গাঙচিল পর্ব_০৪

0
1626

#গল্পের_নাম: ||গাঙচিল ||
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____০৪ (বোনাস পার্ট)

রোদ্দুর গাড়ি স্টার্ট দিতেই অহি তার শার্ট খামচে ধরলো।অহির বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।মনে ভয় ঢুকে গেছে।মনে হচ্ছে এক্ষুণি পড়ে যাবে।হয়তো সে পেছন থেকে পড়ে যাবে,না হয় গাড়ি উল্টে যাবে!কল্পনায় চোখের সামনে ভাসছে একটি চিত্র।

চিত্রটা এমন!সে ঠাস করে বাইক থেকে পড়ে গেছে।তার চারপাশে মানুষ জমে গেছে।সবাই ব্যাপারটা নিয়ে হাসাহাসি করছে।অহি চোখ বন্ধ করে রোদ্দুরের শার্ট আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।

রোদ্দুর যেন হাওয়ায় ভাসছে।মনের ভেতর শত রঙা প্রজাপতি দ্বিকবিদিক উড়ে বেড়াচ্ছে।অহিকে এত কাছে পেয়ে তার দমবন্ধ উপক্রম।ইচ্ছে করছে এভাবে পাশে বসিয়ে জীবন নামক দীর্ঘ পথটা পাড়ি দিতে।অহির আঙুলের সামান্য একটু স্পর্শ যেন মাতাল করিয়ে দিচ্ছে।

অহি বন্ধ চোখেই বলল,

—“আপনার মা এখন কেমন আছে?”

রোদ্দুরের মন খারাপ হয়ে গেল।মায়ের কষ্ট তার সহ্য হয় না।মায়ের কথা মনে পড়লেই একরাশ মন খারাপ আর বিষণ্ণতা তাকে ঘিরে ধরে।সে মন খারাপ করে বলে,

—“একটু ভালো।তুমি মাকে দেখতে যাবে অজান্তা?মা তোমাকে দেখার জন্য ছটফট করে সবসময়।”

অহি অবাক হয়ে চোখ খুলে।রোদ্দুর নামক মানুষটার মায়ের সাথে তার একদিন, একটু সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল।এতটুকু সময়ের পরিচয়ে তিনি কেন তার জন্য ছটফট করবে?

রোদ্দুরের দিকে চেয়ে কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে,

—“আপনার মা আমাকে মনে রেখেছে?”

—“হুঁ!অবশ্য তুমি মনে রাখার মতোই একটা চরিত্র।এই আমি এক কারণে তোমায় সারাক্ষণ মনের ভেতর রাখি,মা আরেক কারণে সবসময় তোমার কথা বলে।”

—“আপনার মা কি আমার নাম জানে?”

—“নাম জানে না।তোমাকে ফুলবানু বলে ডাকে।”

—“সে কি!ফুলবানু আবার কে?”

রোদ্দুর বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিল।অহির ভয়টা আরেকটু ঝেঁকে ধরে।সে শক্ত কন্ঠে বলল,

—“রোদ্দুর স্যার,গাড়ির স্পিড একটু কমিয়ে দিন।আমি সত্যি সত্যি পড়ে যাব কিন্তু।প্লিজ!আমার হাত বার বার আলগা হয়ে যাচ্ছে।”

রোদ্দুর বাম হাতে তার কোমড়ের কাছের শার্ট খামচে ধরা অহির হাতটা এক ঝটকায় তার পেটের কাছে আনলো।অহি ভারসাম্য রাখতে ঝুঁকে দুহাতে রোদ্দুরকে জড়িয়ে ধরলো।রোদ্দুর অহির হাতযুগলের উপর নিজের হাতটা স্পর্শ করিয়ে বলল,

—“আর ভয় নেই।পড়বে না!”

অহি বিড়বিড় করে বলল,

—“আমার জামা কাপড়ে ময়লা অনেক!আপনার সাথে আমার যায় না।প্রকৃতি বেমামান কিছুর সাথে সুশ্রীর মিলন মানতে পারে না।অসুন্দরের সাথে অসুন্দর, সুন্দরের সাথে সুন্দর!এটাই খাপে খাপ!এটাই প্রকৃতির নিয়ম।আমায় আপনার মায়ায় জড়াবেন না।আমি জীবনে প্রচুর কষ্ট পেয়েছি।কষ্ট পেতে পেতে আমি আর সামান্য কিছুও সহ্য করতে পারবো না।”

রোদ্দুরের কানের কাছে হওয়ায় সব শুনতে পেল সে।কথা ঘুরিয়ে বলল,

—“আজ একটু দেরিতে বাড়িতে গেলে সমস্যা হবে?”

—“কেন?”

—“এক জায়গা থেকে ঘুরে আসি চলো!”

রোদ্দুর বাইক ঘুরিয়ে নিল।

৬.

“প্রাইভেট মানসিক হাসপাতাল” এর সামনে বাইক থামালো রোদ্দুর।অহি গাড়ি থেকে সাবধানে নেমে এদিক ওদিক তাকাল।দ্বিতীয় বারের মতো এই হাসপাতালে এলো সে।প্রথম বার এসেছিল ১৫-১৬ দিন আগে প্রায়।তার বাবার ব্যাপারে রোদ্দুর স্যারের সাথে দেখা করতে।

সেদিন রোদ্দুর স্যারের মাকে দেখে অহির বড্ড মায়া হয়।এত কোমল মনের মানুষ, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে ভাবতে কষ্ট হয়।পৃথিবীতে মানুষের কত ধরনের কষ্ট!আলাদা আলাদা মানুষের আলাদা আলাদা কষ্ট!

রোদ্দুর গাড়ি লক করে চাবিটা বুকপকেটে রাখলো।অহির দিকে চেয়ে বলল,

—“চলো!ভয় পেয়ো না।”

হাসপাতালের ভেতর নানা ধরনের রোগী।প্রথম বার এসে অহি ভয় পেয়েছিল।বার বার মনে হচ্ছিল,কেউ একজন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।এসে কামড়ে দিবে।অহি সন্তর্পনে পা ফেলে রোদ্দুরের থেকে কয়েক সেন্টিমিটার সামনে হাঁটা শুরু করলো।

হঠাৎ করেই রোদ্দুরের নজর অহির পায়ের দিকে গেল।এতক্ষণ খালি পায়ে ছিল?সে অহির ওড়না টেনে ধরে ভ্রু কুঁচকে বলল,

—“অজান্তা,তুমি এতক্ষণ যাবৎ খালি পায়ে ছিলে?”

—“জ্বি!”

—“কেন? জুতা কই?”

অহি আমতা আমতা করে বলল,

—“ছিঁড়ে গেছে।ব্যাগে রেখেছি।”

রোদ্দুর অবাক হয়ে বলল,

—“আগে বলবে না তাহলে?তুমি কি পাগল?এখন যদি পায়ে সূঁচালো কিছু ঢুকে যায়?”

—“ঢুকবে না।”

রোদ্দুর নিচু হয়ে পায়ে হাত রেখে বলল,

—“আমার জুতো পড়ো!তুমি এত বোকা কেন?”

অহি বাঁধা দিয়ে বলল,

—“একি!আপনি জুতো খুলবেন না প্লিজ।আমার সমস্যা হচ্ছে না।অভ্যাস আছে আমার খালি পায়ে হেঁটে।তাছাড়া দিনের বেলা তো।দেখে দেখে পা ফেলছি।”

রোদ্দুরকে জোর করে দাঁড় করালো অহি।গেটের দাড়োয়ানকে পরিচয় বলে গেট দিয়ে ঢুকে গেল দুজন।

হাসপাতালটাতে বিশাল বড় মাঠের মতো খোলামেলা জায়গা।মাঠের তিনপাশে এক সারিতে বিল্ডিং।আর একপাশে উঁচু দেয়াল।মাঠের মতো জায়গাটাতে দূর্বাঘাসে সবুজে সবুজ!নার্সরা বিকেলের দিকে রোগীদের বের করে মাঠ দিয়ে হাঁটায়!

উত্তর দিকের একটা বিল্ডিং এ ভেতর গেল অহি আর রোদ্দুর।আশপাশের রুম থেকে সবাই বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।যেন সুযোগ পেলেই হামলে পড়বে।অহি রোদ্দুরের আরো একটু কাছাকাছি আসলো।প্রথম বার সে শফিকের হাত ধরে এসেছিল।

—“আচ্ছা, আপনার মা কতদিন ধরে অসুস্থ?ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই?”

রোদ্দুর ক্ষীণ স্বরে বলল,

—“অনেক লম্বা কাহিনি।আমার কোটিপতি বাবা আমাদের অগোচরে আরেকটা বিয়ে করেছে।প্রায় দশ বছর হলো বিয়ে করেছে।বিয়ের দুই বছরের মাথায় আমরা জানতে পারি।মা প্রচুর কষ্ট পায়।বাবা আর তার প্রেমের বিয়ে ছিল।নিজের ভালোবাসার মানুষের এই পরিবর্তন মায়ের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।অগোছালো চিন্তা করতে করতে একসময় প্রবল মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।

তার থেকেই একা একা কথা বলা শুরু করে।কিছুদিন পর আবোল তাবোল বলতেই সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাই।কিছুদিন ভালো থাকে।তারপর নানা রকম পাগলামি শুরু করে।ডক্টর মানসিক হাসপাতালে এডমিট করতে বলে।তাই করি!প্রথম বার তিন মাসের মতো হসপিটালে ছিল।তারপর সুস্থ হয়ে যায়।বাড়িতে নিয়ে মাকে প্রচুর সময় দেই।নানা জায়গা ঘুরতে নিয়ে যাই।বাবার সাথে যোগাযোগ রাখতে দেই না।বাবাও তখন বাড়িতে আসতো না।নতুন পরিবার নিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতো।

ছয় মাস আগে হুট করে বাবা বাড়ি আসে।মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে।সেদিনের পর থেকে আবার গুমড়ে গুমড়ে থেকে চার মাস আগে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে।পাগলামি শুরু করে।সেজন্য আবার হসপিটালে এডমিট করিয়েছি।দুজন আলাদা নার্সের ব্যবস্থা করেছি।আমি প্রতিদিন আসি।মা অনেকটা সুস্থের পথে।আর একটু স্বাভাবিক হলেই বাড়ি নিয়ে যাব।”

অহির চোখ ভিজে উঠে।বড় বড় শ্বাস নিয়ে কান্না থামায়।ততক্ষণে তারা তিন তলায় পৌঁছে গেছে।

সাদা পা পর্যন্ত লম্বা জামা পড়ে শুভ্র সুন্দর এক মধ্য বয়স্কা মহিলা বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে আছে।হাতে তসবি।বিড়বিড় করছে আর তসবির গুটি একটা করে সরাচ্ছে।রোদ্দুর কাছে গিয়ে বিছানায় বসে মাকে বুকে জড়িয়ে নিল।আদুরে গলায় বললো,

—“আমি এসেছি মা!”

রোদ্দুরের মা রোনজিদা বেগম রোদ্দুরের মুখটা সামনে এনে সারামুখে হাত বুলিয়ে দিল।সুস্থ মানুষের মতো বলল,

—“তোর মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে রে হিম!কতদিন হলো খাওয়া দাওয়া করিস না?নাজমা ঠিক মতো রান্না করে না?এইবার বাড়ি গিয়ে ওকে ছাটাই করবো, বুঝেছিস?নতুন কাজের লোক নিবো।নাজমাটা বড় বেয়াদব। খালি কাজে ফাঁকি দেয়।”

—“আমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করি মা।তুমি এত উত্তেজিত হবে না।”

রোদ্দুর মিষ্টি করে হাসলো।তার মা কিছুদিন হলো তাকে চিনতে পারছে।অসুখ বেশি হলে কাউকে চিনতে পারে না।

রোদ্দুর আবার মাকে জড়িয়ে বলল,

—“কাকে নিয়ে এসেছি মা জানো?তোমার মাকে!তোমার ফুলবানু মা!”

—“কোথায় রেখেছিস আমার মাকে?”

রোদ্দুর মুখ তুলে অহিকে ভেতরে ডাকলো।অহি বাইরে থেকে এতক্ষণ রোদ্দুরের ছেলেমানুষী দেখছিল।মায়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা দেখে নিজের মায়ের কথা মনে পড়লো।ছোট্ট বেলার করা একটা ভুলের জন্য তার মা তার থেকে কেড়ে নিয়েছে আদর,স্নেহের ঝুড়ি।

সে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো।তাকে দেখেই রোনজিদা বেগম খপ করে হাত ধরে ফেলল।অহির বুকে নিজের মাথা চেপে বলল,

—“মা গো!তুমি কতদিন পর আসলে গো মা!”

অহি পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিল রোনজিদার মাথায়।ইশারায় রোদ্দুরকে বুঝাল তাকে মা মা কেন করছে?

রোদ্দুর আস্তে করে বলল,

—“আমার মায়ের মা,মানে আমার নানির নাম ফুলবানু।আমার নানি অবিকল তোমার মতো দেখতে ছিল।একটু অমিল আছে যদিও দুজনের মধ্যে।কিন্তু চট করে ধরা যায় না।মা, কিশোরী বয়সে চলে গেছে অনেকটা।সেজন্য তোমার চেহারাতে তার নিজের মায়ের অস্তিত্ব খুঁজে পায়।তোমাকে একদিন আমার নানির কিশোরী বয়সের ছবি দেখাব।দুজনের চেহারার মিল দেখে তুমি নিজেও চমকে যাবে!”

অহি শুনেই চমকালো।চমকপ্রদ হওয়ার মতোই তথ্য।এই পৃথিবীতে তার মতো চেহারার মানুষ ছিল।বাহ!

সে যত্ন করে রোনজিদার চুলগুলো হাত খোঁপা করে দিল।মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

—“তুমি কিছু খাবে?”

রোনজিদা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানাল।রোদ্দুর দ্রুত উঠে টেবিল থেকে প্লেটে করে কমলা ধুয়ে আনলো।নিজেই খোসা ছাড়িয়ে প্লেট এগিয়ে দিল অহির দিকে।অহি এক কোয়া রোনজিদার মুখে দিল।রোনজিদা বাচ্চাদের মতো অহির হাত থেকে একটা কমলা, দুটো বিস্কিট,আপেলের এক টুকরো খেল।পানি খাইয়ে নিজের আঁচল দিয়েই মুখ মুছে দিল।

রোদ্দুরের মুখের সর্বত্র হাসি ছড়িয়ে পড়লো।অহিকে সত্যি সত্যি এখন মা মা লাগছে।জগতের প্রতিটি নারীই মা!মায়ের সত্তা ধারণ করে বলেই তাদের এত মমতা!

ঘন্টা দেড়েক দুজন অবস্থান করলো।নানা রকম গল্প গুজবে রোনজিদা বেগমকে ঘুম পাড়ালো অহি।তারপর এক ফাঁকে দুজন বেরিয়ে আসলো।বেলা হয়ে যাচ্ছে।অহিকে বাড়ি ফিরতে হবে।

রোনজিদার রুম থেকে বের হয়ে দুজন সিঁড়ি দিয়ে নামা শুরু করলো।রোদ্দুর ইতস্তত করে বলল,

—“অজান্তা,আসলে মা তোমায় সেদিন দেখার পর থেকেই সবসময় তোমার কথা বলে।আমার মা কই?ফুলবানু কই?ইত্যাদি!তোমাকে মায়ের কাছাকাছি রাখার জন্যই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম।তোমার বাবার প্রসঙ্গটাও তুলেছিলাম।তুমি বিয়েতে রাজি না হলেও তোমার বাবা ঠিকই নির্দোষ প্রমাণিত হতো।”

—“আপনার মা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।”

—“হুঁ!আর কিছুদিন যাক।হসপিটাল থেকে রিলিজ করে বাড়ি নিয়ে যাব।”

অহি হঠাৎ সিঁড়ি ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়ে।রোদ্দুরের চোখে চোখ রেখে বলে,

—“আপনি তাহলে আপনার মায়ের জন্যই শুধু বিয়ের অফার দিয়েছিলেন, তাই না?”

রোদ্দুর অপলক চেয়ে রয়েছে অহির দিকে।এই মেয়েটাকে সব কেন মুখে বলে দিতে হয়?কিছু অনুভব করতে পারে না?রোদ্দুরের হাজারো না বলা কথাগুলো কি কান পেতে শুনতে পায় না?সে তো বহুদিন আগে প্রথম দেখেই তার প্রেমে পড়েছে।তাও আবার ভয়ংকর ভাবে!

সেই যে অহির বিয়ের দিন একজোড়া ক্লান্ক চোখ, অবিশ্রান্ত মুখ আর বিধ্বস্ত চেহারার রমণীর প্রেমে পড়েছে সে।অহি নামক অদ্ভুত রমণীর অদ্ভুত মায়াজালে আটকে গেছে।সেদিন অহির প্রথম স্পর্শ তার শিরায় শিরায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।সে ধরে রাখতে পারেনি নিজেকে।আটকাতে পারেনি নিজের অনুভূতি!সে ভালোবেসে ফেলেছে অজান্তা অহিকে।

পরদিন যখন সে শুনলো অহির বিয়েটা ভেঙে গেছে, রোদ্দুর যেন সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সংবাদটা শুনলো।খুশি মনে এক ছুটে অহিদের বাড়ি গিয়েছিল এক পলক অহিকে দেখার জন্য।

অহি রোদ্দুরের থেকে চোখ সরিয়ে বলল,

—“চুপ করে আছেন কেন?”

রোদ্দুর তার দৃষ্টি সরালো না।ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,

—“তুমি বুঝতে পারো না?আমার মনের কথা শুনতে পাও না?আমার নিঃশব্দতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার গভীরত্ব টের পাও না?”

অহির লজ্জায় চোখ মুখ রক্তিম হয়ে যাচ্ছে।সে দ্রুত পায়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে নামা শুরু করে।রোদ্দুরও নিজের গতি বাড়িয়ে দেয়।অহির পাশে এসে অতি সাহস করে তার হাত ধরে।

অহি চমকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।

শেষ তলায় এসে রোদ্দুর এক ডক্টরের সাথে কথা বলে।অহি সরে আসে।রোদ্দুরের পোশাকাদির সাথে সে বেমানান।সে আস্তে ধীরে পা ফেলে মাঠের মাঝখানে দাঁড়ায়।রোদ্দুরের সাথে বেমানান ভেবে তার মন খারাপ হয়ে গেছে।সে যে মানসিক হাসপাতালের মাঠে দাঁড়িয়ে আছে তা বেমালুম ভুলে গেছে।

সচকিত হলো তখন যখন দেখলো পূর্ব দিক থেকে রোগীদের পোশাক পরা উষ্কখুষ্ক চুলের এক পাগল দৌঁড়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।সে কোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে অহির উপর।

অহি বড় বড় চোখ করে ভয়ে দিল এক দৌঁড়।চিৎকার করে রোদ্দুরকে ডাকলো।সারা মাঠে চক্কর দিল।তার পেছনে পাগলটা ধাওয়া করেছে।আর পাগলের পেছনে দুজন নার্স দৌঁড়াচ্ছে তাকে ধরার জন্য।

অহি ভয়ে প্রায় কান্না করে দিয়েছে।আজ তাকে আর কেউ বাঁচাতে পারলো না।সে জোরে সোরে আরেক বার রোদ্দুর স্যার বলে ডাক দিল।রোদ্দুর অহির কন্ঠ পেয়েই এক দৌঁড়ে মাঠে নেমে গেল।অহির কাছাকাছি যেতেই অহি এক লাফে তার গলা জড়িয়ে কোলে ঝুলে পড়লো।রোদ্দুর টাল সামলাতে না পেরে ধাড়াম করে ঘাসের উপর পড়ে ‘আউচ’ বলে মৃদু যন্ত্রণার শব্দ করলো।

পাগলটা ততক্ষণে এগিয়ে এসেছে।অহিকে টেনে রোদ্দুরের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই অহি আরো শক্ত করে রোদ্দুরকে জড়িয়ে ধরলো।নার্স দুটো টেনে হিঁচড়েও পাগলকে সরাতে পারলো না।পাগল এগিয়ে এসে অহিকে জড়িয়ে তার উপর উঠে সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিল।নিচ থেকে রোদ্দুর হাত পা ছেড়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

—“আমি চিপায় ফেঁসে গেছি। মরে যাচ্ছি বোধ হয়।”

(চলবে)

লিখতে লিখতে একটু বেশি রাত হয়ে গেল।😒রিচেক করার সময় পাইনি।😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here