বৈবাহিক চুক্তি পর্ব-১১

0
3464

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ১১

অপরাহ্নের পর এখন গোধুলি লগ্ন চলছে,মাথার উপরের সূর্যটা অস্ত গিয়েছে সেকেন্ড কয়েক আগে তবে তার রেশ এখনো যায়নি। আবছা আলোয় চারপাশ ছেয়ে আছে, তবে পার্কে লাইটগুলো ইতোমধ্যে জলে উঠেছে। জনসমাগম এখন অনেকটা কম, তাই চারদিকে ফাকা বেঞ্চগুলো পড়ে আছে। এই মুহুর্তটা খুব ভালো লাগছে রুশির, না শীত না গরম কেমন একটা নাতিশীতোষ্ণ ভাব। তবে চারপাশে বায়ুপ্রবাহ কম বইলেও হৃদ মাঝারে ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোনের ন্যায় জড়োহাওয়া বইছে। একটা নারী নাকি সন্তান জন্ম পারলেই পরিপূর্ণ হয়, আদোও কি তাই! তবে এটা কেন বলে যে স্বামীর ভালোবাসা ছাড়া স্ত্রী অপূর্ণ। ওর সন্তান আছে আর তাকে আকড়ে ধরেই বেচে আছে কিন্তু দিনশেষে একটা মানুষকে তো চাই যে একান্ত নিজের হবে।রুহান ওর কাছে আবদারের ঝুড়ি খুলে বসতে পারে কিন্তু ওরও তো খুব ইচ্ছে করে কারো কাছে আবদার করতে। বাঙালি নারীদের চুড়ি খুব পছন্দের জিনিস, রুশির খুব ইচ্ছে ছিলো ওর সেই মানুষটা ওকে চুড়ি গিফট করবে আর নিজের হাতে পরিয়ে দিবে। মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে সেই মানুষটাকে দেখতে আর যখন খুজে পায়না তখন একরাশ অভিমান জমা হয়। এই অভিমানের ঝুড়ি ভারি হতে হতে এখন মনে সেই মানুষটাকে ও ঘৃণা করে কিন্তু কখনো কি করতে পেরেছে! তাহলে আজোও ভাবে কেন তার কথা।
রুহানের ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে আসলো ও

“মাম্মা, আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই ”

” কি প্রশ্ন বাবা?”

” ওই বাচ্চাটি এত কালো কেন? “পাশের বেঞ্চের সামনে খেলতে থাকা একটা বাচ্চাকে উদ্দেশ্য করে বললো কথাটি, পাশের বেঞ্চের দম্পতি ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, রুশির খুব লজ্জা লাগলো তাদের চাহনিতে সাথে রাগও উঠলো রুহানের উপর, অন্যসময় হলে হয়তো বুঝিয়ে দিতো কিন্তু এখন এমনিতেই মন খারাপ তাই রুহানকে ধমক দিয়ে বললো

” এসব কি কথা রুহান?স্যরি বলে ওকে,বলো…”

” বাট মাম্মা আমি সত্যিই বলছি ওতো কালোই ”
রুশির যেন মেজাজ বিগড়ে গেলো, কি বলছে কি এইসব তাই রুহানকে মারতে নিলেই সুজি হাত ধরে ফেললো তারপর বললো “আমি বুঝাচ্ছি, রিলাক্স ও একটা বাচ্চা ছেলে এতো বুঝে বলে নি।রুহান তুমি আমার কোলে আসো, শুনো সে কালো কেন তা আমি তোমাকে বলছি,
শুনো ও দেখতে কালো কিন্তু সুন্দর দেখো, কালোরঙ ও একটা সুন্দর রঙ। তাই ও সুন্দর এবং শুভ্র। তুমি জানো গড প্রথম কালো রঙের মানুষ বানিয়েছে এবং সে তার এই অসাধারণ সৃষ্টির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো। সে তাই একইরকম অনেকজনকে বানিয়েছে যাদের একটা সুন্দর হৃদয় আছে। তাই তাদের গড ভালোবাসে।

” তাহলে মাসি গড কি আমাদের ভালোবাসে না?”

” কেন বাসবে না? আমরাও তো তার সৃষ্টি ”

” তাহলে আমাদের ফর্সা কেন বানিয়েছে? ”

” এইতো ভালো প্রশ্ন করেছো, গড তার সৃষ্টিকে অনেক ভালোবাসতো তাই নিজে তাদের দেখার জন্য পৃথিবীতে আসতো, একদিন গড এই পার্কের মতো একটা পার্কের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। তখন দেখলেন একটা সুন্দর কালো মেয়ে একা একা বসে সাদা মৃত্তিকা দিয়ে পুতুল বানানোর চেষ্টা করছে, সে তার ছোট্ট সুন্দর হাতজোড়া মাটি দিয়ে পুরো একে ফেলেছে, তাই সে ওই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আরো কিছু মানুষ বানানোর কথা ভাবলেন এবং তাদের সাদা পেইন্ট করার চিন্তা করলেন। এভাবেই আমাদের বানিয়েছে, তাই আমরা সবাই একি গড এর ক্রিয়েশন আর বাহিরের রঙ আলাদা হলেও ভেতর থেকে আমরা সবাই কালো। দেখো তোমার মাম্মা তোমার থেকে কম ফর্সা তাই বলে কি সে সুন্দর নয়?”

” নো, মাম্মা ইজ বিউটিফুল ”

” তাহলে ওকে দেখো ও কিন্তু অনেক সুন্দর শুধু রংটা আলাদা, ইটস জাস্ট আ পেইন্ট বেবি কিন্তু সুন্দর সেই যার মনটা সুন্দর। কালো, সাদা, বাদামি সেটা ফ্যাক্ট নয় আর তোমার তো ব্লাক কালার পছন্দ তাইনা? ব্লাক ইজ বিউটিফুল বেবি ”

“ইয়েস মাসি, বুঝতে পেরেছি এটা জাস্ট একটা পেইন্ট কিন্তু আমরা সবাই একি”তারপর পাশে থাকা দম্পতির দিকে তাকিয়ে বললো ” রুহান ইজ স্যরি ”

রুশি তাকিয়ে আছে ওর ছেলের দিকে কত সহজে সব বুঝে গেলো, ও যদি না থাকতো তাহলে কি নিয়ে বাচতো রুশি?

🌸🌸🌸

সুজির ফোন পেয়ে রুশি তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে লিভ নিয়ে বাসায় ফিরে আসে, বাসায় ফিরে এসে সুজিকে কান্নারত অবস্থায় দেখে। ওর কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে, রুহানের কিছু হয়নি তো।

” রুহান… রুহান.. ”

” রুহানকে খুজে পাচ্ছিনা এন”
রুশি ধপ করে মাটিতে বসে পড়েছে, ওর পুরো দুনিয়ায় যেন থমকে গেছে,রুহানকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি।

” এন, আমি যখন চাইল্ড কেয়ারে গিয়েছি তখন তারা বলে রুহানকে নাকি কেউ একজন অলরেডি পিক আপ করতে গেছে। তাই আমি বলেছি যে আপনারা এত ইরেস্পন্সিবল কি করে হতে পারেন? আমরা কেউই তো আসিনি তাহলে কি করে যে কারো হাতে তুলে দিতে পারেন তখন তারা বললো উনি আপনাদের নাম বলেছেন তাই আমি তার সাথে দিয়ে দিয়েছি ”

” কি করে তারা এটা করতে পারে, আমার বাচ্চাটাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিবে? আমি কোথায় খুঁজবো এখন ওকে, কি করবো আমি এখন?” রুশি তাড়াতাড়ি উঠে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো, আর সুজি একজনকে মেসেজ করে বললো ” কাজ হয়ে গেছে”

এই ছোট্ট মেসেজ টা দেখে কারো মুখে হাসি ফুটে উঠলো, অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠলো ” সি ইউ সুন মিসেস রুশানি আনাম ”

#চলবে

( জানি ছোট হয়েছে তবে আমি কিন্তু প্রতিদিন দেয়ার ট্রাই করি। বাট স্যরি ছোট করে দেয়ার জন্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here