#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ০৬)
#নাহার
·
·
·
রাফিন নিজের রুমে সোফায় বসে আছে। রাগে চোখ থেকে যেনো আগুন বের হচ্ছে। তার অপর পাশে বেডে কৌশিক বসে আছে। মোবাইল ঘাটছে আর মিটিমিটি হাসছে। আর কোনা চোখে নিরাকে দেখছে। নিরা তাদের সুইজনের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর মনে মনে কৌশিককে গালি দিচ্ছে,
— কুত্তা বিলাই বান্দর হুদাই এই যমরাজকে আমাদের বাড়িতে এনে ভরেছে। তার ঘরবাড়ি নেই নাকি? যত্তসব ঢং। আর এখন দেখো আমাকে কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছে। মাথাটা ফাটিয়ে দিতে মন চাইছে। হুহ।
কৌশিক উঠে দাঁড়ায় আর রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— আমি যাই।
— কই?
কৌশিক মিছামিছি হাই তুলতে তুলতে বললো,
— খুব পাচ্ছে। তুই তোর কাজ কর।
যাওয়ার সময় নিরার দিকে তাকায়। নিরা মাথা তুলে কৌশিকের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কৌশিক হিহি করে হেসে এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
নিরা কৌশিকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
— হারামি আমাকে এখানে রেখে চলে গেলো। আমাকে কে বাচাবে এখন এই যমটা থেকে। আম্মুউউউ!
মুখে কান্নার ভাব। রাফিনের দিকে চোখ যেতেই নিরার কান্নার বেগ বাড়ছে। কারণ রাফিন চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। নিরা নিচের দিকে তাকিয়ে শব্দ ছাড়াই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
রাফিন উঠে দাঁড়ায়। নিরার দিকে এগিয়ে আসছে তা দেখে নিরা পিছাতে থাকে। দুই কানে হাত দিয়ে পিছাতে থাকে। পিছাতে পিছাতে ড্রেসিং টেবিলের সাথে পা লেগে ড্রেসিং টেবিলের উপরই বসে পড়ে। রাফিনের হাসি পাচ্ছে নিরাকে দেখে তাও হাসি চেপে রেখে নিরার সামনে দাঁড়ায়। দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধমকের সুরে নিরাকে বলছে,
— তোমাকে আমি মানা করেছিলাম না বৃষ্টিতে ভিজতে। তাও কেন গেছো?
নিরা চুপ করে কান ধরে বসে আছে। রাফিন আবার ধমক দেয়। রাফিনের ধনকে নিরা কেঁদে দেয়। রাফিনের হাসি খুব কষ্ট করে চেপে রাখে। নিরার কপালে হাত দিয়ে বলে,
— দেখেছো তোমার জ্বর উঠছে। মানা তো শুনো নি। যাও এখন ভাত খাবে তারপর আমার রুমে আসবে। ওষুধ খেতে দিবো। যাও
— হু।
— পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসবে। দেরি হলে আমার থেকে খারাপ কিছু হবে না।
নিরা দৌড়ে নিচে আসে। কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে ভাত নিয়ে তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শুরু করে।
রাফিন এদিকে হেসে কুটিকুটি। মনে মনে বলে,
— কত কিউট একটা বাচ্চা মেয়ে। যেভাবে বলি সেভাবেই চলে। ইচ্ছে করে একটু আদর করি৷
কথাটা বলেই রাফিন হাসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করে। নিরা এসে রাফিনকে বলে,
— আমার খাওয়া শেষ।
রাফিন ঘড়ি দেখে। হালকা হেসে বলে,
— এতো ফাস্ট। নট বেড।
নিরাকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। তারপর নিরাকে বলে,
— এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। মনে থাকবে?
— হু
নিরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাফিন নিরাকে বলে,
— নেক্সট টাইম আমার সামনে আসলে ওড়না পড়ে আসবে। আর জামার গলা এতো বড় রাখবে না এবং শার্ট টাইপ কিছু পড়লে বোতাম এভাবে খোলা রাখবে না।
রাফিন নিরার কাছে এসে পেছন থেকে আবার বলে,
— আমিও পুরুষ মানুষ সাথে প্রেমিক মানুষ। আমার দিকটাও ভেবো। বিয়ের পর না হয়
রাফিনের সম্পূর্ণ কথা না শুনে নিরা দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে। দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে ঘেঁষে বসে যায়। বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে। হার্টবিট একদম বেড়ে গেছে। সাথে খুব বেশি লজ্জাও পেয়েছে। ওই মূহুর্তে যদি রাফিন নিরাকে তার দিকে ঘুরিয়ে দিতো নিরা লজ্জায় মরে যেতো।
রাফিন হাসে। নিরার বোকা বোকা ফেস ওর খুব ভালো লাগে। নিরা যখন ভয় পায় তখন রাফিনের ইচ্ছে করে ওর গাল টেনে দিতে। কিন্তু তা করে না কারণ এতে নিরা আরো ভয় পাবে তাই।
নিরা উঠে আয়নার সামনে যায়। ভালো করে নিজেকে দেখে। এখন লজ্জা যেনো আরো বেড়ে গেছে নিরার। মনে মনে বলে,
— আমিও পাগল। খেয়ালই করিনি দুইটা বোতাম খোলা। ছি! রাফিন ভাইয়া কি ভাবছে এখন। উফফ! এরপর কিভাবে যাবো আমি রাফিন ভাইয়ার সামনে।
আচ্ছা বিয়ের পর একটা কথা বলেছে। কি বুঝাতে চেয়েছে?
আর না ভেবে নিরা শুয়ে পড়ে। শুয়ে শুয়ে ভাবছে রাফিন ওকে আজ কতক্ষণ কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যায় নিরা।
——————————————————————————–
রাত ৩:৩০,,,,
নিরার মোবাইলে সেই তখন থেকে রিং হচ্ছে। নিরা ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল নিয়ে রিসিভ করে ফোন।ঘুমে ঘুম কণ্ঠে বলে,
— হ্যালো
— নিরা আমি তুহিন।
নিরা লাফ দিয়ে উঠে বসে। তারপর বলে,
— কেনো ফোন দিয়েছেন?
— ছাদে আসো। তোমাকে দেখবো।
— আমি এতোরাতে ছাদে যেতে পারবো না। কেউ দেখলে খুব খারাপ হবে।
— তুমি না আসলে আমি তোমার রুমে চলে আসবো।
— মানে? কিভাবে?
— তোমাদের বাসায় কলিং বেল দিয়ে
— মাথা ঠিকাছে?
— হ্যাঁ। এখন বলো আসবে কিনা।
— না
— ওকে আমি আসছি তোমার রুমে। কলিং বাজাচ্ছি দরজা খুলো।
— এই না না। প্লিজ আসবেন না।
— তাহলে তুমি আসো।
— আচ্ছা ঠিকাছে।
নিরা উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে ভালো করে পানি দেয়। তারপর একটা শীতের চাদর গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে চুপিচুপি ছাদের দিকে যায়। ছাদে গিয়ে দেখে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে। নিরা তুহিনের সামনে দাঁড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— কেনো ডেকেছেন?
— তোমাকে দেখতে।
— আমাকে আগে দেখেননি। এখন এইসব ড্রামা করার কি আছে।
— এইসব ড্রামা না।
নিরার হাত ধরে টেনে কাছে আনে৷ নিরা বারবার হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়। তুহিন আরো শক্ত করে হাত ধরে। নিরা রেগে গিয়ে বলে,
— হাত ছাড়ুন আমার। ভালো লাগছে না এইসব।
— এখন আমাকে আর ভালো লাগে না?
— না। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আপনি। আর কোনো ড্রামা ভালো লাগছে না আমার। আর আমি জানি এটাও নতুন কোনো ড্রামা আমাকে কষ্ট দেয়ার।
নিরা জোর করে হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে চাইলে তুহিন পেছন থেকে নিরাকে বলে,
— ভালোবাসি নিরা।
নিরা থমকে দাঁড়ায়। তুহিনের দিকে ফিরে। তুহিন ছলছল চোখে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তুহিন নিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— কিছু বলার জন্য পাচ্ছো না?
নিরা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আসলেই নিরা এখন কিছু বলার জন্য খুজে পাচ্ছে না। কেমন যেনো অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে নিরার নিজেকে। তুহিন এসে নিরার হাত ধরে। ঠিক সেসময় নিরার পেছন থেকে কেউ এসে তুহিনের কলার ধরে নাক বরাবর ঘুসি মারে। তুহিন কিছুটা দূরে গিয়ে মেঝেতে পরে৷
সে আর কেউ নয় রাফিন। রাফিন নিরার দিকে ফিরলে নিরা ভয়ে আতকে উঠে। এর মাঝেই তূর্য ছাদে আসে। তুহিনের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। তূর্য এসে তুহিনকে ধরে। রাফিন রাগের বসে তুহিনকে মারতে গেলে তূর্য ধরে সাথে নিরা এসেও রাফিনকে আটকায়। রাফিন রেগে বলে,
— তোকে লাস্টবার বলছি নিরার থেকে দূরে থাক। আর যদি তোকে নিরার আশেপাশে দেখি অনেক খারাপ কিছু হবে।
রাফিন নিরার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যায়। ব্যাথা পাচ্ছে তাও কিছু বলছে না ভয়ে। এমনিতেই এখন কি হবে সেটা ভেবে নিরার কান্না পাচ্ছে।তুহিনকে নিয়ে তূর্য চলে যায়।
রাফিন নিরাকে নিজের রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দেয়৷ নিরা ভয়ে গুটিসুটি মেরে রুমের এক কোণে বসে আছে। রাফিন এগিয়ে আসতে নিলে নিরা ভয়ে ভয়ে বলে দেয় তুহিন ওকে ভয় দেখিয়ে ছাদে নিয়ে গেছিলো। সব শুনে রাফিন থেমে যায়। কিছু বলে না। বেডে বসে রাফিন।
নিরাকে ডেকে বলে,
— এখানে আসো।
নিরা ভয়ে ভয়ে উঠে রাফিন সামনে দাঁড়ায়। রাফিন ওর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসায়। কপালে হাত দিয়ে বলে,
— জ্বর কমে গেছে। নেক্সট টাইম আমার কথা না শুনলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।
নিরা কিছু বলে না। চুপ করে আছে। রাফিন নিরার হাত ধরে টেনে এনে ওকে বেডে শুইয়ে দেয়। নিরা খুব সাহস নিয়ে বলে,
— আমি এখানে ঘুমালে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
— তোমার পাশে
নিরা এক ঝটকায় উঠে বসে। তারপর বলে,
— আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না। আমি আমার রুমে গিয়ে ঘুমাবো।
রাফিন রেগে বলে,
— এখন এক কদম যদি বেডের নিচে পড়ে মাথায় তুলে আছাড় মারবো৷ ঘুমাও ওইখানেই।
নিরা চাচ্ছে না রাফিনের রুমে ঘুমাতে। কিন্তু রাফিনের ভয়ে শুয়ে পড়ে। রাফিন রুমের বাতি নিভিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিরা ভাবে হয়ত পানি খেতে গেছে। এসেই আমার পাশে যদি শুয়ে পড়ে। নিরা রাফিনের আসার অপেক্ষায় থাকে। রাফিন আসলেই উঠে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যাবে। কিন্তু রাফিন আসে না। অপেক্ষা করতে করতে নিরা ঘুমিয়ে যায়।
·
·
·
চলবে………………….