স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_২৯
Writer -Afnan Lara
.
মুন নীলের ফোনটা মুঠো করে ধরে ছুটলো বারান্দার দিকে
নীল বিছানা থেকে নেমে ওর হাত ধরে আটকালো
তারপর ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো”হিয়া জানলে তুলকালাম বাঁধাবে,তোমাকে টাচ করা যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তো আই এম সরি,এরকম ঝামেলা পাকাইও না তাও”
.
মুন ব্রু কুঁচকে বললো”হাত ছাড়ুন,দিব না ফোন ওকে,এত ভয় পেতে হবে না”
.
আমি ভয় পাই না,শুধু চাই ঝামেলা যেন না হয়
.
মুন বিছানায় ফিরে আসলো,কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে চুপ করে থাকলো সে
নীল ওর একপাশে এসে বসলো আরেকদিকে মুখ করে,দুজনে দুদিকে মুখ করে আছে এখন
.
কি হলো কিছু বলছো না যে?
.
কি বলবো?আমি এমন একজন স্ত্রী যার হাসবেন্ড তাকে ছুঁয়ে আবার সরি বলে,আবার ভয়ে শেষ হয়ে যায় এই ভেবে যে তার প্রাক্তন না জেনে ফেলে
.
নীল দুম করে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো”তোমার সাথে কথা বলাটাই বেকার”
.
হুম বলিয়েন না কথা,হিয়াকে কল করে বলেন,পারেনই তো এটা,আর তো কিছু পারেন না
.
নীল উঁচু হয়ে মুনকে ঝাপটে ধরে শুইয়ে দিয়ে বললো”জোর করে ঘুম পাড়াতে পারি”
.
হাত ছাড়ুন,একবার এক রুপ কিভাবে নেন আপনি?
.
ঘুমাও
.
নীল মুখটা বালিশের ভেতরের দিকে গুজে নিলো
মুন বেশ অনেকক্ষণ বকরবকর করে নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো শেষমেষ
বিকাল বেলা ঘুড়ঘুড় করে মেঘের ডাকে নীল জেগে গেলো,জেগে দেখলো তার ধানিলঙ্কা বউ তার বুকের ভিতরে ঢুকে আরামসে ঘুমাচ্ছে
নীল কারেন্ট এ শক লাগার মতন চমকে মুনকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিলো
মুন চোখ দুটো ডলে বললো”কি হলো?”
.
পরে মুনকে কেন এমন করে সরালো এটা ভেবে নীলের খারাপ লাগলো,মুন এখনও ঘুমের ঘোরে হেলছে দুলছে
নীল মুচকি হেসে ওকে আবার কাছে টেনে আনলো,মুনের খবর নেই,সে ঘুমের ঘোরে কোন রাজ্যে আছে তা কেউ জানে না
সে নিজেও জানে না
নীল মুনকে কাছে টেনে এনে ভাবলো”কোনোদিন এই বুকে হিয়া ব্যতীত কাউকে জায়গা দেবো না বলেছিলাম আর আজ দিয়ে দিলাম
মানুষ কত কিছু করে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে
তবে মুনকে এসব থেকে দূরে ঠেলে ওকে আমি কষ্ট দিচ্ছি ঠিক কিন্তু আমার যে ভেতর থেকে ভালোবাসাবোধটা আসে না ওর জন্য
জীবনে একজনকেই যে খুব করে ভালোবেসেছিলাম
তখন মুনকে ছুঁয়ে আমি সেই অনূভূতি পাইনি যেটাতে হিয়ার হাত ধরলে পেতাম,আমার মন প্রাণ সব হিয়ার মাঝে ডুবে আছে তাহলে কি করে আমি মুনকে সেই ভালোবাসা দেবো যেটা ও আমার থেকে চাইছে
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে,নীল শুয়ে শুয়ে বারান্দা ছেদ করে যে আকাশ দেখা যায়,মেঘলা আকাশ,সেটাই দেখছে চুপটি করে,আর মুন খুব যত্নে তার বুকের সাথে মাথা লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে
নীল নড়ছে না,নড়লে যদি মুন জেগে যায়,মুনের ঘুমের ধরন দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব আরাম পেয়েছে নীলের খালি বুকে
নীলের ফোন বেজে উঠতেই মুন এবার গেলো জেগে
নীলের বুকে নিজেকে দেখে ছিটকে দূরে চলে গেলো সে
তারপর মাথায় আসলো নীল স্বাভাবিক ভাবেই ওর দিকে চেয়ে আছে এখনও
তার মানে নীলের সম্মতি ছিলো,নীল মুনের এমন ভাবগতি দেখে কোনো রিয়েকশানই করলো না,চুপচাপ ফোন ধরে কল রিসিভ করলো সে
মেজো ভাইয়ার কল,ভাইয়া জানালো বৃষ্টির কারণে তারা সবাই হিলটপে ফিরে আসছে,তাবুতে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকা সহজ হবে না
নীল ঠিক আছে বলে ফোন রাখলো,মুন চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো”কতক্ষণ ধরে এমন শুয়েছিলাম?”
.
ইটস ওকে
.
নীল উঠে চলে গেলো ফ্রেশ হতে,মুনের মাথা কাজ করছে না নীল এখানে আসার পর থেকে কেমন যেন বিহেভ করছে
ঠিক বুঝে উঠা যাচ্ছে না,তবে যেমনই করুক,বেশ ভালো করছে,এমনটাই তো চেয়েছিলাম
তার বুকে ঘুমিয়েছি আমি,ইস কি লজ্জা!!
.
মুন দাঁত কেলিয়ে বিছানা থেকে নামলো,,কাল তারা সবাই ঢাকায় ফিরে যাবে,এখানেও আর ভালো লাগছে না,এ কদিন ভালোই থাকলাম আর কি!
.
মুন ভাবতে ভাবতে সেঁতসেঁতে বারান্দায় পা রাখলো
চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে,বারান্দাটা সম্পূর্ণ ভিজে গেছে
মুন পায়ের জুতোটা এক পাশে রেখে ভেজা ফ্লোরে পা রাখলো,শীতল অনুভূতি হতেই বেশ করে হাসলো সে
খুব ভালো লাগা কাজ করছে তার
নীল ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো মুন খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে
.
এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?দুপুরবেলায় ভিজেছিলে মনে আছে??নাকি জ্বর বাঁধিয়েই ছাড়বা আজকে
.
আরে আসুন না,অনেক ভালো লাগবে
.
দরকার নাই,আমার এরকম উদ্ভট ফিলিংস লাগবে না,বরং তুমি চলে আসো ওখান থেকে
.
মুন একটু এগিয়ে নীলের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে আসলো
ফিল করুন,চোখ বন্ধ করে
.
নীল চোখদুটো বন্ধ করলো,আজ নিজের সামনে সে হিয়াকে নয় মুনকে দেখতে পাচ্ছে,এতদিন চোখ বন্ধ করলেই হিয়ার কথা মাথায় আসতো আর আজ মুন
.
মুন নীলের হাতটা ধরে রেখেছে এখনও
.
কি ভালো লাগছে তো?
.
হুমমমম
.
অনেক সময় জ্বর সর্দির ভয়ে মানুষ আসল ভালো লাগা অনুভব করা থেকেই দূরে থাকে,এটা কিন্তু ঠিক না
এই যে দেখুন আজ আপনাকে আমি কি দারুন অনুভূতি শেখালাম
.
নীল বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো”থ্যাংকস”
.
চোখের সামনে থেকে হঠাৎ মুনের ছবিটা চলে যেতেই নীল চোখ খুললো,মুন রুমে চলে গেছে হাতটা ছেড়ে দিয়ে
নীল এক দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকিয়ে রইলো,মুন পানি এক গ্লাস খেয়ে চুলগুলোকে একসাথে করে একপাশে এনে বিছানায় গিয়ে বসে নীলকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই দেখলো নীল আগে থেকেই ওকে দেখছে
.
নীল মুনের চাহনি দেখে চোখদুটোকে নামিয়ে চুপচাপ চেয়ার টেনে বসলো,,মুন পা তুলে বসে কোলে বালিশ রেখে বললো”চা খাওয়াবেন না?সব চেয়ে নিতে হয়?কিছু নিজ থেকেও করা যায়,বুঝলেন মিঃপুলিশ?”
.
নীল চেয়ার থেকে উঠে যেতে যেতে বললো”ওয়েট করো,চা নিয়ে আসছি”
.
নীল চলে গেলো,মুন নীলের পরনের শার্টটা বিছানার উপর থেকে নিয়ে পরে ফেললো এক মিনিটেই,নীল শুধু জ্যাকেটটা পরে গেছে,গায়ের শার্টটা খুলে এখানে রেখে ছিল দুপুরবেলাতেই
মুন আয়নার কাছে গিয়ে বললো”হাই হ্যালো!!আই এম নীলের ওয়াইফ
হিয়া?দেখছো আমি কত হ্যাপি??তোমার নীল আমার হতে চলেছে,কেমন লাগছে তোমার?বিস্তারিত বলো!
ও কি করে বলবা,তুমি তো ঢাকায়,হিহি!!
.
নীল এসে যেতে পারে বলে মুন জলদি করে শার্টটা খুলতে গিয়ে একটা বোতাম খুলে ফেললো,এবার সারা রুম খুঁজেও সুই সুতো পেলো না সে
তাই শার্টটা লুকিয়ে ফেললো নীল আসার আগেই
নীল এই শার্টের খবর জানতে না চাইলেই বাঁচি
.
দশমিনিট পর নীল ফিরলো,চা আর বিসকিট নিয়ে,মুন চোরের মতন রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো,নীল রুমে ঢুকে বললো”কি হয়েছে?এরকম করে ওখানে কি করছো তুমি?”
.
না মানে,আপনার অপেক্ষা করছিলাম,চলুন চা খাই
মুন দুম করে বিছানায় বসে পড়ে চা খাওয়ায় মনযোগ দিলো
নীল সন্দেহের দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের চা টুকু সাবাড় করছে
.
মুন এদিক ওদিক তাকিয়ে যতবারই নীলের দিকে তাকাচ্ছে ততবারই দেখছে নীল ওর দিকে তাকিয়ে
.
তাহা ভুলে যেও না যে তোমার হাসবেন্ড একজন পুলিশ অফিসার
.
তততততো?
.
ততততো মানে হলো তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো
.
কিছুই না
.
নীল চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললো”সত্যি তো?”
.
হুম সত্যি তো
.
নীল ঘড়িটাও টেবিলের উপর রাখলো তারপর গায়ের জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে বললো”লাস্টবার আস্ক করতেছি তাহা,এরপর হাত চলবে”
.
মুন ঢোক গিলে খাটের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বললো”ইয়ে মানে আমি আপনার শার্টের বোতাম ছুটিয়ে ফেলেছি পরতে গিয়ে,আর কখনও এমন হবে না,মাফ করে দেন”
.
নীল ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”সামান্য এই ব্যাপার?”
.
হুম,আপনি ঘড়ি আর জ্যাকেট খুললেন কেন?
.
ফ্রেশ হবো তাই
.
ওয়াসরুমের দিকে নীল চলে যেতেই মুন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো,নীল যেভাবে লুক নিয়ে ঘড়ি খুলছিলো আমার জানটা বের হতে হতে থেমেছে
বাপরে বাপ,এবার বুঝতেছি পুলিশের বউ হওয়ার অপকারিতা
বউয়ের দিকেও এমন করে তাকায় যেন রিমান্ডের আসামীর দিকে তাকাচ্ছে
♣
নীলের ফোনে মিনা কার্টুন দেখছে মুন,তার সময় কাটছিলো না বলে নীল ওর হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়েছে,টিভির ডিসলাইনে সমস্যা নাহলে তো টিভি দেখা যেতো
মুন মিনা কার্টুন খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে শুয়ে শুয়ে
নীল পায়চারি করছে একবার বারান্দায় তো একবার রুমে
শেষে জ্যাকেটটা পরে নিয়ে বললো”তাহা তুমি থাকো,আমি একটু হেঁটে আসি”
.
আমিও যাব
.
বাহিরে ঠাণ্ডা, দরকার নেই,তার উপর বৃষ্টিতে পথঘাট পিচ্ছিল হয়ে আছে
.
তো কি হয়েছে,আপনি আছেন না?
.
নীল আর মানা করলো না,মুনকে নিয়েই বের হলো
মুন দুহাত ভাঁজ করে নীলের পাশে পাশে হাঁটছে আর নীলের গায়ের জ্যাকেটটার দিকে লোভী চোখে তাকাচ্ছে সে
নীলের সেদিকে নজর নেই,সে পথটা দেখে হাঁটায় ব্যস্ত
শেষে মুন মুখ ফুটে বলেই দিলো যে তার জ্যাকেটটা লাগবে
নীল জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে বললো”ঠাণ্ডার কথা বলেছিলাম তোমায়,এখন শীত করছে তো?”
.
তো কিছে?,জ্যাকেটটা দিয়ে দিলেই হতো,উল্টো আমাকে চাইতে হচ্ছে কেন?
.
আমি যাই করি তাতেই তো দোষ হয়ে যায় তাই না?
.
হুম তাই,এদিক ওদিক না চেয়ে এখন থেকে আমার দিকে চাইবেন
.
মুন কথাটা বলার পর থেকে নীল শুধু মুনের দিকেই তাকিয়ে আছে
মুনকে জ্বালানোর জন্য
.
আপনি এমন কেন বলুন তো,আমাকে বিরক্ত করতে ভাল্লাগে আপনার?
.
তুমি তো বললে শুধু তোমার দিকে চাইতাম তাই তো করছি আমি
কথাটা শেষ করার আগেই নীল হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলো
মুন নীলের ডান হাতটা টেনে ধরলো সাথে সাথে তারপর চিন্তিত হয়ে বললো”আপনি ঠিক আছেন?”
.
হুম,আই এম ওকে
.
আরও থাকুন তাকিয়ে
.
সব তো তুমিই বলো,যাই হোক চলো ফিরে যাই
.
আচ্ছা
.
মুন নীলের হাতটা ছাড়লো না আর,নীল ও কিছু বললো না,দুজন মিলে একসাথে হোটেলের রুমে চলে আসলো
মুনের বেশ লেগেছে এই সময়টায়,তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে নীলের হাত ধরে হাঁটা টা
.
নীলের জ্যাকেটটাকে ছুঁয়ে মুচকি হেসে মুন নীলের দিকে তাকালো,নীল ফোনে গেমস খেলছে
লোকটা তাকে কবে ভালোবাসবে তাই ভেবেই মুনের আর সয় না অপেক্ষা
কানের পিছনে চুল গুলো আবারও গুজতে গিয়ে নীলের দেওয়া সেই অনুভূতির কথা মাথায় আসতেই মুন আবারও হেসে ফেললো
নীল গেমস থেকে চোখ উঠিয়ে বললো”এত হাসির কারণ কি?”
.
মুন মলিন চোখে চেয়ে বললো”আপনার দেওয়া প্রথম স্পর্শ”
.
নীল চোখ নামিয়ে নিলো সাথে সাথে
আসলেই কি সে আজ ঠিক করেছিলো?হিয়াকে ধোকা দেয়নি তো সে?
.
কি ভাবছেন বলুন তো?দিলেন তো দিলেনই তাহলে সেটাকে মনে করে মুখটা ফ্যাকাসে করেন কেন আপনি?
আমি হিয়াকে কিছু বলবো না তো
.
সেটার জন্য না
.
তাহলে?
.
কিছু না বাদ দাও,আর এইসব কিছু নিয়ে কথা বলার দরকার নেই
চলবে♥