#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৪
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★ কালো নিশি ঢলে পড়েছে চারপাশে। তবে এই রাতের থেকেও বেশি কালো অন্ধকার ঘিরে খুশির জীবনে। এই অসহনীয় যন্ত্রণার থেকে তো মরণ ঢের ভালো। তবে এইমুহূর্তে নিজের চাইতে বেশি প্রহরের চিন্তা হচ্ছে। আজকে প্রহরকে একেবারে অন্যরকম লাগছিল। এর আগে কখনো এমন দেখা যায় নি ওকে। নাজানি ওর ভেতর কি ঝড় চলছে? ওর মেন্টাল স্টেটমেন্ট এই মুহূর্তে ঠিক নেই। ও আবার উল্টো পাল্টা কিছু করে না বসে। এসব চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে খুশি। রুমের মাঝে পায়চারী করছে শুধু। কয়েকবার প্রহরের নাম্বারে ফোন দেওয়ার চেষ্টাও করেছে কিন্তু প্রহর ফোন ধরেনি। তারপর থেকে ওর ফোন বন্ধ আসছে।
বারে বসে একের পর এক এলকোহল পান করে যাচ্ছে প্রহর। তবে কিছুতেই কিছু হচ্ছে। বুকের আগুন কিছুতেই কমছে না। কানে শুধু বারবার খুশির বলা সেই কথাটাই ভাসছে। তার সাথে বাড়ছে দহন জ্বালা।সারা শরীর জ্বলছে দাউ দাউ করে। এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীটাকে নিজের আগুনে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। যন্ত্রণায় সারা শরীর ফেটে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না আর প্রহর। গ্লাস বাদ দিয়ে এবার পুরো বোতল হাতে তুলে নিলো। এক দমে শেষ করে ফেললো পুরো বোতল। তবুও শান্তি পাচ্ছে না। কিছুতেই কমছে না এই মরণযন্ত্রনা। ক্রুদ্ধ হয়ে হাতের বোতল উঠিয়ে সজোরে নিচে আছাড় মারলো। বারে রাখা সব বোতল গুলো ঠেলে ফেলে দিলো। আর মুখ দিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করতে লাগলো। বারের ওয়েটাররা এসে প্রহরের ধরে আটকানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলো।
–স্যার স্যার প্লিজ তামাশা করবেন না। বাকি কাস্টমার রা ডিস্টার্ব হচ্ছে।
প্রহর ওয়েটারের কলার চেপে ধরে ক্ষিপ্র কন্ঠে কিছু।
–কাস্টমারদের ডিস্টার্ব হবে সেই ভয় করছিস? আর আমার কি হ্যাঁ? আমার কি? আমার লাইফ ডিস্টার্ব হয়ে যাচ্ছে তার কি? আর কিসব মাল রেখেছিস তোরা? আমি কোন কিছু ভুলতে পারছিনা কেন? এমন কোন কিছু নেই তোদের কাছে যা নিলে আমি সব ভুলে যেতে পারবো? বল আছে এমন কিছু?
ওদের মাঝে এক ওয়েটার প্রহরের কানে আস্তে করে বললো।
–স্যার মাল আছে।ওটা গোপন মাল। আপনি কি নিবেন? একবার নিলে সব ভুলে যাবেন। তবে টাকা একটু বেশি লাগবে স্যার।
প্রহর পকেট থেকে নিজের ভিজিটিং কার্ড বের করে ওয়েটারকে দিয়ে বললো।
–এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছিস তুই কার সাথে কথা বলছিস? টাকার চিন্তা ছাড় আর মাল নিয়ে আয়।
–স্যার ওটা ইলিগ্যাল জিনিস এখানে আনা যাবে না। আপনি আমার সাথে চলুন।
প্রহর ওয়েটারের সাথে আলাদা একটা রুমে এলো। ওয়েটার একটা বক্স এনে তার ভেতর থেকে একটা ড্রাগস এর শিশি আর একটা সিরিঞ্জ বের করলো। ওয়েটার সিরিঞ্জে ড্রাগস ভরে প্রহরকে পুশ করতে গেলে প্রহর ওয়েটারের হাত থেকে সিরিঞ্জ টা নিয়ে বললো।
–তুই যা আমি একাই করে নিবো।
— কিন্তু আপনি একা নিলে সমস্যা হতে পারে। এটার ওভার ডোজ হয়ে গেলে আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি আপনার জানও যেতে পারে।
প্রহর তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে বললো।
–এরচেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। তোকে যেতে বললাম তুই যা।
–কিন্তু স্যার,,
প্রহর এবার রাগী কন্ঠে বললো।
–আই সেড গেট লস্ট।
ছেলেটা এবার ভয় পেয়ে চলে গেল। প্রহর সিরিঞ্জের দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে বললো।
–ইউর লাভ বিকাম পয়জন খুশি। এন্ড নাও ফাইনালি ইট’স ডিসট্রই মি। বাট আই লাভ দিস অলসো।
প্রহর শিশির পুরোটাই নিজের হাতে পুশ করে নিলো। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রহর ঢলে পড়লো।
ওয়েটার ছেলেটা বাইরে এসে অন্য ওয়েটারকে বললো।
–ভাই ওই স্যারতো পুরো ওভার ডোজ নিয়ে ফেলেছে। এখন কি করবো? উনিতো মারা যেতে পারে?
অন্য ওয়েটার বললো।
–আচ্ছা দ্বারা আমি ওই স্যারকে চিনি। উনি মেহরাব ইন্ডাস্ট্রির মালিক। এখানে ওনাদের রিসোর্ট আছে। আমি রিসোর্টে ফোন করে বলে দিচ্ছি।
___
সারাটা রাত অস্থিরতায় কেটেছে খুশির। একটুও ঘুমাতে পারেনি। মনটা প্রচুর অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। অজানা কোন ভয়ে বুকটা ধুকপুক করছে। একবার প্রহরের কোন খবর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। আজ ওরা চলে যাবে। জারিফ এসে প্যাকিং করতে বলে গেছে। একটু পরেই বের হতে হবে। কিন্তু যাওয়ার আগে একবার প্রহরের খবর না পেলে ও যে শান্তি পাবে না। প্রহরের নাম্বার সেই রাত থেকে বন্ধ আসছে। তাই এবার খুশি সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ফেলে ফাহিমের নাম্বারে ফোন দিল। দুইবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো। খুশি বলে উঠলো।
–দেব,,,আই মিন ফাহিম ভাইয়া আমি খুশি বলছি।
ফাহিম ওপাশ থেকে তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
–এখন কেন ফোন করেছেন আপনি? আর কি চান? আপনি যা চেয়েছিলেন তাতো করে ফেলেছেন। এখন আর কিসের জন্য ফোন করেছেন?
খুশি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
–মা মানে? প্রহর কি ঠিক আছে? ওর কিছু হয়নি তো?
–ওয়াও আপনি সত্যিই গ্রেট। প্রহরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে এখন ওর জন্য চিন্তা দেখাচ্ছেন?
অন্তর কেঁপে উঠল খুশির। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–মৃ মৃত্যুর মুখে মানে? কি বলছেন আপনি? ভাইয়া প্লিজ বলুন না প্রহরের কি হয়েছে? ও ঠিক আছে তো?
–হ্যাঁ মৃত্যুর মুখে। প্রহর কাল ড্রাগস এর ওভার ডোজ নিয়ে ফেলেছে। ওখানকার কেউ ফোন করে জানায় আমাদের। আমি তখনই রাতে গিয়ে ওকে হসপিটালে নিয়ে আসি। এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর।
পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল খুশির। খুশির হৃৎস্পন্দন থমকে গেল। মুহুর্তেই অনুভূতিশুন্য হয়ে পড়লো ও। হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। ওপাশ থেকে ফাহিম আরও বলতে লাগলো।
— আর এসব কিছু আপনার জন্য হয়েছে। আপনি জানেন এখন আমার নিজেকেই প্রহরের কাছে অপরাধী মনে হয়। কারণ কোথাও না কোথাও আপনার সাথে সম্পর্কে জড়াতে আমিই ওকে পুশ করেছিলাম। আর তার ফলসরুপ এতো কষ্ট পাচ্ছে ও।এরচেয়ে তো ভালো হতো আপনি ওর জীবনে কখনো আসতেনই না।কেন আমার বন্ধুটার সাথে এমন করলেন? ওতো সবটা উজাড় করে আপনাকে শুধু ভালোই বেসেছিল। তাহলে কেন করলেন ওর সাথে এমন? প্রহরের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। আর না আপনাকে।
কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিলো ফাহিম। খুশি শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে নিচে বসে পড়লো। পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেছে মুহূর্তেই। এ এটা কি হয়ে গেল? এমনটা তো ও চাইনি। যাকে ভালো রাখার জন্য এতো কিছু করলাম। সেই কিনা আজ মৃত্যুর মুখে? না না এ হতে পারে না। আমার প্রহরের কিছু হতে পারে না। আমি থাকতে আমার প্রহরের কিছু হতে দিবোনা। যাকে বাঁচানোর জন্য আমি এতকিছু করলাম, আমার বিরহে যদি সে নিজেই না বাঁচে। তাহলে এসবের কি ফায়দা? না না আমি আমার প্রহরকে কিছু হতে দিবোনা। আমি আজই সব বলে দিবো প্রহরকে। হ্যাঁ সব বলে দিবো। আর দূরে যাবোনা ওর থেকে। কখনোই না।
খুশি উঠে দাঁড়িয়ে এলোমেলো পায়ে দৌড়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল। নিচে এসে রিসিপশন থেকে প্রহর কোন হসপিটালে আছে সেটা জেনে নিলো। আর এক মুহূর্তও দেরি না করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। যেতে যেতে শুধু একটাই দোয়া করছে ওর প্রহর যেন ঠিক থাকে। ওর যেন কিছু না হয়।
হসপিটালে এসে দৌড়ে ভেতরে গেল খুশি। বুক কাঁপছে ওর। ভেতরে যেয়ে যেন প্রহরকে ঠিক দেখে এটাই দোয়া করছে। রিসিপশন থেকে প্রহরের কেবিন নাম্বার জেনে নিয়ে দ্রুত পায়ে সেদিকে এগুলো। পড়িমরি করে দৌড়াতে গিয়ে সিড়ির ওপর পড়ে গেল খুশি। হাত পায়ে প্রচুর ব্যাথাও পেল। তবে সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই খুশির। আবারও উঠে দাঁড়িয়ে এলোমেলো পায়ে এগুলো প্রহরের রুমের দিকে। প্রহরের কেবিনের দরজায় এসে দেখতে পেল প্রহরের জ্ঞান ফিরেছে। ফাহিমের সাথে কথা বলছে ও। প্রহরের জ্ঞান ফিরেছে দেখে খুশির দেহে যেন প্রাণের সঞ্চালন হলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুমের ভেতরে কদম বাড়ালো খুশি।
প্রহরের নজর পড়লো খুশির দিকে। তবে খুশিকে দেখে ওর চেহারার ভাবভঙ্গির তেমন পরিবর্তন হলোনা। ফাহিম পেছনে ফিরে খুশিকে দেখে একটু অবাক হলো। খুশির কাছে এগিয়ে এসে বললো।
–ভাবি,,আই মিন আপনি এখানে কি করছেন? সরি তখন আমার মাথা ঠিক ছিলনা তাই উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছি। তবে আপনার এখানে আসা ঠিক হয়নি।
খুশি অনুনয়ের সুরে বললো।
–প্লিজ ভাইয়া আমাকে একটু প্রহরের সাথে দেখা করতে দিন? শুধু পাঁচ মিনিট।
–দেখুন একটু আগেই প্রহরের জ্ঞান ফিরেছে। আপনাকে দেখে প্রহর আবার হাইপার হয়ে যেতে পারে। তাই আপনি এখন চলে যান প্লিজ।
প্রহর এবার বলে উঠলো।
–ইট’স ওকে ফাহিম। অ্যাম ফাইন। আসতে দে উনাকে। দেখি কি বলতে চান উনি।
ফাহিম একবার প্রহরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমের বাইরে চলে গেল।
খুশি আস্তে আস্তে প্রহরের বেডের কাছে এসে দাঁড়াল। প্রহরের দিকে তাকিয়ে ভারাক্রান্ত গলায় বললো।
–প প্রহর তুমি ঠিক আছ?
প্রহর রুষ্ট চোখে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
–আনফরচুলেটলি অ্যাম অলরাইট। অ্যাম সো সরি মিস খুশি, ওহ সরি মিসেস খুশি। অতি দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে যে আমি একদম ঠিক আছি।
খুশি আহত কন্ঠে বললো।
–এসব কি বলছ প্রহর?
–ঠিকই তো বলছি। আপনি নিশ্চয় দেখতে এসেছিলেন আপদটা সত্যি সত্যিই বিদায় হলো কিনা। কিন্তু স্যাডলি আপনাকে সেই অসীম খুশিকা দিতে পারলাম না। আপনার আশায় তো বালিচাপা পড়ে গেল। সত্যিই আপনার সাথে এটা একদম ঠিক হলোনা। আপনি কতো আশা নিয়ে এসেছিলেন আমার মৃত ডেডবডি টা দেখে নিজের মনকে প্রশান্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা আর হলোনা।
প্রহরের কথার এই বিষাক্ত তীর খুশির হৃদপিণ্ড ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। খুশির সব কথাগুলো গলার মাঝে এসে আঁটকে গিয়ে দলা পাকিয়ে গেল। তবুও কোনরকমে ঢোক গিলে কিছু বলার চেষ্টা করতে নিলেই প্রহর আবারও বলে উঠলো।
–জানেন আজ নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো ইডিয়ট মনে হচ্ছে। আপনার মতো একটা স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতিণীর জন্য আমি আমার জীবন টা পর্যন্ত দিতে চলেছিলাম। আই মিন আমার মতো অপদার্থ দুনিয়াতে আর একটাও হবে না। মানুষ একবার চোট খেয়ে শেখে। পরবর্তীতে আবারও সেই ভুল করার বোকামি করে না। অথচ এই আমি দুই দুইবার একই ভুল করলাম। নারী যে কতবড় ধোঁকাবাজ হয় সেটা আমি আগে থেকে জানা সত্বেও, আবারও আপনার পাতা ফাঁদে পা দিলাম। আর তার যথাযথ ফলও পেয়ে গেলাম। আই ডিজার্ভ ইট এক্সুলি।
প্রহরের তিক্ত কথায় খুশির ভেতরে যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খুশি অশ্রুসজল চোখে বলতে নিল।
–প্রহর আমার কথাটা তো শো….
খুশিকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে প্রহর দৃঢ় কন্ঠে বললো।
–ব্যাচ অনেক শুনেছি আপনার কথা। আর না। আর আপনার এই মিথ্যে চোখের পানি আমাকে আর ভেজাতে পারবেনা। আমি বুঝে গেছি আপনার মনকামনা। আপনি চান আমি সারাজীবন আপনার বিরহে দেবদাস হয়ে থাকি। আর আমার কষ্ট দেখে আপনি দেখে আপনি পৈচাশিক আনন্দ পান। তবে আপনার এই মনকামনা পূরণ হতে দেবনা আমি। আপনাকে আর জিততে দেবনা। অনেক হয়েছে। আর না। এবার আমিও আপনাকে দেখিয়ে দেবো যে,আমার জীবনে আপনার আর কোন স্থান নেই। ইউ আর নট এক্সিস্ট টু মি। আপনাকে ছাড়াও আমি ভালো থাকতে পারি। ইভেন বেটার থাকতে পারি। দাঁড়ান আপনাকে এখুনি সেটার প্রমান দিয়ে দিচ্ছি।
প্রহর এবার উচ্চস্বরে ফাহিমকে ডাক দিলো। একটু পরেই ফাহিম তড়িঘড়ি করে ভেতরে এলো। প্রহর ফাহিমকে উদ্দেশ্য করে বললো।
–ফাহিম বাবাকে একুনি ফোন কর। ফোন করে বল আমার জন্য মেয়ে দেখতে। যেকোনো মেয়ে হলেই চলবে। আমি দুইদিনের মাঝেই বিয়ে করতে চাই।
ফাহিম অবাক হয়ে বললো।
–প্রহর কি বলছিস তুই? আচ্ছা আগে আমরা এখান থেকে বাসায় যাই তারপর দেখা যাবে।
–নো দেখাদেখি। তোকে যা বললাম তুই তাই কর। এখুনি, এই মুহূর্তে।
–ওকে ওকে আমি বলছি। তুই হাইপার হোস না। আমি বাইরে গিয়ে আঙ্কেল কে ফোন করছি।
ফাহিম আবারও বাইরে চলে গেল। খুশি শুধু নীরব দর্শকের মতো সব দেখে যাচ্ছে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও। রাজ্যের সব যন্ত্রণা যেন খুঁজে খুঁজে খুশির ঠিকানায় চলে এসেছে। এতো কষ্ট কেন হচ্ছে ওর? এটাই তো ও চেয়েছিল। প্রহর ওকে ঘৃণা করে নিজের জীবনে অগ্রসর হবে সেই পরিকল্পনায়ই তো এত সংগ্রাম করলো ও। তবে আজ যখন সবকিছু ওর পরিকল্পনা অনুযায়ীই হচ্ছে তাহলে এতো কেন যন্ত্রণা হচ্ছে? বুকটা কেন পুড়ে যাচ্ছে ওর? হোক যন্ত্রণা। যত ইচ্ছা হোক। তবুও ওকে এই বিষ পান করতেই হবে। ওতো এখানে এসেছিল প্রহরকে সবটা জানাতে। কিন্তু এখন যখন প্রহর নিজেই ওকে ভুলে নিজের জীবনে অগ্রসর হচ্ছে তখন ও আর প্রহরের পথে বাঁধা হবে না। কিছুতেই না।
প্রহর আবারও বলে উঠলো।
–আপনি এখন যেতে পারেন মিসেস খুশি। আপনার এই মুখ আর আমি কোনদিনও দেখতে চাইনা। আপনি মরে গেলেও দেখতে আসবোনা।
গলার মাঝে আটকে থাকা কান্নাগুলো গিলে নিয়ে খুশি জোরপূর্বক মুচকি হেঁসে বললো।
–আমি চাইও না আমি মরে গেলে তুমি আসো।
প্রহরের বুকটা হঠাৎ কেন যেন কেঁপে উঠল। খুশি আরও বললো।
–তোমার ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা রইলো। ভালো থেকো সবসময়।
কথাটা বলে খুশি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো। অসার হয়ে আসা পা জোড়া অনেক কষ্টে সামনে বাড়ালো। প্রহরের চোখে রক্ত জমে যাচ্ছে। হাতের মুঠো শক্ত করে নিয়েছে।হাতের রগগুলো ফুলে উঠেছে। দাঁত কিড়মিড় করে নিজের ইমোশন কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে যতযাই বলুক না কেন। বেহায়া, অবাধ্য মন এখনো চাইছে খুশি না যাক। ফিরে আসুক ওর কাছে। প্রহরের মন জানে, খুশি যদি শুধু একবার এসে বলে প্রহর আমি আর যাবোনা। আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে। আমাকে বুকে টেনে নাও। প্রহর সবকিছু ভুলে খুশিকে নিজের বুকে টেনে নিবে। আর দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করবেনা ও। কিন্তু না। খুশি এলোনা।ওইতো দরজার বাইরে চলে যাচ্ছে। আবারও ওই হৃদহরণী আমার হৃদয় ভেঙে চলে যাচ্ছে ।
দরজার বাইরে পা রাখলো খুশি। খুশির যেন শরীর আর সায় দিচ্ছে না।পা যেন অনেক ভারি হয়ে গেছে আজ। দেয়ালের সাথে হাত ভর দিয়ে অনেক কষ্টে পা ফেলছে সে। করিডরে বসে থাকা কারোর ফোন থেকে কোন সুর ভেসে আসছে।
♬ পাস আয়ে দুরিয়া ফিরবি কাম না হুয়ি
♬ ইক আধুরি সি হামারি কাহানী রাহি
♬ আসমা কো জামি ইয়ে জারুরি নেহি জানলে,, জানলে
♬ ইস্ক সাচ্চা ওহি জিস কো মিলতি নেহি মাঞ্জিলে মাঞ্জিলে
♬ রাঙ থে নূর থা যাব কারিব তু থা
♬ ইক জান্নাত সা থা ইয়ে জাহা
♬ বাকত কি রেত পে কুছ মেরে নাম ছা
♬ লিখ কে ছোড় গায়া তু কাহা
🎶 হামারি আধুরি কাহানি
🎶হামারি আধুরি কাহানি
__
ফ্লোরে প্রাণহীন দেহের মতো অবহেলায় পড়ে আছে খুশি। নজর তার সামনে হাতে ধরে থাকা ফোনের স্ক্রিনে। যেখানে বর কনের বেশে বসে আছে প্রহর এবং তার বঁধু।যেই বেশে কখনো তার থাকার কথা ছিল। আজ সেখানে অন্য কেউ বসে আছে। খুশি সেদিনই কক্সবাজার থেকে ফিরে আসে।প্রহর ওর কথা রেখেছে। দুদিনের মাথায়ই সে বিয়ে করছে। তার বিয়ের ছবি মিডিয়ায় আপলোড করেছে ঘন্টা দুই পূর্বে। তখন থেকেই এভাবে নির্জীব হয়ে পড়ে আছে খুশি। চোখের দৃষ্টি শূন্য। আজ নেই কোন বেদনা বা বিষাদের ছাপ।চোখে নেই কোন অশ্রু। আজ আর কোন অনুভূতি কাজ করছে না খুশির মাঝে। কেবলই শূন্যতার মরুভূমি।
ধীরে ধীরে অসার হয়ে আসছে খুশির শরীর। হাত পায়ের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। চোখের সামনে ঝাপসা ছেয়ে যাচ্ছে। হাতে রাখা ফোনটা আর ধরে রাখতে পারলো না। হাতের শক্তি হারিয়ে ছেড়ে দিলো ফোনটা। চোখের পলক চেপে এলো আপন গতিতে। অন্ধকারের তলদেশে ডুবে গেল খুশি। যাক ডুবে। সে আর ফিরতে চায়না। ফিরতে চায়না এই স্বার্থপর পৃথিবীতে। এটাই যেন হয় ওর শেষ ঘুম।
চলবে….
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/