রূপকথা পর্ব-৭

0
1566

#রূপকথা
#পর্ব_৭
#দিয়া

আমিও রিয়াকে ধরে নিচে নিয়ে গেলাম। গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। আধা ঘন্টার মত সময় লাগলো কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছাতে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।তারপর ভিতরে চলে গেলাম।রিয়াকে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে আমি নামতে যাব তখনি হঠাৎ শাড়িতে বেজে আমি পরে যেতে নেই কিন্তু একজন আমাকে আগলে নেয়।তাকিয়ে দেখি আকাশ আমাকে ধরেছে। তারপর আকাশ আমাকে ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলতে থাকে,

আলু সত্যি তুই এখন পরে গিয়ে আলু হয়ে গেছিলি।ভাগ্যিস আমি ধরলাম নাহলে কি হতো।শাড়ি সামলাতে পারিস না তো না পরলেই হতো। এখন থেকে সাবধানে হাটবি। আর বেশি ঘুরঘুর করার দরকার নেই। চুপচাপ গিয়ে বসে থাকবি এক জায়গায়। কখন জানি আবার পরে যাস। সবসময় তো আর আমি থাকব না তোকে ধরার জন্য – আকাশ

হইছে এখন থাম। পরে যাইনি এতেই এত বকা আর পরে গেলে তুই আমাকে হয়তো সত্যি আলুর ভর্তা বানিয়ে দিতি – কথা

সে আর বলতে। আচ্ছা শোন আন্টিরা এসেছে আর তারা তোকে খুঁজছে। আরশিও তাদের সাথে দেখা করতে গেছে – আকাশ

আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি – কথা

কথা তারপর তার বাসার সবার কাছে চলে গেলো। তাদের সাথে কথা বলা শেষে সে রিয়ার কাছে যেতে নিবে তখনি দেখা হয় তার ভার্সিটির এক স্যারের সাথে। সে আর রায়ান ভাইয়া হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজনে একসাথেই টিচার হিসেবে জয়েন করেছে। উনার নাম হচ্ছে আরিয়ান ইসলাম।তো তার সাথে কথা বলতে বলতে উনি আমাকে উনার মায়ের সাথেও পরিচয় করে দেয়। উনার মা আমাকে আমার আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করে আমিও আমার আম্মুর সাথে উনার মাকে পরিচয় করিয়ে দেই।তারপর আমি রিয়ার কাছে চলে যাই আর উনি ও রায়ান ভাইয়ার কাছে চলে যান

অন্য দিকে আরিয়ান স্যারের মা আর কথার মা কথা বলতে থাকে। কিছুসময়ের মধ্যেই তারা নানারকম গল্প করে ফেলো। এক পর্যায়ে আরিয়ান স্যারের মা বলে উঠে,

কিছু মনে না করলে আপা আপনার কাছে আমি একটা প্রস্তাব দিতাম। – স্যারের মা

জি আপু বলো কিসের প্রস্তাব – নীলা চৌধুরী

তোমার মেয়ে কথা আছে না। আমার মেয়েটাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। তোমরা যদি রাজি থাকো তো আমি ওকে আমার ছেলের বউ করতে চাই – স্যারের মা

আপু একমাত্র মেয়ে আমার কথা।এত তারাতাড়ি আমরা ওর বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি না। যদি কখনো ভাবি তো আমরা আপনাকে অবশ্যই জানাবো – নীলা চৌধুরী

জি – স্যারের মা

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রূপ সব কথা হজম করছে। এই মহিলাকে দেখেই সে বুঝেছিল এ নিশ্চয়ই বিয়ের প্রস্তাবের কথা বলবে। সে নীলা চৌধুরীর পাশে থেকে উঠে চলে গেলো। রিয়ার পাশে বসে ছিলাম এমন সময় একটা পিচ্চি মেয়ে আমার কাছে এসে আমাকে বললো আমাকে নাকি আমার মা ডাকছে। আমাকে সেন্টারের বাইরে যেতে বলেছে। চারিদিকে তাকিয়ে মাকে না দেখে আমিও বাইরে চলে গেলাম।কিন্তু বাইরে গিয়ে চারিপাশে খুজে ও মাকে পেলাম না।তাই ফেরত আসতে নিব। তখনি রূপ ভাইয়া এসে আমাকে টেনে তার সাথে নিয়ে যায়।

আরে ভাইয়া কি করছো তুমি ? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো। ছাড়ো আমাকে। আমি কিন্তু এখন চিৎকার করব – কথা

চিৎকার করবি।আচ্ছা কর কিন্তু কেউ তোর চিৎকার শুনতে পাবেনা।কারণ ভিতরে যে জোড়ে গান বাজছে আর কেউ এ সময় বাইরে ও নেই।- রূপ

আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলা? – কথা

কথা ছিল কিছু – রূপ

সেটা ভিতরেই বলা যেত। শুধু শুধু এখানে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ভিতরে চল ভিতরে গিয়ে কথা বলি – কথা

না ভিতরে বলা যাবে না।এখানেই বলবো আমি – রূপ

আচ্ছা বলো। কি বলবা তারাতাড়ি বলো – কথা

কেন এত তাড়া কিসের তোর ভিতরে যাওয়ার জন্য – রূপ

আরে রিয়াকে বলে আসিনি আমি।ও হয়তো আমাকে খুঁজবে – কথা

কথা – রূপ

হুম বলো – কথা

তুই কি বুঝিস না ভালোবাসি আমি তোকে -রূপ

দেখো ভাইয়া এখন আমার ফান করার কোনো মুড নেই। সিরিয়াসলি বলো কি বলবা নাহলে আমি যাব – কথা

আমি সিরিয়াস কথা।সত্যি আমি তোকে ভালোবাসি – রূপ

ব্যাস অনেক হয়েছে ভাইয়া।অনেক সহ্য করেছি আমি।আর পারবো না আমি এসব মেনে নিতে। আচ্ছা ভালোবাসেন আমাকে তো গিয়েছিলেন কেন আমাকে ছেড়ে। কোথায় ছিল এই ভালোবাসা যখন আমি ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আপনার কাছে যেতাম – কথা

দেখ আমি চাইলে ও তোকে তখন এসব কিছু বলতে পারতাম না। কারণ আমি কথা দিয়েছিলাম সবাইকে নিজের পায়ে না দাড়ানো পযন্ত কখনো তোর কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবো না। তাই তোকে এক প্রকার ইগনোর করে চলতাম। ওখানে যাওয়ার পর ও সবার সাথে কথা বললেও তোর সাথে কথা বলতাম না। কারণ কথা বললেই মন বলবে দেশে তোর কাছে ফিরে আসতে – রূপ

হাসালেন মিস্টার রূপ চৌধুরী। আপনি ভাবছেন আমি কিছু জানিনা কিন্তু আমি সব জানি। কিন্তু আপনি আমার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় কেন করছে তা আমি জানিনা – কথা

কি বলছিস কথা ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয়।আমি সত্যি তোকে ভালোবাসি – রূপ

প্লিজ থামেন।যে মানুষ টা বিদেশে যাওয়ার এক মাস পর তাকে কল করলে তার প্রেমিকা কল রিসিভ করে বলে,

আমি কেন তাদের মধ্যে বাধা হতে চাচ্ছি।কি যোগ্যতা আছে আমার রূপ চৌধুরীর পাশের দাঁড়ানোর। আমি শুধু তার জীবনের একটা উটকো ঝামেলা।সে মানুষ টা অবশ্যই আমাকে ভালোবাসতে পারে না।কখনোই পারে না।আর হ্যা শুনে রাখেন।ঘৃণা করি আপনাকে আমি। আমার মনে আপনার জন্য একটা অনুভূতিই আছে আর সেটা হচ্ছে ঘৃণার অনুভূতি। বুঝেছেন।- বলে কথা রূপকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো।

আর রূপ সেখানে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কথা এসব কি বলে গেলো। রূপের কিছু বোধগম্য হচ্ছে না। কথার কথাগুলো যদি সত্যি হয়। তাহলে অনেক বড় একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়ে গিয়েছে তাদের মধ্যে।

অন্য দিকে কথা চলে যাওয়ার সাথে সাথে আরেক জন আড়ালে থেকে বেরিয়ে আসলো। তার মুখে ফুটে উঠেছে বিজয়ের হাসি।সেে একা একাই বলতে থাকে,

হ্যা পেরেছি আমি। আজকে আমি সফল। কথা আর রূপ আলাদা হয়ে গিয়েছে। মিস্টার রূপ চৌধুরী এখন দেখেন কেমন লাগে। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্টটা আপনি ও একটু ভোগ করে দেখেন।

~~~~~

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে ১২ টা বেজে যায়।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সবাই শুয়ে পরে।সবাই ক্লান্ত আবার কালকে বিয়ে। সকাল থেকেই শুরু হবে বিয়ের অনুষ্ঠান।

পরদিন সকালে রিয়ার মা এসে আমাদের সবাইকে জাগিয়ে দিয়ে যায়।সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেই।আজকে ও রিয়াকে সাজাতে পার্লারের লোক বাসায় আসার কথা। তারা এসে ও পরেছে। সাথে আমি আর অরু ও তৈরি হতে শুরু করে দেই।আজকে আমরা দুজনে একইরকম লেহেঙ্গা পরব।দুজনে একইরকম ভাবে মেকআপ ও করেছি। আমি রেডি হয়ে নিচে আসতেই আকাশের সাথে দেখা। ও আমাকে দেখে বলে উঠে,

এই যে মিস। কে আপনি ? – আকাশ

মানে কি আকাশ।তুই কি আমাকে চিনিস না ? – কথা

আরে তুই কি আমার আলু নাকি – আকাশ

হ ভাই আমিই তোর আলু। কিন্তু তুই এমন করছিস কেন আমাকে কি চিনা যাচ্ছে না নাকি হুম – কথা

না মহারাণি আপনাকে চেনা যাচ্ছে। সেই সাথে অনেক কিউট ও লাগছে। আজকে তো ছেলেরা আপনার থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না – আকাশ

হইছে তোর থাম এবার আর পাম দিলে আমি ফেটেই যাব – কথা

আচ্ছা করব না আর প্রশংসা। এখন বল আরশি কই ? – আকাশ

ও তো রুমে। কেন ওকে আবার কি প্রয়োজন ? – কথা

ওকে গিয়ে বল ওর ভাই ওকে ডাকছে – আকাশ

আচ্ছা ঠিক আছে – কথা

আমি রুমে গিয়ে আরশিকে বললাম রূপ ভাইয়া ওকে ডাকছে।আরশি চলে গেলো ভাইয়ার খোঁজে। আরশি খুজতে খুজতে ছাদে গিয়ে রূপ ভাইয়াকে খুঁজে পেলো। তারপর বললো,

তুমি আমাকে খুঁজছিলে ভাইয়া – আরশি

হুম। একটা কথা জানার ছিল – রূপ

কি কথা ভাইয়া – আরশি

তুই কি সব কিছু জানতি আরশি? – রূপ

চলবে , 🥰

(সরি আজকে একটু বেশিই লেট হয়ে গেলো। কালকে থেকে রাত ১০ টার ভিতরে গল্প পোস্ট করব।)
ফেসবুক গ্রুপে Join করুন!
https://www.facebook.com/groups/357890235145760

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here