বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-২

0
4401

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ২

সবাই একে একে ঘর ছেড়ে দিলো, যাওয়ার আগে ওই মাঝ বয়সী মহিলাটি স্বামী নিয়ে কি সব জ্ঞান দিয়ে গেলো যা মাথার কয়েকফুট উপর দিয়ে গেলো রুশির। এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার ওর ভয় করছে খুব। অচেনা জায়গায় অচেনা মানুষের ভীরে নিজেকে কেমন অগোছালো লাগছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে সামনের ছেলেটার সারা রুমজুড়ে পায়চারি করা দেখছে, লোকটিকে খুব অস্থির দেখাচ্ছিল কিন্তু ভয়ে মুখের দিকে তাকাতে পারছেনা , কে জানি লোকটি মাস্ক খুলেছে কিনা। কিন্তু ছেলেটার সাথে কথা বলা প্রয়োজন ভেবে উঠে দাঁড়ালো, হাত কচলে কিছু বলবে তার আগেই ছেলেটি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে, আচমকা এমন ঘটনায় ভেবে রাখা কথাগুলো কণ্ঠনালীতেই আটকে গেল বের হওয়ার সুযোগ পায়নি বয়কি। স্তব্ধ হয়ে গেলো সময়, পুরো ঘর জুড়ে ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া বাকি সবটাই স্তব্ধ হয়ে রইল। মাতাল করা ঘ্রাণ নাকে বারি খাচ্ছে আর জীবনের প্রথম কোন ছেলের এতটা কাছে ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠলো। চেনা নেই জানা নেই না কথা বলেছে, এই লোকটি আমার নাম মনেও রেখেছে কিনা সন্দেহ আর বিয়ে না হতেই নিজের অধিকার ফলাতে চলে এসেছে?
ভাবতেই রাগে গা রি রি করছে। রুশির গায়ে পড়া লোক একদমি পছন্দ না।
পাশের বাড়ির ছেলে সামাদকে বেশ পিটিয়েছিল একদিন। ওর অপরাধ ছিলো লাভ লেটার দিয়েছিলো আর রুশি উত্তর না দেয়াতে হাত চেপে ধরেছিলো, এতেই রাগ উঠে গিয়েছিল আর সেই কি মার দিয়েছিলো। এই নিয়ে শালিসিও বসে ছিলো আর ছোট মায়ের কাছে মারও খেয়েছিলো । তাই এমন আচমকা আক্রমণ সেই রাগটাকে দিগুণ করে দিলো, গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে খুব জোরে থাপ্পড় মারলো ছেলেটিকে, রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। ছেলেটিকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো

” মেয়ে মানুষ দেখলে হুশ থাকে না তাইনা? আপনারা সকল পুরুষরাই এক, মেয়েদের ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছু ভাবেন না, আপনাদের কাছে বিয়ে মানে তো শুধু বাহানা, আসলে আপনারদের আর রেপিস্টের মাঝে পার্থক্য কি? বিয়ে নামক সমঝোতা যে মেয়েটা কিছু চাইলেও বলতে পারবে না! এই জন্য ছেলেদের দেখতে পারিনা আমি,ছেলে মানেই ছুকছুকানি স্বভাব, আপনা..”

কথা শেষ করার আগেই কানে ঝনঝন করে কিছু পড়ার আওয়াজ এলো, পাশে ফিরে নিচে তাকাতেই দেখে কাচের মগ টুকরো টুকরো কাচে পরিণত হয়েছে, উপরে তাকাতেই আবছা আলোয় দুটি রক্তচক্ষু দেখতে পেলো। ছেলেদের প্রতি নিজের ক্ষোভ আর বাবার প্রতি আক্ষেপ থেকে খুব বেশিই কথা শুনিয়ে ফেলেছে লোকটিকে,নিজের দিকে এগুতে থাকা লোকটিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে
” দে..দেখুন আমি… ”

“ব্যস অনেক বলেছ আর আমি অনেক শুনেছি, তুমি জানো তুমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা আমার সামনে উচ্চস্বরে কথা বলে এখনো বেঁচে আছো, তুমি যদি ছেলে হতে I swear আমি তোমার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতাম কিন্তু মেয়ে বলে তুমি পারবে পেয়ে তা ভেবোনা শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। কি যেন বলছিলে ছেলে মানেই ছুকছুকানি স্বভাব, স্বামী আর রেপিস্ট এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এতক্ষণ তো স্বামী হিসেবে ছিলাম এখন রেপিস্ট কি করে তা হারে হারে টের পাবে তুমি ”

রুশিকে হেচকা টানে নিজের একদম কাছে টেনে নেয় ছেলেটি…

“এন আর ইউ অকে?এন এই… তুমি কি কি বাজে স্বপ্ন দেখেছো? ”

” ইয়া সুজি, আই এম অকে, রিলাক্স আমি ঠিক আছি, জাস্ট একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছি ”

” তুমিতো প্রায়ই এমন ঘুমের মাঝ থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠো, করবার বললাম ভালো সাইক্রেটিস্ট দেখাও কিন্তু তুমি আমার কথা শুনলে তো।”

” লিসেন এই ফালতু কাজে টাকা নষ্ট করার মানেই হয় না, আমাকে রুহানের ভবিষ্যতের কথাতো ভাবতে হবে তাইনা?তাছাড়া আমি আমি সত্যিই ঠিক আছে এমন নাইটমেয়ার তো অনেকেই দেখে, ইট ডাসেন্ট মেটার সো জাস্ট চিল”

” সেই একি কথা তোমার, আরে আমিও তো আছি তাইনা রুহানের জন্য, এত ভাবো কেন তুমি ”

” আমার মত সিংগেল মাদার হলে বুঝতে ছেলের জন্য টেনশন করা কাকে বলে ”

” অকে মেরি মা আব চুপ হো যা, তাড়াতাড়ি উঠো। নয়টায় শো আর এখন আটটা বাজে ”

” অহ শিট, আমি এখন ফ্রেশ হচ্ছি, তুমি রুহানকে একটু উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দাও ”

এই হলো সুজি পুরো নাম সুজাতা সেন তবে সবাই সুজি বলেই চেনে তাকে। আরজে সুজি আমার অচেনা শহরের একমাত্র সঙ্গী। সেই একরাত আমার জীবনের খাতাই বদলে দিয়েছিলো, বাস্তবতা নামক শব্দাটাকে হারে হারে বুঝিয়েছিলো। প্রায়শই সেই লোকটির কথা মনে যে কি না তার একরাতের স্বামী ছিল যার ভারত্ব এখনো বইছি।
সেইদিন ভোর হয়েছিলো ঠিক তবে নিয়ে এসে তুমুল বহমান ঝড় যা আমার জীবকে লণ্ডভণ্ড করতে যথেষ্ট ছিলো। ভোরের চোখ মেলার পর সেই ছেলের দেখা পায়নি সে তবে অনামিকা আংগুলে তার পরিয়ে দেয়া আংটি ঠিকি ঝুলছিলো। উঠে বসে পাশের টেবিলে বিরিয়ানির পেকেট দেখতে পেয়েছিলো আর সাথে একটি চিরকুট যাতে লিখা ছিলো “খাবারটা খেয়ে নিও এবং নিজের খেয়াল রেখো আর এদিকটা সামলে নিও ”
চিরকুট পড়ে ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো,লোকটি সত্যিই ওকে ফেলে চলে গেলো?একবারো ভাবলো না আমার কথা?খাবারটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠেছিলো সেদিন তবে তার আহাজারি দেখার মানুষ ছিলো না সেদিন।

“এন, চলে এসেছে নাম। তাড়াতাড়ি যা না হয় ডিটি স্যার বকা দিবে ”
” হুম, অল দ্যা বেস্ট ”
” সেম হেয়ার ”



“গুড মর্নিং কলকাতা, দিস ইজ আরজে আনাম উইথ ইউ, অয়েলকাম বেক টু মাই শো ‘লাইফলাইন’। আপনার লাইফের প্রিয় ব্যাক্তিটিকে নিয়ে যদি কিছু বলার থাকে বা তাকে ইম্পর্টেন্ট কোন মেসেজ দেয়ার থাকে তাহলে এসএমএস করে জানান Mirchi Fm <space> your name <space >আপনার মনের সকল কথাগুলো লিখে পাঠিয়ে দিন এই নম্বরে +91******, এই সংটি সকল ভালোবাসার মানুষকে ডেটিকেট করা,টিল দেন স্টে উইথ মি ”

আমার সকাল হাসে তোমার চিলেকোঠায়
আর একফালি সুখ মনের আঙিনায়
আমি ঘুম হয়ে তাই, তোমার চোখেতে
ভালোবাসার স্বপ্ন এঁকে যাই (x2)

জানি না বুঝিনা কেনো মন মানে না
এই মন শুধু তোমাকে চায় (x2)
আমার সকাল হাসে ..

মন আমার কেন সে দূর অজানায় হারালো
ভালোবেসে তোমায়
তোমাতে বিলীন হয়ে আজ লিখেছি
প্রেমের কবিতা
ওগো বন্ধু আমার,
ওগো বন্ধু আমার তুমি সেই কবিতা
ছন্দে গড়া পুঁতির মালা।

জানি না বুঝিনা কেনো মন মানে না
এই মন শুধু তোমাকে চায় (x2)
আমার সকাল হাসে ..

ইয়াহ মি, আরজে আনাম, কলকাতা শহরের নামকরা আরজে যার কিনা শতশত ফ্যান। প্রতিদিন কম করে হলেও শ খানেক প্রোপোসাল পাই অথচ কেউ হয়তো ভাবতেই পারবে না এই মিষ্টি কন্ঠের পেছনে লুকিয়ে আছে বড্ড অসহায় একটি মেয়ে। এই কলকাতা শহরে আমি ভিন্দেশীয় মানুষ। খুব মিস করি নিজের দেশকে…

🌸🌸🌸

ডেস্কের উপর হাত মুঠো করে বসে আছে সায়ান জামিল খান, তার পেছনে একটি মেয়ে কাধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো
“স্টপ দ্যা মিটিং রাইট নাউ ”
“বাট স্যার দিস ইজ এন ইম্পর্টেন মিটিং ফর আজ, হাউ কেন ইউ… ”
” স্টপ সাহিল, সায়ান জামিল খান যা বলে তাই করে, কয়েককোটি টাকা লস হলে এসকে ইন্ডাস্ট্রি পথে বসবে না ”
বলেই চেয়ার থেকে উঠে গেলো আর বের হওয়ার আগে অই মেয়েকে বললো

” আই ডোন্ট লাইক দোজ কাইন্ড অফ গার্লস হু সিডিউস গাইস ফর আ ব্লাডি কন্ট্রাক্ট, স্টে এওয়ে ফ্রম মি,আই কান্ট বিলিভ মিস্টার হিল কেন হায়ার আ গার্ল লাইক ইউ টু উইন আ কন্ট্রাক্ট ( আমি ওইসব মেয়েদের পছন্দ করিনা যারা একটা সাধারণ চুক্তির জন্য ছেলেদের সিডিউস করে, আমাকে থেকে দূরে থাকুন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না মিস্টার হিল সামান্য চুক্তির জন্য আপনার মত মেয়েকে ভাড়া করবে)”

সায়ান জামিল খান, ময়মনসিংহের বিখ্যাত খান বংশের ছোট সাহেব সে। ঢাকায় বিশাল বিজনেস তাদের, এসকে ইন্ডাস্ট্রি যার ব্রাঞ্চ বিদেশেও রয়েছে। দেশে বিদেশে কম সুন্দরি মেয়ে দেখেনি, বিদেশে পড়াশোনা করাকালীন অনেক মেয়ে স্বেচ্ছায় তার বিছানার সঙ্গী হতে চেয়েছে তবে কারো দিকে বিশেষ নজর দেয়ার সময় পায়নি। নিজের মুসলিম হওয়ার পরিচয় ভুলে যাইনি কিন্তু সেই রাতে…
সেই রাতের কথা মনে হতেই গাড়ির স্টেয়ারিংয়ে জোড়ে ধাক্কা মেরে উঠলো, ডেম ওই মেয়ে…
#চলবে

(রিচেইক করা হয়নি, ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here