স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২১
Writer -Afnan Lara
.
সবাই একসাথে ডিনার করতে এসেছে,,নীল ভাবীদের সাথে চোখ মেলাতে পারছে না কিছুতেই
ভুলে একবার তাকিয়ে ছিলো,চেয়েই দেখেছিলো তারা হাসাহাসি করছে সবাই
মুন বোকার মতন এক কোণে বসে আছে আরাফকে কোলে নিয়ে
আরাফ হলো পপি ভাবীর ছোট ছেলে,সে মুনকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছে যার কারণ মুনের কোল থেকে নামতে চাচ্ছে না
যে যার মতন ডিনার সেরে রাজ্যের গল্প করে চলে গেছে ঘুমাতে
মুন রান্নাঘরে এসে গ্লাসে গরুর দুধ ঢালছে বোতল থেকে,,এই বাসার সবাই নাকি রাতে শোয়ার আগে ভাত না খেলেও এক গ্লাস খাঁটি গরুর দুধ খায়
এই দায়িত্ব আজ মুনের ঘাড়ে পড়েছে আর তাই সে এখন তাই করছে,নাহার কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে
মুন চিনি দিয়ে গুলে দিলে সে সবার রুমে রুমে গিয়ে দিয়ে আসবে
মুন নাহারকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিতেই নাহার বললো নীল ও নাকি খায়
মুন তাই হাতে করে এক গ্লাস নিয়ে গেলো,নীল বারান্দায় এসে চুপ করে বাগানের দিকে তাকিয়ে ছিলো এতক্ষণ
মুন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বললো”নিন!!আপনার দুধ!”
.
নীল কপাল কুঁচকে পিছন ফিরে তাকালো,মেয়েটা এত শয়তান তা আগে জানা ছিলো না,আমার দুধ মানে?
.
মুন ভাবছে মাত্র সে কি বললো,কথাটার মানে বুঝে নিজেই বেক্কল হয়ে গেছে,মাথা চুলকিয়ে পিছন ফিরে ছুটলো নিপার রুমের দিকে,নীলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে ও এই কথা বলার শাস্তিস্বরুপ না জানি কি করে বসে
.
নীল গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুনের পিছু পিছু করিডোর পর্যন্ত এসে বললো”কোথায় যাচ্ছো??”
.
মুন থেমে গিয়ে পিছনে না তাকিয়েই বললো”নিপা আপুর রুমে,,বলেছিলাম না?”
.
এখনও জেদ??আমার জেদ তোমাকে দেখাই না বলে তুমি একের পর এক জেদ দেখিয়েই চলেছো,ফাইন,আমি আর কোনো কিছুতেই তোমাকে আটকাবো না,যাও নিপার রুমেই ঘুমাও
.
নীল চলে গেলো তার রুমের ভেতর,মুনের রাগ হচ্ছে,আবার নিজেই নিজেকে ঠাটিয়ে এক চড় মারতে ইচ্ছে করছে
সে ভেবেছিলো নিপার রুমে রাগ করে ঘুমাতে আসলে নীল হয়ত ওকে মানিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফেরত নিয়ে যাবে,কিন্তু তা আর হলো কই,এই ব্যাটা আমাকে নিপা আপুর রুমে ঘুমানোর সোজাসাপ্টা পারমিশনই দিয়ে দিছে
ধুর ধুর!
♣
নীল হাতের গ্লাসের দুধ শেষ করে টেবিলে সেটা রেখে দিলো,,আয়নার কাছে এসে বড় করে একটা শ্বাস নিলো সে
অনেকদিন জিমে যাওয়া হয় না,জিমে না গেলে যেই বডি আগে ছিল তেমনটা হয়ে যায়,ফিটনেস গায়েব
নিয়মিত জিমে যেতে হবে,বিয়ের চক্করে অনেক হেভিট আমার এতদিন অফ হয়ে ছিলো
এই মেয়েটা সারাক্ষণ আমাকে ব্যস্ত রাখে,শান্তিতে একটু জিরোতেও দেয় না,কিছু ভাবতে দেয় না,মনে হয় একটা দিন আসবে যেদিন আমি হিয়ার নামটা মনে করার সময় ও পাবো না
সেই দিন যেন না আসে,মেয়েটাকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি
.
এএএএএএই
!
নীল মুনের হাত ধরে ফেললো,মুন দরজা খুলে চরকার মতন ঘুরতে ঘুরতে বিছানায় পড়ে যাচ্ছিলো,ঠিক সময়ে নীল ধরে ফেলেছে
.
কি হয়েছে তোমার?মাত্রই তো খুব রাগ আর জেদ দেখিয়ে নিপার রুমে গেছিলে তা আবার ফেরত এলে কেন?তাও দেখে মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে তোমায়
.
আমি মোটেও মাতাল নই বুঝছো পুলিশ?
.
তাহলে এমন হেলেদুলে হাঁটছো কেন?
.
ঐ মিষ্টিপান খাওয়ার শখ জাগছিলো বলে খেয়েছি,আপনার কোনো সমস্যা?? আর আমি আপনার রুমে এমনি এমনি আসি নাই
নিপা আপুর বালিশ শক্ত অনেক,আমার বালিশ নিতে এসেছি
আপনার সাথে এক রুমে থাকার শখ নেই আমার
.
নাও ধরো বালিশ,যাও এখন
.
মুন ঠোঁটে লেগে থাকা পান হাতের কুনুই দিয়ে মুছে নীলের দিকে চেয়ে থাকলো
নীল ব্রু কুঁচকে বললো”সেই আশা করো না!! ভুলেও না”
.
আমার বয়ে গেছে,হিয়াকে কিস করা ছেলের ঠোঁট থেকে আবার কিস আশা করার
পান লেগেছে বলে মুচেছি,অন্য কোনো হাসবেন্ড হলে সুন্দর করে মুছে দিতো
হুহ!
.
মুন চলে গেলো বালিশ নিয়ে
নীল মুন চলে যেতেই লাইট অফ করে সেও বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়েছে
.
মুন বলািশ নিয়ে নিপার রুমে যাওয়ার সময় উর্মি ভাবী দেখলেন ওকে,তিনি সোজা গেলেন মায়ের রুমে
মা হাতে ভেসলিন লাগাচ্ছিলেন তখন
বারো মাসই তার হাত উসকোখুশকো থাকে
.
মা আসবো?
.
আরে উর্মি যে,আসো
.
বাবা কোথায়?
.
উনি তো বাথরুমে, কেন কি হয়েছে?
.
মা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমি মাত্র মুনতাহা কে দেখলাম বালিশ নিয়ে নিপার রুমের দিকে যেতে
ওরা কি আলাদা শোয়??এন্ড আই এম সিউর নীল ওকে বলেছে আলাদা শুতে
.
হুম,নীলেরই কাজ এটা,আমি কি করবো বলো,আমার মাথায় ধরে না,মেয়েটাকে মানতে যদি তোর এতই প্রব্লেম তাহলে ওকে জোর করে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো
.
আমার মনে হয় আমাদের সবার মিলে ওকে বুঝানো উচিত
.
তোমার কি মনে হয় আমি ওকে বুঝাই না,আজ ৩টা বছর ধরে বুঝাচ্ছি কিন্তু সে তো হিয়াকে ছাড়া আর কিছুই বুঝে না
.
মুনের উচিত হালটা আরও ঘাড়ো করে ধরার,মেয়ে মানুষই পারে একটা পুরুষকে বদলাতে
.
হুমম,কিন্তু মুন তো উল্টা,নীল ওকেনকিছু বললে ও রেগে যায়
.
দাঁড়ান আমি কিছু করছি
.
উর্মি ভাবী হনহনিয়ে নীলের রুমের কাছে আসলেন,দরজায় কয়েকবার নক করতেই নীল এসে দরজা খুললো
.
নীল??মুন তো মনে হয় তোমার রুমে নেই,জলদি করে ওকে তোমার রুমে নিয়ে আসো,তোমার ভাইয়া এদিকেই আসছে
.
কিহ!ভাইয়া এদিকে আসছে কেন?
.
কি জানি,বললো তোমার আর মুনের সাথে কিসের কথা আছে
.
আচ্ছা!
.
নীল গেলো নিপার রুমে,মুন গাল ফুলিয়ে খাটের এক কোণায় বসে আছে
.
চলো আমার রুমে
.
আমি আপনার রুমে যাব না
.
ভাইয়া আমার রুমে আসতেছে,এভাবে তোমাকে আমাকে আলাদা রুমে দেখলে নির্ঘাত সন্দেহ করবে
.
আমার কি?
.
নীল রেগে মুনের কানে টেনে ধরে বললো”সোজা কথায় ঘি না উঠলে আঙ্গুল ব্যাকাতে হয়,আমি সেটা আজ বুঝলাম”
.
লাগছে,ছাড়ুন আমার কান
.
নীল মুনের কান টেনে ওকে রুমে নিয়ে আসলো,উর্মি ভাবী হাসছেন লুকিয়ে থেকে
নীল আর মুন রুমে ঢুকতেই তিনি বাহিরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললেন
.
একি দরজা লাগালো কে?
.
কই আপনার ভাইয়া?মিথ্যা কথার জায়গা পান না?
.
ভাবী এসে বলেছিলো,নিশ্চয় ভাবী দরজা লাগিয়ে চলে গেছেন
সবাইকে তোমার সাইডে করে নিছো তাই না?
.
ভালো মানুষের পক্ষে সবাই থাকে
.
তার মানে আমি খারাপ?
.
আপনি অনেক অনেক খারাপ
.
নীল মুনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকলো,মুন চুপচাপ বিছানায় বসে বললো”নিপা আপুর রুমে ঠিক ছিলাম,আমাকে কি শান্তিতে ঘুমোতেও দিবেন না?”
.
আমার এত বড় খাট,১৪জন একসাথে শুলেও কেউ কারোর গায়ের সাথে লাগবে না,এখানে ঘুমালে তোমার কি প্রব্লেম?
.
হিয়া আপনাকে কিছু বলে না?এই যে আমরা একি বিছানায় শুই,কবে জানি বাচ্চার মা হয়ে যাই
.
নীল হাতের কব্জি ডলে বললো”আবার হিয়া?”
.
মুন একটু পিছিয়ে বললো”আচ্ছা মনে পড়েছে তখন কি করছিলেন,,আর নাম নিব না ঐ খালার”
.
নীল এক পাশে বসে নিজের রাগটাকে সামলিয়ে শুয়ে পড়লো চুপচাপ
মুন উঁকি দিয়ে নীলকে দেখছে ঘুমিয়েছে কিনা,,নীল চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শুধু
মুন এপাশ ওপাশ করে নিজেও শুয়ে পড়লো,,ভেবেছিলো একরাত নীলের সাথে না ঘুমিয়ে ওকে টাইট দিবে,কিন্তু তা আর হলো কই
যাই ভাবি তাতেই কে জানি আসি পানি ঢেলে চলে যায়,ধুর ভাল্লাগে না
.
এত জোরে মনে মনে কথা বলছো কেন?
.
মুন মুখটা তুলে বললো”আমার মনের কথা বুঝেন?আমি তাহলে ধন্য!!ধন্য!!
.
নীল মুনের দিকে ফিরে হাত ভাঁজ করে বললো”তুমি ঝগড়া ছাড়া আর কিছু পারো না?”
.
অনেক কিছু পারি,তবে আপনার সাথে দেখানো জরুরি মনে করি না,কারণ আপনার তো হি…..
.
হি?
.
থাক বললাম না,ঘুমান,সকালে উঠে ওর কথা মনে করে অফিসে যাইয়েন,দিনটা খরমুজের মতন যাবে
.
মুন আরেকদিকে ফিরে গেলো,নীল ভাবলো মুনের রাগ ভাঙ্গাবে তা আর হলো না,মুন এখন এমন অবস্থায় আছে যে ওকে কিছু বুঝালেও ও বুঝতে চাইবে না
ওর মাথায় সুঁই সুতো দিয়ে গেঁথে গেছে নীল হিয়াকে ভালোবাসে,আর কাউকে কখনও বাসবে না
.
পরেরদিন সকাল সকাল মুন গেছে গোসল করতে
এরা জানে আমরা একে অপরকে সহ্য করতে পারি না
তাও প্রতিদিন গোসল করেছি কিনা সেটা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে,মন চায় দেখাতে যে দেখো আমরা সারাদিন একটা আরেকটার মাথার চুল ছিঁড়ি,আমাদের মাঝে মিল মোহাব্বত নাই,তাইলে গোসল করবো কেন??দুজন সুখী স্বামী স্ত্রী ফরজ গোসল করে,সেটা তাদের উপর ফরজ
.
মুন মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে গোসল করে বের হলো
নীল এখনও বেঘোর ঘুমে
মুন নীলের এমন সুখ দেখে তেলেবেগুনে জ্বলছে
নীলকে তো আর কেউ গোসল নিয়ে কিছু বলে না,বলে তো শুধু আমাকে
আরে তোমরা দেখো না,এই নীলের জন্য আমাকে দিনের বেশিরভাগ সময়ে নিপা আপুর রুমে থাকতে হয়
তাহলে আমাদের মাঝে প্রেম পিরিতি আছে সেটা তোমরা সিউর কেমনে??
.
মুন চুলগুলো হাতের মুঠোয় এনে নীলের গায়ের দিকে এক ঝাড়া দিয়ে উধাও হয়ে গেলো নিমিষেই
নীল হাত আর পিঠ মুছতে মুছতে উঠে বসলো
এটা যে মুনের কাজ তা উঠার সাথে সাথেই টের পেয়েছে সে
কারণ মুন যে শাওয়ার জেল ইউজ করে তার স্মেলের সাথে নীল পরিচিত
বিছানা থেকে নেমে সে এদিক ওদিক তাকালো
মুন করিডোরে লুকিয়ে ছিলো এতক্ষণ ধরে
নীল দরজার ফাঁকে মুনোর হাত দেখতে পেয়ে সেদিকে গিয়ে মুনের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এনে বললো”শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম তা তোমার হজম হচ্ছিলো না?”
.
মুন হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বললো”হজম না হওয়ার কি আছে,চুল ভিজা বলে ঝেড়েছি,আপনার গায়ে পড়লে আমি কি করবো?”
.
পানি আমার গায়ে পড়েছে তা কি আমি তোমায় বলেছি?তাহলে তুমি জানলে কি করে?
.
মুন হালকা কেশে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে
নীলের ফোন বাজছে ক্রমাগত
ওয়ারড্রবের উপর থেকে ফোন নিয়ে মুনের দিকে তাকিয়েই কানে ধরলো সে
ঠিক সেসময়ো মুন নীলের হাতে কামড় বসিয়ে এক দৌড় মেরেছে
নীল ফোনটা ফেলে মুনকে ভালোমতন ধরে আটকে ফেললো
.
আমার থেকে পালাবে??কে বাঁচাবে তোমায়?এত দুষ্টুমি কে শিখিয়েছে তোমাকে,আজ তোমার একদিন কি আমার যতদিন লাগে
একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে কিনা পুলিশ অফিসারকে জ্বালাতন করো,, তোমাকে এর শাস্তি আজ দেবোই
.
কি করবেন আপনি,হাত ছাড়ুন নাহলে চেঁচাবো
.
হিয়া সবটা শুনছে,কলটা ওরই ছিলো,নীল মুনের হাত ধরে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো”আমার ১০টা শার্ট আইরন করে দিবা,এটা তোমার শাস্তি”
.
আমি পারবো না আপনার ঐ হিয়াকে বলেন
.
নীল মুনের মুখ চেপে ধরে বললো”আবারও বলো ঐ নাম,তোমাকে ঐ নাম নিতে মানা করি নাই?”
.
হযবরললললএবিসিডি
.
অক্ষর উচ্চারণ করছো কেন?কথা বলা ভুলে গেছো নাকি?
.
এভাবে মুখ টিপে ধরলে কথা বলবো কি করে?আপনি আমাকে এমন টর্চার করেন কেন,আমাকে কি জেলখানার চোর ডাকাত পেয়েছেন?
.
তুমি তো তাদের ও হার মানাবে,আমাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়েছিলা না?দাঁড়াও,,দেখাচ্ছি খরমুজের মতন দিন কাটানো কাকে বলে
চলবে♥