অনুভবের প্রহর পর্ব_০৫

0
283

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব___০৫

‘অসম্ভব! আমি ওকে এগিয়ে দিয়ে আসতে যাবো কেন? একাই যেতে পারবে।’

অনুভবের কথায় ফাতেমা মৃদু ধমক দিয়ে বলল,

‘চুপচাপ যা করতে বলেছি তাই করবি। প্রহর, বাটিটা হাতে নাও তো।’

প্রহরের দিকে নুডলসের বাটি এগিয়ে দিলেন তিনি। প্রহর দু হাতে বাটি ধরলো। ধোঁয়া উঠা নুডলসের বাটির দিকে এক পলক চেয়ে সে অনুভবের দিকে তাকালো। অনুভব কিছু খাবে না? দুপুর তো হয়ে গেছে। তার মনে মনে করা প্রশ্নটা হয়তো অনুভবের মন অবধি পৌঁছাল। সে বলল,

‘মা, আমাকেও খেতে দাও। ক্ষুধা লেগেছে।’

‘এখনি খাবি? প্রহরকে এগিয়ে দিয়ে আয়!’

অনুভব কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিল। সে চাচ্ছে প্রহরের চোখের সামনে খাবারটা খেতে। যাতে করে প্রহর বুঝতে পারে লাঞ্চে তারা কি খায়। তাদের মতো হরেক রকমের পদ দিয়ে তারা লাঞ্চ সারে না। সে জোর গলায় বলল,

‘ও খেতে থাকুক। ওর খাওয়ার আগেই আমার খাওয়া শেষ হবে।’

‘আন্টি খেতে দিন উনাকে। আমি অপেক্ষা করবো।’

অনুভবের কথা কেড়ে নিয়ে প্রহর বলল। সে আরো কিছুটা সময় থাকতে চাচ্ছে এখানে। অনুভব যত দেরি করবে তত মঙ্গল। দেয়াল ঘেঁষে থাকা মাদুর এনে অনুভব বিছিয়ে নিল। তাতে বসে পড়তে ফাতেমা আর অপেক্ষা করলেন না। রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

প্লেটে অল্প করে ভাত নিয়ে তাতে লবণ মিক্সড করলো অনুভব। তারপর বাটি থেকে ঘন ডাল নিয়ে সে ভাতের লোকমা মুখে পুড়লো। প্রহর কাঁটা চামচে করে নুডলস মুখে পুড়ার ফাঁকে ফাঁকে অনুভবের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনুভবের ভাত খাওয়ার দৃশ্যটাও তার কাছে শৈল্পিক কোনো কাজ মনে হচ্ছে। তার চাহনিরত অবস্থায় অনুভব ভাত শেষ করে প্লেটে পানি ঢালল। চটপট উঠে দাঁড়িয়ে সে রুমে ঢুকে গেল।

প্রহর বাটির বাকি খাবার টুকু শেষ করে পানি খেল। মুখ মুছে সে হাত পা গুটিয়ে বসে রইলো। কিন্তু অনুভবের রুম থেকে ফেরার নাম গন্ধ নেই। ফাতেমা প্লেট গুছিয়ে রেখে রান্নাঘর থেকে বের হলেন। প্রহরকে এখনো বসে থাকতে দেখে আড়ষ্টভাবে বললেন,

‘বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ হলো। তুমি এখন যাও। বাড়ি থেকে দুঃশ্চিন্তা করবে।’

‘আন্টি, আসার পথে গলির মোড়ে অনেক গুলো কুকুর দেখেছি। কুকুর আমি ভীষণ ভয় পাই। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি কামড়ে দিবে। বলছিলাম কি….’

প্রহরের কথা শেষ করতে দিল না। ফাতেমা গলা উঁচিয়ে বলল,

‘অনুভব, ওকে এগিয়ে দিয়ে আয়।’

দু তিনবার ডাকার পর অনুভব বের হলো। তার বিরক্তি ভরা মুখের দিকে প্রহর তাকানোর সাহস পেল না। অনুভব দ্বিরুক্তি না করে সোজা দরজার দিকে এগিয়ে গেল। প্রহর বিনয়ের সহিত ফাতেমাকে সালাম দিয়ে অনুভবের পিছু পিছু ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

পিচ্ছিল গলি! কাঁদায় পা রাখা দায় হয়ে পড়েছে। সেই সাথে জায়গায় জায়গায় বৃষ্টির পানি জমেছে। পিচ্ছিল রাস্তায় অনুভব সাবলীলভাবে হাঁটলেও প্রহরের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তার উপর অনুভব অনেক দ্রুত হাঁটছে। সে তার সমানে সমানে যেতে পারছে না। দু হাত দিয়ে জামা উঁচু করে সে বলল,

‘একটু আস্তে হাঁটলে কি হয়? ট্রেন মিস হয়ে যাবে?’

অনুভব থামতে গিয়েও থামলো না। তবে হাঁটার গতি সামান্য স্লথ করলো। প্রহর গলির দু পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখলো কাছাকাছি কেউ নেই। বৃষ্টি থেমেছে বেশিক্ষণ হয়নি। সেজন্য মানুষজনের আনাগোনা নেই। বেশ খানিকটা দূরে বাচ্চা মতো একটা ছেলেকে খেলতে দেখা যাচ্ছে শুধু।

অনুভবের থেকে সে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। যে কেউ তাদের মধ্যকার দূরত্ব দেখে বুঝবে একে অপরের সাথে কানেকশন নেই। দুজন অপরিচিত পথযাত্রী হয়তো। প্রহর মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাম হাতের দিকে এক পলক চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরক্ষণে হাতটা কাঁদার মধ্যে দিয়ে নিচু হলো। চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বলল,

‘উঃ মাগো! পড়ে গেলাম।’

অনুভব ঝটপট পেছন ঘুরে তাকাল। প্রহরকে পড়ে যেতে দেখে দ্রুত এগিয়ে এলো। প্রহরের কাঁদা মাখা হাতটা ধরেই তাকে টেনে তুলল। ধমক দিয়ে বলল,

‘সামান্য এই কাঁদায় হাঁটতে পারো না তুমি। টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে যখন পেট পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায় এই গলি, তখন হাঁটতে পারবে?’

‘কোলে তুলে গলি পার করে দিবেন আপনি। তাহলেই ঝামেলা শেষ।’

‘চুপ। আমরা কত সাধারণ খাবার খাই দেখেছ তুমি? মাদুর বিছিয়ে শুধুমাত্র ডাল দিয়ে ভাত খেলাম আমি। চোখে পড়েছে?’

‘ডাল আমার ভীষণ পছন্দ। সত্যি বলছি!’

‘প্রহর, আমি মজা করছি না। একবার আমার সাথে জীবন জুড়ালে আফসোসের সীমা পরীসিমা থাকবে না তোমার। এত কথার বুলিও তখন ফুটবে না। বাস্তব জীবন যে কতটা কঠিন তা আমাদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষেরা বোঝে। চোখ দিয়ে দেখে কারো দুঃখ অনুভব করা যায় না প্রহর। আমি তোমার ভালো চাই, সেজন্য এত করে বোঝাচ্ছি। আমার পথ ছাড়ো। নিজের জন্য ভাবো একটু। নতুন পথ ধরে হাঁটতে থাকো। পথের শেষে তোমার জন্য উজ্জ্বল এক ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। অপেক্ষা করছে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া কোনো রাজপুত্র। আমি তোমার ভালোর জন্য এতকিছু বুঝানোর চেষ্টা করছি।’

প্রহর দুঃখে মুখ ঘুরাল। অভিমানী সুর তুলে বলল,

‘আমার ভালো কে দেখতে বলেছে আপনাকে? আমি নিজের ভালো নিজেই বুঝি। আর আমি খুব ভালো করে জানি যে আমার ভালো আপনাতে। আমার সবটা ভালো আপনাতে মিশে আছে।’

‘মেয়ে, বুঝার চেষ্টা করো। আমার সাথে সংসার করতে গেলে প্রতি পদক্ষেপে হোঁচট খাবে তুমি। এমন হোঁচট খাবে যে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। রিয়েল লাইফ ইজ নট আ পার্ট অফ জোক! ট্রাই টু বি লজিক্যাল।’

‘এই যে এখন হাতটা ধরলেন। এটা ধরলেই তো আর কোনো কিছুর সাধ্য নেই আমাকে ফেলে দেওয়ার। এই ছোট্ট বিষয়টা কেন বুঝেন না আপনি?’

অনুভব হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। এই মেয়েকে আর কিভাবে বুঝাবে সে? নিজেকে কেমন পরাজিত সৈনিক মনে হচ্ছে। হাতটা টান দিয়েও ছাড়াতে পারলো না সে। প্রহর শক্তি দিয়ে চেপে ধরে বলল,

‘হাতটা ছাড়বেন না প্লিজ। পড়ে গিয়ে গায়ে কাঁদা মেখে গেলে এতখানি পথ যাব কি করে?’

অনুভব কোনো কথা বলল না। রাগান্বিত হয়ে ঘুরে দাঁড়াল। প্রহরের হাতে হ্যাঁচকা টান মেরে সে এগিয়ে চলল। প্রতিত্তরে মুচকি হাসলো প্রহর। তার সেই লজ্জা মিশ্রিত হাসিতে নতুন করে লজ্জা পেয়ে মেঘেরা মুখ লুকাল। কত না অনুভূতিতে ভেসে যাচ্ছে তার মন।গলির মাথায় পৌঁছে অনুভব এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল। এইবার আর প্রহর কোনো বিপত্তি সৃষ্টি করলো না। এমনিতে আজ অনুভবের যতটা কাছাকাছি ছিল, অন্তত এক মাস তার ঘুম হবে না আনন্দে!

পূর্ব-পশ্চিম দুদিকে রাস্তা চলে গেছে। অনুভবের দৃষ্টি দু দিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্য দিন রিকশা ঠেলে সরানো যায় না এখান থেকে। কিন্তু আজ একটা রিকশাও চোখে পড়ছে না। রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে করতে অনুভবের চোখে মুখে বিরক্তি উপচে পড়তে লাগলো।

প্রহর একটু পিছনে ছিল। পেছন থেকে অনুভবকে পর্যবেক্ষণ করতে সহজ হচ্ছিল। একটুপর সে কয়েক পা এগিয়ে অনুভবের পাশাপাশি দাঁড়াল। লাজুক স্বরে বলল,

‘কাল ভার্সিটি যাবেন অনুভব?’

অনুভব আগুন ঝরা চোখে তাকাতে প্রহর বলল,

‘স্যরি! স্যরি! অনুভব ভাই, কাল ভার্সিটি যাবেন? এবার ঠিক আছে?’

‘আমি যাই বা না যাই তাতে কার বাপের কি?’

‘কারো বাপের কিছু না হলেও আপনার বাচ্চার মামণির অনেক কিছু। প্লিজ কাল ভার্সিটি মিস করবেন না। আপনার অনাগত বাচ্চার মা ভীষণ কষ্ট পাবে।’

অনুভবের কয়েক সেকেন্ড লাগলো বুঝতে। বুঝতে পেরেই চেপে রাখা রাগটা তরতর করে বেড়ে গেল। সাধে কি আর এই মেয়েকে বেহায়া বলে? দাঁতে দাঁত চেপে সে প্রহরের দিকে তাকালো। নির্বিকার ভাবে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে প্রহর। তার এমন স্বাভাবিক রূপ দেখে অনুভবের পিত্তি জ্বলে পুড়ে উঠলো। ডান হাতটা উঁচু করে বলল,

‘আমার পিছু ছাড়! না হলে গলা টিপে মেরে ফেলবো তোকে।’

প্রহর পাত্তা দিল না। আড়ালে মুখ লুকিয়ে হেসে ফেলল। অনুভবের রগচটা মেজাজ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই বোধ হয় পশ্চিম কোণ থেকে একটা রিকশা উদয় হলো। প্রহর হাত নেড়ে রিকশাওয়ালাকে ডাকলো। রিকশা এগিয়ে আসছে। সে শেষ বারের মতো অনুভবের কাছ ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,

‘গলা টিপে ধরেন না-কি গলায় চুমু খান, সেটা তো সময় বলে দিবে মি. অনুভব মোর্শেদ।’

চমকে অনুভব প্রহরের দিকে তাকালো। প্রহর ততক্ষণে দৌঁড়ে রিকশায় উঠে পড়েছে। রিকশাওয়ালা মামাকে বাসার ঠিকানা দিয়ে সে ফের অনুভবের দিকে তাকালো। অনুভব এখনো বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে। কোনো নড়নচড়ন নেই। তার সেই রোবটিক চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রহর একগুচ্ছ হাসি ছুঁড়ে মারলো। রিকশা চলা শুরু করতেই সে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

‘আমার বাচ্চার বাবাকে ভালোবাসি।’

‘ভালোবাসি’ কথাটা প্রতিধ্বনিত হয়ে অনুভবের কানে এলো বারংবার। সে চট করে আশপাশে খেয়াল করলো। নাহ! রিকশাওয়ালা ছাড়া দ্বিতীয় কেউ শোনেনি। এলোমেলো চোখে সে প্রহরের রিকশার দিকে তাকালো। রিকশা অনেক দূর চলে গেছে। দৃষ্টির অগোচর হতে সে দু হাতে কান চেপে ধরলো। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে তার। এই বিচ্ছু মেয়ে কি সব বলে গেল এতক্ষণ? কি ডেঞ্জারাস মেয়ে! টলমল পায়ে সে উল্টো ঘুরে গলির ভেতর ঢুকলো। উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে লাগলো। কিছুদূর যেতেই কাঁদাপানিতে পা পিছলে ধাড়াম করে পড়ে গেল সে!

_____________

মোটামুটি ধরনের একটা হোটেলে সিমরান অপেক্ষা করছে। এই অপেক্ষা অনুভবের জন্য। গতকাল অনুভব তাকে আর্জেন্ট একটা রুম বুক করতে বলেছে। শুধু তাদের দুজনের জন্য। সিমরান সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেছে। কতগুলো দিন হলো সে আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছে। বহুবার সে অনুভবের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অনুভব সাড়া দেয়নি। শেষের দিকে এসে সে কিছুটা বিরক্ত ছিল। কিন্তু আজ যেন শাপে বর মিলেছে।

মাথার খোলা চুলগুলো আঙুল দিয়ে ঠিক করলো সে। অনুভবের আকষর্ণীয় শরীরের প্রতি তার লোভ বহুদিনের। বহু বার সে তার দৃষ্টি দিয়ে অনুভবকে বুঝিয়ে দিয়েছে বিষয়টা। কিন্তু অনুভব যেন দেখেও দেখেনি! আজ সেই অনুভব রুম বুক করতে বলেছে ভেবে তার খুশিতে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

আধ ঘন্টা পেরিয়ে যেতেও অনুভবের দেখা মিলল না। সিমরানের মনের ভেতর চিন্তারা উঁকিঝুঁকি মারলো। কোনো ভাবে অনুভব তাকে মিথ্যে আশ্বাস দিল নাতো? নতুবা এটা কোন প্রাংক? চিন্তায় গলা শুকিয়ে এলো তার। ফোনটা হাতে নিয়ে অনুভবকে কল দিতে শুরু করলো।

তৃতীয় বারের মতো ফোন দেওয়ার পরো অনুভব রিসিভ করলো না। সিমরান এবার রাগে দুঃখে মাথার চুল টেনে ধরলো। কয়েক সেকেন্ড হতেই দরজায় নক পড়লো। হুড়মুড় করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল সে। উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

‘কে?’

দরজার ওপাশ থেকে অনুভবের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো। অনুভবের কন্ঠ কানে যেতে সে তড়িঘড়ি করে দরজা খুলল। অনুভব বিমর্ষ চেহারা নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে নিজে থেকে দরজা বন্ধ করলো। দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতে সিমরান ঝড়ের গতিতে তার দিকে এগিয়ে এলো। খুব দ্রুত সরে গিয়ে নিজেকে বাঁচাল সে। সিমরানের দিকে চেয়ে চোখ রাঙানি দিল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

‘তোমাকে আসল কথা বলা হয়নি সিমরান। আমার কিছু ছবি প্রয়োজন। তোমার আর আমার প্রাইভেট সময়ের। ছবিগুলো তুমি আমার ফোন থেকেই তুলবে। পরবর্তীতে প্রহরকে পাঠাব আমি। যাতে ওর মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয় এবং আমার পিছু ছাড়ে। কাজটা যদিও জঘন্য কাজ, তবুও বাধ্য হয়ে আমাকে করতে হচ্ছে।’

সিমরান এতক্ষণে পুরো বিষয়টা বুঝতে পারলো। কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেও এটা ভেবে খুশি হলো যে, নিজের চেহারা দিয়ে সে অনুভবকে ঠিক কাবু করতে পারবে। বন্ধ দরজার ভেতরে সে অনুভবকে আজ নিজের করেই ছাড়বে।

কয়েক মিনিট সময় নিয়ে অনুভব সিমরানকে বুঝিয়ে দিল। তারপর ঝটপট বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।শার্টের বোতাম খুলে সে সাদা চাদর দিয়ে বুক পর্যন্ত ঢেকে চোখ বন্ধ করলো। সিমরান একই চাদরের নিচে ঢুকে অনুভবের কাছ ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। অনুভবের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ফেলল। হাসিমুখে বলল,

‘ডান!’

চোখের পলকে অনুভব শোয়া থেকে উঠে বসলো। শার্ট ঠিকঠাক করে ছবিগুলো একবার দেখলো। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘থাঙ্কস তোমাকে।’

ফোনটা পকেটে রেখে বিছানা ছেড়ে উঠতে নিতেই সিমরান হামলে পড়লো তার উপর। অনুভব দু হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল,

‘হোয়াট ননসেন্স! সিমরান ছড়ো। কি করছো?’

‘এতদিন অনেক হেল্প করেছি তোমায় অনুভব। বিনিময়ে আজ, এক্ষুনি, এই মুহূর্তে আমার তোমাকে চাই।’

কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে অনুভব ঠাস করে সিমরানকে চড় বসিয়ে দিল। এমন এক ধাক্কা দিল যে সিমরান ছিটকে ফ্লোরে পড়লো। বিছানা ছেড়ে উঠে সে জামা কাপড় ঠিক করলো। এক দলা থুথু ফেলে বলল,

‘ঘৃণা করি তোদের মতো মেয়েদের আমি! তোদের ছায়া দেখে বমি আসে। বিপদে পরে তোর মতো মেয়ের সাহায্য নিয়েছি। বিনিময়ে টাকা দিয়েছি। শোধবোধ! কিন্তু টাকাতে তোর মন ভরে না কেন? তুই অনুভব মোর্শেদকে চাস? আরে, প্রহরের পাহাড়সম ভালোবাসাকে আমি দু হাতে ঠেলে সরিয়েছি, নিজের বুকে তাকে জায়গা দেয়নি, সেখানে তোদের মতো মেয়েকে জায়গা দিবো? ইম্পসিবল!’

সিমরান গালে হাত চেপে অনুভবের দিকে চেয়ে রইলো। তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে অনুভব দরজার কাছে গেল। ছিটকিনিতে হাত দিয়ে বলল,

‘তোর তো এ হোটেলে আসা আজ প্রথম নয়। আর তোর নাগরের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কাউকে ফোন দিয়ে ডেকে নে। টাটা!’

দরজা খুলে অনুভব বের হয়ে গেল।

_____________

গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে বহুদিন পর একটা সিগারেট শেষ করলো অনুভব। কতদিন হলো সিগারেট খাওয়া হয় না। সিগারেট তার জন্য নিষিদ্ধ। অথচ আজ মনটা এতটা বিক্ষিপ্ত ছিল যে সিগারেট ছাড়া চলছিল না। এতক্ষণে প্রহর নিশ্চিত ছবিগুলো দেখেছে। প্যান্টের পকেটে ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। সে দেখলো না। জানা কথা, মা ফোন করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে মা অনবরত ফোন করে যাচ্ছে। তার মা একা মানুষ। বাবা গত হয়েছে কতগুলো বছর হয়ে গেল। বাবা ওপারে যাওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে মায়ের যত চিন্তা। তাকে বেশি রাত অবধি বাইরে পর্যন্ত থাকতে দেয় না।

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে নিল সে। গন্ধ দূর করার জন্য পকেট থেকে একটা লজেন্স বের করে মুখে পুড়লো। তারপর গলির ভেতর ঢুকলো। রাত মোটামুটি অনেক হয়েছে। মা চিন্তা করছে নিশ্চিত। সে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল।

দরজায় টোকা দিয়ে অনুভব পায়ের জুতা খুলল। খুব দ্রুত দরজা খুলে গেল। জুতা জোড়া হাতে নিয়ে ভেতরে পা রাখতে পিলে চমকে উঠলো তার। প্রহর চেয়ারে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

‘মা? এত রাতে ও এখানে কেন?’

(চলবে)

আসসালামু আলাইকুম। এক জায়গা ঘুরতে এসেছি। অনেক কষ্টে সময় বের করে লিখলাম। আজ দুই পর্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় পেলাম না। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here