মনের মানুষ❤️পর্ব-২০

0
730

#মনের_মানুষ❤️
#বিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸

ক্যামেরায় একটার পর একটা ছবি দেখে চলেছে প্রান্তিক…..প্রত্যেকটা ছবি শান্তিনিকেতনে তোলা।কাউকে না বলে ছবি তোলা অপরাধ কিন্তু প্রান্তিক সেই অপরাধ করে বিন্দুমাত্র দুঃখিত নয়…..আহেলির এই ছবিগুলো প্রায়ই প্রান্তিক দেখে।কিসুন্দর করে হেসে অনুশ্রীর সাথে কথা বলছে…..একেই বলে ক্যান্ডিড পোস।ক্যামেরাটা রেখে দিয়ে বিছানায় এসে বসে প্রান্তিক…..এপার্টমেন্টের সাততলার 3bhk ফ্ল্যাটে সম্পূর্ন একা প্রান্তিক,যদিও তাতে প্রান্তিকের আফসোস নেই।দিনের বেশিরভাগ সময়টা কেটে যায় হসপিটালে আর ফাঁক পেলেই চলে যায় মায়ের কাছে।প্রান্তিকের এই জীবনের মধ্যে হটাৎ করেই আহেলি প্রবেশ করেছে…..প্রান্তিক এরআগে বহু মেয়ের সম্মুখীন হয়েছে।ডাক্তারি করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত কতো মানুষের মুখোমুখি হয়…..তবে আহেলিকে দেখার পর থেকেই প্রান্তিক একেবারে অন্যরকম হয়ে গেছে।তবে মেয়েটা যে ওকে ভালোবাসে না সেটা প্রান্তিক ভালো করেই জানে……কাউকে ভালোবাসলে যে তার ভালোবাসাও পরিবর্তে পেতে হবে এমনটা মনে করেনা প্রান্তিক।তবুও আজকাল অবাধ্য মনটা আহেলি কে নিয়ে ভাবতে থাকে সারাদিন…..এমন কি হতে পারে না?আহেলি ভালোবাসলো প্রান্তিককে।এটা কি ভীষণ অসম্ভব কোনো কাজ?
🌸🌸🌸

ঋষভ যে হটাৎ করে কেনো আহেলি কে ডাকতে গেলো সেটা আহেলি বুঝতে পারছে না…..সেদিন ওতোকিছু বলার পরেও ছেলেটা ওর মুখোমুখি হতে চায়?কারণ কি?যা শেষ হওয়ার হয়েই গেছে….তবে কি বলবে সেটা অন্তত একবার শোনা দরকার।দুপুরের দিকে আহেলি নিজেই এলো ঋষভ এর পার্টি অফিসে……বাইরে কয়েকজন গার্ড ছাড়া আর কেউ নেই।দরজা ঠেলে আহেলি দেখলো ঋষভ একটা ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে….দরজার সামনে আহেলি কে দেখেই সোজা হয়ে বসলো আর আহেলি কে এসেও বসার কথা বললো।

সামনের চেয়ারে বসে আহেলি কিছু বলবে তার আগেই ঋষভ বললো,,

“আমি জানি তুই অবাক হয়েছিস….কিন্তু কিছু কথা তোর জানা ভীষণ দরকার।”

“এখনো কি বলার আছে?আমি সত্যিই আরকিছু শুনতে চাই না….আর হ্যাঁ ওইসব কথা তো নয়ই।”

“আই নো দ্যাট তুই ওসব কথা তুলতে চাস না…..কিন্তু পুরো ঘটনাটা জানার দরকার আছে তোর।ভেবেছিলাম ইলেকশন মেটার পর বলবো কিন্তু এখন না বললে এবার সত্যিই লেট হয়ে যাবে।তার আগে বল ছেলেটা কে?যে তোর সাথে সবসময় ঘোরে।”

“ওয়েট আ মিনিট….আমার সাথে কে ঘোরে না ঘোরে সেটা জেনে তোমার কি লাভ?আমি কোনোদিন জানতে চেয়েছি,তুমি জনসভার নামে কটা মেয়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে গেছো?”

“আহেলি……!!কিসব যাতা বলছিস তুই?”

“আমি একদম ঠিকই বলছি….কেনো?তুমি কাটাও নি কারোর সাথে সময়?”

“তুই আগে আমার থেকে সবটা শোন তারপর ব্লেম করিস আমায়।”

“আর কি বলার আছে তোমার?নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার কি কোনো উপায় পেয়ে গেছো?”

“আহেলি আমি কোনো দোষ করেনি….যেটা করেছি তা বাধ্য হয়ে দলের কথা ভেবে।”

“বাহঃ….আজকাল তোমার দল বুঝি তোমায় মেয়েদের সাথে ইন্টিমেট হওয়ার অর্ডার দিচ্ছে?এভাবেই টিকিট দেয় নাকি তোমার দল?জিগালোর থেকে ভালোই প্রফেশন।”

“আহেলি….এবার কিন্তু।”

“জাস্ট শাট আপ….একদম আমায় সামনে চিৎকার করবে না।তোমার কি মনেহলো?তুমি আমায় ডেকে এনে কতগুলো লেইম এক্সকিউস দেবে আর আমি মেনে নেবো?বাচ্ছা মেয়ে নাকি আমি?”

“আহেলি আমি শ্রেয়ার সাথে ইন্টিমেট হয়নি…..যা হয়েছে সবটাই নাটক।ওই মেয়েটা আমায় ফাঁসাতে চেয়েছিলো আর আমিও ওর পাতা ফাঁদে ধরা দেওয়ার নাটক করি যাতে ওকে প্রমানসমেত ধরতে পারি।শ্রেয়ার সাথে আমার কোনোরকম সম্পর্ক নেই…..তোকে আমি জানতে পারিনি কিন্তু এটাও ভাবিনি তুই ওরকম একটা ডিসিশন নিবি।”

ঋষভ এরকথায় ওরদিকে আহেলি কে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঋষভ শুরু থেকে সব ঘটনা খুলে বললো।আহেলি সবটা শুনে চুপ করে যাওয়ায় এবার ঋষভ বললো,,,,

“তোর যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তার প্রুফ আছে আমার কাছে…..আমি বাধ্য হয়ে এসব করেছি কিন্তু তোকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইন্টেশন ছিলো না।তুই জানিস সেদিনের পর থেকে মা অব্দি আমার সাথে ভালো করে কথা বলেনা।আমি পারছি না এভাবে থাকতে,তোর চোখে এতো অপমান,ক্ষোভ আর ঘৃণা নিজের জন্য দেখে কিছুতেই স্থির থাকতে পারছি না।”

“ওই শ্রেয়ার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই?তুমি যা করেছো তোমার পার্টির জন্য করেছো?”

আহেলির প্রশ্নে ঋষভ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,,
“হ্যাঁ….আমি আসলে ভাবিনি এরমধ্যে তুই জড়িয়ে যাবি।এবার তো তোর বিশ্বাস হলো যে আমি তোকেই ভালোবাসি…..”

ঋষভ কথাটা শেষ করার সাথে সাথে আহেলি চড় মারলো ঋষভ এর গালে।চোয়াল শক্ত করে কঠিন গলায় বললো,,,

“আর কোনদিন ভালোবাসি শব্দটা বলবে না।অন্তত আমার সামনে তো নয়ই…..তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারো না ঋষভদা।আগে সকলে বলতো তবে আজ সত্যিই তার প্রমান পেলাম।তুমি ভীষণ স্বার্থপর একজন মানুষ….আমার ভাবতে খারাপ লাগছে যে তোমার জন্য আমি নিজেকে শেষ করতে গেছিলাম,তোমার জন্য দিনের পর কষ্ট পেয়েছি…..আই জাস্ট হেট ইউ।আর কখনও তোমার মুখটা যেনো আমি নো দেখি।”

কথাগুলো শেষ করেই আহেলি বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে….ঋষভ এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহেলির যাওয়ার দিকে।
🌸🌸🌸
যখন.. নীরবে দূরে, দাঁড়াও এসে
যেখানে পথ বেঁকেছে।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
আমিও ছুটে যাই সে গভীরে
আমিও ধেয়ে যাই কি নিবিড়ে
তুমি কি মরীচিকা না ধ্রুবতারা।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা।

কানে হেডফোন লাগিয়ে নিজের কেবিনে বসে গান শুনছিলো প্রান্তিক…..পরপর দুটো অপারেশন আর ওয়ার্ড ডিউটি শেষ করে ক্লান্ত দেহটা চেয়ারে এলিয়ে বসে ছিলো।কিন্তু গানটা মাঝপথে থামাতে বাধ্য হলো প্রান্তিক….কারণ কোনোপ্রকার কথা ছাড়াই আহেলি এসে দাঁড়িয়েছে সামনে।আহেলিকে দেখেই প্রান্তিক অবাক হলো…..হটাৎ করে মেয়েটার আবার কি হলো?

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here