ভিলেন পার্টঃ৫৬

0
4399

#ভিলেন
#পার্টঃ৫৬
#লিখনীঃ Gazi Snigdha Hossain

আকাশঃ এমন ত্যাড়া বাঁকা কথা আমার পছন্দ না মেঘলা যা বলার সরাসরি বল …

মেঘলাঃ সরাসরি বলব??

আকাশ বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল হুম বল

মেঘলাঃ আচ্ছা বলছি আমার ঘুম পেয়েছে…

আকাশঃ কি….??

মেঘলাঃ এর চেয়ে সহজভাবে কি করে বলে আমার জানা নেই তবুও ট্রাই করছি জনাব আমি একটু ঘুমাতে চাই যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে তাহলে এখান থেকে এখন যান আমাকে ঘুমাতে দিন।

আকাশঃ হয়েছে বুঝেছি… আচ্ছা না বললে নাই আমার বয়ে গেছে তোর রাগের কারন খুঁজতে।
বলে আকাশ চলে গেল।

মেঘলাঃ উমম আসছে ভাব দেখাতে তাকে আমার সব বলতে হবে, কেন রে কেন..?? তুই যে এত বড় একটা মেয়েকে এসিস্ট্যান্ট রেখেছিস সেটা কি তোর চোখে পড়ে না? আমার বলে দিতে হবে কেন হুমম..??
পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট মেয়ে রাখতে হবে কেন ছেলে রাখা যেত না..?¿ তাও কিনা একটা শাকচুন্নিকে এসিস্ট্যান্ট রেখেছে ফালতু ছেলে।ইচ্ছা করে গলা টিপে মেরে ফেলি।





আকাশ অফিসে এসে জানতে পারল,
অপারেশনের পরে মিসেস জেনিফারের অবস্থা আরও ক্রিটিকেল হয়ে গিয়েছে অফিসের কয়েকজন স্টাফ তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছে আকাশ ও গেল।

আকাশ সেখানে যেতেই একজন নার্স এসে বলল,
মিসেস জেনিফার অনেকক্ষণ ধরে আকাশ কে খুঁজছে আকাশ তাই দেরি না করে তাড়াতাড়ি মেসেস জেনিফারের কাছে গেল

আকাশ যাওয়ার সাথে সাথেই মিসেস জেনিফার আকাশের ২ হাত ধরল।

আকাশঃ শান্ত হোন আন্টি আপনার কিছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে।

মিসেস জেনিফারঃ কিছু ঠিক হবে না বাবা আমি বেশ বুঝতে পারছি আমার সময় শেষ।আমি এতক্ষন ধরে তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। বাবা তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো আমি জানি তুমি দেবে আমি ছাড়া জেনির আর কেউ নেই আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুমি ওকে দেখবে কথা দাও বলেই মেসেস জেনিফার কেঁদে দিলেন।

আকাশঃ শান্ত হোন আন্টি সব ঠিক হয়ে যাবে

মিসেস জেনিফারঃ তুমি কথা কথা দাও না হলে আমি মরেও শান্তি পাব না।

আকাশ মিসেস জেনিফারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কথা দিল। তাতে জেনিফার একটু শান্ত হলেন।

তারপর আকাশ অফিসে ফিরে গেল কিন্তু আকাশ ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মিসেস জেনিফার মারা গেলেন।
পরিচিত একজনের মৃত্যুতে আকাশের কষ্ট হলেও তারচেয়ে বেশি অন্য একটা বিষয়ে চিন্তা হচ্ছে আকাশের।
সে নিজের অজান্তেই মৃত্যু পথযাত্রীকে কথা দিয়ে ফেলেছে যে তার মেয়েকে দেখে রাখবে।

জেনি তার মায়ের মৃত্যুতে একেবারে ভেংগে পড়েছে। আকাশ জানাযা দাফন সব শেষে জেনির সাথে দেখা করতে তাদের বাসায় গেল কিন্তু গিয়ে দেখল জেনির চাচা চাচি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে।
তাদের কথা তারা জেনিকে বাসায় থাকতে দিবে না জেনির বাবা ছোট বেলায় মারা গিয়েছিল তারপর নানা রকম অত্যাচার সহ্য করে জেনি আর তার ম এ বাসাতে ছিল কিন্তু তার মা মারা যাবার পর তাকে আর বাসায় থাকতে দিতে রাজি নয় তার চাচা চাচী।কারন বাসায় থাকতে দেওয়া মানেই নাকি জেনির দায়িত্ব নেওয়া তারা জেনির দায়িত্ব নিতে রাজি না।

জেনিঃ আমাকে বের করে দিলে আমি কোথায় যাব চাচা দয়া করো আমার উপড় আমি তোমাদের উপড় বোঝা হয়ে থাকব না আমাকে শুধু থাকতে দাও প্লিজ।
জেনি হাত জোর করে সবার কাছে ভিক্ষা চাইছে কিন্তু কেউ তার আকুতি শুনছে না।

আকাশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে কিন্তু হটাৎই আকাশের চোখে মেঘলার মুখ ভেসে উঠল আকাশের মনে হচ্ছে জেনি নয় বরং মেঘলা তার বাবার কাছে অনুনয় করছে বাসায় থাকার জন্য কিন্তু মেঘলার বাবা তাকে রাখতে রাজি হচ্ছে না। আকাশের এমন মনে হওয়ার কারন নাবিল তাকে বলে ছিল মেঘলার মায়ের মিত্যুর দিন মেঘলাকেও এভাবেই বের করে দেয়া হয়েছিল।
মেঘলার কস্টের কথা মনে পড়তেই আকাশ আর কিছু না ভেবে জেনির হাত ধরে জেনিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসল।

জেনিঃ স্যার কি করছেন…??

আকাশঃ ওরা তোমাকে এত অপমান করছে তাও তুমি এখানে থাকতে চাও..??

জেনিঃ এছাড়া আমি যাব কোথায়..?? আমার ত এরা ছাড়া আর কেউ নেই।

আকাশঃ এটা আমি কি করলাম জেনিকে নিয়ে আসলাম এখন ও কোথায় যাবে…??

জেনিঃ স্যার কি ভাবছেন..??

জেনির কথায় আকাশের ধ্যান ভাংগল
আকাশঃ চিন্তা করো না আমি ত আছি…

আকাশ এটা বলতেই জেনি কেঁদে দিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরল,
জেনিঃ স্যার আপনি সত্যি বলছেন..?? আপনি থাকবেন আমার পাশে….??

আকাশঃ জেনি এসব কি করছে কিন্তু এই মুহুর্তে ওকে হার্ট করাটা উচিত হবে না ভেবে আকাশ জেনিকে শান্তনা দিয়ে বলল,আমি তোমার মাকে কথা দিয়েছি আমি তোমাকে দেখে রাখব যতদিন না তোমার থাকার কোন ব্যাবস্থা হচ্ছে তুমি আমার বাসায় থাকবে ঠিক আছে বলে আকাশ জেনির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।

জেনিঃ কিন্তু আপনার বাসার লোকজন কি আমায় থাকতে দিবে.??

আকাশঃ ওরা এতটাও খারাপ না তোমার ব্যাপারটা নিশ্চুই বুঝবে।

এদিকে মেঘলা আকাশের জন্য অপেক্ষা করছে।
মেঘলাঃ এত রাত হয়ে গিয়েছে ভাইয়া এখোনো আসছে না কেন ও কি আমার উপড় রাগ করল..?? উফফ কি যে করি না আমি সকালে এটা আমি ঠিক করি নি।ভাইয়া এতবার জিজ্ঞাসা করেছিল আমার ওকে বলা উচিত ছিল।আমি না বললে ও জানবে কি করে? ও তো আর অন্তরযামি নয়।যাইহোক ভাইয়া বাসায় আসলে ওকে বলব ওই শাকচুন্নিটাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে।আমি এই জন্যই রাগ করেছি সব সোজাসোজি বলে দিব আর এটাও বলব যে অন্য মেয়েদের সাথে মিশা আমার পছন্দ না।

রাত ১১ টায় বাসার কলিং বেল বেজে উঠল মেঘলা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল কিন্তু দরজা খুলে সে পুরই হতবাক হয়ে গেল কারন আকাশ একা নয় তার সাথে জেনি আছে আর জেনির হাতে এক ঝাঁক শপিং ব্যাগ।দেখে মেঘলার অন্তরআত্মা উড়াল দিল।
মুলত জেনি খালি হাতে বের হয়ে এসেছিল জন্যে আকাশ তাকে প্র‍য়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে দিয়েছে।কিন্তু মেঘলার মাথায় এসব ঢুকে নি।
মেঘলা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল,

আকাশঃ হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বাসার সবাই কে ডাক সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

আকাশের গলা শুনে তার মা এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে বলতে বলতে নিচে নামল এসে তিনিও অবাক হলেন তারপর তিনি সবাইকে ডাকলেন।

আকাশঃ ওর মা আজ মারা গিয়েছে তাই এখন থেকে ও আমাদের বাসায় মানে এখানেই থাকবে….

আকাশের মাঃ এসবের মানে কি আমাদের বাসাটা কি এতিমখানা নাকি যে যার মাই মারা যাবে সেই এখানে এসে থাকবে শুরু করবে?

কথাটা শুনে আকাশ রেগে গেল কারন কথাটায় মেঘলাও কষ্ট পেয়েছে।

আকাশঃ মা কখন কি বলতে হয় তোমার সেটা শিখা উচিত।একটা মেয়ের মা মারা গিয়েছে আর তুমি তার সাথে এভাবে কথা বলছো…??

আকাশ তার মাকে বুঝাতে চাইছে কিন্তু শুধু রুবিনা বেগমের না বাসার সবারেই এই ব্যাপারে আপত্তি আছে।

নাবিলঃ আকাশ সব কিছুর একটা লিমিট আছে, অন্য জায়গা থেকে এসে একটা মেয়ে কিভাবে আমাদের সাথে মানিয়ে নিব?

আকাশঃ কেন মেঘলা মানিয়ে নেই নি? মেঘলা পারলে ও পারবে না কেন?

কথাটা শুনে মেঘলার মন খারাপ হয়ে গেল,
মেঘলাঃ বাহ ভাইয়া আমি আর একটা বাইরের মেয়ে তোর কাছে সমান হল..??তোর কাছে আমিও যা জেনিও তাই..??মেঘলার খারাপ লাগলেও সে মুখ ফোটে কিছু বলল না।

সবার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আকাশ জেনিকে বাসায় রাখার সিধান্ত নিল আকাশ কারো কথা শুনছে না দেখে মেঘলাও আর আপত্তি করার সুযোগ পেল না।

আকাশ সবার সাথে তর্ক করতে লাগল।
জেনি আকাশের কাছে গিয়ে বলল,

জেনিঃ স্যার আমার জন্য আপনি সবার কাছে খারাপ হবেন না প্লিজ তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।আমি চলে যাচ্ছি।

আকাশঃ না তুমি কোথাও যাবে না ওরা পেয়েছে টা কি এই বাসায় আমার কি কোন অধিকার নেই নাকি..??

নাবিলঃ জেনিকে আমি ভালো করে চিনি ও এখানে থাকলে অনেক ঝামেলা করবে তাতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে মেঘলা এতে আমার কোন সন্দেহ নেই।মেঘলাটা এখনো চুপ করে আছে কেন? মেঘলারে তোর কপাল পুড়তে যাচ্ছে তুই এখনো এত শান্ত হয়ে আছিস কি করে?কিছু বল একমাত্র তোর কথায় আকাশকে আটকাতে পারে।
মুখ খোল মেঘলা…আর চুপ করে থাকিস না।

মেঘলা আকাশ আর জেনির কান্ড দেখছে তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মুখ ফোটে কিছু বলছে না।অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করছে মেঘলা.

আকাশ সবার সাথে তর্ক করতে করতে বেশ রেগে গিয়েছে সে রাগি রাগি চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল জেনি আজ থেকে তোর সাথে তোর রুমে থাকবে তাতে তোর কোন আপত্তি আছে..??

মেঘলা উত্তর দিল না…

আকাশঃ কিরে কিছু বলছিস না কেন…

মেঘলা নরম গলায় উত্তর দিল না আপত্তি থাকবে কেন..??এতো ভাল কথা।

আকাশঃ গুড ওকে নিয়ে রুমে যা…ওর দিকে একটু খেয়াল রাখিস মেঘলা। মনে রাখিস ও আমার গেস্ট।

মেঘলা কিছু না বলে মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগল।

আকাশঃ জেনি ওর সাথে যাও…
জেনিও আকাশের কথামত মেঘলার পিছু পিছু চলে গেল।

আকাশঃ জানতাম আমার কথা কেউ না শুনলেও মেঘলা ঠিকি শুনবে এই জন্যেই এত ভালবাসি পাগলিটাকে।

ভাবতে ভাবতে আকাশ নিজের ঘরে চলে গেল।

নাবিলঃ মাথায় গন্ডগোল থাকলে যা হয়… সবার সাথে রাগ দেখিয়ে যার উপড় তুই অধিকার দেখিয়ে জেনিকে ওর রুমে পাঠালি সেই মেঘলাই যে সবচেয়ে বেশি হার্ট হয়েছে সেটা তুই বুঝতেই পারলি না। আকাশ কি রে তুই?মাঝে মাঝে আমিও তোকে বুঝতে পারি না।
আর সামান্য বিষয় নিয়ে যে মেয়ে বাসা মাথায় তুলে নেয় সে আজ সব চুপচাপ সহ্য করল কিচ্ছু বলল না? কেন বলল না?

আকাশের মা রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের ঘরে গয়েই নিলিমা কে ফোন দিল।

নিলিমাঃ হুম খালামনি বলো হঠাৎ এই সময় ফোন দিলে…

রুবিনা বেগমঃ আর বলিস না এতদিন একটা আপদ ছিল এখন আকাশ আরও একটা আপদ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে।

নিলিমাঃ মানে বুঝলাম না খুলে বলো খালামনি কি হয়েছে?

রুবিনা বেগম জেনির ব্যাপারে সবটা বলল।

নিলিমাঃ তাই নাকি বাহ আমার ত শুনেই খুশি লাগছে তুমি সত্যি বলছো খালামনি…??

রুবিনা বেগমঃ নিলিমা তুই কি দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছিস নাকি এটা খুশি হওয়ার মত খবর..?? এত খুশি হচ্ছিস কেন?

নিলিমাঃ খালামনি তুমি না বড্ড সহজ সরল আমি কেন খুশি হয়েছি এই সহজ হিসাব টা বুঝতে পারছো না..??

রুবিনা বেগমঃ মানে..??

নিলিমাঃ কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয় সেটাও কি তুমি জানো না…??

রুবিনা বেগমঃ আরে আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি।ঠিকি তো…

নিলিমাঃহুম আগুন নিজে থেকেই জ্বলে গিয়েছে এখন তোমার কাজ শুধু সেই আগুনে ঘী ঢালা।

রুবিনা বেগমঃ যা বলেছিস এবার মেঘলার বিদায় ঘন্টা বাজল বলে। এই জেনিকে দিয়েই মেঘলাকে বিদায় করব তারপর জেনিকে আমরা বিদায় করব… বলেই হা হা হা করে হেসে উঠলেন রুবিনা বেগম।
তুই থাক নিলিমা আমি একটু ঘী ঢেলে আসি।

নিলিমাঃ খালামনি তুমিও না…

রুবিনা বেগমঃ শুভশিঘ্রম জানিস না…

নিলিমাঃ উফফ সামনে দেখতে পেলে কি মজাটাই না হত…

রুবিনা বেগমঃ কয়েটা দিন অপেক্ষা কর তোকে খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসব।

নিলিমা খুশিতে ফোন রাখল

রুবিনা বেগম ফোন রেখে মেঘলার ঘরের দিকে গেলেন।



চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here