পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব-১১

0
1543

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১১

হাই বেবি কি হয়েছে তোমার তোমাকে মনে হচ্ছে তুমি কিছু কারণে আপসেট হয়ে আছো মেরি বললো…

ঈশান: নাথিং(বেয়ারের বোতল টা হাতে নিয়ে)

অর্লিন: ওহ ঈশান এইসব এখন খাবি না এমনেই আংকেল অনেক ফোন দিয়ে যাচ্ছে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে যাচ্ছে আর তোদের বাসায় নাকি গেস্ট রা চলে এসেছে এখন সবাই তোকে খুঁজছে ।

ঈশান: তাতে আমার কি

তিয়াস: তোর কি মানে? শুন ঈশান এখন যেহেতু বিয়েটা হয়ে গেছে তো সব মেনে নে। কেননা জন্ম মৃত্যু বিয়ে এইগুলা উপর ওয়ালা ঠিক করে এইগুলা কিন্তু আমাদের হাতে নেই।

মেরি: হেই তিয়াস তুমি এইসব কি বলছো ঈশান কে। তোমার কি মাথা ঠিক আছে। এইসব ফালতু কথা বলছো তুমি নাকি আজ একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছো…

অর্নিল: তিয়াস তো ভালো কথাই বলছে আর ঈশান শুন তুই এই বিয়ে মান আর না মান আজকে যেহেতু বিয়ের একটা একটা অনুষ্ঠান তোর ওইখানে থাকা উচিত ছিলো।

ঈশান: অনুষ্ঠান না ছাই। আমি ঈশান চৌধুরী জাহেদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে তার বিয়ে হবার কথা ধুমধাম করে যেনো মানুষ বলতে পারে এই রকম বিয়ে তারা কোনোদিন দেখে নাই । আর সেই বিয়ে হলো কিনা চুপচাপ কেউ জানে না। আজ গেস্ট বলতে আমাদের কিছু রিলেটিভ আর ওই মেয়ে নাম যেনো কি বলছিলো (মাথায় হাত দিয়ে) ওহহ ইসরাত ওর বাবা আর কিছু রিলেটিভ আসবে এইটা নাকি আবার বৌভাত। আমার ডেড আজ আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলছে সোসাইটি তে।

অর্নিল: শুন ঈশান তুই যদি এখন তোর ডেডের কথা না শুনিস পরে দেখবি তোদের সব সম্পত্তি ওই মেয়েটাকে লিখে দিবে এখন তুই কি চাস তা হোক…..

ঈশান: শুন এইসব সম্পত্তি আমার চাই না আমার জাস্ট আমার মেরি বেবি কে চাই…..

মেরি: আমার তো চাই ঈশান বেবি (মনে মনে) ঈশান বেবি আমি একটা কথা বলি?

ঈশান: হুম….

মেরি: ওই মেয়েটার জন্য কেনো তুমি তোমার পরিবার পরিবারের ভালোবাসা হারাবে । তুমি সবার সামনে ভালো থেকে ওই মেয়েটাকে সবার চোখে খারাপ বানাও । আর ওই মেয়েটাকে এত কষ্ট দেও যাতে ওই মেয়ে ওই বাড়িতে আর না টিকে। পরে যখন ওই মেয়ে চলে যাবে তখন তো তুমি তোমার ডেড কে বড় মুখ করে বলতে পারবে যে , তোমাদের কথায় বিয়ে করে এখন দেখো ওই মেয়ে চলে গেছে তখন যদি তুমি আমায় বিয়ে করো তখন তোমার ফ্যামিলির কেউ বারণ করবে না। তাহলেই তো সাপ ও মরবে কিন্তু লাঠি ও ভাঙবে না।

ঈশান: ওয়াও গুড আইডিয়া ।

মেরি: হিহিহিহি তো কাজে লেগে পরো আমার ঈশান বেবি

ঈশান: ওকে…..

তো ঈশান মেরির কথা শুনে বাসায় চলে গেলো……

অন্যদিকে…..

জান্নাত: ওই লিপস্টিক দে টিপ দে(ইসরাত কে জড়াজড়ি করে)

ইসরাত: তুই কি জানিস ইসলামে টিপ দেওয়া হারাম।

জান্নাত: টিপ আবার কি দোষ করলো?

ইসরাত: তুই কি এই হাদীস টি শুনিস নাই যে টিপ দেওয়া নারী কে ইসলামে কি বলা হয়?

জান্নাত: না(মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে)

ইসরাত: তাহলে শুন….নিজেকে সাজাঁতে বেশিরভাগ সময়ই মেয়েরা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। সাঁজার এই উপকরণগুলোর মধ্যে টিপ অন্যতম। কপালে টিপ না পরলে হয়তো সাজাঁটা পূর্ণতা পায় না। কিন্তু কপালে টিপ পরার ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলছে? পবিত্র ইসলাম ধর্মে মেয়েদের কপালে টিপ পরাকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ অতীতকালে সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ করত তারা কপালে টিপ পরিধান করত। এছাড়াও এর পেছনে একটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। মুসলিম জাহানের পিতা হযরত ঈবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ ৮ মাইল পরিমাণ জায়গা আগুন জ্বালালো (নাউযুবিল্লাহ) তখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল নমরুদ বাহিনির জালানো আগুন নিয়ে। আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে তার কাছে পৌছানো যাচ্ছিল না। তাই একটা চরক বানানো হল যার মাধ্যমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে দূর থেকে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। কিন্তু রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না। তখন শয়তান এসে নমরুদকে কুবুদ্ধি দিয়েছিল যে, সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ করে এমন কয়েকজন মেয়ে এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে, কারণ এ অবস্থায় রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা থাকতে পারবেন না। তাই করা হলো এবং ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চলে গেলেন, আর ঠিক তখনি তারা মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে আগুনে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হলো। কিন্তু আগুন আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনাকে জালানোর বদলে ফুলের বাগান হয়ে গেলো, পরবর্তিতে ঐ মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল যে পতিতা মেয়েদের কারণে রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা চরক ছেড়ে দূরে সরে গিয়েছিলেন, এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত যা মেয়েরা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে ব্যবহার করে যা সম্পূর্ণ হারাম। এখন বুঝতে পারছিস টিপ পড়া কেনো হারাম।

জান্নাত: হুম। জানিস আমি খুব টিপ পড়তাম কিন্তু এই দেখ কানে ধরে বলছি আজকের পর থেকে কোনোদিন টিপ পড়বো না। আর লিপস্টিক দেওয়া যায় কি?

ইসরাত: হুম লিপস্টিক দেওয়া যায় যদি তা হালাল হয়। যা কিছু সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সেটার মূল বিধান হচ্ছে— বৈধ ও জায়েয হওয়া। আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: “তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৯] কখনও মুস্তাহাব হতে পারে; যদি সেই সাজ স্বামীর উদ্দেশ্যে হয়। তখন এটি শরিয়ত নির্দেশিত বিষয়। তবে এটি বৈধ হওয়া শর্তযুক্ত: যাতে করে সেটা হারাম ক্ষেত্রে ব্যবহৃত না হয়; যেমন যাদের সামনে সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নাজায়েয এমন গাইরে মাহরাম পুরুষদের জন্য সাজগোজ করা। অনুরূপভাবে প্রসাদনী সামগ্রীর মাঝে দেহের জন্য ক্ষতিকর কোন উপাদান বা নাপাক উপাদান (উদাহরণতঃ শূকরের চর্বি) না থাকা।
যদি থাকে তাহলে এমন সাজগোজ হারাম হবে। কেননা যা কিছু মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা করা নিষিদ্ধ। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নয় এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা নয়।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “ঠোটে লিপস্টিক দিতে কোন আপত্তি নেই। কেননা মূল বিধান হল: বৈধতা; যতক্ষণ না হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়…। কিন্তু যদি সাব্যস্ত হয় যে, এটি ঠোঁটের জন্য ক্ষতিকর; এটি ঠোঁটকে শুকিয়ে ফেলে, ঠোঁটের আর্দ্রতা ও তৈলাক্ততা দূর করে দেয়— এ ধরণের অবস্থার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার থেকে নিষেধ করা হবে। আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, এটি ঠোঁট ফাঁটার কারণ। যদি তা সাব্যস্ত হয় তাহলে মানুষের জন্য যা কিছু ক্ষতিকর সেটি করা তার জন্য নিষিদ্ধ।[ফাতাওয়া মানারুল ইসলাম (৩/৮৩১)]

তো আমাদের হালাল হারাম বুঝে সাজতে হবে(মিষ্টি হাসি দিয়ে)

জান্নাত: হুম। তো তোর তো এখন সাজ কমপ্লিট । এখন আমি সাজি (বলেই সাজা শুরু করলো)

ইসরাত জান্নাতের দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে কেননা মেয়েটা‌ পুরোই বাচ্চা স্বভাবের ।

জান্নাত: ওই হাসবি না ইসু পাখি। হাসলে তোর দুইটা বাঁকা দাঁত যখন বের হয় আমার খুব ভয় করে(মজা করে)

ইসরাত: ও ও তাই(রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

জান্নাত: হুম তাই। তখন দেখতে একদম কিউট লাগে মনে হয় একদম নিজের কাছে রেখে দেই(ইসরাতের গাল টেনে)

ইসরাত: আমার এই ননদিনী তাও কি কম সুন্দর একদম জান্নাতের হুরের মতো।

জান্নাত: পাম দিস না পাম দিস না।

ইসরাত জান্নাতের কথা শুনে হেসে দিলো ঠিক এমন সময় দরজায় যেনো কেউ নক করলো….

জান্নাত: ওই কে রে (চিল্লিয়ে)

ইসরাত: আবার(ধমকের সুরে)

জান্নাত: ওহহ সরি সরি, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু, দরজার ওপাশে কে কথা না বললে দরজা খুলবো না।

ইসরাত: পাগলী একটা…

ঈশান: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু। দরজার এইপাশে তোর ভাই দাড়িয়ে আছে দরজাটা খুল চুন্নি

জান্নাত: ওই ফাজিল পোলা আমি চুন্নি না তোর বউ চুন্নি। নাইজরিয়ান কোথাকার(রাগে দরজা খুলে দিয়ে)

ঈশান: ওই তুই না শুনছিলাম ভালো হয়ে গেয়েছিলি তো এখন আবার পেত্নীর মতো শুরু করছিস কেনো(জান্নাতের মাথায় চড় মেরে)

জান্নাত: তোকে তো আজ আমি ক্রিকেট বা হকি খেলার ব্যাট দিয়ে মেরে উগান্ডায় ঝুলন্ত গাছে উল্টা ভাবে বেঁধে রাখবো…..

ঈশান: ওই তোর কি লজ্জা করে না নিজের ভাইকে এইসব বলতে । আর তুই যে গতকাল লুকিয়ে কি করেছিলি বলবো আমি দাদিমা কে…(চোখ টিপ দিয়ে)

জান্নাত: এই না না একদম না(কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে)

ঈশান: তো এইখান থেকে এখন যা আমাকে আমার বউটার সাথে একটু থাকতে দে(ইসরাতের দিকে তাকিয়ে)

ইসরাত এতক্ষণ ওদের ভাইবোনের জগরা দেখছিলো আর ওদের আজগুবি বকা শুনছিলো যার অর্থ সে করে কিছুই বুঝতে পারলো না কিন্তু হটাৎ ঈশানের মুখে বউ ডাকটা শুনে খুব অবাক হলো….

জান্নাত: তোর একটু লজ্জা নাই ছোটো বোনের সামনে এইসব বলছিস

ঈশান: তা বলবো না তো কি করবো সারাদিন আমার বউয়ের সাথে সুপার গ্লো র মত লেগে থাকিস। আমাকে তো একটু সুযোগ দে…

জান্নাত: আমি যায় ভাইয়া আর শুন তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যা আর আন্টি আর আমাদের কাজিন রা খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার আসবে বউ দেখতে আর তুই গিয়ে ইসু পাখির বাবা আর বাড়ির লোকজনদের সাথে দেখা করে আয়(বলেই জান্নাত চলে গেলো)

ইসরাত: আচ্ছা আমি কী স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি । একদিন এতটা পরিবর্তন(মনে মনে) ভাবতে ভাবতে হটাৎ চোখ গেলো ঈশান যেনো কি একটা করছে…. পরে দেখলো ঈশান একটা…..

চলবে…

বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

শিক্ষণীয় কিছু কথা: আপনারা তো গল্প পরেই বুঝতে পেরেছেন যে ইসলামে নারীদের সাজতে বারুন করে নি কিন্তু টিপ আর হারাম জিনিস দিয়ে যা বানায় তা দিয়ে সাজতে বারণ করেছে। টিপ দেওয়া নারীদের ইসলামে খারাপ নারী বলে গণ্য করা হয়। আর আমরা তো অনেক ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহার করি কিন্তু তা কি হালাল নাকি হারাম বুঝি না। তাই সবার জন্য ছোট্ট একটা সাজেস্ট করছি যে লিপস্টিক দিলে ঠোঁট শুকিয়ে যায় ঠোঁটের চামড়া উঠে বা কোনো ধরনের প্রবলেম হয় ওই লিপস্টিক গুলো আর ইউজ করবেন না কেননা ওইগুলো হারাম জিনিস দিয়ে বানানো। আর দোয়া করে কেউ আর টিপ পড়বেন না ☺️।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here