তোমাতে বিলীন পর্ব: ৩৬

0
8394

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্বঃ ৩৬

সারা বাসায় এতক্ষণে ঊদিতার প্রেগন্যান্ট হওয়ার কথা চাওর হয়ে গেছে।মিসেস ইয়াসমিন খুশিতে আত্মহারা হয়ে ঊদিতাকে বুকে নিয়ে কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়েছেন।সাথে ওনার শ্বাশুড়ি মায়ের দেয়া স্বর্নের একজোড়া বালা ঊদিতার হাতে পরিয়ে দিলেন তিনি।আশিয়ানকে বললেন ঊদিতাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে চেক-আপ করাতে।হসপিটাল থেকে আসার পর বাকি সবাইকে খুশির খবর দেয়া হবে।বাসার সবাই ভীষণ খুশি।একসাথে দু দুটো বাচ্চা আসতে চলেছে তাদের বাসায় এরথেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে!

মিসেস ইয়াসমিনের কথা মতো আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে হসপিটালে চলে এলো চেক-আপ করানোর জন্য।ডক্টর (মহিলা) ঊদিতাকে টেস্ট করতে দিলেন।টেস্ট করার ১ ঘন্টা পর রিপোর্ট দেখে ডক্টর বললেন ঊদিতা দেড়মাসের প্রেগন্যান্ট।আশিয়ানকে ডক্টর ঊদিতার ব্যাপারে বললেন;

ডক্টর:-ওনার বয়সটা অনেক কম।এসময় বাচ্চা না নেয়াটাই ওনার জন্য ভালো হতো।তবে আশা করছি তেমন একটা অসুবিধা হবে না।আমি যে চার্টটা দিয়েছি সেটা অলয়েজ ফলো করবেন।খাওয়া দাওয়ায় কোনো গাফিলতি যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।আর কোনোরকম ভারী কাজ করা নিষেধ।কারণ এতে বাচ্চার ক্ষতি হবে।ফলমূল আর শাকসবজি বেশি করে খাওয়াবেন।কয়েকটা ঔষধের নাম প্রেসক্রাইব করে দিয়েছি সেগুলো টাইমলি খাওয়াবেন।মাসে মাসে চেক-আপ করাতে নিয়ে আসবেন।

আশিয়ান:-ওকে ডক্টর।আমি ওকে সবসময় আগলে রাখবো।এবং সবকিছু মেনে চলবো।

ডক্টর:-ওনার প্রতি একটু বেশিই খেয়াল রাখবেন।কারণ ওনি বাচ্চা নেয়ার মতো তেমন একটা ম্যাচুয়ের হননি তা বোঝাই যাচ্ছে।আশা করি বুঝতে পারছেন আমার কথা।তবে এইসবগুলো এডভাইস মেনে চললে আশা করি কোনো প্রবলেম হবে না।এতে মা ও শিশু দুজনেই ভালো থাকবে।

আশিয়ান:-জ্বী ডক্টর।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

ডক্টর:-মেনশন নট মি.চৌধুরী,,,ইট’স মাই ডিউটি।

ঊদিতা চুপচাপ শুধু তাদের কথা শুনে গেছে।সব কথা শুনে ঊদিতা বুঝতে পারলো কথায় কথায় আশা করি বলাটা ডক্টরের মুদ্রাদোষ।ঊদিতা নিজেই নিজের ওপর বিরক্ত।কীসব উল্টো পাল্টা চিন্তাভাবনা তার মাথার ভেতর ঘুরছে।আশিয়ান জানতে পারলে হয়তো তাকে পাগল ছাড়া আর কিছু বলবে না।আশিয়ান ঊদিতাকে নিয়ে ডক্টরের চেম্বার থেকে বেরিয়ে ফার্মেসীতে গিয়ে ঔষধ কিনলো।

তারপর গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি ড্রাইভ করে একটা সুপারশপে এসে নামলো সে।ঊদিতাকে সাথে নিয়ে সেখান থেকে ঊদিতার জন্য মাদার হরলিকস,দুধের প্যাকেট,কর্নফ্লাকস আরও কত কী কেনাকাটা করলো।একটা আচারের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ঊদিতা আশিয়ানকে বললো তাকে আচার কিনে দিতে।আশিয়ান ঊদিতাকে বেশ কয়েক ধরনের আচার কিনে দিলো।

ঊদিতা গাড়িতেই আচার খাওয়া স্টার্ট করে দিছে।আশিয়ান তো বারবার ঊদিতার দিকে তাকাচ্ছে।তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে তার প্রাণপ্রিয়া স্ত্রী মা হতে যাচ্ছে।

বাসায় এসে পৌঁছানোর পর ঊদিতার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বললো আশিয়ান সবাইকে।সবাই আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।খুশির ঠেলায় আশিয়ান নিজে মাহবুবকে দিয়ে প্রায় ২০ কেজির মতো মিষ্টি এলাকায় বিতরণ করলো।আর ৬০ কেজিরও বেশি মিষ্টি এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে বিতরণ করলো।এতক্ষণে বাংলাদেশের সবাই প্রায় জেনে গেছে যে আশিয়ান বাবা হতে যাচ্ছে,তার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।

এরকম একটা সুখবর পেয়ে ঊদিতার বাবা মা ভাই বোন ওরা আশিয়ানদের বাসায় আসতে দেরি করলেন না।মিসেস আনিতা তো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছেন খুশিতে।মি.মোরশেদ আর মি.এনামুল সাংঘাতিক খুশি হয়েছেন ঊদিতার মা হবার কথা শুনে।ওনারা দুয়েকদিন পরই বাসায় আসছেন।

আর ঊদিতা তো খুশিতে মনে মনে লাফাচ্ছে।তার ভাবতেই এত ভালো লাগছে যে তার নিজেরও একটা ছোট্ট বেবি হবে।পিচ্চিটাকে সবসময় সে কোলে নিয়ে রাখবে।আরও কত কী!এখন থেকেই চিন্তাভাবনার শুরু!

রাতে আশিয়ান রুমে আসে নি এখনো।ঊদিতা একটা কালো রঙের জর্জেট শাড়ি পড়েছে।সাথে হাফহাতার সুতি ব্লাউজ।ব্লাউজের পিছনদিক অনেক বড় আর দুটো ফিতা দেয়া।চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে সে।সাথে চোখে গাঢ় করে কাজল আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক লাগালো সে।তার ইচ্ছা,, আজ আশিয়ানকে পাগল বানাবে।ঊদিতা সেজেগুজে নতুন বউয়ের মতো বিছানার ওপর বসে আছে।

একটু পর আশিয়ান রুমে ঢুকে দরজা লক করলো।বিছানার ওপর বসা ঊদিতার দিকে চোখ পড়তেই তার হার্টবিট মিস হলো যেন।এত এট্রাকটিভ অবস্থায় ঊদিতাকে দেখতে পাবে ভাবতে পারে নি সে।ধীর পায়ে ঊদিতার দিকে এগিয়ে আসতে লাগে আশিয়ান।যেন সে একটা ঘোরের মধ্যে আছে।ঊদিতা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো।আশিয়ানের ওই মাতাল চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছে না সে।

আশিয়ান ঊদিতার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে ঊদিতার চুল আলতোভাবে পেছন থেকে মুঠো করে ধরলো।ঊদিতা এবার তাকায় আশিয়ানের দিকে।আশিয়ান মাথা নিচু করে ঠোঁট ডুবিয়ে ঊদিতার কপালে একটা চুমু খেয়ে নাকের ডগায় ঠোঁট ঘষলো।তারপর ঠোঁটের কোণে গভীর একটা চুমু খেলো সে।ঊদিতা লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে আশিয়ানের আদর গুলো অনুভব করছে।আশিয়ান নেশা লাগানো কন্ঠে বললো;

আশিয়ান:-আমার টুকটুকে বউটা দেখা যায় আমাকে নিজের রূপের জালে ফাঁসিয়ে মেরে ফেলতে চায়!হুমম?কী ব্যাপার সুন্দরী?দিন দিন দেখা যাচ্ছে আমার বউটা অতিরিক্ত আগুন সুন্দরী হয়ে গেছে।

আশিয়ানের এমন কথা শুনে ঊদিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।আশিয়ান মুচকি হেসে ঊদিতাকে কোলে তুলে নিলো।ঊদিতা আশিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে।আশিয়ান ঊদিতার নাকের সাথে নাক ঘষে প্রশস্ত হাসলো।তারপর এগিয়ে গেলো বারান্দার ছাদ লক্ষ্য করে।

বারান্দায় খোলামেলা অংশে দাঁড়িয়ে আশিয়ান ঊদিতাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।তারপর আশিয়ান ঊদিতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ঊদিতার পেটের ওপর থেকে আঁচলটা সরিয়ে ধবধবে ফর্সা পেটের দিকে তাকালো।ঊদিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে ঠোঁট ডুবিয়ে ছোট ছোট চুমু দিতে লাগলো সে।ঊদিতা কেঁপে ওঠে আশিয়ানের এমনতর স্পর্শে।আঁকড়ে ধরে আশিয়ানের চুল।পেট থেকে মুখ সরিয়ে সেখানে হাত বুলিয়ে দিয়ে আশিয়ান ঊদিতার দিকে তাকিয়ে বললো;

আশিয়ান:-তুমি কী কিছু ফিল করতে পারো ঊদিতা?ঠিক এই জায়গাটায় তোমার আর আমার একটা ছোট্ট অংশ বেড়ে ওঠছে।আমাদের দুজনের ভালোবাসার অংশ।আমাদের সন্তান।তুমি জানো না ঊদিতা আমি ঠিক কতোটা হ্যাপি!তোমাকে আমি ভাষায় বুঝাতে পারবো না।আমার আনন্দের কথা।অবশেষে সবার মতো আমিও বাবা হবো।আমাকেও কেউ পাপা বলে ডাকবে।আ’ম সো হ্যাপি ঊদিতা!আ’ম সো হ্যাপি!

খুশিতে আশিয়ানের চোখ জোড়া চকচক করছে।স্বামীর খুশি দেখে ঊদিতা নিজেও প্রচন্ড খুশি।ঊদিতা নিচু হয়ে আশিয়ানের কপালে ও গালে চুমু খেলো।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো আশিয়ানের মতো একজন লাইফ পার্টনারকে নিজের জীবনে পাইয়ে দেয়ার জন্য।আশিয়ান ঊদিতার পেটে আরেকটা চুমু খেয়ে বসা থেকে দাঁড়ালো।ঊদিতা আশিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে তার পায়ের ওপর নিজের পা রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আশিয়ানের নাকের সাথে নাক ঘষে বললো;

ঊদিতা:-জানেন,,আমি অনেক ভাগ্যবতী যে আপনার মতো একটা মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।এখন আপনার সন্তানের মা ও হতে যাচ্ছি।আমারও ভীষণ খুশি লাগছে।আমারও একটা ছোট বাচ্চা হবে।তাকে কোলে নিয়ে আমি হাঁটবো,তাকে ঘুম পাড়াবো,তাকে নিজের হাতে খাওয়াবো।আমার ইচ্ছেটা যে আল্লাহ এত জলদি পূরণ করবেন ভাবি নি আমি।

ঊদিতার কথা শুনে আশিয়ান হাসলো।ঊদিতা তো কিউট করে ইঁদুরে দাঁত বের করে একটা হাসি দিলো আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে।আশিয়ান ঊদিতার হাসির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে উঠলো;

সূর্যমুখীর মতো সে হাসি,,
বেজেছিলো প্রাণের বাঁশি,,
ভালোবাসা রাশি রাশি,,
ছিলাম আমরা প্রেমবিলাসী….

ঊদিতা আশিয়ানের দিকে স্বপ্নীল চোখে তাকিয়ে আছে।আশিয়ান ঊদিতার গালে চুমু দিয়ে আবারও গেয়ে উঠে;

তারই পর থেকে
ভালোবেসে তোমাকে,,,
দিনকে বলি রাত
রাতকে বলি দিন,,,
এভাবে আমি আজ
#তোমাতে বিলীন…

ঊদিতা হাসিমুখে আশিয়ানের গালের ঘন কালো খোঁচা খোঁচা চাপদাড়িতে হাত বোলাচ্ছে।আশিয়ান ঊদিতাকে কোলে নিয়ে রকিং চেয়ারে বসে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসলো।গল্পটা হচ্ছেই তাদের অনাগত সন্তানকে নিয়ে।ঊদিতা আশিয়ানকে বলছে;

ঊদিতা:-আমি চাই আমার একটা ছেলে হোক!

আশিয়ান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-কেন?মেয়ে হলে সমস্যা কোথায়?

ঊদিতা:-সমস্যা আছে তো!মেয়ে হলে সে আমার থেকে আপনাকে বেশি ভালোবাসবে।এজন্যই আমি চাই আমার একটা ছেলে হোক!

আশিয়ান:-ওমা,,এটা কেমন কথা?বাচ্চারা তার বাবা মা উভয়কেই সমান ভালোবাসে।

ঊদিতা:-মোটেই না।সব মেয়েরাই তার বাবাকে মায়ের থেকে বেশি ভালোবাসে।যেমন আমি,,,আমি আমার আব্বুকে প্রচন্ড ভালোবাসি।আব্বু আমার সবকিছু।এরপর এনা আপুর কথাই বলি,,,বাবাকে আপু সবচাইতে বেশি ভালোবাসে।আর ছেলেরা তাদের মাকে অনেক ভালোবাসে।যেমন আমার ভাইয়া,আপনি,বড়ভাইয়া,ছোটভাইয়া আপনাদের বাবার প্রতিও এত টান নেই যতোটা আপনারা মায়ের জন্য পাগল।আমি আপনাকে অনেক শক্ত মনের ব্যক্তি মনে করতাম কিন্তু সেই আপনি মায়ের অসুস্থতায় পাগলের মতো কান্না করেছিলেন।তো এখন যদি আমার ছেলে হয় তাহলে সেও আমাকে এরকম করে ভালোবাসবে।বুঝলেন?

আশিয়ান:-বাপরে কী লজিক!তবে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।আল্লাহ খুশি হয়ে যা দিবেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট।বুঝলে পিচ্চির আম্মু?

ঊদিতা:-হুম বুঝলাম!তো ছেলে হলে কী নাম রাখা যায় বলুন তো?

আশিয়ান:-আগে হোক তারপর বলি?

ঊদিতা:-না এক্ষুনি বলবেন!

আশিয়ান:-ওকে,,,উমমম(দীর্ঘ কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে)আমাদের দুজনের নাম মিলিয়ে দিয়ান তায়েব চৌধুরী হলে কেমন হয়?

ঊদিতা হাততালি দিয়ে বলে;

ঊদিতা:-ওয়াও,,,অনেক সুন্দর নাম বলেছেন আপনি।আমাদের ছেলের নাম তাহলে এটাই রাখবো।

আশিয়ান:-আর মেয়ের নাম?

ঊদিতা:-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়ে হবে না।তাই মেয়ে নামটা এখন রাখার দরকার নেই।

আশিয়ান:-এজ ইউর উইশ,,,এখন চলো ঘুমাবো দুজন।

এই বলে আশিয়ান ঊদিতাকে কোলে নিয়ে রুমে চলে গেল।ঊদিতাকে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বললো;

আশিয়ান:-যাও ঢিলেঢালা দেখে কিছু পড়ে আসো।এখন থেকে ঢোলাঢালা জামা পড়বে।আমি তোমার জন্য বড় গেঞ্জি,মেক্সি এসব কিনে নিয়ে আসবো কালকে।যাও বউ চেঞ্জ করে আসো।

আশিয়ানের কথামতো ঊদিতা একটা ঢিলা গেন্জি আর একটা প্লাজু পড়ে আসলো।আশিয়ান বারান্দার ডোর লক করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।ঊদিতা আসতেই আশিয়ান দুহাত প্রশস্ত করে ঊদিতাকে কাছে আসার আহ্বান জানালো।ঊদিতা বাতি নিভিয়ে দিয়ে আশিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে শক্ত করে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।আশিয়ান বিড়ালছানার মতো ঊদিতাকে আলতোভাবে ঝাপটে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্তে দুচোখ মুদলো।ঊদিতা হলো তার পরাণপাখি।তার কলিজার টুকরো পিচ্চি বউ।

🍂🍂🍂

এভাবেই দিনের পর দিন যেতে লাগে।আশিয়ান ঊদিতার জন্য অফিস যাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে।অফিসে সে বিকেলের দিকে ঊদিতা যখন ঘুমে থাকে তখন গিয়ে চেক করে আসে।মাঝে মধ্যে দরকারী কোনো কাজ যেটা আশিয়ানকে ছাড়া সম্ভব নয় তখন ঊদিতাকে মিসেস ইয়াসমিনের কাছে গছিয়ে দিয়ে কাজে যায়।আবার কাজ শেষ হতেই ঝটপট ফিরে আসে।ছেলের এমন পাগলামি দেখে মিসেস ইয়াসমিন হাসেন।ঊদিতাকে নিয়ে সে মারাত্মক পসেসিভ।

আশিয়ান নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে আসার পর ঊদিতা নামাজ আদায় করে আর আশিয়ান তার পাশে বসে থাকে।ঊদিতাকে রান্নাঘরের কাছেও যেতে দেয় না সে।ঊদিতা যখন বমি করে তখন আশিয়ান ঊদিতাকে শক্ত করে ধরে রাখে।মাঝেমধ্যে ঊদিতাকে নিয়ে সে বাইরে হাঁটতে যায়।মাঝরাতে ঊদিতার যখন খিদে পায় তখন আশিয়ান নিজে তার জন্য খাবার তৈরি করে আনে।ঊদিতার যখন যা খেতে চায় তা সাথে সাথে হাজির করে সে।আর সারাদিনে একটু পর পর খাবার খাওয়ায় সে ঊদিতাকে জোর করে হলেও।ফলমূল তো আছেই।

সকালে আর রাতে মাদারস হরলিকস।বিকালে দুধ ডিম।ঊদিতার শরীরে যাতে রক্তের কোনো ঘাটতি না থাকে এজন্য দুদিন পর পর কবুতরের মাংস,কোয়েল পাখির মাংস এসব খাওয়া বাধ্যতামূলক।ঊদিতা মাঝেমধ্যে আশিয়ানের ওপর রাগ করে বসে থাকে কারণ আশিয়ান তাকে এক খাওয়ার ওপরই রাখে সারাদিন।এতে ঊদিতা আগের থেকে আরও গুলুমুলু হয়ে গেছে।

ঊদিতার এখন পাঁচ মাস চলছে।পেট অনেকটাই বড় হয়েছে তার।যদিও তার পর্দা করার কারণে বাইরের ও বাসার কেউ তার পেটের সাইজ বুঝতে পারে না।দেখতে দেখতে কীভাবে যে পাঁচ মাস হয়ে গেছে তার প্রেগন্যান্সির সেটা ভাবতেও অবাক লাগে ঊদিতার।এখন বাচ্চার অস্তিত্ব সে স্পষ্ট টের পায়।অনেক ভালো লাগে তার যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পেটের ওপর হাত বুলিয়ে নিজের বাচ্চাটার অস্তিত্ব অনুভব করে সে।আশিয়ান তো ঊদিতাকে মোটেও চোখের আড়াল করে না।আশিয়ানের অনুমতি ছাড়া ওয়াশরুমেও যেতে পারে না সে।ওয়াশরুমে গেলে দরজা লক করাও নিষিদ্ধ তার জন্য।এতটাই কঠোর আশিয়ান ঊদিতার প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে।

আলেয়ার এখন ৭ মাস চলে।আল্ট্রা করে দেখা গেছে তাদের মেয়ে হবে।তাসকিন তো খুশিতে শেষ।তবে সে আশিয়ানের মতো বউয়ের এত খেয়াল রাখতে পারে না।অফিসে যেতে হয়।তাই আলেয়ার খেয়াল মিসেস তারানাই রাখেন।বাসার রান্না বান্না সব কেয়াই সামলায়।তারিন সে তার মতো আছে।কোনো কিছু নিয়ে কোনো হেলদোল নেই।বাসার কেউ মরুক আর বাঁচুক এতেও তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

আশিয়ান প্রতি মাসে ঊদিতাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করায়।ঊদিতাকে গোসলও সে নিজে করিয়ে দেয়।ঊদিতা আশিয়ানের এত কেয়ার করার কারণে পুরোপুরি অতিষ্ঠ।কিন্তু আশিয়ানের এসবের দিকে কোনো নজর নেই।সে তার বউয়ের কেয়ার করতে ব্যস্ত।রাতে ঘুমানোর সময় আশিয়ান ঊদিতার ফোলা পেটে হাত বুলিয়ে চুমু খায়।বাচ্চার সাথে আদুরে কন্ঠে কথা বলে।ঊদিতা আশিয়ানের এসব পাগলামি দেখে খিলখিল করে হাসে।আশিয়ান মুগ্ধ নয়নে তার নাদুসনুদুস সুন্দরী প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে রয়।

ঊদিতার যখন প্রেগন্যান্সির সাতমাস চলে,
আশিয়ান ঊদিতাকে হসপিটালে নিয়ে যায় আল্ট্রা করাতে।মহিলা ডক্টর ঊদিতার পেটে জেলি লাগিয়ে ঊদিতাকে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকাতে বলেন।আশিয়ান ঊদিতার পাশেই হাত ধরে বসে আছে।একটা বাচ্চার অবয়ব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে স্ক্রিনে।ঊদিতার চোখে জল চলে এলো বাচ্চাকে দেখে।আশিয়ান তো আনন্দে আত্মহারা।ঊদিতার কপালে সন্তর্পণে চুমু খায় সে খুশিতে।ডক্টর বললেন তাদের ছেলে সন্তান হবে।এটা শোনার পর ঊদিতার খুশি দেখে কে?

বাসায় আসার পর সবাই ঊদিতার সাথে কথা বলছে।ডক্টর কী বললেন সেটা জানতে চাইছেন তারা।আশিয়ান বললো তাদেরকে ডক্টর বলেছেন ছেলেবাবু হবে তাদের।এ কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন খুশিতে কেঁদে দিলেন।ডক্টর এও বলেছেন বাচ্চার পজিশন ভালো আছে।আর ঊদিতারও কোনো সমস্যা হবে না বাচ্চা হওয়ার সময়।এটা অবশ্যই অনেক ভালো একটা সংবাদ।

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।এবং সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন বলে আশা করছি।গল্পটা খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।সো,,,হ্যাপি রিডিং গাইজ,,❤️)

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here