#ভিলেন
#পার্টঃ৪১
#লেখনীঃ Gazi Snigdha Hossain Mona
মেঘলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই নিচে পড়ল তবে যতটা ব্যাথা পাওয়ার কথা ছিল ততটা পায় নি।
মেঘলাঃ আমি বেঁচে আছি..?? কিভাবে সম্ভব এত উপড় থেকে পড়েও আমি মরলাম না কেন? আমি তবে স্পাইডার ওমেন হয়ে গেলাম..???
মেঘলা কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে হাতে পায়ে কিছু জায়গায় ছিলে গেছে তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মত ব্যাথা পায় নি।
এখানে অনেক পর্যটক ছিল মেঘলা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তারা এসে মেঘলাকে ধরল।মেঘলা একজনের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নাবিলকে ফোন দিল।
নাবিলঃ মেঘলা তুই কোথায় আমরা সবাই কত মজা করছি তুই কোথায় একা একা কি করছিস?
মেঘলাঃ এ্যা এ্যা এ্যা…..
নাবিলঃ কি হল মেঘলা কাঁদছিস কেন?
মেঘলাঃত ত তুই একবার নিচে আসবি প্লিজ..??(কাঁদতে কাঁদতে)
নাবিলঃ কি হয়েছে মেঘলা এনিথিং সিরিয়াস?
মেঘলা কেঁদেই যাচ্ছে…
নাবিল ফোন কেটে দিল।
মেঘলার গাঁয়ে কাঁদা লেগে আছে জুতা ছিড়ে গিয়েছে ওড়না দূরে পড়ে আছে হাতে অল্প অল্প রক্ত পড়ছে সে বরফের উপড় বসে বসে কাঁদছে…
নাবিল আসার আগেই ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে আসল।
-আপনি বেঁচে আছেন মরেন নি এখনো?
এমন অদ্ভুত প্রশ্নে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে ব্যাক্তিটির দিকে তাকাল..
প্রশ্নটা করেছে আকাশ।
আকাশ কে দেখে, এই প্রথমবার মেঘলার ঘৃনা করছে রাগ ও হচ্ছে।
আকাশ মেঘলার কাছে এসে…
বেঁচেই যখন গিয়েছেন চলুন হোটেলে নিয়ে যাই।বলে মেঘলাকে কোলে নিতে চাইল।
মেঘলা আকাশকে হাতের কাছে পেয়ে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
আকাশ নিলজ্জের মত হেসে বলল সিনেমাটা রুমে গিয়ে করি এরা সবাই পর্দায় সিনেমা দেখে অভ্যস্থ বাস্তবে না…
মেঘলাঃ লজ্জা বলতে কিছু নেই তোর আমি যথেষ্ট ভদ্র পরিবেশে বড় হয়েছি তাই অকথ্য ভাষায় গালি দিতে চাচ্ছি না তুই এখান থেকে যা…
আকাশঃ কোলে উঠুন চলে যাচ্ছি…
মেঘলাঃ জানুয়ার কোন মুখে তুই আমাকে কোলে নিতে চাস আমি মরে যাব তাও তোর কোলে উঠব না।
আকাশ এসে মেঘলার পাশে বসল,আচ্ছা ঠান্ডা লেগে গেলে সেটা কি খুব ভাল হবে?আপাতত চল পড়ে না হয় আমাকে শাস্তি দিস।
মেঘলাঃ তুই মনে হয় এক বাবার সন্তান না তাই এক কথায় কাজ হচ্ছে না।
আকাশঃ ছি ছি ছি আমাকে যা খুশি বল মার চরিত্র নিয়ে টানাটানি করাটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না সুইটি।
মেঘলাঃ তোর মুখে থু থু দিতে ইচ্ছে করছে আমার..
আকাশঃ অনেক হয়েছে চল এবার বলেই আকাশ মেঘলাকে টানতে লাগল।
মেঘলাঃ আপনারা কি মানুষ একটা অসভ্য ছেলে অসুস্থ একটা মেয়ের সাথে জোর করছে তাও কিছু বলছেন না..
—– আপনি উনাকে চিনেন না?
মেঘলাঃ চিনি উনিই আমাকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল আসলে প্রয়োজন ফুড়িয়ে গিয়েছে তো তাই মারতে চেয়েছিল মরি নি দেখে এখন সবার সামনে ভাল মানুষি করতে এসেছে।
আকাশঃ মেঘলা কি করছিস পাবলিক নিয়ে মজা করতে নেই।আকাশের কথা শেষ হওয়ার আগেই কয়েকটা ছেলে এসে আকাশকে মারতে শুরু করল।
——- মেয়েদের সাথে মজা করার শখ আজ মিটিয়ে দিব যখন মন চাইবি প্রেম করবি তারপর এভাবেই ছুড়ে ফেলবি বলতে বলতে মারছে আকাশ কে আকাশ ফিরানোর চেষ্টা করেও পারছে না কারন এখানে অনেক জন। আকাশের নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে
আকাশ মেঘলাকে বার বার বলতে লাগল এখনো চুপ করে আছিস কি করে? কিছু ত বল মেঘলা ওরা আমায় মারছে।
মেঘলাঃ না আমি আর বাঁধা দিব না এবার তোর ও শিক্ষা হওয়া উচিত।
এর মধ্যেই নাবিল নিচে আসল আর দেখল সবাই জমাট বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ কে সবাই মারছে মেঘলা এক পাশে বসে আছে মেঘলার অবস্থা দেখে নাবিল বুঝতে পারল ওর অবস্থাও খারাপ।
নাবিলঃ চিৎকার করে বলল কি হচ্ছে এসব..?? দৌড়ে গিয়ে আকাশকে সবার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিল
আকাশের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাক মুখ থেকে রক্ত পড়ছে। নাবিল আকাশকে ধরল আর ঈষান মেঘলাকে তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে চলে আসল।
মেঘলার ডাক্তারের প্রয়োজন না হলেও আকাশের বেশ কয়েকটা স্টিচ লাগল।তবে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় নি।
নাবিল ওদের নিয়ে ব্যাস্ত ছিল তাই কি ঘটেছে জানতে পারে নি রাতে হোটেলে ফিরে নাবিল আকাশ আর মেঘলা ২ জনকে সহ সবাইকে নিয়ে বসল
নাবিলঃ মেঘলা ওখানে কি ঘটেছিল..??
মেঘলাঃ আমি পড়ে গিয়েছিলাম।
নাবিলঃ আকাশ থাকতেও তুই পড়ে গেলি কি করে..?? আকাশের হাত ধরতে পাড়লি না?
মেঘলাঃ ধরেছিলাম সবচেয়ে বিশ্বস্ত একটা হাত ধরেছিলাম আমি স্বপ্নেও ভাবি নি সেই হাতটা আমার হাত ছেড়ে দিবে..
নাবিলঃ বুঝলাম না আকাশ থাকতে অন্য কারোর হাত ধরার কি দরকার ছিল? আকাশ তুই কি ঘুমাচ্ছিলি ধরলি না কেন?
আকাশঃ……
নাবিলঃ আচ্ছা তুই না হয় পড়ে গেছিল কিন্তু আকাশকে পাবলিক মারছিল কেন?
আকাশঃ মেঘলা চেয়েছিল তাই
নাবিলঃ মানে কি.?
আকাশঃ আমি ওকে কোলে নিতে চেয়েছিলাম ও সিনক্রিয়েট করেছিল তাই পাবলিক আমাকে মেরেছে।
নাবিলঃ ছি মেঘলা তুই এটা করতে পারলি..??
মেঘলাঃ আমাকে কে ফেলে দিয়েছিল শুনবি না ভাইয়া.?? হ্যা এই আকাশ যাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম সে আমাকে ইচ্ছা করে ফেলে দিয়েছে কতবার অনুরোধ করে ছিলাম একটু ধরতে কিন্তু শুনল না নেহাৎ ভাগ্যের জোরে এখনো বেঁচে আছি।
নাবিল অবাক হল…
নাবিলঃ আকাশ…?? আমি বিশ্বাস করি না এটা কিছুতেই হতে পারে না আকাশ তোকে ফেলতে পারে না।
আকাশ কিছু না বলে উঠে চলে গেল।
নাবিল কি বলবে বুঝতে না পেরে সেও চলে গেল।
রাতে,নাবিলের কিছুতেই ঘুম আসছে না কি থেকে কি হয়ে গেল আকাশ কেন এমন করল সেটা জানতে চায় সে তাই আকাশের ঘরে গেল গিয়ে দেখল
আকাশ বেলকনিতে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে বসে আছে…নাবিল আস্তে করে গিয়ে আকাশের পিছনে দাঁড়াল।
নাবিল শান্ত গলায়,
নাবিলঃ কি দেখছিস…??
আকাশঃ কত বিশাল এই আকাশ টা তাই না নাবিল কিন্তু কখনো কখনো সেটাক শুন্য হয়ে যায় দেখ শুধু অন্ধকার না আছে তারা না আছে মেঘ শুধুই অন্ধকার
নাবিলঃ বুঝলাম না…
আকাশঃ আমাকে একটু একা থাকতে দে নাবিল।
নাবিলঃ কেন করলি এমন..??
আকাশঃ আজ না হয় একটু বাড়াবাড়ি করলাম কিন্তু বাকি এক যুগ যে ওকে ভালবাসলাম সেটা মেঘলার চোখে পড়ল না কি না করেছি ওর জন্য তার সাক্ষি তুই নিজেই জানিস নাবিল সবার সাথে পেরে উঠছিলাম না আমি বারবার মেঘলাকে ডাকছিলাম ও যেন আমায় বাঁচায় কিন্তু মেঘলা আমাকে রক্তাত্ব অবস্থায় দেখেও একটা বার বলল না আকাশ কে মেরো না… আমি সমীকরন মিলাতে পারছি নারে।মনে হচ্ছে আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
নাবিলঃ তুই কাঁদছিস আকাশ…??
আকাশঃ কই না ত আকাশের মেঘ যখন ঝরে যায় তখন জল পড়ে এটাকে বৃষ্টি বলে কান্না নয়।
আচ্ছা নাবিল ওরা যখন আমায় মারছিল মেঘলার কি একটুও খারাপ লাগে নি… এই হাত দিয়ে কতবার ওকে খায়িয়ে দিয়েছি সেই হাতে ওরা আঘাত করল মেঘলার কি একবারো বুক কাঁপল না সব কি করে ভুলে গেল বলতে পারিস? মানুষ এত স্বার্থপর কেন হয় একদিনের জন্য বাকি সব ভুলে যায় এই আমি কতোবার বাঁচিয়ে সব কি করে ভুলে গেল?
নাবিলের এই উত্তর জানা নেই তাই আকাশের কাছ থেকে চলে আসল সে এবার মেঘলার কাছে গেল
মেঘলাও ঘুমায় নি সেও বসে আছে তবে বেলকনিতে না নিজেত ঘরেই নিজের মার ছবি নিয়ে কান্না করছে।
নাবিলঃ আসব…
মেঘলাঃ আয়…
নাবিলঃ বলছিলাম আকাশ কে কি ক্ষমা করা যায় না মেঘলা…
মেঘলা প্রশ্নের উওর না দিয়ে আনমনে বলতে শুরু করল আমার সাথে এমন কেন হল বলতে পারিস…??
আমার সবচেয়ে আপজন মা আমাকে ছেড়ে চলে গেল বাবা চোখের সামনে পর হয়ে গেল ভালবাসার মানুষ ইচ্ছে করে আমাকে মেরে ফেলতে চাইল কেন রে ভাইয়া আমি কি এতই খারাপ? আমার কি হাসতে মানা? আমি তো আকাশ কে খুব ভালবাসতাম তাহলে ও কেন আমায় বাসল না… শুনেছিলাম বিপদে নাকি ভালবাসার মানুষ পাশে থাকে আমার বেলায় এমন কেন হল বলতে পারিস কি অপরাধ ছিল আমার কেন উপড় ওয়ালা আমার সুখ গুলিকেই শুধু কেড়ে নিলেন? আজ তোর আকাশের মার খাওয়াটা চোখে পড়ল আর আমার ভিতরের রক্তক্ষরন টা চোখে পড়ল না। যদি ছোট বেলা থেকে কাউকে ভালবাসতি পারতি মেনে নিতে?
এই প্রশ্নের জবাব নাবিলের জানা নেই তাই মুখ লুকিয়ে চলে আসল।
নাবিলঃ মেঘলা নিজের জায়গায় ঠিক আবার আকাশ টাও কষ্ট পাচ্ছে এখানে ২ প্রশ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই কারন ২ টার উত্তরেই তার অজানা…কিন্তু আকাশ যতই কষ্ট পাক আমার মেঘলার পাশে থাকাই উচিত আকাশ আর যাই হোক অসহায় না।
।
।
।
।
।
পরদিন সকালে
নাবিল মেঘলার ঘরে গেল,
নাবিলঃ এখন কেমন লাগছে..??
মেঘলাঃ ভালই আছি।
নাবিলঃ গুড…ওষুধ গুলি ঠিকমত খাস কেমন।
মেঘলাঃ ভাইয়া আমাকে একটু বাইরে নিয়ে যাবি
নাবিলঃ কিন্তু তোর কোমড়ে ত ব্যাথা।
মেঘলাঃ নিতে পারবি না আমায়..
মেঘলা নাবিলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে নাবিলের মায়া হল।
নাবিলঃ ঠিক আছে চল…
মেঘলাও উঠল কোমড়ের ব্যাথাট একটু কমেছে তাই একাই দাঁড়াল তারপর হাঁটতে লাগল।
কিন্তু নিচে আসতেই আকাশ সামনে এসে দাঁড়াল।
আকাশঃ কোথায় যাচ্ছিস?
মেঘলাঃআমি বাইরে যাব..
আকাশ মেঘলার হাত ধরে বলল কোথাও যাবি না তুই।
মেঘলা আকাশের কাছ থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে সবার সামনে আকাশের গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
মেঘলাঃ কোন সাহসে তুই আমার হাত ধরলি..??এত মার খাওয়ার পড়েও শিক্ষা হয় নি? তোর কি লজ্জা বলতে কিছু নেই আসলেই কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।
আকাশঃ তুই আমায় কুকুর বললি?
মেঘলাঃ হ্যা বললাম তুই শুধু কুকুরেই না একটা বেহায়া নির্লজ্জ জুতা পিটা না করলে তুই ঠিক হবি না। আমি কোথায় যাব কি করব সেটা জানার তুই কে?
আকাশঃ আমি কেউ নই..? তুই এগুলি বলতে পারছিস মেঘলা তোর কি মুখে বাঁধছে না..???
মেঘলাঃ বাঁধবে কেন আমি কিছু মিথ্যা বলছি নাকি যা সত্যি তাই বল্লাম সামনে থেকে সর বেহায়ার বাচ্চা।
আকাশঃ না আমি তোকে যেতে দিব না তুই আমাকে যাই বল তোকে আমি বাইরে যেতে দিব না।
মেঘলা আকাশের গালে আরও একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল আকাশের চোখ ভিজে গেল মেঘলা চলে যেতে চাইলে আকাশ আবার মেঘলার হাত ধরল।
মেঘলাঃ এই কুকুরের বাচ্চা আমার হাত ছাড় বলছি কতবার বল্লে তোর লজ্জা হবে আমি তোকে ঘৃনা করি বুঝতে পারছিস না…???
হোটেলের সবাই মেঘলাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
নাবিলঃ মেঘলার হাত টা ছাড় আকাশ আর কত অপমানিত হবি…??
আকাশঃ পারব নারে আমি যে ওকে ভালবাসি…
মেঘলাঃ প্লিজ হাতটা ছাড়, তোর পাপি দৃষ্টি থেকে আমাকে সারাজীবনের মত মুক্তি দে প্লিজ আত তোর এই পাপি মুখে ভালবাসার কথা বলে ভালবাসাকে অপমান করিস না।
আকাশঃ আচ্ছা তোর কথায় মেনে নিলাম আমি ভালবাসতে পারি না কিন্তু তুই আমাকে বল তো মেঘলা কাউকে ভালবেসে তুই কতদিন না খেয়ে থাকতে পারবি?
নাবিলঃ মানে..?? ?
আকাশঃ আমি কতদিন না খেয়ে থেকেছি জানিস নাবিল? প্রায় ২ টা বছর কোনদিন পেট ভরে খেতে পাই নি শুধু মাত্র ভালবাসার জন্য। বাবার একমাত্র ছেলে হয়েও লেভার ক্লাস জীবন যাপন করেছি শুধু মাত্র ভালবাসার জন্য তবুও আমি আজ ভালবাসার যোগ্য নই ঘৃনার যোগ্য।
নাবিলঃ কি বলছিস আকাশ?
আকাশঃ ঠিক বলছি
মেঘলাকে ফোন কিনে দেয়ার পরেও ও যখন আমার ফোন ধরছিল না আমার সন্দেহ হয় আমি ওর খোঁজ নেই অনেক চেষ্টার পর জানতে পারি মেঘলা সুসাইড করার চেষ্টা করেছে আমি সেদিনেই ছুটে যাই মেঘলার হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি মেঘলা ৩ মাস আগেই কোমায় চলে গিয়েছে খবর টা শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল সে শুধু আমি জানি কিন্তু সেই খবর টাও আমার কাছে হালকা মনে হল যখন জানতে পারলাম মেঘলাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হবে।
মেঘলার হাসপাতালের বিল দেয়া হচ্ছে না তাই মেঘলাকে আর হাসপাতালে রাখা হবে না খবর টা শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল আমি অবাক হলাম খোঁজ নিলাম মেঘলার বাবার। কিন্তু খবর নিয়ে জানতে পারলাম তিনি বিয়ে করেছেন আমি জানতাম এই খবর টা শুনলে মনি নিজেকে সামলাতে পারবে না এক দিকে মেঘলার এই অবস্থা অন্যদিকে এমন একটা খবর পেলে মনি ভেংগে পড়বে তাই মনির সাথে দেখা না করেই দূর থেকে মেঘলাকে একটি বার দেখে মেঘলার ব্যায়বহুল চিকিৎসার খরচের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সেদিনেই ফিরে আসলাম।
সেসমউ মেঘলার বিল প্রায় ২ লাখ টাকা একদিনের মধ্যে জমা না দিতে পারলে মেঘলাকে লাইফ সাপোর্ট থেকে বের করে দেয়া হবে তারমানে বের করে দেয়ার সাথে সাথেই মেঘলার মৃত্যু হবে।আমি পাগলের মত টাকার সন্ধান করতে লাগলাম দেশে থাকলে হয়ত বন্ধুদের কাছ থেকে নিতে পারতাম কিন্তু বিদেশে টাকা কোথায় পাব সেই সময় নাবিল তুই ও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। বাবার কাছ থেকে মিথ্যা বলে কিছু টাকা নিলাম চেইন,ল্যাপটপ বেচে সেদিন বিল মেঘলার দিয়েছিলাম সেদিনটার কথা মনে পড়লে এখনো বুক কেঁপে ওঠে।
নাবিলঃআকাশ তুই…
আকাশঃ চুপ এখন কিছু বলিস না আমাকে বলতে দে নাবিল….মেঘলার বাবা প্রথম একমাসের বিল দিলেও পরে আর মেঘলাদের সাথে কোন যোগাযোগ করে নি আমি মনিকে কষ্ট দিতে চাইনি বলে প্রতিমাসে টাকাটা মেঘলার বাবার নামেই পাঠাতাম।কিন্তু এই টাকা কোথা থেকে আসত জানিস..???
আমি ত কোন দিন কাজ করি নি তাই কিভাবে টাকা ইনকাম করতে হয় জানতাম না একটা চাকরির জন্য কত যে ঘুরেছি কিন্তু সুডেন্ট ভিসায় বিদেশিদের চাকরি দেওয়া হয় না অনেক ঘুরেও হাল ছাড়ি নি আমি।
আমি কিছু না পারলেও ড্রাইভ করতে পারতআম। তাই গাড়ি চালানো শুরু করলাম লোকের গ্যারেজে কাজ করতাম দিনে গাড়ি চালাতাম রাতে গ্যারেজে কাজ করতাম টাকা ম্যানেজ হত না বাবা আমার খাওয়া থাকার জন্য যে টাকা দিত নিজে না খেয়ে সেই টাকায় মেঘলার মেডিসিন কিনতাম।খালামনির বাসায় থেকে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না কারন তাহলে বাবা মা সব জেনে যেত তাই বাসা থেকে চলে এসে লেভার দের সাথে হোস্টেলে উঠি থাকতএ খুব অসুবিধা হত তাও থাকতে হত।একবেলা খেলে ২ বেলায় না খেয়ে আমি টাকা জমাতাম, জানিস নাবিল সারাদিন পরিশ্রম করে যখন খেতে ইচ্ছা করত ক্ষুদায় জ্বালায় ছটফট করতাম কিন্তু মেঘলার মুখে হাসি টা দেখব বলে সব সহ্য করে নিতাম। এত কষ্ট পেতাম তবুও কোনদিন আফসোস করি নি।তবে আজ পেয়েছি যে মেঘলার জন্য কিছু করলআম আজ সেই মেঘলা আমার কাছ থেকে মুক্তি চায় বাহ এর চেয়ে ভাল উপহার আর কি হতে পারে..??
নাবিলঃ এত ভালবাসিস তাহলে ওর সাথে এমন আচারন করিস কেন সব বললি না কেন।
আকাশঃ ভালবাসি তাই…মেঘলার মেডিকেল হিস্ট্রিতে লিখা ছিল মেঘলা আগেও সুসাইড করার চেষ্টা করেছিল তাই ডাক্তার আমাকে বলেছিল সোসাইড করতে চাওয়াটা মেঘলার সাইকোলজিকাল প্রবলেম আর এই সমস্যা টা আমি চাইলেই দূর করতে পারি… কারন মেঘলা ২ বারেই আমার জন্য মরতে চেয়েছিল একজন সাইকোলষ্ট আমাকে বলেছিল আমি যদি ওকে অবহেলা করি বা ওর আপনজন রা ওকে অবহেলা করে কেবল তাহলেই ও নিজেকে সামলাতে শিখবে। যাদের প্রতি ও দুর্বল তারা ওকে আস্কারা দিলে ওর এই সমস্যাটা কখনই ঠিক হবে না। অল্প কিছুতেই সোসাইড করতে চাইবে। মেঘলা ওর বাবার কাছ থেকে দুঃখ পেয়ে অনেকটাই স্টেবল হয়েছিল তাই আমি সবকিছু জেনেও আংকেল কে কোন শাস্তি দেই নি।
কাল আমার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে মেঘলা বাকিটাও ঠিক হয়েছে।তানাহলে এতক্ষনে ও হাসলআতালে থাকত কাল আমি ওকে মেরে ফেলার জন্য ফেলে দেইনি আমি জানতাম এই বরফে পড়লে ওর কিছুই হবে না.
এই পাহাগুলির বরফ শুটিং করার ও স্কীচ করার জন্য স্পেশালি জমানো হয় স্কীচ করার সময় স্কীচাররা হাজার হাজার বার এখানে পড়ে তাদের কারোরেই কিছু হয়না মেঘলার ও বড় কোন ক্ষতি হবে না এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম।
কিন্তু ব্যাথা ত একটু পাবেই। সেই ব্যাথাটা দেয়ার ও কারন ছিল মেঘলা সবার সাথে পিকনিকের ন্য এই বরফের মধ্যে বেশিক্ষন থাকলে ওর শ্বাসকষ্ট হত তাই ওকে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় করতে চেয়েছিলাম ভয়ে যেন আর পাহাড়ে না যেতে চায় সেটাই চেয়েছিলাম।
মেঘলার সাথে খারাপ আচারন করতে আমারো অনেক কষ্ট হত ওকে থাপ্পড় মেরে এতই খারাপ লেগেছিল একবার নিজেই নিজের হাত ভেংগেছি। যে ভালবাসা ওকে মিত্যুর দিকে ঠেলে দিবে তুই বল সে ভালবাসা পাওয়ার অধিকার কি তার আছে?
আমি সামনা সামনই মেঘলাকে ভালবাসতে পারতাম ন জন্যে রাতে অন্ধকারে মাস্ক পরে ওর কাছে যেতাম আফসোস এটাই যে এত কিছুর পরেও আমি ওর প্রিয়জন হতে পারলাম না। ও নিজে আমাকে মার খাওয়াল ও অসুস্থ হবে জন্যে আজ ওকে বাইরে যেতে দিচ্ছি না বলে আমাকে কুকুর বলল।
না রে মেঘলা আমি আর তোকে আটকাব না আজ থেকে তুই মুক্ত শুধু নিজের একটু খেয়াল রাখিস এইটুকুই তোর কাছে চাওয়া পারলে আমায় ক্ষমা করিস… আকাশ আর কখন তোকে জোর করবে না আকাশের হাত থেকে বাঁচার জন্য তোকে সবার কাছে আর সাহায্য চাইতএ হবে আজ থেকে ভুলে যাব আমি মেঘলা নামের কাউকে চিনতাম জানি কষ্ট হবে তবু এই পাপী মুখে আর কখনো ভালবাসার কথা বলব না। কথাগুলি বলে আকাশ চোখ মুছতে মুছতে আকাশ চলে গেল.
মেঘলা বোকার মত তাকিয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
নাবিলঃ মানতে হবে তুই ভাগ্যবতী এমন ভালবাসা সহজে পাওয়া যায় না আমি জানতাম এত কিছুর পিছনে নিশ্চুই কোন কারন আছে আকাশ এমনি এমনি কিছু করে না কিন্তু এত জটিল কারন সেটা জানতাম না। আকাশ খুব কষ্ট পেয়েছে রে মেঘলা…কাল রাতে কাঁদছিল ওকে মার খাওয়ানো টা ঠিক হয় নি।
মেঘলাঃ এতদিন সব সহ্য করেছিলাম আর একটু করতে পারলাম না? ভাইয়া যে এক রুখা আমাকে ত কিছুতেই ক্ষমা করবে না এত বাজে বাজে কথা কেন বল্লাম ? কেন মার খাওয়ালাম? এখন আমার কি হবে..??
।
।
।
।
।
।
চলবে….!!!