আরশিযুগল প্রেম❤পর্ব- ২০
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤
বিছানায় চুপচাপ বসে আছে শুভ্রতা। কপালটা হালকা কুঁচকানো। ভার্সিটি থেকে বান্ধবীদের ফোন এসে চলেছে সেই সকাল আটটা থেকে। কিন্তু শুভ্রতার কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। মূলত ফোনটা সে ইচ্ছে করেই তুলছে না। বান্ধবীদের অযথা বকবক শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে শুভ্রতার নেই। মনের মাঝে এক আষাঢ় মেঘ জমিয়ে রেখে কারো সাথে কথা বলা চলে না। সাদাফের আচরণে আপাতত ভয়ানক রকম ক্ষুব্ধ সে। শেরকর পাড়া থেকে ফেরার পথে বৃষ্টি না থাকায় পথ ছিলো শুকনো। পাহাড়ের গা শুকনো হওয়ায় আর শুভ্রতা কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠায় খুব দ্রুতই পৌঁছে গিয়েছে থানচি পাড়া। সেখানে দুমুঠো খেয়ে দুপুর একটার বাস ধরে বান্দরবান। মেমপ্রের সাথে গল্পে মজে থাকার কারণে এইটুকু রাস্তায় সাদাফের সাথে ঠিকঠাক কথা বলা হয়ে ওঠে নি শুভ্রতার। হোটেলে ফিরে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই কিভাবে যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তার খোঁজই পাই নি সে। রাতে শেফার ডাকে ঘুম ভেঙে কোনরকম রেডি হয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেছে। শুভ্রতা ভেবেছিলো বাসে কিছুক্ষণ সাদাফের সাথে সময় কাটানো যাবে কিন্তু কথায় আছে না? ‘অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর শুকিয়ে যায়’ এবারও তাই হলো। কোথা থেকে শেফা এসে বললো সে শুভ্রতার সাথে বসতে চায়। আরাফের সাথে তার ভয়ানক ঝগড়া হয়েছে। আরাফ তার দাবি না মানা পর্যন্ত সে আরাফের ধারে কাছেও যাবে না। শুভ্রতার তখন বাস থেকে লাফিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। সাদাফ হাসিমুখে তার পাশ থেকে উঠে যাওয়ায় সাদাফকেও বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু শুভ্রতা কিছু করে নি। এক আকাশ অভিমান নিয়ে চুপচাপ বসে ছিলো সে। ভোরে গাড়ি থেকে নেমে বিদায় নেওয়ার পালাতেও সাদাফ তাকে বিশেষ কিছু না বলায় অভিমানের পাহাড়টা যেন আরো খানিকটা ভারি হয়ে মাথায় চেপেছে তার। শুভ্রতার বিরক্তির মাঝেই আবারও ফোন বেজে উঠলো। চোখ-মুখ কুঁচকে ফোনটা সাইলেন্ট করতে গিয়েও রিসিভ করলো সে। ফোনের অপর পাশ থেকে ধমকে বলে উঠলো পুষ্পি,
—” এই ফোন ধরিস না কেন বল তো? ফোন দিতে দিতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি তবু তোর খবর নাই। সমস্যাটা কি তোর? মরছিস নাকি?”
শুভ্রতা শান্ত গলায় বললো,
—” না। তবে যাচ্ছি।”
পুষ্পি কনফিউজড হয়ে বললো,
—” যাচ্ছিস মানে? কোথায় যাচ্ছিস? কালই না বান্দরবান থেকে ফিরলি?”
শুভ্রতা শীতল গলায় বললো,
—” মরতে যাচ্ছি। ”
পুষ্পি খানিক থমকালো। শুভ্রতা কন্ঠে মজা বা রাগের কোনো আবেশ আছে কি না বুঝার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকেও শুভ্রতার কথায় রাগ বা মজার আবেশ খুঁজে না পেয়ে সন্দেহী গলায় বললো,
—” মানে?”
শুভ্রতা এবার চেতে উঠলো। চেঁচিয়ে বললো,
—” মানে বুঝিস না তুই? তুই কি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিস? নাকি আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেছিস? বাংলা বুঝিস না? সারাদিন তো থার্ডক্লাস ভাষায় কথা বলতে থাকিস আর দরকারের সময়ই বাংলা ভুলে বিলেতি বনে যাস? এখন তোকে ইংরেজিতে বুঝাতে হবে আমার?”
শুভ্রতার আকস্মিক রাগে থতমত খেয়ে গেলো পুষ্পি। শুভ্রতাকে রাগ করার মতো কোনো কথা বলেছে বলেও মনে পড়ছে না। তাহলে হঠাৎ হলো টা কি? শুভ্রতার রাগ দেখে মিনমিন করে বললো পুষ্পি,
—” দোস্ত? কি হয়েছে বল তো? এনি প্রবলেম?”
—” হ্যাঁ প্রবলেম। সব সব প্রবলেম।”
—” মানে?”
পুষ্পির কথার জবাব না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো শুভ্রতা। রাগ লাগছে। অসম্ভব রকম রাগ লাগছে তার। রাগে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। শুভ্রতা হাতের ফোনটা বিছানায় আছাড় দিয়ে হাতের কাছের বালিশটা ছুঁড়ে মারলো দূরে। সাথে সাথেই ঝনঝন করে প্রচন্ড শব্দে কম্পিত হলো সারা ঘর। শুভ্রতা শব্দ অনুসরণ করে, ঘাড় ফিরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। দরজার কাছে হতবিহ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছেন রাদিবা আহমেদ। খাবারসহ ট্রে আর প্লেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো রুম জুড়ে। শুভ্রতা সকাল থেকে কিছু খায় নি বলে মেয়েকে হালকা-পাতলা কিছু খাওয়াতেই ট্রে হাতে রুমে ঢুকছিলেন রাদিবা আহমেদ। কিন্তু শুভ্রতার বেখেয়ালিপনায়, বালিশ লেগে খাবারসহ সবকিছুই হাত থেকে উল্টো পড়লো তার। রাদিবা আহমেদ একবার ফ্লোরে পড়া কাঁচের টুকরোগুলোর দিকে তাকালেন। চোখ ফিরিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে মেয়ের দিকে তাকাতেই কপালে চিন্তার রেখা ফুটলো। মেয়ের মেন্টাল অবস্থা ঠিক করতে ট্যুরে পাঠিয়ে পুরোপুরি পাগল বানিয়ে ফেললো কিনা, কে জানে? রাদিবা আহমেদ শাড়ির কুঁচিগুলো বামহাতে খানিকটা উঁচু করে, খুব সাবধানে খাবারগুলো ডিঙিয়ে মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—” কি সমস্যা? এভাবে বালিশ ছুঁড়ে মারলি কেন? দিন দিন পাগল টাগল হয়ে যাচ্ছিস নাকি?”
শুভ্রতা জবাব দিলো না। চুপচাপ মুখ কালো করে বসে রইলো। রাদিবা আহমেদ থমথমে গলায় আবারও প্রশ্ন করলেন,
—” কি হলো? কথা বলছিস না কেন?”
শুভ্রতা হঠাৎ করেই মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো। রাদিবা আহমেদ যেন আৎকে উঠলেন। ডানহাতটা আলতো করে শুভ্রতার মাথায় রেখে হাজারও দুশ্চিন্তায় মত্ত হলেন। হঠাৎ করে কি হলো মেয়েটার? কিসের এতো কান্না তার? তার এই অবুঝ মেয়েটাকে কেউ কষ্ট দিলো না তো? মেয়েটা ছোট থেকেই একটু বেশিই আবেগী। ছোট বেলার মতো কারো কথায় মুখ ফুলিয়ে কাঁদছে কি মেয়েটা? শুভ্রতার কান্নার বেগ বাড়তেই সব ভাবনা ফেলে উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলেন উনি,
—” কি হয়েছে মামুনি? কেউ কিছু বলেছে? আমায় বল…মাকে বল মামুনি।”
শুভ্রতা জবাব দিলো না। রাদিব আহমেদ শুভ্রতার মাথায় হাত বুলাতেই দু’একবার হেঁচকি তুলে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে কথা বললো সে,
—” মা? তুমি না আমায় সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলে? নিয়ে চলো না প্লিজ। আমি সত্যিই কেমন পাগল হয়ে যাচ্ছি মা। আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। প্লিজ মা…নিয়ে চলো না।”
শুভ্রতার কথায় আরো খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন রাদিবা আহমেদ। উদ্বিগ্ন গলায় বললেন,
—” কি হয়েছে আমায় বল মা। না বললে বুঝবো কিভাবে? হঠাৎ কি হলো তোর?”
শুভ্রতা হঠাৎই সোজা হয়ে বসলো। এই অল্প একটু কাঁদতেই ফর্সা নাকটা কেমন টকটকে লাল হয়ে গেছে তার। বাম হাতের উল্টো পিঠে নাক রগরিয়ে উঠে দাঁড়ালো শুভ্রতা। দু’হাত চোখ মুছে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
—” তুমি যাও মা। আমি ঠিক আছি।”
রাদিবা আহমেদ ছুটে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। চিন্তাময় গলায় চেঁচিয়ে উঠে বললেন,
—” ঠিক আছিস মানে?ঠিক আছিস তো কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? বল আমায়। এই শুভি?শুভি?”
রাদিবা আহমেদ ওয়াশরুমের দরজায় কান পাতলেন। ভেতর থেকে কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কি না তা খুব আগ্রহের সাথে পরীক্ষা করছেন উনি। রাদিবা আহমেদ টিভিতে দেখেছিলেন, এই জেনারেশনের মেয়েরা ফ্যামিলির চোখ লুকিয়ে ওয়াশরুমে বসে কাঁদে। কে জানে? শুভ্রতাও তেমনটা করছে কিনা। আচ্ছা? হঠাৎ করে কি হলো মেয়েটার? মেয়েটার সাথে ভয়ানক কিছু ঘটে যায় নি তো? আজকালকার যুগে কতকিছুই তো ঘটে। ক্রাইম পেট্রোল বা বিভিন্ন জার্নালে এসব দেখায়ও অহরহ। শুভ্রতার সাথে এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় নি তো? দুশ্চিন্তায় শরীরে ঘাম হতে শুরু করলো রাদিবা আহমেদের। কিছুক্ষণ শুভ্রতাকে ডাকাডাকি করে কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি। নাহ্ কিছুই ভালো লাগছে না তার। মনটা কেমন কু-ডাকছে। শুভ্রতার বাবা তো তার কথার কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। এমন একটা ভাব করছে যেন মেয়েটা তার একার। কে জানে, কেমন পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা? আজ যদি তার মেয়ের কিছু হয়ে যায় না, তাহলে একদম ছেড়ে কথা বলবে না রাদিবা। রাদিবা যাওয়ার পথে আবারও শুভ্রতার রুমের দিকে ফিরে তাকালেন। সাথে সাথেই বুকটা হাহাকার করে উঠলো তার। বারবার মনে হতে লাগলো, মেয়েটা কাঁদছে না তো?
ভার্সিটির ক্যান্টিনে চুপচাপ বসে আছে শুভ্রতা। কারো দিকে না তাকিয়েও চার জোড়া চোখের গোল গোল দৃষ্টি উপলব্ধি করতে পারছে সে। আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে চোখ তোলে তাকালো শুভ্রতা। ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” কি হইছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
পুষ্পি,তনয়া,প্রমা, অর্পন সবাই টেবিলে হাত রেখে ডানহাত গালে চেপে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। শুভ্রতার হঠাৎ করা ধারালো প্রশ্নে চারজনই অপ্রস্তুত হয়ে গাল থেকে হাত নামিয়ে ঠিক হয়ে বসলো। অর্পন জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো,
—” দোস্ত? ঠিক আছিস?”
শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকালো। কপট রাগ নিয়ে বললো,
—” কেন? আমাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে তোদের? তোদের কি মনে হয়, আমি পাগল?”
অর্পন ঢোক গিললো। পুষ্পি-তনয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকালো। তনয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
—” না। মানে…অসুস্থ মনে হবে কেন? একদম অসুস্থ মনে হচ্ছে না। আসলে তুই তো সিঙ্গারা খাস না। অথচ আজ আধাঘন্টা যাবৎ সিঙ্গারার মাঝখানের আলু খেয়ে চলেছিস। তাই…. ”
শুভ্রতা চোখ রাঙিয়ে বললো,
—” তাই কি হ্যাঁ? তাই কি? তাই তোরা আমাকে পাগল ভেবে ফেলবি? আলু খেলেই মানুষ পাগল হয়ে যায়?”
এটুকু বলে থামলো শুভ্রতা৷ জোরে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে বললো,
—” এই আমি দেখতে কেমন বল তো?”
অর্পন কোলড্রিংক্স খাচ্ছিলো। শুভ্রতার কথাটা শোনার সাথে সাথেই গলায় কোলড্রিংক্স বেজে কাঁশতে লাগলো সে। তনয়া অর্পনের পিঠে আলতো থাপ্পড় দিতে দিতে বললো,
—” তুই দেখতে তো ভালোই।”
শুভ্রতা টেবিলে দু’হাত ভর দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে এসে বললো,
—” ভালো করে দেখে তারপর বল।”
অর্পন আড়চোখে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো,
—” তুই ছেলে হলে না’হয় ভালো করে দেখে লাভ ছিলো। অযথা দেখে কি লাভ? প্রেম তো করতে পারবো না।”
শুভ্রতা সরু চোখে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” কি বললি?”
অর্পন সটান ওঠে দাঁড়িয়ে বললো,
—” বললাম যে তুই দাঁড়া। আমি ভালো করে দেখে রিভিউ দিচ্ছি তোকে। এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না বুঝলি। এসব বিষয়ে অর্পনই সব….”
পুষ্পি মুখ ভেঙিয়ে বলে উঠলো,
—” এজন্যই তো ছেলের “ছ” দেখার সাথে সাথেই প্রেমে হাবুডুবু খাও।”
অর্পন শুভ্রতার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
—” তুই কি বুঝবি? প্রেমে পড়া হলো একটা আর্ট। তোর মতো নিরামিষের পক্ষে এই আর্ট সম্ভব নয়। সো অযথা কথা বলে পরিবেশ নষ্ট করিস না তো। তোর প্রতিটি কথা ভদ্র পরিবেশে গন্ধময় নর্দমার মতো।”
পুষ্পি কিছু বলতে গিয়েও বললো না। অর্পন শুভ্রতার চারপাশে ঘুরে ঘুরে অদ্ভুত দৃষ্টিতে শুভ্রতাকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো। অর্পনের ভাবভঙ্গি আর কাজ দেখে মুখ চেপে হাসি আটকালো তনয়া। হাসির ধামকে বারবারই ঠোঁট ফাঁক হয়ে যাচ্ছিলো তার। কিন্তু শুভ্রতার রাগের আগুন থেকে বাঁচার জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে রইলো সে। এক মিনিটের পর্যবেক্ষন শেষে গম্ভীর মুখে ফলাফল জানালো অর্পন,
—” তুই কিন্তু ভয়ানক সুন্দরী শুভি বেবি। বেশি না…. আর অল্প একটু স্লিম হলে আর নাকটা…..হ্যাঁ নাকটা একটু খাঁড়া হলে দিপিকা পারোকুন ফেইল হতো তোর সামনে। এমনিতেও গায়ের রঙে দিপিকাকে হারিয়েই দিয়েছিস তুই। এখন শুধু…”
রাগটা চেপে না রেখে এক ধমকে অর্পনকে থামিয়ে দিলো শুভ্রতা। সাথে সাথেই দমফাটা হাসিতে মেতে উঠলো তনয়া। আশেপাশের কিছু মানুষ উৎসাহিত চোখে এক নজর ওদের দিকে তাকিয়ে আবারও যার যার কাজে ব্যস্ত হলো। শুভ্রতা মুখ কালো করে আবারও চেয়ার টেনে বসে পড়লো। তারমানে, সে একদমই সুন্দরী নয়? তাহলে, খালামনি আর কাজিনরা কেন বলে যে শুভ্রতা সুন্দরী? ভার্সিটিতেও এতো এতো প্রোপোজাল কেন পায় সে? শুভ্রতার এবার সবার উপর রাগ লাগছে। সে সুন্দরী নয় বলেই হয়তো সাদাফ তাকে পাত্তা দিতে চায় না। যেচে যেচে অসুন্দর বউ কে ঘরে নিতে চায় শুনি? শুভ্রতার কালো মুখ দেখে সন্দেহী গলায় প্রশ্ন করলো পুষ্পি,
—” দোস্ত? এট এনি চান্স, তুই কি প্রেমে পড়েছিস?”
শুভ্রতা টলমল চোখ দুটো তোলে তাকালো। পুষ্পির দিকে তাকিয়ে “হ্যাঁ” বোধক মাথা নাড়লো। সাথে সাথে বড় বড় হয়ে গেলো চার জোড়া চোখ। কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে একসাথেই চেঁচিয়ে উঠলো চারটি কন্ঠস্বর। চারপাশের উৎসুক দৃষ্টি আবারও তাদের দিকে নিবদ্ধ হলো কিন্তু সেদিকে তাদের দৃষ্টি থাকলে তো? তারা তখন আনন্দ আর উত্তেজনায় আত্মহারা। মিথ্যে পৃথিবী নিয়ে চিন্তা করলে কি চলবে তাদের? একদমই নয়।
__________________
সাদাফ আর আরাফ মুখোমুখি বসে আছে। রেস্টুরেন্টের কাঁচের দরজা ভেদ করে বাইরের জনাকীর্ণ রাস্তাটির দিকে মনোযোগী চোখে তাকিয়ে আছে সাদাফ। আজ হঠাৎ ব্যস্ত পথচারীদের ব্যস্ততা দেখতে ভালো লাগছে। বনানীর একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের জন্য এসেছে সাদাফ-আরাফ। লাঞ্চটা আরাফের পক্ষ থেকে ট্রিট হলেও একরকম ধরে বেঁধেই সাদাফকে ধরে এনেছে সে। অফিসে কাজ কাজ করেও নিস্তার পায় নি সাদাফ। প্রায় বিশ মিনিট পর টেবিলে খাবার দেওয়া হলে কথা বললো আরাফ,
—” ওহ্ তোকে একটা কথায় জিগ্যেস করা হয় নি। আমার শালিকাকে কেমন লাগলো তোর?”
সাদাফ প্লেটে চামচ চালাতে চালাতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
—” মানে?”
আরাফ খাবার মুখে নিতে নিতে বললো,
—” মানে আর কি? তোরা একসাথে কতো জায়গায় ঘুরলি তো প্রেম টেম হয়েছে কি না তাই জিগ্যেস করছি। তবে, আমার মনে হচ্ছে হয় নি। বাস থেকে নামার পর থেকেই তোকে খেয়াল করছিলাম আমি৷ শুভ্রতাকে তেমন কিছু বললিই না আসার সময়।”
সাদাফ মৃদু হাসলো। আরাফ হতাশ গলায় বললো,
—” আমি ভেবেছিলাম দারুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলবো। বাট, তুমি ব্যাটা এখানেও ডপ দিলা আমারে। আচ্ছা? সত্যি করে বল তো? মাইয়াটার প্রতি একটুও দুর্বলতা কাজ করে না তোর? আমি হলে তো প্রেমে পড়ে যেতাম।”
সাদাফ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো। শুভ্রতাকে ছেড়ে আসার সময় বুকটা কি ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো তার। একবার ভেবেছিলো শুভ্রতার থেকে ওর নাম্বারটা চাইবে কিন্তু পাশে শেফা আর আরাফ থাকায় অস্বস্তিতেই চাইতে পারে নি সে। তারওপর শুভ্রতা কি না কি ভাবে। তবে, সাদাফ মোটামুটি সিউর যে শুভ্রতা তার প্রতি দুর্বল। শুভ্রতার চাহনীতেই যেন সাদাফের প্রতি তার একরাশ দুর্বলতা ফুটে ওঠে। এইতো, বাস থেকে নেমেই মেয়েটার কাঁদো কাঁদো চোখদুটোই সাদাফকে বলে দিচ্ছিলো মেয়েটা কতটা চায় তাকে। ওই চোখ দুটোতে তাকিয়ে সাদাফের বুকটাও কেমন ভারি হয়ে আসছিলো। তাই, চেয়েও শুভ্রতাকে কিচ্ছু বলতে পারে নি সে। আরাফের কথায় ভাবনার জাল থেকে বেরিয়ে এলো সাদাফ। আরাফ অবাক হয়ে বললো,
—” কি ভাবিস?”
সাদাফ হেসে বললো,
—” ভাবছি, তুই থাকলে শুভ্রতার প্রেমে পড়তি…. এই কথাটা শুনে শেফা ভাবি গুণে গুণে কয়টা দোলাই দেবে।”
আরাফ ভয়ার্ত চোখে তাকালো।
—” দোলাই না দোস্ত ডিরেক্ট খুন করে ফেলবে।”
সাদাফ নিঃশব্দে হেসে আবারও খাবার আর শুভ্রতায় মত্ত হলো।
#চলবে…
(ছোট হয়েছে জানি। সেজন্য দুঃখিত। দেরি হওয়ার জন্যও দুঃখিত। কাল থেকে রেগুলার দিবো ইনশাআল্লাহ।)
,