#নাটাই_ঘুড়ি
।।২৪।।
নাইমার সামান্য টাকা ধার চাওয়ার আবেদনে সে যে এইভাবে সাড়া দেবে তা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। কে নাইমা? কী হয় সে শাহীনের? সামান্য পরিচিত মাত্র! নাইমা তো বিয়েতে রাজিও হয়নি! একটা মানুষের মন কতটুকু বড় হলে এভাবে নাম পরিচয় গোপন রেখে সাহায্য করতে পারে?
কিন্তু যেহেতু সে আড়ালেই থাকতে চাইছে, তাকে আড়ালেই রাখবে নাইমা। সে যে তার পরিচয় বুঝে ফেলেছে সেটা তাকে জানাবে না।
কথাবার্তা শেষ করে সামনে বসা মানুষটি বেরিয়ে যেতেই ফোনটা হাতে তুলে নিল নাইমা। বাসায় বসে কথা বলার মত পরিস্থিতি নেই, অফিসে লাঞ্চ ব্রেকেই ডেকেছিল তাদের।
প্রথমেই বড় ভাইয়াকে ফোন করে সুখবরটা জানিয়ে দিল সে। তাদের বাড়ি আপাতত ক্রোক হচ্ছে না, কারণ নির্ধারিত সময়সীমার আগেই বাকি পড়া কিস্তির টাকা তাদের নামে জমা করে দিয়েছে কোনো এক অজ্ঞাতনামা শুভাকাঙ্খী।
বড় ভাইয়ের বিস্ময়মিশ্রিত আনন্দের চিৎকারের মধ্যেই ফোনটা রেখে দিল নাইমা। এবার দ্বিতীয় ফোনের পালা।
ফোন রিসিভ হওয়ার পর কাঁপা কাঁপা স্বরে নাইমা বলল, “ভালো আছেন?”
সেই পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এল ফোনের ওপার থেকে, “আছি তো! আপনারা?”
“আছি! আজকে আবার আপনি করে বলছেন কেন আমাকে?”
“সামনাসামনি তুমি চলে আসে মুখ দিয়ে, ফোনে চট করে তুমি বলে ফেলা কঠিন। কিছু লাগবে, আপনার আব্বার কাছে যেতে হবে?”
“না কিছুই লাগবে না, কেন আমি কি এতই খারাপ, এতটাই স্বার্থপর, আমি কি প্রয়োজন ছাড়া ফোন করতে পারি না আপনাকে?”
শাহীন থতমত খেয়ে বলল, “হ্যাঁ নিশ্চয়ই পারেন, পারবেন না কেন!”
“আহনাফ কেমন আছে?”
“আছে তো ভালোই!”
“আজকে বাসায় গিয়ে ওর সাথে একবার কথা বলিয়ে দেবেন আমাকে?”
“কেন? আমি তো বললাম যে আমি চাচ্ছি না সেটা, এতে করে আপনার প্রতি একটা নির্ভরশীলতা তৈরি হবে ওর! ও পরে মিস করবে আপনাকে!”
“আর যদি আমি ওর সাথেই থাকি, যদি মিস করার প্রয়োজন না হয়?”
চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলল নাইমা।
“আপনি কি…সত্যি বলছেন? আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না তাহলে!”
লজ্জায় কথা বন্ধ হয়ে গেছে নাইমার।
“নাইমা!”
নাইমা চমকে উঠে বলল, “জি!”
“আমি কি আমার বাসায় বলব যে তুমি বিয়েতে রাজি আছ?”
নাইমা কোনো মতে বলল, “বলতে পারেন।“
“আজকে অফিস থেকে বের হবে কখন?”
“আজকে? মনে হয় সাড়ে ছয়টা বেজে যাবে। আমি এখন ফোন রাখি তাহলে, লাঞ্চ আওয়ার শেষ!”
“নাইমা শোনো শোনো এক মিনিট!”
“জি বলুন।“
শাহীন গাঢ় স্বরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ নাইমা। আমি চেষ্টা করব তোমার ভালো ফ্রেণ্ড হতে। আমার মা ছাড়া বাচ্চাটার জন্য তুমি যা করলে, আমি দোয়া করি, আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাকে সুখী করবেন।“
ফোন রেখে নাইমা মনে মনে বলল, “আপনি আমার পরিবারের জন্য যা করলেন, আল্লাহ্ আপনাকেও সুখী করবেন!”
সুখী সুখী মুখে উঠে দাঁড়াল নাইমা। ম্যানেজারের রুমে গিয়ে হাসি মুখে বলল, “স্যার আমার ঢাকার ব্র্যাঞ্চে ট্রান্সফারের কত দূর?”
“আরে নাইমা, আসুন। ট্রান্সফার কি খুব জরুরি নাকি?”
“জি স্যার, সামনে আমার একটা সুখবর থাকলেও থাকতে পারে, তাই আর কী!”
একই সাথে লজ্জায় আর আনন্দের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ল নাইমার গালে।
“ওহ তাই নাকি, কংগ্র্যাচুলেশন্স! ছেলে কী করে?”
“বিজনেস করে স্যার!”
নাইমার বুকে সুখের মত ব্যথা হচ্ছে, খুব ভালো লাগছে শাহীনের সম্পর্কে প্রশ্ন শুনতে, প্রশ্নের উত্তর দিতে। আচ্ছা এটাকেই কি প্রেম বলে!
তাহলে তার আগে যেটা ছিল, সেটা কী ছিল? দূর ছাই, আর এত ভাববে না সে, এখন থেকে সব ভাবনার ভার শাহীন সাহেবের, আহনাফের আব্বুর।
না আর কোনো সংকোচ নয়, আর কোনো দ্বিধা নয়, তার এক কথায় যে মানুষটি এতগুলো টাকা জমা করে দিল, এই মানুষটির ওপরে চোখ বন্ধ করে নির্ভর করবে সে। ব্যাংক বন্ধ হয় পাঁচটায়, সাড়ে ছয়টা বাজল নাইমার সব কাজ গুছিয়ে বের হতে।
অফিস থেকে বের হওয়ার আগে পর্যন্ত নাইমার সময় যেন উড়ে উড়ে কাটল, একটা ঘোরের মধ্যে যেন সবগুলো কাজ করছে সে। অফিস থেকে বের হতে গিয়ে আরেক চমক, বাইরে সবুজ ঘাসের ওপরে লাল শার্ট পরে খেলছে যে বাচ্চাটা, তাকে পরিচিত মনে হচ্ছে যেন!
আহনাফ? কিন্তু কীভাবে, তা কী করে সম্ভব হবে!
আহনাফ মুখ তুলেই সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল, “ওই তো আন্টি এসে গেছে!”
(পরের পর্ব পেইজে আগেই পোস্ট করা হয়েছে। একই সাথে আজকে পেইজে সব পর্বের সিরিয়াল ঠিক করে দেওয়া হলো। আমার নিজের গ্রুপে বা পেইজে, কিংবা অন্যান্য সাহিত্য গ্রুপে, যে যেখানে পড়ছেন, সেখানকার সিরিয়ালে পড়লেই চলবে। সাথে থাকার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা ও প্রাণ ঢালা ভালোবাসা।)