#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸
পর্ব-১৬
#ফাবিহা_নওশীন
🍀🍀
কোম্পানি থেকে পার্টি থ্রো করা হয়েছে।সবাই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে।এই পার্টির জন্য হৃদ শুভ্রাকে ছেড়েছে নয়তো শুভ্রার মনে হচ্ছিলো হৃদ ওকে আজীবনের জন্য ধরে রাখতো।
🎶🎶
Tere elava koi bhi khawahish
nahi hai baki dil mein
Kadam uthaun jaha bhi jaun
Tujhi se jaun milne..
হালকা আলোয় গানের তালে তালে শুভ্রা হৃদ ড্রান্স করছে।সবার চোখ ওদের উপরে।শুভ্রার মাম্মা পাপা,হৃদের মাম্মা পাপা ওদের একসাথে দেখে অনেক খুশি।
শুভ্রা হৃদের দুকাধে হাত রেখেছে,হৃদ শুভ্রার কোমড়ে হাত রেখে শুভ্রার দিকে অপলক চেয়ে আছে।শুভ্রা চোখ নামিয়ে রেখেছে।আরচোখে কিছুক্ষণ পর পর হৃদকে দেখছে।
🎶🎶
Tere liye mera safar
Tere bine mein jaun kidhar.
Tumse zayda mein na janu
Tumse khudko mein pachano
Tumko bas mein apna manu
Mahiya….
Vaaste…❤❤❤
হৃদকে একদম মাখনের মতো কিউট লাগছে শুভ্রার কাছে।শুভ্রা মনে মনে হাসছে।মাখন নরম হয় কিন্তু কিউট!!হাও ফানি শুভ্রা।
শুভ্রা আবারো হৃদের দিকে তাকালো।গানের লাইনগুলো অনুভব করার চেষ্টায় রত দুজন।
রোজ একা একা বোর হচ্ছে।ওর আসেপাশে কতশত কিউট ছেলেরা ঘুরছে কেউ কেউ ড্রান্স করতে চাইছে।ওর পাপা মাম্মা বারবার বলছে চাইলেই ড্রান্স করতে পারে দে ডোন্ট মাইন্ড।অন্য সময় হলে রোজ ড্রান্স করতো কিন্তু এখন ইচ্ছে করে না।অরিত্র ছাড়া কাউকে চায়না,না কারো ছোয়া চায়।অরিত্রকে মিস করছে কিন্তু পাপার পাশে বসা তাই ফোন করতে পারছেনা।
শুভ্রা ফিসফিস করে হৃদকে বললো,
—–চোখ বন্ধ করো।
হৃদ ফিসফিস করে বললো,
—–কেনো?
—–আহা বন্ধ করোনা।
—–ওকে।
হৃদ চোখ বন্ধ করতেই শুভ্রা হৃদের গালে চুমু খেলো।হৃদ চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসলো।শুভ্রা হৃদ চোখ খোলার আগেই হৃদের বুকে মুখ লুকালো।হৃদের বুকে মাথা রেখেই স্লো ড্রান্স করছে।
অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১টা বেজে গেছে।রোজ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।ঘুমে ওর চোখ ভেঙে যাচ্ছে।সারাদিনের ক্লান্তি ওকে ছেয়ে ফেলেছে।রোজ ফোন অন করে দেখলো অরিত্র অনেকবার ফোন করেছে। রোজের আপাতত অরিত্রকে ফোন করে কথা বলার মতো এনার্জি নেই।রোজ ফোন রেখে কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
~পরের দিন সকালবেলা~
রোজ ভার্সিটিতে ঢুকতেই অরিত্র কোথা থেকে এসে রোজকে একটা ফাকা ক্লাসরুমে নিয়ে গেলো।তারপর দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,
—–গতকাল কোথায় ছিলে?তোমাকে কতবার ফোন করেছি ফোন চেক করেছো?চেক করলে অবশ্যই দেখেছো?
রোজ আমতা আমতা করে বললো,
—–ফ্যামিলির সবাই অফিস পার্টিতে গিয়েছিলাম।
অরিত্র রোজকে ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
—–আরে বাহ! ইনি তো পার্টি করছিলেন।
তারপর কিছুটা কঠিন কন্ঠে বললো,
—-আমি এইদিকে টেনশনে মারা যাচ্ছি আর তুমি পার্টি করছো?
তুমি জানো তোমাকে ভার্সিটিতে না পেয়ে ফোন করেছি কতবার?বারবার ফোন করার পরও ফোন তুলছিলে না তাই আমার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছিলো।এছাড়া জানতে পারি তোমার আপা রোদ্দুর স্যারও আসেনি।এটা জেনে আমার টেনশন আরো বেড়ে গেলো। পাশাপাশি ভয় হতে লাগলো।কোনো বিপদ হলোনা তো।
তারপর তোমাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে ছিলাম।খোজ নিয়ে জানতে পারি বাড়িতে কেউ নেই।আমাকে টেনশনে ফেলে কি করে পার্টি করছিলে?
—–আমাদের কোম্পানির একটা ইম্পর্ট্যান্ট শো ছিলো।আর এর উপলক্ষে কোম্পানি থেকে পার্টি থ্রো করে।যেহেতু আমাদের কোম্পানি,আমাদের ভিক্টোরি।আমাদের তো সেখানে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক।তাই ভার্সিটি আসতে পারিনি।
—–ওকে ফাইন।বাট একটা ফোন করে তো ইনফর্ম করতে পাড়তে।
—–আসলে সবকিছু হুট করে হয়ে যাওয়ায় তোমাকে জানাতে পারিনি।বাসায় ফিরে অনেক টায়ার্ড ছিলাম।ফর দিস রিজন ভেবেছিলাম ভার্সিটি এসে তোমাকে সব বলবো।কিন্তু তুমি যে এত টেনশন করবে বুঝতে পারিনি।
অরিত্র ভয়েস কিছুটা মোলায়েম করে বললো,
—–রোজ দেখো আমি তোমার ব্যাপারে অনেক সেন্সেটিভ।অল্প কয়েকদিন হলেও মনে হয় তোমার সাথে আমার জনম জনমের সম্পর্ক।হ্যা আমার এটাই মনে হয়।
তাই তোমার জন্য সবসময় অস্থির হয়ে পড়ি।নেক্সট টাইম এমন করোনা প্লিজ।আমাকে সময় করে একটু জানাবে।
রোজ অবাক হয়ে অরিত্রকে দেখছে।অরিত্র যে ওর জন্য এতটা অস্থির হয়ে পড়বে বুঝতে পারেনি।
—–আচ্ছা আর এমন ভুল হবেনা।আ’ম সরি তোমাকে টেনশনে ফেলার জন্য।
অরিত্র রোজের কাছে এসে ওর গালে হাত রেখে বললো,
—–গতকাল আমার কিভাবে গিয়েছে কত যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেছে আমিই জানি।
রোজ অরিত্রের কথার প্রতিউত্তরে অরিত্রকে জড়িয়ে ধরলো।অরিত্র মোটেও এর জন্য প্রস্তুত ছিলো না।
—–অরিত্র আমাকে সারাজীবন এভাবে ভালোবাসবে তো?
—–অবশ্যই আমার জান পাখি।
এভাবে কেটে গেছে কয়েক মাস।শুভ্রা আর হৃদের ফ্যামিলি ডিসিশন নিয়েছে শুভ্রার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ওদের বিয়ে।
বিয়ের তারিখ ফিক্সড করার পর রোজ শুভ্রার কোনো হেলদোল না দেখে বললো,
—–শুভ্রাপু তুমি খুশি নও?
শুভ্রা হেসে বললো,
—–কেন হবো না?আমার সাত বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।সাতটা বছর।
শুভ্রা রোজের গাল টিপে নিজের রুমে চলে গেলো।
পরীক্ষা শেষ।শুভ্রা ফ্রেন্ডদের বিয়ের কার্ড দিচ্ছে।
শুভ্রার এক ফ্রেন্ড অনি বললো,
—–শুভ্রা তুই হৃদকে বিয়ে করছিস যে কিনা তোকে ডাম্প করেছিলো।
শুভ্রার অনির কথা শুনে গা জ্বলে গেলো।শুভ্রা চোয়াল শক্ত করে বললো,
—–শাট আপ অনি।বিয়েতে যাওয়ার ইচ্ছে না হলে যাবিনা।আই ডোন্ট কেয়ার।আমাকে হৃদ ডাম্প করেনি।আর হ্যা আরেকটা কথা আমি হৃদকে বিয়ে করতে যাচ্ছিনা হৃদ আমাকে বিয়ে করছে।গট ইট?ষ্টুপিড কোথাকার।
শুভ্রা হনহন করে হেটে চলে গেলো।পেছনে থেকে অনি বললো,
কার রাগ কার উপর ঝাড়লো?
শুভ্রার রাগ এখনো কমেনি।শুভ্রা অন্ধকারে বারান্দার রেলিঙ ধরে দাড়িয়ে আছে।কয়েকদিন পর বিয়ে।বিয়ের কেনাকাটা এখনো বাকি।তবে বিয়ের ড্রেস মামনি আর রোজ মিলে সিলেক্ট করে নিয়েছে।
হৃদ পেছনে থেকে শুভ্রাকে জড়িয়ে নিয়ে খোলা চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে।শুভ্রা একটু নড়েচড়ে উঠলো কিন্তু কোনো শব্দ করলোনা।শুভ্রার কোনো শব্দ না পেয়ে হৃদ শুভ্রাকে ইচ্ছে করে আরেকটু জোরে চেপে ধরলো।
হটাৎ এভাবে চাপ পড়ায় শুভ্রা আউচ করে উঠলো।
শুভ্রা বললো,
—–কি হলো এটা?তুমি ইচ্ছে করেই এমন করেছো তাই না?
—–হুম।
—-আবার হুম বলছো?
—–চুপ করে আছো কেন?আমার পরীর মন খারাপ?
—–উহু।
—–তবে?
শুভ্রা উত্তর দিলো।
—–কঠিন সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
হৃদ অবাক হয়ে বললো,
—–মানে?
শুভ্রা প্রতিউত্তরে কোনো জবাব না দিয়ে ঘুরে হৃদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—–এখন তোমার না জানলেও চলবে।
🌼হলুদ সন্ধ্যা🌼
হৃদ অরিত্রকেউ বিয়েতে ইনভাইট করেছে।অরিত্র পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে।রোজ কলাপাতা রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে।
অরিত্র শুরু থেকেই রোজকে খোজছে।
রোজকে কয়েকবার ফোনও করা হয়ে গেছে।কিন্তু ফোন অফ।অরিত্র একা একা বসে বোর হচ্ছে।
রোজ লেহেঙ্গার ওড়না ঠিক করতে করতে সমবয়সী কতগুলো মেয়ের সাথে আসছে।অরিত্র দূর থেকে রোজকে দেখে দাড়িয়ে যায়।মনে হচ্ছে ওর কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো।মুগ্ধ নয়নে রোজকে দেখছে।
রোজ এসেই আশেপাশে কাউকে খোজছে।অরিত্র রোজের পেছনে দাড়িয়ে বললো,
—–ম্যাডাম কি আমাকে খোজছেন?
অরিত্রের কন্ঠ পেয়ে রোজ মুচকি হেসে পেছনে ঘুরলো।অরিত্রকে দেখে মনে মনে আরেকবার ক্রাশ খেলো।
—–ইয়েস হ্যান্ডসাম।
অরিত্র হালকা হেসে বললো,
—–ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল।
—–থ্যাঙ্কিউ।ভাইয়ার সাথে মিট করেছো?
—–না।
—-চলো মিট করিয়ে দেই।
—–তোমার পাপার সাথে মিট করিয়ে দেও।এই চান্সে আমরাও বিয়ে করে ফেলি।(চোখ মেরে)
—–ইশশ আইছে।
রোজ অরিত্রকে হৃদের কাছে নিয়ে গেলো হৃদ অরিত্রকে দেখে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করলো।
—–কি খবর ব্রো?
—-আ’ম গুড।বাট আপনার বিয়ে দেখে আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।
রোজ অরিত্রকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মারলো।
—–মাগো!!
হৃদ ওদের কান্ড দেখে হেসে ফেললো।
—–ডোন্ট ওরি।টাইমলি সব হবে।
শুভ্রা হলুদের শাড়ি পড়ে রেডি হলুদের জন্য।শুভ্রার মাম্মা আর মামনি(হৃদের মা) শুভ্রার রুমে এসেছে।
শুভ্রার মাম্মা কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—–আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে।
শুভ্রার মামনি শুভ্রার গালে হাত রেখে বললো,
—–মাশাল্লাহ,,আমাদের শুভ্রাকে কত সুন্দর লাগছে।কারো খারাপ নজর না লাগুক।
শুভ্রার মাম্মার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
শুভ্রা সেটা দেখে বললো,
—–মামনি মাম্মাকে কাদতে মানা করো।কি হচ্ছে এসব?আমি কি পরের বাড়ি যাচ্ছি?এখানেই আছি,আগের মতোই থাকবো।হোয়াই সি ইজ ক্রায়িং?
শুভ্রার মাম্মা চোখ মুছে বললো,
—–তুই বুঝবিনা কেন কাদছি?
শুভ্রাকে স্টেজে নিয়ে গেলো।একজায়গায় দুজনের হলুদ প্রোগ্রাম হচ্ছে তবে আলাদা স্টেজে।
অরিত্র রোজকে হলুদ লাগিয়ে দিলো।রোজ সেটা দেখে বললো,
—–কি করলে এটা? আমার সাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।
তারপর আয়না বের করে মুছতে লাগলো।
অরিত্র কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
—–বিয়ের কনের হলুদ লাগালে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে টিভিতে দেখোনা।
রোজ অরিত্রের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।রোজের ফেস দেখে অরিত্র হেসে ফেললো।
হলুদের প্রোগ্রাম শেষ।শুভ্রা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।রাত দুটো বাজে।পরিস্কার আকাশ।শুভ্রা আকাশের দিকে চেয়ে বলছে,
“শুভ্রা তোর এত বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।ছোট থেকে কত স্বপ্ন দেখেছি হৃদের বউ হবো।সে স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।ফাইনালি আগামীকাল…।
আমার সাতবছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে।”
শুভ্রা রহস্যময় হাসি দিলো।
চলবে….
(সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম)