#উত্তরণ
পর্ব_১৩
হিয়া দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়, চারপাশ টা শুনসান. ও মুখ বাড়িয়ে এদিক ওদিকে দেখার চেষ্টা করে যদি কাউকে দেখা যায়, কিন্তু কাওকেই দেখতে পায়না. হঠাৎই ওর মনে হয় ওর উপর কেউ যেন নজর রাখছে. কয়েক মিনিট নেয় পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে, তারপরই সামনের দিকে পা বাড়ায়.
পা বাড়িয়েই হিয়া থেমে যায়. কয়েক ফুট দূরত্বে যেটা ওর সামনে এসে দাঁড়ায় তাকে দেখে হিয়া ওর চলৎ শক্তি হারায়. লেপার্ডটা ওর দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে. হিয়া আর ভাবতে পারেনা, পেছন ফিরে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে দৌড়োতে শুরু করে, সঙ্গে সঙ্গে লেপার্ড টাও ওকে তাড়া করে. দৌড়োতে দৌড়োতে একটা সময় হিয়ার প্রান শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসে, গতি শ্লথ হয়ে আসে, এমন সময় লেপার্ড টা হিয়াকে লক্ষ্য করে ঝাঁপ দেয়. হিয়া একবার শেষ বারের মতো সাহায্যের জন্য চিৎকার করে ওঠে.
ঘুম ভেঙে যায় হিয়ার. বিছানায় বসে হাঁপাতে থাকে. আবার সেই লেপার্ডের স্বপ্ন. এই স্বপ্নটা দেখে যতটা না ও ভয় পাচ্ছে, তার থেকেও বেশি স্বপ্নটা ভাবাচ্ছে ওকে. কি কারন থাকতে পারে এই স্বপ্নের? হিয়া নিশ্চিত ওর অবচেতন মনে এমন কিছু ধরা পড়েছে যেটা ও এখনো বুঝে উঠতে পারেনি.
হঠাৎই হিয়া খেয়াল করে যে এই রুম টা ওর অপরিচিত. ও চঞ্চল হয়ে ওঠে. তাহলে কি অঘটন টা ঘটে গেলো? ওকে শত্রুরা ধরে ফেলেছে? কিন্তু ও এখানে এলো কিভাবে? মনে করার চেষ্টা করে হিয়া. মনে পরে নীলিমার বাড়ি থেকে বেরোবার পর মি:সেনের ফোন পেয়েই ও জ্ঞান হারায়. কিন্তু তারপর? তাহলে কি তখনই ও বন্দি হয়?
এমন সময় রুমের দরজা ঠেলে যে ভেতরে আসে তাকে দেখে অবাক হয়ে যায় হিয়া.
হিয়া: ক্যাপ্টেন আপনি? আমি কোথায়?
উজান: আমার ফ্ল্যাটে.
হিয়া: তার মানে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসেন?
উজান: আমার আর কাজ কি আপনার সেবা করা ছাড়া?
হিয়া: ভালো হচ্ছেনা কিন্তু. আচ্ছা একমাত্র আমার সাথেই এই ভাবে কথা বলেন কেন আপনি? বাকিদের সাথে তো যথেষ্ট ভদ্রতা বজায় রাখেন.
উজান: যে যেটার যোগ্য তার সাথে আমি সেরকমই ব্যবহার করি.
হিয়া দুহাত কোমরে দিয়ে: মানে টা কি? আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি?
উজান দু পা এগিয়ে আসে হিয়ার দিকে: আপনি আমার পাকা ধানের গোলায় মই দিয়েছেন.
হিয়া: মানে?
উজান কোনো কথা না বলে জুসের গ্লাস টা এগিয়ে দেয় হিয়ার দিকে. হিয়া গ্লাসটা না নিয়ে গাল ফুলিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ায়. উজান হিয়ার সামনে গিয়ে জোর করে হিয়ার হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে দেয়.
উজান: অনেক করেছেন, এবার দয়া করে খেয়ে নিন. আপনার প্রেসার খুব কম. না খেলে আপনি বাড়ি যাবার পথে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়বেন. তখন কিন্তু আমার থেকে কোনোরকম সাহায্য আশা করবেন না.
হিয়া: আমি তো একবারও আপনাকে ডাকিনি. আপনি নিজেই আমাকে সাহায্য করেন আবার আমাকে কথাও শোনান. রিডিকুলাউস.
উজান হিয়াকে যুৎসই উত্তর দেবার আগেই ওর ফোন টা বেজে ওঠে. বাসবির ফোন. উজান রুম থেকে বেরিয়ে আসে.
উজান: বলো
বাসবী: কি রে, আজকাল তো দেখছি আমি কল না করলে তোর সময়ই হয়না.
উজান একটু অপ্রস্তুত হয়ে: আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম.
বাসবী: সেই۔۔۔۔এখন তো মা কে ফোন করতেই সময় হয়না.
উজান: সেরকম কিছুই না.
বাসবী: ভিডিও কল টা একসেপ্ট কর.
উজান বাসবির ভিডিও কল একসেপ্ট করে. হিয়ার অস্তিত্ব ক্ষনিকের জন্য ভুলে যায়.
উজান: দেখতে পাচ্ছ?
বাসবী: হ্যাঁ. অনেকদিন দেখিনি তোকে. আমারও তো ইচ্ছে হয় নাকি তোকে দেখতে
উজান: আমারও তো ইচ্ছে হয়
বাসবী: একবার আয় না ছুটি নিয়ে
উজান: দেখি যদি ছুটি ম্যানেজ করতে পারি. তুমি তো জানো সদ্য ট্রান্সফার হলে ছুটি পাওয়া যায়না.
এমন সময় হিয়া রুম থেকে বেরিয়ে এসে কিচেনে যায় জুসের গ্লাসটা ধুয়ে রাখার জন্য. উজান কিচেনের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকায় এবং বাসবীর উপর তার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকায় হিয়াকে লক্ষ্য করেনা. কিন্তু বাসবী ঠিক হিয়াকে আবিষ্কার করে উজানের পেছনে.
বাসবী: তা রাজা বলছি, আমি কি চলে আসবো কয়েকদিনের জন্য? তোর একা একা তো কষ্ট হয়, তাই না?
উজান সহজভাবেই উত্তর দেয়: না না আমার কোনো অসুবিধে হচ্ছেনা. আমি একদম ঠিক আছি
বাসবী: ওহ. অসুবিধে হচ্ছেনা? কেউ তাহলে তোর খেয়াল রাখছে নিশ্চয়?
উজানের এবার সন্দেহ হয় বাসবীর উপর. কি বলতে চাইছে বাসবী?
বাসবী: আলাপ টা তুই করিয়ে দিবি নাকি আমাকে নিজেকেই করতে হবে?
এবার উজানের চোখ হিয়াকে আবিষ্কার করে স্ক্রিনে. পেছন ফিরে দেখে হিয়া কিচেন পরিষ্কার করছে. বিরক্ত উজান ফোন টা নিয়েই হিয়ার কাছে গিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে.
উজান: আপনি এখানে কি করছেন?
হিয়া: দেখতেই তো পাচ্ছেন.
উজান: আপনাকে এতো বাড়াবাড়ি করতে কে বলেছে? এক মুহূর্ত শান্তি দেন না কেন আমাকে?
হিয়া: সেটা আমাকে এখানে আনার আগে আপনাকে ভাবতে হতো.
উজান: ঠিকই বলেছেন, আপনাকে রাস্তাতেই ফেলে আসা উচিৎ ছিল. এবার থেকে তাই করবো.
হিয়া একটু কৌতুকপূর্ণ চোখে উজানকে বলে: হ্যাঁ তাই করুন আগে, কারণ আমি যতক্ষণ আছি ততক্ষন শান্তির সাথে আপনার সংসার সম্ভব না.
উজান হিয়ার এই রূপ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়. সঙ্গে সঙ্গে কোনো উত্তর যোগায় না ওর মুখে. উজানকে এই ভাবে ধরাশায়ী হতে দেখে হিয়া হেসে ফেলে.
উজান: স۔সংসার? এই আ۔আপনি কি পাগল? যা মুখে আসছে বলে যাচ্ছেন. (আঙ্গুল তুলে) ভুলে যাবেননা আমি আপনার সিনিয়র.
হিয়া উজানের মুখে সামনে হাত তুলে উজানকে থামিয়ে দেয়. লাঞ্চে কি খাবো?
উজান: নিজের বাড়িতে গিয়ে যা ইচ্ছে খান.
হিয়া: মানে টা কি? এই দুপুর বেলায় আমাকে না খাইয়ে তাড়িয়ে দেবেন? এই আপনি হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করেন? আপনার তো বেসিকটাই ঠিক নেই.
উজান আবারো ক্লিন বোল্ড. উজান বুঝতে পারছেনা আজ হিয়ার কি হয়েছে. সম্পূর্ণ এক নতুন হিয়াকে আবিষ্কার করে উজান আজ. এই হিয়াকে এর আগে কখনো দেখেনি. নতুন হিয়াকে সামলাতে উজান তাই রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে.
হিয়া: ঠিক আছে আপনাকে কিছু করতে হবেনা,
আমিই করছি. ফ্রিজে কি আছে দেখি.
উজান: এই আ۔আপনি একদম ফ্রিজে হাত দেবেননা. আপনাকে কিছু করতে হবেনা.
হিয়া শ্রাগ করে: ওকে. আপনি তাহলে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে দিন.
হিয়ার কথায় উজানের এতক্ষনে বাসবির কথা মনে পড়ে…
দেখা যাক উজান কেনই বা হিয়া কে বাঁচালো–আর হিয়াই বা উজানকে কথার জালে জড়িয়ে মাত দেয়…!!