তুই হবি আমার😎পর্ব-২১

0
2315

#তুই_হবি_আমার😎😎
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__২১

মেঘ ছাড়া বাকি সবাই রোজের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ মাথা নিচু করে অপরাধির মতো দাড়িয়ে আছে। মেঘের রিয়াক্শনে নিজের তেজ হারিয়ে ফেলেছে হয়তো।

কুহু : সোহরাবকে বিয়ে করার ডিসিশন তুমি একা নিতে পারো না রোজ। মেঘ তোমাকে ভালোবাসে। তুমি মেঘকে ভালোবাসো। শুধু একটা কথা রাখার জন্য তুমি তোমাদের জীবনটা এভাবে নষ্ট করবে.?

রওশন : দেখ রোজ জীবনটা তোর। তোর জীবন নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনা আমি। তবে আজ বলতেই হবে। তোর জন্য প্রতিটা মুহূর্ত মেঘ যে হারে কষ্ট পেয়েছে। তুই কি মেঘের জন্য ঠিক ততটা পেয়েছিস.? যখন ভালোবাসিস তখন একে অপরকে কষ্ট দেওয়ার এই কম্পিটিশন কেন.?

আরাভ : দেখো শালিসাহেবা। তোমাকে খুব কম চিনলেও মেঘকে আমি ছোট থেকে জানি। তাই বুঝতে পারি ও কতটা কষ্টে আছে। কি যাচ্ছে ওর ওপর দিয়ে। এতোদিন তো কষ্ট দিয়েছো। তাহলে আজও কেন.?

সম্রাট : আমার সাদিয়া নিজের খারাপ চাইলেও কখনো অন্যকে কষ্ট দেয়নি বোন। তুই তোর জীবনটা নিয়ে সুখি থাক। আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।

মেঘ : আমি রোজের সাথে একটু একা কথা বলতে চাই।
কুহু সবাইকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ এবার রোজের দিকে চোখ তুলে তাকালো।

মেঘ : এখানে এসে বস।
রোজ বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলো। মেঘ এক গ্লাস পানি ওর সামনে ধরে বললে।

মেঘ : পানি খা। কান্নাকাটি করছিস গলা শুকিয়ে গেছে তো।
রোজ : তামাশা করতেছো.?

মেঘ : না বলির আগে যেমন পাঠার যত্ন নেয় তেমন নিচ্ছি। খুব ইচ্ছা তাইনা সোহরাবকে বিয়ে করার.?

রোজ : নাহ।
মেঘ : এসব কেন করছিস। কিসের জন্য.?

রোজ : নিজের ইচ্ছায়।
মেঘ : চুপপপ।

ঠাসসস। রোজকে খুব জোরে চর দিলো মেঘ। তারপর সামনের টি টেবিলে ঘুসি দিয়ে কাঁচ ফাটিয়ে দিলো। রোজ ভয়ে কেঁপে উঠলো। রোজের গালে পাঁচ আঙ্গুলের ছোপ পড়ে গেছে। মেঘের হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে।

মেঘ : সত্যিটা জানতে চাই আমি। শুধু সত্যিটা বলবি। আর একটা মিথ্যা বললে আগে তোকে খুন করবো তারপর নিজে মরবো। কোনো আফসোস থাকবে না আমার।

রোজ ফুপাতে ফুপাতে সবটা বললো। মেঘ কাঁচ চেপে ধরে নিজের রাগ সংবরণ করছে।

মেঘ : এতোকিছু করতে পারলি অথচ আমাকে একবার জানাতে পারলি না.?

রোজ : তুমিও নাটক করেছিলে। আমাকে জানিয়েছিলে.? বলেছিলে কিছু.? তোমার জন্য আমার এক্সিডেন্ট হইছিলো। যদি মরে যেতাম.? তখন তো ঠিকই নতুন কাউকে নিয়ে থাকতে।

মেঘ : তুই জানিস আমি কি করতাম.? তোকে আগে থেকে বলে রেখেছি আমি এসব করবো.?

রোজ : না।
মেঘ : দেখ,, আমার হাত কেটে গেছে। ব্যান্ডেজ করে দে।

রোজ : কি.?
মেঘ : কানে কম শুনিস.? হাতে ব্যাথা করছে আমার। তাড়াতাড়ি কর।

রোজ বাধ্য মেয়ের মতো মেঘের সব কথা শুনতে লাগলো। মেঘ মুচকি হেসে রোজের গালে হাত রাখলো।

মেঘ : লেগেছে অনেক.?
রোজ এবার রাগে ফোস করে উঠলো।

রোজ : ওতো জোরে চর মেরে এখন পিরিত দেখাচ্ছো.? তোমাকে একটা মারি.? তখন বুঝবা। তোমাকে তো চর মারলে হবে না লাথি মারতে হবে। একটা লাথি দেই।

মেঘ : কি বললি.? লাথি মারবি? তোর দিন দিন সাহস বাড়ছে। এসব কাটুক তোর সাহস কিভাবে কমাতে হয় জানা আছে আমার।

মেঘ রোজের দিকে এগোতে লাগলে,,, রোজ ভয়ে পেছোচ্ছে।
রোজ : দূরে,,,, দূরে যাও।
মেঘ : তোর কথা মতো..? এটা পুরো আমার প্রপার্টি আর তাই আমি কাছে আসবো নাকি দূরে যাবো সেটা আমার ব্যাপার। তুই বলার কে.?

রোজ : না না না। আমি কোনো বস্তু না,, তাহলে তোমার প্রপার্টি হলাম কিভাবে,, আমি যাবো। আমি যাবো এখান থেকে।

মেঘ : নে ছেড়ে দিলাম আজ। কিন্তু বিয়ের পর কি করবি.? তখন তো আমার সাথে আমার বাড়ি, আমার রুমে, আমার সাথে থাকতে হবে।

রোজ : জোরজবরদস্তি.?
মেঘ : যদি প্রয়োজন পড়ে তোকে জোর করেই বিয়ে করবো। আমার তো বেশ থ্রিলিং লাগবে ব্যাপারটা। আর শোন সোহরাবের সাথে বেশি ঘেসাঘেসি করবি না। করলে আমিও আমার গোপিদের সাথে

রোজ : লুচ্চা।
মেঘ : তোর সাথে তো কিছুই করলাম না বুঝলি কিভাবে আমি লুচ্চা। বাচ্চা মেয়ে বলে বারবার ছাড় দিচ্ছি। নেক্সট টাইম কিন্তু ছাড় দিবো। তাই সামলে রাখিস নিজের মুখ আর এই সৌন্দর্য। জানু।

রোজ মেঘকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর মেঘের ঘাড়ে জোরে একটা চিমটি দিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলো। আর কুহুর কাছে নালিশ করলো মেঘ ওকে টর্চার করেছে। মেরেছে।



ছাদে কান ধরে একপায়ে দাড়িয়ে আছে মেঘ। ওর সামনে রোজকুহু।

কুহু : আরো ২৫মিনিট। রোজকে মারা, এতো সাহস তোর।
রোজ: বেশ হয়েছে।

মেঘ : তোর হচ্ছে দাড়া। নালিশ করা ছুটাচ্ছি।
রোজ : কুহু আপু।

কুহু : এই কি করবি রে তুই.? ওকে টাচ করলেও তোর এমন হাল করবো তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারবি না।

আরীব দরজার কাছে দাড়িয়ে এসব দেখে জোরে জোরে হেসে দিলো। মেঘ অসহায় চোখে আরীবের দিকে তাকালো।

মেঘ : না হেসে তোমার ডাইনি বোন কে সামলাও। আমার পিচ্চিটার মাথা ওরাই বিগড়েছে।

কুহু : ভাইয়া ও রোজকে বেধরম পিটিয়েছে। দেখ গালে দাগও আছে।
আরীব : মেঘ এসব কি.?

মেঘ : একটা চরই দিসিলাম। আর ও তিলকে তাল বানিয়ে বলেছে। দিন দিন শয়তান হচ্ছে।

রোজ : একটা হোক বা দুইটা। মার তো মারই হয়। তুমি আমাকে মেরেছো এটাই বড় কথা। তাইনা কুহু আপু.?

কুহু : না,,, মানে হ্যা। আমার বিয়ে ৫দিন পর আর তুই রোজকে এভাবে মেরেছিস।
মেঘ : আমি মারিনি রে বাবা।

কুহু তেড়ে মেঘের দিকে যেতেই মেঘ বলে উঠলো।
মেঘ : সরি। মেরেছি, ভুল করেছি, এবার মাফ করে দে রে বোন।

কুহু : মাফ করবো রোজ.?
রোজ : হুম করে দাও। আমাদের তো দয়ার শরীর,, আমরা কারোর কষ্ট বেশিক্ষন সহ্য করতে পারিনা।

মেঘ : রোজের বাচ্চা রোজ।
রোজ : আমার বাচ্চার নাম নিজের নামে রাখবো.? তোমার মতো বলদ না আমি।

আরীব : তোমরা কিভাবে এতো ঝগড়া করতে পারো.? কাল এন্গেইজমেন্ট সোহরাব কোথায়.?

রোজ : আমি কল করেছিলাম সকালে। সবটা বলেছি,, প্রথমে অনেক কাঁদছিলো কিন্তু নিজের কাজের জন্য সবটা মেনে এখানে আসবে। আর যারা টাকা দিয়েছিলো। তাদের স্কেচ দেখেছি, পুরো মুখটাই বাঁধা ছিলো। আমাকে যারা মারতে চেয়েছিলো তাদের মতোই।

মেঘ : রোদের ভালোবাসার ওপর হাত বাড়ানোর ফল হাড়ে হাড়ে পাবে ও। আমি ওকে এমন শাস্তি দিবো যে

রোজ : পারবে না। কারন ও তোমাদেরই একজন। সেজন্যই আমাদের নাটকটা এমন ভাবে করতে হবে যেন সেটা আসল মনে হয়।

মেঘ : তার মানে তুই সোহরাবের সাথে ঢলাঢলি করবি। ওকে টাচ করবি.?

রোজ : মাথার সাথে মুখের ভাষাও বিগড়ে গেছে। ঢলাঢলি কি.? যাস্ট সেটুকু,, যতটুকু প্রয়োজন। তবে বিয়ের মাঝে একটা এট্যাকের সম্ভাবনা আছে।

কুহু : তাহলে তো আমাদের সবাইকে এলার্ট থাকতে হবে।
মেঘ : সবাই না। আমি, তুই, আরাভ, রাজ ভাইয়া, সোহরাব আর রোজ কে। কারন ওর প্রথম টার্গেট রোজ। তারপর আমি।

রোজ : বাব্বাহ। আমার পরিচয় পাওয়ার পর দেখছি তোমাে ব্রেইন খুলে গেছে। এমন হবে জানলে আগেই বলে দিতাম আমি কে।

মেঘ : আমি মাফিয়া কিং রোদ জানু। তোর জন্য একটু বেশি ড্রামা করার জন্য অন্যসব কথা ভুলে গেছিলাম। এখন আবার ঠিক হয়ে গেছি।

রোজ : আগে ক্যাবলা আর আধা পাগল ছিলে এখন সাইকো আর পুরো পাগল হইছো।ঠিকই আছে।

কুহু : হি হি এটা ঠিক।
রোজ : রোজ অলঅয়েজ ঠিকই বলে।

মেঘ : কাল এন্গেইজমেন্ট সো আজ সব এরেন্জ করতে হবে। তার আগে বাড়ির প্রতিটা রুমে আর বাড়ির বাইরে হিডেন ক্যামেরা লাগাতে হবে।

রোজ : আমি শপিংএ যাবো। আমার এন্গেইজমেন্ট নতুন ড্রেস কিনতে হবে না.? কাল আমাকে সবার থেকে বেস্ট লাগতে হবে তো।

মেঘ : নাটকে আবার কিসের সাজ। কোনো সাজ হবে না। আমাদের বিয়েতে সাজবি। সারাদিন সাজবি কেউ কিছু বলবে না।

কুহু : না সাজলে সবাই সন্দেহ করবে। তোর জেলাসি আটকাতে আমরা কোনো ভুল করতে পারবো না। এক কাজ করিস কাল ওদের সামনে তোর থাকার দরকার নাই।

মেঘ : এসব না করে গুলি কর তো আমাকে। এসব দেখে মরার চেয়ে আগেই মরে যাই। রোজের পাশে অন্য কাওকে সহ্য করতে পারবো না। ব্যাসসসস

আরীব : লাইলি মজনু, রোমিও জুলিয়েট, শাহ্ জাহান মমতাজের, হিস্টরি চেন্জ করে মেঘরোজের কাহিনি ছাপাতে হবে। ছেলে মেয়েরা প্রেমে ইন্সপায়ার্ড হবে আর ছ্যাকাখোরদের সংখ্যাও কমে যাবে।

কুহু : একদম। আর এটা ছাপানোর দায়িত্ব আমি নিবো। মেঘ তুই টাকাটা দিয়ে দিস। কেমন?



গোসল করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে রোজ। তখনই আয়াশ আসে।

আয়াশ : ওপপস সরি।
রোজ : হুয়াটট.?

আয়াশ : না মানে এটা তোমার জন্য। মেঘ বললো সোহরাব পাঠিয়েছে। ওরা একটু বাইরে গেছে তাই আমি দিতে আসলাম।

রোজ : ওহ আচ্ছা। তো দাড়িয়ে আছেন কেন.? বসুন না। একি এটা তো গাউন। আমি এন্গেইজমেন্টে শাড়ি পড়বো। ইভেন সব ইভেন্টেই শাড়ি পড়বো।

আয়াশ : ওহ। জানতাম না।
রোজ : আপনি কিন্তু দারুন গান। যদিও ছ্যাকা খাওয়া গান তবুও ভালো।

আয়াশ : ধন্যবাদ।
রোজ : (এতো নরম সুর কিভাবে.?মতলব কি ওর.? নাকি চিল্লাবো বলে ভয়ে চুপ করে আছে। যাই হোক চুপ থাকলেই ভালো ) আচ্ছা আপনি আরাভ ভাইয়ার আপন ভাই.?

আয়াশ : হ্যা কেন.?
রোজ : এমনিই। আচ্ছা আপনি নিচে যান আমিও আসছি।

আয়াশ কিছু না বলেই নিচে চলে গেলো। রোজও নিচে নামলো। ওয়েডিং পার্টি সেন্টার থেকে লোক এসেছে বাড়ি ডেকোরেট করতে। রাজ ভাইয়া সোফায় বসে আছে। আর তার সামনে বসে স্যার কিছু ফর্মালিটি মেইনটেইন করছে। বাড়ি ভর্তি মেহমান। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।এমন সময় একটা লোক এসে রোজের হাতে একটা পার্সেল ধরিয়ে দিলো। রোজ লোকটাকে ডাকার জন্য পেছন ঘুরতেই আয়াশের সাথে ধাক্কা লেগে হাত থেকে পার্সেল নিচে পড়ে যায়।

আয়াশ : সরি,, সরি। এই যে আপনার পার্সেল।
রোজ : ধন্যবাদ।

আয়াশ : মাই প্লেজার। আপনি আমাদের মেহমান, আপনার উপকার করা আমাদের কর্তব্য। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।

রোজ: জি। ঠিক আছে।

রোজ পার্সেলটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। পার্সেলটা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলো। পার্সেলের নিচে একটা কার্ড “For you my future”। রোজ র্যাপিং পেপার খুলতে লাগলো। একটা কাপল শো পিস। আর একটা রঙিন খাম।

রোজ : পুরান পাগলে ভাত নাই নতুন পাগলের আমদানি। যত্তসব।

রোজ থামটা ছিড়ে,, চিঠি খুলতে লাগলো।

♥রোজ♥
তুমি ঠিকই বলো, গোলাপের পাপড়ি আর সুভাসের সাথে কাটাও থাকে। ঠিক তেমনই প্রতিটা গল্পে হিরো হিরোইন থাকলে সেখানে ভিলেনও থাকবে। আর মেঘরোজের জীবনের ভিলেন আমি। ভিলেন কেন বলছি.? তুমি যদি চাও তো আমি তোমার হিরো হতে পারি। আর না চাইলে জোর করতে পারি। কিন্তু তুমি মেঘকে কিভাবে বাঁচাবে.? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে, নিজের হবু বউ এর প্রেমিককে মারতে হবে। তবে চিন্তা করো না কষ্ট হলেও ওকে মারতে আমার হাত একটুও কাঁপবে না। আমাকে ধরার চেষ্টা করছো,,? আমি ধরা দেবো তো কিন্তু মাফিয়া কিং রোদকে মারার পর। আর সোহরাব.? কেন ওকেও মারতে বাধ্য করছো.? আমি চাইনা বিয়েটা শোকে পরিনত করতে। কুহুটাও অনেক বাড় বেড়েছে তুমি কি চাও মেঘের সাথে সোহরাব, কুহু দুইটাকেই পরকালে ট্রান্সফার করি.?
প্রশ্নটা তোলা থাক। উত্তরটা নাহয় পরে দিবো।♦♦

রোজ : ভুলের ওপর ভুল করলে,,, ট্রাস্ট মি তোমাকে চিনতে আমার একটুও সময় লাগেনি। অপেক্ষা করছিলাম প্রমান পাওয়ার জন্য। আজ পেয়েও গেলাম। এবার দেখো কে বাঁচে আর কে মারা যায়। রোদ মাফিয়া কিং হলে আমি ওর কুইন। সো রোদের চেয়ে কম সাইকো মার্ডারার আমিও না। এটলিস্ট ৮মার্ডার করার পর বলাই যায় আমি আরেকটা মার্ডার অনায়াসে করতে পারবো।

চলবে,,,

আগের পর্বঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here