#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৭
অঙ্কুরের ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে।টিভিতে দেখলাম অপোনেন্ট টিম টস হেরে ব্যাটিংয়ে।রোহান ভাইয়া বলছিলেন,আমি লাইভ দেখতে যেতে চাই কি না।মানা করেছি।উনি চলে গেছেন স্টেডিয়ামে।একটা জোরে শ্বাস নিয়ে রিমোটটা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালাম।এলিনার আসার সময় হয়েছে।সত্যিসত্যিই দরজায় নক পরলো।ছুটে গিয়ে দরজা খুললাম।এলিনা বললো,
-আহানিটা?আমার ট্রিপ শেষ।তুমি তো বলেছিলে আজ ঘুরবে।কোথায় ঘুরবে?
-আজকের খেলার বিষয়ে কিছু জানো?
-হ্যাঁ!চলো আজ বাইরে যাই?গ্রাউন্ড স্টেডিয়ামে ম্যাচ আছে আজ।ক্রিকেট ভালোবাসো তো?তোমার দেশ থেকে টিম এসেছে।সারপ্রাইজিংলি!ওই টিম এই হোটেলেই উঠেছে!
-তুমি জানো কোথায় রুম তাদের?
-হুম।এই করিডরের শেষে গিয়ে বা দিকেই তো!
-ওই রুমগুলোতে এখন কার ট্রিপ চলছে এলিনা?
-এসব আমি জানি না।এখন কারো ট্রিপ থাকার কথাও নয়।কারন ওনারা তো খেলতে গেছেন।
-ও।চলো যাই।
ওর হাত টানতে টানতে বেরিয়ে আসলাম।ও বললো,
-কোথায় যাচ্ছি আমরা?
-এইতো,এই ফ্লোরটাই ঘুরে দেখবো।
এলিনা থামলো।হতাশ গলায় বললো,
-এই করিডরে দেখার মতো কি আছে বলতে পারো?
-এমনি দেখবো।এরপর আর কিছুই চাইবো না তোমার কাছে।প্লিজ এলিনা।প্লিজ?
জোরে একটা শ্বাস ফেলে বললো,
-বেশ।চলো।
আমরা হাটতে লাগলাম।বেশ কিছুটা দুর এগোতেই এক শব্দ কানে আসলো দুজনের।চোখ চকচক করে উঠলো আমার।তবুও নিজেকে সামলে বললাম,
-এলিনা?শুনতে পাচ্ছো শব্দটা?
-হ্ হ্যাঁ।এটাতো সামনের রুমগুলোর কোনোটা থেকে আসছে বলে মনে হচ্ছে।
-চলো!
ওকে একপ্রকার টেনে নিয়েই এগোলাম।যে রুম থেকে শব্দটা আসছিলো,ওটা পেয়ে গেছি।এটাই অঙ্কুরের রুম।করিডোরে ওয়াইপার হাতে একটা ছেলে।হয়তো রুম পরিষ্কার করবে বলে এসেছে।এলিনাকে বললাম,
-এলিনা,এটা ফায়ার এলার্ম!আগুন লেগেছে এই রুমে!হোটেল অথোরিটির কাউকে ডাকো!খোলো এই রুম!
-কিন্তু ফায়ার এলার্মে এমন শব্দ?আর এলার্ম তো রুমের বাইরে থাকার কথা!ভেতর থেকে কেনো শব্দ আসছে?
-তুমি হোটেল তৈরীর সময় ছিলে না রাইট?কোথায় কোন টোন দিয়ে ফায়ার এলার্ম সেট করা তুমি জানবে কিভাবে?এতোসব ভাবার সময় নেই!দরজা খোলার ব্যবস্থা করো এলিনা!ভেতরে আগুন লেগেছে!
-ঠিক বলেছো তুমি আহানিটা!আমি এখনি কল করছি ম্যানেজার স্যারকে।
ঝাড়মোছ দিতে আসা ছেলেটা এতোক্ষনে মুখ খুলে আমতা আমতা করে কিছু একটা বললো।এলিনা বুঝেছে ওর ভাষা।আমাকে বললো ও বলছে,ও নাকি সবেমাত্র এই ঘর পরিস্কার করেছে।আগুন লাগে নি!আর ওউ কিছু করেনি।
ছেলেটার দিকে তাকালাম।ও ভয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে।বুঝলাম ওকে ভয় দেখানোই যায়।এলিনাকে বললাম,
-আমি নিশ্চিত ও পরিষ্কার করতে গিয়ে কোনো ঝামেলা করেছে।দেখো এলিনা,হোটেল ম্যানেজমেন্টের লোকজন এখনো আসছে না।তাদের ওখানেও তো এলার্মের সাউন্ড যাওয়ার কথা।আমি বলছি,তুমি চাবি নাও ওর থেকে।খোলো এই দরজাটা!কোনো বড় ক্ষতির আগেই….
এলিনা এগোলো।ছেলেটাকে ধমকে কিছু বললো।ও ছেলেটা কাচুমাচু হয়ে গেছে।চাবিটা বের করে দিলো সাথেসাথে।কিন্তু কান্না করেও দিয়েছে।কাদতে কাদতে আবারো কিছু বললো।এলিনাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি বলছে।ও দরজা খুলতে খুলতে বললো,
-বলছে আমি কিছু করিনি ম্যাম।স্যারকে কিছু বলবেন না প্লিজ!আজকেই জয়েন করেছি!চাকরিটা আমার খুব প্রয়োজন!
একপলক তাকালাম ছেলেটার দিকে।কষ্ট হচ্ছিলো প্রচন্ড।চাইনি নিজের কাজে কাউকে এভাবে কষ্ট দিতে।তবুও তাই করতে হলো।দরজা খুলতেই এলিনাকে ঢুকতে না দিয়ে আগে আমি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম।পুরো ঘর স্ক্যান করতেই বিনব্যাগের উপর অঙ্কুরের সেই ব্যাগটা চোখে পরলো,যে ব্যাগে ফাইল তুলেছিলেন উনি।সোজা এসে ব্যাগখুলে ফাইলটা হাতে নিয়ে নিয়েছি।খুলে দেখলাম ওটা সেই ম্যাচ ফিক্সিং ডিলেরই ফাইল।ওড়নায় পেচিয়ে লুকিয়ে ফেললাম ওটা।একমিনিটও লাগেনি পুরো ঘটনায়।চোখ পরলো বেডসাইড ছোট টেবিলটায় রাখা সেই শো পিসটায়।দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলাম।
এলিনা আর ওই ছেলেটা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো।হাতের রিমোটটা টিপে বন্ধ করে দিলাম শো পিসে বাজতে থাকা শব্দটা।জেনে বুঝে ইচ্ছে করে অঙ্কুরকে এমন উপহার দিয়েছিলাম।জানতাম,এটা ফেলে দেবেন না উনি।রুমেই রাখবেন।তার রুম খুজে পেতে,লক খুলতে এর চেয়ে ভালো কিছু মাথায় আসেনি আর।একহাতে পেছনে ফাইলটা ধরে রেখেছি।ওরা দুজনেই উকিঝুকি দিয়ে শব্দের উৎস খুজতে লাগলো।কিছু না পেয়ে,শব্দটাও থেমে গেছে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললো দুজনেই।বললাম,
-মনে হয় অন্য কোনো কিছুর শব্দ ছিলো।এজন্যই হোটেল অথোরিটির কাছে এলার্মের শব্দ পৌছায়নি।চলো যাই!
একমুহুর্ত দেরি না করে বেরিয়ে এলাম ওই রুম থেকে।রুমে এসে সবে ফাইলটা বালিশের নিচে রেখেছি,এলিনাও ভেতরে ঢুকলো।এগিয়ে এসে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলো।তারপর আমাকে ঝাকিয়ে বললো,
-কি করছিলে টা কি তুমি?দরজা কেনো লক করে দিয়েছিলে?
-আ্ আমি ভাবলাম,যদি তুমি ভেতরে ঢোকো আর তোমার কোনো ক্ষতি…
-শাট আপ আহানিটা!যদি সত্যিই আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটতো?তোমার যেকোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো!একাকি কেনো এতোবড় রিস্ক নিতে গেলে?
চোখ ভরে উঠলো আমার।দুদিনে এই মেয়েটা বেশ অনেকটাই আপন করে নিয়েছে আমাকে।আর আমি?আমি কি ওকে ঠকালাম না?ওকে একপ্রকার ব্যবহার করলাম না?ওই ছেলেটাকেও অকারনে কষ্ট দিলাম।করিডোরে থাকা সিসিক্যামে আমার সাথে ওদেরও দেখা যাবে।ফাইল হারানোর ঘটনায়,ওদেরকেও দায়ী করা হবে।যদিও কোনো ভুল করিনি আমি।যা করেছি,সবাইকে সত্যিটা জানাবো বলে করেছি।এর জন্য আমাকে বা ওদেরকে কোনোভাবে পস্তাতে হবে না।
-আহানিটা!
-হুম?হ্যাঁ বলো?
-ওসব ভুলে যাও।যা হবার হয়েছে।এটা বলো,এখন কি ঘুরতে বেরোবে?
-ন্ না এলিনা।আজ না।তুমি এসো।
-বেশ।আসছি।টেক কেয়ার।হুম?
মাথা নাড়লাম।ও বিছানায় থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে গেলো।ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।কষ্ট হচ্ছে,কান্না পাচ্ছে।চিৎকার করে কাদতে লাগলাম।আজ অঙ্কুরের সব সত্যিটা আমি প্রমানসমেত এখানকার নিউজ পোর্টালে পাব্লিশ করবো।পুরো পৃথিবী জানবে অঙ্কুর,আপনি কতোটা খারাপ একটা মানুষ।কেনো এসব করলেন অঙ্কুর?খুব কি দরকার ছিলো?কেনো একটা সাধারন মানুষ,ভালো মানুষ হতে পারেননি আপনি?কেনো?
আচ্ছা মানলাম!মানলাম আপনি আপনার মতো হয়েছেন।তবে আমাকে কেনো জড়ালেন নিজের সাথে।আপনি তো আমাকে প্রতিশোধের আগুনে জ্বালাবেন বলে বেছেছিলেন,তবে কেনো সেখানে এই অনুভব?আপনার প্রতিই কেনো এই অনুভুতিগুলো হচ্ছে আমার?ভালোবাসা শব্দটা আপনার সাথে যায় না।তবুও কেনো এই শব্দেই আপনার সাথে এক অদৃশ্য বাধন অনুভব হয় আমার?এখন না পারছি নিজের এই সর্বনাশা অনুভূতিকে সামলাতে,না পারছি আপনার বিরুদ্ধে চলতে।সবটা এখন আমার হাতে,তবুও সাহস পাচ্ছি না আপনার বিপরীতে চলতে অঙ্কুর! এজন্যই কি আপনি বলে গেলেন,আপনার বিশ্বাস জিতে গেছে?
অনেকটা সময় কান্নাকাটির পর বেরিয়ে এলাম ওয়াশরুম থেকে।নিজেকে শক্ত করে আরেকবার ফাইলটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম।এগ্রিমেন্টে অঙ্কুরের সাইন।চোখ ভরে উঠলো আবারো।কিন্তু কাদি নি।বিছানা থেকে মোবাইলটা নিতে যাবো,ওটা নেই!চাদর উল্টেপাল্টে দিলাম।নাহ্!নেই ফোনটা!সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুজলাম।কোথাও নেই আমার ফোন।মনে করতে পারছিলাম না বেরোনোর সময় নিয়ে বেরিয়েছিলাম কি না।দরজা খুলে বেরোতে যাবো,দরজা লক।খুলছেই না।অঙ্কুর তো নেই,রোহান ভাইয়াও স্টেডিয়ামে।তাহলে আমাকে ঘরে লক করে দিলো কে?
মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পরলাম।সবটা ঠিকঠাকমতো করে,এই মুহুর্তে কোনোভাবেই হার মানতে পারি না আমি!অঙ্কুরের বিরুদ্ধে প্রমান আছে আমার কাছে।ওনাকে এক্সপোজ করতেই হবে আমাকে।বেশ!দেরিতেই হোক!তখন এই ফাইলের সাথে ওনার জিরো রানে আউট যাওয়ার খবরটাও একসাথে পাব্লিশ হবে।মানুষের কাছে তখন এই ফাইলের সত্যতাও প্রমান হবে।
কিছুক্ষন ওভাবেই বসে রইলাম।রিমোট নিয়ে টিভি অন করেছি।স্পোর্টস্ চ্যানেলে থামতেই হোস্ট চিৎকার করে বলে উঠলো,
“এন্ড ইটস্ আ সেঞ্চুরি ফ্রম এএসএ!”
দাড়িয়ে গেলাম আমি।শ্বাস থেমে গেছে একপ্রকার।ঠিক কি শুনলাম?যা শুনলাম তাই কি ঘটেছে?টিভিতে দেখালো সত্যিই এটা অঙ্কুর!ম্যাচে সেঞ্চুরি করে নিজের বিশেষ ভঙিমায় লাফিয়ে আকাশের দিকে পাঞ্চ ছুড়েছেন উনি!মুষ্ঠিমেয় প্রবাসী দর্শকস্রোতে উল্লাস।ঠিক কি ঘটেছে তা এখনো মানতে পারছি না আমি।বিশ্বাসই হচ্ছে না।ওনার তো এই ম্যাচে জিরো বলে আউট হওয়ার কথা।এমনটাই তো ডিল করেছিলেন উনি প্রদীপ সরকারের সাথে।তাহলে সেঞ্চুরি কেনো?এই মানুষটা ঠিক কি চায়?
#চলবে…
[ ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।আসলে লেখার সময়ই পাইনি আজ।রি-চেইক ও করিনি।গ্যাপ দেবো না বলে যেটুকো লিখেছি,সেটুকোই পোস্ট করলাম।কাহিনী পুরোটাই কাল্পনিক।ভুলত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং♥ ]