স্মৃতির দেয়াল🍁 পর্ব-১৬

0
866

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_১৬
Writer -Afnan Lara
.
হিয়া সোফা থেকে উঠে হাঁটা ধরেছে দেখে মুন ও উঠে গেলো
নীল সাকিবকে এক্সকিউজ মি বলে মুনের পিছু পিছু গেছে
হিয়া করিডোরের শেষ প্রান্তে,মানে সে নীলের রুমের দিকে যাচ্ছে
মুন সবেমাত্র করিডোরের দিকে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই নীল ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আনলো
.
আরে!কি হয়েছে?
.
হিয়াকে যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলেছো তো তোমার খবর করি দিবো
.
কি বলবো আমি??বরং এটা ভাবেন উনি আমাকে কি ওলটপালট কথা না বলে বসে
.
নীল মুনের হাতে চাপ দিয়ে বললো”আমার হিয়া এরকম চালাক না,,তুমি বেশি চালাক,তোমার মুখ থেকেই উল্টা পাল্টা কথা বের হতে পারে
.
আপনার লজ্জা করে না?নিজের বউকে বলছেন আপনার প্রাক্তনের সাথে ঠিকঠাক হয়ে কথা বলতে
একটা কাজ করেন বরং,ওরেও বিয়ে করে নিন
তারপর আমাকে আর সাকিবকে কাজী ধরিয়ে দেন,আমরাও বিয়েটা করি ফেলি,সব মাইনাস হয়ে যাক
.
নীল মুনের কাঁধে দুহাত দিয়ে ধরতেই হিয়া সামনে এসে দাঁড়ালো
ওরা যে ঝগড়া করছিলো তা দেখে বোঝায় যাচ্ছে না কারণ দুজন দুজনের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে
হিয়া চোখ কপালে তুলে ওদের দিকে চেয়ে আছে,নীলের হাত মুনের কাঁধ স্পর্শ করে আছে হিয়া সেটার দিকেই চেয়ে আছে
.
মুন আর নীল দুজনে দুই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
নীল মাথা চুলকিয়ে কেটে পড়েছে কয়েক সেকেন্ডের ভিতর
হিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো”নীল কি তোমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলো?নাকি এরেঞ্জ ম্যারেজ?”
.
মুন এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর হিয়ার দিকে চেয়ে বললো”ঠিক বলতে পারি না,আমাকে তো উনি চিনেন কয়েকদিন হলো,একদিন হঠাৎ করে আমাকে জোর করে বিয়ে করে ফেললেন”
.
হিয়া কপাল কুঁচকে নীলের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”নীলের পরিবার মেনে নিয়েছে তোমাকে?”
.
মুন মুখটা ফুলিয়ে হিয়ার হাঁটাচলা দেখছে,হিয়া এমন করে হাঁটছে যেন এই বাড়ি ওর,যে রুমে যাচ্ছে সে রুম নীলের,এবং নীল তার স্বামী
.
আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি
.
মুন হালকা কেশে বললো”উনারা তো সবার আগে আমাকে মনোনীত করেছিলেন,উনি বিয়ের কথা বলায় উনারা এক পায়ে খাড়া হয়ে গেলেন”
.
হিয়া থেমে গিয়ে পিছন ফিরে বললো”হানিমুনে যাচ্ছো কোথায়?”
.
সরকারি চাকুরিজীবি মানুষরা ছুটি পাইতে দেরি হয়,উনারও হয়ত দেরি হবে
.
তাহলে যাচ্ছো?
.
বিয়ের পর তো যেতেই হয়,এসব কি প্রশ্ন করেন আপু,,আমার হাসি পায়,আপনার কি নতুন বিয়ে হয়েছে?
.
হিয়া নীলের বিছানার দিকে চেয়ে রইলো তারপর মুখটা ভার করে সেপাশে বসে বললো”এই সব আমার হতো কিন্তু হলো না”
.
মুনের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে হিয়ার এমন অধিকারবোধ দেখে তাও রাগ দমিয়ে সে বললো”আপনাদের লাভ স্টোরি শুনে দুমিনিট কেঁদেছিলাম,সরি,দুই দিন কেঁদেছিলাম”
.
হিয়া অবাক হয়ে বললো”তুমি সব জানো?”
.
উনি তো সোজা প্রকৃতির মানুষ,সব বলে দিছে
.
কিস করেছিলো সেটাও বলেছে?
.
মুন ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো,হাতটা স্লিপ খেয়ে পড়েই যাচ্ছিলো কথাটা শুনে এরপর কেশে বললো”কিস?”
.
হিয়া মুচকি হেসে বললো”তাহলে বলেনি বুঝি??বউয়ের কাছে ভার্জিন সাজছে,ভালো ভালো”
.
মুনের মন চাচ্ছে হিয়ার আর নীলের চুল ধরে একসাথে ঘুরাইতে
আমার কপালেই এমন জুটতে গেছে,অসভ্য লোক একটা,আজকেই ডিভোর্স দিব বেয়াদবটারে
.
আমি সাকিবকে আজও সেই ভালোবাসা দিতে পারিনি যেটা ওর প্রাপ্য,জাস্ট কেয়ারটা করি আমি,কারণ আর যতই হোক হাসবেন্ড তো
.
মুনের গা জ্বলছে কিস কথাটা শুনার পর থেকে
.
নীল পায়ের উপর পা তুলে সাকিবের মুখের দিকে চেয়ে আছে
সাকিব চা খেতে খেতে বললো”হিয়া আজও তোমাকে ভালোবাসে”
.
নীল পা টা নামিয়ে নিয়ে অবাক চোখে চেয়ে বললো”মজা করছো?”
.
এসব নিয়ে কিসের মজা করবো আমি??ও আমাকে সেই ভালোবাসার ভাগিদার বানায় নাই যে ভালোবাসা তোমাকে দিতো
.
নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো”আস্তে আস্তে মানিয়ে নেও ওকে,ওকে বুঝলে দেখবে পুরোটা সহজ”
.
ও আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখে কিন্তু কোথায় যেন দিনশেষে কমতি খুঁজে পাই আমি
.
হিয়া রুম থেকে এসে বললো”চলো যাই”
.
নীল মুখ তুলে হিয়ার দিকে তাকালো,হিয়া মুখটা ফ্যাকাসে করে রেখেছে,নীল ওর দিকেই চেয়ে আছে,হাতটা বারবার ওর হাত ছোঁয়ার জন্য কাঁপছে
মুন কোমড়ে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে নীলের চাহনি দেখছে হিয়ার প্রতি
রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে হনহনিয়ে চলে গেলো সে নিজের রুমে
নীল হিয়ার চলে যাওয়া দেখছে,সাকিব কারের দরজা খুলে দাঁড়ালো,হিয়া নীলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকে গেছে
নীল হাত ভাঁজ করে বললো”মুন??হিয়া কি বলেছে তোমাকে”
.
মুন বারান্দায়,এখানে নেই,তার খুব কষ্ট হচ্ছে,কষ্ট হবারই কথা,,নিজের বিয়ে করা স্বামীর প্রাক্তন এসে যদি বলে অতীতে সে তাকে কিস করেছিলো এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না,লোকটাকে আমি ভালোবাসি না,পছন্দ করি না সেটা আলাদা কথা,এখন তো সে আমার স্বামী,তাহলে কেন তার বিয়ে করা স্ত্রী হয়ে ও আমাকে এসব সয্য করতে হবে??আমার প্রতি কি তার একটুও দায়িত্ব নেই?
.
নীল যখন দেখলো মুন পাশে নেই সে রুমের দিকে আসলো,মুন চোখ মুছে পিছন ফিরতেই দেখলো নীল রুমে ঢুকছে
.
কি হলো?এখানে কি করছো?আমি আরও তোমাকে ড্রয়িং রুমে খুঁজছিলাম
.
মুন চোখটা অগ্নি বর্ণ করে বললো”তো কি করতাম?আপনার সো কলড্ প্রাক্তন কে কোলে করে নিয়ে গাড়ীতে তুলে দিয়ে আসতাম??”
.
ও চলে গেছে,এভাবে বলার কি আছে?
.
তো কিভাবে বলবো??এটা কোন ধরনের রীতি?বিয়ের পর আপনার প্রাক্তন কেন আসবে বাসায়?কেন সে আপনার স্ত্রীকে এত প্রশ্ন করবে?
.
কি বলেছে ও?
.
আপনি নাকি উনাকে ঐভাবে টাচ করেননি তাহলে উনি যে বললো কিস ও করেছেন
.
হিয়া তোমাকে এটা বলেছে?
.
হ্যাঁ বলেছে,আপনি এত মিথ্যা বলেন জানা ছিল না আমার
.
আমি ওকে কিস করিনি
.
আপনি!
.
মুন হাঁপিয়ে গেছে চেঁচিয়ে কথা বলতে বলতে,ছোট থেকেই উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে না সে,এখনও তাই,মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো সে
নীল কাছে এসে বললো”রেডি হয়ে নাও,শপিংয়ে যাব,মা বলেছে তোমাকে কিছু কিনে দিতে”
.
যাব না আমি,আপনার মতন একটা লোক কিনা আমার স্বামী,না জানি আর কি কি করেছেন ঐ হিয়ার সাথে
.
শুনো মুন!আমি কিছুই করিনি,কিস ও না,হিয়া কেন এটা বললো আমি বুঝলাম না,হিয়া কখনও মিথ্যা বলে না,তাহলে এটা কেন বললো আজ সেটা মাথায় ধরছে না আমার,আমি ওকে একটা সিঙ্গেল চুমু পর্যন্ত দি নাই কেনোদিন,আর কিস তো দূরের কথা
.
তাহলে মানছেন আপনার কলিজার টুকরা ডাহা মিথ্যা কথা কয়?তাও কাকে?আপনার বউকে
এটা কেন বলছে জানেন?যাতে আমি আপনার কাছাকাছি না ঘেঁষি
.
হিয়া এখনও আমাকে ভালোবাসে তাই জেলাস ফিল করে
.
বের হোন রুম থেকে,দুটোই একই ক্যাটাগরির,আমার মেজাজ গরম হয়ে আছে আর উনি আমার হিয়া আমার বিয়া,আমার পিয়া করে মরতাছে,বের হোন আপনি রুম থেকে,আমাকে একা থাকতে দিন
.
কিস যদি করেও থাকি তোমার কি???তোমাকে তো করবো না কোনোদিন
.
আমার বয়েই গেছে আপনার থেকে কিস পাবার আশা করার,আপনাকে আমি কালই ডিভোর্স দিব,এরকম একটা লোকের সংসার আমি আর একদিনও করতে পারবো না
মনে হয় আমাকে বিয়ে করেছে লোক দেখানো, ভিতরে ভিতরে ঐ পিয়ার থুরি হিয়ার সাথে ইটিশপিটিশ সব চলবে
.
হিয়াকে নিয়ে কিছু বলাবা না তুমি,টপিক বাদ
.
ওকে নিয়েই তো সবটা
এই যে বিয়ের দুদিন পর আপনার আর আমার মাঝের এই দূরুত্বটা দেখতে পাচ্ছেন এটার মাঝখানে হিয়া বসে আছে
যেদিন ওর ভূত আপনার মাথা থেকে নামাবেন সেদিন আমাকে বলবেন,তার আগে আমি আপনার সাথে সংসার করবো না
আমি কালই আমার ঐ দজ্জাল মায়ের কাছে ফেরত যাব
আপনার আর আর হিয়ার এসব নাটক দেখা থেকে তো বাঁচবো আমি
.
আমাকে রাগ দেখাচ্ছো কেন তুমি?হিয়া যখন এতকিছু বললো পাল্টা জবাব দিতে পারলে না??
.
আমি দেবো পাল্টা জবাব??আপনি আমার কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন আপনার কলিজার টুকরার সাথে যেন ঠিক ব্যবহার করি,সিম্পল খোঁচা মেরে একটা কথা বললে আপনার হিয়া যদি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যাইতো?তখন আমাকে তো আপনি ফাঁসির কেসে ফেলতেন
.
মুন প্লিস,কথা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো,ও আমার কলিজার টুকরা না,এমন করে কথা বলা অফ দাও
.
মুন চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো”কথার জবাব দিতে পারি না বলে সৎ মায়ের মার খেয়েছি এতদিন আর এখন বিয়ের পরেও শান্তি নাই আমার,আমাকে কোন পাপের শাস্তি দিতে আপনি বিয়ে করলেন?এর চেয়ে তো আমার মরে যাওয়াই দরকার ছিল
.
মুন!!তোমাকে আমি বিয়ে করেছি তোমার দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে,তোমার সব দায়িত্ব আমার এখন থেকে
.
আজকে দেখলাম তো সব,আমি একটু কম ফর্সা বলে আমাকে পছন্দ হয় না আপনার??
.
সেটা না
.
তাহলে কি?নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসতে আপনার এত কিসের সমস্যা?
.
আমি তোমাকে সাফ সাফ বলে দিয়েছি এটা আশা করবা না,রইলো কথা হিয়ার,হিয়া আর আসবে না এই বাসায়,এমনি দেখতে এসেছিলো আমার ওয়াইফকে
.
কাল পরশু আবার আসবে দেখিয়েন
.
এখন রেডি হয়ে নাও
.
নাহ,আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না,আমি কাল সকালে আমার বাসায় ফিরে যাব,এরকম করে সংসার করার নাটক আমি করতে পারবো না
.
নীল রেগে মেগে নিজের অফিসের পোশাকটা পরে চলে গেলো বাসা থেকে
মুন গাল ফুলিয়ে বসে আছে,নীল চলে যেতেই ফিক করে হেসে দিলো
একটু শুকনা তাওয়ায় টেলে দেখলাম স্মৃতির দেয়াল সরানো যায় কিনা,যা বুঝলাম ইট একটা নড়ে উঠলো,তার মানেটা হচ্ছে দেয়াল সরানো তেমন অসাধ্য ও নয়,একটু কাঠখড় পোড়াতে হবে এই আর কি
আর হিয়া যে বললো কিস করার কথা,নীলের কথা শুনে তো মনে হলো নীল সত্যি কথা বলছে
হিয়া মেয়েটাকে ভালো মনে করেছিলাম কিন্তু নাহ এ দেখি পুরো আগুন ধরানোর দেশলাইকাঠি
বিয়ের কদিনেই মধ্যেই ভেজাল লাগাইতে আসছে,মানে জামাই ও রাখবে আবার প্রাক্তনকেও রাখবে
এসব মেয়েদের জন্য আমার মতন সহজ সরল মেয়েরা বন্যার জলে ভেসে যায়
কিন্তু নাহ,মুন তোমাকে স্ট্রং হতে হবে,নীল নিজ থেকে তোমার হবে না, তোমাকে যুদ্ধ করতে হবে
কিন্তু এক মিনিট!আমি কেন ঐ লোকটার জন্য যুদ্ধ করবো,উনাকে তো আমার একটুও পছন্দ না,অসভ্য একটা লোক উনি,আরে আমি শপিংয়ে যাব না বললাম,জোর করেও তো নিতে পারতো???কোলে করে?
নাহ সেটা কেন করবে,আমি তো হিয়া না
.
ঐঐঐঐঐঐঐঐঐঐঐঐঐঐ
.
ঐ শুনে মুন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,নীল তার জিপের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
বললাম না যাব না„কোলে করে নিলেও যাব না হুহ
.
তোমাকে কোলে নিতে বয়ে গেছে আমার,চুপচাপ চলো নাহলে!!
.
নাহলে কি?
.
স্বামীর সাথে হুদাই ঝগড়া করে ডিভোর্সের ভয় দেখানোর অপরাধে জেলে পুরবো তোমায়
.
মুন চোখ বড় করে বললো”আপনার সাহস তো কম না”
.
সাহসের দেখছো কি?আসবা নাকি হ্যান্ডকাফ নিয়ে উপরে আসতাম??
.
আসেন না আসেন!!আপনার হিয়াও আজ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না
.
নীল জিপে মাথা ঠুকরিয়ে বললো”আবার হিয়া!এই জন্য বুঝি নিজের বিয়ে করা বউকে প্রাক্তনের কথা বলতে নেই!”
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here