আমার হৃদবক্ষে শুধুই তুই💖 পর্ব-১৭

0
4217

#আমার_হৃদবক্ষে_শুধুই_তুই💖
| অন্তিম পর্ব |

ফাহয়াজে র চোখে র দিকে তাকিয়ে আছে জুহি। ফাহয়াজের মাথায় হাতে পায়ে অনেক জায়গায় ব্যান্ডেজ করা এই এক্সিডেন্টে ই এমন ভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে সে। জুহির চোখ ভিজে আসছে। কাদোঁ কাদোঁ গলায় ফাহয়াজ কে নিজের কাছে আসতে বলে ইশারা করলো আর বলে উঠলো।

– ” আপনাকে অ..অনেক ভালোবাসি ফাহ..ফাহয়াজ প্রমিস করুন আম..আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না ! আপনি জানেন এই‌ কয় কয়েকটা দিন আমার কিভাবে আপন বি হীন কেটে ছে! আমি বুঝতে পেরেছি আমো স সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি! আপনিকি আম আমাকে আবার তৃতীয়বারের মতো বিয়ে করবেন! ( কাদোঁ কাদোঁ গলায় বলল জুহি )

জুহি র কথা শুনে ফাহয়াজ নিস্পলক জুহি র দিকে চেয়ে আছে হয়তো এই মুহুর্তে জুহি র এইসব কথা কল্পনাও করেনি।
ফাহয়াজ মুচকি হাসলো জুহি র দিকে এগিয়ে বেডে গিয়ে বসলো। জুহি র হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো।

– ” তাহলে আমাকে ভালোবেসে ফেললে তাহলে ! আচ্ছা মিসেস চৌধুরি যেহেতু আমাকে বিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে মানা তো করা যায় না!
তাহলে চলো নতুন করে সব টা শুরু করি যেখানে থাকবে ভালোবাসা, আর ভালোবাস ! ( মুচকি হেসে বলল ফাহয়াজ )
জুহি ঠোঁট চেপে হেসে মাথা জাকালো যার মানে হ্যাঁ সে ও তার সাথে সবটা নতুন করে শুরু করতে চায় ।

অন্যদিকে।

– ” আয়নার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে রুবা । নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আর মনে মনে বলছে

– ” লোকটার চয়েজ আছে বলতে হবে ইশশ রে্ শাড়ি টা কি মানিয়ে ছে আমাকে হায় নজর না লাগে! আচ্ছা সত্যি ই এইটা গিফট করা অনা কাক্ষিত লোকটা কে ! আমার সন্দেহ আয়াত কিন্তু আয়াত সেদিন তো আমার দিকে ফিরেও তাকালো না অথচ এইটা আমাদথর তৃতীয় বার দেখা আসলে‌ ই দুই বার দেখাতে কি কেউ কাউ কে গিফট দেয় ! আত এক টা জিনিস চিঠিতে লেখা ওই কথা গুলো ” যেমন লোকটা র সামর্থ ছিলো না তখন কিন্তু এখন সে নিজে প্রতিষ্ঠিত আর এই‌ কথা গুলো পুরো ই আয়াতে র সাথে মিলে উফফ মাথা নস্ট হয়ে যাচ্ছে যাই নদী র কাছে যাই দেখি ডাইনী টা রেডি হইছে নাকি! ( বলেই রুবা নদী র রুমে র দিকে আগাতে লাগলো )

রুবা নদী র ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো নদী মাথার খোপায় ফুল বাধঁছে। রুবা মুচকি হেসে আস্তে আস্তে ধীর পায়ে নদীর দিকে এগিয়ে গিয়ে জোরে ভাউ উ করে উঠলো নদী হত চকিত হয়ে ভয়ে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলো।
রুবা হেসে কুটি কুটি হচ্ছে নদীকে বেশ ভালো ই ভয় দেখিয়ে ছে সে নদী তার দিকে ভয়ে ভয়ে ফিরলো।
রুবাকে হাসতে দেখে নদী করুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
– গাধিঁ দিলি তোহ্ ভয় দেখিয়ে!
রুবা হেসে বলল।

– আচ্ছা তোর হয়েছে!যদি হয় তাহলে চল বিয়ে বাড়িতে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে। দেখ দেরি হলে কিন্তু লিয়া তোরে বিরিয়ানি খেতে দিবেনা!( হেসে হেসে বলল রুবা )
রুবার কথায় নদী মুখ ভার করে ছোট করে বলল “চল” ।এরপর রুবা আর নদী মিলে চলে গেলো লিয়ার বিয়ের উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে।
ফাহয়াজ আর জুহি তাদের বাড়িতে চলে আসছে।
সোফাতেই বিষন্ন মুখে মি.মিরাজ আর ফায়ানা তারা এখনো জানেনা যে ফাহয়াজ জীবিত আছে।
নীলা বাড়িতে নেই কিছুদিনের জন্য তার মামা বাড়িতে গেছে।
ফাহয়াজ আর জুহি বাড়িতে প্রবেশ করতেই মি.মিরাজ আর মিসেস ফায়ানা অবাকের সাথে সাথে হা হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ফাহয়াজ স্বাভবিক ভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
জুহির মুখে গাঢ় হাসি।
ফাহয়াজ এগিয়ে যায় মিরাজ আর ফায়ানার দিকে মিসেস ফায়ানা ফাহয়াজকে পেয়ে খুশিতে ফাহয়াজকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকে।
মি.মিরাজ এখনো থ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ এভাবে যাওয়ার পর ফাহয়াজ ওদের বসতে বলে সব খুলে বলল।
সব শুনে মি‌.মিরাজ বলে উঠলেন।

– যাক তুই ঠিক আছিস এইটাই বড় কথা ফাহয়াজ!এখন তোদের লাইফে আর কোন ঝামেলা নেই আমিও চাই এবার সব কিছুই সবার সম্মতিতে তোদের বিয়েটা বড় করে আবার দিতে !( মুচকি হেসে)
ফাহয়াজ মাথা নাড়ায় যার মানে হ্যাঁ।
ফাহয়াজ ফিরে জুহির দিকে তাকায় জুহির ঠোঁটে গাঢ় হাসি ফুটে আছে।

মি. মিরাজ সবার সম্মতিতে ফাহয়াজ আর জু্হির বিয়ে ঠিক করে ঠিক এক সপ্তাহ্ পরে।
নীলাকেও ফোন করে বাড়িতে আসতে বলেছে।এইবার মি.ইবাদাতের আর কোন সমস্যা নেই তিনিই রাজি এই বিয়েতে তাই ‌সবাই বিয়ের তোড়জোর শুরু করে দেয়।
জুহি‌ এখন তাদের বাড়িতে আছে।বিয়েটা অন্যসব বিয়ের মতো করেই তারা করবে শুধু থাকবে ঝাকঝমকতা।

অন্যদিকে।
রুবার প্রচন্ড গরম লাগছে বলে নদীকে রেখে বাগানের দিকে চলে গেলো।
বাগানে যেতেই কেউ তার হাত ধরে হেচকা টানে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।
রুবা হতবাক সামনেই‌ আয়াত তার হাত ধরে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে
রুবা অবাক আয়াত এখানে আর আয়াত তাকে এভাবে হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে ভাবতেই রুবার অবাক লাগছে।

-” আয়াত আপনি এখানে!আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন!যদি চেনেন তাহলে সেদিন আমার দিকে তাকালেন না কেনো!(উত্তেজিত হয়ে বলল রুবা)
আয়াত কিছুই বলছে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আয়াত কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে বলে উঠলো।

-“আমার দেওয়া গিফটে তোমাকে একদম ঐশ্বরিয়ার মতো লাগছে! কারো নজর না লাগে!(ধীর গলায় বলল আয়াত)
আমার দেওয়া গিফট কথাটা শুনে রুবা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেতো সেই লোকটার দেওয়া গিফটের শাড়িটা পড়ে আসছে তারমানে আসলেই গিফটা আয়াত দিয়েছে।
রুবা অবাকের সাথে সাথে হেব্বি খুশি হয়েছে।রুবার যায়গায় এই মুহুর্তে অন্য কেউ হলে অবাকের শেষ চূড়ান্তে চলে যেতো কিন্তু রুবা খুশি হচ্ছে খুশিতে রুবা আয়াতের গাল টেনে বলে উঠলো।
– আমার ধারণাই ঠিক গিফটা আপনিই ‌পাঠিয়েছেন। তাহলে সেদিন আমার দিকে তাকালেন না কেনো!আর আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন জানেন প্রথমেই আপনাকেই আমার অনেক ভালো লেগেছিলো।প্রথম দেখায় যে কোন ছেলের প্রতি এইরকম ফিলিংস আসে আগে জানতাম না।এখন সময়‌ আছে বলে দিচ্ছি আপনাকে ভালোবাসি!

আয়াত অবাক হচ্ছে কোথায় এই মেয়ে অবাক হবে কিন্তু না এতো আয়াতকেই অবাক করে দিচ্ছে।
আয়াত মুচকি হেসে বলে উঠলো
– ভেবেছিলাম তোমাকে সাপ্রাইজ দিবো কিন্তু তুমিই তো আমাকে সাপ্রাইজ দিয়ে দিয়েছো! আমিও তোমাকে ভালোবাসি রুবা!
উইল ইউ ম্যারি মি!!(মুচকি হেসে)
রুবা আয়াতকে জরিয়ে ধরলো।
এভাবে যে অনাকাক্ষিত ভাবে এইরকম একটা পরিস্থিতিতে রুবা আয়াতকে পাবে কখনোই ভাবেনি সে।খুশিতে সেও হ্যাঁ বলে দিয়েছে।
.
.

রুবা তার ভালোবাসাকে পেয়ে গেছে।অন্যদিকে ফাহয়াজ আর জুহিরও বিয়ে সুষ্ঠ সম্পূর্ণ ভাবে হয়ে গেছে।
আজ ফাহয়াজ আর জুহির বাসর রাত।
জুহি ফাহয়াজের রুমে ঘোমটা টেনে বসে আছে।
ফাহয়াজ রুমে এসেই জুহির হাত টেনে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো।
জুহি ফাহয়াজের এমন কান্ডে হা হয়ে তার মুখের দিকে তাকালো
ফাহয়াজ তার পকেট থেকে একটা রিং বক্স বের করে রিং নিয়ে জুহির হাতে পড়িয়ে দিলো আর হাতে চুমু খেয়ে বলে উঠলো।

– আজ এই চাঁদকে শাক্ষী রেখে তোমাকে নিজ থেকে একটা গিফট দিলাম!সবসময় এটা হাতে রাখবে!অবশেষে আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।ভালোবাসি তোমায় জুহিপাখি।
(ধীর গলায়)
জুহি মুচকি হেসে ফাহয়াজের বুকে মাথা রাখলো।
– আমিও আপনাকে ভালোবাসি!
(মুচকি হেসে)
___

নয় বছর পর।

ঝিল দাড়িয়ে আছে হাতে রং ভর্তি বেলুনের গোলা নিয়ে সামনেই করুন চোখে দাড়িয়ে আছে জুহাজ।
নজর তার ঝিলের হাতের দিকে।জুহাজ যেই ঝিলের দিকে এগিয়ে গেলো ওমনি ঝিল গোলাগুলো জুহাজের দিকে ছুড়ে মারতে লাগলো।
মুহুর্তেই রংয়ে জুহাজের শার্ট মুখ ভরে গেলো রাগী গলায় ঝিলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
– ঝিইল্লানির বাচ্চু আজকে তোরে এমন থাপ্রানি দিমু যে তুই তোর নামই ভুলে যাবি দাঁড়া!(বলেই জুহাজ দৌড়ে ঝিলের কাছে গেলো)
ঝিল মুখ ভেংচি দিয়ে দৌড় দেওয়ার আগেই জুহাজ ঝিলকে ধরে ফেলল।

– এইবার কই যাবি ঝিইল্লানির বাচ্চু!অনেক রং রং খেলেছিস এবার মাইর খা!
(বলেই জুহাজ ঝিলের গাল ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় দিতে লাগলো)
ঝিলও কম কি উল্টো জুহাজকেও মারতে লাগলো।শুরু হয়ে গেলো টম এন্ড জেরির মারামারি।
হঠাৎ জুহি লাঠি দিয়ে তাদের দুজনের দিকে তেরে এসে বলে উঠলো।

– এ্যাহ্ এত বড় বড় ছেমড়া ছেমড়ি হইসে এখনো মারামারি করে এই তোরা কি দুজনে এক্টু শান্তিতে থাকতে দিবি না কি করেছিস এইসব রং চং মেখে! আর ঝিল তোমাকে কতবার বলেছি এত দুষ্টামি করবেনা!আর জুহাজ তুমি কি বুঝোনা ও ছোট দুষ্টামি করলে এড়িয়ে যেতে তার দুষ্টামিতে খেয়াল না করতে!(রাগী গলায়)
জুহাজ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো
– মাম্মা আমি বসে বসে ম্যাথ করছিলাম তোমার মেয়েই তো এসে আমার ম্যাথ নোটে রং ঢেলে দিয়ে তারপর আমার গায়ে মেরেছে!
(গম্ভীর গলায়)

ঝিল ভয়ে মাথা নিচু করে নিলো।এখন যে তার মাম্মা তাকে বকা দিবে তা নিশ্চিত।
জুহি রাগী গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
– ঝিল তোমাকে কতোবার বলেছি ভাইয়ের সাথে এইরকম দুষ্টামি করবেনা!যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসো দিনদিন খুব দুষ্টামি করছো তুমি!(রাগী গলায়)
জুহাজ আর ঝিল একে অপরের দিকে টম এন্ড জেরির মতো একটা লুক দিয়ে চলে গেলো।
জুহি রাগে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠলো।
– এরা কবে ভাইবোনের মতো হবে!উফফ আল্লাহ্ এত দুষ্টামি কিভাবে করে!আমি পাগল হয়ে যাবো এদের বাপও এইরকম জ্বালায় আর‌ এরাও ঠিক বাপের মতোই হয়েছে!(বলেই জুহি বকবক করতে করতে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো)

এ হ্যাঁ আপনাদের তো বলাই হয়নি ঝিল আর জুহাজ হলো ফাহয়াজ আর জুহির ছেলে মেয়ে।জুহাজের বয়স আট ক্লাস ৩ এ পড়ে।আর ঝিল তার বয়স ছয়। সে জুহাজের দু বছরের ছোট সবে ক্লাস ১ এ পড়ে।
দুষ্টামিতে তারা দুজনেই সেরা তবে জুহাজ সে তার গম্ভীরতাই নিয়ে থাকে তবে সেও ভারী দুষ্টু।
সাথে ঝিল তার কান্ড দেখে তো বুঝতেই‌ পারছেন যে কতোটা দুষ্টু হতে পারে।
জুহি আর ফাহয়াজের জীবনে সব কিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছে।
জুহির বাবা মা গত হয়ে কিছু বছর আগেই।জুহির ভাই ইশফান এখন নিজের একটা কোম্পানি চালায় সেও বিয়ে করেছে।বলুন বয়স তো তারও কম হয়নি।
নীলার বিয়ে হয়েছে পাচ বছর আগে তার একটা মেয়ে হয়েছে বয়স সবে মাত্র তিন।আধো আধো কথা বলতে পারে।
ফাহয়াজের বিজনেসও আরও উন্নত হয়েছে।
অন্যদিকে
রুবা আর আয়াতের বিয়ে হয়েছে সেই‌ আট বছর আগেই তাদের এখন একটা ছেলে আছে নাম রুহাত তার বয়স সাত সবে মাত্র ক্লাস ২ এ পড়ে।
নদী সেও তার লাইফ গুছিয়ে নিয়েছে তারও বিয়ে হয়েছে চার বছর আগে তার মেয়ে আছে ২ বছর সবে তার।
ওদের সবার কাহিনী মিলিয়ে সবাই‌ এখন সুখে আছে।ওদের লাইফে আর কোন বাধাঁ আসেনি সবাই সবার মতো করে লাইফ গুছিয়ে নিয়েছে।
বুঝতেই‌ পারছেন তারা খুশিতে আছে যেহেতু খুশিতেই‌ আছে সেহেতু খুশিতেই থাক আর কোন কালো ছায়া যেনো তাদের জীবনে না পড়ে।
দোয়া করবেন ওদের জন্য।

সমাপ্ত।

[ অবশেষে অনেক সময় অবহেলার পর গল্পটা শেষ করেই দিয়েছি।জানি অনেক খাপছাড়া লাগবে তবুও ভুল ক্রুটি মাফ করবেন।আজ গল্পটা শেষকরে দিয়েছে সেহেতু একটু ধৈর্য্য ধরে গঠনামূলক একটা কমেন্ট করুন তাহলে খুশি হবো আমি।ধন্যবাদ গল্পটার সাথে থাকার জন্য এতদিন]

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here