#উত্তরণ
পর্ব_৪৩
উজান অফিস থেকে বেরিয়েই হিয়ার কাছে আসে, হিয়াকে জানানো দরকার সব কিছু. উজান জানে হিয়া ওর অপেক্ষায় আছে. দরজায় নক করতেই হিয়া দরজা খোলে. হিয়াকে দেখেই উজান বোঝে ওর ধারণাই ঠিক۔۔۔
উজান: ঘুম হলো?
হিয়া: ঘুম আসেনি۔۔
উজান: কেন?
হিয়া: আপনারা যেখানের এতো চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সেখানে আমি কি করে ঘুমোই বলুন তো?
উজান: তাহলে এবার মনে হয় আপনি ঘুমোতে পারবেন۔۔۔
হিয়া উচ্ছসিত : তারমানে কোডটা ১০০% ডিকোড করে ফেলেছেন, সম্পর্ণ ইনফরমেশন পেয়ে গেছেন۔۔۔ কি তাই তো?
উজান: ইয়েস মাদমোয়াজেল۔۔۔
হিয়া উজানের মুখে এমন কিছু শোনার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি, বোঝে উজান খুব রিলাক্সড. হঠাৎই হিয়ার আরোহীর বলা কথাগুলো মনে পরে যায়۔۔۔۔ কোড রেসকিউ হলে ওদের বেরিয়ে যেতে হবে۔۔۔
হিয়া: তাহলে পরের প্ল্যান কি?
উজান: ওরা আটটা জায়গায় বোম্ব ব্লাস্ট করবে. সেই জায়গাগুলোর হদিস পেয়ে গেছি, এবার শুধু ওদের জালে ধরতে হবে. এবার সেটাই করতে যাবো. পুরোটা প্ল্যান করতে হবে. প্ল্যানিং এ বসার আগে আপনার সাথে একবার দেখা করে গেলাম۔۔
হিয়া: আপনাকে স্পটে যেতে হবে?
উজান: অবশ্যই۔۔۔۔পুরো টিম যাবে আর আমি না গেলে হবে?
হিয়ার হৃৎপিণ্ড ওখানেই যেন থেমে যায় উজান কে যেতে হবে শুনে. এরপর উজান হিয়াকে পুরো ঘটনাটা বলে কি করে ওরা কোড ডিকোড করলো. হিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে উজান বোঝে হিয়া অন্যমনস্ক. হিয়ার মনের আকাশে আজ ঘোর অমাবস্যা۔۔۔
উজান: কি ভাবছেন বলুন তো?
উজানের কথায় হিয়া বাস্তবে ফেরে: কোই۔۔۔۔কিছুনা তো. আচ্ছা কিছু খেয়েছেন?
উজান: না, আসলে তখন খিদেও পাইনি. তবে এখন পেয়েছে۔۔۔
হিয়া: এখানেই বসুন না. কিছু খেয়ে তারপর নাহয় রুমে গিয়ে রেস্ট নেবেন۔۔۔
উজানও মনে মনে হিয়ার সঙ্গ চাইছিলো তাই রাজি হয়ে যায়. ও বেরিয়ে গিয়ে আবার কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে আসে۔۔۔
হিয়া: মা জানেন?
উজান: আমার এই কাজের খবর মা জানেনা.
হিয়া: তাহলে আমি জানলাম যে (বলেই নিজের জিভ কাটে).
হিয়ার কথা শুনে উজান সরু চোখে তাকায় হিয়ার দিকে. হিয়ার জিভ কাটা টাও চোখে পড়ে উজানের. মনে মনে হাসে ও. চোখে মুখে কপট গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে۔۔
উজান: আপনি তো এই কেসে ভিক্টিম, তাই জেনেছেন. আচ্ছা মা আর আপনি এক কেন মনে হলো আপনার?
হিয়া কি উত্তর দেবে ভাবছিলো তার মধ্যেই দরজায় নক হয়. একজন একটা ট্রে টেবিলের উপর রেখে চলে যায়. হিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে, যাক এখন অন্য প্রসঙ্গ পাওয়া গেছে কথা ঘোরাবার. হিয়া তাড়াতাড়ি খাবার সার্ভ করতে যায়. হিয়ার প্রতিটা অভিব্যক্তি যে উজানের চোখের মাপকাঠিতে ধরা পড়ছিলো সেটা হিয়ার অজ্ঞাতই থেকে যায়۔۔
উজানের মনে তখন একরাশ ভালো লাগা. হিয়া অনেকবার অনেকভাবে ওকে বুঝিয়েছে নিজের অনুভুতির কথা. “ভালোবাসে” কথাটা বলেনি মুখে ঠিকই কিন্তু অনেক কিছু বলেছে যেগুলো “ভালোবাসি”র ই সমার্থক, জানে উজান. বরং ওই মুখে কিছু বলেনি. ভাবে উজান, বলেনি তো কি হয়েছে? ও কি হিয়াকে প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দেয়নি যে হিয়া ওর কাছে কি? বেস এর সবাই যদি বোঝে, বাবা মা যদি বোঝে, তাহলে হিয়াই বা বুঝবেনা কেন? পারেনা না ও অন্যদের মতো করে অকপটে নিজের মনের অবস্থা ব্যক্ত করতে. আজ হার্দিক থাকলে ওই উজানের দূত হতো۔۔
হার্দিকের কথা মনে পড়তেই উজানের ভালোলাগা হঠাৎ করেই হাহাকারে পরিণত হয়. হার্দিক শুধু ওর বন্ধু ছিলোনা, ভাইও ছিল. উজানের না বলা কথাগুলো কতো সহজে পড়ে ফেলতো হার্দিক. নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় উজান. যারা হার্দিককে ওর থেকে কেড়ে নিয়েছে তাদের নিজের হাতে চরম শাস্তি দেবে. হার্দিকের শরীরটার মতো ওদের শরীরটাকেও۔۔۔۔۔۔۔۔ রাগে উজানের চিবুক দৃঢ় হয়ে ওঠে, চোখ রক্তবর্ণ ধারন করে, সমস্ত শরীরের এবং মুখমন্ডলের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়.
হিয়া প্লেটে খাবার বেড়ে উজানকে ডাকতে যায়, কিন্তু উজানকে দেখে শিউরে ওঠে۔۔۔এ কোন উজান তার সামনে দাঁড়িয়ে? সুন্দর মুখটা এক রক্তলোলুপ শ্বাপদের চেহারা নিয়েছে ততক্ষনে. একে হিয়া এর আগে কোনোদিন প্রত্যক্ষ করেনি. ভেতরে ভেতরে একটু কেঁপে ওঠে হিয়া. উজান তখন নিজের মনে কথা বলতে বলতে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়. কয়েক সেকেন্ড ভেবে নেয় হিয়া, তারপর ধীর পায়ে উজানের কাছে এগিয়ে যায়. পেছন থেকে আলতো করে উজানের কাঁধ স্পর্শ করে. এরপর যেটা হলো হিয়া তারজন্য স্বপ্নেও প্রস্তুত ছিলোনা. হিয়ার স্পর্শ পাওয়া মাত্র পলকে উজান চমকে পেছন ফিরে একহাতে হিয়ার গলা চেপে ধরে ওকে মাটি থেকে ইঞ্চি দুয়েক ওপরে তুলে ধরে. উজানের এই গতি হয়তো শব্দের গতিকেও হার মানিয়েছিলো ওই মুহূর্তে. আতঙ্কে, বিস্ময়ে হিয়ার চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে চায়, ও ছটফট করতে থাকে উজানের মুঠোর মধ্যে, শ্বাসরোধ হয়ে আসে ওর. উজানের চোখ তখন জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড যা হিয়ার উপরই নিবদ্ধ. কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উজান আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে, কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ড তখন হিয়ার কাছে কয়েক যুগের সমান. বর্তমান পরিস্থিতি আঁচ করে চমকে ওঠে উজান, হিয়াকে ছেড়ে ছিটকে সরে দাঁড়ায় ও۔۔
হিয়া তখন মাটিতে পড়ে খাবি খাচ্ছে. উজান জলের বোতলটা নিয়ে ছুটে আসে হিয়ার কাছে. জল খেয়ে একটু স্বাভাবিক হয় হিয়া, নিজের গলায় হাত বোলাতে থাকে. ওর গলায় উজানের আঙুলের দাগ স্পষ্ট. আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে উজান. মারাত্মক অপরাধ বোধ উজানকে বাধা দেয় হিয়াকে স্পর্শ করতে, মাথা নিচু করে একটু দূরে সরে দাঁড়ায় ও. হিয়ার চোখে চোখ রাখতে অস্বস্তি হয় উজানের. হিয়া আন্দাজ করতে পারে তখন উজানের মনে কি চলছে. উজানের কাছে উঠে যেতে গিয়ে একটু টোলে যায় হিয়া. ওকে পড়ে যেতে দেখে সব ভুলে আবার ছুটে আসে উজান. আবার সেই নিরাপদ বাহুতে বন্দি হয়ে উজানের চোখে চোখ রাখে হিয়া۔۔
প্রচন্ড অস্বস্তিতে উজান জিজ্ঞাসা করে: আপনি ঠিক আছেন?
হিয়া তখনও হাঁপাচ্ছে: হুম۔۔۔۔۔ (একটু চুপ থেকে) আপনি ক্যাপ্টেন কাশ্যপের কথা ভাবছিলেন, তাই না?
উজান অবাক হয়, হিয়া কি করে বুঝলো? তাহলে কি হিয়া ঠিক ওর মনের ঠিকানা পায়?
উজান: আপনি কি করে বুঝলেন?
হিয়া হাসে: তা তো জানিনা۔۔۔শুধু এটুকু জানি যে আমি নিজের সবটুকু দিয়ে আপনাকে বোঝার চেষ্টা করি.
উজান: জানেন আমি তখন একটা মিশনে ছিলাম. আমার মিশন শেষ হবার পর হার্দিকের খবরটা হেডকোয়াটার দেয় আমাকে. হার্দিক খুব এক্সপার্ট ছিল, ওকে মারা এতো সহজ ছিলোনা. তাই ওর গাড়ির ফুয়েলে এক্সপ্লোসিভ মিশিয়ে ওকে মারে. জানেন ওর পুরো শরীরটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি۔۔۔
উজানের চোখের কোনা চিকচিক করে ওঠে. এটা হিয়ার জানা ছিলনা. ও জানতো এক্সিডেন্ট করানো হয়েছিল, কিন্তু এতো কিছু যে হয়েছিল হার্দিক কাশ্যপের সাথে সেটা ও জানতো না. ওর চোখ জলে ভোরে যায়۔۔۔
দেখা যাক হিয়ার অব্যাক্ত ভালোবাসা কিভাবে—পরিনতি পায়—!!
(কপিবাজ পাবলিক আপনাদের ডিনার কম্পিলিট হলে তাড়াতাড়ি চলে আসুন কপি করতে🥴🥴🥴)