স্মৃতির দেয়াল🍁 পর্ব-২৩

0
834

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৩
Writer -Afnan Lara
.
উল্টো রিয়েকশান হলো কেন তাই বুঝলাম না
.
আপনার কি দরকার ছিলো আমার পায়ে মোচড় দেয়ার??
সবসময় মোচড়েই মোচড় যায় না,বেকুব পুলিশ একটা!!!
আমার ব্যাথা ১৪গুন বাড়িয়ে দিছে,অসভ্য লোক
.
ভালোর জন্য করেছিলাম এমন হবে জানলে করতাম না,আই এম সরি,দেখি বিছানায় এসে বসো,,আমি দেখছি কি করা যায়
.
কি আর করবেন,আমার যা ক্ষতি করার তা তো করেই দিছেন,রাঙামাটি যাওয়া যাবে কিনা তাই ভাবছি এখন
.
মুনের চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই নীলের রুমে এসে হাজির হয়ে গেছে
মুনের পায়ের এমন হাল দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো,ট্যুর ক্যানসেল ও হতে পারে এসব ভেবে বাচ্চারা কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে
শেষে মায়ের বুদ্ধিতে মুনের পায়ে মালিশ করে দেওয়ার কথা উঠলো
নাহার এসে মালিশ করে দিয়ে গেছে,সবাই প্রে করছে যেন জলদি করে মুনের পা সেরে ওঠে
এদিকে মুন চোখ দিয়ে নীলকে গিলে খাচ্ছে বারবার
নীল ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে চুপ করে আছে,হিয়াকে নিয়ে একদিন সাঁকো পার হতে গিয়ে ওর কারণে হিয়া নিচে পড়ে গিয়ে কাদায় মাখো মাখো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো,সেবার হিয়ার পায়ে ব্যান্ডেজ করাতে হয়েছিলো
এখন মুনের তেমন হয় কিনা তা ভেবে নীলের ভয় করছে
মুনের কিছু হলে মা আস্ত রাখবে না
মুন ভ্রু কুঁচকে বললো”ট্যুর তো আমি মরে গেলেও ক্যানসেল হতে দেবো না,দরকার হলে আপনি আমায় কোলে নিয়ে যাবেন,তাও আমি এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে দেবো না”
.
তোমায় এত ভাবতে হবে না,আমি অলরেডি প্রচুর টেনসনে আছি

হিয়ার ফোন এসেছে সেই আবারও
নীল গেছে শাওয়ার নিতে,মুন ফোনটা জ্বলছে দেখে অনেক কষ্টে বিছানা থেকে নামলো,গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে দেখলো আননউন নাম্বার
তাও আগ্রহ বশত রিসিভ করলো সে,,ওপাশ থেকে হিয়ার আওয়াজ পেয়েই মুন চিনে ফেললো
তার মানে এটা হিয়ার নাম্বার
.
এহেমএহেম!হ্যালো কে???হু আর ইউ??
.
মুনতাহা?নীল কোথায়?
.
আপনি কে?
.
আমি হিয়া
.
ওহ হিয়াপু!!নীল তো বাথরুমে গেছে,গোসল করতে
.
বিকাল বেলায় গোসল!
.
ইস আপু,এভাবে লজ্জা দাও কেন,লজ্জায় গিয়ে লিচু গাছে ঝুলতে ইচ্ছে করছে আমার
.
তুমি লজ্জা পেলে কেন?আমি তো অবাক হলাম কারণ নীল এ সময়ে গোসল করে না
.
ঐ আসলে আমরা তো টু…..
.
টু?
.
আমরা ট্রুথ ডেয়ার খেলসিলাম,তো আমি উনাকে গোসল করার ডেয়ার দিসি
.
একটু তো কেয়ার করো ওর,এসময়ে গোসল করলে নীলের নির্ঘাত ঠাণ্ডা লেগে যাবে
.
তাহলে তো আমারও হয়ে যাবে
.
তোমার কেন হবে?
.
ইস আপু আমাকে এতো লজ্জা কেন দিচ্ছো
.
হিয়া রেগেমেগে লাইনটাই কেটে দিলো
নীল বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মুন হাসতে হাসতে হাঁটার জন্য পা বাড়াতেই দুম করে নিচে পড়ে গেছে সাথে সাথে
.
আরে আরে,নামতে গেলে কেন?
.
মুন মুখের সামনে এসে পড়া বাধ্য চুলগুলো সরিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”এই ব্যাথার কাছে আমার মনের সুখ কিছু না,আই এম সো হ্যাপি”
.
এত হ্যাপি কেন?
.
আপনি বুঝবেন না,আমাকে উঠান,পায়ে ব্যাথা একটু কমেছে মনে হলো
.
তাই পড়ে গেলে?
.
ও কিছু না,,আমি আজ কি পরে যাব একটু চুজ করে দিন না
.
জার্নিতে যাই পরা থাকুক এটা কোনো ব্যাপার না,,কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় কি পরবা ওটা মেইন
.
ভাবীরা সবাই দেখবে,বাসার জামা পরে তো আর যাওয়া যায় না
.
নীল মাথা নাড়িয়ে আলমারি খুললো,, মুন নীলের দিকে চেয়ে থেকে বললো”শুনুন”
.
জি বলুন
.
আমাকে কেমন লাগে আপনার?
.
আগে ভাল্লাগতো,এখন বেশি বেশি ঘাউড়ামি করো হিয়াকে নিয়ে তাই একটুও ভালো লাগে না
.
মুন মুখ বাঁকিয়ে পা ধরে নাড়াচাড়া করছে,নীলের কথা মাথায় ঢুকায়নি সে
নীল একটা হলুদ আর খয়েরী রঙের কম্বিনেশনের সেলোয়ার কামিজ বের করতে করতে বললো”অবশ্য এটাও মনে হয় যে কেউ একজন প্রেমে হাবুডুুবু খাচ্ছে”
.
আমি?তাও আপনার প্রেমে?জীবনেও না,আমার শখ নাই এমন একটা লোককে ভালোবাসার যে কিনা আরেকজনকে ভালোবাসে
.
তাহলে ভালো,,বাট এটা বুঝলাম না তুমি যখন আমাকে পছন্দই করো না,ভালো ও বাসো না তাহলে হিয়ার কথা আমি ভাবলে তোমার এত জ্বলে কেন?
.
আমার জ্বলে না,আমার বিরক্ত লাগে,কারণ আমি আপনার স্ত্রী,আমার সাথে কথা বলুন,আমাকে নিয়ে বলুন সমস্যা নেই বাট ঐ মেয়ের নাম নিতে হবে না,নাম নিলেই মেজাজ খারাপ লাগে অনেক

যে যার কার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে,,সবার কার ভর্তি, নীলের কারে শুধু মুন,আর কেউ নেই
ভাবীরা বুদ্ধি করে ওদের একা ছেড়েছে
মুন গালটা ফুলিয়ে রেখেছে কারণ অন্ধকারে সে কিছুই দেখছে না,শুধু শুধু বসে আছে বলে তার মুডটাই অফ হয়ে আছে
নীল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা গান প্লে করলো,,মোটামুটি ভালো হলেও মুনের একদমই ভালো লাগছে না
গায়ে কাঁটা দেওয়া রোমান্টিক গান মুনের ভাল্লাগে,যেমন ধরো আশিকি টু এর গানগুলো
মুন সুইচ টিপে সেই গানটা খুঁজে বের করে ফেলেছে
নীলের মনে পড়লো হিয়ার কথা,,হিয়াকে ডেডিকেট করে এই গানটা সে বহুবার গেয়েছিলো,হিয়া মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতো
হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে মুনের কোমড়ে হাত লেগে গেলো নীলের
মুন চমকে তাকালো,সাথে নীল ও,,হিয়ার চিন্তা গায়েব
মুন ঠিকঠাক হয়ে বসে আবারও জানালার দিকে ফিরে তাকালো,যেন কিছুই হয়নি
নীল নিজের হাতটা এপিঠ করলো,হিয়ার নাম লিখা সেখানে,ট্যাটু আকারে
এই ট্যাটু উঠিয়ে ফেলা যায় তবে নীল উঠায়নি
মুন আজও এই ট্যাটু দেখেনি,দেখলে তুলকালাম বাঁধাবে
নীল শখ করে লাগিয়েছিলো এটা আমেরিকাতে
কে জানত ট্যাটু লাগিয়েও মানুষটাকে সে পাবে না
মুন হঠাৎ চেঁচিয়ে বললো কার থামাতে
নীল হিয়ার চিন্তাকে আবারও এক সাইড করে মুনের কথায় কার থামালো,মুন বললো সে ফুচকা খাবে,পথে দেখেছিলো
নীল আর কি করবে,কার থামিয়ে এখন সে ফুচকা খাওয়াচ্ছে মুনকে
মুন নিজে খেতে খেতে একটা নিয়ে নীলের মুখে পুরে দিয়েছে
নীল প্রস্তুত ছিলো না,ফুচকা ওর ও ভাল্লাগে তবে হিয়ার সাথে সাথে ওর লাইফ থেকে অনেক কিছুই মুছে গেছে ফুচকা খাওয়াও উঠে গেছে,মুন হঠাৎ করে আবার মনে করিয়ে দিলো
নীল আরেকটা ফুচকা নিয়ে মুখে পুরতে পুরতে বললো”আমারও ভাল্লাগে”
.
মুন ফিক করে হেসে দিয়ে দেখলো নীলের ঠোঁটের কোনায় মরিচের বিচি লেগে আছে,টক খেতে গিয়ে লাগিয়েছে নীল
মুন হাত বাড়িয়ে হাতের পিঠ দিয়ে মুছে দিলো,তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো
নীল কিছুক্ষনের জন্য একটা ঘোরে চলে গিয়েছিলো
কারণ ওর মুখে এমন খাবার লেগে থাকলে হিয়া টিসু খুজে বের করে সেটা দিয়ে মুছে দিতো
আর মুন কিনা নিজের হাত দিয়েই মুছে দিলো
দুটো মানুষের মাঝে দুরকম তফাৎ,ভালোই
.
কি ভালোই?
.
কিছু না,চলো যাই,লেট হয়ে যাবে
.
মুন ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে গিয়ে কারে বসেছে,নীল ও এসে বসছে,, মুন বললো”আজ আমার জামাইর এক্স না থাকলে……”
.
না থাকলে?
.
থাক বলার ইচ্ছে নেই
.
জানো হিয়াকে নিয়ে আমি অনেকবার লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম
.
তো?
.
তো আমি যে গান প্লে করতাম ওটাই ওর ভাল্লাগতো
.
একটা কথা বলি শুনেন,স্বামী স্ত্রীর সব মিললে তারা স্বামী স্ত্রী না ভাইবোন হয়ে যায়,এটা মাথায় রাখবেন,হিয়ার সাথে আপনার সব মিলতো বলেই ও আজ আপনার স্ত্রী না
আমি আপনার স্ত্রী,যার সাথে আপনার পানি খাওয়াও মিলে না
আমি পানি কম খাই,আর আপনি বেশি
.
কি লজিক রে বাবা!

রাত ২টোর সময় সবাই রাঙামাটিতে এসে হাজির,,মুনের পা ঠিক আছে এখন,মোচড়টা তারা বের হওয়ার আগেই সেরেছে
মুনের প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তাও ভদ্রতার খাতিরে সে এখন রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে উর্মি ভাবীর পাশে
ভাবীরা সব একসাথ হয়ে আছেন,আর ভাইয়ারা সবাই আর নীল মিলে গেছে কাগজপত্রে সাইন করতে
মুন ঢুলে পড়ছে এমন অবস্থা
উর্মি ভাবী মুনের এমন কাজে হেসে বললেন”আরাফ আর তোমার মধ্যে তফাৎ অনেক কম”
.
মুন দাঁত কেলালো,আসলেই তো,আরাফ ঘুমাচ্ছে আর আমি ঘুমাতে যেয়েও পারছি না তাও দুজনের অবস্থা প্রায়ই একই রকম
নীল এসে বললো সব কাজ শেষ
এটা বলেই মুনের কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে চললো,মুন ও পিছু পিছু আসছে
নীল দরজা খুলতেই মুন এক দৌড়ে বিছানায় চলে গেলো,বিছানায় শুয়ে মুখ তুলে দেখলো সে কতগুলো গোলাপের পাপড়ির উপর শুয়ে আছে,এসব দেখে তার ঘুম গেলো গায়েব হয়ে
মাথা তুলে ফুলগুলোর দিকে তাকানো শেষ করে এবার নীলের দিকে তাকালো মুন
নীল হা করে বললো”হানিমুন প্যাকেজ?”
.
আপনার আইডিয়া হতে পারে না এটা
.
হুম ঠিক,নিশ্চয় উর্মি ভাবী এমনটা করেছে
.
মুন ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো”চলেন হানিমুন করে ফেলি”
.
নীল নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলতে খুলতে বললো”আমরা যে আসছি এটা কি হানিমুন না?”
.
আপনাকে বোঝানো সম্ভব না
.
তোমার না খুব ঘুম পাচ্ছিলো?তো ঘুমাও না
.
হুম,আগে দেখতে দেন,প্রথমবার হানিমুনে এসেছি,রুমটার ডেকোরেশন তো উপভোগ করতে দিন একটু,আপনার ঘুম পেলে সাইডে এসে শুয়ে পড়েন
.
নীল জ্যাকেট খুলে গায়ের জামাটা চেঞ্জ করে আরেকটা পরে পাশে এসে শুয়ে পড়েছে ভালো ছেলের মতন,এদিকে মুন পুরো রুমটা দেখে রীতিমত অবাক হচ্ছে,কি সুন্দর করে সারপ্রাইজ দিলো তারা,আর নীলকে দেখো,সব মাটি করে দিছে
.
মুন চুপিচাপি নীলের ফোন নিয়ে টিপাটিপি করে সাইলেন্ট করলো তারপর শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো সে
পরেরদিন সকালটা শুরু হলো নীলের রাগ দিয়ে আর তার রাগের কারণ হলো মুন তার ফোন সাইলেন্ট কেন করেছে সেটা
ফোন তো আর এমনি এমনি সাইলেন্ট হয় না
মুন নীলের এমন রাগ দেখে চুপসে গেছে
নীল আরও রেগেছে কারণ হিয়া ওকে ৪০বার কল করেছে
মুন একটা সময়ে কেঁদে ফেললো নীলের বকুনি শুনতে শুনতে
কাঁদতে কাঁদতে নাকের পানি চোখের পানি এক করে দিলো সে
নীল এবার থেমেছে,ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে ওয়াসরুমে চলে গেছে সে এখন
মুন চোখ মুছতে মুছতে বললো”প্রাক্তনের কল রিসিভ করতে পারে নাই বলে বউকে ঝাড়ি দিলো,আমি থাকবো না এখানে,কথা বলুন যত বলার”
.
মুন বিছানা থেকে নেমে বেরিয়ে চলে গেলো
নীল ওয়াসরুম থেকে বেরিয়েছে ৩০মিনিট পর
তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিলো হিয়াকে কল দেবে বলে কিন্তু যখন তার মাথায় আসলো মুন রুমে নেই তখন সে ফোন রেখে ছুটলো বাহিরের দিকে
পরপর সব রুমে ভাইয়া ভাবীরা,এক এক করে সবার রুমে নক করে নীল সিউর হলো মুন ওখানে নেই
মাথায় হাত দিয়ে ছুটলো সে মুনকে খুঁজতে
ও বাচ্চামো করে এ ব্যাপার জানত
নীল,তবে এরকম টাইপের বাচ্চামো এখানে এসে করবে তা নিয়ে একটুও ভাবেনি নীল
বেশি বকেনি সে,আবার কম ও না,মুন এরকম রাগ করবে জানলে তার জেদ ভেতরেই লুকিয়ে রাখত নীল
.
এখন এই মেয়েটাকে কোথায় খুঁজবো আমি!কি একটা বিপদে ফেললো আমাকে
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here