#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব__৪১
চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছে তুলি। মাথা বার বার গিয়ে ঠেকছে বইয়ের উপর। পরমুহূর্তেই আবার শিরদাঁড়া সোজা করে ঘুম তাড়ানোর তীব্র চেষ্টা চালাচ্ছে। রাত পোহালেই তো ফাইনাল পরীক্ষা। এখন ঘুমে আচ্ছন্ন হলে আদ্রর রাগের সম্মুখীন হতে হবে তা শতভাগ নিশ্চিত তুলি। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে চেয়ারে এক পা তুলে মিনমিন করে পড়ছে। নিদ্রা চক্ষুকোটরে এসে বারংবার হানা দিয়ে যাচ্ছে। চোখ জ্বলছে খুব। বড়সড় করে মেলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা তুলির। তবে যদি রেহাই হয় তন্দ্রা নামক বেজাল হতে। কিন্তু ঘুম বুঝি তুলির ডাগরডাগর আখিঁদ্বয়ের প্রেমে মগ্ন হয়েছে নয়তো তুলিকে ছেড়ে পাড়ি জমাতো সুদূর কোথাও। হুট করে টেবিলে ঢলে পড়ল তুলি। সাথে সাথেই উচ্চ শব্দ কর্ণে আসতেই সারা শরীরে ঘাম ছুটে গেল তার। তড়িৎ গতিতে হুড়মুড়িয়ে উঠল। ভয়ে সারা শরীরে কম্পন ধরে গেল তৎক্ষনাৎ। ঘুম ঘুম ঝাপসা চোখে ভেসে উঠল এক জোড়া রক্তচক্ষু। নিমেষ তন্দ্রা তড়তড় করে জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল যেন। শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল,
” আমি,,,আমি ঘুমোয় নি তো ডাক্তার সাহেব। চোখ লেগে এসেছিল। কতবার ঘুম কে বলেছি প্লিজ পালিয়ে যাও কাল আমার পরীক্ষা কিন্তু ওরা আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। ”
ভয়ের চোটে আবোল তাবোল বকলো কতক্ষণ তুলি। আদ্র নির্বিকার দৃষ্টি মেলে নির্নিমেষ চেয়ে রইল খানিকটা সময় । তৎপরে কফির মগ টা ধরিয়ে দিল তুলির হাতে। সন্ধ্যা থেকে কথা বলছে না আদ্র তুলির সঙ্গে। রুমে নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে সে। গম্ভীর ভাবের সাথে রাগ মিশ্রিত হয়ে সারা মুখে ছেয়ে আছে বিশদ। এহেন মুখভঙ্গি নেত্রে বিঁধতেই তুলির বুক টা ধুক করে কেঁপে উঠল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতের গরম কফি টা পান করতে লাগল একটু একটু করে। ঠাহর হলো তার আদ্র ভীষণ রেগে আছে। রাগা টা কি যুক্তিযুক্ত নয়?তুলির কাছেও যুক্তিযুক্ত এটা। আগামীকাল ইংরেজি পরীক্ষা কিন্তু তুলির এখনও সব পড়া বাকি। সারা সন্ধ্যা না পড়ে সায়েরা বেগমের সাথে আড্ডা দিয়ে পার করেছে মূল্যবান সময়। হসপিটাল থেকে এসে আদ্র প্রিপারেশন কেমন জিজ্ঞেস করা মাত্র বেলুনের মতো তুলির কলিজা টা নিমিষেই চুপসে গিয়েছে। মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে গেছে হুট করেই। সেই থেকে আদ্র একটা কথাও বলে নি তুলির সাথে। সারাদিন একটু পর পর আদ্র ফোন করে বার বার পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু তুলি অবলীলায় ফাঁকি দিয়ে গেছে তার ডাক্তার সাহেব কে। অতঃপর আদ্রর রাগের সম্মুখীন হয়ে কোনো কথা ছাড়া সেই সাত টায় পড়তে বসেছে এক টানা পাঁচ ঘন্টা ধরে চেয়ারে ঘাপটি মেরে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। পা,কোমর,পিঠ ব্যাথা করছে অনেক। পেট জানান দিচ্ছে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত সে। তবে যতক্ষণ না আদ্র তার সাথে কথা বলবে ততক্ষণ অব্দি চেয়ারে বসে পড়ায় মনোনিবেশ করে রাখার দৃঢ় পণ করেছে তুলি। আদ্রর দিকে এক পলক চাইতেই দেখল তার দিকেই অপলক দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে আদ্র। দ্রুত গতিতে চোখ মুখ সরিয়ে নিল তুলি। দৃষ্টি মাধ্যমে হৃদয়পটে প্রহার করার ক্ষমতা রাখে আদ্র,তুলির কাছে এটাই মনে হয়। নিরীহ, নির্বাক তুলি নিজ মনে আওড়ালো,
” একটা বার কথা বলুন ডাক্তার সাহেব। আপনার কন্ঠস্বর শুনতে না পেয়ে আমার বুক টা ব্যাথা করছে। আমি কখনও আর আপনার অবাধ্য হব না। ”
তুলির মনে কষ্টগুলো বিস্তার লাভ করতে লাগল ক্রমাগত। বুক ঠেলে কান্না উঠছে। গলা অবধি আটকে যাচ্ছে। না চাইতেও এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে গেল কপোল বেয়ে। জল বিন্দু কপোল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রইল,কোনো ক্রমেই স্পর্শ করতে পারল না তুলির গলা। তার পূর্বেই একটা বলিষ্ঠ হাত অতি যত্নের সহিত অশ্রুকণা মুছে দিল। নতমস্তকে তুলি আদ্রর হাত টা গালে চেপে রেখে ডুকরে কেঁদে উঠল। চোখ ছাপিয়ে নেমে আসছে জল। অশ্রুসিক্ত, অস্পষ্ট কন্ঠে বলতে লাগল,
” একটু কথা বলুন না ডাক্তার সাহেব। আপনি আমার সাথে কথা না বললে নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয় আমার। একটুও থাকতে পারব না আমি আপনাকে ছাড়া। একটা বার তুলা বলে ডাকেন দয়া করে। ”
কি আকুলতা শ্যামবর্ণার কন্ঠে! তুলির আকুল আবেদনে আদ্র নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি। তুলির হাত টা টেনে নিজের বুকের বা পাশে চেপে ধরল শক্ত করে। মলিন কন্ঠে বললো,
” এখানে প্রকান্ড ব্যাথা বাসা বেঁধেছে তুলা। তোমার সাথে কথা না বলে থাকার মতো ক্ষমতা নিয়ে আমি জন্মায় নি। তবুও খুব করে চেষ্টা করেছি আজ তোমার সাথে কথা না বলার। কিন্তু পারি নি। ”
এতটুকু বলে সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল আদ্র। তুলির হাতের তালুতে ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিল। পাশের চেয়ার টেনে বসল মুখোমুখি। নিজের দু’হাতের ভাঁজে নিয়ে নিল তুলির হাত দু’টো। মায়াময় কন্ঠে পুনরায় বলে উঠল,
” তুমি কি সারাটা জীবন ডা.আদ্র আহনাফের ওয়াইফ হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকতে চাও নাকি নিজেরও আলাদা একটা আইডেন্টিটি চাও?তুমি যা চাও তা-ই হবে। আমি তোমাকে একদম পড়ার প্রেশার দিব না।”
কিরূপ প্রতুত্তর করবে তুলি ঠিক বুঝতে পারছে না। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আদ্রর মুখের দিকে। কিছু সেকেন্ড অতিক্রম করে রিনঝিনে কন্ঠে জবাব দিল,
” আপনাকে চাই। আপনার ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে চাই। ”
সাথে সাথেই তুলির হাত টা টেনে তুলি কে নিজের উপর নিয়ে আসল আদ্র। আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেল তুলি। পরক্ষণেই আদ্রর বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইল ক্ষীণ সময়। শুনতে পেল আদ্রর লহু স্বর।
” দিন দিন তোমার ভিন্ন ভিন্ন পরিবর্তন দেখছি তুলি। তোমার জবাব টা আমার ভাবনার বাহিরে ছিল। একসাথে আমার দু’টো প্রশ্নকে সমর্থন জানালে। তুমি ভালো করে জানো আজ যদি আমি রাগ না দেখাতাম তবে তুমি মন দিয়ে পড়তে না। আমার মনে তোমার জন্য জন্ম নেওয়া ইচ্ছে গুলো খুব বেশি কঠিন নয় তুলা। আবার খুব একটা সহজও নয়।”
তুলি কে বিছানায় বসিয়ে খাবার নিয়ে এল আদ্র। যত্ন করে খাইয়ে দিয়ে হাত টা ধুয়ে এসে নিজ দায়িত্বে পড়াতে শুরু করল তুলি কে। এবার আর তালবাহানা করল না তুলি। টানা একঘন্টা পড়ে অবশেষে আদ্রর প্রশস্ত বক্ষে মুখ গুঁজে পাড়ি জমাল ঘুমের রাজ্যে।
_______
বৃষ্টিমুখর দিন। প্রভাতের ঠিক প্রথম প্রহরে বৃষ্টি পৃথিবীর বুকে নিজের আগমন ঘটিয়েছে। প্রবল বেগে ধরণীতে আছড়ে পড়লেও তা স্থায়ী হয় নি দীর্ঘক্ষণ। দুপুরের দিকে বর্ষণ ধরণী হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল,উঁকি দিয়েছিল সোনালী রোদ্দুর। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়তেই রোদ্দুর নিজেকে ঘন কালো মেঘে আড়াল করে নিল। নীল অম্বরে আধিপত্য বিস্তার করল কালো মেঘের দল। কিছু সময়ের ব্যবধানে বৃষ্টি রূপে নেমে এল আবারও পৃথিবীর বুকে। আহা!দিনটা যেন আজ শুধুই বর্ষণের নামে লিখা। তুলির শাড়ির অনেকটা ভিজে গেল বৃষ্টির পানিতে। তেছড়াভাবে বৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে দেহের একপাশে। গ্রাম্য ভাষায় কেউ কেউ বলেন হিঁচা বৃষ্টি। এই হিঁচা বৃষ্টির কবলে পড়ে অবস্থা নাজেহাল তুলির। কোনো রকমে তুলি কে নিজের সাথে মিশিয়ে ছাতা টা ঠিক করে ধরল আদ্র। পায়ে পা মিলিয়ে দু’জন হেঁটে এল ইনশিতার শশুড় বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত। আদ্রর হাতের শপিং ব্যাগ গুলো তুলি নিজের হাতে নিয়ে নিল। ছাতা টা বন্ধ করে একপাশে রেখে দিল আদ্র। তুলির হাতটা মুষ্টিমেয় করে ভিতরে প্রবেশ করল।
ড্রইং রুমে রনক,পূর্ব,ইনশিতা বসে আছে। তুলি আনন্দিত হয়ে গটগট পায়ে হেঁটে এল ইনশিতার কাছে। দিক বিদিক ভুলে ইনশিতার কোলের বেবী টাকে হাত বাড়িয়ে নিতে গিয়েও থেমে গেল। কিছুটা মন খারাপ করে বললো,
” আমার হাত ভেজা। রোয়ানের ঠান্ডা লেগে যাবে।”
তুলি ও আদ্র কে দেখে ইনশিতা খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল। চোখ দুটি চকচক করে উঠল যেন। কোমল স্বরে বললো,
” কিছু হবে না। বরং রোয়ান তো পথ চেয়ে ছিল কখন তার ছোট্ট মামী টা আসবে,কখন তার কোলে নিয়ে আদর দিবে তাকে।”
ইনশিতার কথায় খুশিতে তুলি ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল। সোফায় বসে ইনশিতার বেবী কে কোলে নিয়ে ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দিতে লাগল গালে,কপালে,ঠোঁটে। তুলির কান্ড দেখে মুচকি হাসল সবাই। পূর্ব তুলির দিকে এক পলক চেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে আনল ঝটপট। কেননা তুলি এখন তার জন্য নিষিদ্ধ। সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আদ্রর দিকে চেয়ে বললো,
” কেমন আছেন?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আদ্র। আলতো হেসে ফিসফিস করে জবাব দিল,
” আমার বউয়ের দিকে না তাকালে ভীষণ ভালো থাকব আমি এবং তুমি দু’জনেই।”
” তাকালে বুঝি রিশাদের মতো অবস্থা করবেন? নাকি একদম প্রাণে মেরে ফেলবেন?একবার তো বেধরম পেটালেন আমাকে আপনার বউকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। ”
পূর্বর কথার প্রেক্ষিতে আদ্র বিস্তর হাসল। আগ্রহহীন কন্ঠে বললো,
” বাহ্!তুমি তো খুব জিনিয়াস হয়ে গেলে পূর্ব। তা তিশার কি অবস্থা? ”
” ভালো। তিশাকে বিয়ের আইডিয়াটা আপনি দাদি কে দিয়েছিলেন তা আমি জানি। এদিক থেকে আমি খুব কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি। ভুল করে আপনার ভালোবাসা কে ভালোবেসে ফেললেও ঠিক করে তিশা কে ভালোবাসতে শিখেছি আমি। ভালোবাসা অন্যায় নয়। তুলি আমার মনের সুপ্ত কোণে চিরকাল থাকবে না পাওয়া ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে। আর তিশার থেকে পাওয়া ভালোবাসা আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আগলে রাখব নিজের কাছে। ”
একটা মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে পূর্ব কথা থামিয়ে দিল। দৌড়ে গিয়ে মেয়েটা কে আগলে ধরে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল,
” একা একা আসতে গেলে কেন তিশা?বলেছিলাম না নিচে আসলে আমাকে ফোন দিবে,আমি নিয়ে আসব।”
তিশা ঠোঁট উল্টে বললো,
” তুলি ও আদ্র ভাইয়া এসেছেন আপনি বলবেন না আমাকে?”
” মাত্রই এসেছে।”
মুখ ফিরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল তিশা। উঁচু পেট টা আঁকড়ে ধরে এগিয়ে এল আদ্রর কাছাকাছি। খুব বেশি উঁচু হয় নি তবুও চোখে হারায় পূর্ব। ভয় হয় হারানোর। ছয়মাস চলছে তিশার প্রেগন্যান্সির। প্রায় দু’মাস আগে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল তুলির সাথে আদ্রদের বাসায়। সায়েরা বেগম দাওয়াত করেছিলেন এই বাড়ির সবাইকে সেই উপলক্ষে যাওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তুলি কে দেখার খুব শখ ছিল তিশার। আদ্র,পূর্ব দু’জনের মুখেই শুনেছে শ্যামবতী তুলার নাম। আদ্রর সাথে পরিচয় টা বহু বছর আগের। তিশার বাবা ছিলেন আদ্রদের মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর। উনার মুখে আদ্রর নাম টা খুব শুনত তিশা। প্রিয় ছাত্র ছিল আদ্র। বাবার মুখে নাম শুনতে শুনতে কৌতূহলবশত দেখাও করেছিল তিশা আদ্রের সাথে। বাবার রিটায়ার্ডের পর কানাডা স্যাটেল হলেও ভালো যোগাযোগ ছিল আদ্রর সাথে। তিশা খুব সহজ সরল একটা মেয়ে। পূর্বর কথা আদ্রই তিশা কে জানিয়েছিল। পূর্বর সম্পর্কে সব জেনে তিশা শুধু এতটুকুই বলেছিল-
-” কাউকে ভালোবাসা দিয়ে সঠিক পথে আনার খুব ইচ্ছে আমার ভাইয়া। কখনও কাউকে ভালোবাসি নি আমি। খুব ইচ্ছা আমার ভালোবাসার টানে কেউ জীবনের ভুল গুলো পিছনে ফেলে সঠিক পথে ছুটবে।”
আদ্র প্রথমে নাকচ করলেও তিশার আকুতিভরা আবেদন ফেলতে পারল না। দাদির মাধ্যমে পূর্বর বিয়েটা তিশার সাথে ঠিক করল। এক প্রকার বাধ্য করল পূর্বকে এই বিয়ে টা করতে কৌশলে।
” কেমন আছো তুলি?”
হাসি মাখা চেহারা নিয়ে প্রশ্ন করল তিশা। সামনের সোফায় বসল কিছুটা আয়েশ করে। পূর্ব মৃদু হাসল। ধপ করে বসে পড়ল তিশার পাশে। কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করল তিশা। ফের চক্ষু যুগল তুলির দিকে নিক্ষেপ করল। রোয়ানের উপর থেকে নজর সরিয়ে তুলি ঠোঁটের কার্ণিশে হাসি নিয়ে বললো,
” আলহামদুলিল্লাহ আপু। আপনি এবং বাবু দু’জনে কেমন আছেন?”
” তোমাকে দেখে আমার বাবু একদম ভালো হয়ে গেছে। নইলে কেউ কেউ তো আমাদের রুমে বন্দি করে রেখে পাগল বানানোর ধান্দা খুঁজে। ”
পূর্বর দিকে চেয়ে তীর্যক স্বরে বললো তিশা। তুলি ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করল খুব। এবং সফলও হল এই যাত্রায়। তার ভীষণ ভালো লাগে তিশা কে। মেয়েটার সারা মুখে মায়াদের বসবাস। এখন আর পূর্ব সামনে থাকলে তুলির খারাপ লাগে না,অস্বস্তি অনুভব হয় না। কারণ প্রণয়ে তো পূর্বও আবদ্ধ তফাৎ একটাই তা এখন তিশা তেই সীমাবদ্ধ। তুলির ধারণা- হয়তো ধামাচাপা পড়ে গেছে তুলির প্রতি এক কালের ভালোবাসা, অনুরাগ।
রোয়ানের গালে চট করে একটা চুমু এঁকে দিল তুলি। বাচ্চা টার বয়স দেড় মাস। এক সপ্তাহ হতে না হতে তুলি রোয়ান কে দেখার বায়না নিয়ে হাজির হয়ে যায় আদ্রর নিকট। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় বিশ দিন হবে।কোচিং এর ক্লাস, পড়া সব ফেলে শুধু এখানেই ছুটে আসে। রোয়ান কে তার ভীষণ ভালো লাগে। ভীষণ, মাত্রারিক্ত। মাঝে মাঝে নিজের মেদহীন পেটে হাত বুলায় তুলি। খুব করে চায় এই পেটে কারো অস্তিত্ব আসুক। সবার অগোচরে পাশে বসে থাকা আদ্রর কানের কাছে মুখ টা এগিয়ে নিল। নিম্নস্বরে বললো,
” ডাক্তার সাহেব রোয়ানের দিকে তাকান তো একটু।”
তুলির মুখের দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল আদ্র৷ গোলাপি চিকন ওষ্ঠের হাসি টা হৃদয়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিল মুহুর্তে। রোয়ানের দিকে অত্যন্ত মনোযোগের সহিত তাকাল। অনন্তর ঝুঁকে ছোট্ট একটা চুমু খেল। মাথা তুলতেই তুলি মিহি সুরে বলে উঠল,
” শুনবেন না ডাক্তার সাহেব? ”
“শুনব তুলা।”
আদ্র ভালো করেই জানে তুলি কি বলবে তাকে। এই এক বাক্য যে রোয়ান জন্ম নেওয়ার পর থেকে তুলি কয়বার বলেছে তার হিসেব কেবল আদ্রই জানে। তুলি লজ্জা মাখা স্বরে চিরাচরিত বাক্য টা বলেই বসলো।
” জানেন,রোয়ানকে আমার পেটে এখনও না আসা মেয়ের জামাই জামাই লাগে।”
আদ্র মনে মনে একশ এর পাশে এক বসিয়ে নিল। অর্থাৎ ১০১।
#চলবে,,,,
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
পিক ক্রেডিট ঃ Nishat Tasnim 🖤