আকাশে তারার মেলা সিজন 2 পর্ব-৪৬

0
2166

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব__৪৬

মেডিক্যাল লাইফ, স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ। নিজের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে চলতেই ভীষণ পছন্দ করি আমি ছোটবেলা হতে। এতোকাল আমার সঙ্গী হিসেবে আমি নিজেই ছিলাম। বিনা কারণেই একা থাকাটা প্রচন্ড পছন্দ আমার। কিন্তু মেডিক্যাল ক্লাসের প্রথম দিন থেকে নিজের স্বভাবের পরিবর্তনের নড়চড় না হলেও একাকীত্বটা ঘুচে গেল অনেকাংশে। জীবনের সাথে জড়িয়ে গেল বন্ধু নামক সম্পর্ক। অন্তু,রিমি,পায়েল,সাগর,নিবিড়, ইতি এই নামের মানুষগুলো আমার কাছের মানুষ হয়ে উঠল। মেয়েদের সাথে চলাচল টা বিশেষ পছন্দ নয়। পায়েল,রিমি,ইতির সাথে বরাবরই দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। কিন্তু পায়েল,রিমির ব্যবহার ছিল আমার সাথে একদম ইনশিতা, আমরিনের মতো। বন্ধুত্ব পেরিয়ে বোনের তালিকায় নাম লিখালো ওরা অতি নিভৃতে,যতনে। তবে ইতির দৃষ্টি কেমন মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ থাকত। একটা বছর পার হতেই ইতির অন্যরকম বিহেভিয়ার লক্ষ্য করতে লাগলাম। এমনিতেই মেয়েটা ভিন্ন ছিল। কেমন যেন সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে থাকত আমার দিকে। আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম। বুঝতে পারলাম বন্ধুত্ব ডিঙিয়ে অভিনব সম্পর্ক গড়তে চাইছে ইতি। কিন্তু! কিন্তু আমার এতো বছরের জীবনে কাউকে মনে ধরে নি। কোনো মেয়ে আমার মন স্পর্শ করার যোগ্যতা টা অর্জন করতে পারে নি।

এতটুকু পড়ে মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল তুলি। চোখ ছাপিয়ে অঝোর ধারায় ঝরছে জল। ডাগরডাগর শান্তিপূর্ণ আঁখি যুগলে অশ্রুদের দখল হলেও অধর কোণে প্রস্ফুটিত হাসি। ভেজা কন্ঠে বারংবার ” কোনো মেয়ে আমার মন স্পর্শ করার যোগ্যতা টা অর্জন করতে পারে নি” বাক্যটি পড়লো। উচ্চারণ করল অনেকবার।আটঁকে আসা নিঃশ্বাস যেন মুক্তি পেল এতক্ষণে। তবে পরবর্তী পাতায় কি লিখা থাকতে পারে?কি হতে পারে ভেবেই তুলির খুশি টা উবে গেল নিমিষেই। মনের সুপ্ত কোণে ব্যাথা জড়ো হলো দৈবক্রমে, মনে পড়ে গেল ইতির বলা বিষাক্ত বাক্যগুলো।

” আদ্র কে ভালোবাসি আমি। আদ্রও একটা সময় আমাকে ভালোবাসত। তোমার মতো কালো, গ্রামের মেয়েকে আদ্রর মতো সুদর্শন একটা ছেলে যে কি-না ভালো একজন হার্ট সার্জন সে কেন ভালোবাসতে যাবে?তুমি কখনও আদ্রর টাইপ ছিলে না,আদৌ হতে পারো নি। তুমি তো বাজিমাত করেছ তোমার খালা মণির জন্য। হ্যাঁ মিসেস সায়েরা বেগম! মিসেস সায়েরা বেগম তোমাকে আদ্রর বউ করে আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। সুইডেন থাকতে শুনেছি আদ্র আলাদা থাকত,কেন থাকত বলো তো?শুধু মাত্র তোমার জন্য। তোমাকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না সে। কারণ তার ভালো লাগা,মন স্পর্শ করা মেয়ে টা তো আমি। তুৃমি ঠকে গেছো,আদ্র তোমাকে কোনো কালেই ভালোবাসে নি। কোনো কালেই না। লজ্জা করল না নিজের যোগ্যতার চেয়ে উঁচুতে হাত বাড়াতে? যদি বিন্দু মাত্র আত্মসম্মান থাকে তাহলে আদ্রকে মুক্তি দাও। ও পরিবারকে ভালোবাসে বলে সংসার করছে তোমার সাথে মায়ের মন রাখতে। তবুও তুমি থাকবে?”

তুলি তখন হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ইতির মুখের দিকে। মনে হচ্ছিল ইতির কথাগুলো ছুরি হয়ে বার বার আঘাত করছে কলিজাতে। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আটকে ছিল কন্ঠনালিতে। তুলি কয়েক মুহুর্ত স্তব্ধ থেকে বিনা বাক্যে বেরিয়ে এল কোচিং সেন্টার থেকে। ইতি পিছু পিছু এসে আরও অনেক কিছু বলছিল কিন্তু তুলি শুনে নি। অথবা শুনেও না শোনার ভান করে একটা সিএনজি ধরে চলে এসেছে বাবা মায়ের কাছে। এসেই কারো সাথে কোনো কথা বলে নি, এলোমেলো পায়ে কোনোরকমে রুমে ঢুকেছে। মিনিট কয়েক নিঃসাড় হয়ে পড়েছিল বিছানায়। ড্রয়ার থেকে অতিশয় যত্নে গুছিয়ে রাখা আদ্রর ডায়েরি টা বের করে পড়তে লাগল। তখনও আঁখিদ্বয়ে টলমল করা জল গড়িয়ে পড়ে নি। গড়াতে দেয় নি তুলি। ভেঙে পড়ে নি সে। নরম,কোমল মনের বোকাসোকা মেয়েটা হুট করেই কেমন কঠোর রূপ ধারণ করে ফেলল।

তুলি ধুরুধুরু বুক নিয়ে পরের পাতায় গেল। নেত্রযুগল নির্মিল্ত করে জোরে একটা শ্বাস টেনে নিল নিজের অভ্যন্তরে। নিমেষে আঁখিপল্লব ছুঁয়ে কপোল বেয়ে ঝর্ণার ন্যায় নেমে গেল জলধারা। অতঃপর অনেকখানি সাহস জুগিয়ে চক্ষু মেলে ধরল ডায়েরির পৃষ্ঠায়।

সময় আপন গতিতে অনেক হতে অনেকখানি পেরিয়ে গেছে। মাঝে কেটে গেছে বছরের পর বছর। মেডিক্যাল লাইফ শেষের পথে। বন্ধুত্ব গভীর হয়েছে বললেও ভুল হবে, ওরা যেন আমার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এক মুঠে শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে চলার পথে। আশ্চর্য হলেও সত্য এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে ইতি প্রেমের হাত বাড়ায় নি। তাই একটা সময় মনে হলো আমি ভুল। নিতান্তই ভুল আমি। বন্ধু হিসেবে ও আমার মন স্পর্শ করলেও আমার ভালোবাসা হতে পারে নি,না হতে পেরেছে ভালো লাগা।

মুখোশ! মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক নিকৃষ্ট মানুষের চেহারা। একটা সময় সেই মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছিল আমার জন্য, সকলের জন্য ইতির অপ্রত্যাশিত মুখশ্রী টুকু। শী প্রপোজড টু মি ফর শেয়ারিং বেড উইথআউট ম্যারেজ। হ্যাঁ ঠিক বলেছি,যাকে শুদ্ধ বাংলাতে বলতে পারি অবৈধ সম্পর্ক গড়তে হবে, ভালোবাসা নয়।

এতটুকু পড়া মাত্র সারা শরীর শিরশির করে উঠল তুলির। মুখটা কেমন তেঁতো হয়ে এল। রাগে চেপে বসল মস্তিষ্কে। ইতি কে ধ্বংস করে দেওয়ার জেদ চাপলো মনের কুঠুরিতে। একটা মেয়ে এতোটা নিচু হতে পারে!

কথাটা শুনেই পায়ের রক্ত তড়তড় করে মাথায় উঠে গিয়েছিল। সাথে সাথে রক্তজমানো চিৎকার করে উঠলাম আমি। চোখ দুটো জ্বালা করছিল ভীষণ। যাকে বন্ধুত্বের সম্পর্কে বেঁধে নিয়েছিলাম তার এহেন চেহারা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল আমার নিকট। নিজের আক্রোশ দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি আমি। প্রস্তাব টা নিচুস্বরে করলেও থাপ্পড় টা সবার সামনেই মেরেছি। অন্তু,সাগর,নিবিড় না আটকালে ওকে খুন করেই ক্ষান্ত হতাম। মেয়ে জাতি নরম,কোমল,আবেগি হয়। নিজেদের আত্মসম্মানের ব্যাপারে বেশ সচেতন হয় তারা কিন্তু একি রূপ দেখলাম আমি!পায়েল,রিমি কেঁদেছে অনেক হয়ত ভেবেছে ইতি বন্ধুত্বের মান না রেখে অশালীন প্রস্তাব করেছে এতে আমি ওদের ভুল বুঝবো। কিন্তু ওরা দু’জন ভিন্ন, একদম ভিন্ন। আমরিন,ইনশিতার মতো দু’টো বোন আমার।

বন্ধু মানে কেবল বন্ধু নয়,বন্ধু মানে বিশ্বাস,সুখ -দুঃখের সঙ্গী। আমরা আমাদের জীবনে বরাবরই বন্ধু নির্বাচনে ভুল করি। তবে সব মানুষ এক রকম না। যেমন পায়েল,নিবিড়, অন্তু,রিমি,সাগর আমার জন্য প্রাণ ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করবে না। কারণ আমার জন্য ওদের কাঁদতে দেখেছি,আমার সুখে হাসতে দেখেছি,আমার চলার পথের পথচারী হতে দেখেছি সর্বদা। অন্যদিকে ইতি বন্ধুরূপে কালসাপ। ইতির নিকৃষ্টতা এতটুকুতেই সমাপ্ত থাকে নি।

যখন ইতির বিষয়টা আমাকে ভেঙে দিয়েছে,আমার বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে তখনই মা আমাকে নিজের মনের একটা ইচ্ছে প্রকাশ করল। মায়ের নাকি একটা পিচ্চি মেয়ে কে প্রকান্ডভাবে মনে ধরেছে আমার জন্য। ব্যাপারটা সেই সময়ে একদম আমলে নিলাম না। মা বার বার বলত গ্রামে নানুর বাড়ি যেতে,মেয়েটাকে দেখতে,তাকে বউ করে আনতে এ বাড়িতে। মায়ের ইচ্ছে টা পূরণ করার ইচ্ছে আমার হলেও পিচ্চি মেয়ে বলে পিছিয়ে গেলাম। গম্ভীর তা ধরে রেখে প্রশ্ন করলাম -“বয়স কত?”

মা খুঁৎখুঁৎ স্বরে প্রতুত্তর করল-” সেভেনে পড়ে।”

ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট ছিল আমার জন্য। বিরক্তি প্রকাশ করে পাশ কাটিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। এতটুকু একটা মেয়েকে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারি না আমি। মা পিছন থেকে অনেকবার বলেছে-“মেয়েটা আরও বড় হলেই বিয়ে করাবো আদ্র। তোর আফসানা খালা মণির মেয়ে। ”

সেদিন মায়ের কথাগুলো কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার ফলে মা অন্য কিছু ভেবে বসল,যা আমার হৃদয়ে আঘাত করার কারণ হয়ে দাঁড়াল। রক্তাক্ত হৃদয়টা দ্বিতীয় বার রক্তাক্ত হয়ে গেল। তাজা হয়ে গেল সবটুকু ক্ষত। উনি নিজের ছেলের উপর বিশ্বাস রাখতে পারল না। যেই ছেলে নিজের জীবনের সবকিছু মা কে বান্ধবী ভেবে শেয়ার করেছে তার উপর অটল বিশ্বাস রাখতে পারল না। লিখতে গিয়ে খুব তাচ্ছিল্যের হাসি পাচ্ছে আমার। মায়ের ধারণা ছিল আমি ইতি কে ভালোবাসি,তাই উনার প্রস্তাব এড়িয়ে যাচ্ছি, এড়িয়ে গিয়ে নাকচ করছি। নিজের ইচ্ছে পূরণের জন্য হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। পিচ্চি মেয়েটা আমার মায়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। ইতি কে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ইতি যা চাইবে তা-ই করবে বলে কথা দেয় আমার মা। আর ইতি সে তো সেদিনের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে বসেছিল হাতে। মা কে পুরো রেষ্টুরেন্টের সামনে বলেছিল পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে আমার হয়ে তবেই সরে যাবে সে। সেদিন অন্তু,পায়েল,আমরা সকলে রেষ্টুরেন্টে উপস্থিত না থাকলে আমি স্বচক্ষে দেখতেই পেতাম না ইতি কে সরানোর নিমিত্তে আমার মা কতটা অন্যায় কাজ করতে যাচ্ছিল। ইতি খারাপ,চরিত্রহীনা মেয়ে তা সম্পর্কে অবগত ছিল মা। ভেবেছে ইতি কে ভালোবেসে ফেলেছি বলেই এতোটা কষ্ট পাচ্ছি,গম্ভীর হয়ে থাকছি সারাক্ষণ। তাই নিজের ছেলের জীবন থেকে সরাতে অন্যায় কাজে সায় দিতে,নিচে নামতে একটুও ভাবে নি মা। মায়ের এই অন্যায় মানসিক ভাবে শেষ করে দিয়েছে আমাকে। ঐ মুহুর্তে মনে হয়েছে আমার মৃত্যু হোক।

মা’কে ইতির পা ধরতে দেয় নি তবুও অন্যায় করেছে মা। অবিশ্বাস করেছে আমাকে। মায়ের কাজ টা অন্যায় হয়ে গেথেঁ গেছে আমার হৃদয়পটে। মা আমার উপর এতোটাই বিশ্বাস হারিয়েছিল কখনও বুঝতেই পারে নি ইতি তো কখনও আমার জীবনেই ছিল না,মন-মস্তিষ্ক তো অনেক দূর। তবে ছিল ঘৃণার লিস্টে এবং থাকবে। জীবন থেকে সেদিনই সরিয়ে দিয়েছি যেদিন ওর মুখোশ খুলে গিয়েছিল,সেদিনই ধরে নিয়েছিলাম ইতি নামের কোনো বন্ধু বা মানুষের ছায়া বা চিহ্ন আমার জীবনে ছিল না। ইতির পুরো ডিটেইলস বের করে জানতে পারি ওর কাজিনের সাথে রিলেশন আছে। কেমন তা বোধ হয় ব্যক্ত করা প্রয়োজন নেই।

একজন সন্তানের কাছে বাবা-মার থেকে আপন কেউ হয় না। সেই বাবা-মা যদি বিশ্বাস হারায় তাও অহেতুক কারণে তবে তা মৃত্যু সমতুল্য। আমার অভিমান এতোটাই প্রখর আমি পারি নি মায়ের সাথে আর কখনও মুখ ফুটে কথা বলতে। বাড়ি ছাড়ার আগে শুধু এটাই বলেছিলাম -” ইতি আমার জীবনে ছিল না,এতে সরানোর প্রশ্নও আসে না, তবুও তোমার চেষ্টা দেখে বলব অন্যায়ভাবে তুমি মেয়েটা কে আমার জীবন থেকে সরিয়েছ মা। খুশি তো তুমি?পারবে তো আমার অভিমানে রটানো মিথ্যে একটা বাক্য বয়ে বেড়াতে?জানি পারবে না, আমিও পারছি না তোমার মিথ্যে ভ্রান্ত ধারণা বয়ে বেড়াতে।”

খটখট শব্দে তুলির হাত থমকে গেল। সাদা পর্দা গুলো উড়ছে বাতাসের তালে তালে। কেমন একটা গুমোট ভাব ছড়িয়ে পড়েছে সম্পূর্ণ কক্ষ জুড়ে । আচমকা নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে তুলির। তুলির হাত কাঁপছে। ডায়েরি টা বন্ধ হয়ে গেল। কর্ণকুহরে দরজা ভেদ করে হুড়মুড় করে প্রবেশ করল আদ্রর অস্থির, শঙ্কিত ডাক। তব্দা খেয়ে গেল তুলি। ডায়েরি টা বিছানায় ফেলে দরজার কাছে আসল দৌড়ে। আবারও কানে এল-” ওপেন দ্যা ডোর তুলা।”

ছিটকিনি খুলে দিল তুলি কাঁপা কাঁপা হস্তে। মনে এক রাশ ভয় ঝেঁকে ধরল। দেয়ালের একপাশে দাঁড়িয়ে রইল ঠেসে। বক্ষস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে উঠানামা করছে। আদ্র ভুল বুঝবে না তো! দরজা ঠেলে আদ্র প্রবেশ করতেই চোখ বুঁজে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলে উঠল,

” আমি আপনাকে অবিশ্বাস করি নি ডাক্তার সাহেব। বিন্দুমাত্র অবিশ্বাস করি নি, ভুল বুঝি নি। মানুষ অন্যকে অবিশ্বাস করতে পারে,আমি আমার আত্মাকে কিভাবে অবিশ্বাস করব বলুন?অন্যের মিথ্যা অথবা সত্য বাক্যে নিজের উপর বিশ্বাস হারানো যায় না। আপনি তো আমার প্রাণ, আমার অস্তিত্ব ডাক্তার সাহেব। আমি,,”

হাতে টান পড়তেই তুলির কথা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। চোখ মেলে নিজেকে আদ্রর নিকটে, খুব নিকটে আবিষ্কার করল। নীলাভ নেত্রে চক্ষু রাখতেই ভূকম্পন ন্যায় কেঁপে উঠল পুরো অন্তর। রক্ত ঝরে পড়া বাকি কেবল দু’চোখ হতে। রক্তের বদলেই হয়ত ঝরছে জল। তুলির মনে পড়ছে না আদ্র কে কখনও কাঁদতে দেখেছে কিনা!এক ফোঁটা, এক ফোঁটা করে অশ্রুকণা কখনও গড়িয়েছে কিনা!পড়নের ছাই কালার শার্ট টা কুঁচকে গেছে সম্পূর্ণ। ফর্সা মুখে বিধস্ত, ব্যাথার ছাপ স্পষ্ট প্রতীয়মান। তুলির সারা অঙ্গ ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। করুণ চাহনি নিক্ষেপ করল আদ্রর পানে। নড়বড়ে হাতে চোখের জল মুছার জন্য হাত বাড়াতেই কোমরে মৃদু চাপ অনুভব করল। উঁচুতে তুলে নিল আদ্র। ইশারা করল মুছে দিতে। তুলি কাঁপা কাঁপা হাতে চোখের জল মুছতে সক্ষম হলো। তৎপরে আদ্রর কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিজেই কেঁদে উঠল হাউমাউ করে। আদ্রের বুকের বা পাশের ব্যাথা টা হঠাৎ বৃদ্ধি পেল। অস্থির হয়ে তুলির চোখে মুখে চুমু খেল অজস্র। ললাটে ওষ্ঠযুগল ছুঁয়ে স্মিত হেসে বললো,

” আমি জানি তুমি অবিশ্বাস করো নি,তবে তোমার সান্নিধ্য না পেয়ে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল আমার। তুমি বিহীন মনে হচ্ছিল এই মুহুর্তে অস্তিত্ব ধূলিসাৎ হয়ে যাক। ট্রাস্ট মি তোমাকে আমার থেকে আলাদা করার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত কারো নেই বউ,যদি কখনও নিজেকে আমি বিহীন অনুভব করো, সেদিন হয়ত কবরে সমাহিত থাকবে আমার দেহ।”

#চলবে,,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here