#শেহজাদী
Part—2
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
আমি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।ইমান ভাইয়া মাথায় চোট পাওয়ার পর ব্যথায় শুধু একবার উফ করে উঠলেন। এরপর রুমে পিনপিনে নিরবতা। ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। ঢোক গিলতেও ভয় পাচ্ছি। আমার জানা মতে, উনার স্বভাব অনুয়ায়ী এই মূহুর্তে বাসা কাপিয়ে চিৎকার করার কথা উনার। আজকে হঠাৎ চুপ কেন?
এবারে উনি কিছুটা দূরে গিয়ে নিজের ডান তার আঘাত প্রাপ্ত স্থানে বুলিয়ে বলতে লাগলেন, আজকে যদি আমার কিছু হয়ে যেত না! তাইলে আমি তোকে এবং তোর চৌদ্দ গুষ্টিকে জেলে পাঠাতাম!
আমি চকিত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি গমগম সুরে বলে উঠে, বিয়ের আগের দিন তুই আমার মাথাটা আলু বানিয়ে দিলি! কাজটা ঠিক করলি না। এখন এই আলুওয়ালা মাথা নিয়ে আমাকে বিয়ের আসরে বসতে হবে।
উনার কথা শুনে আমার বেশ হাসিও পাচ্ছে কিন্তু এই মূহুর্তে হাসা যাবেনা। এটা মিনিমাম কার্টেসী। আমার জন্য উনি আহত হয়েছেন, আই সুড বি সর্যি। আমি আগ বাড়িয়ে অতি দরদ দেখিয়ে, মনের ভেতরের সকল আবেগ ঢেলে বললাম, আই এম সর্যি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনার এতো জোরে লাগবে। আসলে,,,,,
— রাখ তোর সর্যি! জুটো পিটা করে গরুর মাংস বিলানোর দরকার নাই।
আমি ইতস্ততবোধ করতে লাগলাম। আশ্চর্য! তাকে মাত্র একবার জগ দিয়ে আঘাত করেছি, জুতাপিটা কখন করলাম?
উনি তেজি গলায় বলে উঠে, ঠিক সময়ে যদি আমি তোর হাত ধরে না আটকাতাম। মিরা তুই আজকে আমাকে মার্ডার করে দিতি। আমাকে মার্ডার করলে কোন মানুষ তো দূর একটা কাক ও জানত না খুনি কে। সত্যি করে বল তো? আমার সঙ্গে তোর কোন শত্রুতা আছে?
— ছিঃ! এসব কি বলেন আপনি?
— দেখ! আমি সবকিছু লজিক্যালি ভাবছি। তুই কিন্তু খুবই পটু ভাবে কাঁচের জগ হাতে নিলি এরপর একদম এক্সপার্টদের মতো হামলা করলি। তোর হামলা করার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিল তুই ট্রেনিং নিয়েছিস!
আমি এবারে উনার চোখে চোখ রাখলাম। যদিও বা সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলোনা। কারণ ওনার চোখ আশেপাশে ঘুর-ঘুর করছে। তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন ইনভেস্টিগেশন করছেন। হুহ!
আচমকা উনি বলে উঠে, কাঁচ আর মন একবার ভাঙ্গে জোড়া লাগানো সম্ভব না।
উনি কাব্যিক কথাবার্তায় আমার ভাবান্তর হলো না তেমন একটা।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই রুমে হুমড়ি খেয়ে আমার কাজিনরা ঢুকে পড়লো। আমাকে আর ইমান ভাইয়াকে একসঙ্গে দেখে তারা মিটমিট করে হাসা শুরু করল এবং সেই হাসি গড়িয়ে অট্টহাসিতে রুপান্তর হলো। আমার মেজাজ বিগড়ে যেতে লাগলো । আরে ভাই এতো হাসির কি আছে তোদের? এখানে কি কমেডি মুভি চলছে?
আমার বড় আব্বুর বড় মেয়ে সায়মা আপু বলে উঠে, কি ব্যাপার রে?তোদের ডিস্টার্ব করলাম নাকি? ভুল সময় এসে গেলাম?
আমি কিছু বলব তার আগেই ইমান ভাইয়া বেশ খুশি খুশি গলায় বলে উঠে, তা তো করেছোই! আসার আগে একবার নক করা উচিত ছিলো।
সায়েমা আপু পরম আগ্রহ নিয়ে বলে, তোরা কি করছিলি রে? হু? আব্বু বলছিল তুই নাকি মিরার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিস!
আপুর মুখে এমন কথা শুনে আমার কেমন যেন অনুভব হলো যা লিখে বোঝানো সম্ভব না। কেমন শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। শরীরের লোমকূপ খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে আমার। উনি বড় আব্বুর পারমিশন নিয়ে আমার রুমে এসেছেন? কোথায় আরো ভাবলাম, বড় আব্বুর কাছে এভাবে আমার রুমে ঢুকে পড়ার জন্য নালিশ করব ওনার নামে। সমস্ত প্ল্যানে এক বালতি পানি পড়ে গেল।
ইমান ভাইয়া সুন্দর করে হেসে বললেন, আমার বৌয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেই পারি। কাক কাকা করবে এটা যেমন স্বাভাবিক তেমনই আমি আমার বৌকে দেখতে আসব এটাও নরমাল আপু।
আমি হতভম্ব হলাম। ব্যাটা বজ্জাত কে আ।আমাকে কাকের সঙ্গে তুলনা করলো! হাউ রেডিলুকাস!
সায়েমা আপু ইমান ভাইয়ার নাক টেনে ধরে বললেন, নাক টিপলে এখনো তোর নাক দিয়ে সেরিলাক বের হয় সেই ছেলে নাকি বিয়ের পীঁড়িতে বসবে। বিশ্বাস হয়?
উনি মেকি হেসে বললেন, নাইস জোক।
এবারে আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, আর এই পুচকি তো সেদিনই জন্ম নিল। মিরু যেদিন হলো।,কি বৃষ্টি ছিল সেদিন। কালকে নাকি এই মেয়ের বিয়ে। আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।
ইমান ভাইয়া হালকা হেসে বলে, বড় মামা কোথায়? ওনার সঙ্গে কথা আছে।
সায়েমা আপু বলে উঠলেন, আব্বু তো দাদীর রুমে। তুই দাদীর রুমেই যা। দাদী বারবার তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো। যা দেখা করে আয়৷
আপুর কথা শেষ হতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে একবার আমাকে দেখে নিল। ওই সময় আমার এতো পরিমাণে লজ্জা লাগছিল যা বলার বাইরে। ওনার আমার দিকে মুখ ঘুরে তাকানোর দরকারটা কি? ওনার জন্য সবার চোখ এখন আমাকে ঘিরে৷
আচমকা উনি খুবই নরম গলায় বলে উঠে, আচ্ছা, তাহলে যাই মিরা, কেমন?
ওনার মুখে নিজের নাম শুনে আমি দ্বিগুণ লজ্জা পেলাম।
এবারে সায়মা আপুর ছোট বোন বলে উঠে, বাপ রে! কি মোহাম্মত! এতো প্রেম কই রাখিস রে তোরা?
ওনার সোজাসাপ্টা উত্তর, বুকে।
ওনার বেহিসেবী কথা শুনে আমার এই মূহুর্তে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে মন চাচ্ছে। অসহ্য! লজ্জায় আমার নাক-কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। বেয়াদব একটা!
ইমান ভাইয়া আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে তার ভ্রু জোড়া নাচালো। এই ভ্রু নাচানো দেখেও আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরক্তিরা বাসা বাঁধলো।
উনি হয়তোবা আমার কাছ থেকে কিছু শোনার আশায় ছিল। কিন্তু আমি তো আমিই। আমার এতো খেয়ে-পরে কাজ নেই যে তাকে আহ্লাদী গলায় বলব, ওগো! সাবধানে যেও।
উনি মিনিট পাঁচেক আমার কিছু বলার অপেক্ষা করে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। উনি বেরিয়ে যেতেই আমার কাজিন মানে, বড় আব্বুর দুই মেয়ে আর আমার ছোট বোন আমাকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে ধরলো।
সায়েমা আপু বলে উঠে, ইমানটা কি পাজি হয়েছে রে! বড়বোনের সামনে বৌকে সোহাগ করে।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন এবং নিজের মাথা যতোসম্ভব নিচু করে ফেললাম। তা দেখে ওরা যখন হোহো করে হেসে দিলো, তখন আমি বেশ জোর গলায় বলে উঠলাম, ওনার সঙ্গে আমার এখনো বিয়ে হয়নি। আমি ওনার কেউ হয়নি। বৌ তো দূরের কথা৷
সায়েমা আপু বলে, রাত পোহালেই তোদের বিয়ে। আজকে ইমান বিয়ের ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছে।
আমার বুক ধুকপুক করতে লাগলো। কিহ! আজ বাদে কাল বিয়ে! নার্ভাসনেসে আমার হা কাঁপতে লাগলো। ওনাকে বিয়ে করার এক বিন্দু ইচ্ছাও আমার নেই। নেই মানে একেবারেই নেই।
আমাকে ভাবনায় মগ্ন দেখে সোনালী আপু বলে উঠে, কি এতো ভাবছিস মিরু?
আমি টলমল চোখে তাদের দিকে তাকালাম। আপুদের কিছুতেই বলা যাবে না আমার আবিরের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। আপুদের বলা মানে এই খবর সারা বাসা জানতে দু মিনিট লাগা! আমার ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা!আবিরকে বেশি কয়েকদিন ধরে চিনি না। কলেজের সিনিয়র হলেও তাকে কলেজে কোন দিন দেখিনি। বরং ফেসবুকে আমাদের কথোপকথন শুরু হয়।
ইরা মানে আমার ছোট বোন আচমকা বলে উঠে, আপু ভাইয়া কি তোমার গালে চুমু দিয়েছে?
আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম! বলে কি মেয়ে!
সোনালী আপু সরু চোখে আমার গালের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তোর গাল এমন লাল হয়ে আছে কেন?
আমি সঙ্গে সঙ্গে গালে হাত দিলাম এবং মিনমিন সুরে বলি, হয়তোবা মশা কামড় মেরেছে। জানালা খোলা ছিল রুমে মশা ঢুকেছে।
আমার কাজিনদের মধ্যে সায়মা আপু কিছুটা ঠোঁটকাটা স্বভাবের। শুধু তাই না! কখন কি বলা উচিত সম্ভবত উনি তা বুঝেন না। আজো উনি আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো, এই মশাটার হাইট কত ছিল রে?
আমি পুনরায় বিষ্মিত। মশার আবার হাইট হয় নাকি। জানতাম না তো। আর যদি হয়ও তাহলে কত হবে? এক সেন্টিমিটার?
উনি আমার গাল পর্যবেক্ষণ করে বলে, মশাটা কি ইঞ্জিনিয়ার নাকি?
আমি হু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। আপুর কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে? মশা আবার পড়ালেখা করে? জানতাম না তো! মশাদের বিদ্যালয় আছে? ওরাও কি এ প্লাস পায়?
ওরা সবাই আমার চেহারার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেল। ছোটবেলা থেকেই আমি জোকস কম বুঝি এজন্য হয়তোবা আমি ওনার জোকসের অর্থ বুঝতে পারলাম না কাজেই ফ্যালফ্যাল করে তাদের দিকে তাকাতেই ভেতরে ভেতরে চমকে উঠি। ওহ শিট! ইমান ভাইয়া তো এবার ইঞ্জিনিয়ারিং লাস্ট সেমিস্টারে আছে।
চলবে।
[ আসসালামু আলাইকুম। গল্পটাকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালোবাসা অবিরাম। ]