#তোমাতে
লেখনীতে~আগ্নেস মার্টেল
/পর্ব ১১/
উনি সরল মুখে একইভাবে আমাকে ধরে আছেন। মৃদু ধাক্কায় নিজেকে ছাড়াই। খাটের নিচে ঢোকার জন্য উনাকে ঠেলতে থাকি। তিনি নিষ্প্রভ। উনার এই বেপরোয়া ভাবটায় আমি বিস্মিত। ফিসফিসিয়ে বলি, “আশ্চর্য স্ট্যাচু হয়ে আছেন কেন? কথা বুঝতে পারছেন না?”
“খাটের নিচে কেন ঢুকব? তুই না এটাই চাইছিলি!”
বিরক্তিতে ভ্রু কুচকাই। তিয়াস ভাইয়া আরও কয়েকবার করাঘাত করে। এমন চললে সত্যিই পুরো পরিবার রুমের সামনে জড় হবে। বিরক্ত কণ্ঠে বললাম, “আপনি আমাকে বাঁশ খাওয়াতে চাইছেন?”
তিনি দরজার দিকে এগিয়ে যান। মৃদু কণ্ঠে বলেন, “তিয়াসের গলা না? বন্ধু কতদিন পর আসল দেশে দেখা করি…”
আমার অস্থির মন চাইছে একে তুলে আছাড় মারি। শক্তিমান ঐ কার্টুন কুস্তিগিরদের মতো একহাতে তুলে একবার ডান দিকে একবার বাম দিকে আচড়ে ফেলি! দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে এলাম। তিনি ছিটকিনি খুলে ফেলেছেন। দরজা ফাঁকা করবার মুহূর্তে উনাকে সরিয়ে নিজে দরজা খুললাম। তিনি দরজার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। হাসছেন মৃদু মৃদু। তিয়াস ভাইয়ার সুচালো দৃষ্টির মুখোমুখী হই।
“তোর রুমে কে আছে?”
প্লাস্টিক হাসি নিয়ে, “কেউ না!”
ভাইয়ার দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হয়। আমার কপালে, নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। আড়চোখে একবার পাশে তাকালাম। জিসান ভাই বখাটেদের মতো ঠোঁট উঁচিয়ে ফ্লায়িং কিস দেখালেন। মেজাজ আরও বিগড়ে গেল।
দরজা ঠেলতে ঠেলতে, “সর আমি দেখি।”
আমি দরজা দ্রুত চাপিয়ে দেই। আমতা আমতা করে বলি, “ভেতরে এসে কি করবি! এতরাতে কিসের জন্য এসেছিস সেটা বলে চলে যা। ঘুম পাচ্ছে।”
“তোর রুম থেকে পুরুষালী কণ্ঠ আসছিল।”
গাল ফোলালাম, “ও ঐটা? লাউড স্পিকারে রেকর্ডিং শুনছিলাম।”
ভাইয়ার বিশ্বাস হলো না। সন্দিহান চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, “তোর চার্জারটা দে তো। ফোন ডেড হয়ে গেছে।”
চিন্তা সব এলোমেলো হল। দরজা আবার আটকাতে আটকাতে বলি, “তুই দাঁড়া আমি এনে দিচ্ছি।”
“আরে মুখের ওপর আটকাচ্ছিস কেন? এইটুকু পথ রুমে যাবি আর আসবি।”
কাঁদোকাঁদো মুখে সম্মতি দেই। আজ নিশ্চিত বাঁশ খাব! দরজা ছেড়ে আলতো পায়ে রুমে আসলাম। বেড সাইডের সকেট থেকে চার্জার বের করতে করতে ভাইয়ার গগনবিদারী চিৎকারের আশা করলাম। চিৎকারটা হলো না। বরং ত্যক্ত কণ্ঠ এল,
“এত স্লো কেন তুই! তাড়াতাড়ি আন!”
পেছন ঘুরে আমি অবাক। ভাইয়া সন্দেহের বশে।দরজা পুরোটা খুলেছে। জিসান ভাই দরজার পেছনে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে দ্রুত পায়ে চার্জারটা নিয়ে আসি। চার্জারটা হাতে নিয়েও ভাইয়া কিছুক্ষণ জহুরি চোখে দেখল। চলে গেল। সশব্দে দরজা বন্ধ করলাম। পড়ার টেবিল লাগোয়া চেয়ারে এসে বসলাম। জিসান ভাই নিশব্দে হাসতে হাসতে সামনে এসে দাঁড়ান।
“নার্ভাসনেসেও তোকে যা লাগে না!”
রেগে তাকাই। তিনি আরও শরীর দুলিয়ে হাসতে থাকেন। রাগ সামলাতে না পেরে পেন্সিল ব্যাগ ছুড়ে মারি। তিনি হালকা হেলে তা ক্যাচ ধরেন। রেগে বলে উঠি, “এক্ষুনি বেরিয়ে যান!”
তিনি ফিচেল হাসেন। সামনে এসে গাল দুহাতে টেনে দেন, “আমার লাল টমেটো খুব হট হয়ে গেছে!”
উনার ডান হাত খপ করে ধরে কাঁমড় বসালাম। তিনি ঝারা মেরে হাত সরালেন। পায়ের ওপর বসে গিয়ে বলেন, “জঙলির মতো শুধু পারিস কামড়াকামড়ি করতে! সভ্যতা শিখে কখনো চুমু টুমু দিয়েও ধন্য কর!”
ধাক্কা মেরে উনাকে সরাই। তাতে উনি বেতাল হয়ে সরলেন। আবার বসেন গেলেন, রেগে ফুসে উঠি, “উঠুন! একে তো দামড়া শরীর তার ওপর কোলে বসেছেন! আমার পা ভেঙে যাচ্ছে!”
কথাপ্রেক্ষিতে আরও শক্তপোক্ত হয়ে বসলেন। দুহাতে আমার ঘাড় জড়িয়ে ধরলেন, ঢঙ্গিকণ্ঠে বললেন, “বাবু রাগ করেছে?”
নাক-মুখ কুচকাই, “মেয়েলি ঢং করবেন না তো। থার্ড জেন্ডার মনে হয়!”
তিনি ঘাড় থেকে একহাত সরান। মুখে হাত দিয়ে মেয়েলি হাসেন। ভঙ্গিটায় হাসি পেল খুব। তবু রাগের আবরণ রেখে শক্তচোখে তাকালাম। তিনি এবার ঘাড় টেনে সারামুখে এলোপাতাড়ি ঠোঁট ছোয়ানো শুরু করলেন। উনার দাড়ি-মোছের ঘষা আর সুরসুরিতে উনার কোমড় খামচে ধরি। তিনি এসময় ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ান। আবার সরে এসে ঢঙ্গি কণ্ঠে বলেন, “বাবুর রাগ কমেনি?”
এবার জোরে ধাক্কা দিলাম। তিনি পরতে গিয়েও টেবিল আকড়ে সামলান। ভ্রু কুচকে ফেলেন। কিছুদূরে কোমড়ে দুহাত রেখে বিক্ষুব্ধ অসন্তোষ নিয়ে বলেন, “তোরা মেয়েরা এক নম্বরের সুবিধাবাদী! চুমু নিলি ফেরত দিলি না। লম্পট!”
অসন্তোষ চোখে তাকিয়ে রইলাম। উনিও প্রচন্ড বিরক্ত। হঠাৎ সশব্দে হাসা শুরু করি। উনি তাড়াতাড়ি এসে মুখে হাত রাখেন। হাসি থামে না। একটু আগের মেয়েলি ঢংটা বারবার চোখের পর্দায় ভাসে। হাসির মাত্রাকে উস্কে দেয়।
ধাতস্থ হলে তিনি চোখ মুছিয়ে দিলেন। হাটু ভাজ করে সামনে বসলেন। আমি আবার ফিক করে হেসে ফেলি। তিনি রাগান্বিত হলেন। পরক্ষণে ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে বললেন, “সরি।”
“যাক সুবোধ হলো!”
আড়চোখে তাকিয়ে, “সারাদিন ফোন না ধরার জন্য বলেছি! অটি ছিল।”
উনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার চুলগুলো নেড়ে বললাম, “বড্ড অগোছালো হয়ে গেছেন।”
তিনি হাসেন। আমি উনার টোল দুটো দুহাতের আঙুলে টিপে দেই। মুহূর্তে হাসি থেমে গেল। আমি নিশব্দে হাসতে লাগলাম। অপলক দৃষ্টি মেলে একসময় আমার দুহাত আকড়ে ধরলেন। তাতে ঠোঁট ছুয়িয়ে উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে যান। পকেট থেকে কিছু বের করেন। আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি। কিছুটা নিচু হয়ে একটা চেইন গলায় পরিয়ে দিলেন। ঘাড়ের চুল সরালেন। শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠি। তিনি কানের পেছনে আলতো চুমু এঁকে ফিসফিসান, “ভালবাসি।”
দেহে আবার শিহরণ বইল। কেঁপে উঠলাম। চোখে পানি এল। তিনি বেরিয়ে গেলেন রুম ছেড়ে। বারান্দা টপকে। মন তোতাপাখিটা খুশিতে নাচানাচি করছে। কখনো ডানা ঝাপ্টিয়ে খুশি প্রকাশ করছে। চেঁচিয়ে বলছে, “অবশেষে___”
সকাল থেকে রুমে বসে ভ্রু কুচকে আছি। চেইনে একটা মাঝারি লকেট ঝোলানো। লকেটটাই আমার চিন্তাভাবনার মূল কারণ। লকেটে ছোট অক্ষরে দুটি শব্দ খোদাই করা, “প্রচণ্ড ভালবাসি তোমাতে!” আশ্চর্য এটা কোন বাক্য হলো? বাক্যের বোধগম্য অর্থটা ঠিক কি প্রকাশ করছে মাথায় আসে না। লকেটটার ভেতরে দুটো ছবি। এবং দুটোই আমার। রাগ হলো উনি উনার ছবি একটা দিতে পারতেন না? আরও আশ্চর্যের ব্যাপার সেগুলো আমার ক্লাস সিক্স, সেভেনের ছবি! উনি পেলেন কোথায়? এই ছবিগুলো আমি তুলিওনি। ভাইয়া বা আপুও তুলেনি! কিছু প্রশ্ন, কিছু অভিমান নিয়ে গাল ফুলিয়ে তাই বসে আছি। আপুর বদৌলতে লকেটটা দেখা। সকালে খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছিলাম। আপুর সন্দিহান কণ্ঠ আসে, “ঝুম গলার চেইনটা কবে কিনলি?”
সবার কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টি আমার ওপর পরল। খাবার মুখে পুরতে পুরতে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম, “গিফট পেয়েছি।”
“কে দিল?”
“বান্ধবী!”
আপু সুচালো দৃষ্টিতে কিছু বলতে যাচ্ছিল। মামী ওর পিঠে চাপড় মারেন। বলেন, “খাওয়ার টেবিলে এত কথা না!”
আপু চুপ করে যায়। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে ওর কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টি আমাতে এসে পরতে থাকে। চোখ ফিরিয়ে দেখি তিয়াস ভাইয়াও সুচালো দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। অসহ্য লাগল। খেয়ে রুমে এসে ফোন ঘাটছি। আপু এসে হাজির। বিরক্ত চোখে তাকাই, আপু হাসে, “চেইনটা খুলে দে তো লকেটটা একটু দেখি!”
“আমার চেইনের পেছনে পরলি কেন!?”
“তোর বফের প্রথম গিফট দেখব না?”
চেইন খুলে হাতে দেই, “বিরক্ত করিস খুব!”
আপু স্বাভাবিক মুখে চেইনটা নিল। লকেট উল্টেপাল্টে দেখে কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে রইল। ওর এমন চেহেরা দেখে বললাম, “কি হয়েছে?”
“শাফি কি বাংলা জানে না?”
“আশ্চর্য জানবে না কেন?”
“তাহলে এটা কি লিখেছে! প্রচণ্ড ভালবাসি তোমাতে!”
তাজ্জব হলাম, “লকেটে কিছু লেখা আছে?”
আপু একবার মুখ তুলে তাকায়। নিরুত্তর আবার লকেটটা ঘাটাঘাটি করতে থাকে। একসময় হাতে নিয়ে চাপ মারে। বিরক্ত হই, “ভেঙে ফেলবি নাকি!?”
আপু উত্তর দেয় না। লকেটটা একসময় খুলে গেল। আমি রেগে কিছু বলতে চাইছিলাম। আপু চেঁচিয়ে উঠে, “আরে এ তো তোর পিচ্চিকালের ছবি!”
দ্রুত আপুর পাশে এসে দাঁড়াই। আপু কিছুক্ষণ জিসান ভাইয়ের বাংলা জ্ঞান নিয়ে হাসাহাসি করল। আমি গাল ফুলিয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম।এসময় ফোনটা বেজে উঠে__
~চলবে❤️
চিল ভাই চিল
কালকে দেই নাই তো কি হয়ছে?
রাতে আরেক পর্ব দিব ডিল😌✊