#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-২৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★অশান্তি, অস্থির, চপল,অধীর,ব্যাকুলতা এমন সব শব্দের আরও যতো অনুভূতি আছে এই সবকিছুরই প্রতিফলন ঘটছে আপাতত প্রহরের শরীর মন জুড়ে। ক্রোধ আর জেদের বসে বিয়েতো করতে চেয়েছে ও।আর ওর জেদ মেনে মেয়ে ঠিক করে বিয়েও পাকা করে ফেলেছে জিদান সাহেব। প্রহর একাবারের জন্য মেয়েটিকে দেখেওনি। শুধু বলেছে দুদিনের মাঝেই বিয়ে করবে।তাই ওর কথামতো আজ ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তবে বিয়ের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই অস্থিরতায় জ্বলে পুড়ে মরছে ও। অশান্তিতে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একমুহূর্তের জন্যেও শান্তি পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অনেক খারাপ কিছু হতে চলেছে।অতি মূল্যবান কিছু একটা ছুটে যাচ্ছে ওর হাত থেকে।
বিয়ে পড়ানোর জন্য নিচে আনা হয়েছে প্রহরকে। এখানে এসে ওর অশান্তি আরও বেড়ে যাচ্ছে। হাত পায়ের মাঝে নিসপিস করছে।অস্থির ভাবে পা দোলাচ্ছে আর হাতের তালু ঘষছে। গলা শুঁকিয়ে যেন মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে ওর। মনে হচ্ছে চারপাশ থেকে বিষাক্ত বিচ্ছুর দল ওকে কামড়াতে এগিয়ে আসছে।
একটু পরে কনেকে নিয়ে আসা হলো। কনেকে নিয়ে এসে প্রহরের বসানো হলো। প্রহর একাবারের জন্যেও মুখ তুলে তাকালো না সেদিকে। তবে কনেকে ওর পাশে বসাতেই প্রহরের অশান্তি যেন এবার শিখরে পৌঁছে গেল। মনে হচ্ছে কেউ ওর সারা শরীরে আগুন ঢেলে দিয়েছে। গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করছে ওর অন্তর বাহির। ওর পাশে তো শুধু ওর খুশি বসবে। আর কারোর অধিকার নেই। কারোর না। তাহলে এই মেয়েটা কেন বসেছে ওর পাশে? মেয়েটার এতো সাহস কি করে হলো?
কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। এবার যেন প্রহরের নিঃশ্বাসই বন্ধ হয়ে আসছে। নাহ আর পারছে না ও। এখানে আর এক সেকেন্ডও বসে থাকলে ও দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। কাজি সাহেব যখন কবুল বলতে বললো তখন হঠাৎ প্রহর ঠাস করে উঠে দাঁড়াল। সবাই হতবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। প্রহর ওর বাবার সামনে এসে করুন সুরে বললো।
–আই কান্ট বাবা। অ্যাম সরি।
প্রহরের মনের অবস্থান সম্পর্কে ভালো ভাবেই অবগত ওর বাবা। তাই তিনি বাঁধা দিলেন না প্রহরকে। চোখের ইশারায় প্রহরকে আস্বস্ত করলো। ব্যাস প্রহর আর একটা মুহূর্তও অপেক্ষা করলোনা। একছুটে বেড়িয়ে গেল বাইরে।
ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের শেরওয়ানির বোতাম গুলো এক হাতে টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেললো প্রহর। ও জানে না ও কি করছে। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক তাও জানে না।ভালো মন্দের বিচার করার স্থিতি নেই এখন ওর মাঝে। শুধু জানে এই মুহূর্তে ওর খুশির কাছে যেতে হবে। তাছাড়া ওর এই অশান্ত ঝড় শান্ত হবে না। ও জানে না কেন যাচ্ছে ও খুশির কাছে। কিবা বলবে গিয়ে। শুধু জানে এই মুহূর্তে খুশিকে না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যে করেই হোক ওর খুশিকে দেখতেই হবে।
একটানা পাঁচ ছয় ঘন্টা যাবৎ ড্রাইভ করার পর খুলনা জেলার খুশির গ্রামে এসে পৌঁছালো প্রহর। কক্সবাজারের রিসোর্ট থেকে খুশির ঠিকানা সংগ্রহ করেছিল প্রহর। সেই ঠিকানায় এসে পৌঁছেছে ও।সময় তখন প্রায় রাত দশটা। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে এগুলো বাসার দরজার দিকে। বুকের মাঝে অসম্ভব ধুকপুক করছে। নাজানি খুশিকে দেখলে ও কি বলবে? কিন্তু এসব কিছু এখন ভাবার সময় নেই ওর। যা হবার হবে। দরজার কাছে এসে কলিং বেল চাপলো প্রহর। একটু পরে একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিল। প্রহর দেখে বললো।
–জ্বি আপনি কে? কাকে চান?
প্রহর গলা ঝেড়ে বিনয়ী সুরে বললো।
–জ্বি আমি মিসেস খন্দকারের সাথে দেখা করতে চাই।
–জ্বি বলুন আমিই মিসেস খন্দকার।
প্রহর ভাবলো মহিলাটি হয়তো বুঝতে পারেনি। তাই সে আবার বললো।
–জ্বি এটাকি জারিফ খন্দকারের বাড়ি না?
–হ্যাঁ।
–তো আমি একটু উনার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।
–হ্যাঁ বলুন, আমিই ওনার স্ত্রী।
মহিলাটির কথায় প্রহর হতভম্ব হয়ে গেল। কি বলছেন ইনি? উনি যদি মিঃ জারিফের স্ত্রী হন তাহলে খুশি কই? আমি কি ভুল ঠিকানায় আসলাম নাকি? নাকি আমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে? প্রহর এবার সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।
–জ্বি আমি আসলে খুশির কথা বলছিলাম। ও কি এবাড়িতে থাকে?
–খুশি? ও এবাড়িতে থাকবে কেন? খুশিতো ওদের বাড়িতে আছে। আপনি বোধহয় ভুলে এখানে চলে এসেছেন। এটাতো খুশির মামার বাড়ি। জারিফের ফুপুর মেয়ে খুশি।
স্তব্ধ হয়ে গেল প্রহর। বিস্ময়ে থমকে গেল ও। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। মহিলাটি কি সত্যিই বলছে? তারমানে কি খুশি মিথ্যে বলেছে ওকে? খুশির কি তাহলে বিয়ে হয়নি? এইমুহূর্তে প্রহরের কি অনুভূতি হচ্ছে তা ও নিজেই জানে না। মনে হচ্ছে নতুন করে এক আশার আলো জ্বলছে মনে। প্রহর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে থমকিত কন্ঠে বললো।
–খু খুশির বাড়িটা কোনদিকে?
মহিলাটি হাত উঠিয়ে সামনে ইশারা করে বললো।
–ওইতো সামনের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে চার বাড়ি পরেই ওদের বাড়ি।
–জ্বি অনেক ধন্যবাদ।
প্রহর দ্রুত পা ফেলে সেদিকে এগিয়ে গেল। এইটুকু রাস্তা যেন আজ হাজার মাইলের দুরত্ব মনে হচ্ছে। মনের মাঝে তুমুল তোলপাড় চলছে প্রহরের। হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক ভাবে। মস্তিষ্ক জুড়ে চলছে নানান প্রশ্নের বেড়াজাল। খুশির কি সত্যিই বিয়ে হয়নি? তাহলে ও মিথ্যে কেন বললো আমাকে? ওকি কিছু লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে? কিন্তু কি? নাকি আমিই আবার ভুল বুঝছি? এসব কিছুর জবাব এখন একমাত্র খুশিই দিতে পারবে। আর আজ ওকে জবাব দিতেই হবে। যাই হয়ে যাক না কেন।
ভাবনা চিন্তার মাঝেই প্রহর ওই মহিলার বর্ণনা অনুযায়ী খুশির বাড়ির সামনে চলে এলো। তবে বাড়ির সামনে এ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো প্রহরের। অজানা কোন ভয়ে প্রচুর অশান্ত হয়ে গেল মনটা। এ্যাম্বুলেন্স? খুশির বাড়ির সামনে এ্যাম্বুলেন্স কি করছে? কারোর কি কিছু হয়েছে? খু খুশির কিছু……… না না কি ভাবছি? খুশির কি হবে? ও ওর কিছু হবে না। ও একদম ঠিক আছে। আমি নিশ্চয় আবারও ভুল বাড়িতে চলে এসেছি। হ্যাঁ এটা খুশিদের বাড়ি না। নিজের মনকে এসব বুঝ দিয়ে ওখান থেকে সরে যেতে কদম বাড়ালো প্রহর। তবে এক কদম এগুতেই হঠাৎ হৃৎস্পন্দন অসম্ভব জোরে অধিকম্প আরম্ভ করে দিলো। থমকে গেল প্রহরের কদম। আর এগুতে পারলো না ও। ধীরে ধীরে পাশে ফিরে তাকালো প্রহর। বাড়ির দরজা দিয়ে কয়েকজন মিলে একটা স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে আসছে। তবে স্ট্রেচারে অক্সিজেন মাস্ক পড়া অবস্থায় জ্ঞানহীন খুশিকে দেখে প্রহরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। মুহূর্তেই পুরো পৃথিবী থমকে গেল ওর।অনুভূতিরা সব শূন্যের কোঠায়। চোখের সামনে যা দেখছে তা কোনমতেই মানতে চাইছে না ও। এ এটা আমার খুশি না। হতেই পারে না এটা খুশি। আমি নিশ্চয় ভুল দেখছি। মাথা নষ্ট হয়ে গেছে আমার। কিসব আবোল তাবোল দেখছি আমি।
প্রহর চোখ বন্ধ জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে নিজের মাথার এলোমেলো ভুল ভাবনাগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো। কিন্তু না বাস্তবতা ওকে আবারও প্রবল বেগে আঘাত করলো। চোখ খুলে তাকিয়ে সেই একই দৃশ্য দেখতে পেল প্রহর। এতক্ষণে খুশির পরিবারের সবাই বেড়িয়ে এসেছে। কান্নারত নিভানকে দেখে প্রহরের সব ভ্রম পরিস্কার হয়ে গেল। মন না মানলেও ওকে এই বিষাক্ত সত্য টা মানতেই হলো। আতঙ্কে হৃদপিণ্ড প্রচন্ড বেগে কাঁপছে । হাত পায়ের বোধশক্তি যেন হারিয়ে ফেলছে প্রহর। কোনরকমে কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এগুলো প্রহর। তারপর হঠাৎ এক ছুটে চলে গেল খুশির কাছে। খুশির কাছে এসে দুই হাতে খুশির মুখটা ধরে ভয়ার্ত কম্পিত গলায় বললো।
–খু খুশি, এ এই খুশি।খুশিরাণী, কি হয়েছে তোমার? এভাবে শুয়ে আছ কেন? আর এসব কি লাগিয়ে রেখেছ? প্লিজ ওঠনা? কথা বলো আমার সাথে।
হঠাৎ প্রহরকে দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেল। অপরিচিত কাউকে খুশির জন্য এমন পাগলামী করতে দেখে বিস্মিত হয়ে গেল সবাই। খুশির বাবা রাকিব হাসান প্রহরের হাত ধরে খুশির কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো।
–এই ছেলে কে তুমি? আমার মেয়েকে কিভাবে চিনো?
প্রহর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আচমকা নিভান এসে প্রহরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–ভাইয়া কোথায় ছিলে তুমি? এতো দেরি কেন করলে আসতে? তুমিতো বলেছিলে তুমি আপুকে সবসময় ভালো রাখবে। কখনো কোন কষ্ট পেতে দিবে না। তাহলে আমার আপু এতো কষ্ট পাচ্ছে কেন? আপুর এতো কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না ভাইয়া। প্লিজ আমার আপুকে ঠিক করে দাও তুমি।
প্রহর কি বলবে? ওতো নিজেই রক্তশূণ্য হয়ে পড়ছে। নিভানের কথায় মনে হচ্ছে ওর কলিজায় কেউ খামচে ধরেছে। খুশির যে কিছু একটা হয়েছে এই বিষাদময় সত্যটা না চাইতেও ওকে মানতে হচ্ছে। নিভানের কথায় খুশির পরিবারও এতক্ষণে বুঝে গেল ছেলেটা কে। খুশির বাবা প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–তাহলে কি তুমিই প্রহর?
প্রহর বলে উঠলো।
–জ্বি আঙ্কেল আমিই প্রহর। আঙ্কেল খুশির কি হয়েছে? ওকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? প্লিজ বলুন না?
খুশির বাবা হু হু করে কেঁদে উঠলেন। কান্না জড়ানো কন্ঠে সবটা খুলে বললো প্রহরকে। সবটা শুনে প্রহরের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। অনুভূতি শূন্য পাথর হয়ে গেল প্রহর। হৃৎস্পন্দনের কম্পন যেন বন্ধ হয়ে গেল। হাত পা কাঁপছে থরথর করে। শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে নিচে বসে পড়লো ও। ওর চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে।
__
হসপিটালের বেডে নীথর ভাবে শুয়ে আছে খুশি। হাতে লাগানো স্যালাইন, মুখে অক্সিজেন মাস্ক। কিছুক্ষণ পূর্বে জ্ঞান ফিরেছে। দূর্বল শরীরে চোখ বুজে আছে। আস্তে করে দরজা খুলে মৃদু পায়ে এসে দাঁড়াল প্রহর। রক্তলাল ব্যাথিত চোখ তুলে তাকালো খুশির পানে। প্রহরের মনে হচ্ছে এতদিনের কষ্ট বেদনা সবই যেন তুচ্ছ ছিল। যথার্থ মর্মপীড়া কি জিনিস সেটার উপলব্ধি তো আজ বুঝতে পারছে ও। খুশিকে এই অবস্থায় দেখার চেয়ে ভয়াবহ যন্ত্রণা আর কিছুতেই নেই। নিজের হৃদহরণী কে এই অবস্থায় দেখার চেয়ে তো মৃত্যুও বোধহয় সুখকর। সবকিছু যেন এক ভয়ংকর স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এটা যদি সত্যি স্বপ্ন হতো তাহলে প্রহর সারাজীবনেও আর কখনো ঘুমাতো না। এমনটা আমার খুশিরাণীর সাথেই কেন হলো? খুশির জায়গায় ওর নিজের কেন হলো না? আমার মাছুম পরিটা এত পীড়া কিভাবে সহ্য করছে? প্রহরের ভেতর টা যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
প্রহর কাঁপা কাঁপা পায়ে সামনে এগুলো। কারোর পায়ের আভাস পেয়ে দূর্বল চোখ দুটো ধীরে ধীরে মেলে তাকালো খুশি। প্রহরকে এইমুহূর্তে এখানে দেখে চমকে গেল খুশি। মনের ভ্রম ভেবে নিল ও। মনে করছে ও হয়তো ভুল দেখছে। খুশি বন্ধ করে আবার তাকালো। নাহ আবারও প্রহরকে দেখতে পেল ও। আৎকে উঠলো খুশি। প্রহর? ও এখানে কি করছে? ওর না আজকে বিয়ে? তাহলে কি ও সব জেনে গেছে? না না এ হতে পারে না। ও জানতে পারে না কিছু। খুশি নাকের অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে রেখে, জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–আরে তু তুমি এখানে? কোন কাজে এসেছ বুঝি? আ আসলে আমার হালকা একটু মাথা ব্যাথা করছিল।তুমি তো জানোই এমন সময় এসব একটু আধটু হয়। তো তাই আমার হাসব্যান্ড এখানে নিয়ে এসেছে। ও না একটু বেশিই পাগল। আমার একটুখানি কিছু হলেই পাগল হয়ে যায়। সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
খুশির কথার প্রহরের মাঝে কোন প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে না। প্রহর একইভাবে খুশির দিকে বেদনার্ত করুন চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এসে খুশির বেডের পাশে এসে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। লাল অশ্রুসিক্ত চোখে স্থির দৃষ্টিতে খুশির মুখপানে তাকিয়ে রইলো। প্রহরের এই চাহুনি দেখে খুশি বুঝে গেল প্রহর নিশ্চয় সব জেনে গেছে। খুশি প্রহরের এই চাহুনি নিতে পারছে না। খুশি ধরা গলায় বললো।
–এ এভাবে তাকাবেনা। তাকাবেনা এভাবে আমার দিকে।
প্রহরের চোখের নোনাজল নীরবে গড়িয়ে পড়ছে। প্রহর কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো।
–আই হেট ইউ, আই হেট ইউ খুশি। আই জাস্ট হেট ইউ। তুমি এতটা স্বার্থপর কিভাবে হতে পারলে? আমিতো তোমাকে আমার জীবনের সুখের ভাগিদার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমিতো আমাকে তোমার দুঃখের ভাগিদার হবারও সুযোগ দিলে না। কিভাবে হলে এতটা স্বার্থপর? সব কষ্ট গুলো একাই নিতে চাচ্ছিলে? সম্পর্ক টাতো আমাদের দুজনের ছিল। তাহলে তুমি একাই কিভাবে দুজনের ফয়সালা করে ফেললে? কেন বলো?
খুশিও পারলোনা চোখের বাঁধ আটকে রাখতে। কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
–কারণ আমি তোমাকে আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াতে চাই না। যেখানে আমার জানা নেই আর কয়টা দিন আমার আয়ু আছে। আজকের দিনটাও পার করতে পারবো কিনা তার ভরসা নেই।
প্রহর আর থাকতে পারলোনা। উঠে গিয়ে খুশিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে হু হু কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
–কিচ্ছু হবে না তোমার। আমার কলিজাটার কিচ্ছু হবে না। আমি কিছু হতে দিবো না। তুমি একদম সুস্থ হয়ে যাবে।
খুশিও প্রহরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। কিছুক্ষণ পর প্রহর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে খুশির চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
–আর কাঁদে না। আমি এসে গেছি না? সব ঠিক করে দিবো।
খুশির হঠাৎ প্রহরের বিয়ের কথা মনে পড়লো। খুশি প্রহরকে ছেড়ে দিয়ে চোখ নামিয়ে মলিন কন্ঠে বললো।
–তোমার এখান থেকে যাওয়া উচিত প্রহর। তুমি এখন অন্য কারো। বিয়ে হয়ে গেছে তোমার।
প্রহর স্বাভাবিক সুরে বললো।
–হ্যাঁ বিয়েতে হয়েছে। তাও দু বছর আগে। আমার দুষ্টুপরির সাথে। আর আমি আমার বউয়ের কাছেই আছি।
খুশি বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে বললো।
–মা মানে? তুমি কি আজ বিয়ে করোনি?
–বউ থাকতে বিয়ে করবো কেন?
–হেয়ালি করো না। ঠিক করে বলো।
–আরে নারে পাগলি। প্রহরের জীবনে খুশি ব্যাতিত অন্য কোন নারীর জায়গা নেই। হ্যাঁ রাগের মাথায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ক্ষমতা হয়নি। আমার জীবন যে শুধুই আমার খুশিময়। তুমি ভাবলে কিভাবে আমি তোমাকে ছাড়া কখনো ভালো থাকবো? তুমি বিহীন তো আমার হৃদয়ের স্পন্দনই চলবেনা। ভালো থাকাতো অনেক দূরের কথা।
–তাহলে ওই ছবি?
–কোন ছবি?
খুশি প্রহরের ফোনটা নিয়ে ওই ছবিটা বের করে দেখালো। প্রহর ছবিটা দেখে বললো।
–আরে এটা হয়তো ফাহিম কোন একসময় তুলে আপলোড করে দিয়েছে।
–তারমানে তুমি সত্যিই বিয়ে করোনি।
–উহুম। আমার এতো মিষ্টি একটা বউ থাকতে আবার করবো কেন? আমার বাচ তুমি হলেই চলবে। আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববে না। শুধু এভাবেই আমার পাশে থেক। বাদবাকি আমি সব ঠিক করে দেব।
আবারও খুশির কপালে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিল। খুশিও হার মেনে নিলো। চেষ্টা তো কম করেনি ও। কিন্তু নিয়তির হয়তো অন্য কিছুই ইচ্ছে। তাই সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিল। যা হবার হবে। প্রহরকে আর দূরে সরাবেনা ও। মৃত্যুর সময় ওর মুখটা দেখে মরলে। তাও হয়তো শান্তি পাবে। তাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পরম আবেশে প্রহরের বুকে লুকিয়ে পড়লো। দেখা যাক ভাগ্য ওদের কাহিনির কি মোড় দেয়।
চলবে…..
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/