তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্বঃ৩৪
(আজ আরো দুই পর্ব দিবো)
ঊদিতা এনার পিঠে হাত বুলিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে উঠে;
ঊদিতা:-আপু কী হয়েছে?এভাবে কাঁদছো কেন?প্লিজ খুলে বলো আমাকে?
এনা হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে।ঊদিতা এনাকে একটু স্বস্থির হওয়ার সুযোগ দিলো।এনাকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই এনা ঢকঢক করে গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে নিলো।নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো সে কিন্তু পারলো না।কেঁদে কেঁদেই ঊদিতাকে বললো;
এনা:-ভাবী আমার আম্মু,,,আমার আম্মুর কোভিড ধরা পড়েছে।আম্মুর অবস্থা অনেক শোচনীয়।ভাবী আমি আম্মুকে ছাড়া কী করে থাকবো বলো?আমাকে আমার আম্মুর কাছেও যেতে দিচ্ছে না কেউ।
এনার কথা শুনে ঊদিতার বুকটা হু হু করে উঠে।একসপ্তাহের ব্যবধানে এ কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছে না ঊদিতা।এনাকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-এসব কী বলছো আপু তুমি?মায়ের করোনা,,,কীভাবে কী হলো?
এনা:-জানি না ভাবী।তোমরা যাওয়ার পর দুদিন পর্যন্ত ভালোই ছিলেন।তারপর আম্মুর আস্তে ধীরে শরীর খারাপ হতে শুরু করে।গায়ে জ্বর ছিলো।শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেল হুট করে।কীভাবে কী হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না কেউ।ডক্টর আঙ্কেল সবার প্রথমেই কোভিড টেস্ট করতে দিয়েছিলেন।টেস্ট করার পর কোভিড পজিটিভ আসে।পরশুদিন রাতে অবস্থা এতই বেগতিক হয়েছে যে তৎক্ষনাৎ হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় আম্মুকে।এবং আইসিইউতে এডমিট করা হয়।
ঊদিতা হতবাক হয়ে শুনে গেল শুধু এনার কথা।কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেল না সে।মিসেস ইয়াসমিনকে সে অনেক ভালোবাসে।নিজের মায়ের মতো মনে করে ওনাকে সে।কখনো শ্বাশুড়ি বলে গন্য করে নি,,নিজের মায়ের মতোই আপন মনে করে এসেছে।সেই মায়ের আজ এই অবস্থা,,, মেনে নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে ঊদিতার।চোখ ফেটে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে তার গাল বেয়ে।আজ সকাল পর্যন্তও তো এত হাসিখুশি ছিলো।অল্প সময়ের ব্যবধানে আজ এরকম শোকের ছায়া নেমে এলো তাদের জীবনে।
ঊদিতা:-আমাদেরকে আগে কেন জানাও নি আপু?(কাতর কন্ঠে)
এনা দুহাত দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে কান্নাস্বরে বললো;
এনা:-বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাপা মানা করলেন।তোমাদেরকে শুধু শুধু টেনশনে ফেলতে চায় নি।কিন্তু আম্মু নাকি কাল রাতে বলেছেন তিনি আশু ভাইয়াকে দেখতে চান।তাই পাপা কল করে তোমাদেরকে আসতে বললেন।
ঊদিতা আবারও জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-বাসায় তুমি একা কেন আপু?বাকিরা কই?(কৌতুহলী কন্ঠে)সবাই কী হসপিটালে নাকি?
এনা:-না ভাবী!আম্মুর যখন করোনা পজিটিভ আসে তখন মেঝভাবী তার মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে।ওনাকে কেউই আটকায় নি বরং সমর্থন করেছে।পরে পাপার আদেশ অনুযায়ী বড়ভাবীকে আর পুতুলকে বড়ভাইয়া ভাবীর বাপের বাড়িতে রেখে এসেছেন।ভাবী যাবে না বলে অনেক কান্নাকাটি করেছেন কিন্তু পাপার মুখের ওপর কথা বলার সাহস পায় নি কেউ।আলেয়া ভাবী আর তাসকিন ভাইয়া তোমরা যাওয়ার দুদিন পর বালিতে চলে গেছেন।তাদেরকেও এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয় নি।আর বাকিরা হসপিটালে।শুধু আমিই বাসায় আছি।
ঊদিতা অনেক অবাক হলো এসব শুনে।রোগ তো আল্লাহই দেন আবার শিফাও তিনি দান করেন।তাই বলে বাপের বাড়ি চলে যেতে হবে,,এটা কেমন কথা?ঊদিতা এনার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেকে শক্ত করে বললো;
ঊদিতা:-শুনো আপু কখনো অধৈর্য্য হয়ো না।এটা আল্লাহর তরফ থেকে একটা পরীক্ষা মাত্র।আমাদের মায়ের কিচ্ছু হবে না তুমি একটুও চিন্তা করো না।মাকে সুস্থ হতেই হবে।আমাদের মা ঠিকই সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।আমরা নামাজ পড়ে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে আমাদের মায়ের সুস্থতা চাইবো।দেখবে আল্লাহ আমাদের কখনো নিরাশ করবেন না।
ঊদিতার কথা শুনে এনা মনে শান্তি পেল।আশার আলো জ্বলে উঠলো তার মনে।হ্যা সে আল্লাহর কাছে নিজের মায়ের প্রাণভিক্ষা চাইবে।আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে ফিরিয়ে দেবেন না।ঊদিতা ড্রয়িং রুমেই নিজের বোরকা হিজাব খুলে এনাকে জিজ্ঞেস করলো;
ঊদিতা:-আপু তোমার মুখ এত শুকনো লাগছে কেন?কিছু খাও নাই এখনও?(জানতে চেয়ে)
এনা:-খেতে ভালো লাগছে না ভাবী।আমার গলা দিয়ে কিছু নামছে না।(মলিন কন্ঠে)
ঊদিতা:-তা বললে তো হবে না আপু।না খেলে যে তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে!সামান্য হলেও তো খেতে হবে আপু।আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।একটুও মানা করতে পারবে না।চুপচাপ খেয়ে নিবে।
এনা মানা করতে গিয়েও পারলো না।বুঝতে পারছে ঊদিতা তাকে না খায়িয়ে ছাড়বে না।ঊদিতা প্রথমে নিজের রুমে গিয়ে সবকিছু সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখে রান্নাঘরে এসে এনার জন্য খাবার তৈরি করতে লাগে।তাড়াহুড়োর সাথে আলুভর্তা,ডিমভাজি এবং মাছ ভাজা করলো সে সাথে সাদা ভাত রান্না করলো।বেগুনের পুরি ও বানিয়ে ফেললো ঝটপট।এত জলদির মধ্যে এর বেশি কিছু করতে পারে নি সে।
খাবার বেড়ে নিয়ে এনার কাছে গিয়ে নিজে তাকে মুখে তুলে খায়িয়ে দিলো।কারণ এনা নিজে থেকে ভাত খেতে চাইছে না।মায়ের চিন্তায় মনটা ভালো নেই তার।ঊদিতা তাকে খায়িয়ে দিয়ে নিজেও সামান্য খেয়ে নিলো।এনাকে সঙ্গ দিতে এনার রুমেই তার সাথে শুয়ে পড়ে সে।মনে হাজারও চিন্তার ঝড় বইছে তার।আশিয়ানের কথা ভাবছে সে।না জানি কী করছে মানুষটা মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে?
🌵🌵🌵
আশিয়ান কীভাবে যে ড্রাইভ করে হসপিটালে এসে পৌঁছেছে তা সে নিজেও বলতে পারবে না।তাশজিদ নিচে ছিলো।আশিয়ানকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল সে।আশিয়ান প্রায় দৌড়ে তাশজিদের কাছে এলো।তাশজিদ আশিয়ানের হাত ধরে হসপিটালের ভেতরে ঢুকে।লিফটে করে সাততলায় গিয়ে পৌঁছে ওরা দুজন।তাশজিদের মুখটা মলিন হয়ে আছে।আশিয়ানের চোখ বারবার ভিজে আসছে।কিছু বুঝতে পারছে না সে।মিসেস ইয়াসমিনের চিকিৎসা ভিআইপি সাইটে হচ্ছে।নামীদামি ডক্টররা ওনার চিকিৎসা করছেন।
আইসিইউ কেবিনের বাইরে পরিবারের সবাইকে দেখতে পেল আশিয়ান।মি.মোরশেদের চেহারা টেনশনে কালো হয়ে গেছে।প্রাণ প্রিয় স্ত্রীর এই অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না তিনি।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওনার।আশিয়ানকে দেখে নিজেকে তিনি স্বাভাবিক করলেন।আশিয়ান তার মায়ের পাগল।এখন ওনি যদি স্বাভাবিক না হন তাহলে আশিয়ান পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।
আশিয়ান দৌড়ে এসে মি.মোরশেদের সামনে দাঁড়ালো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-পাপা,,,ও পাপা,,বলো না আম্মুর কী হয়েছে?বলো?
মি.মোরশেদ:-নিজেকে কন্ট্রোল করো আশিয়ান।তোমার মায়ের কোভিড ধরা পড়েছে।অবস্থা ভালো না তেমন।ডক্টররা আশা দিতে পারছেন না।জানি না কী হবে!(ধরা গলায়)
আশিয়ান হতভম্ব হয়ে গেছে মি.মোরশেদের কথা শুনে।হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে সে।তার মাথায় কিছু ঢুকছে না।কী থেকে কী হয়ে গেল এসব?আশিয়ান মি.মোরশেদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।মি.মোরশেদের চোখ থেকেও পানি পড়ছে অনবরত।তাহমিদ এগিয়ে এসে আশিয়ানকে নিজের কাছে টেনে আনলো।আশিয়ান অনবরত ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে বাচ্চাদের মতো।যে ছেলেটা এত স্ট্রং পার্সোনালিটির একজন ব্যক্তি সে আজ তার মায়ের এমন অবস্থার কথা শুনে পাগলের মতো কান্না করছে।ঊদিতার ভাই শাহরিয়ারও হসপিটালে ছিলো।এগিয়ে এসে আশিয়ানকে শান্তনা দিতে লাগলো সে।
মি.মোরশেদ কোন মুখে শান্তনা দিবেন ছেলেকে তিনি বুঝতে পারছেন না।কী-ই বা করার আছে ওনার।সবকিছু আল্লাহর হাতে এখন।হায়াত মাউতের মালিক তিনি।একমাত্র তিনিই জানেন মিসেস ইয়াসমিন বাঁচবেন, নাকি বাঁচবেন না!
তাশজিদের চোখ লাল হয়ে গেছে।বোঝাই যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে সে।তাহমিদ নিজেকে বহুত কষ্টে সামলে রেখেছে।সবাই যদি ভেঙে পড়ে তাহলে কাকে কে সামলাতে পারবে।সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় তার ওপর দায়িত্বের ভারও অনেক।
ডক্টরের পারমিশন পেয়ে আশিয়ান তাশজিদের সাথে কেবিনে প্রবেশ করলো।তাশজিদ নিজেও একজন ডক্টর হবে ২-৩ বছর পরে।মেডিকেলের স্টুডেন্ট সে।তাই এসব কিছু সে ভালোই বুঝে।দুজনের মুখে মাস্ক,হাতে গ্লাভস,ও পরনে এপ্রোন।আশিয়ান কেবিনে ঢুকে বেডের দিকে তাকায়।এগিয়ে গিয়ে মিসেস ইয়াসমিনের ওপর চোখ রাখে সে।মুহূর্তেই চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে গিয়ে তার মায়ের হাতের ওপর পড়ে।এই কদিনে কী অবস্থা হয়েছে ওনার?ফর্সা মুখ শুকিয়ে একদম পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে।চোখ দুটো যেন কোটরে বসে গেছে।শরীরও একদম শুকিয়ে গেছে।
মিসেস ইয়াসমিনের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো,হাতে ক্যানোলা,আরও কত কী লাগানো আছে যা আশিয়ান জানে না।মিসেস ইয়াসমিন চোখ বন্ধ করে ছিলেন।হাতের ওপর পানির ফোঁটা পড়ায় পিটপিট করে চোখ মেলে তাকান তিনি।আশিয়ানকে দেখতে পেয়ে খুশিতে ওনারও চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।আশিয়ান মিসেস ইয়াসমিনের হাত ধরে নিজের গালের সাথে লাগিয়ে কেঁদে ফেলে।মিসেস ইয়াসমিনের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা একটু সরিয়ে দেয় তাশজিদ।মিসেস ইয়াসমিন আদো আদো কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-বাবা,,,তুই,,, এ,,এসেছিস?
আশিয়ান চোখের জল ফেলে ধরা গলায় বলে;
আশিয়ান:-হ্যা আম্মু,,আমি এসেছি।দেখো তোমার আশিয়ান এসেছে আম্মু!
মিসেস ইয়াসমিন মৃদু হেসে জবাব দিলেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-কান্না করছিস কেন বাবা?কিছু হয় নি তো আমার!তোদের রেখে এত সহজে মরবো না আমি।
আশিয়ান আবারও কেঁদে দিয়ে বলে;
আশিয়ান:-এসব কথা কক্ষনও বলবে না আম্মু!তুমি একদম সুস্থ হয়ে যাবে দেখাে!আমার আম্মুর কিচ্ছু হবে না।
মিসেস ইয়াসমিন আর কিছু বলতে পারলেন না।তাশজিদ ওনার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দিলো।নয়তো শ্বাসকষ্ট ওঠে যাবে পড়ে।আশিয়ান মিসেস ইয়াসমিনের কপালে চুমু খেয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।মিসেস ইয়াসমিন চাইছিলেন আশিয়ান যেন ওনার কাছে থাকে।কিন্তু তিনি বলতে পারলেন না।
আশিয়ান সারারাত কেবিনের বাইরেই বসে ছিলো।সারাদিনের মাঝে কিছুই তার পেটে পড়ে নি একটু পানি ছাড়া।বাকিরা জোর করেও তাকে খাওয়াতে পারে নি।তাজিম এনাকে ফোন দিয়ে সব বলেছিলো।ঊদিতা আশিয়ানের কথা শুনে রাতে আর একটুও খেতে পারে নি।তার স্বামী না খেয়ে বসে আছে হসপিটালে তাহলে সে কীভাবে খাবে?
রাতে আশিয়ান বাসায় ফিরে নি আর।কেবিনের বাইরের চেয়ারেই চুপচাপ বসেছিলো।মি.মোরশেদ শাহরিয়ারকে একবার বলেছিলেন ঊদিতাকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে যেতে কিন্তু সে সাফ মানা করে দিয়েছে।কারণ শ্বাশুড়িকে এই অবস্থায় ফেলে ঊদিতা নিজেও তার বাসায় কখনো যাবে না।
✒
রাতটা নির্ঘুম কেটেছে সবার।পরদিন সকালে আশিয়ান বাসায় এলো তাহমিদের সাথে।ঊদিতা নিজের রুমেই ছিলো।আশিয়ানের টকটকে লাল চোখ জোড়া দেখে বুকটায় মোচড় দিয়ে ওঠে তার।সারারাত ঘুমায় নি এরমাঝে বোঝাই যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে সে।আশিয়ান ঊদিতার সাথে কোনো কথা বললো না।চুপচাপ কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ঊদিতা বুঝতে পারলো যে আশিয়ানের মুড অফ।তাই সেও তাকে এতোটা না ঘাঁটিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে আশিয়ানের জন্য সুগন্ধি চা আর হালকা কিছু নাশতা নিয়ে এলো।
আশিয়ান একদম গোসল সেড়ে বেরিয়ে বিছানায় বসে রইলো চুপচাপ।ঊদিতা আশিয়ানের হাতে চায়ের মগটা ধরিয়ে দিয়ে টাওয়েল দিয়ে তার মাথাটা ভালোমতন মুছে দিলো।আশিয়ান চুপচাপ চা টা খেয়ে নিলো।ঊদিতা নাশতার প্লেট এগিয়ে দিতেই আশিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে;
আশিয়ান:-আমি খাবো না কিছু।
ঊদিতা কোনো কথা না বলে মুখে তুলে একপ্রকার জোর করে খায়িয়ে দিলো তাকে।পেটে খিদে থাকায় আশিয়ানও বিশেষ বাঁধা দিতে পারে নি।ঊদিতা এঁটো থালাবাসন গুলো রান্নাঘরে রেখে এসে আশিয়ানের পাশে বসলো।আশিয়ান ঊদিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।নিজেকে সে কোনোমতেই সামলাতে পারছে না।সারা বাসাটা খালি খালি লাগছে।এসব সে মেনে নিতে পারছে না।ঊদিতা কান্না করলো না।আশিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো;
ঊদিতা:-আপনি এভাবে ভেঙে পড়লে হবে বলুন তো?ভুলে যাবেন না আপনি মায়ের সবথেকে বেশি আদরের ছেলে।আমাদের এখন মাকে উৎফুল্ল রাখতে হবে।আপনাকে এ অবস্থায় দেখলে মা নিজেই বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলবেন।আপনি কী সেটা চান বলুন?নিজেকে শক্ত রাখুন।এটলিস্ট বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে।বাবা বাইরে নিজেকে শক্ত দেখালেও ভেতরে ভেতরে ওনি নিজেও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন।আপনি এমন কান্নাকাটি করলে এনা আপু,তাশজিদ ভাইয়া,বড়ভাইয়া,বাবা ওনারাও ভেঙে পড়বেন।দোয়া করুন মায়ের জন্য।আল্লাহ যাতে খুব দ্রুত ওনাকে সুস্থ করে দেন।এখন দোয়া ছাড়া আমাদের তেমন কিছু করার নেই।কান্না সবকিছুর সমাধান নয়।
ঊদিতার অনুপ্রেরণামূলক কথা শুনে আশিয়ান বহুত কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো।কান্না থামিয়ে ঊদিতার বুকে মাথা রেখে চুপচাপ বসে রইলো।ঊদিতা পরম যত্নে আশিয়ানের চুলে বিলি কাটছে।ঊদিতা নরমকন্ঠে আবারও বলে উঠে;
ঊদিতা:-আপনি হসপিটালে যাওয়ার সময় আমাকেও সাথে নিবেন।এই মুহূর্তে মায়ের কাছে আমাদের থাকা প্রয়োজন।ডক্টর হয়তো কেবিনে আমাদেরকে এলাও করবে না কিন্তু আমাদের দুজনকে ওনার পাশে থাকতে হবে।এতে মায়ের আর একা অনুভব হবে না।ওনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।আমরা ওনাকে সাহস জুগিয়ে দিবো।এই রোগটা থেকে ওনি খুব দ্রুতই সেড়ে উঠবেন ইনশাআল্লাহ।দেখবেন আল্লাহ আমাদেরকে নিরাশ করবেন না।মা খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবেন।
আশিয়ান ঊদিতার কথা শুনে এবার পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেল।মনে নতুন ভাবে আশার আলো জেগে ওঠেছে তার।ডক্টররা তো ডিরেক্টলি বলে দিয়েছে,,সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।এরজন্যই তো সবাই এত ভেঙে পড়েছে।আশিয়ানও কেঁদে কেটে বুক ভাসাচ্ছে।তবে ঊদিতার কথায় কিছু তো এমন ছিলো যেটা নতুন করে আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে আশিয়ানের বুকে।আশিয়ান ভালো করে চোখ দুটো মুছে নিলো।ঊদিতার কথায় সায় জানিয়ে বললো;
আশিয়ান:-ঠিক বলেছো তুমি!এভাবে কেঁদে কেটে কিছুই হবে না।ডক্টররা কী বলবে!আল্লাহ চাইলে দ্রুত আমাদের আম্মু সুস্থ হয়ে যাবেন।আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবো না।আমি নিজের হায়াতের বিনিময়ে হলেও আমার আম্মুকে চাই।ঊদিতা তুমি তৈরি হয়ে নাও।আমরা আমাদের আম্মুর কাছে যাবো।
ঊদিতা আশিয়ানের মাথায় হাসিমুখে হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর বসা থেকে ওঠে গিয়ে বোরকা পড়ে তৈরি হতে লাগলো।আশিয়ানও তৈরি হয়ে নিলো।তারপর তাহমিদকে বলে দুজন বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।আশিয়ানের গাড়ি মাহবুব ড্রাইভ করছে।আশিয়ান ঊদিতার সাথে পিছনে বসেছে।ড্রাইভ করার মতো শক্তি ও ইচ্ছা কোনোটাই নেই তার।
২৫ মিনিটের মধ্যে হসপিটালে এসে পৌঁছে গেলো দুজন।আশিয়ান ঊদিতার হাত ধরে হেঁটে গিয়ে লিফটে ওঠলো।লিফট ৭ তলায় এসে নামতেই দুজন লিফট থেকে বেরিয়ে নির্দিষ্ট কেবিন লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলো।মি.মোরশেদ ওয়েটিং সিটে বসে আছেন।পাশে মি.এনামুল নিজের ভাইকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন সমানে।
মিসেস ইয়াসমিনের অবস্থার কোনো উন্নতি হয় নি।আগের মতোই খারাপ অবস্থা।ডক্টররা তাদের বেস্ট চিকিৎসা দিচ্ছে ওনাকে।কিন্তু কিছুতেই কোনো লাভ হচ্ছে না।
ঊদিতা হাতে স্যানিটাইজার মেখে নিলো।আশিয়ান মি.মোরশেদকে শান্তনা দিচ্ছে।ডক্টর এসে বললো যে কেবিনে রোগীর কাছে ওরা কাউকে এলাও করবে না।ঊদিতা চোখ রাঙিয়ে তাকালো ছেলে ডক্টরটির দিকে।কটমট কন্ঠে বললো;
ঊদিতা:-আপনাকে এত ভাবতে হবে না।রোগীর পরিবারের লোকজন অবশ্যই যাবে রোগীকে দেখতে।আপনাদের এসব ফালতু নিয়ম মানার কোনো আগ্রহ নেই আমার।সামনে থেকে সরুন আমি ভেতরে যাবো।
ডক্টর হতভম্ব হয়ে গেছে ঊদিতার ধমক দিয়ে কথা বলা শুনে।বেচারার সাথে এর আগে এমন করে আর কেউ কখনো কথা বলে নি।দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।ঊদিতা ডক্টরকে ডিঙিয়ে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করলো।পিছন থেকে আশিয়ান ডক্টরকে আশ্বস্ত করলো।ডক্টর আর বাঁধা দিতে পারলো না।তবে মনে মনে ক্ষেপে গেছে ঊদিতার ওপর।
তাশজিদও ভেতরে ঢুকেছে ঊদিতার পেছন পেছন।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনের বিছানার পাশের টুলের ওপর বসলো।ঔষধের গন্ধ,ফিনাইলের গন্ধ সবমিলিয়ে একধরনের ঝাঁঝালো গন্ধ এসে নাকে ধাক্কা মারলো ঊদিতার।নাকমুখ কুঁচকে গেলো তার।মিসেস ইয়াসমিন সজাগই ছিলেন তবে ওনার শরীর প্রচন্ড দুর্বল।তাই চোখ বন্ধ করে আছেন।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনের ক্যানোলা লাগানো হাতে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো;
ঊদিতা:-মা,,,আমি এসেছি দেখাে।
ঊদিতার কন্ঠ শুনতে পেয়ে মিসেস ইয়াসমিন দুর্বল ভাবে চোখ মেলে তাকালেন।ঊদিতাকে দেখে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন তিনি যে সে কেমন আছে?ঊদিতা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো;
ঊদিতা:-তোমাকে অনেক মিস করছিলাম মা।তোমাকে ছাড়া বাসাটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো তাই দেখো এখানে চলে এসেছি।
মিসেস ইয়াসমিনের চেহারা জ্বলজ্বল করছে ঊদিতাকে দেখে।ঊদিতার কথা শুনে তিনি অনেক খুশি হলেন।কিছু বলতে চাইলেন তিনি,,তাশজিদ সেটা বুঝতে পেরে মাস্কটা একটু সরিয়ে দিলো।মিসেস ইয়াসমিন দুর্বল ও নিভু নিভু কন্ঠে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো রে মা।তুই যাস না আমাকে রেখে।আমার একা একা ভালো লাগে না মা।
ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনের হাত আলতো ভাবে ধরে মুচকি হেসে বললো;
ঊদিতা:-আমি তোমার কাছেই থাকবো মা,,তুমি একটুও চিন্তা করো না।তুমি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে।
মিসেস ইয়াসমিন প্রশান্তির হাসি দিয়ে ঊদিতাকে নিভু নিভু কন্ঠে বললেন;
মিসেস ইয়াসমিন:-আমি তোদের সাথে বাঁচতে চাই রে মা।এত জলদি মরার ইচ্ছা নেই আমার।আমি আমার এনা আর তাশজিদকে বিয়ে দিয়ে সুখী দেখে যেতে চাই।তোর আর আশিয়ানের সন্তানকে দেখতে চাই।আমার অনেক শখ রে মা আমার আশিয়ানের সন্তানাদি দেখে যাওয়ার।জানি না আল্লাহ সেটা পূরণ করবেন কি না!
বাচ্চার কথা শুনে ঊদিতা সামান্য থমকে গেল,,একটু লজ্জাও পেল সে কারণ সামনে তাশজিদ ছিলো।সে হয়তো শুনেছে তার মায়ের কথা।ঊদিতা মুচকি হাসি দিয়ে বললো;
ঊদিতা:-তোমার শখ অবশ্যই পূরণ হবে মা,,,তুমি একটুও চিন্তা করো না।আগে তুমি সুস্থ হয়ে যাও তারপর দেখবে তোমার সকল ইচ্ছে পূরণ হবে।
তাশজিদ আর মিসেস ইয়াসমিনকে কথা বলতে দিলো না।খুব দ্রুত মাস্কটা লাগিয়ে দিলো সে।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনের পাশেই বসে রইলো।ঊদিতাই হয়তো একমাত্র মেয়ে যে এরকম রেকর্ড ব্রেক করেছে।মানুষ করোনা ভাইরাসকে প্রচন্ড ভয় পায়।অথচ তার মনে ছিটেফোঁটা ভয়ও কাজ করছে না।তার কাছে সব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।ডক্টররা রোগীর কেবিনে এভাবে কাউকে এলাও করেন না কিন্তু ঊদিতা তাদের এসব রুলসের ধারও ধারে নি।তার মতে রোগীর কাছে রোগীর প্রিয়জন থাকলে সে অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।মনে সাহস আসে।কাছের মানুষ থাকলে মনে স্বস্তি আসে।
তাশজিদ বেরিয়ে যেতেই আশিয়ান কেবিনে প্রবেশ করে।ঊদিতা আশিয়ানকে দেখে বললো;
ঊদিতা:-আপনি সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিন।ওনারা সারাদিন ধরে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে এখানে পড়ে আছেন।পরে তো ওনারাও অসুস্থ হয়ে পড়বেন।আপনি জোর করে হলেও সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিন।আমরা আছি এখানে মায়ের পাশে।যান।
আশিয়ান সায় জানিয়ে চলে গেল।ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনের হাত ধরে ঠায় বসে রইলো।একজন নার্স এসে কীসের একটা ইনজেকশন পুশ করলো মিসেস ইয়াসমিনের হাতে।ঊদিতা চেয়ে চেয়ে দেখছে শুধু।
আশিয়ান সবাইকে একপ্রকার জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।তারপর কেবিনে এসে ঢুকে এককোণে রাখা কাউচের ওপর বসে পড়লো।মিসেস ইয়াসমিনও ঘুমিয়ে গেছেন ততক্ষণে।ঊদিতা জায়গা থেকে নড়লো না।তবে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।আশিয়ানও ঊদিতার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে।
প্রায় ২ ঘন্টা পর তাশজিদ আর তাহমিদ হসপিটালে এলো।আশিয়ান আর ঊদিতার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে তারা।বাকিদেরকে সাথে আনে নি ওরা।মি.মোরশেদকে মানা করেছে এখন আসতে।এনা আশিয়ানের ফোনে ভিডিও কল দিয়ে মাকে দেখছে চুপচাপ।পুরো কেবিনে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।তাহমিদ কেবিনের বাইরে থেকে আশিয়ানকে কল দিলো।আশিয়ান বাইরে এসে তাহমিদ আর তাশজিদকে দেখতে পেল।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে কেন্টিনে চলে গেল খাবার খেতে।তাশজিদ গিয়ে কেবিনের ভেতর বসলো।
দুজন দুপুরের খাবার অল্প করে খেয়ে নিলো।কাল রাত থেকে ঊদিতা শুধু মনে মনে দোয়া করছে মিসেস ইয়াসমিনের সুস্থতার জন্য।রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েছে সে।মোনাজাতে মিসেস ইয়াসমিনের সুস্থতা চেয়ে কান্না করেছে।তার একটাই চাওয়া,,মিসেস ইয়াসমিন যাতে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।বাসায় আগের মতো আনন্দ বিরাজ করুক।এতদিনে এটা সে বুঝতে পেরেছে যে সারা বাসার প্রাণই হলেন মিসেস ইয়াসমিন।তিনি না থাকলে কেমন অন্ধকার মনে হয় সব।
খাওয়া শেষে দুজন কেবিনের বাইরে এসে দাঁড়ালো।আশিয়ান একটা দরকারে নিচে যাবে।তাই ঊদিতা একাই কেবিনে প্রবেশ করলো।আশিয়ান নিচে চলে গেল।
নিচে আসতেই কারও আর্তনাদের শব্দ কানে আসে আশিয়ানের।একটা লোক ডক্টরের পায়ের কাছে পড়ে কান্না করছে।আশিয়ানের কৌতুহল হলো ভীষণ।এগিয়ে গেল সে ওখানে।লোকটার পাশে একজন পোয়াতি মেয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে পেট চেপে ধরে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।এমন দৃশ্য দেখে আশিয়ানের ভ্রু কুচকে গেল।একদম কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে এখানে হচ্ছেটা কী!ডক্টর নির্বিকার ভাবে জানালো টাকা ছাড়া অপারেশন করা সম্ভব হবে না।আশিয়ান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-কী হচ্ছেটা কী এখানে?
ডক্টর ভ্রু কুচকে তাকালো আশিয়ানের দিকে।কঠোর কন্ঠে বললো;
ডক্টর:-কে আপনি?আপনি এসে নাক গলাচ্ছেন কেন?
ডক্টর চিনতে পারে নি আশিয়ানকে।তাই এরকম ভাবে বললো।আশিয়ান চিবিয়ে চিবিয়ে যে লোকটা কান্না করছিলো ওই লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো;
আশিয়ান:-আপনি কাঁদছেন কেন?কী হয়েছে?
লোকটি দুহাত দিয়ে চোখ মুছে কান্নাস্বরে বললো;
লোকটা:-ভাই,,,আমি ওনার পায়ে ধরে বলছি আমার বউয়ের ডেলিভারি করার জন্য।টাকা আমি এখন কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারছি না।কয়েকটাদিন সময় দিলে আমি সব টাকা ম্যানেজ করে দিয়ে দেব বলছি।কিন্তু ওনারা রাজি হচ্ছেন না।টাকা জমা না দিলে আমার বউয়ের অপারেশন করবেন না ওনারা।আমি এখন কী করবো ভাই?আমার বউটা যে মরে যাবে।
মেয়েটার দিকে তাকালো একবার আশিয়ান।বয়স বাইশ কী তেইশ হবে।প্রসব বেদনায় ছটফট করছে অনবরত।আশিয়ান রক্তচক্ষু মেলে ডক্টরের দিকে তাকালো।রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।একটা মানুষ মরে যাচ্ছে সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই তারা টাকা নিয়ে পড়ে আছে।আশিয়ান মুখের মাস্ক সরিয়ে ঠাসস করে এক চড় বসিয়ে দিলো ডক্টরের গালে।করিডরের পরিবেশ মুহূর্তেই শান্ত হয়ে গেল।আশিয়ানকে দেখে ডক্টর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে গালে হাত দিয়ে।আশিয়ান ডক্টরের এপ্রোনের কলার ধরে বললো;
আশিয়ান:-এক্ষুনি এই মেয়েটার অপারেশনের ব্যবস্থা করবি।নইলে এমন অবস্থা করবো যে সারাজীবনের জন্য ডক্টরগীরি ছুটে যাবে।দেখে নেব কী করে হসপিটালে চাকরি করিস!গো ফাস্ট।
আশিয়ানের ধমকে ম্যাজিকের মতো কাজ হলো।আরও দুজন ডক্টর এগিয়ে এসে মহিলাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল।এই ডক্টর আশিয়ানকে অনুরোধ করে বললো;
ডক্টর:-আপনার পায়ে পড়ি।এমন কিছু করবেন না প্লিজ।একটা টাকাও লাগবে না।আমার টাকা দিয়ে আমি অপারেশন করবো।আপনি চিন্তা করবেন না।আমরা আমাদের বেস্টটা দিয়ে চিকিৎসা করবো।
আশিয়ান আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো;
আশিয়ান:-মনে থাকে যেন!শুধু এই মেয়ের ক্ষেত্রেই নয়।যে দরিদ্র মানুষটাই আসবে এখানে তার যেন বেস্ট চিকিৎসা হয়।কোনো ধরনের হেলাফেলা চলবে না।নয়তো কীভাবে তোমরা হসপিটালে ডক্টর হিসেবে থাকো সেটাও আমি দেখে নেবো মাইন্ড ইট।সবার চাকরি খাওয়া আমার বাম হাতের খেল।
ডক্টর:-জ্বী,,জ্বী বুঝেছি।
ডক্টর তাড়াহুড়ো করে চলে গেল।লোকটা কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশিয়ানের দিকে।আশিয়ান লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মানিব্যাগ বের করে সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা ও তার অফিসের কার্ড বের করে লোকটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো;
আশিয়ান:-এই টাকাটা রাখুন।বাচ্চা হলে তার জন্য কাপড় চোপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিবেন।আর হ্যা কোনো দরকার লাগলে আমার কার্ডের এই নাম্বারে কল দিয়ে আমার পিএর সাথে কথা বলবেন।সে পরে আমাকে জানিয়ে দিবে।আর আমি বর্তমানে এই হসপিটালের ৭ তলার ডান পাশের অপজিট সাইটে আছি।বেবি হলে আমাকে জানাবেন কিন্তু।এখন অপারেশন করতে কোনো টাকা লাগবে না।এমনকি যাবতীয় ঔষধের যোগাড়ও ওরা করে দিবে।টেনশন করবেন না।আর আমার আম্মুর জন্য দোয়া করবেন।
লোকটি চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে আশিয়ানকে কৃতজ্ঞতার সহিত বললো;
লোকটা:-আমি জানি না আপনার এই ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো।আল্লাহ আপনার অনেক ভালো করবেন।আপনার আম্মুর জন্য দোয়া রইলো।
আশিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে চলে গেল তার দরকারী কাজে।লোকটা কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আশিয়ানের যাওয়ার পানে।
#চলবে