#মনের_মানুষ ❤️
#ত্রিংশ_পর্ব❤️
#কলমে_সাঁঝবাতি 🌸
সারাদিনের কাজ তারপর মুম্বাই অব্দি তাড়াহুড়ো করে আসা সাথে সারারাত জাগা…সবমিলিয়ে প্রান্তিকের ঘুমটা ভাঙলো বেশ দেরিতে।তবে হাতের মধ্যে কাউকে অনুভব করতেই প্রান্তিকের কপাল কুচকালো….ঘুম ঘুম চোখজোড়া মেলতেই বুকের ওপর ঘুমিয়ে থাকা আহেলিকে দেখে হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোন।তৎক্ষনাৎ মনে পরলো রাত্রে যখন ঘুমে চোখ বুজে আসছিলো তখন তো যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই ঘুমিয়ে ছিলো….তাহলে এতটা কাছাকাছি এলো কিকরে?আহেলির ঘুম ভাঙার পর যদি প্রান্তিকের সমন্ধে কোনো ভুল ধারনা জন্মেয় তখন?এসব ভাবনা মাথায় আসতেই প্রান্তিক আহেলিকে ছেড়ে উঠে বসলো…..এরমধ্যে আহেলিও ধীরে ধীরে উঠে বসলো।এলোমেলো খোলা চুল আর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ফলে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে তাকালো প্রান্তিকের দিকে……প্রান্তিক হালকা হেসে বললো,,,,
“এখন কেমন লাগছে?”
“ঠিক আছি….মাথাটা যা ধরে আছে।”
“ওটা গরম গরম চা বা কফি খেলেই কেটে যাবে….তুমি ফ্রেশ হয়ে এসে বসো।আমি চা বানিয়ে আনবো।”
“সে ঠিক আছে কিন্তু এভাবে তাড়াহুড়ো করে উঠলে কেনো?”
আহেলির কথায় প্রান্তিক ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকালো তারপর বললো,,,
“আমি কিন্তু অনেকটা দূরেই শুয়েছিলাম….তাও যে কিকরে কাছে এলাম কে জানে?”
“হ্যাঁ তুমি দূরেই ছিলে….এতটাই দূরে যে আরেকটু হলে খাট থেকে পরে যেতে।তাই আমিই টেনে আনলাম কাছে।”
আহেলির কথায় প্রান্তিক অবাক হয়ে বললো,,,
“তুমি?তুমি আমায় কাছে টেনে আনলে মানে?তুমি জানতে আমরা এতটা কাছাকাছি ছিলাম?”
“জানবো না কেনো?”
“মানে তোমার হেসিটেট ফিল হয়নি?আফটার অল আমি একটা ছেলে…..যদি কিছু হয়ে যেতো।”
প্রান্তিকের কথায় ঠোঁট চেপে হাসলো আহেলি…ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
“আমি বিশ্বাস করি তোমায়…..তাই কিছুই ফিল হয়নি।”
“কিন্তু আমি নিজেকে বিশ্বাস করিনা….”
আহেলি ভ্রূ কুঁচকে তাকাতেই প্রান্তিক এগিয়ে এলো কিছুটা।একহাতে আহেলিকে কাছে টেনে বললো,,,,
“তুমি এতটা কাছে থাকবে আর আমি গুডবয় হয়ে থাকবো এমনটা নাও হতে পারে….তখন কিন্তু আমায় বাঁধা দিলেও শুনবো না।”
আহেলির গালদুটো ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে….প্রান্তিক হাত আলগা করতেই বিছানা থেকে দ্রুত নামলো একপলক প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে কোনোরকমে ওয়াশরুমে পালালো।
প্রান্তিক ফ্রেশ হয়ে নিজের হাতে আহেলির জন্য কড়া লিকার চা করলো…..গরম চায়ের সাথে কয়েকটা বিস্কুট খাইয়ে তারপর ওষুধগুলো দিলো।আহেলির কোনোপ্রকার বারন শুনলো না প্রান্তিক।চা পর্ব মিটতে দুজনই ঘরে বসেছিলো….আহেলি জানে না প্রান্তিক কখন ফিরবে আর সেটা জিজ্ঞেস অব্দি করতে পারছে না।এবার প্রান্তিক বললো,,,
“দুপুরে কি খাবে?”
“গরম গরম চা বলেই খেতে পারলাম কিন্তু আমার মুখে কোনো স্বাদ নেই।তাই কিছুই খেতে ভালোলাগছে না।”
“এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই আহেলি।না খেলে কাল অফিস যাবে কিকরে?দুদিন তো মাত্র লিভ পেয়েছো…আর আজ রাত্রে ফিরতে হবে আমায়।তার আগে অন্তত একটু হলেও ঠিক হও….তবেই নিশ্চিন্তে ফিরতে পারবো।”
তারমানে প্রান্তিক আজই ফিরবে।আহেলি মাথা নামিয়ে নিতেই প্রান্তিক বললো,,,,
“কি হলো বলো কি খাবে?আরে সেইমতো তো বাজার করে আনতে পারবো।”
“তুমি বাজার যাবে?এখানে কিছু চেনো?”
“গুগুল ম্যাপ বলে একটা বস্তু হয় জানো?”
“আচ্ছা এসব কি করার দরকার?হোম ডেলিভারি থেকে অর্ডার করে নিলেই তো হয় নাকি?”
“না হয় না….যেটা বলছি সেটাই করবে।বলো কি খাবে?”
“আমি যা বলবো সেটাই বানাবে আমার জন্য?”
“একদম….আজ তুমি যা চাইবে তাইই হবে।”
“অফিস ক্যান্টিনে তো আমাদের ওখানের মতো মাছের ঝোল হয় না…আর আমার পক্ষে বাজার যাওয়াও হয়ে ওঠে না।তুমি বরং আমার জন্য রুই মাছের ঝোল আর ভাত করো….তাহলেই হবে।”
“ব্যাস এটুকুই?এটা আবার কোনো রান্না?দুঘন্টার মধ্যে হয়ে যাবে সব।”
কথাটা প্রান্তিক যতটা সহজে বললো কাজটা কিন্তু তত সহজে হলো না।আহেলির বিল্ডিংএর কাছাকাছি একটা বেশ বড়ো বাজার আছে…সেখানে নানান ধরনের সবজি পেলেও কোথাও রুই মাছ পেলো না প্রান্তিক।নানান ধরনের সামুদ্রিক এবং অন্যান্য সব মাছ নিয়ে বসে থাকলেও রুই মাছ কেউ দিতে পারলো না….অগত্যা প্রান্তিক ডিম এবং বাদবাকি জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে এলো।
আহেলির কোনো বারন না শুনে রান্নাঘরে ঢুকলো প্রান্তিক…..নিজের হাতেই ডিমের ঝোল আর ভাত তৈরি করলো।রান্না সেরে যখন প্রান্তিক ঘরে এলো তখন আহেলি স্নান করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত।ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ধপ করে বসতেই আহেলি ওরদিকে ফিরে হাসলো।
“তুমি হাসছো?”
“ডঃপ্রান্তিক রায়ের অবস্থা দেখলে তার যেকোনো পেশেন্ট হাসবে।”
“কখনো কখনো স্পেশাল পেশেন্টের জন্য হাসির খোরাক হতে হয়….এবার আমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসি?”
“অবশ্যই…..যা অবস্থা হয়েছে রান্না করে।মনে হচ্ছে যুদ্ধ করেছো।”
প্রান্তিক আহেলির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
নিজের হাতে ভাত মেখে আহেলির গালে তুলে দিচ্ছে প্রান্তিক….খেতে খেতে হঠাৎই টুপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পরলো আহেলির চোখ থেকে।
“কি হলো?ঝাল লেগেছে?আমি জানি তরকারি ভালো হয়নি…..আসলে এরআগে তেমন রান্না করিনি।”
প্রান্তিকের বাঁহাত ধরে আহেলি কান্নাভেজা গলায় বললো,,,
“আমার জন্য তুমি এখানে ছুটে এলে?সব নিজের হাতে করছো!এতো ভালোবাসো কেনো?”
“কলকাতায় বসে চিন্তা করার চেয়ে এখানে আসা বেটার মনে হয়েছিলো আর ভালোবাসি আমার ইচ্ছা তাই…এবার না বকে খেয়ে নাও।তোমার পর আমি খাবো।”
প্রান্তিকের কথায় আহেলি সরুচোখে তাকিয়ে খেতে লাগলো।
খাওয়ার পর দুজনই বিছানায় শুয়ে ছিলো….আহেলি প্রান্তিকের বুকের ওপর মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছে আর প্রান্তিক আহেলির চুলে আঙুল ডুবিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে।আহেলির সরু আঙুলের ডগাটা প্রান্তিকের বুকে আঁকিবুকি কাটতে শুরু করার প্রান্তিক অবাক হয়ে আহেলির দিকে তাকালো….আহেলি প্রান্তিকের আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,,,
“শুক্রবার রাত থেকে ফোন ধরলে না…..আমি তখন একবারও কি বলছিলাম যে আমি ঋষভদাকে বিশ্বাস করি,ওকে এখনো ভুলতে পারিনি।জাস্ট আমার মনে হয়েছে ওকে হয়তো কোনোভাবে ফাঁসানো হয়েছে আর সেটা শুনেই রাগ?”
“তো আর কি করতাম?সারাদিনের মধ্যে আমাদের সময়টায় কেনো আসবে ওই ছেলেটা?আমি বলেছি না ওকে তুমি আমাদের কোনো কথার মাঝে আনবে না….”
“আচ্ছা ভুল হয়েছে…..আর কোনোদিন ওর নাম অব্দি উচ্চারণ করবো না।এবার শান্তি?”
“নাহ….এখনো শান্তি হয় নি।”
বলেই আহেলিকে বিছানায় শোয়ালো।আহেলির কাছে ঝুঁকে যেতেই আহেলি আটকে দিলো….হালকা হেসে ভ্রূ নাচিয়ে প্রান্তিক বললো,,,
“কি হলো?তখন যে বললে বিশ্বাস করো?”
“করি বিশ্বাস….”
বলেই চোখ নামালো আহেলি।ধীর গলায় বললো,,,,
“এখন কিছু পসিবল নয়।”
“আমি তো জাস্ট কিস করবো ভাবলাম।তুমি কি কি ভেবেছো এরমধ্যেই?আমার কি লজ্জ্বা নাই?”
প্রান্তিকের কথায় আহেলির কানদুটো গরম হয়ে উঠলো।মুখ ফুলিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো….প্রান্তিক এবার নিজেই হেসে উঠলো।দুহাতে আহেলি কে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
“আমি আমার অধিকার সময় হলেই বুঝে নেবো ম্যাডাম…..”
আহেলির হাতদুটো প্রান্তিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে প্রান্তিক একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো।আজ সকালের পর থেকে প্রান্তিকের মনের সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কেটে গেছে।প্রান্তিক উপলব্ধি করতে পেরেছে আহেলি একমাত্র তাকেই ভালোবাসে….মেয়েটার মধ্যে আর কোনো পিছুটান নেই।আহেলির হৃদয়ের সমস্ত জায়গা জুড়ে এখন প্রান্তিকের বসবাস।
ওদের এমন মুহূর্তে আহেলির বেডরুমের সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে,,,,
এই ভালো এই খারাপ,
ওও.. প্রেম মানে মিষ্টি পাপ
চলো মানে মানে দিয়ে ফেলি ডুব
তুমি আমি মিলে।
দুজনেই মনটাকে ও..
বেঁধে ফেলি সাত পাকে
চলো ছোটখাটো করি ভুল চুক
তুমি আমি মিলে।
সাজিয়েছি ছোট্ট একফালি সুখ
রাজি আছি আজকে বৃষ্টি নামুক
তুমি আমি ভিজবো দুজনে খুব
ভরসা দিলে..
চলবে…