তুমি আছো তাই পর্ব – ১৯

গল্প – তুমি আছো তাই
পর্ব – ১৯
লেখিকা – নৌশিন আহমেদ রোদেলা

নিশির বাবা গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন,,,,”মানে কি?আমার মেয়ের বিয়ে অথচ আমি জানি না???”

হ্যা জানেন না,,,কিন্তু এখন জানলেন।।শুনলাম মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজছেন,,ছেলে আমাদের একনম্বার,, এই বিয়ের সমন্ধের জন্য দুইমিনিটও লেট করা যায় না,,তাই সকাল সকাল পুরো পল্টন নিয়ে চলে এলাম।।(মুচকি হেসে)

খুব ভালো কথা,,,যদি দু’মিনিটও ওয়েট না করা যায় তাহলে ওয়েট করা উচিতও নয়।।।অনুচিত কাজ করা আরো বেশি অনুচিত।।সেই হিসেবে আরিফ সাহেব খুব ভালো কাজ করেছেন,,,তারিকুল রহমানের নিজেরও খুশিতে গদগদ হওয়া উচিত,,তার মেয়ের জন্য কেউ বাড়ি বয়ে পুরো পল্টন নিয়ে হাজির হয়েছে,,,কিন্তু তিনি খুবই বিমর্ষ হয়ে বসে আছেন।।।তার বিমর্ষতার প্রধান কারণ হলো নিশি,,,সে দৃঢ় কন্ঠে বলে দিয়েছে,,”দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা উঠলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে”।।ব্যাপারটা তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে,,,একমাত্র মেয়ে বিয়ের ভয়ে পালিয়ে গেছে ব্যাপারটা বড্ড বাজে শোনায়,,তাছাড়া এই রিস্কটাও তিনি নিতে চাচ্ছেন না।।আবার আরিফ চৌধুরীর কথামতো এক নম্বার ছেলেটাকে হাতছাড়াও করতে চাইছেন না।।।

সরি আরিফ সাহেব,,বিয়েটা সম্ভব না,

কিন্তু কেনো??(অবাক হয়ে)

আমার মেয়ে রাজি নয়,,

আপনি ওকে আগে জিজ্ঞেস তো করুন,,,আর পাত্রের নামটা তো আগে শুনুন,,,,

মাফ করবেন,,,সে রিস্ক আমি নিতে চাচ্ছি না,,,আর বিয়ে যেহেতু হচ্ছে না সেহেতু পাত্র কে সেটা শুনে আফসোস বাড়ানোর প্রশ্নই আসে না,,,

আরিফ সাহেব পড়লেন বিপদে,,,এ তো মহাসমস্যা,,তিনি তার পুত্রমহোদয়কে বেশ ভালোভাবে জানে,,,এই রিজেকশনের কথা শুনে সে যে তার পুরো পল্টনের লাইফ পৃথিবী থেকে রিজেক্ট করে দিতে পারে,,তা সম্পর্কে তিনি সচেতন,,এবং তার প্রবাবিলিটিই ব্যাপক।।যেভাবেই হোক বউ তো নিয়ে যেতেই হবে,,,,

অনেক মানুষের কথার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে,,,নিশির মনে হচ্ছে সে কোনো এক মেলার মাঝখানে সটান শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।।ব্যাপারটা কি আদৌ সত্য না স্বপ্ন তা বুঝার জন্য তাকে চোখ খুলে তাকাতে হবে,,কিন্তু সমস্যা হলো তার কিছুতেই চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না।।।এত্তো সকালে ঘরের মধ্যে মেলার উদ্ভব কি করে হতে পারে,, তাও সে ভেবে পাচ্ছে না।।তাই অবশেষে সে চোখ মেলে তাকালো,,নাহ তার রুম সব ঠিক আছে,,,কোনো মানুষের টিকিও দেখা যাচ্ছে না।।তবে কন্ঠ ঠিকই শুনতে পাচ্ছে,,ব্যাপারটা কি??অদম্য কৌতুহল নিয়ে নিশি রুমের বাইরে পা রাখলো,,,আর পা রাখতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,,,একি অবস্থা?? সোফায়,,সোফার হাতল,,সিঁড়ি,, চেয়ার এমনকি ফ্লোরেও বাদ যায় নি,,সব জায়গায় মানুষের ছড়াছড়ি,,,অবাক চোখে এদিকওদিক তাকিয়ে আরিফ সাহেবকে দেখে আরো অবাক হলো সে,,,,কি হচ্ছে এসব???

বাবা??(হতভম্ব কন্ঠে)এসব কি??

নিশির ডাকে সবাই তার দিকে ফিরে তাকালো,,,এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো,, নিশির এখানে আসাটা কারোরই প্রত্যাশিত নয়,,,সে উটকো এক ঝামেলা।।।নিশির বাবা,,চেয়ার ছেড়ে তরিহরি করে মেয়ের সামনে দাঁড়ালো,,,মেয়ে তাকে ভূল বুঝবে,,সেটা তো হতে দেওয়া যায় না।।।।

নিশু মা,,,উনারা তোর বিয়ের কথা বলতে আসছেন,,,কিন্তু আমি মানা করে দিছি,,,(কথাটা এক নিশ্বাসে বলে ফেললেন তিনি)

এতোজনে বিয়ের কথা বলতে এসেছেন?(অবাক চোখ)আর আরিফ আংকেল কেনো??

আরে ওরা হলো জনগন আই মিন আরিফ সাহেবের পল্টন,,দাওয়াত খেতে এসছে,,বিয়ের কথা বলতে এসেছেন মূলত আরিফ সাহেব।।

কথাটা শুনেই নিশির চোখ চকচক করে উঠলো,,,,নিশ্চয় নিলয় আর তার বিয়ে,,,উফফ অবশেষে বিয়ের কথাটা আসলো তাদের,,,কিন্তু বাবার বলা পরের কথাটা শুনে নিশি তার খুশিটা আর ধরে রাখতে পারলো না।।।

ছেলে নাকি একনম্বর,,,কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছি,,তুই যখন মানা করেছিস তাহলে নাই,,,তুই এবার খুশি তো মা??

বাবার কথা শুনে নিশির ইচ্ছে করছে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে,,,,ইসস ওর বাপটা এতো বেশি বুঝে কেন??যখন বিয়ে করতে চায়নি,,তখন তার ভাবসাব দেখে মনে হতো পারলে এখনি বিয়ে দিয়ে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিলে শান্তি পান,,,আর এখন যখন নিশি বিয়ে করতে চায়ছে তখন বলছে বিয়ে করতে চায় না।।।হোয়াট দ্যা হেল,,,

আরিফ সাহেব ভীষন চিন্তিত তারসাথে চিন্তিত পুরো পল্টন,,,,নিলয়ের সাথে এরমধ্যে কথা হয়ে গেছে,,সে নাবোধক কোনো শব্দ শুনতে চায় না।।।হয় বউ আনবে নয়,সে বউ তুলে আনবে আর সব ভেঙে চুরমার করে ফেলবে ব্যস,,,এই চুরমার যে জিনিস নয় মানুষ চুরমার তা বুঝতে আরিফ সাহেবের দু’বার ভাবতে হয় নি।।।তিনিও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন,,,পুত্রবধূ না নিয়ে সে এখান থেকে নড়বেন না,,,দরকার পড়লে এখানেই বুড়ো হয়ে যাবেন তবু তিনি সরছেন না,,,যা করার করে নেও,,হু কেয়ারস??নিলয়ের রাগের সামনা হওয়ার থেকে এখানে বসে বসে বুড়ো হয়ে যাওয়া হাজার গুনে ভালো,,,,

নিশি মন খারাপ করে বসে আছে,,,বাবাকে নাচতে নাচতে “বিয়ে করবো” “বিয়ে করবো” বলাটা অবশ্যই বেহায়াপনার সামিল।।এটা তারপক্ষে সম্ভব না,,আবার নিলয়ের সাথে বিয়ের চান্সটাও সে হারাতে চাচ্ছে না,,,কি হবে তার??এদিকে তারিকুল রহমানও চুপচাপ বসে আছেন,,,এই এক নম্বর ছেলেটাকে মেয়ের জামাই বানাতে পাড়লে না এই দুঃখের চেয়ে,,,এই একনম্বর ছেলেটা যে অন্য মেয়ের বাপের মেয়ে জামাই হবে সেই কষ্টই তার প্রকট,,,,কিন্তু সে হেল্পলেস,,মেয়েকে তো আর ধরে বেঁধে বিয়ে দিতে পারবেন না।।সমস্যা,,,একেই চলে চরম সমস্যা।
…………..
………………..
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……]

#তুমি_আছো_তাই #নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #গল্পের_ডায়েরি #রোদেলা #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here