#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -১২
বেশ গরম পড়ছে আজকাল। এতো লং জার্নি তার উপর আদ্র ও তার মাঝে সাময়িক দূরত্ব সবমিলিয়ে ক্লান্ত তুলি। হতাশা ঘিরে ধরেছে মন কে। সায়েরা বেগমের সাথে কথা বলে মাত্র রুমে আসল। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসতেই তুলির ছোট্ট বাটন ফোন টা বেজে উঠল শব্দ করে। ফোন হাতে নিতেই চোখে পড়ল অচেনা একটা নাম্বার। ভ্রু কুঁচকাল তুলি। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই আপনাআপনি খুশির ঝলক ভেসে উঠল চেহারায়।
-কি করছো?
আদ্রর মধুর স্বর কর্ণকুহর হতেই কেঁপে উঠল তুলি। মাত্র শাওয়ার নিয়ে আসার পর শরীরে শীতল বাতাস অনুভব করতেই ক্ষণে ক্ষণে মৃদু কাঁপছে। নরম কন্ঠে জবাব দিল,,
–কিছু না। আপনি?
-শুয়ে আছি।
–ওহ্।
–তুলি???
হৃদপিণ্ডের উঠা নামা দ্রুত হয়ে গেল তুলির। এভাবে কেউ ডাকে? সামান্য ডাকে এমন হৃদয় কাঁপানো অনুভব হয়? তুলি যেন নিজের মুখের ভাষা টুকু হারিয়ে ফেলল। তবুও বহু কষ্টে অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করল,,
–“হু।”
—“ভেজা চুলে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তুলা। তাড়াতাড়ি চুল গুলো মুছে নাও।”
স্তব্ধ হয়ে গেল তুলি। পা দুটো ভেঙে আসছে। আর না পেরে ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়। বুকে অজস্র অনুভূতির ছড়াছড়ি। আদ্র কিভাবে জানল সে ভেজা চুলে দাড়িয়ে আছে? ঘাবড়ানো কন্ঠে প্রশ্ন করল,,
–“আপনি কিভাবে জানলেন?”
–“এই কয়দিনে তোমার আচরণ দিব্যি খেয়াল করেছি। তাই আন্দাজে বললাম।”–হালকা হেসে কথাটা বলল আদ্র।
তুলির যেন তবুও কথাটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না। আলতো স্বরে আবারও প্রশ্ন করল,
–” সত্যি? ”
–“একদম সত্য। আচ্ছা ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল কথা হবে।”
–“আপনি খেয়েছেন?”
–“না খাব।”
—“ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ। ”
ফোনটা পাশে রেখে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিল তুলি। ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে ডাইনিং টেবিলে আসতেই চোখে পড়ল আদ্রর বাবা কে। চেয়ারে বসে সালাম দিল তুলি।
–“কেমন আছেন খালু?”
তুলির দিকে এক পলক চেয়ে তিনি গম্ভীর স্বরে জবাব দিলেন,
–“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো? আর ট্যুর কেমন ছিল?”
–“আলহামদুলিল্লাহ খালু। কবে ফিরলেন? ”
–“আজ সকালেই। ”
আর কোনো কথা না বলে তুলি মনোযোগ দিল খাবার খাওয়ায়। আমরিন ও ইনশিতা ও পাশে বসে খাচ্ছে। খাবার শেষ করে আমরিন কে চেপে ধরে ছাঁদে নিয়ে এল তুলি। হতভম্বের চেয়ে রইল আমরিন। তুলির মুখে দুষ্টু হাসি। ছাদে পাতানো দোলনায় বসে আকাশের বুকে প্রশস্ত চাঁদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল।আমরিন বেক্কলের মতো শুধু চেয়ে থাকল। তুলির হাবভাব ভালো ঠেকছে না তার। নিশ্চয়ই কোনো ফন্দি এঁটেছে নয়তো তাকে বাঁশ দেওয়ার চিন্তা করছে। ছোট্ট করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে তুলির পাশে বসে পড়ল আমরিন। সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করল,,
–“কি হয়েছে তুলো? এভাবে হাসছিস কেন পাগলের মতো?”
চাঁদের উপর থেকে নজর সরিয়ে আমরিনের দিকে দাঁত কিটে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করল,,
–“আমি পাগলের মতো হাসছি?”
–“তা নয়তো কি? শেষ পর্যন্ত আমার ভাই একটা পাগল কে ভালোবাসল। হায়! হায়!”
—” তাহলে নিবিড় ভাইয়া ও একটা পাগল মাইয়া রে ভালোবাসে। তুই তো পাগলই। আর পাগলেই পাগল চিনে।”
কটমট করে কথাটা বলেই দম নিল তুলি। আমরিনের মুখ হা হয়ে গেছে সাথে সাথেই। মশাও ঢুকতে পারবে অনাসয়ে। বিস্ময় তাকে ঘিরে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তুলির দিকে। মিটমিট করে হাসছে তুলি। গলা ঝেড়ে বলে উঠল,,
–“আমি কিভাবে জানলাম সেটাই তো? নিবিড় ভাইয়া যে তোর হাত ধরেছিল আর তোর চোখে মুখে হাসির ছাপ ছিল তখনই বুঝেছি কিছু তো চলছে। তা পুরোপুরি ক্লিয়ার হল তাহিরপুর শিমুল বাগানে। সবার দৃষ্টিতে না পরলেও আমার চক্ষুতে ঠিকি ধরা পেরেছে। আহারে কতো গভীর অনুভূতি নিয়ে তুই নিবিড় ভাইয়ার হাতটা আঁকড়ে ধরেছিলি। আহা কি প্রেম!”
একটু ও বিলম্ব না করে তুলির মুখ টা চেপে ধরল আমরিন। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। কোনো হেঁয়ালি না করে জিজ্ঞেস করল,,
–“কি চাই? ”
–“বেশি কিছু না। জাস্ট কাল কলেজ শেষে হসপিটালে যাবি আমার সাথে।”
চোখ বড় বড় করে তাকাল আমরিন। অবাক কন্ঠে বলল,,
–“আমি পারব না। ভাইয়া রেগে যাবে। রোগী দেখার সময় ডিস্টার্ব পছন্দ করে না।”
–“ঠিক আছে যেতে হবে না। আমি ওনাকে এখনই ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি তুই ওনার ফ্রেন্ড এর সাথে,,”
—“হয়েছে আর ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না। আমি নিয়ে যাব।”
আমরিনের গাল টেনে মুচকি হাসল তুলি।
_______
কলেজ শেষে হসপিটালের সামনে চলে এল তুলি ও আমরিন। আজ হাফ ডে ছিল।দুপুরের কড়া রোদ এসে লাগছে চোখে মুখে।রোদের প্রখর টা একটু বেশিই। রোদের তাপে গরম ও লাগছে তীব্র। মনে হচ্ছে যেন চৈত্রের আগমন ঘটে গেছে। ফাল্গুন হোক আর চৈত্র তা নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই তুলির। তার মন তো কাল রাত থেকেই ছটফট করছে আদ্র কে এক নজর দেখার জন্য। সকালে অবশ্য আদ্র মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে আজ তার জরুরি ওটি আছে নয়তো তুলির সাথে দেখা করতে আসত। তুলির ধারণা আদ্র আসতে পারে নি তো কি হয়েছে রাতের প্ল্যান মাফিক সে নাহয় চলে আসল। আমরিনের হাত ধরে হসপিটালের ভিতর ঢুকল। আদ্রর কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াতেই আমরিন কে দেখে পরিচিত একজন নার্স বললেন,,
“স্যার তো রোগী দেখতে গিয়েছেন। আপনারা স্যারের কেবিনে অপেক্ষা করুন।”
ধন্যবাদ জানিয়ে ভিতরে গিয়ে বসল তুলি ও আমরিন। আজ দ্বিতীয় বারের মতো আদ্রর কেবিনে আসল তুলি। আদ্র তাকে দেখে হয়তো চমকে যাবে সেটা ভেবে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল। হঠাৎ কেবিনের দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করতেই চোখ তুলে তাকাল দুজন। চোখে পড়ল নিবিড় কে। নিবিড় ও চমকে গেল দু জন কে। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,
–“তোমরা দুজন এখানে? আদ্রর সাথে দেখা করতে এসেছো?”
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝাল তুলি। কিছুটা জড়তা নিয়ে আমরিন উঠে দাঁড়াল। তুলির দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,,
–“তুলি ভাইয়া হয়তো এখনই চলে আসবে। আমি বোন হয়ে কাবাবে হাড্ডি হওয়া টা বেমানান। তার চেয়ে বরং আমি নিবিড় ভাইয়ার সাথে বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করি।”
আমরিনের কথায় সমর্থন জানাল তুলি। তবুও তার বেহায়া মন চুপিসারে বলে উঠল,,
“তুলি ইহা তো মাত্র বাহানা।”
আমরিন ও নিবিড় চলে গেল। তুলি গালে হাত দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগল আদ্রর জন্য। আকস্মিক তার মনে পড়ল প্রথম যেদিন এসেছিল একটা মেয়ে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছিল। কে ছিল মেয়েটা?আদ্রর কাছ থেকে জানতে হবে। নয়তো খুব একটা স্বস্তি পাবে না। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দরজা ঠেলে প্রবেশ করল আদ্র। কোনোদিকে না তাকিয়ে গায়ের এপ্রোন টা খুলতে খুলতে বলল,
–“কখন আসলে?”
আঁতকে উঠল তুলি। আদ্রর সাবলীল কন্ঠ শুনে আদ্র কে চমকে দেওয়ার বদলে নিজেই প্রচন্ড পরিমাণে চমকে উঠল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,
–“একটু আগে। আপনি চমকান নি?”
–“মোটেও না। আমার মন বলছিল তুমি আসবে। নার্স কে বলে গিয়েছিলাম আসলে যেন কেবিনে বসতে বলা হয়।”
চরম অবাক হল তুলি।দ্রুত গতিতে আদ্রর কাছে হেঁটে এল। মুখ ফুলিয়ে বলল,,
–“একটু চমকালে কি হতো ডাক্তার সাহেব? ”
জবাব না দিয়ে তুলির কোমর জরিয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনল আদ্র। হার্ট বিট জোরে লাফাতে লাগল তুলির। নিজেকে সামলানোর জন্য আঁকড়ে ধরল আদ্রের কালো শার্টের কিছু অংশ। চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে আদ্রের গরম নিশ্বাস যা তুলির কাঁপুনি বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্রমশ। মুখ তুলে আদ্রর ক্লান্ত মুখে চাইতেই টুপ করে চুমু একে দিল আদ্র তুলির বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকা কপালে। এসি চলছে অথচ তুলি ঘেমে যাচ্ছে অনবরত। নিশ্বাস টা ও ভারী হয়ে আসছে। চোখে ভাসছে আদ্রর মুখটা। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আদ্র কে অনেক সুন্দর লাগছে। নীলাভ চোখ দুটো তে মাদকতা যা শিহরণ জাগাচ্ছে তুলির সারা দেহে। এই দৃষ্টি যেন তুলির জন্য নিষিদ্ধ। তাকালেই বুঝি লজ্জায় মরণ হবে। দুরুদুরু মন নিয়ে আদ্রর বুকে মুখ লুকিয়ে ঝাপটে ধরল আদ্র কে। মুচকি হেসে আদ্র ও জড়িয়ে ধরল। কানের কাছে স্লো ভয়েসে বলল,,
–রাতে তো বাসায় যেতাম কষ্ট করে না আসলে হতো না? ক্লাস করে ক্লান্ত শরীরে চলে আসলে।
–আপনাকে দেখার তর সইছিল না আদ্র।
কথাটা বলে আদ্রর বুকে আবারও মুখ গুঁজে দিল তুলি। দু চোখ বন্ধ করে নিল আদ্র। ঘোর লাগা স্বরে তুলি কে আকড়ে ধরে বলে উঠল,,
–এভাবে বুকে মাথা রাখলে নিজেকে পাগল পাগল মনে হয় তুলা। ইচ্ছে করে বিয়ে টা এখনই করে ফেলি। সারাক্ষণ এই বুকে আগলে রাখি তোমায়। কয়েক মিনিটের জন্য বুকে মাথা রেখে আবারও দূরে গেলে প্রচন্ড কষ্ট হয় আমার। শূন্য শূন্য লাগে বুক টা। রক্তক্ষরণ হয় হৃদপিণ্ডে।
আদ্রর কথায় প্রচন্ড লজ্জা অনুভব করল তুলি। বুকের ধুকপুকানি বাড়তে লাগল ক্রমাগত। বুক থেকে মাথা তুলে সরে আসতে চাইলে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল আদ্র। নেশাময় চোখ দুটো তুলির চেহারায় স্থির করে রাগী স্বরে ফিসফিস করে বলল,,,
–তোমার তো ভারী সাহস আমি এভাবে বলার পরও সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে। আর কখনও এমন সাহস করলে মেরে ফেলব একদম।
আদ্রর কথার কোনো প্রতিউত্তর করল না তুলি। নিশ্চুপ হয়ে আদ্রর হৃৎস্পন্দন শুনতে লাগল। এতো দ্রুত গতিতে স্পন্দন হচ্ছে যা কানে যেতেই শরীর কাটা দিয়ে উঠছে তুলির। ছোট্ট মনে বাসা বাঁধা অনুভূতি গুলো ও ক্ষণে ক্ষণে জাগ্রত হচ্ছে। তুলির মনে হচ্ছে এই ভালোবাসা তার জন্যই গচ্ছিত রাখা। এই গভীর প্রণয় চিরকাল ছিল তারই অপেক্ষায়। কেন আরো আগে দেখা হল না তার আদ্রর সাথে। তাহলে তো আগে থেকেই পরিচয় হতে পারত অন্তর কাঁপানো এই ভালোবাসার সাথে। তুলির সুখ অনুভূত হচ্ছে। আজ সে ভীষণ সুখী। তার এই সুখের কারণ তার ডাক্তার সাহেব। আনমনে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল আদ্রর বুকের বা পাশ টায়। আদ্র ও চুপ করে অনুভব করতে লাগল তুলি কে। কিছু না বলেও অনুভবে হাজারো কথা বলছে দু’জন। একে অপরের প্রতি অসীম ভালোবাসা বিলিয়ে দিচ্ছে অনুভবের প্রহরে।
_______
সময় যে কখন গড়িয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। আজ ইনশিতার বিয়ের ডেট ঠিক করতে আসবে। গতকাল রাতে ইনশিতা, আমরিনের সাথে ভালোই আড্ডা দিয়েছে তুলি। ঘুমোতে ঘুমোতে প্রায় দুইটা বেজে গেছে। আড্ডা ছিল ইনশিতা কে কেন্দ্র করে। কথায় কথায় জানতে পারল রনক ইনশিতার বড় চাচার ছেলে।পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক তার রনকের সাথে। বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা। তুলির চোখে এখনও ঘুম। একটু তে ও ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে মেয়েটা। নিজেও বুঝে পায় না এতো অবসাদ কেন তাকে ঘিরে ধরে। চোখ কচলাতে কচলাতে কিচেনের কাছে এসে দাঁড়াল। সকাল দশটা বাজে কিন্তু এখনও সবাই ঘুমে। সকলে বললে ভুল হবে আদ্র বেরিয়ে গেছে সকালেই। সায়েরা বেগম সার্ভেন্ট দের সাহায্য নিয়ে সবকিছু রান্না করছেন। কারণ দুপুরের দিকেই গেস্ট চলে আসবে। আচমকা তুলি কে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে আঁচলে হাত টা মুছে মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন তিনি। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
–এতোক্ষণে উঠার সময় হল? তাড়াতাড়ি আয় নাস্তা করে নিবি।
ইতস্তত করে তুলি জিজ্ঞেস করল,,
–আমরিন,ইনশিতা আপু,আদ্র ভাইয়া ঘুমাচ্ছে খালা মণি?
–আরে না। আদ্র তো প্রায় একঘন্টা হবে হসপিটালে চলে গেছে। দুপুরে ফিরবে। আর আমরিন,ইনশিতা এখনও ঘুমে।তুই খেয়ে গিয়ে ওদের উঠিয়ে দিস মা।
অভিভূত হয়ে দাড়িয়ে পড়ল তুলি। আদ্র তাকে না বলেই চলে গেল? সেটা ভেবে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করল। খানিক বাদেই মনে হল হয়তো ঘুমিয়ে ছিল তাই আর জাগায় নি।মুচকি হেসে নাস্তা খেতে মনোযোগ দিল। খাওয়া শেষ করে আমরিন ও ইনশিতা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে রুমে এল। ঘড়ির কাটার দিকে তাকাতেই দেখল এগারোটা বেজে গেছে। আলমারি থেকে নিজের জন্য একটা ড্রেস বের করে নিল দুপুরে পড়ার জন্য। ড্রেস টা আদ্র কিনে দিয়েছে। সেদিন হসপিটাল থেকে শপিং করতে নিয়ে গিয়েছিল। তিন টা ড্রেস কিনে দেয় তুলি কে। এর মধ্যে থেকে নীল রঙের লং ড্রেস টা বের করল তুলি। আলমারি লাগাতে গিয়ে নজর গেল একটা বক্সের দিকে। বিস্মিত হয়ে বক্স টা হাতে নিল। একটা মোবাইল ফোনের বক্স। তার নিচেই চাপা দেওয়া ছিল একটা চিরকুট। অতি আগ্রহ নিয়ে চিরকুট খুলতেই হাসি ফুটে উঠল তুলির ঠোঁটে।
~ “মোবাইল টা তোমার জন্য। ঘুমিয়ে ছিলে তাই ঘুম ভাঙায় নি তবে একটা ছোট্ট চুমু খেয়েছি তোমার কোমল ঠোঁট দুটো তে। জানি এখন লজ্জা পাবে তুমি কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই লজ্জা রাঙা মুখ টা আমার দেখা হবে না। আমার বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা ও অনুভব করব না। তবুও কল্পনায় একে নিব তোমার সেই মুখ খানা যা প্রতি রাতে নির্ঘুম রাখে আমায়। এই মেয়ে আমায় মেরেই দম নিবে তাই না?”
চিরকুট টা বুকের সাথে জড়িয়ে মুচকি হাসল তুলি। কিশোরী তুলির কাছে একটা খুবই ভয়ংকর অনুভূতি। এ অনুভূতি গুলো শান্তিতে নিশ্বাস পর্যন্ত নিতে দেয় না। সারাক্ষণ বিচরণ করে বেড়ায়। আর ইচ্ছে করে সর্বদা মেতে থাকতে এমন মন মাতানো অনুভূতির মাঝে। তুলি জানে না এই অনুভূতি গুলোর শেষ পরিণতি কি হবে। কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস আদ্র ঠিক সামলে নিবে, জড়িয়ে নিবে তার হৃদয়ের গহীনে। লাজুক হেসে ধীর কন্ঠে বিড়বিড় করে বলল, ,–” আপনি অনেক অসভ্য ডাক্তার সাহেব। ”
।
।
ইনশিতার রুমে বসে বসে ইনশিতা কে রেডি হতে দেখছে তুলি। আমরিন নিচে গেছে। সায়েরা বেগম পাঠিয়েছেন। তিনি ও মেয়ে কে শাড়ি পড়িয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে চলে গেলেন নিচে। ইনশিতা কে খুব সুন্দর লাগছে। বউ বউ লাগছে তুলির কাছে। লজ্জার ছাপ ও ফুটে আছে চেহারায়। তুলি ভাবতেই লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠছে একদিন সে ও ইনশিতার মতো শাড়ি পড়ে অপেক্ষায় থাকবে আদ্রর বউ হবার জন্য। আদ্র হয়তো বেশি অপেক্ষা করাবে না। তুলি মনে মনে বলে উঠল,,–” লোকটা যা পাগল আর বেহায়া দেখা যাবে তিনি নিজেই অপেক্ষা করবেন আমার জন্য। ” কথাটা ভেবেই ব্লাশিং করতে লাগল।
হঠাৎ কালো রঙের শাড়ি পড়া একটা মেয়ে রুমে আসতেই হালকা হেসে উঠল ইনশিতা। মেয়েটা সুন্দর। অনেক বেশি সুন্দর। চোখ গুলো কেমন টানা টানা। পিঠে ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো কোমর ছুঁই ছুঁই। ঠোঁটে লেগে আছে হাসি। অবাক হয়ে তুলি মেয়েটা কে দেখতেই ব্যস্ত। ইনশিতা জরিয়ে ধরল মেয়েটা কে। অভিমানী সুরে বলে উঠল,,
—“নিজের বাড়িতে আসতে কারণ লাগে? যেই বাড়িতেই সারাজীবনের জন্য ঠাঁই হয়ে গেছে তোর সেখানেই আপনি আসতে বিলম্ব করলেন?”
—” আরে তুই তো জানিস ভাইয়ার সাথে লন্ডনে ছিলাম। চলে আসতাম কিন্তু ভাইয়ার কাজে আঁটকে গেলাম। বাই দ্যা ওয়ে ভাবী আপনাকে কিন্তু অপরূপ লাগছে।”
–“হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। তোকে মোবাইলে বলেছিলাম না আমাদের বাড়িতে একটা কিউট মেয়ে এসেছে? আয় পরিচয় করিয়ে দেই।”
কথাটা বলেই তুলি কে ডাক দিল ইনশিতা। মুচকি হেসে তুলি ওদের দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েটা তুলি কে অবলোকন করল ভালো করে। মিষ্টি হেসে বলল,,
–“বাহ্ বেশ মিষ্টি তো দেখতে।”
–হুম। তুলি পরিচয় হ এই বাড়ির আরো একজন সদস্যর সাথে। আমাদের ভাবী সামিরা। সম্পর্কে আমার ননদ ও।
তুলির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। হারিয়ে ফেলার ভয়ে বুকে শুরু হল আর্তনাদ। ছোট্ট মনে নেমে এল বিষাদের ছায়া। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–“ভভাবী মানে? ”
তীক্ষ্ণ নজরে তাকাল সামিরা। ইনশিতা হেসে বলে উঠল,,
—“আরে বুঝিস নাই? আদ্র ভাইয়ার বউ। আদ্র ভাইয়া তো,,
পুরো দুনিয়া থমকে গেল তুলির। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বাক্য টা হয়তো শুনেছে সে। চোখ ভর্তি হল জলে। কোনোমতে আঁটকে রাখার চেষ্টায় নেমে পড়েছে। আর কোনো কথা শুনার শক্তি টুকু নেই তার। পুরো শরীর অসার হয়ে পড়ছে। বুকে অসহনীয় ব্যাথা হচ্ছে। তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যাথা। শ্বাস টুকু নিতে পারছে না।মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে কথা থামিয়ে পিছন থেকে আকড়ে ধরল ইনশিতা। আতংক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–“এই তুলি কি হয়েছে তোর?”
মুখ দিয়ে একটা কথাও উচ্চারিত করতে পারছে না তুলি। ইনশিতার হাতটা চেপে ধরে বহু কষ্টে বলল,,
–“আমায় রুমে দিয়ে আসো আপু।”
সাথে সাথেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোঁটা জল।
#চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। 🥰❤️)