অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব- ৩

0
1190

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★সন্ধ্যার রক্তিম আভা ঢেকে গিয়ে রাতের অন্ধকার নেমেছে মাত্রই। শীতের লেশ এখোনও আছে। সন্ধ্যা হতেই শীতল বাতাসে শরীর ঠান্ডায় শিরশিরিয়ে ওঠে। গাড়ি থেকে নামতেই শীত শীত অনুভব হলো প্রহরের। প্রহর দ্রুত গিয়ে দরজা নক করলো। খানিক বাদেই জিদান সাহেব এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলেই কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রহরের পানে। যেন সে অনেক বড়ো আকারের কোন অন্যায় করে এসেছে। জিদান সাহেবের এই চাহুনির অর্থ বুঝতে পারছে প্রহর। এই চাহুনি যে তার পূর্ব পরিচিত। তাই সে স্বাভাবিক সুরে বলে উঠলো।
–বাবা ভেতরে আসতে দাও।

জিদান সাহেব দৃঢ় কন্ঠে বললো।
–কেন আসতে দিবো? আজ ঘরে নো এন্ট্রি তোর। তোকে না কতবার বলেছি এতো সকাল সকাল বাসায় ফিরবি না। আরে আজকাল কার ছেলেমেয়েদের মতো একটু নরমাল হতে পারিস না? একটু আড্ডা দিবি,ডিসকো শিসকো যাবি, মেয়ে পটাবি। তানা সন্ধ্যা হতেই ছোট বাচ্চাদের মতো ঘরে চলে আসিস। এসব কি?

প্রহর ভাবলেশহীন ভাবে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো।
–ওয়াও বাবা,ইউ আর রিয়েলি গ্রেট। মানে মানুষের বাবারা বাচ্চাদের ভালো হওয়ার উপদেশ দেয়, আর তুমি সবসময় আমাকে বিগ্রে যাওয়ার উপদেশ দাও। দ্যাটস ইউনিক।

জিদান সাহেব সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলো।
–আমি নরমাল হওয়ার উপদেশ দেই। দিনে দিনে যে যন্ত্র মানবে পরিণত হচ্ছিস সে খেয়াল আছে তোর? পঁচিশ প্লাস চলছে। দুমাস পর মাস্টার্স টাও কমপ্লিট করে ফেলবি। অথচ এখনো পর্যন্ত একটা গার্লফ্রেন্ডের মুখ দেখাতে পারলিনা। ধিক্কার তোর ওপর। এখন তো আমার তোর ওপর সন্দেহ হয়। তোর মাঝে কোন ফিজিক্যাল সমস্যা নেই তো? থাকলে বলতে পারিস।লজ্জার কিছু নেই। আমি ভালো ডাক্তার কে চিনি। চিকিৎসা করালে সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রহর ডাইনিং টেবিলের ওপর থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে খুব স্বাভাবিক সুরেই বলে উঠলো।
–এসব উসকানি মূলক কথা বলে কোন লাভ নেই বাবা। আমার ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তোমার এই অপদার্থ ছেলেকে দিয়েই কাজ চালাতে হবে। ইউ হ্যাভ নো আদার অপশন।

জিদান সাহেব হতাশার সুরে বলে উঠলেন।
–হ্যাঁ তা যা বলেছিস। অপশন নেই বলেই তো তোকে সইতে হচ্ছে। সবার ছেলে মেয়ে রা তার বাবা মাকে এই বয়সে নাতি নাতনীর সুখ দেয়। অথচ আমার অপদার্থ ছেলে আমাকে একাকিত্ব ছাড়া আর কিছুই দিচ্ছে না। কি কপাল করে যে এসেছিলাম।

–আমিতো তোমাকে অনেক আগেই বলেছি তুমি আরেক টা বিয়ে করে নাও। তাহলেই তো তোমার আরও অপশন চলে আসে। আর এতো মেলোড্রামাও করতে হতো না তোমার। জানিনা সব মেলোড্রামা আমার কপালেই কেন জোটে?

জিদান সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন।
–সব মেলোড্রামা মানে? আমি ছাড়া আবার কে এলো তোর জীবনে মেলোড্রামা করতে? এই সত্যি করে বলতো কাহিনি কি?

প্রহর এক মুহূর্তের জন্য খুশির কথা টা মনে করলো। তবে পরমুহূর্তেই তা ঝেড়ে ফেলে বলে উঠলো।
–কিছুই না বাবা। এতো উৎসুক হওয়ার কিছুই নেই।
কথা বলতে বলতে প্রহর টেবিলের ওপর রাখা খাবারের ঢাকনা উঠালো। খাবার দেখে নাক মুখ কুঁচকে বললো।
–আবারও ঢেঁড়স?

জিদান সাহেব দায় সারা ভাবে বললেন।
–হ্যাঁ তো? আমি কি তোর চাকর লেগেছি নাকি, যে রোজ রোজ তোর জন্য নতুন পাকোয়ান বানাবো? ঢেঁড়স যে পাচ্ছিস এটাই তোর সৌভাগ্য। নিত্য নতুন প্রণালী চাইলে বিয়ে করে বৌ নিয়ে আয়।

প্রহর আর কিছু না বলে কিচেনের দিকে এগুলো। ও জানে বাবার সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই নিজের কাজেই মনোনিবেশ করলো সে।শার্টের হাতা বটিয়ে, ডিনারের জন্য খাবার তৈরি করতে লাগলো।বাসায় কাজের বুয়া থাকলেও, বুয়ার হাতের রান্না পছন্দ না প্রহরের। তাই সে নিজেই নিজের আর ওর বাবার জন্য রান্না করে। ওর বাবাও মাঝে মধ্যে রান্না করে। এই বাসায় সদস্য বলতে শুধু ওরা দুজনই।

ডিনার শেষ করে এসে প্রহর কফি হাতে বেলকনিতে বসে আছে। প্রহর একা থাকতেই পছন্দ করে। তাইতো ওর তেমন কোন বন্ধু বান্ধব হয়ে ওঠেনি। ছোট বেলা থেকেই এক ফাহিমই ওর বন্ধু। আর ফাহিমের কিছু বন্ধুর সাথে হালকা পরিচিতি আছে। বাস এতটুকুই। প্রহর নিজেকে নিজের মাঝেই সামিল রাখতে পছন্দ করে। ওর মতে নিজেকে যতো অন্যের সামনে যতো কম প্রচার করা যায় ততই ভালো। এতে করে হোঁচট খাওয়ার ভয় থাকে না।
কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করে পাশে তাকালো প্রহর। ওর বাবাকে দেখে বললো।
–বাবা তুমি? বসনা।

জিদান সাহেব ছেলের পাশে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।
–জানিস তোকে এভাবে দেখে আমার নিজের ওপর অনেক অপরাধ বোধ হয়। মনে হয় আমার জন্যই বোধহয় তোর জীবন টা এমন হয়ে গেছে।
–এভাবে বলছ কেন বাবা? তোমার কোন দোষ নেই।

–আমারই তো দোষ। আমার বিবাহিত জীবনের ব্যার্থতা তোর ওপরে প্রভাব ফেলেছে। আমি জানি তোর মায়ের ওভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া টা তোর ওপরে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলেছে। যার দরুন তুই এখন কাওকে বিশ্বাস করতে পারিস না। নতুন কোন সম্পর্কে জড়াতে ভয় পাস। ভাবিস হয়তো সবাই তোর মায়ের মতোই তোকে ধোঁকা দিবে।

প্রহর চোখ মুখ শক্ত করে বললো।
–বাবা প্লিজ, তোমাকে না আমি কতবার বলেছি ওই মহিলার কথা বলবে না। আর ওই মহিলা আমার মা না। যে মহিলা তার স্বামী আর পাঁচ বছরের বাচ্চাকে রেখে অন্য পুরুষের সাথে চলে যেতে পারে সে কখনো কারো মা হতে পারে না। আমার জন্য তুমিই আমার বাবা মা দুটোই। সো প্লিজ ডোন্ট মেনশন হার। আর হ্যাঁ আমি যেমন আছি অনেক ভালো আছি বাবা। প্লিজ আমাকে নিয়ে অযথা চিন্তা করোনা।

জিদান সাহেব আর কিছু বললেন না। জানে সে ছেলের যুক্তির সামনে পরাজিত হয়ে যাবেন। তাই এখন আল্লাহর কাছে চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তার শুধু একটাই আশা। তার ছেলের বেরঙ জীবনে যেন কেউ এসে রঙিন করে দেয়।
___

♬ পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা রে
♬ পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা

গান গাইতে গাইতে ফ্রিজের কাছে এসে আইসক্রিম বক্সটা বের করলো খুশি। আজ ড্রিম ম্যানকে খুঁজে পাওয়ার খুশিতে মিষ্টি মুখ তো করতেই হয়। হায় আমার ড্রিম ম্যান। এক্কেরে স্টবেরি আইসক্রিমের মতো। সোফায় এসে আরাম করে বসে এক চামচ আইসক্রিম মুখের কাছে নিতেই পাশে তাকিয়ে দেখলো নিভান বুকে দুই হাত ভাজ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। খুশি মুচকি হেসে বললো।
–আরে রাগ করছিস কেন? আমিতো তোকেই প্রথমে দিতে যাচ্ছিলাম। এই নে।

খুশি নিভানের মুখের সামনে এক চামচ ধরলো। নিভান বলে উঠলো।
–আমি আইসক্রিমের জন্য রাগ করিনি। তুমি যখন কোন বিষয়ে অনেক খুশি হও তখনি আইসক্রিম খাও। কিন্তু তুমি আমাকে বললেই না তোমার খুশির কারণ টা কি?

–ওও এই বিষয়। আরে আগে আইসক্রিম তো খা তারপর বলছি। তোকেই তো সবার আগে বলবো।

নিভান এবার হাসিমুখে আইসক্রিম মুখে নিল। আইসক্রিম খেয়ে বললো।
–এখন বলো কি হয়েছে?

খুশি উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–জানিস আজকে না আমি আমার ড্রিম ম্যানকে পেয়ে গেছি।

নিভান চমকিত কন্ঠে বললো।
–সত্যিই? কোথায়? কখন?

খুশি নিভানকে সবটা খুলে বললো। নিভান খুশিমনে বললো।
–ওয়াও আপু ইউ আর সো লাকী। অ্যাম হ্যাপি ফর ইউ।

–থ্যাংক ইউ বাবু। আচ্ছা বলতো তোর নতুন স্কুলে কোন বন্ধু হয়েছে?

নিভান হতাশার সুরে বললো।
–না আপু। তুমিতো জানোই আমি অনেক শায় স্বভাবের। তাই কারোর সাথে সহজে ফ্রী হতে পারি না। তবে একটা মেয়েকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। ওর সাথে একটু বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু মেয়েটা আমাকে বন্ধু বানাবে কিনা কে জানে?

–কেন বানাবে না? আমার ভাইয়ের মতো কিউট আর একটাও আছে নাকি? তুই একবার বলে দেখ। দেখবি হাজার টা মেয়ে তোর বন্ধু হতে চাইবে।

–সত্যি আপু?

–আমার কথায় সন্দেহ আছে তোর?

–না না আপু একদমই না। তোমার কথা তো আমার জন্য চরম সত্য। তুমি যখন বলছ তখন অবশ্যই আমি কিউট। আর আমার বন্ধুও হবে।

–দ্যাটস লাইক মাই বয়।
কথাটা বলে খুশি নিভানকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে দিল।
___

পরদিন খুশি আর দিয়া আবারও একই স্থানে একইভাবে এসে হাজির হলো। আর প্রহর তার স্বভাবগতভাবেই বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। ফাহিম খুশিকে দেখে অত্যাধিক আদিখ্যেতা দেখিয়ে বললো।
–আরে আরে ভাবিজী যে। বসেন বসেন ভাবিজী।

খুশিও গদগদ হয়ে প্রহরের পাশের চেয়ার টা টেনে বসলো। তারপর প্রহরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
–কেমন আছো ডারলিং?

ফাহিমের আবারও কাশি উঠে গেল। এদের মাঝে কিছু হোক না হোক। তবে এদের জন্য বেচারা ফাহিমের যক্ষা হওয়া কনফার্ম। প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
–শাট আপ ইউ শেমলেস গার্ল। তোমার সাহস কি করে হলো আবারও এখানে আসার?

খুশি স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলো।
–ওমা এখানে আসতে কি সাহস লাগে নাকি? আসতে তো পা লাগে। পা দিয়ে হেঁটে হেটেই না আসতে হয়। এতটুকু কমনসেন্সেও নেই দেখছি তোমার? তাহলে আর এতো পড়াশোনা করে কি লাভ হলো?

–জাস্ট শাট আপ। আর লজ্জা করে না তোমার নিজের থেকে এতবড় একজন মানুষকে তুমি করে সম্বোধন করতে? জানো আমি কতো বড় তোমার?

–হ্যাঁ তো কি হয়েছে? বয়ফ্রেন্ড বা হাসব্যান্ড সবসময় বয়সে বড়োই থাকে। তাই বলে কি তাদের আপনি করে বলতে হবে নাকি? আপনি তে না তেমন ফিলিংস আসে না। কেমন মুরুব্বি মুরুব্বি ফিলিং আসে। তাই তুমি করেই বললাম। আগে পরে একসময় তো বলতেই হতো তাইনা? তাই আজ থেকেই শুরু করলাম। আমি জানি তুমি একটু লাজুক এসব বিষয়ে। মনে মনে ইচ্ছে হলেও, উপরে সেটা বলতে পারো না।তাই আমি নিজের পক্ষ থেকেই আরম্ভ করছি।

ফাহিম আবারও খুশিকে মহান বানিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–একদম ঠিক বলেছেন ভাবিজী। এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আপনার মতো একজনেরই তো খোঁজ ছিল প্রহরের। সে সত্যিই ধন্য হয়ে গেল আপনাকে পেয়ে।

প্রহরের রাগের মাত্রা বেড়েই চলেছে।প্রহর একবার ফাহিমের দিকে চোখ গরম করে তাকালো। তারপর খুশির দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–কি বয়ফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড লাগিয়ে রেখেছ? দেখ অনেক হয়েছে। এখুনি এখান থেকে চলে যাও। নাহলে কিন্তু পরিণাম ভালো হবে না। আমার রাগ সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই তোমার।

–হ্যাঁ তো ধারণা দাও না? আরে আমিতো চাই তোমার সম্বন্ধে সবকিছু জানতে। তাইতো এসেছি। আজ আমাদের প্রথম কফি ডেট হবে। কফি খেতে খেতে মনের কথা হবে। অনুভূতির আদান প্রদান হবে। আহা, কি মধুর সময় কাটবে তাইনা?

প্রহরের ধৈর্যের সীমা ছেড়ে যাচ্ছে। জাস্ট নিতে পারছে না আর। খুশি মেয়ে না হলে হয়তো এতক্ষণে সে কথা বলার অবস্থায় থাকতো না। আর লোকজনের সামনে কোন সিনক্রিয়েট করতে চায়না সে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার যথাযথ চেষ্টা করে বলে উঠলো।
–দেখ অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ নাও। তুমি পিচ্চি মানুষ দেখে এখনো বরদাস্ত করছি তোমাকে। জানি তোমরা ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডে থাকতে পছন্দ করো। তাই হয়তো এসব অনেক মজাদার লাগছে তোমার কাছে। কিন্তু আর না। এখুনি এইমুহূর্তে এখান থেকে চলে যাবে তুমি।

খুশি হালকা রাগ দেখিয়ে বললো।
–কি চলে যাও চলে যাও লাগিয়ে রেখছ? আর আমি ছোট হতে পারি। তবে আমার ভালোবাসা একদম পিওর। জানো তোমার জন্য আমি কতো যতনে আমার ভালোবাসা আগলে রেখেছি। কারোর নজর পড়তে দেইনি। আমি নিজেও কারোর ওপর কখনো কুনজর দেইনি। জানো কতো কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছি। চোখের সামনে কতো হ্যান্ডসাম পোলাপাইন ঘুরে বেড়ায়। কত কষ্টে যে তাদের এড়িয়ে যাই সেটা তুমি কি করে বুঝবে?

খুশি দিয়াকে দেখিয়ে একটু মেলোড্রামা করে বললো।
–এইযে এই মেয়েটাকে দেখছ। সে দিনে এতবার খাবারও খায় না যতবার ক্রাশ খায়। অথচ এই আমি আজ পর্যন্ত কারোর সাথে আইসক্রিমও খাইনি। শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি জানতাম একদিন না একদিন আমি আমার ড্রিম ম্যান কে পেয়ে যাবো। তাইতো তার জন্য সব ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলাম।দেখেছ কতটা অনুগত আমি তোমার প্রতি? তাই এখন যখন পেয়ে গেছি আর ছাড়াছাড়ি নাই।তুমি যতই না নোকর করেন কোন লাভ নেই। এই খুশি যখন একবার তোমার লাইফে এন্ট্রি করে ফেলেছে। এখন এক্সিট নেওয়ার রাস্তা নেই।

প্রহর অতিষ্ট হয়ে নিজেই ওখান থেকে উঠে যেতে লাগলো। তবে তার আগেই খুশি প্রহর হাত ধরে ওকে আটকে দিল। প্রহর এবার আরও রেগে গিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো খুশির দিকে। কিন্তু খুশি সেটা একদমই পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো।
–আরে কোথায় যাচ্ছ? আমাদের কফি ডেট এখন শেষ হয়নি তো?

–টু হেল উইথ ইউ, এন্ড ইউর কফি ডেট।
কথাটা বলেই প্রহর হাত ঝাড়া দিয়ে আবারও চলে যেতে উদ্যোত হলো। তবে এক কদম বাড়াতেই হঠাৎ খুশি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। খুশির এই আচমকা রিয়্যাকশনের জন্য প্রহর মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হড়বড়িয়ে গেল সে। আশেপাশের লোকজনও তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে। সবাই বিনা টিকেটে তামশা দেখতে লাগলো। মহা বিড়ম্বনায় পড়ে গেল প্রহর। সে দ্রুত চেয়ারে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? সিনক্রিয়েট করছ কেন ড্যাম ইট? স্টপ ক্রায়িং আই সেড।

খুশির কান্না থামার নাম নেই। সে নেকি কান্না করতে করতে বললো।
–আমি সিন ক্রিয়েট করছি? আমি? আর তুমি যে এক নাম্বারের কিপ্টুস। তার বেলায় কি হ্যাঁ? এই অবলা নারী এক কাপ কফিইতো খেতে চেয়েছে। তাও তুমি খাওয়াচ্ছো না। কিপ্টার বাপ চিপ্টা একটা।

ফাহিম বলে উঠলো।
–আরে ইয়ার কফিই খেতে চাচ্ছে বেচারি। এমন করছিস কেন? খাওয়া না?

প্রহরের শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে তো চাচ্ছে উঠিয়ে একটা আছাড় মারি মেয়েটাকে। জানিনা কোথা থেকে এই আপদ এসে জুটলো। প্রহর হাতের বাঁধন শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। লোকজনের সামনে সিনক্রিয়েট করা যাবে না। আজকাল কার পোলাপানের বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে এসব নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রোল বানিয়ে দিবে। তাই অগত্যা খুশির কথা মেনে নিয়ে বললো।
–ওকে ফাইন খাও তোমার কফি।

সাথে সাথে বিদ্যুৎ এর সুইচের মতো ফট করে খুশির মরা কান্না বন্ধ হয়ে গেল।প্রহর ওয়েটারকে ডেকে কফির অর্ডার দিল। অর্ডার দিয়ে বললো।
–তোমার কফির অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। যত খুশি খাও। দরকার হলে সারাদিন বসে খাও।
কথাটা বলে প্রহর আবারও উঠে যেতে লাগলো। তখন খুশি বলে উঠলো।
–আঁহা, এভাবে না। কফি তো তোমারও খেতে আমার সাথে। তাহলেই না কফি ডেট সম্পূর্ণ হবে।

প্রহর উপয়ান্তর না পেয়ে বসে পড়লো। এই মেয়ের ভরসা নেই। আবারও না সিনক্রিয়েট করে বসে। আর কোন রিস্ক নেওয়া যাবে না। তাই আপাতত ওর কথা মানাটাই শ্রেয় মনে করলো সে। একটু পরেই ওয়েটার চার কাপ কফি নিয়ে এলো। সবাই যার যার টা নিয়ে নিল। খুশি কফি খাচ্ছে কম প্রহরকেই বেশি দেখছে। খুশি এবার ফাহিমের দিকে একটু কাত হয়ে ফিসফিস করে বললো।
–দেবর জী আপনার মনে হচ্ছে না যে, আপনারা দুজন লাভ বার্ডের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হচ্ছেন? এই টাইমে বন্ধুদের কি করা উচিত ভুলে গেছেন নাকি? মনে হয় না আমাদের একটু স্পেচ দেওয়া উচিত আপনার? জলদি জলদি বন্ধুধর্ম পালন করুন। নাহলে কিন্তু বন্ধু নামের কলঙ্কে আখ্যায়িত হবেন।

খুশির ইশারা বুঝতে পেরে ফাহিম দুষ্টু হেসে বললো।
–জ্বি জ্বি ভাবিজী অবশ্যই বুঝতে পেরেছি। আমি এক্ষুনি কেটে পড়ছি। বন্ধু নামের কলঙ্ক হওয়ার মোটও ইচ্ছে নেই আমার।
ফাহিম উঠে দাঁড়িয়ে প্রহরের উদ্দেশ্যে বললো।
–শোন আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।

ফাহিম যেতে লাগলে খুশি আবার বলে উঠলো।
–দেবর জী আমার ফ্রেন্ড দিয়াকেও নিয়ে যান না? ও ওয়াশরুমে যাবে। কিন্তু ও চিনে না। ওকে একটু দেখিয়ে দিবেন?

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।

দিয়া ভ্রু কুঁচকে বেকুবের মতো বললো।
–আমি যাবো ওয়াশরুমে?

খুশি দাঁতে দাঁত চেপে দিয়ার পায়ে একটা খোঁচা মেরে চোখের ইশারায় সবটা বুঝালো। দিয়া বিষয় টা বুঝতে পেরে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাবো, আমি যাবো।
দিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে ফাহিমের সাথে চলে গেল।

ব্যাপার টা প্রহরের কাছে লাগলেও কিছু বললো না সে। আপাতত এই প্যারা থেকে বের হতে পারলেই বাঁচে সে। খুশি পাঁচ মিনিট পর পর এক সিপ করে কফি খাচ্ছে আর আনন্দিত নয়নে প্রহরকে দেখছে। যেন চোখের পলকই পড়ছে না। প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও সে ঠিকই বুঝতে পারছে খুশি তার দিকে চোখ গেড়ে তাকিয়ে আছে।প্রহর একবার আরচোখে তাকিয়ে দেখলো খুশি সত্যিই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে স্ক্যান করে যাচ্ছে ওকে। ব্যাপার টা খুব আনকম্ফোর্টেবল লাগছে ওর কাছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর ইজ্জতের ওপর নজর দিচ্ছে। কোনরকমে দ্রুত কফি শেষ করে উঠে চলে গেল প্রহর। আর খুশি হাতের ওপর গাল ঠেকিয়ে প্রহরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললো।
–যেতে চাও তুমি যাও যত দূরে,
ঘুরেফিরে আসবে তুমি এ মনের ঘরে।
বাহ খুশি তুইতো কবি হয়ে গেলি। এতো ট্যালেন্ট কই রাখবি তুই?

চলবে…….

গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here