#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ ২০
“ইনান তুই এখানে?”
সায়ানের কথায় মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে সামনের ছেলেটি। পরনে কালো শার্ট, ব্লু জিন্স, চোখে ব্লাক সানগ্লাস, হাতে দামি ব্রান্ডেড ঘড়ি, সবমিলিয়ে ফরমাল লুকে বেশ লাগছে ছেলেটিকে।
“এখানে একটা কাজে এসেছি বাট আমিতো জানতামই না এখানে তোকে পেয়ে যাবো। তা দিনকাল কেমন কাটছে তোর ”
“আমার তো বেশ কাটছে, বউ বাচ্চা নিয়ে বেশ আছি, তুই তোর খবর বল ”
“শালা বিয়ে করলি কবে আবার বাচ্চার বাপও হয়ে গেছিস? তুমি মামা সব ক্ষেত্রেই ফাস্ট ফাস্ট। তা কবে করলি? ”
“এই কয়েকবছর হয়েছে, তুই বল বিয়ে করেছিস নাকি আগের মতই প্লে বয় রয়ে গেছিস? ভার্সিটিতে তো খুব পপুলার ছিলি, কতো গার্লফ্রেন্ড ছিলো তোর!”
“সে আর বলতে অবশ্যই তোর মত তো নিরামিষ থাকবো না আর, তোকে যারা প্রপোজ করতো তাদেরও তো আমার সামলাতে হতো ”
“সেই আপনিতো হৃদয় বান ব্যাক্তি সকলকেই গ্রহণ করতেন তারপর আবার ছেড়ে দিতেন ”
“নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে হাটাও প্যাশন বুঝলি ”
“তা কতকাল এরুপ চলবে?”
“দোস্ত অনেক আগেই সেসব ছেড়ে দিয়েছি, নাও আই এম ওয়ান উইমেন ম্যান ”
“শালা তুই কবে চেঞ্জ হলিরে? সে মহান নারী কে?”
“আছে কেউ একজন যাকে পেয়ে ওইরকম প্লে বয় হয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়নি, মনে হয়েছে এই সে যাকে পাওয়ার জন্য সকল খুশি ত্যাগ করে দিতে পারি, যাকে দেখার পর অন্য নারীকে দেখতে ইচ্ছে হয়নি ”
“সে নারী আসলেই মহীয়সী যে কিনা তোর মত নালায়েক কেও মানুষ বানিয়েছে।”
“হয়েছে আমাকে নিয়ে বলা বাদ দিন, আপনি যে ড্রিংক করেন তা ভাবি জানে?”
“এহেম এহেম জানলে আর ঘরে ঢুকতে দিবে না, তাছাড়া আমিও ছেড়ে দিয়েছি ওইসব ”
“সেই ভাবিও নিশ্চই মহীয়সী নারী নাহয় তোর এই অভ্যাস বদলানো চারটিখানি কথা নয় ”
“আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছিস? যাইহোক বাসায় চল। কতদিন পর তোকে পেলাম।”
“অন্য একদিন, আজ বিশেষ কাজে এসেছি এখানে ”
“নাহ, তোকে ছাড়ছিনা যাই বলিস না কেন, চল বাসায় চল। পরে কবে না কবে পাই”
“তুই আর বদলালি না, সেই জেদিই রয়ে গেলি ”
“আমি যদি বদলেই যাই তবে আমি তো আমি থাকলাম না আর অন্যকেউ হয়ে বেচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ”
কিছুক্ষণ আগে সায়ান বাড়ির সামনের মেইনরোডে হাটছিলো, বিকালবেলা হাটা ওর একটা অভ্যাস। অন্যদিন রুহান থাকলেও আজ একাই এসেছে কারণ রুহান ঘুমাচ্ছে।রুহান তো তার বড় আব্বুকে ছাড়া কিছুই বুঝে না, অদ্ভুতভাবে সারাক্ষণ তার সাথেই থাকে,এখন আর মাকেও খুব একটা লাগেনা তার। বিলের পাশের রাস্তা দিয়ে হাটছিলো, এখন গাড়ির চলাচল অনেকটা কম। অনেকক্ষণ হাটার কারণে একটু ক্লান্ত লাগছিল তাই বিলের স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে সবকিছু দেখছিল। সামনে রুশির বার্থডে, ভাবছে কোন রোমান্টিক কিছু প্ল্যান করে ওকে সারপ্রাইজ দিবে তাতে যদি মহারাণীর মন একটু গলে!
ঠিক তখনি কাধে কেউ একজন হাত রাখে, আচমকা হাত রাখায় পা পিছলে বিলের পানিতে পড়েই যাচ্ছিল কিন্তু একজোড়া হাত আকড়ে ধরে ফেলে। পেছনে ফিরেই পরিচিত মুখ দেখতে পেলো, ইনান চৌধুরী, সায়ানের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। এরেন, ইনান আর ও ভার্সিটিতে খুব পপুলার ছিলো, ইনান আর সায়ানের প্রায় এসাইনমেন্ট এরেন করে দিতো। ইনান তো মেয়েতে ব্যস্ত ছিলো আর ও তো অন্যকিছুতেই…
কিন্তু অনার্স শেষ হওয়ার পরেই ইনান চলে আর আর ও আর এরেন থেকে যায়। এরপর আর ইনানের সাথে যোগাযোগ হয়নি, আজ এতবছর পর প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে পাবে ভাবতে পারেনি সায়ান। তাইতো আজ আর হাতছাড়া করছে না।
🌸🌸🌸
“কিগো ননদিনী কার লাগি হঠাৎ এরুপ সাজুগুজু করিতেছ? বাহ আবার শাড়িও পড়ছো দেখছি। পুরু বাঙালীয়ানা।
“যাহ ভাবি এসব কি বলছো, আমার তো এমনি সাজতে মন চাইলো ”
“তাই নাকি!”
“কার লাগি সাজিতেছ কন্যা
গড়িতেছ রুপের বাহার
তোমার সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে
হুশ উড়িবে তাহার ”
~লিজা~
“বাহ আপনি দেখি কবি হয়ে যাইতেছেন দিনদিন, ভাইয়ের ছোঁয়ায় বুঝি ”
“ছি ছি কিসব কথা বলো, বড় হই তোমার। বয়সেও আর সম্পর্কেও ”
“উহ বয়সে বড়, বয়স কত তোমার? ”
“যদিও মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাস করা ব্যাড ম্যানার্স তবুও বলছি আমার একুশ বছর, সামনে বাইশ হবে বুজেছ? ”
“ওই একবছরের বড় তাতে কি?”
তখনি কলিংবেল এর আওয়াজ শুনা গেলো, আর সামু তাড়াতড়ি মেকাপ ঠিক করে দৌড়ে নিচে গেলো,হাসিমুখে দরজা খুলতেই সামনে তাকিয়ে হাসি মিলিয়ে গেলো আর মুখটা অটোমেটিক হা হয়ে গেলো। একি দৃশ্য!
#চলবে
(গল্পটা বেশি বড় করতে চাইনি তবে দিনদিন বড়ই হয়ে যাচ্ছে,কেউ আবার বিরক্ত ফিল করতে পারে যে কাহিনী পেঁচাচ্ছি। কিন্তু কিভাবে যেন এমন হয়ে গিয়েছে 🤔)