#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি।
#পর্বঃ১০
প্রায় বিকেল ৩ টার দিকে শুভ্রার ঘুম ভাঙলো। উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর আরো কিছুক্ষন খাটের উপর বসে থাকে। গায়ের জ্বর আর মাথা ব্যাথা পুরোটাই সেরে গিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে বেশ ফুরফুরে লাগছে।
শুভ্রাঃ ধুর এভাবে সারাদিন একঘরে বসে থাকতে ভাল্লাগে নাকি? আন্টি আর বাকি কাউকেই তো দেখছি না। ( দরজায় উকি দিয়ে)
আবার গিয়ে খাটে বসে পড়লো শুভ্রা। এভাবে অপরিচিত কারো বাসায় এসে বাইরে বের হয়ে তাকানো কিংবা ঘুরঘুর করা নিশ্চয় নির্লজ্জের ব্যাপার। আমাকে সাহায্য করেছে আর থাকতে দিয়েছে এটাই অনেক। নাহলে কাল রাতে কি হতো ওতো রাতে যেতোই বা কোথায় সে?
এসব ভাবতে ভাবতে দরজায় টুকা পড়তে চোখ ফিরিয়ে দেখে সাদাফ দরজায় দাড়িয়ে আছে।
সাদফকে দেখা মাত্রই শুভ্রা উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
সাদাফঃ আসুন সবাই খেতে বসেছে। একা একা আর কতোক্ষন বসে থাকবেন? ভালো লাগছে না নিশ্চয়। চলুন।
শুভ্রাঃ এই তো কিছুক্ষণ আগে না খেয়েছি। আমার পেট তো ফুল ভরা। এখনো খিদে পাই নি। রুমে ভালো লাগছিলো ন তাই ই পাইচারি করছিলাম।
সাদাফঃ না খাই না খাই করেন বলেই তো আপনার এই অবস্থা। কোনো কথা শুনবো না আমি। চলুন সবাই ওয়েইট করছে।
শুভ্রা আর কিছু না বলে সাদাফের পিছু পিছু হাটে।
ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতেই মিসেস মালিহা শুভ্রাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। শুভ্রাও ওনাকে দেখে মুচকি আসে।
সাদাফের মাঃ শরীর এখন আগের চেয়ে কেমন আছে? একটু বেটার লাগছে তো?
শুভ্রাঃ জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের উছিলায় আল্লাহর রহমতে বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছি।
সাদাফের মাঃ শুকর আলহামদুলিল্লাহ। এই নাও বসো।
সাদাফ একটি চেয়ার টেনে শুভ্রাকে বসতে বলে। শুভ্রার ডান পাশে মিসেস মালিহা আর বা পাশে সাদাফ বসে।
সাদাফের মাঃ আজ খাবার বাহির থেকে এনেছি। সকাল থেকে কোমড়ের ব্যথাটা একটু বেড়েছে তাই রান্না করতে পারিনি।
শুভ্রাঃ এমা আন্টি আমাকে বলতেন। শুধু শুধু বাইর থেকে আনার কি দরকার ছিলো? আর আমিও এতোক্ষণ ঘুমালাম কি করে বুঝতে পারছি না।
সাদাফঃ ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন তাই ঘুমিয়েছেন। ডক্টর দিয়েছিলেন তাই।
শুভ্রাঃ আন্টি আমি কিন্তু রাতে রান্না করবো। এমনিতে তো এটাই আমার মেইন কাজ।
সাদফের বাবাঃ মানে? তুমি কি শেফ?
শুভ্রাঃ না না আংকেল। আমি তো……
সাদাফঃ আহহহ খাওয়ার সময় এতো কথা বলছো কেন তোমরা? চুপচাপ খাও না।
শুভ্রা সাদাফের কথায় একেবারে চুপসে গেলো। সাদফ তো এর আগে তার সাথে এভাবে কথা বলে নি। তাহলে আজ এভাবে কেন বলছে। এরই মধ্যে নাদিম বলে উঠেঃ আরে ভাবি চিংড়ি টা খেয়ে দেখেন কি অসাধারণ হয়েছে। আপনি তো কিছুই খাচ্ছেন না।
নাদিমের কথায় সাদাফ বেশ বড়সড় বিষম খেলো। কাশতে কাশতে বেচারার প্রাণ যায় অবস্থা। মিসেস মালিহা পানি নিয়ে এসে মুচকি মুচকি হেসেছেলের পিঠ ডলে দিতে লাগলেন। আর শুভ্রাতো নাদিমের দিকে দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। নাদিম সাদাফের দিকে তাকাতেই দেখে সে রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকায়। নাদিম একটা শুকনো ঢুক গিলে বললোঃ না মানে ইয়ে শুভ.. শুভ্রা আপু।
শুভ্রাঃ আপনি কি আমাকেই ভাবি বলেছেন? আমি আপনার কোন ভাইয়ের বউ লাগি ভায়া?
নাদিমঃ না মানে ইয়ে মানে,,,,
সাদাফঃ মানে মানে না করে বল, কোন ভাইয়ের বউ লাগে? (দাতে কটমট করে)
নাদিমঃ আরে দোস্ত তুই কিছু বুঝিস না। আমারা সব ছেলে জাতি তো একে অপরের ভাই ভাই। তো শুভ্রা আপুউ একদিন না একদিন কোনো এক ভাইয়ের বউ হবে। সেই সূত্রে উনাকে ভাবি ডেকেছি।
নাদিমের কথা শুনে এবার শুভ্রার বিষম পেয়ে যায়। এই ছেলে বলে কি? কোথাকার কথা কিভাবে কোথায় নিয়ে গেলো।
এভাবে হই হট্টগোল করে সবাই খাবার সেরে উঠলো।
খাওয়া শেষে মিসেস মালিহাকে খাবার রেখে দিতে আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে সাহায্য করেছে। যদিও মিসেস মালিহা মানা করেছিলো কিন্তু শুভ্রা তার বলার মধ্যেই কাজ সেরে রেডি।
খাওয়ার পর ওষুধ খেতে হবে বলে মিসেস মালিহা শুভ্রাকে কিছু ওষুধ দিলেন। ওষুধ খাওয়ার পর সবাই মিলে ড্রইং রুমের সোফায় বসে। সাদাফ শুভ্রাকে একটু রুমে যেতে বলে। শুভ্রা ভেবেছিলো তাদের পারিবারিক কথায় হয়তো সাদাফ তাকে না থাকার জন্যই তাকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রোমে আসার কিছুক্ষণ পর সাদাফ ও আসে শুভ্রার রুমে।
সাদাফঃ মিস শুভ্রা আসতে পারি?
শুভ্রাঃ এমা আপনার ই তো বাড়ি। আপনিই অনুমতি নিচ্ছেন। আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন এটাই তো অনেক।
সাদাফঃ তবুও ম্যানার্স বলে তো কিছু আছে। আর কথার কথা আশ্রয় আশ্রয় কেন করেন বলুন তো। আপনি তো আমার বন্ধুর ই মতো। বন্ধু কি বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে পারে না নাকি?
শুভ্রা মেকি হেসে বলেঃ কাজে কবে থেকে জয়েন করবো? আর আমার কাজটাই বা কি? আর আমি কিন্তু মাত্র এস. এস. সি. পাশ। চাকরি পাওয়ার যোগ্যতামতো পড়াশোনা তো করিই নি আমি।
সাদাফঃ এসব কথা বাদ দিন। কাল অই অবস্থা হলো কি করে আপনার? রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন কিভাবে?
শুভ্রাঃ কাজ থেকে বের করে দিয়েছিলো। ওই বাড়িতে আর কাজ না করতে বলেছে তাই বের করে দিয়েছে।
সাদাফঃ তাই বলে ওতো রাতে!! সকালেও তো চলে যেতে বলতে পারতো।
শুভ্রাঃ আমার জন্য ওদের সমস্যা হয়েছিলো অনেক। তাই আন্টি রেগে গিয়েছিল।(ছলছল চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে)।
সাদাফঃ মিস শুভ্রা আপনি প্লিজ আমাকে বলবেন?
শুভ্রাঃ থাক না বাদ দিন এসব। আন্টি আমাকে বরাবরই পছন্দ করতেন না। আংকেল আমাদের সংসার চালানোর কোনো উপায় না দেখে আমাকে তাদের বাড়িতে কাজ করার জন্য বলেছিলো। নেহাত আংকেল আব্বুর বন্ধু ছিলো বলে আর উনি ভালো মানুষ বলেই আম্মু রাজি হয়েছিলো।
সাদাফঃ কেন আপনার আব্বু কোথায়?
শুভ্রাঃ আপনার কি মনে হয় মি.চৌধুরী? কোনো পরিবারের হেড বাবা সক্ষম থাকা সত্ত্বেও তার মেয়েকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দিয়ে রোজগার করতে দিবে?
সাদাফের এখন মনে পড়ে দোকানদারের সেদিনের বলা কথা যে শুভ্রার তো বাবা নেই।
সাদাফঃ ও ওহ আম সরি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এক্সট্রেমলি সরি।
শুভ্রা আর সাদাফ টুকিটাকি কথা বলছে। এদিকে নাদিম ড্রইংরুমে বসে মোবাইল দেখছে। সাদাফের আম্মু আব্বু টিভি দেখছে। এমন সময় দরজায় বেল বেজে ওঠে। নাদিম গিয়ে দেখতে যায় কে এসেছে।
দরজা খুলার পরই নাদিমের চোখ আটকে যায় দরজার ওপারে থাকা রমনীর দিকে তাকিয়ে। নীল সাদা সেলওয়ার। চুল গুলো বা দিকে সিতা করে ছেড়ে দেওয়া। দরজা খুলার পর নাদিমের দিকে সে এক পলক তাকিয়ে সে আবার মোবাইল স্ক্রিনে তাকায় আবার নাদিমের দিকে। মনে হচ্ছে কিছু একটা মিলাচ্ছে।
মেয়েটিঃ এই যে এভাবে গরুর চোখের মতো ডেবডেব করে না তাকিয়ে এই অফিসের মালিক কে ডাকোন তো।
মেয়েটির কথায় নাদিম পুরাই থ মেরে দাড়িয়ে রইলো। এই মেয়ে বলে কি। গরুর মতো তাকিয়ে আছি আমি? লাইক সিরিয়াসলি? যে নাদিমের চাহনি দিয়ে আমি হাজার মেয়েদের ক্রাশ হয়েছি আজ কোন না কোন মেয়ে এসে আমায় সামনাসামনি গরুর চোখ বলছে?
মেয়েটিঃ কি হলো কি? কথা শুনতে পারেন না আপনি? বয়রা নাকি? বয়রা হলে দরজা খুলতে এসেছেন কেন?
নাদিমঃ মাইন্ড ইউর লেংগুয়েজ মিস. ভদ্র ভাবে কথা বলুন। আর হ্যা আমিই মালিক। বলুন কি চাই? ( বেশ বড়সড় ভাব নিয়ে)
মেয়েটিঃ এহহহহহ ভাব কতো দেখো। বলছি আপনি কি সাদাফ মাহমুদ চৌধুরী???? আমার ইনার সাথে দেখা করার চাই (মোবাইল স্ক্রিনে সাদাফের ছবি দেখিয়ে)। আর আপনি কে হ্যা?? গুগলে সহ লিখা আর ছবি আছে বাংলাদেশের একমাত্র বিজনেস টাইকুন চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট সাদাফ মাহমুদ চৌধুরী। সেখানে আপনি কোথাকার মদন হ্যা? এতো গাল মারেন কেমনে?
মেয়েটির কথায় নাদিমের লজ্জায় মাটি চিরে ফাক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। সামনাসামনি দাঁড়িয়ে এতো বড় অপমান?
দাও না গো বাবা একটু ডেকে খুব দরকার ছিলো একটু।
নাদিম এবার খেয়াল করলো মেয়েটির পেছনে একজন মধ্যবয়স্ক বোরখা পরিহিত বেশ সুন্দর একজন মহিলা। কিন্তু তার চেহারা খুব খুবই চেনা লাগছে। যেন এরকম কাউকে সে প্রায় দেখে।
দরজা এতো আওয়াজ চেচামেচির আওয়াজ শুনে মিসেস মালিহা আসে।
তিনি এসে যা দেখেন তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। এ তিনি সত্যিই দেখছেন তো। নাকি স্বপ্ন?
ওগো…….. বলে চিতকার দিয়ে উঠেন তিনি। চারদিকে কেমন ভনভন করছে। নিজের চোখকে তিনি বিশ্বাস ই করতে পারছে না।
এদিক অপরপাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলাটির ও একই অবস্থা। তিনি ভাবছেন তিনি সত্যিই সঠিক জায়গায় এসেছেন তো?
#চলবে।
(ছোট হওয়ার জন্য দুঃখীত খুব। বাড়িতে৷ মেহমান এসেছিলো তাই। নেক্সট বড় করে দিবো)