামলাচ্ছে সে।আশিয়ান তো ঊদিতার লুকে ফিদা।

উফফ,,,এত আকর্ষণীয় লাগছে কেন তাকে।আশিয়ান তো মনে হচ্ছে এখনই পাগল হয়ে যাবে।ঊদিতা একমনে পাতিলে মশলা দিয়ে কাটি দ্বারা নাড়াচাড়া করছে।সে বুঝতেও পারছে না যে আশিয়ান তার দিকে নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আশিয়ান এবার তাক থেকে নেমে ঊদিতাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক লাগালো।ঊদিতার শরীর থেকে একটা মিষ্টি ও নোনতা স্মেল আশিয়ানের নাকে গিয়ে ধাক্কা লাগে।ঊদিতা কেঁপে ওঠে আশিয়ানের এমন স্পর্শ পেয়ে।স্পিকার বক্সে হৃদয় খানের গান বাজছে,,

“তুমি যদি,,,আমাকে
কাছে এসে ভালোবাসাে,,,
কী জানি হয়,,,হৃদয়ে
কী করে তোমায় বুঝাবো…
ভালো আর লাগে না
এত কেন মায়া?
যত কাছে আমি লাগে
শুধু শান্তনা,,,
অবুঝ ভালোবাসা
জানি এ নয় খেলা,,,
তবু এ মনে হয় ছাড়া
তোমায় বাঁচবো না!

আশিয়ান ঊদিতার ঘাড়ে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরে ফেলছে।ঊদিতা রান্নায় মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করলো।আশিয়ানের একহাত ঊদিতার পেটের ওপর বিচরণ করছে।ঊদিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো;

ঊদিতা:-ছাড়ুন প্লিজ,,।রান্নাটা শেষ করে নিই।নয়তো খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।

আশিয়ান ঊদিতার ঘাড়ে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো।তারপর দ্রুত ড্রয়িং রুমে চলে এলো সে।নয়তো ওখানে থাকলে আর ঊদিতাকে কাজ করতে দেবে না।নিজেকেও কন্ট্রোল করতে পারবে না।আশিয়ান চলে যাওয়ায় ঊদিতা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।রান্নায় পুরোপুরি মনযোগ দিলো সে এবার।

রাতের রান্না শেষ করতে রাত দশটা বেজে গেছে প্রায়।দুজন মিলে একসাথে খুনসুটি করে রাতের খাবার সেড়ে নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেখে রুমে চলে এলো।ঊদিতা তার প্রাত্যহিক কাজকর্ম শেষ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।আশিয়ান এতক্ষণ বারান্দায় ছিলো।রুমে এসে দেখে ঊদিতা বিছানায় শুয়ে।আশিয়ান দুষ্টু হাসি দিয়ে বারান্দা ও রুমের দরজা লাগিয়ে বাতি নিভিয়ে ডিম লাইট জ্বেলে দিয়ে ঊদিতার পাশে এসে শুয়ে পড়লো।আশিয়ান ঊদিতার পেটে হাত রেখে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতা চুপচাপ অনুভব করছে আশিয়ানের আদরগুলো।অন্যান্য দিনের মতো আজ রাতটাও ছিলো ভালোবাসায় ভরপুর।দুজন হারিয়ে গিয়েছে দুজনের মাঝে।

❤️❤️❤️

পরদিন সকাল ওঠে খাবার খেয়ে রেডি হয়ে দুজন বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।বিছনাকান্দি গিয়ে দুজন প্রচুর ঘুরাঘুরি করলো।পানিতে হাত ডুবিয়ে ফটো তুললো দুজনে।ঊদিতা তো এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে পুরো বোবা বনে গেছিলো।প্রকৃতির সৌন্দর্য্য প্রকাশ করার মতো ভাষা খুঁজে পায় নি সে।দুপুরের দিকে একটা রেস্টুরেন্টে ওঠে লাঞ্চ সেরে নিলো ওরা দুজন।বিছনাকান্দি থেকে এবার সাদা পাথর বেড়াতে গেল ওরা।সাদা পাথরে একটু কেয়ারফুল থাকতে হয়েছে।আশিয়ান তো ঊদিতার হাতই ছাড়ে নি একমুহূর্তের জন্য।সারাদিন দুজন প্রচুর ঘুরাঘুরি করে অনেক ছবি তুলে ক্ষান্ত দিয়ে এবারের মতো পানসি রেস্টুরেন্টে ওঠে রাতের ডিনার সেড়ে নিলো।তারপর ক্লান্ত দেহে ফিরে এলো বাসায়।এসেই গোসল করে দুজন বেদম ঘুমে তলিয়ে গেল।

🍁🍁🍁

এর পরদিন দুজন রাতারগুল গেল বেড়াতে।দুজন নৌকাতে চড়লো।শাপলাবিলে গিয়ে ফটো তুললো।রাতারগুল থেকে ওরা দুজন গেল শ্রীমঙ্গল চা বাগানে।সেখানেও প্রচুর ঘুরাঘুরি করলো ওরা।সাতরঙা চা খেল ঊদিতা আর আশিয়ান।দুজন বাসার জন্য চাপাতা নিলো অনেকগুলো প্যাকেট।সারাদিন এভাবেই ঘুরাঘুরি করে কেটে গেল।দিনটা যেন ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে।একটা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে ওঠে রাতের খাওয়া সেড়ে নিলো তারা।

রাতে বাসায় না গিয়ে উপশহরের রোজ ভিউ হোটেলে ওঠলো ওরা দুজন।হানিমুনের জন্য একটা রুম বুক করলো আশিয়ান।রুমে ঢুকে ঊদিতা অবাক।সারা বিছানা ফুল দিয়ে সাজানো।সাদা বেডের ওপর লাল গোলাপ ফুল দিয়ে লেখা হ্যাপি হানিমুন।হোটেলটা ঊদিতার অনেক ভালো লেগেছে।ভীষণ সুন্দর হোটেলের সবকিছু।আশিয়ান ঊদিতাকে দুষ্টু হেসে বললো;

আশিয়ান:-আজ আমাদের বাসর রাত বুঝলে জানু?আমাদের বিয়ের প্রথম রাতগুলো কেমন জানি পানসে কেটেছিলো।তবে আজ এই সুযোগটা আমি মোটেও ছাড়তে চাই না।আজ আমাদের প্রকৃত বাসর রাত হবে সোনা!

ঊদিতা লজ্জায় মুখ ঢেকে বললো;

ঊদিতা:-আপনি আসলেই একটা অভদ্র।

আশিয়ান মুচকি হেসে সালমান মুক্তাদিরের গানটা গেয়ে উঠলো;

আশিয়ান:-অভদ্র হয়েছি আমি
তোমারই প্রেমে তাই,,,
কাছে আসো না,,
আরো কাছে আসো না,,
পাশে বসো না,,
কোনো কথা বলো না…!

ঊদিতা লজ্জায় শেষ।আশিয়ানের এমন দুষ্টুমি তাকে বরাবরই লজ্জায় ফেলে দেয়।ঊদিতাকে কোলে নিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে আশিয়ান।ঊদিতা নতুন বউয়ের মতো লাজে রাঙা হয়ে বসে আছে।আশিয়ান আবারও বলে উঠে;

আশিয়ান:-আজ সব লজ্জা ভেঙে দিই আমার বউটার হুম?

ঊদিতা আশিয়ানের মুখের ওপর হাত চেপে ধরে যাতে আশিয়ান আর কোনো কথা না বলতে পারে।আশিয়ান খিলখিল করে হেসে ঊদিতার গালে ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো।ঊদিতা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে ততক্ষণে।দুজন দুজনার প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলো।তলিয়ে গেল ভালোবাসার গহীনে।

🌸🌸🌸

সকালে ঘুম থেকে ওঠে দুজন গোসল করে সকালের নাশতা করে নিলো।তারপর আবারও দুজন ঘুরতে চলে গেল।আজকে শাহজালাল ইউনিভার্সিটি দেখতে যাবে ওরা।ভার্সিটিতে গিয়ে ঘুরাঘুরি করে এলো ওরা।আশিয়ানের মুখে মাস্ক লাগানো থাকায় তাকে কেউ চিনতে পারে না।নয়তো পিলপিল করে মানুষ আসতো সেলফি নেয়ার জন্য।ভার্সিটি থেকে দুজন এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড পার্কে গিয়ে ঘুরলো।তারপর গেল ড্রিমল্যান্ড পার্কে।ড্রিমল্যান্ড পার্ক থেকে এয়ারপোর্টের খালিজায়গায় গিয়ে ঘুরাঘুরি করলো দুজন মনের আনন্দে।

আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে একটা মাজারেও যায়নি।তার কারণ সে মহিলা কাউকে নিয়ে মাজারে যেতে পছন্দ করে না।ঊদিতাও একটুও জোর করে নি এ নিয়ে।সে এমনিতেই অনেক খুশি।

আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে সিলেটের প্রায় অর্ধেক জায়গাই ঘুরে দেখে নিয়েছে।যদিও আশিয়ান এর আগে সিলেটে বহুবার এসেছিলো।বন্ধুদের সাথে ট্যুরেও এসেছিলো ঘুরতে।

ঘুরাঘুরি করতে করতে কীভাবে যে একসপ্তাহ হয়ে গেছে বুঝতেই পারে নি কেউ।আরও তিনদিন থাকার ইচ্ছে ছিলো আশিয়ানের ঊদিতাকে নিয়ে।কিন্তু হুট করে মি.মোরশেদ ফোন করে বললেন যে তার মায়ের শরীর খারাপ।ওনাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে।এই খবর শুনে আশিয়ান পাগল প্রায়।তার মা তার কলিজা।ওনার কিছু হলে আশিয়ান পুরাই পাগল হয়ে যায়।ঊদিতাকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ তৈরি হয়ে গেছে সে।ম্যানেজার বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট কেটে দিলেন দুটো তাদের জন্য।ট্রেন বা বাস দিয়ে যাওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই আশিয়ানের।সে যত জলদি পারে তার মায়ের কাছে পৌঁছাতে চায়।

আশিয়ানের টেনশন দেখে ঊদিতাও ভেতরে ভেতরে টেনশনে আছে।মনটা খালি কু গাইছে তার।মি.মোরশেদ তো বিস্তারিত কিছুই বলেন নি তাদের।শুধু বলেছেন মিসেস ইয়াসমিনের শরীর খুব খারাপ।যত জলদি পারো বাসায় চলে আসো।এরবেশি তিনি একটা কথাই বলেন নি।

আশিয়ান প্লেনে উঠার আগ অবধি শুধু তাহমিদ,তামজিদ ও তাশজিদের কাছ থেকে তার মায়ের আপডেটই নিয়েছে।আশিয়ান বুঝতে পারলো না তার মায়ের কী এমন হয়েছে যে ডিরেক্ট আইসিইউতে এডমিট করতে হয়েছে!

দুজন ঢাকায় পৌঁছে গেছে আধাঘন্টার মধ্যেই।আশিয়ান ঊদিতাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সোজা এপোলো হসপিটালে ছুটলো।

ঊদিতা বাসায় এসে দেখলো বাসায় এনা ছাড়া আর কেউ নেই।এনার চোখ ফোলা ফোলা লাগছে ঊদিতার কাছে।এনা ঊদিতাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।ঊদিতার মনে ধক করে উঠে।

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন বলে আশা করছি।রিচেক দিই নি।অলয়েজ,, হ্যাপি রিডিং গাইজ ❤️)

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here