#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২১
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★পিটপিট করে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করছে খুশি। মাথাটা প্রচন্ড ভার লাগছে ওর। এক হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ খুলে তাকালো ও। চোখের সামনে সবকিছু অপরিচিত লাগছে ওর কাছে। বিস্মিত চোখে চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ও কোথায় আছে। এখানে চারপাশে বাঁশের দেয়াল। মাথার ওপরে ছনের ছাউনি। এসব কি? আমি কোথায় আছি? আর এখানে কিভাবে এলাম? খুশির হঠাৎ মনে পড়লো তখনকার কথা। আৎকে উঠলো খুশি। তারমানে কি কেউ ওকে কিডন্যাপ করে এনেছে?
খুশির ভাবনার মাঝেই হঠাৎ প্রহর হাতে করে একটা ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকে বাঁকা হেসে বললো।
–আরে বাহ্ মহারাণীর ঘুম ভেঙেছে তাহলে? বাপরে তুমি তো আমাকে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে। ওই সামান্য ক্লোরোফোমে কেউ এতক্ষণ বেহুশ থাকে নাকি? সারাটা রাত ঘুমিয়ে থাকলে।
খুশি যেন বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো।
–তারমানে কি তুমি আমাকে বেহুঁশ করে এখানে এনেছ?
প্রহর ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
–ওমা তো আর কারোর সাহস আছে নাকি আমার দুষ্টুপরিকে কিডন্যাপ করার? এতবড় বাপের বেটা এখনো পয়দা হয়নাই বুঝেছ? আর বেহুঁশ করার কি আছে? তোমার কোন হুঁশ থাকলে না বেহুঁশ করবো। আরে হুঁশ থাকলে কি আর এসব আবালের মতো কাজকাম করতে? আর না আজ আমাকে এসব করতে হতো।
খুশি কোনরকমে নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠে বললো।
–এসব কি করেছ তুমি? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
প্রহর ট্রে টা সামনের টেবিলে রেখে। ছুরি দিয়ে ফল কাটতে কাটতে বললো।
–সেতো কবে।তুমি এতদিনে বুঝলে? আরে আমার মাথাতো সেদিনই রিটায়ার্ড হয়ে গেছে, যেদিন থেকে তুমি আমার লাইফে এসেছ। আরে কোন ব্রেইন ওয়ালা সুস্থ সবল ব্যাক্তি কি তোমার প্রেমে পড়বে নাকি?
খুশি এবার তেতে উঠে বললো।
–এক মিনিট! কি বলতে চাইছ তুমি? তুমি কি বলতে চাইছ কোন সুস্থ সবল ব্যাক্তি আমাকে ভালোবাসবে না? তারমানে কি আমি পাগল?
–দেখ তুমি নিজেই নিজেকে পাগল বলছ? এখন আবার আমার দোষ দিওনা।
–এই এই একদম কথার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করবে না। আমি মোটেও পাগল না বুঝেছ?
–এটা কি তুমি আমাকে বুঝাতে চাইছ? না নিজেকে? এন্ড এনিওয়ে সব পাগলরাই বলে আমি পাগল না।
খুশি এবার আরও খেপে গিয়ে বললো।
–আমি মোটেও পাগল না। পাগল তুমি বুঝেছ? তুমি তুমি তুমি..
প্রহর খুশির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বাঁকা হেসে বললো।
–হ্যাঁ পাগল তো আমি নিশ্চয়। তোমার প্রেমে পাগল। আর শুধু পাগল না। দিওয়ানা, উন্মাদ পাগল।
কথা বলতে বলতে প্রহর খুশির একেবারে কাছে চলে এলো। প্রহরের কথাবার্তা আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। কিছুটা সেই পূর্বের খুশির মতো। খুশির বিস্ময় যেন কাটছেই না। প্রহর খুশির কপালের পড়ে থাকা চুলটা আঙুলের সাহায্যে কানের পিছে গুঁজে দিয়ে ভাবপ্রবন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
–আর এই পাগলের ট্রিটমেন্ট একমাত্র তোমার কাছেই আছে। পারলে ট্রিটমেন্ট করো। নাহলে এই পাগলের সাথে নিজেও পাগল হয়ে যাও। দুজনে মিলে একটা পাগলের সংসার গড়ে তুলবো কেমন?
প্রহরের এমন খাপছাড়া কথাবার্তায় খুশি হতবিহ্বল হয়ে যাচ্ছে। খুশির খেয়াল হলো এসব চক্করে ও আসল বিষয় টাই ভুলে গেছে। প্রহর ওকে কথার জালে ফাঁসিয়ে আসল ব্যাপার থেকে পথভ্রষ্ট করছে। খুশির সেটা বোধগম্য হতেই খুশি প্রহরের কাছ থেকে একটু সরে গিয়ে শক্ত গলায় বললো।
–দেখ কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবেনা। আমাকে এখানে কেন এনেছ? কি করতে চাইছ তুমি? দেখ এসব বন্ধ করো। এসব করে কোন লাভ হবে না।
প্রহর খুশির হাত টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মোহময় চোখে তাকিয়ে বললো।
–লাভ হবে কি হবেনা এটা নাহয় আমার ওপরই ছেড়ে দাও।
–দেখ তুমি কিন্তু ভুল করছো। এসব কিন্তু অন্যায়।
–আমিতো তোমাকে আগেই বলেছি। তোমাকে ফিরে পেতে যদি আমাকে দুর্ধর্ষ অপরাধীও হত হয় হবো। আমার মঞ্জিল শুধু তুই। আমি কোন মহান প্রেমের ইতিহাস গড়তে চাইনা। আমি শুধু তোর সাথে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বাঁচতে চাই। স্বার্থপর আমি, অনেক স্বার্থপর। তোর জন্য আমি চরম স্বার্থপর। তোমার সাথে থেকে আমিও একটু ফিল্মি হয়ে গেছি। তাই একটা ফিল্মি ডায়লগ বলছি শোনো।
“” মে তুম হে ভুল যাউ ইয়ে হো নেহি সাকতা
(আমি তোমাকে ভুলে যাবো এটা হতে পারে না)
অর তুম মুঝে ভুল যাও ইয়ে মে হোনে নেহি দুঙ্গা
(আর তুমি আমাকে ভুলে যাও এটা আমি হতে দিবোনা)
প্রহরের হৃদয় নিংড়ানো আবেগী কথায় খুশি সম্মোহিত হয়ে গেল। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো প্রহরের চক্ষু পানে। প্রহর দুষ্টু হেসে বললো।
–কি দেখছ? আজ কি একটু বেশিই এট্রাক্টিভ লাগছে আমাকে?
খুশির কানের কাছে ঝুঁকে বললো।
–ডু ইউ ওয়ান্ট টু ইট মি? ইফ ইউ ওয়ান্ট আই ক্যান সার্ভ ইউ।
খুশির চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। এ কোন প্রহরকে দেখছে ও? এটা প্রহর হতেই পারে না। প্রহরকে ভুতে টুতে ধরলো নাতো? নিজের বিস্ময় সামলে নিয়ে খুশি প্রহরের বুকে ধাক্কা দিয়ে প্রহরকে সরিয়ে দিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো।
–কিসব ফালতু কথা বলছ? আর তুমি চাইলেই কি সব হবে নাকি? আমি এখুনি চলে যাবো এখান থেকে। দেখি কিভাবে আটকাও আমাকে?
কথাটা বলে খুশি ধুপধাপ পা ফেলে রুমের বাইরে চলে গেল। প্রহর পেছন থেকে বাঁকা হেসে বললো।
–যাও চেষ্টা করে দেখ পারো নাকি।
খুশি বাইরে এসে চারপাশে তাকাতেই হতবাক হয়ে গেল। কারণ এমনিতে এই কটেজের চারিদিকে বাঁশের বেড়া দ্বারা আটকানো।আর বেড়ার বাইরে সামনে যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু সমুদ্র ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। আশেপাশে কোন মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। খুশি হতভম্ব হয়ে গেল। এটা ও কোথায় চলে এসেছে? এখন এখান থেকে কিভাবে যাবে?
পেছন থেকে প্রহর প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে এসে বললো।
–এটা প্রহরের মায়াজাল বেবি। এখান থেকে বের হওয়া এতো সহজ না।
খুশি প্রহরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো। –এটা কোন জায়গা? কোথায় নিয়ে এসেছ তুমি আমাকে?
–এটা প্রহরের গড়া প্রাসাদ শুধুমাত্র আমার খুশি রাণীর জন্য। কাল একদিনের ভেতর আমি এটা বানিয়েছি। তুমি চাইলেও এখান থেকে যেতে পারবে না। কারণ এটা সেন্টমার্টিন দ্বিপের এমন একটি স্থান যেখানে মানুষের কোন নাম গন্ধ নেই। শুধু নির্জন পরিবেশে তুমি আর আমি। কত্তো রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার না?
–কেন করছ এসব পাগলামি? এতে কিছুই হাসিল হবে না। কেন নিজের জীবন টা আমার পেছনে বর্বাদ করছ? প্লিজ আমাকে রিসোর্টে ফিরিয়ে দিয়ে আস।
–বর্বাদ তো অনেক আগেই হয়ে গেছি তোমাতে। তাই যে করেই হোক তোমাকে তো আমার চাই। আর এখান থেকে তুমি ততক্ষণ ছাড়া পাবে না যতক্ষণ না তুমি মেনে নিচ্ছ যে তুমি এখনও আমাকেই ভালোবাস।
–এটা কখনোই হবে না। তুমি যত যাই করো তাতে লাভ হবে না। শুধু হিতে বিপরীতই হবে। তুমি কি ভেবেছ আমাকে এখানে আটকে রাখলে সব ঠিক হয়ে যাবে? এটা তোমার ভুল ধারণা। আর আমি তোমাকে সেটা প্রমাণ করেই ছাড়বো।
–লেটস সি দেন। হু উইল বি উইন। তোমার মিথ্যে অভিনয় জিতে,নাকি আমার সত্যি ভালোবাসা? এখন থেকে রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টাই তোমার চোখের সামনে শুধু আমাকেই দেখতে পাবে। দেখি কতক্ষণ নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারো। ইট উইল বি ফান।
প্রহর খুশির কাঁধের ওপর ঝুঁকে দুষ্টু সুরে বললো
–বায়দা ওয়ে তোমাকে পিংক ড্রেসে কিন্তু মারাত্মক কিউট লাগছে। দিল বাত্যমিজ হয়ে যাচ্ছে।
খুশি চোখ বড়বড় করে প্রহরের দিকে তাকাতেই প্রহর চোখ টিপ মেরে দিল। খুশি বেচারির মুখ গোল আলুর মতো হা হয়ে গেল। হাতের ধাক্কায় প্রহরকে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলেই প্রহর পেছন থেকে খুশির হাত ধরে ফেললো। খুশি প্রহরের দিকে ফিরে তাকালে প্রহর মুচকি হেসে গান ধরলো।
♬ জানাম দেখলো মিটগায়ি দূরিয়া
♬ মে ইঁহা হু ইঁহা, হু ইঁহা,হু ইঁহা
♬ কেইসি সারহাদে, কেইসি মাজবুরিয়া
♬ মে ইঁহা হু ইঁহা, হু ইঁহা, হু ইঁহা
(খুশি প্রহরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলো। প্রহরও ওর পাশে গিয়ে বসে খুশির কাঁধ জড়িয়ে খুশিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে,হাতের মধ্যমা আঙুল খুশির কপাল থেকে স্লাইড করে নিচে আনতে আনতে গাইলো)
♬ তুম ছুপা সাকোগি মে ও রাজ হু
♬ তুম ভুলা সাকোগি ও আন্দাজ হু
♬ গুঁঞ্জতা হু যো দিলমে তো হেয়রা হো কিউ
♬ মে তুমহারি হি দিল কি তো আওয়াজ হু
♬ শুন সাকো তো শুনো ধারকানো কি জুবা
♬ মে ইঁহা হু ইঁহা, হু ইঁহা, হু ইঁহা
(সংক্ষিপ্ত)
__
তিশাকে নিয়ে বিচে এসেছে ফাহিম। বেড়ানোর উদ্দেশ্যে না। তিশাকে দিয়ে খাটানোর উদ্দেশ্যে। বেচারিকে পার্সোনাল সেক্রেটারি কম আয়া বানিয়ে দিয়েছে ফাহিম।তিশা এক হাতে পাইপ লাগানো ডাব আর আরেক হাতে টাওয়াল ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে দুঃখে শরীর রি রি করলেও কিছু করতে পারছে না সে। এই বদমাশ টা যে চরম ফাঁসা ফাঁসিয়ে দিয়েছে ওকে। তবে আমার নামও তিশা। একেতো আমি মজা দেখিয়েই ছাড়বো। আজকে তো একে পাবলিকের রাম ধোলাই খাইয়ে ছাড়বো। বেটা বুঝবে কার সাথে লাগতে এসেছিল। মনে মনে প্ল্যান করে সয়তানি হাসি দিল তিশা।
কিছুক্ষণ পর ফাহিম সমুদ্রের পানি থেকে উঠে এলো। তিশার কাছে এসে এক হাত থেকে তোয়ালে টা নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আরেক হাত থেকে ডাব টা নিয়ে পাইপের সাহায্যে ডাবের পানি সেবন করতে লাগলো। তিশা দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–দেখুন এখন কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আপনি যা বলেছেন আমি করেছি। এখন প্লিজ এসব বন্ধ করুন। আরে আপনার পিছে পিছে আয়া হয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমি আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে কোন আড্ডাই দিতে পারছিনা। তাই আমি আর এসব করতে পারবোনা। আমি চললাম।
কথাটা বলেই তিশা উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলেই ফাহিম তিশার হাত ধরে ফেললো। বাঁকা হাসলো তিশা। এটাই তো ও চাচ্ছিলো। এখন হবে মজা। ফাহিম মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিশা হঠাৎ উচ্চস্বরে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলতে লাগলো।
–বাঁচাও বাঁচাও, কেউ আছ প্লিজ আমাকে বাঁচাও। এই সয়তান টা আমাকে ধরে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
তিশার এই ক্রিয়াকার্যে ফাহিম টাস্কি খেয়ে গেল। মেয়েটার মাথার তার ছিড়ে গেল নাকি সেই চিন্তা করছে। তিশার ড্রামায় কয়েকজন ছেলে ওদের কাছে এগিয়ে এলো। ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
–কি হয়েছে এখানে?
তিশা মেলোড্রামা করে বললো।
–দেখুন না ভাইয়া এই বদমাশ টা আমার সাথে ইভটিজিং করছে। আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে প্লিজ বাঁচান না আমাকে।
তিশার ড্রামায় ভ্রু কুঁচকে এলো ফাহিমের। বুঝতে পারছে কি করতে চাইছে ও। ছেলেগুলো ফাহিমের দিকে এগিয়ে এসে প্রখর চোখে তাকিয়ে বললো।
–ওই তোর সাহস তো কমনারে। আমাদের সামনেই মেয়েবাজি করছিস? হাত পা নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাস না নাকি? ভালো চাশতো এখুনি ওর হাত ছাড়। নাহলে কিন্তু তোর মায়ের বুক খালি হয়ে যাবে।
ফাহিম ভালো করেই বুঝতে পারছে এই ছেলেগুলো কোন ধরনের। তাই হঠাৎ মুখভঙ্গি বদলে নিয়ে ভীতু স্বরে বললো।
–আরে আরে ভাই আমার এতো সাহস কই আপনাদের সাথে লাগার। আমি তো ছোট্ট নান্না মুন্না বাচ্চা মানুষ। ভুল হয়ে গেছে ভাই আর কখনো হবে না।
ছেলেগুলো বিজয়ের গর্বিত হাসি দিয়ে বললো।
–ঠিক আছে ঠিক আছে। আজ প্রথম বার বলে মাফ করে দিলাম। আর যেন এসব না দেখি। যা এখন এখান থেকে।
–জ্বি ভাই।
ফাহিম মাথা ঝুঁকিয়ে ওখান থেকে সরে গেল। তিশা মনে মনে বিশ্বজয়ের হাসি দিল। যাক শেষমেশ এই আপদ টা থেকে মুক্তি পেল।হুঁহ্ এসেছিল তিশার সাথে লাগতে। দিলাম ঘোল খাইয়ে। তিশা ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো।
–আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য। এখন আসি আমি।
কথাটা বলে তিশা চলে যেতে নিলেই ছেলে গুলো ওকে ঘিরে ধরলো। তারপর সয়তানি হেঁসে বলে উঠলো।
–এতো জলদি কিসের সুন্দরী? ধন্যবাদ জ্ঞাপন টা আরও একটু ভালো করে দিলে নাহয় জমতো। এমন শুঁকনো শুঁকনো ধন্যবাদে কও হবে?
তিশার ভয়ে গলা শুঁকিয়ে এলো। ওতো আসমান থেকে পড়ে খেজুরে আটকে গেল। এক ঝামেলা থেকে বের হতে গিয়ে আরও বড় বিপদে পা ফেললো। এরাতো হিরো না ভিলেন। একজনের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজেরাই ভোগ করতে চায়। এরচেয়ে তো ফাহিমের সাথেই ভালো ছিলো। কমছে কম ছেলেটা ওর দিকে কু নজরতো দিতো না। এখন কি করবে ও? বেশি পন্ডিতি দেখাতে গিয়ে ফেসে গেলি। তিশা আশেপাশে তাকিয়ে ফাহিমকে খোঁজার চেষ্টা করছে। এখন একমাত্র ওই ভরসা। কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছে না ফাহিমকে। তিশার এবার ভয়ে আত্মা কাঁপছে। কি করবে এখন ও? কিভাবে বাঁচবে ওদের হাত থেকে? তিশা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। হঠাৎ ফাহিমের কন্ঠ শুনে ফট করে চোখ খুলে তাকালো তিশা। ফাহিম ওখানে এসে ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বললো।
–সরি ভাই আপনাদের আবার ডিস্টার্ব করছি। আসলে আমার আংটি টা বোধহয় এখানেই কোথাও পড়েছে। তাই খুঁজতে এসেছি।
ছেলেগুলো মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। ফাহিম আংটি খোঁজার বাহানায় তিশার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো।
–কি মজা হচ্ছে তো এখন? আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এরা কেমন লোক। তাই চুপচাপ চলে গিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারবেন বেশি চালাকি দেখাতে গেলে কি হয়। আমার সাথে ডাবল গেম খেলতে চাইছিলেন না? এখন দেখেন কেমন লাগে?
তিশা কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
–প্লিজ মাফ করে দিন আমাকে। অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে আমার। আপনি যা বলবেন তাই করবো। তবুও প্লিজ বাচাঁন আমাকে।
–এখন আর বলে কি লাভ? দেখেছ এরা কতজন আর আমরা মাত্র দুজন। এদের সাথে কিভাবে পারবো? আমি কি বাহুবালী নাকি? তাই এখন আর কোন উপায় নেই।
–প্লিজ এমন করে বলবেন না। আমি পায়ে পড়ছি। প্লিজ বাঁচান আমাকে।
–দেখ এখন শুধু একটাই উপায় আছে।
–কি??
ফাহিম তিশার হাত ধরে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–ভাগোওওওও….
বলতে না বলতেই দুজন ভোঁ দৌড় দিল। ছেলেগুলো প্রথমে হকচকিয়ে উঠে পড়ে তারাও দৌড়ালো ওদের পিছে। ওরা দুজন দৌড়াতে দৌড়াতে পর্যটকদের ভীরের মধ্যে ঢুকে পড়লো। এত মানুষের ভীড়ে ছেলেগুলো আর খুঁজে না পেয়ে ওরা ফিরে গেল। ফাহিম তিশা দৌড়ে অনেক দূর চলে এলো। যখন দেখলো ছেলেগুলো আর পিছে নেই। তখন ওরা থামলো। হাঁটুতে দুই হাত ভর দিয়ে হাঁপাতে লাগলো ওরা। কিছুক্ষণ পর ওরা দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতে একসময় বালির ওপর শুয়ে পড়লো ওরা।
___
হাঁটুর মাঝে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছে খুশি।চিন্তার বেড়াজাল তার মস্তিষ্ক জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। ও যতো সবটা গোছাতে চাইছে ততই যেন সবকিছু বালির মতো হাত থেকে গড়ে পড়ছে। প্রহরকে যতো দূরে সরাতে চাইছে ততই অসফল হচ্ছে। কোন ক্রিয়াকৌশল ওর ওপর প্রতিক্রিয়া ফলাচ্ছে না। এখন আবার এইখানে এনে আঁটকে রেখেছে। তাও ভালো সুযোগ বুঝে বিবিকে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি যে,আমি ঠিক আছি আমার জন্য যেন চিন্তা না করে। নাহলে তো আমাকে না পেয়ে বাসার সবাই এতক্ষণে চিন্তায় পড়ে যেত। কিন্তু এখন পাগলকে কিভাবে বুঝাবো?
গট গট পায়ের শব্দে প্রহরের আসার আগমন বুঝতে পেরে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল খুশি। যতটা সম্ভব শুধু ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ দেখাতে চায় প্রহরকে। প্রহর ট্রে হাতে রুমে ঢুকে প্রফুল্লচিত্তে বললো।
–টাডা… বান্দা আপনার সেবায় হাজির রাণী সাহেবা। দেখ তোমার হ্যান্ডসাম শেফ তোমার কি বানিয়েছে। গরমা গরম ক্রিসপি এন্ড স্পাইসি প্রন ফ্রাই। একেবারে সমুদ্র থেকে টাটকা ধরে এনে তোমার জন্য বানিয়েছি। তোমার তো প্রন অনেক পছন্দ না?
প্রন ফ্রাইয়ের কথা শুনে মুখে আধামন চলে আসলেও নিজেকে কন্ট্রোল করার যথাযথ প্রয়াসে নিয়জিত আছে খুশি। উল্টো মুখি অবস্থায়ই বললো।
–খাবোনা আমি।
প্রহর খাবারের ট্রে টা বেডের রেখে বললো।
–আর ইউ শিওর?? দেখ আমার কিন্তু অনেক ক্ষুদা লেগেছে। জানি তোমারও লেগেছে। তাই ফটাফট খেয়ে নাও। নাহলে কিন্তু আমি সব সাবার করে ফেলবো।
বেডের ওপর ট্রে রাখায় প্রন ফ্রাইয়ের তীব্র সুস্বাদু ঘ্রাণ নাক দিয়ে ঢুকে সোজা পেটে গিয়ে আঘাত করছে। খুশির দৃঢ় সংকল্পের সাথে রীতিমতো ওয়ার্ল্ড ওয়ার শুরু করে দিয়েছে। অবাধ্য চোরা চোখ বারবার ওদিকেই যাচ্ছে। সকাল থেকেই না খেয়ে থাকায় ক্ষুদাও লেগেছে অনেক। তারওপর এমন সুস্বাদু খাবার সামনে এনে খুশিকে সাংঘাতিক ভাবে টর্চার করছে প্রহর। খুশির মনোভাব বুঝতে পেরে প্রহর আবার বলে উঠলো।
–দেখ আমি তিন গুনবো। এর ভেতর যদি তুমি না খাও তাহলে কিন্তু আমি খেয়ে নিবো। এন্ড আই মিন ইট।
প্রহর গোনা শুরু করলো।
–এক…………দুই………আড়াই…….পনে তিন…….. এন্ড নাউ ফাইনালি তি….
তিন পুরো করার আগেই খুশি ওর সংকল্প কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত রেখে ঝট করে একটা চিংড়ি তুলে নিয়ে কামড় বসিয়ে দিল। প্রহর মুখ লুকিয়ে হাসলো। খুশির নজর এড়ালো না। খুশি আত্মগর্বের সুরে বললো।
–দেখ হাসবে না একদম। আমি খাচ্ছি কারণ আমি সুস্থ থাকতে চাই। যাতে তোমাকে আমি ভুল প্রমান করতে পারি। তানা হলে আমি মোটেও খেতাম নাহ।
প্রহর হাসি চেপে ধরে বললো।
–ইয়া ইয়া অফকোর্স। আই ক্যান টোটালি আন্ডারস্ট্যান্ড।
খাওয়া শেষে প্রহর প্লেট বাসন আবার রেখে আসলো। বেডের ওপর এসে কোন পূর্ব বার্তা ছাড়াই অনায়াসে খুশির কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আচমকা কান্ডে খুশি একটু থতমত খেয়ে গেল। অপ্রস্তুত গলায় বললো।
–এই এই কি করছ তুমি? ওঠ, ওঠ বলছি।
খুশির কথা কর্নপাত না করে খুশির হাতটা নিজের মাথায় রেখে বললো।
–মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাওনা। মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে। তোমার হাতের পরশ মাখিয়ে দাও একটু প্লিজ।
এমন আবদার কিভাবে ফেলবে খুশি? মন যে বড্ড বেশি বেহায়া। পারলোনা মানা করতে। হাত উঠিয়ে চালান করে দিল প্রহরের মসৃণ কেশবনে। আবেশে আঁখি যুগল বুজে নিল প্রহর। চেহারায় প্রসন্নতার ছায়া এনে বললো।
–জানো মনে হচ্ছে এখানেই সারাটাজীবন থেকে যাই। তুমি আর আমি মিলে এই নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে আমাদের আলাদা এক পৃথিবী গড়ে তুলবো। যেখানে শুধু তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না। কত্তো সুন্দর হবে সবকিছু তাইনা বলো? তোমার কি মনে হয়?
–ইঁদুর।।
প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ইঁদুর?? ইঁদুর কোথাথেকে আসলো?
–আরে আসলো না, এসে গেছে। মেঝেতে ইঁদুর।
প্রহর ফট করে চোখ খুলে হড়বড়িয়ে বেডের মাথার উপর উঠে বসে বললো।
–ই ইঁদুর?? কোথায় ইঁদুর? কিভাবে এলো ইঁদুর?
প্রহরের প্রতিক্রিয়া দেখে খুশি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বললো।
–প্রহর তুমি ইঁদুর কে ভয় পাও??
প্রহর গলা খাঁকারি দিয়ে আমতাআমতা করে বললো।
–হো হোয়াট রাবিশ? আমি আর ভয়? হাঁহ্, নো চাঞ্চ। আমিতো বরং তোমার জন্য চিন্তিত হচ্ছিলাম। তুমি ভয় পাওনি তো? দেখ তুমি ভয় পেও না। আমি আছিতো। আমার কাছে চলে আস। আমি থাকতে তোমার কোন ভয় নেই।
প্রহরের এই অপক্ব দলিল খুশির সন্দেহকে আরও মজবুত করে দিলো। খুশি আচমকা ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো। হাসতে হাসতে বেচারির কোমড় বাঁকা হয়ে গেল। হাসির মাঝে বলতে লাগলো।
–লাইক সিরিয়াসলি প্রহর?? তুমি ইদুর ভয় পাও? আই মিন দ্যা গ্রেট প্রহর মেহরাব, যে কিনা এক হাতে দশ জনকে কুপোকাত করতে পারে। সে কিনা সামান্য ইঁদুর ভয় পায়? ও মাই গড। এটাতো ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাওয়া দরকার।
বলতে বলতে খুশি হেঁসে হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তবে প্রহরের রাগ হচ্ছে না। কেন হবে? আজ কতদিন পরে ওর দুষ্টুপরির মন খোলা হাসি দেখছে। যে হাসিটাই একসময় প্রহরের ভালো থাকার টনিক ছিল। আজ এতদিন পরে আবারও সেই টনিকের ডোজ পেল প্রহর। শরীর মন প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল। ওর খুশিকে এভাবে হাসিখুশিই দেখতে চায় ও। আর তার জন্য সব করতে রাজি ও। এখানে আসাটা নিশ্চয় ওর জন্য পজিটিভ কিছু এনে দিবে।
চলবে……
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/