প্রিয় দিও বিরহ ” পর্ব-১২

0
1205

“প্রিয় দিও বিরহ ”

১২.

আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে দর্পণ। শরীর মোটামুটি সুস্থ। বাসায় ফিরে একের পর কলেই সময় কাটাচ্ছে। মেহতিশা আগে যদিও জানতো দর্পণ রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে এখন বুঝতে পারছে,
কয়েক দিন পরে ভোটে সে দাঁড়াবে। আনমনে মেহতিশা ভাবতে থাকে, যে নিজের পায়েই দাঁড়াতে পারেনা সে কীভাবে ইলেকশনে দাঁড়াবে!ভাবতে ভাবতে দর্পণের দিকে তাকিয়ে থাকে। দর্পণ তখন ডান হাতে মোবাইল কানে দিয়ে আরেক হাতে কাগজে কিছু তুলছিলো। হঠাৎ মেহতিশার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায়। মেহতিশা অপ্রস্তুত হয়। তাড়াহুড়ো করে নিজের কাজে মন দেয়। কাঠের টেবিলটা মুছতে শুরু করে। দর্পণ মুচকি হেসে বলে,

‘আমার দিকে তাকালে আমি মাইন্ড করবো না, বউজান। ‘

মেহতিশা লজ্জিত হয়। এড়িয়ে গিয়ে বলল,

‘মোটেও না, আমি তো এমনি ওদিকে তাকিয়েছি। ‘

‘ওদিকে কোথায়? ‘

‘ঐ যে আপনার পেছনে। ‘

‘আমার পেছনে কী আছে?’

‘খাট! ইশ, কী ধুলো পড়েছে! ওটাই দেখছিলাম। মুছতে হবে। ‘

দর্পণ হেসে ফেলে। মেহতিশা সেদিকে ধ্যান দেয়না। এগিয়ে আসে হাতের কাপড়টা নিয়ে খাটের উপরের বক্সটা মুছতে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই যেনো করছে সে। দর্পণ ক্ষণকাল তাকায়। হাতের মোবাইলটা পাশে রাখে। মেহতিশা উবু হয়ে মুছছিলো। দর্পণ দুষ্ট হেসে মেহতিশার ঢিলে আঁচল ধরে টানতেই মেহতিশা ধপাস করে বিছানায় পড়ে।
আকস্মিক ঘটনায় অবাকতার রেশ কাটেনা। কী থেকে কী হলো বোধগম্য হয়নি। পিটপিট করে তাকাতেই দেখলো দর্পণের উত্তপ্ত শ্বাস পড়ছে তার মুখমন্ডলে।
অস্বস্তিতে কুঁকড়ে আসে মেহতিশা। দর্পণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে চেষ্টা করে। দর্পণ নড়ে না। শক্তিতে পেরে ওঠেনা মেহতিশা। ঘনঘন শ্বাস ফেলে বলে,

‘সরুন৷ ‘

‘যদি না সরি? ‘

দর্পণের নির্লিপ্ত উত্তর। মুখে বিরাট হাসি। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয় মেহতিশা। লজ্জামাখা হাসিতে
মাথা নিচু করে। দর্পণ তাকে চমকে দিয়ে অঁধরে গাঢ় স্পর্শ দিয়ে সরে আসে। মেহতিশা বিশাল লজ্জা পেয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পেছন থেকে শুনতে পায়, দর্পণের প্রাণখোলা হাসি৷

ঝিঁঝি পোকার ডাক। নিস্তব্ধ রাত্রি। আকাশের ঠিক মধ্যেখানে সাদা গোল রুটির মতো একটা চাঁদ উঠেছে।
সেই ঝকঝকে সাদা চাঁদটাতেও একটা আবছায়া দাগ লেগে আছে। কল্পসাহিত্যের অর্ধেকটাই এই চন্দ্র নিয়ে।
তবুও এর রহস্য একচুল পরিমাণ কমেনি।

কী অদ্ভুত এই রাত! অবশ্য নিশিতার জন্য প্রতিটা রাতই একাকী নিঃসঙ্গ। নিশিতা হাতের শিকলটার দিকে তাকায়। হেসে দেয় ফিক করে। জোর করে খাওয়ানোর জন্য সকালে কাজের মহিলাটাকে কষে থাপ্পড় মেরেছিলো সে। নিশিতার মতে সে ঠিকই করেছে। সে বারবার বলছিলো, তাকে তার অর্পণ আসবে। খাইয়ে দিবে। নিশুপাখি বলে বুকে জড়িয়ে ধরবে। কাজের মহিলাটা খ্যাকখ্যাক করে বলছিলো ‘ওরে পাগলিনী! তোর স্বামী মরেছে। আর আসবে না।’ তাইতো গালে চরটা দিয়েছিলো সে। তার বিনিময়ে তাকে লালিমা ঘরের জানালার সাথে হাত বেঁধে শিকলবন্দী করে দেন।

নিশিতা চুপচাপ চেয়ে থাকে হাতটার দিকে। একদিন হাতটা ধরেই এক প্রেমিক পুরুষ কথা দিয়েছিলো কখনো ছেড়ে যাবেনা তাকে। কথা রাখেনি সে। চলে গেছে দূর, বহুদূর। যেখান থেকে কেউ ফিরে আসেনা।
নিশিতা নিজের এলোমেলো চুলগুলো মাথা নাড়িয়ে সরায়। হেলান দিয়ে দরজায় বসে। বিছানার উপর থেকে ফটোফ্রেমটা টেনে নিয়ে আসে। বুকে জড়িয়ে ধরে। নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে।
একজন সুদর্শন যুবক হাতের ঘড়িটা ঠিক করতে করতে বোয়ালখালী চোখে পাশে তাকাচ্ছে। পাশ দিয়ে শাড়ি পরিহিত নিশিতা সলজ্জ হেসে বান্ধবীদের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে। কী মধুময় স্মৃতি ছিলো! তবে আজ সব ধূসর কেনো! কেনো সেই প্রিয় মানুষটা হারিয়ে গেলো অতীত হয়ে। নিশিতা ছবিটার উপর হাত বুলিয়ে বলে,

‘প্রিয়, তোমার নামের বিরহ আমাকে ভালো থাকতে দেয়না। ‘

চলবে-
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here