হৃদয়ের কোণে পর্ব ৪৪

0
866

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪৪)
#নাহার
·
·
·
সন্ধ্যা ছয়টা। নিরা সবার সাথে বসে বসে গল্প করছে। রান্নাঘরে গেছিলো তনিমা খানম ধমকে বের করে দিয়েছেন। তনিমা খানম বললেন,
— আগে সুস্থ হো তারপর রেঁধে খাওয়াস। তখন কিছু বলবো না। এখন যা নিজের রুমে যা।

নিরার চাচি শ্বাশুড়ি হালকা হেসে ড্রয়িং রুমে নিরাকে পাশে বসালেন। চাচাতো ননদ, ভাবি চারজন মিলে গল্প করছে। উনাদের জীবনের গল্প, নিরার বাড়ির গল্প বলে হাসাহাসি করছে। নিরার মনটা খারাপ হয়। এখন যদি নিজের ঘরে থাকতো সবার সাথে কত দুষ্টামি করতো। নাস্তা নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি করতো। এসব ভাবতেই বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নিরার। চোখের কোণে পানি জমে। ওয়াশরুমের বাহানা দিয়ে রুমে এসে ডুকরে কেঁদে উঠে। মনে মনে একটা কথাই বলে,
— কেনো বড় হলাম আমরা? ছোট থেকে গেলেই কি হতো?

বারান্দায় মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর কিছুক্ষণ পরপর চোখের পানি আঁচল দিয়ে মুছে ফেলছে। পেছন থেকে কেউ আচমকা জড়িয়ে ধরে। নিরা ভয়ে একটু কেঁপে উঠে। সেই সুপরিচিত ঘ্রাণ নাকে লাগতেই নিরা শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিরা নাক টেনে বারবার নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রাফিন কপাল কুচকে নিরাকে তার দিকে ঘুরায়। রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইটের আলো বারান্দায় এসে পড়ায় আলোকিত হয়ে উঠে। সেই সাথে নিরার মুখটাও আলোকিত হয়ে উঠে। নিরার চোখের পানি লাইটের আলোয় চিকচিক করে। রাফিন হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— নিরুপাখি কাঁদছো কেনো তুমি? কি হয়েছে বলো? বাসায় কেউ কিছু বলেছে?

নিরা মাথা ঝাকায় ডানে বায়ে। অর্থাৎ “না” বুঝায়। রাফিন শান্ত হয়ে। নিরার কপালে ঠোঁটের পরশ দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়। আস্তে করে বললো,
— বাসার সবার কথা মনে পরছে বুঝি?

নিরা হালকা শব্দ করে কেঁদে উঠে। রাফিন থামায় নি নিরাকে। আগের মতো করেই ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর নিরা নিজেই কান্না থামায়। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে,
— আপনি কখন এলেন?

— কিছুক্ষণ আগে।

— যান ফ্রেস হয়ে আসুন।

— তুমিও চলো।

— কোথায়?

— আমাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিতে।

নিরা মাথা তুলে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিনের চোখে মুখে দুষ্টামি। নিরা সরে আসে। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলেই আঁচল ধরে টেনে আবার কাছে আনে। নিরার পিঠ রাফিনের বুকে এসে লাগে। নিরা দুইহাত মুঠ করে রেখেছে। আবার লজ্জা জেঁকে বসেছে। চোখ বন্ধ করে নেয়। রাফিন আঁচলের ভেতরে নিরার খালি পেটে হাত রাখে। শিউরে উঠে নিরা। কাধে থুতনি রেখে গলায় ছোট একটা কামড় দিয়ে সরে যায়। নিরা চোখ খুলে দেখে রাফিন ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে। বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে নিরা।

——————————
সকালবেলা নিরা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ফজরের আযান পড়লো দশমিনিট হয়েছে। রাফিন নিরাকে বারকয়েক ডেকেছে। না উঠায় গ্লাসে করে পানি নিয়ে নিরার মুখে মারে। নিরা লাফিয়ে উঠে বসে। রাফিন হেসে কুটিকুটি। নিরার রাগ হয়। পরে রাফিনের হাসি দেখে সমস্ত রাগ উবে যায়। রাফিন নিরার বরাবর বসে বললো,
— স্ত্রী নামাজের জন্য ঘুম থেকে না উঠলে হালকা পানি মেরে ঘুম ভাঙানো সুন্নাহ। সেটাই করলাম। মাই ডিয়ার বিউটিফুল ওয়াইফ, তাড়াতাড়ি অজু করে আসুন নামাজ পড়তে হবে।

নিরা তাড়াতাড়ি করে আজু করে আসে। রাফিনের এসব খুনসুটি দুষ্টামি করে নিরার খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে নামাজের আগে এসব বেশি করে। দুজন একসাথে নামাজ পড়ে নেয়। নিরা আবার এসে বেডে বসলে রাফিন বললো,
— এখন ঘুমাতে পারবে না। আসো আসো একসাথে কোর’আন পড়তে বসো।

নিরা হাসি মুখে উঠে রাফিন সামনে বসে। দুজনের পড়া শেষ হলে রাফিন বললো,
— তৈরি হও।

— কেন কোথায় যাবো?

— হাটতে বের হবো।

নিরা বোরকা পরে রেডি হয়ে নেয়। বের হওয়ার সময় দেখলো তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি দুইজনও বের হচ্ছে। নিরা অবাক হয়। কিছু বললো না। চারজন হাটছে। রাফিন এবং নিরা আগে হাটছে। আর রাফিনের বাবা মা তাদের থেকে কিছুটা পেছনে আছে। নিরা বললো,
— মা, বাবাও বের হয় হাটতে?

— হ্যাঁ। প্রতিদিন বের হয়। যখন অস্ট্রেলিয়া ছিলাম তখন মা, বাবাই এই অভ্যাস করিয়েছে আমাকে। আমি বাবা মায়ের সাথে হাটতে বের হতাম। উনারা নিজেদের মধ্যে গল্প গুজব করে হাটতো আর আমি একা একা দৌড়াতাম। এটাও সুন্নাহ।

নিরার থুতনি ধরে বললো রাফিন। নিরা বললো,
— আমাদের বাসায় যখন ছিলেন তখন তো এসব করতে দেখিনি আপনাকে।

— আমি দেখাইনি বলে তুমি দেখোনি। শো আপ করা আমার মোটেও পছন্দ না। তাই কখনো দেখোনি।

নিরা কিছু বললো না। মনে মনে কেনো যেনো খুব খুশি হয়। আগে ঘুম থেকে উঠতেই মন চাইতো না। আবার হাটতে বের হবে ভাবতেই রাগ হতো। আর এখন কেনো যেনো এতো ভালো লাগছে নিরার সেটা নিরা নিজেও জানে না।

বাসায় এসে রাফিন ফ্রেস হতে চলে যায়। তনিমা খানম রান্নাঘরে যান নাস্তা বানাতে। নিরাও যায়। তনিমা খানম হেসে নিরাকে কাছে ডাকেন। জিজ্ঞেস করলেন,
— রান্না বান্না কি পারিস বল?

নিরা খুব ভয় পেলো। ভয়ে মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো করে উত্তর দিলো,
— মা আমি কিছুই পারি না। আগে কিছু খেতে ইচ্ছে করলে ভাইদের বলতাম ওরাই সব বানিয়ে এনে খাওয়াতো।

তনিমা খানম হেসে বললেন,
— সমস্যা নেই। আমি আছি তো তোর মা। তোকে শিখিয়ে দেবো।

নিরাও হাসে। দুজনে মিলে নাস্তা বানানো শেষ করে। নিরা আজ রুটি বানানো এবং আলু ভাজি করা শিখলো। খুব খুশি সে। আগে রান্নাবান্নার নাম শুনলে মেজাজ খারাপ হতো। আর এখন এতো খুশি হচ্ছে নিজের মধ্যে সেটা বুঝাতে কষ্ট হবে। রাফিন খেয়ে হসপিটালের জন্য বের হবে। দরজার সামনে গিয়ে চিল্লিয়ে নিরাকে বললো,
— নিরা আমার ওয়ালেট নিয়ে আসো।

নিরা ওয়ালেট দিয়ে চলে আসতে চাইলেই রাফিন হাত টেনে নিরাকে নিজের কাছে নিয়ে যায়। নাকে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললো,
— ইচ্ছে করেই রেখে এসেছিলাম। যাওয়ার সময় যেনো তোমাকে কাছে ডাকতে পারি তাই।

নিরা অবাক হয়। বললো,
— কেনো?

রাফিন নিরার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দেয়। নিরার ঠোঁটেও হালকা ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললো,
— এই ভালোবাসাটার জন্য। এখন সব ঠিকাছে। শুনো আমি বাসায় আসলে সব ওয়াক্তের নামাজের পাই পাই হিসাব নিবো। মাগরিবের পরেও কোর’আন পড়বে। একটু উলোট পালোট হলেই থেরাপি দিবো। মনে আছে প্রথম রাতের কথা?

রাফিন দুষ্টু হাসে। নিরা ভয়ে ঢোক গিলে। আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নেয়। রাফিন আবারো নিরার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

——————————
দুপুরে রান্নার কাজে তনিমা খানমকে সাহায্য করে নিরা। রান্নায়ও বেশকিছু শিখতে পেরেছে। বিছানা ঘোছানো, ঘর ঝাড়ু দেয়া, ঘর মোছা এসব নিজেই করে। গোসল করে নামাজ পরে শ্বশুর, শ্বাশুড়ি মিলে খেয়ে নেয়। রাফিন লাঞ্চ বাহিরে করে। দুপুরের এটো থালা,বাসন নিরা ধুয়ে রাখে। তনিমা খানম নিরার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
— জানিস আগে আমাকে কাজের কথা বললে শুধু চুরি করতাম। কিভাবে কাজ থেকে পালানো যায় সেটা ভাবতাম। এইসব বাড়ির বুয়াদের কাজ এটা ভাবতাম। কিন্তু আমি ভুল ভাবতাম। যখন তুই তোর বাবা,মায়ের জন্য রাঁধবি খেতে খারাপ হলেও তারা সেই খাবার যে তৃপ্তি নিয়ে খাবে সেই সুখ কোথাও খুজে পাবি না। এরপর যখন নিজের স্বামীর জন্য রান্না করবি সে যখন সারাদিনের ক্লান্ত শরীরে তোর খাবার মুখে দিয়ে তৃপ্তির হাসি দিবে এইসব সুখ পৃথিবীর কোথাও খুজে পাবি না।

তনিমা খানম রান্নাঘর থেকে বের হওয়ার আগে বললেন,
— যা এখন একটু ঘুমিয়ে নে।

নিরা সব ঠিকঠাক করে রেখে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তনিমা খানমের কথা নিরার মনে গেথে গেছে। সেও মনে মনে ঠিক করে রান্না করে সবাইকে খাওয়াবে। একটু মুচকি হাসে রাফিনের কথা মনে হতেই। নিরা উঠে বসে। খাটে হেলান দিয়ে বসে। একটা জিনিস খেয়াল করেছে সে। যেসব আগে একদম ভালো লাগতো না সেসব বিষয় এখন তার খুব ভালো লাগে। নিরা এসেছে পর্যন্ত রাফিনের রুমটা ভালো করে দেখেনি। চারপাশে চোখ বুলায় নিরা।

রুমের মাঝখানে বিশাল বেড। এখানে তার বাচ্চা কাচ্চাসহ ঘুমাতে পারবে। একপাশে ড্রেসিং টেবিল, কাবার্ড। অন্যপাশে বুক সেলফ, পড়ার টেবিল। বেডের বরাবর দেয়ালের সাথে লাগানো লম্বা একটা সোফা। তার বা পাশেই ওয়াশরুম। ওয়াশরুম থেকে পাঁচ ছয় কদম হাটলেই বিশাল বারান্দা। নিরা মনে মনে মনে বললো,
— বারান্দায়ও খাট ফেলে দুজন মানুষ থাকতে পারবে।

বারান্দায় উঁকি দেয়। ফুল গাছ আছে অনেক। একটা দোলনাও আছে। নিরা দৌড়ে গিয়ে দোলনায় বসে। দোলনায় শুয়ে ঘুমাতেও পারবে। নিরা উপরে তাকিয়ে দেখলো টুংটাং শব্দ করা সেই জিনিসটা। নিরা নাম জানে না। তবে বাতাস আসলেই এগুলো দুলতে শুরু করে এবং টুংটাং শব্দ করে। নিরা এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দোলনাতেই শুয়ে ঘুমিয়ে যায়। প্রথম আযানের শব্দে নিরা ধড়ফড় করে উঠে বসে। শাড়ির আঁচল খামচে ধরে। ভয়ে ঢোক গিলে দুই তিনটা। রাফিন এতোটা ভয় লাগিয়েছে যে বলার বাহিরে। চোখ বন্ধ করে বড়বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে। বুকে ফু দিয়ে উঠে যায়। অজু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়। বিছানায় বসে ভাবতে থাকে আগে কেমন ছিলো তার জীবনটা আর এখন কেমন হয়ে গেছে। তবে আগের থেকেও এখনের জীবনটা খুব গুছানো।

——————————-
কলিংবেলের শব্দে নিরা দৌড়ে দরজার সামনে আসে। ভাবলো রাফিন এসেছে। খুশি হয়ে যায়। পরে ভাবলো উনিতো এতো তাড়াতাড়ি আসে না। লুকিং গ্লাসে বাহিরে দেখে নিরা খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। দরজা খুলতেই তিনজন মানুষ নিরার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। খুশিতে কেঁদে। এই তিনজন আর কেউ নয়। নিরার কলেজের বান্ধুবি।

নিরা তাদের নিয়ে বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিরার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে তিনজনকেই পরিচয় করিয়ে দেয়। তনিমা খানম বললেন,
— চুমকি ওদের তোর রুমে নিয়ে যা। গল্প কর। আমি নাস্তা দিচ্ছি।

নিরা বললো,
— মা আপনি কেনো কষ্ট করতে যাবেন।

— আমার মেয়ের বান্ধুবি এসেছে এমনিতেই বসিয়ে রাখবো? সেটা বেমানান। যা তুই।

নিরা তিনজনকে নিয়েই নিজের রুমে যায়। ঝুমুর বললো,
— সরি দোস্ত আমরা কেউই তোর এবং কাশফি আপুর বিয়েতে থাকতে পারলাম না। সবাই নিজেদের নানু বাড়ি গেছিলাম। এর মাঝে এতোকিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

— সমস্যা নেই। আচ্ছা এখানেই ঠিকানা কই পেলি?

নুপুর বললো,
— রাফিন ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিয়েছি। উনিই ঠিকানা দিয়েছেন।

প্রভা বললো,
— আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছিস অনেক। আগে তো সুন্দর ছিলিই এখন রুপ যেনো আরো উপচে পরছে তোর।

ঝুমুর নিরাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
— ভালোবাসার ডোস দিয়েছে তাহলে। তাইতো আরো রুপ বেড়ে গেছে।

নিরা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয়। বান্দর গুলা এসব না বললে কি হতো। নুপুর বললো,
— তোরে আন্টি চুমকি বলে ডাকলো কেন?

— মা আদর করেই ওই নামে ডাকে।

নুপুর নিরাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— তুই এটা ডিজার্ব করিস নিরা। কারণ তোর মনটা অনেক পরিষ্কার। ভালোই হয়েছে তুহিনের সাথে তোর বিয়ে হয়নি।

প্রভা নুপুরের উরুতে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
— ওই হারামির নাম নিস না তো।

নিরা বললো,
— এভাবে বলিস না। তুহিন না থাকলে কাশফি আর তূর্য ভাইয়ের বিয়ে দেয়া কোনোদিন সম্ভব হতো না। ওর প্ল্যানটা মাথায় না আসলে সেদিন মেহরাব আমার সাথে মিস বিহেব করতো আর কাশফির কপাল পুড়তো।

তিনজনেই অবাক হয়। ঝুমুর বললো,
— সরিয়াসলি? তুহিন এতোকিছু করেছে? যাক শেষে এসে মাথার তার জোড়া লাগছে।

এরমধ্যেই তনিমা খানম নাস্তা নিয়ে উপস্থিত হোন। নাস্তা দিয়ে তিনি চলে যেতে নিলে নিরা বললো,
— মা আপনিও বসেন আমাদের সাথে।

— আরেহ না। তোরা নিজদের মধ্যে গল্প কর। মায়ের সামনে হাসি তামাশা করতে গেলে ভয় লাগে সব সন্তানেরই।

প্রভা মিষ্টি একটা নিয়ে তনিমা খানমের মুখের সামনে তুলে বললো,
— আমাদের হাত থেকে তাহলে কিছু নাস্তা খেয়ে যান। নাহলে রাগ করবো খুব।

তনিমা খানম হেসে কিছুক্ষণ গল্প করেন চারজনের সাথে তারপর চলে যান। মাগরিবের আগেই তিনজন চলে যায়। নিরা সব গুছিয়ে রেখে নামাজ পড়ে নেয়।

—————————————-
এশারের পর রাফিন আসে। নিরা আগে থেকেই নামাজ পড়ে ফেলে। রাফিন ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখলো নিরা রুমে ঢুকছে। রান্নাঘরে ছিলো যার কারণে ঘেমে গেছে। নিরার ঘামে ভেজা গলায় চোখ পড়তেই রাফিনের নেশা ধরে যায়। নিরাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিরা চেচিয়ে বললো,
— ছাড়ুন আমাকে। ঘামে একেবারে ভিজে গেছি। হাত মুখ ধুয়ে আসি নাহলে গন্ধ বের হবে।

— হুশ! কোনো কথা না।

রাফিন সোফায় বসে পরে। নিরাকে টেনে এনে নিজের কোলের উপরে বসায়। গলায় চুমু দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে। নিরা খামছে ধরে রাফিনের গেঞ্জি। নিরার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে। নিরার গায়ের ঘ্রাণ নিতে থাকে। নিরা রাফিনের চুলে হাত বলায়। রাফিন বললো,
— হিসাব দাও প্রতি ওয়াক্ত নামাজের।

নিরা বলে আজকে সে সব নামাজ পড়েছে। রাফিন বললো,
— মাগরিবের পর কোর’আন পড়েছো?

নিরা চুপ হয়ে যায়। ভুলে গেছে এই কথাটা। নিরা আমতাআমতা করে বললো,
— না।

রাফিন মুখ তুলে নিরার দিকে তাকায়। নিরা ভয়ে চুপসে যায়। আস্তে করে বললো,
— অভ্যাস নেইতো তাই ভুলে গেছিলাম। এরপর থেকে আর হবে না। সত্যি বলছি।

রাফিন কিছু বললো না। গালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বললো,
— থেরাপির জন্য প্রস্তুত হও।

রাফিন ভ্রু নাচায়। নিরা ঢোক গিলে। ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নেয়।

—————————————-
আড়াইটার সময় রাফিন উঠে বসে। নিরা ঘুমাচ্ছে। রাফিন নিরার মুখে ফু দিতেই নিরা নড়েচড়ে উঠে। নিরার গালে হাত দিয়ে নিরাকে ডাকে। নিরা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় রাফিনের দিকে। রাফিন হেসে বললো,
— উঠো।

— কেনো?

রাফিন দু্ষ্টু হেসে বললো,
— থেরাপি।

নিরা চোখ বড়বড় করে নেয়। রাফিন আবারো হাসে। নিরার নাকে চুমু দিয়ে বললো,
— উঠো একসাথে জান্নাতে থাকার জন্য আল্লাহকে বলি।

নিরা উঠে বসে। বললো,
— কিভাবে?

— নামাজ পড়ে।

— আপনি যে বললেন থেরাপি।

রাফিন ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— চাও নাকি?

নিরা ধাক্কা দিয়ে রাফিনকে সরিয়ে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে আসে। দুজনে একসাথে তাহাজ্জুদ পড়ে নেয়। শুরু হয় একটা নতুন জীবনের নতুন পথ চলা। যেই জীবন নিরা আগে কখনো উপভোগ করেনি। রাফিনের হাত ধরেই শুরু হয় একটা পরিপূর্ণ শান্তিময় জীবন।
·
·
·
চলবে………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here