#ভিলেন
#পার্টঃ৫৭
#লিখনীঃ Gazi Snigdha Hossain Mona
রুবিনা বেগম মেঘলার ঘরে গেলেন,
সেখানে জেনিও আছে,
রুবিনা বেগমঃ নাবিল আর আকাশ ২ টাই এত নরম মনের হয়েছে না কি আর বলি…
কারোর কোন দুঃখ সহ্যই করতে পারে না।
আগে তো ভেবেছিলাম মেঘলা বোন বলে ওর কষ্ট সহ্য হয় না তাই মনে হয় ওকে এনেছে এখন দেখছি, না যাকেই কষ্ট পেতে দেখে তার জন্য দরদ একদম উতলে পরে।এই যে মেয়ে শোন চলে যখন এসেছই তখন বাসার কাজে একটু হেল্প করো বুঝেছো…?? মেঘলার মত এমন হাত পা ছুড়ে বসে থেকো না যেন।
জেনিঃ জ্বি আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না আমি খেয়াল রাখব।
রুবিনা বেগমঃ আমার সাথে একটু ওই ঘরে চলো ত তোমার সাথে কিছু কথা আছে বলে রুবিনা বেগম জেনিকে নিয়ে চলে গেলেন।
মেঘলার মুখে কোন কথা নেই চুপচাপ দেখছে। মেঘলার মুখে কথা না থাকলেও মাথায় অনেক কথা ঘুরছে…
মেঘলাঃ আমার জন্য তোদের সত্যিই আলাদা কোন টান নেই..?? আমার উপড় সবাই দয়া দেখিয়েছিস..?? দয়া দেখা আর যাই দেখা আমি তোর বউ তুই এই মেয়েটাকে বাসায় এনে ভাল করলি না এর জন্য আমি তোকে ক্ষমা করব না ওকে আনার আগে তোর আমার কাছে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল।
এদিকে,
রুবিনা বেগমঃ এসো এসো ভিতরে এসো…
জেনিঃ জ্বি আন্টি বলুন…
রুবিনা বেগমঃ তুমি তো আমার মেয়ের মতই এ বাড়িটাকে একদম নিজের বাড়ি মনে করবে কেমন… আকাশ ভালবেসে তোমাকে নিয়ে এসেছে আমি মা হয়ে কি তা ফেরাতে পারি বলো।
জেনিঃ কিন্তু আন্টি একটু আগেই ত আপনি বলছিলেন,
জেনির কথা শেষ হওয়ার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
রুবিনা বেগমঃ আরে তখন তো রেগে ছিলাম আকাশ কিছু না বলে তোমাকে নিয়ে এসেছিল তাই তুমি চিন্তা করো না এখন থেকে তুমি আমার মেয়ের মতই থাকবে। কাজের কথা আমি তোমাকে বলিনি আসলে মেঘলা এ বাড়িতে বসে বসে অন্ন ধ্বংস করছে আর আমার ছেলের মাথা চিবিয়ে খাচ্ছি ওকে আমার একদম পছন্দ না তাই এসব বলেছি তোমাকে বলিনি তুমি মনে কিছু করো না।বাদ দাও এসব,
আকাশের পছন্দ আছে বলতে হবে কি সুন্দর মেয়ে এনেছে আমার জন্য তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি যদি আমার কথা মত চলো তোমাকে আমার ছেলের বউ বানাব।
জেনিঃ আন্টি কি বলছেন এসব স্যারের সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক নেই।
রুবিনাঃ নেই ত হতে কতক্ষন?
জেনিঃ কি বলছেন আন্টি? এটা কি করএ সম্ভব উনি ত মেঘলাকে ভালবাসেন।
রুবিনা বেগমঃ আরে এসব কিছু না এতদিন আমিও ভাবতাম আকাশ মনে হয়না মেঘলাকে পছন্দ করে কিন্তু এখন বুঝলাম আকাশ ওকে পছন্দ করে না বরং করুনা করে।একটা মেয়ের সাথে এতদিন একসাথে থাকলে একটু ভাল লাগা তৈরি হতেই পারে এসব কোনো ব্যাপার না তুমি তোমার ভালবাসা দিয়ে ওকে তোমার করে নাও।
জেনিঃ কিন্তু আন্টি.. স্যার আমাকে পছন্দ করে না।
রুবিনাঃ কোন কিন্তু না… একবার ভেবে দেখো আকাশের মত ছেলে হাজারে একটা হয়. তাছাড়া ওর সাথে বিয়ে হলে আমাদের সব কিছুর মালিক হবে তুমি।
তুমি কি তা চাও না..?? আর ও যদি তোমাকে পছন্দ না করত তাহলে কি তোমাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসতো বলো।
মেয়েরা পারে না এমন কিছু নেই ছলে বলে কৌশলে ওকে নিজের করে নাও আমি তোমার পাশে আছি
একটা ছেলেকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা কি এমন কঠিন কাজ? মেঘলার কাছ থেকে সরিয়ে আনতে পারলেই আর কোন অসুবিধা থাকবে না।
জেনিঃ সত্যিই ত এত বড় বাড়ি এত টাকা পয়সা হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দেওয়াটা উচিত হবে? না কিছুতেই না আমাকে চেষ্টা করতে হবে যেখানে স্যারের মা নিজেউ চাচ্ছে সেখানে ব্যাপারটা এতটাও কঠিন হবে না (মনে মনে)
রুবিনা বেগমঃ কি ভাবছো..??
জেনিঃ কিছু না আন্টি আপনি যদি পাশে থাকেন আমি চেষ্টা করতে রাজি আছি ।
রুবিনা বেগমঃ এই তো লাইনে এসেছো একবার মেঘলাটাকে বিদায় করি তারপর তোমাকে তো ছুড়ে ফেলে দিব (মনে মনে)
জেনিঃ কি ভাবছেন আন্টি।
রুবিনা বেগমঃ না তো কিছু না তাহলে কাল থেকেই কাজে লেগে পরো।আমি তোমাকে হেল্প করব।
জেনি সম্মতি জানিয়ে মেঘলার ঘরে ফিরে আসল।
মেঘলা বরাবরই বিলাশবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্থ সে নিজের ঘরে অন্যকাউকে এলাউ করতে রাজি না কিন্তু আজ তাকে অন্য একজনের সাথে ঘুমাতে হবে ভেবেই মেঘলার খারাপ লাগছে।
মেঘলা গিয়ে বিছানার এক কোণায় শুয়ে পড়ল…
জেনিও শুয়ে পড়বে তখন মেঘলা বলল ডিমলাইট টা অন করে দিতে।
আকাশ যখন থেকে রাতের বেলায় মেঘলার রুমে আসত তখন থেকে মেঘলা অন্ধকারে ঘুমাতে ভয় পায় যদিও সেই অন্ধকারের মানব মেঘলাকে আদরেই করত কিন্তু মেঘলা তাকে ভয় পেত কারন তখন সে জানত না ওটা আকাশ ছিল যখন জানতে পারল তখন সব মিটে গেলেও মেঘলার ভয় টা দূর হয় নি।
তাই জেনিকে বলল লাইট জ্বালিয়ে দিতে।
রুবিনা বেগম ইতিমধ্যেইবজেনির মনে মেঘলার প্রতি হিংসা ঢুকিয়ে দিয়েছে তাই সহজ ব্যাপারটাকেও জেনি সহজ ভাবে নিতে পারল না।
জেনিঃ আজব এই বাসায় আমি যেমন আশ্রিতা মেঘলাও ঠিক তাই তাহলে আমি কেন ওর হুকুম শুনব..??
কিন্তু না শুনলে যদি স্যার কে বলে.? বললে বলুক আন্টি ত আমার পাশে আছে (মনে মনে)
জেনিঃ লাইট জ্বালব মানে…?? আমি লাইট জ্বেলে ঘুমাতে পারি না বলে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।
মেঘলা নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল থাক মেঘলা মন খারাপ করিস না। মা হারানোর কষ্ট ত তুই নিজেও জানিস। অন্তত সেই জন্যে হলেও একটু মেনে নে…ভাবতে ভাবতে মেঘলা ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল বেলা মেঘলা সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে কারন তার মর্নিং শিফটে স্কুল। আর মেঘলার স্কুলের জন্য নাবিলের মাও সকালে উঠে।
কিন্তু আজ তাদের আগেও আর একজন উঠেছে সেটা আর কেউ নয় জেনি।
বরাবরের মতই নাবিলের মা রান্না ঘরে রান্না করছেন মেঘলা টেবিলে বসে বই উল্টে দেখছে কারন এখোনো রান্না হয় নি।তখন জেনি সেখানে আসল।
জেনিঃ আন্টি আসব..??
নাবিলের মাঃ হুম এসো কিছু কি লাগবে তোমার..??
জেনিঃ না আমি এসেছি আপনাকে সাহার্য্য করতে…
নাবিলের মাঃ আরে না না তোমার হেল্প করতে হবে না।
পিছন থেকে আকাশের মাঃ কেন রে ছোট হেল্প করতে চাচ্ছে করোক না।
জেনিঃ ঠিকি বলেছো আন্টি,
আসলে আমি অন্যদের মত বসে বসে খেতে পারব না এইটুকু না করতে পারলে আমার খারাপ লাগবে…
আকাশের মাঃ দেখ ছোট দেখ এই হল সত্যিকারের লক্ষি মেয়ে এ বাসায় তো বসে বসে অন্ন ধ্বংস করার জন্য অনেকেই আছে সারাদিন এখানের জিনিস ওখানে সরায় না পর্যন্ত…
মেঘলা বেশ বুঝল কথা টা বলেছে কিন্তু গায়ে মাখল না সে ভাবছে যার মা একদিন আগে মারা গিয়েছে সে কি করে রান্না করার কথা ভাবছে?
জেনিঃ আমি সবার জন্য চা করছি বলে নাবিলের মাকে কোন সুযোগ না দিয়ে চা করতে শুরু করে দিল।
নাবিলের মাও কাজে লেগে পড়ল।
জেনি চা করে বলল আন্টি দেখুন তো সব ঠিক আছে না..??
নাবিলের মাঃ সবগুলি চা করেছো তাহলে এক কাপ কফি কেন?
জেনিঃ স্যার ব্লেক কফি খেতে পছন্দ করে তাই স্যারের জন্য কফি করেছি অফিসে তো আমিই করে দেই।
নাবিলের মাঃ ওহ…
মেঘলাঃ ডং দেখলে বাঁচি না( মনে মনে)
জেনিঃ আমি সবার রুমে গিয়ে চা দিয়ে আসি..??
আকাশের মাঃ কি ভাল মেয়ে…সবার কথা কত ভাবে…যাও মা যাও।
জেনি যেই পা বাড়াল মেঘলা উঠে দাঁড়াল।
মেঘলাঃ হুম বড় মা ভিষন ভাল মেয়ে কত ভাবছে দেখো কিন্তু আফসোস ও উপড়ে যাওয়ার পর শুধু ওর জন্য না ব্যাপার টা তোমার আর ছোট মার জন্যেও খারাপ হয়ে যাবে।
জেনিঃ মানে কি…?? আমি সবার জন্য চা করেছি তোমার সেটা সহ্য হচ্ছে না তাই না…??
মেঘলাঃ অযথা তর্ক করা বোকাদের কাজ আমি নিজেকে সেই দলে ফেলতে চাই না। ছোট মা আমি আসছি ক্যান্টিনে খেয়ে নিব বলে মেঘলা চলে গেল।
জেনিঃ আন্টি দেখলে ও আমাকে কিভাবে অপমান করল তোমরা কিছু বলবে না..??
নাবিলের মা এসে জেনির হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে নিল।
নাবিলের মাঃ মেঘলা ঠিকি বলেছে ওরা সবাই একসাথে খায় তাছড়া একটা মেয়ে হয়ে তুমি কিভাবে অপরিচিত ছেলেদের ঘরে চলে যাবে? ঘুমের মধ্যে কে কি অবস্থায় আছে কে জানে?আকাশ বা নাবিল কেউ এই এটা মানবে না।
জেনির প্রথম চেষ্টা ব্যার্থ হলেও সে হাল ছাড়তে রাজি নয় সে প্লেন করল রাতের খাবার রান্না করবে।
জেনিঃ যে করেই হোক সবার মন আমার জয় করতেই হবে।
সকালে সবাই নাস্তা শেষে যে যার মত কাজে চলে গেল।
আকাশ যখন বের হবে তখন আকাশের মা এসে বল্লেন,
জেনি আর তুই ত একই জায়গায় যাচ্ছিস তাহলে জেনিকে সাথে নিয়ে যা।
আকাশ তাই করল…তারা একসাথে অফিসে গেল।
।
।
।
।
সারাদিন পরে সন্ধ্যায় আকাশ আর জেনি একসাথে বাসায় ফিরল,
মেঘলা পড়তে বসেছে আকাশ আর জেনিকে একসাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই মেঘলার মন খারাপ হয়ে গেল।
আকাশ এসে মেঘলার ঘরে গেল কিন্তু মেঘলা আকাশ আর জেনিকে দেখেই ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
আকাশ ঘরে ঢুকার পর জেনিও সেখানে আসল
আকাশ মেঘলাকে খুঁজছিল।
জেনিঃ স্যার বসুন না…?? আমি আপনার জন্য পানি নিয়ে আসি…???
আকাশঃ না কোন প্রয়োজন নেই আমার কিছু লাগবে না আমি মেঘলার কাছে এসেছিলাম বলে আকাশ চলে গেল।
জেনিঃ এই মেঘলার ভুত যে কিভাবে উনার ঘাড় থেকে নামাব কে জানে…??
জেনি বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই রান্না ঘরে চলে গেল আকাশের মার কাছ থেকে আকাশের পছন্দের সব খাবারে ব্যাপারে জেনে নিয়ে সে রান্না করা শুরু করে দিল নাবিলের মা তখন ঘুমাচ্ছিল তিনি উঠার আগেই সব রান্না শেষ করে ফেলেছে জেনি।
রাতে সবাই খেতে বসল
ইলিশ মাছ,চিংড়ি মাছ,গরুর মাংস,ডাল আর পায়েস রান্না হয়েছে।
আকাশের মা সবাইকে বলে দিলেন আজ রান্না জেনি করেছে।
আকাশের বাবা নাবিলের বাবা নেহা মিলি সবাই খুব খুশি ভাল ভাল খাবার রান্না হয়েছে দেখে।
আকাশের বাবাঃ ঘ্রানেই বুঝা যাচ্ছে খাবার খুব ভাল হয়েছে।
আকাশের মাঃ ঠিক বলেছো…
আকাশও খেতে বসেছে।
নাবিলের মাঃ জেনি আর কিছু রান্না কর নি…??
জেনিঃ সবি ত করলাম আন্টি আর কত..??
নাবিলের মাঃ আসলে মেঘলার গরুর মাংস আর চিংড়ি মাছে এলার্জি আছে ইলিশ ও খেতে চায় না।
ও কি দিয়ে খাবে সেটাই ভাবছি।
আকাশের মাঃ মেঘলা নাত করতে পারে কোন কাজ না ত খেতে পারে? ও যেহেতু খায় না নিজে নিজের টা করে খেতে পারে না? ও করবে কি করে ও তো আর জেনির মত না ও তো।কোন কাজেই পারে না রান্না করা ত অনেক দূরের ব্যাপার।কত যে ওর সমস্যা এটা খায় না ওটা খায় না এটা করতে পারে না ওটা করতে পারে না কিভাবে যে শ্বশুর ঘর করবে..??
নাবিলঃ হুম ঠিকি বলেছো মেঘলা কিছুই পারে না কেউ নিজেকে কিছু বললে যে সেটার উত্তর দিতে হয় সেটাও পারে না পারে শুধু হজম করতে অসহ্য কর একটা মেয়ে।
আকাশঃ ফালতু কথা রেখে আমরা এবার খাওয়া শুরু করি..??জেনি আমাকে ইলেশের ওই বড় পেটিটা দাও তো।
নাবিলঃ অদ্ভুত এই বাসার প্রতিটা মেম্বারেই অদ্ভুত একজন না খেয়ে থাকবে আর বাকিরা আস্টেপিস্টে গিলবে কি দারুন।
আকাশঃ বকবক বন্ধ করে খা…
নাবিলের মাঃ মেঘলা আমি তোকে একটা ডিম ভেজে এনে দেই মন খারাপ করিস না
মেঘলাঃ উফফ ছোট মা নাবিল ভাইয়ার কথা ধরছো কেন ডাল আছে তো আমি ডাল দিয়ে খাচ্ছি। সবাই খাও তো
নাবিলের মাঃ আমার সোনা মেয়ে…
সবাই খাওয়া শুরু করল সবাই জেনির রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রান্না নাকি খুব ভাল হয়েছে।
মেঘলার আকাশের কথায় মন খারাপ হলেও কাউকে সেটা বুঝতে দিল না সে ডাল নিয়ে খাওয়া শুরু করেছে।
কিন্তু অবাক করা বিষয় আকাশ সেই কখন থেকে মাছের কাঁটা বেছে যাচ্ছে এখনো একটু খাবারও মুখে দেয় নি।
জেনিঃ স্যার খাচ্ছেন না কেন..??
আকাশ এতক্ষন খুব মনযোগ দিয়ে কাঁটা বাছছিল এবার মুখ তুলে তাকাল।
আকাশঃ হুম খাব কাটা গলায় আটকে গেলে বিপদ হয়ে যাবে তাই বাছছিলাম।
বলে আকাশ নিজের প্লেট টা মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে মেঘলার প্লেট টা নিজের কাছে নিয়ে নিল।
মেঘলাঃ ভাইয়া কি করছিস…??
আকাশঃ ভাল করেই বেছে দিয়েছি কাটা নেই ভয় পাস না খা …জানি পছন্দ করিস না কিন্তু কষ্ট করে খেয়ে নে।বলেই আকাশ মেঘলার ডাল মাখা ভাত নিজের মুখে তুলে নিল।
আকাশের মাঃ এটা কি করলি..?
আকাশঃ কোথায় কি করলাম…..?? মেঘলা ইলিশ বাছতেও পারবে না আর খেতেও পারবে না তাই বেছে দিলাম।কিরে মেঘলা এখনো তাকিয়ে আছিস কেন খাওয়া শেষ কর।
আকাশের ব্যবহারে ইতিমধ্যেই সবার খাওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কারন আকাশ নিজের সব প্রিয় খাবার রেখে ডাল দিয়ে খাচ্ছে তাও মেঘলার মাখা ভাত ।আকাশ মাঝে মাঝেই এমন রহস্যময় আচারন করে।
নাবিল খাবার বন্ধ করে বললঃতুই ডাল দিয়ে খাচ্ছিস কেন এই ভাত গুলি রেখে নতুন ভাত নিয়ে খা..??
আকাশঃ নাবিল তোর ত কপাল খুলে গিয়েছে…লহাবার শেষ করএ মিষ্টির ট্রিট দিস।
নাবিলঃ মানে কি…??
আকাশঃ মানে আবার কি?খুব তাড়াতাড়ি তোর বিয়ে হতে চলেছে…
নাবিলঃ মাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি কিসব বলছিস আর কিসব করছিস?
আকাশঃ কেন আমি ত ঠিকই বলেছি মনে নেই দাদি কি বলত আমাদের বাড়ির রান্না ঘরে ঢুকার অধিকার শুধু এই বাড়ির বউদের আছে। আর কারো নেই সেই জন্যেই আমাদের বাড়িতে কোন রাধুনী রাখা হয় না ছোট থেকেই সেটা দেখে আসছি।
কিন্তু আজ হটাৎ অন্যরকম কিছু হল,
ছোট মার মনে হয় এখন আর আমাদের জন্য রান্না করতে ইচ্ছা করে না বা কষ্ট হয়।
আর হবেই না বা কেন এতবছর ধরে একাহাতে সব সামলাচ্ছে। তো এবার আমাদের তো উচিত বাড়ির বউ আনা তাই না।
দেখ ভাই আমার হবু বউ মানে মেঘলা তো রান্না পারে না সাথে অনেক কিছু খেতেও পারে না সে শ্বশুরবাড়ির জন্য উপযুক্ত নয়।
তাই এবার তোর পালা তোকে বিয়ে করতে হবে…পারলে কালকেই বউ নিয়ে আয়।
আমি ভাই ডাল দিয়ে রোজ রোজ খেতে পারব না।
বলে আকাশ খেতে শুরু করল আকাশকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভাত নয় লোহা চিবাচ্ছে রাগে চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।
এবার আর কারো বুঝার বাকি রইল না যে আকাশ জেনির রান্না করায় মাইন্ড করেছে।
নাবিলের মাঃ আকাশ তুই আমাকে ভুল বুঝছিস বাবা।
আকাশঃ আরে ছোট মা কি যে বলো না আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি নাকি…??আমি আমার ভাইয়ের বিয়ে দিব এতে ত তোমার খুশি হওয়া উচিত।আকাশ হাত ধুয়ে নিয়ে বলল
আমার খাওয়া শেষ।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে জেনি ত হতবাক।
নাবিলের মাঃ আমার কথাটা শুন আকাশ।
নাবিলঃ ওকে আটকাচ্ছো কেন মা এটা ত হওয়ারেই ছিল।
মেঘলা বিষয়টা মিটানোর জন্য বলল,
মেঘলাঃ ত ত তুই এত রাগ করছিস কেন জেনি যদি ছোট মাকে একটু হেল্প করেই থাকে তাতে দোষের কি হল রান্না ত ভালই হয়েছে খেয়ে দেখ।
আকাশঃ তাই নাকি ভালো ত। এতক্ষন ধরে আমি ত ভাবছিলাম তুই মনে হয় কথা বলতে পারিস না মুখে বুলি ফুটেছে দেখে ভাল লাগল খাওয়া শেষ করে আমার রুমে আসিস ত একটু মেঘলা।
আকাশের মাঃ মেঘলা ঠিক বলেছে রান্না অনেক ভাল হয়েছে।
আকাশঃ ভাল রান্না খাওয়ার হলে রেস্তোরার শেফ কে রাধুনী হিসেবে রাখতে পারতাম মা আমাদের সেই ক্ষমতা আছে।
রান্নাঘর পারিবারিক জায়গা হয় কেন জানো?কারন সেখানে যে রাধে রান্নার সাথে তার ভালবাসা মিশানো থাকে আর বাইরের মানুষ সেখানে ঢুকতে পারে না কেন যানো?
কারন তার রান্নার মাঝে সেই ভালবাসা টা থাকেনা যদি থাকত তাহলে আমাকে শুধু ডাল দিয়ে খেয়ে উঠতে হত না।
একজন ফ্যামিলি মেম্বার খাবে না বাকিরা কব্জি ডুবিয়ে খাবে সেই শিক্ষায় আমরা বড় হই নি।
ছোট মা যেদিন কারোর পছন্দের কোনো খাবার রান্না করে সেদিন ফ্যামিলির প্রতিটি মেম্বারের পছন্দের কোন না কোন পদ রান্না করে থাকে কিন্তু আজ এখানে শুধু আমার পছন্দের খাবার করা হয়েছে বাকিদের কারোর পছন্দের কোন কিছুই নেই।
আর মেঘলার ত খাওয়ার মত কিছুই নেই।
ছোট মার কষ্ট হয় বল্লেই ত হত আমি নাহয় নাবিলের জন্য বউ খুঁজতাম।
ও আর একটা কথা মা রান্না করতে পারাতে কোন ক্রেডিট আছে বলে আমার মনে হয় না বরং রান্না না পারাটায় ক্রেডিট আছে বলে আমার মনে হয়।
মেঘলা রান্না পারে না কারন ওকে কোনদিন রান্না করতে হয় নি ও তো ছোট থেকে পুতুলের মত বড় হয়েছে মনি মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওকে মুখে তুলে খাওয়াত আমার ত সৌভাগ্য যে আমি এত আদরের কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারছি। ও শ্বশুড়বাড়ির জন্য উপযুক্ত হো না হোক বরের ঘরের জন্য ঠিকি উপযুক্ত।
আকাশের মাঃ তুই জেনিকে এভানে অপমান করতে পারিস না।
জেনিঃ সরি স্যার আমি বুঝতে পারি নি।
আকাশঃ আজব তো কিসব বলছো তোমরা আমার বলা কোন কথায় কি জেনির নাম উল্লেখ করেছি? ওকে তো আমি কিছুই বলি নি ছোট মাকেও বলি নি যা বলার নাবিলকে বলেছি আর তোমাকে আমাদের পরইবারের ঐতিহ্য মনে করিয়ে দিয়েছি আমি কাউকে কেন অপমান করব…??
জেনি এতক্ষন ধরে আমি কি তোমাকে একটাও শব্দও বলেছি…?? তাহলে তুমি সরি বলছো কেন…??তুমি রান্না করেছো খুবি ভাল কথা এতে তোমার কোন দোষ নেই তোমাকে ছোট মা রান্না ঘরে ঢুকতে দিয়েছে তাতেই আমি অবাক হয়েছি।
বলে আকাশ চলে গেল।
মেঘলাঃ জেনি তোমাকে সকালেই সাবধান করেছিলাম বাড়াবাড়ি করো না আমাদের বাসার সবাই অদ্ভুত ওদের বুঝতে পারবে না বিশেষ করে নাবিল আর আকাশ ২ টা পিস কে বুঝা প্রায় অসম্ভব। শুনলে না আমার কথা।
নাবিলের মাঃ মেঘলা এসব কথা রেখে আমার সাথে আয় তো।
ছেলেটা আমার সারাদিন কাজ করে এসে না খেয়ে চলে গেল সব দোষ আমার কেন যে ঘুমালাম।আয় তো মেঘলা আয় আমি কিছু একটা বানিয়ে দিচ্ছি তুই নিয়ে যা তুই ছাড়া ওকে কেউ খাওয়াতে পারবে না।
নাবিলঃ কেন জেনিকে দিয়ে পাঠাও সেটা আরো ভাল হবে তাই না বড় মা।
রুবিনা বেগমঃ আমার যা বুঝার বুঝে গিয়েছি এই মেঘলার ভুত আকাশের ঘাড় থেকে কখনো নামবে না।
নাবিলঃযাক এতক্ষনে সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে তাহলে?
নাবিলের মা রুটি আর ভাজি করে দিলেন মেঘলা ভিতু পায়ে সেগুলি নিয়ে আকাশের রুমের দিকে গেল।
মেঘলাঃ এখন নিশ্চুই আমার পালা এক ঝাঁক বকা দিবে আমাকে জানি তো…
আকাশঃ আসুন আসুন আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম
মেঘলাঃ জানতাম তো…আসতে না আসতেই শুরু করে দিয়েছে আমি কিছু করি নি….
আকাশঃ আমি কখন বল্লাম তুই কিছু করেছিস?
মেঘলাঃ তোর খাবার নিয়ে এসেছি রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিস।
কোন রকম এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচি বাবা (মনে মনে)
আকাশ খপ করে মেঘলার হাত ধরে ফেলল
আকাশঃ সেগুড়ে বালি কোথাও যেতে পারবি না তুই। আমার বেলায় ত ঠিকি চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বলতে পারিস অন্যদের বেলায় পারিস না কেন হ্যা…??
মেঘলাঃ এবারের মত ছেড়ে দে পরের বার থেকে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করব ঠিক আছে…???
আকাশঃ কি করবি…😳😳
।
।
।
চলবে…!!!