অনুভবের প্রহর পর্ব_০৬

0
278

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব__০৬

‘মা? এত রাতে ও এখানে কেন?’

অনুভবের চেঁচানো সুর শুনে ফাতেমা এগিয়ে এলেন। তাঁর চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে দুঃশ্চিন্তায়। অনুভবের কৌতূহল মাখা মুখের দিকে চেয়ে থেকেও সহসা কিছু বলতে পারলেনা না। কি আর বলবেন? অসময়ে প্রহরকে দেখে তার বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। এখনো কেমন ঘোরের মধ্যে আছেন তিনি। একটা মেয়ে তার বাড়িতে উঠে এসেছে, তার ছেলের বউ হওয়ার জন্য! এমন আতংকের বিষয় আর কি হতে পারে?

অনুভব মায়ের মুখের দিকে এক পলক চেয়ে প্রহরের দিকে তাকালো। তোতলানো মুখে বলল,

‘এই মেয়ে। তু-তুমি এখানে কেন? কত রাত হয়েছে জানো?’

‘এই মেয়ে, এই মেয়ে করছেন কেন? আমার একটা নাম আছে। মনে থাকে না? প্রহর। পূর্বিতা মাহমুদ প্রহর ইজ মাই নেইম। মাইন্ড ইট।’

‘শাট আপ! কয়টা বাজে খেয়াল আছে?’

প্রহরের মধ্যে কোনো রকম হেলদোল দেখা গেল না। চোখ ঘুরিয়ে বাম হাতের কবজিতে পড়ে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। কপাল কুঁচকে বলল,

‘সবেমাত্র ৮ টা বেজে ৫১ মিনিট। তার মানে রাত ৯ টা বাজতে এখনো নয় মিনিট বাকি।’

‘আমাদের এখানে কখন এসেছ তুমি?’

‘বেশিক্ষণ হয়নি। সন্ধ্যার পাঁচ-সাত মিনিট আগে। আপনার টেক্সট পেয়েছি। ছবি দেখেছি। কিছুক্ষণ হা-হুতাশ করে কান্না করেছি। দেন নিজেকে ধাতস্থ করে কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে একেবারে চলে এসেছি। আপনার পাখনা গজিয়েছে অনেক অনুভব। আমি কাছাকাছি থাকলে আর পাখনা গজাবে না। সেজন্য একেবারে চলে এসেছি।’

অনুভব দু হাতে মাথা চেপে ধরলো। কি বলছে এই মেয়ে? কি করবে এখন সে? এমন কিছু হবে তা তার চিন্তা ভাবনার কয়েকশ গজের মধ্যে ছিল না। প্রহর তার বাড়িতে এসেছিল এগারো দিন আগে। এই এগারো দিন প্রহর বিভিন্ন ভাবে তাকে ডিস্টার্ব করেছে। একদন্ড স্বস্তি দেয়নি। সে লুকিয়ে ঝুঁকিয়ে বেশিক্ষণ আড়ালে থাকতে পারেনি। কোনো না কোনো ভাবে ঠিক তাকে খুঁজে বের করেছে এবং জ্বালিয়েছে। সেজন্য বাধ্য হয়ে এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যাতে তাকে আর সিমরানকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে সে দূরে সরে যায়। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু এটা কি হলো? মেয়ে তো সোজা তার বাড়ি চলে এলো। আবার বলছে একেবারের জন্য!

চিন্তায় অনুভবের গলা শুকিয়ে আসছে। হাঁসফাঁস করতে করতে এদিক ওদিক তাকালো সে। এতক্ষণে নিশ্চিত প্রহরের বাসায় হৈ চৈ পড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর বাইরে থাকার মতো মেয়ে প্রহর নয়৷ তাছাড়া সে বাবা-মায়ের খুবই আদরের। এতক্ষণে মনে হয় তাদের বিপি হাই হয়ে গেছে। সে অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। ফাতেমা কাতর স্বরে বলল,

‘আমি অনেক বুঝিয়েছি। হাতজোড় করেছি। মেয়ে কিছুতেই কিছু শুনছে না। সে পণ করেছে, এ বাড়ি ছেড়ে যাবে না।’

অনুভবের এলোমেলো চেহারা দেখে প্রহর উঠে দাঁড়ালো। তার বসার চেয়ারটা সামান্য এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘এত ছটফট করছেন কেন আপনি? একটু শান্ত হয়ে বসুন তো।’

অনুভব এক লাথি দিয়ে চেয়ার ফেলে দিল। ফাতেমা তাকে ইশারায় শান্ত হতে বললেন। একটা মেয়ে তার ছেলের জন্য এতদিন ধরে পাগলামি করছে, তার ছেলের জন্য এতটা পাগল তিনি আজ বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু বুঝতে পেরেও তার কিছুই করার নেই।

অনুভব মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করলো। প্রহর বাচ্চা মানুষ। একটা ভুল করে ফেলেছে। তার উচিত ভুলটাকে আর প্রশ্রয় না দেওয়া। ভুলটাকে শুধরানো। এখন ঠান্ডা মাথায় প্রহরকে বুঝাতে হবে। সে কাত হয়ে পড়ে থাকা চেয়ারটা টেনে তুলল৷ তাতে নিজে বসে পড়লো। তাকে বসতে দেখে ফাতেমা শোবার ঘরের দিকে গেলেন। অনুভব ঝামেলা মেটাক৷ তার নিজেকে কেমন অসুস্থ অসুস্থ মনে হচ্ছে।

অনুভব কিছুক্ষণ পর বলল,

‘প্রহর, আমি যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দাও। কেন এসেছ এখানে?’

প্রহর উৎফুল্ল স্বরে বলল,

‘আপনি বুঝতে পারছেন না? ফাইনালি বাসা থেকে আমি পালিয়ে এসেছি। শুধু মাত্র আপনার জন্য। এবার আপনি আমায় আজ রাতের মধ্যে বিয়ে করে ফেলুন। ঝামেলা চুকে যাবে।’

‘তোমার মনে হয় আমি বিয়ে করলে ঝামেলা চুকে যাবে?’

‘অবশ্যই। আমি কথা দিচ্ছি, একটিবার আমায় বিয়ে করুন। জাস্ট একটিবার! আর কোনো ঝামেলা হবে না।’

‘বিয়ে বাদে আর কোনো স্যলুশন নেই?’

‘উঁহু!’

প্রহর বুকে হাত ভাঁজ করে সটান দাঁড়িয়ে রইলো। তার ভাব ভঙ্গি দেখে তাকে মোটেই বিচলিত মনে হচ্ছে না। এদিকে অনুভবের শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল রক্তস্রোত বইছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে৷ সে ধমক দিয়ে বলল,

‘ছি! শেইম অন ইউ। বাবা-মা কত কষ্ট করে পেলে পুষে বড় করেছে। তাদের সম্মানের কথা না ভেবে, তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে পালিয়ে আসতে লজ্জা করেনি? এখন এতটুকু গিল্টি ফিল হচ্ছে না?’

‘এই, থামুন তো। ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করবেন না। আমি এত তাড়াতাড়ি পালাতে চেয়েছিলাম? আপনিই তো সিমরানের সাথে ফস্টিনস্টি করছেন। আপনার পায়ে শিকল পড়ানোর জন্য আমি এসেছি।’

‘তোমার বাবা-মাকে ফোন দাও!’

‘অসম্ভব!’

বলেই প্রহর হাতের ফোনটা লুকানোর চেষ্টা করলো। এতক্ষণে তার চেহারায় কিছুটা আতংক ছড়িয়ে পড়লো। অনুভব হাত বাড়িয়ে বলল,

‘তোমার ফোনটা দাও।’

‘দিবো না।’

অনুভব আর কথা বাড়াল না। একটানে ফোনটা কেড়ে নিল। যা ভেবেছিল তাই। ফোন বন্ধ করে রেখেছে। ফোন অন করতে স্ক্রিণে তার নেভি ব্লু রঙের শার্ট পরিহিত ছবি ভেসে উঠলো। কপাল কুঁচকে গেল তার। ছবিটা যে তার অগোচরে তোলা সেটা দেখলেই বোঝা যায়। সে আগুন চোখে প্রহরের দিকে চেয়ে বলল,

‘লক প্যাটার্ণ বলো।’

‘আগে কবুল বলুন। তারপর লক প্যাটার্ণ বলবো।’

অনুভব আর তাকে ঘাটালো না। প্রহরের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে চেষ্টা করলো। রঙ লেখা উঠলো। হুট করে মনে পড়তে সে ‘এ’ অ্যালফাবেট দিয়ে চেষ্টা করলো এবং প্রথম বারেই হয়ে গেল। বাঁকা ঠোঁটে একবার প্রহরের দিকে তাকালো। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

_____________

রাত্রি সাড়ে দশটার দিকে শুধু প্রহরের বাবা-মা এলো। তাদের অগোছালো ভাবসাব বলে দিচ্ছে এতক্ষণ তাদের উপর দিয়ে কি ঝড়টা গেছে। এমন একটা ঘিঞ্জি এলাকার বেহাল দশা বাড়িতে প্রহরকে দেখে তারা রীতিমতো চমকে উঠলো।

তিনটে চেয়ার ম্যানেজ করে অনুভব তাদের বসতে দিল। একটাতে নিজে বসলো। রান্নাঘরের টুল টেনে তাতে বসে আছে প্রহর। তার চেহারা বেশ স্বাভাবিক। অনুভব বিনয়ের সহিত বলল,

‘আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না আশা করি। প্রহর এমন বাচ্চাদের মতো আচরণ করেছে এখন অবধি বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।’

প্রহর বাবার দিকে তাকালো। বলল,

‘বাবা, গত মাসের ১৯ তারিখ রাত ১১ টা ৭ মিনিটে তোমায় বলেছিলাম, আমি যদি কোনোদিন বাউন্ডুলে কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে চাই তুমি রাজি হবে? কি বলেছিলে তুমি মনে আছে? হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেছিলে, অফকোর্স রাজি হবো। কেন নয় মা? এখন কথা হচ্ছে তোমার সামনে বসে থাকা এই হাঁদারাম, বাউন্ডুলে, রগচটা ছেলেটাকে আমি কয়েক বছর হলো ভালোবাসি। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।’

‘কিন্তু আমি চাই না।’

সঙ্গে সঙ্গে অনুভব উত্তর দিল। প্রহরের বাবা ইরতাজ উদ্দিন ভালো মতো অনুভবকে লক্ষ্য করলেন। আসার পথে গাড়িতে ছেলেটার ব্যাপারে মোটামুটি সব তথ্য জানতে পেরেছেন তিনি। নিঃসন্দেহে ছেলেটা সুদর্শন। কিন্তু তার মেয়ে কি সৌন্দর্য ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবে? এমন একটা চাল চুলোহীন ছেলের প্রেমে তার মেয়ে কি করে পড়লেন? স্বীকার করতেই হবে, মেয়েকে আদর দিতে দিতে বাঁদর বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। চোখ মুখ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে তিনি বললেন,

‘পূর্বি মা। পাগলামি করে না। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। বাসায় যাই। পরে কথা বলবো আমরা এই বিষয়ে।’

‘না বাবা। যা সিদ্ধান্ত নিবে তা আজই হবে। এই ছেলে এতগুলো বছর আমায় ওর পেছনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এখন অন্য মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে। আমি ওকে ছাড়বো না৷ আজ, এক্ষুণি, এই মুহূর্তে আমাদের বিয়ে হবে। প্লিজ বাবা একটু ব্যবস্থা করো।’

অনুভব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। উত্তজিত হয়ে বলল,

‘বললাম তো আমি বিয়ে করবো না। আজ তো দূরে থাক, কোনোদিনই বিয়ে করবো না।’

প্রহরও তেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আঙুল উঁচিয়ে বলল,

‘বিয়ে করবে না তুমি মানে? তুমি বিয়ে করবে, তোমার ঘাড় বিয়ে করবে।’

‘কি? তুমি আমায় তুমি তুমি করে বলছো? স্পর্ধা কত।তোমার কত বড় আমি মনে করিয়ে দিতে হবে?’

‘তুমি বলেছি বেশ করেছি। এবার তুই করে বলবো। এতদিন ধরে পিছু পিছু ঘুরছি বলে খুব ভাব বেড়ে গেছে তোর। তাই না? একবার শুধু বিয়েটা হোক। তারপর তোর এমন হাল করব না?’

প্রহরের মা মিসেস রাবেয়া উঠে দাঁড়ালেন। প্রহরকে দ্রুত সামলে নিলেন। প্রহর যে অনুভব নামের ছেলেটাকে ভালোবাসে সেটা তিনি অনেকদিন হলো জানেন৷ মেয়ের খুশিতে কখনো বাঁধা দিতে চাননি বলে কিছু বলেননি। কিন্তু আজ একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে প্রহর। তিনি প্রহরকে নরম স্বরে বললেন,

‘প্রহর মা, বাসায় চল। পাগলামি করে না। আজ তুই আমাদের সাথে চল। পরবর্তীতে ধুমধাম করে তোর বিয়ে দিবো আমরা। এই অনুভবের সাথেই বিয়ে দিবো।’

হুট করে প্রহর কান্না শুরু করলো। মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘কিন্তু ও তো বলছে আমায় বিয়ে করবে না।’

‘কে বলেছে বিয়ে করবে না? অবশ্যই বিয়ে করবে। আজ চল। অনেক রাত হয়েছে। মানুষজন জানাজানি হলে কতটা বেইজ্জতি হবে বুঝতে পারছিস?’

প্রহর কিছু বলল না। মাথা নিচু করে চোখ মুখ মুছে নিল। ইরতাজ উদ্দিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়েটা অনেক জেদি। ছোটবেলা থেকে যেটার বায়না ধরতো সেটা তার চাই-ই চাই। নিজের জিনিসের প্রতি বরাবরই ভীষণ পজেসিভ সে। সেই বিষয়টাতে যখন তার লাইফ পার্টনার বা ভালোবাসার মানুষটির কথা আছে তখন তো কোনো কথাই নেই। কিন্তু পাত্র হিসেবে অনুভবকে তার একরত্তি পছন্দ হয়নি৷ টোটালি বাউন্ডুলে একটা ছেলে। ভার্সিটির গন্ডি পেরুতে পারেনি। শুধু পাবলিক ভার্সিটিতে পড়লেই তো হবে না। ভালো মতো পাস করে ভালো জব করতে হবে। কিন্তু এই ছেলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, নেই কোনো উচ্চাশা। এর সাথে প্রহরের বিয়ে হলে প্রহর কষ্ট ছাড়া কিছু পাবে না৷ ভালোই হলো তাকে কিছু করতে হলো না, ছেলেটা নিজে থেকে প্রহরকে রিজেক্ট করছে। এটা অবশ্য প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু ছেলেটা তার হিরের টুকরোর মতো মেয়েকে রিজেক্ট কেন করছে? অন্য কোনো উদ্দেশ্য তো নেই?

ফাতেমা এতক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার এগিয়ে এসে প্রহরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,

‘বিয়ে কপালের লিখন। অামার ছেলের সাথে তোমার জুটি যদি কপালে লিখে থাকে তাহলে ঠিক বিয়ে হবে। তুমি বাচ্চা মানুষ। পড়াশোনা শেষ করো। আমার ছেলেও পড়াশোনা শেষ করুক। তারপর না হয়….’

‘আন্টি ওর পড়াশোনা শেষ হতে হতে আমি বুড়ি হয়ে যাব। আর কত বছর লাগবে উনার ভার্সিটি শেষ করতে?’

অনুভব ধমকে বলে উঠলো,

‘আমি যতদিন বাঁচবো ততদিন ভার্সিটিতেই থাকবো। কখনো পাস করবো না। শুনতে পেয়েছ তুমি?’

‘আই হ্যাভ নো প্রবলেম। তাহলে ধরে নিন যে আদুভাইকেই বিয়ে করছি আমি।’

কেউ আর কোনো কথা বললো না। ফাতেমা চা বানানোর জন্য চুলায় গরম পানি বসাল। কিন্তু তার আগেই সবাই ফেরার প্রস্তুতি নিল। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। বিদায় নিয়ে একে একে সবাই বের হয়ে গেল। ফাতেমা তাদের পিছু পিছু দরজার বাইরে গেলেন। শেষ মুহূর্তে প্রহর ধীর পায়ে অনুভবের সামনে এসে দাঁড়াল। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

‘আসছি তাহলে। দেখা হচ্ছে খুব শীঘ্রই।’

অনুভব প্রহরকে আর আশা দিতে চায় না। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

‘কান খুলে শুনে রাখো প্রহর। আমি মরে গেলেও তোমায় বিয়ে করছি না।’

চমকে অনুভবের দিকে তাকালো প্রহর। বুকের ভেতর পুড়ে উঠলো৷ চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। ধীরে ধীরে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। ঝাপসা চোখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘আপনার কথা ফিরিয়ে নিন অনুভব। মাত্র সাতদিন। সাতদিনের মধ্যে আপনি আমায় বিয়ে করছেন। সাতদিনের মধ্যে যদি আপনার স্ত্রী হতে না পারি, তাহলে সারাজীবনের জন্য আপনার পথ থেকে সরে যাব। এখানে দাঁড়িয়ে কথা দিলাম আমি।’

বলে প্রহর অপেক্ষা করলো না। এক হাতে চোখ মুছে দৌঁড়ে বাইরে চলে গেল। প্রহরের গমন পথের দিকে চেয়ে অনুভবের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। অতঃপর ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো।

_____________

রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিল অনুভব। রিকশা চলে যাওয়ার পরো গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এর মধ্যে পাঁচদিন কেটে গেছে। এই পাঁচদিন প্রহর তার সামনে আসেনি, তার সাথে কোনোপ্রকার যোগাযোগের চেষ্টা করেনি, তাকে ডিস্টার্ব করেনি। মেয়েটা ঠিক আছে তো? দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে সে গলির ভেতর ঢুকলো। কিছুদূর এগোতে তার ফোন বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলো অাননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। সে রিসিভ করলো না। আবার ফোন বেজে উঠলো। তৃতীয় বারের সময় ফোন রিসিভ করলো সে। কানে নিয়ে বলল,

‘কে?’

ফোনের ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে এলো। অনুভব বুঝতে পারলো প্রহরের বাবা। বুক কেঁপে উঠলো তার। প্রহরের কিছু হয়নি তো? ফোনের ওপাশ থেকে ইরতাজ উদ্দিন অনুরোধের স্বরে বললেন,

‘অনুভব, তুমি দ্রুত হসপিটালে চলো এসো। প্লিজ। পূর্বি আজ দুদিন হলো হসপিটালে ভর্তি। আমি লোকেশন পাঠাচ্ছি। প্লিজ চলে এসো।’

(চলবে)

এবারে বোধ হয় প্রহর বিয়েটা করেই ছাড়বে! ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। গল্পের ৬ নাম্বার পর্ব লেখা শেষ গতকাল। কিন্তু যে বাসায় এসেছি নেট একদম নেই। বাইরে গিয়ে পোস্ট করতে হয়। গতকাল রাতে প্রচুর বৃষ্টি ছিল। তবুও ছাতা নিয়ে গিয়ে পোস্ট করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নেট একদমই ছিল না। রাতে আরেক পর্ব পোস্ট করবো।🧡

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here