উত্তরণ পর্ব-২

0
1537

#উত্তরণ
পর্ব_২

পরের দিন একটা নতুন দিনের শুরু۔ উজান অফিসে এসে ডিজিএম মি: পুততুন্ড এর সাথে দেখা করে۔ মি: পুততুন্ড খুব খুশি হন উজান কে দেখে۔

এর আগেও উজান কাজ করেছে মি: পুততুন্ডের সাথে হায়দ্রাবাদে থাকা কালীন۔ উজানও নিঃশ্চিন্ত হয়, নতুন বস কে হ্যান্ডেল করার থেকে পুরোনো বস কে কন্ট্রোল করা অনেক সহজ, এতে ওরই কাজের সুবিধা হবে۔

মি: পুততুন্ড ওনার পিএ মি:দত্ত কে বলেন যাতে উজানকে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেন۔ মি:দত্ত ধীরে ধীরে অফিসের সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেন۔

মি:দত্ত : আজ একটা পার্টি আছে মি: পুততুন্ড এর জন্মদিন উপলক্ষে۔ সেখানেই বাকিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো۔

উজান : এটিসি হেড মি: সমরেশ চ্যাটার্জী ও আসবেন নাকি পার্টি তে?

মি:দত্ত : (অবাক হয়ে) হ্যাঁ আসবেন۔۔۔ আপনি ওনাকে চেনেন?

উজান: না۔۔ পরিচয় নেই۔۔۔ আসলে যেকোনো এয়ারপোর্টে সেখানকার এটিসি হেড কে চেনা খুব জরুরি۔

মি:দত্ত : (মাথা নেড়ে) ঠিক বলেছেন. আজ আলাপ করিয়ে দেব. সাথে অন্য পাইলট দের সাথেও.

তারপর অফিসিয়াল কাজে দুজনে ব্যস্ত হয়ে পরে۔۔

অন্যদিকে সল্টলেকে :
এক ঝাঁ চকচকে আবাসনের বহুতল বাড়ির ফ্লাট রবীন্দ্র সঙ্গীতের মূর্ছনায় মোড়া. বাড়ির বাসিন্দা ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে একটা ফটো ফ্রেম বুকে চেপে ধরে, চোখে উদাসীনতা. বাড়ির ভেতর থেকে কেও তাকে ডাকে۔۔সুষমা দি۔۔ এই বাড়ি আর বাড়ির বাসিন্দা, দুটোর দেখাশোনার ভার ওনার উপর, সেই মি:মিত্রের সময় থেকেই. এখন তো সে এই বাড়ির একজন.

সুষমা: কোথায় গো হিয়া দিদি۔۔۔۔এসো۔۔ খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলো যে

হিয়া ব্যালকনি থেকে ভেতরে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে۔ হেলথি খাবার পছন্দ ওর. অভ্যেসটা বাবার হাত ধরেই, দুধ কর্নফ্লেক্স আর কিছু ফল ব্যস.

ব্রেকফাস্ট হয়ে গেলে হিয়া মিউজিক সিস্টেম টা বন্ধ করে টিভি অন করে. আজ ওর অফ, কাল অনেক রাতে ফিরেছে. পেশায় পাইলট ফার্স্ট অফিসার হিয়া মিত্র. এমনিতে বেশ হাসিখুশি, মিশুকে, কোপারেটিভ হিয়ার মনটা আজ বিষন্ন. মা কে হারিয়েছে অনেক ছোটবেলায়. তারপর বাবাই ছিল তার নিত্য সঙ্গী. আজ তিনিও নেই. বাবার ইচ্ছেতেই ইঞ্জিনিয়ারিং, তারপর পাইলট হওয়া. এয়ারলাইন পাইলট হয়ে এভিয়েশন ইনডাস্ট্রি তে ঢোকে সে. হিয়ার ইচ্ছে ছিলোনা ইঞ্জিনিয়ারিং করার, কিন্তু ওর ইঞ্জিনিয়ার বাবার মতে মেশিন চালাতে গেলে আগে তার সাথে বন্ধুত্ব হওয়াটা টা জরুরি.

সুষমা : আজ তাহলে কোথাও যাবার প্ল্যান নেই তো তোমার?

হিয়া : না, শুধু রাত্রে পুততুন্ড স্যারের জন্মদিনের পার্টিতে যাবো. তুমি ডিনার করে নিও.

সুষমা : কি হয়েছে বলতো তোমার? ক্যাপ্টেন কাশ্যপ এর এক্সিডেন্ট টা নিয়ে এতো কেন ভাবছো? এক্সিডেন্টে তো কারোর হাত নেই.

হিয়া : কিন্তু এক্সিডেন্ট এ যদি ধরো কারোর হাত থেকে থাকে۔۔۔ তাহলে?

সুষমা দু পা এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে পরে. ও খুব ভালো করেই হিয়াকে চেনে, শুধু শুধু যে হিয়া একথা বলছেনা সেটা বুঝতে ওর সময় লাগেনা.

সুষমা : কি বলছো গো দিদি? ক্যাপ্টেন কাশ্যপ কে তার মানে۔۔۔(আর বলতে পারেনা)

হিয়া : হুম۔۔۔সেদিন ওনার সাথেই আমার ডিউটি ছিলো. ফেরার পথে অনেক কথার মাঝে বলেছিলেন আমাকে সাবধানে থাকতে. ওনার কিছু হলে আমি আর মিসেস কাশ্যপ হয়তো বিপদে পড়তে পারি. আজ সকালে লালবাজার থেকে ইনভেস্টিগেশন অফিসার জানিয়েছেন ফরেনসিকের ধারণা এটা এক্সিডেন্ট না.

সুষমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে. হিয়ার কথা সত্যি হলে হিয়ার চারপাশে বিপদ ঘুরছে. হিয়া কে সে ছোট্ট থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে, হিয়া তার মালিক কম মেয়ে বেশি. তার ভীষণ রাগ হয় ক্যাপ্টেন কাশ্যপের উপর, কি দরকার ছিল হিয়াকে এসবের মধ্যে জড়ানোর?

উজান তৈরী হয়ে পার্টিতে পৌঁছোয় মনের মধ্যে একরাশ কৌতূহল নিয়ে, কত বছর পর আজ সে সমরেশের মুখোমুখি হবে.

ব্যাংকোয়েটে পৌঁছোয় হিয়া. ঢোকার মুখেই বিপত্তি, সজোরে কারোর সাথে ধাক্কা খায় ও. পড়ে যাবার আগেই কোনো এক বলিষ্ঠ বাহু তাকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়. প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠে চোখ খুলে সামনে উজানকে দেখে একটু অবাক হয়, এ মুখ তার অপরিচিত.

হিয়া: Thank you and apologized too.

উজান: It’s ok. Never mind. Hope you are settled now..

হিয়া মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়, তারপর দুজনেই পার্টি তে প্রবেশ করে. প্রবেশ করতেই পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পায় দুজনেই, মি: পুততুন্ড. উনি একটু অবাক হন উজান আর হিয়াকে একসাথে দেখে. তার মনের কথা পড়তে পারে দুজনেই.

উজান: আসলে ব্যাঙ্কোয়েটে ঢোকার মুখে ওনার সাথে দেখা হয়, ইনফ্যাক্ট ওনার সাথে এখনো কোনো পরিচয় হয়নি.

মি:পুততুন্ড: আরে এ হলো ফার্স্ট অফিসার হিয়া মিত্র, আর হিয়া ও হলো ক্যাপ্টেন উজান চ্যাটার্জী. উজান আমার আন্ডারে ছিল হায়দ্রাবাদে.

হিয়া আর উজান একে অপরকে মাথা নাড়িয়ে জানায়. তারপর কিছুক্ষন কথা বলার পর হিয়া “excuse me” বলে অন্যদিকে চলে যায়, আর ওদিকে উজান আর মি: পুততুন্ড কথা বলতে থাকে যদিও উজানের চোখ সর্বক্ষণ খুঁজে চলেছে সমরেশকে…

দেখা যাক কর্মক্ষেত্রে পিতা-পুত্রের পুর্ণমিলণ কেমন হয়….!!

NB:#উত্তরণ FF টা একদম ভিন্ন রকমের গল্প।বলতে পারেন ছকভাঙ্গা গল্প।আপনাদের এই নতুন ধরনের গল্প আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here