#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১৫
তখন হঠাৎ করেই ঈশান এসে ইসরাত কে ডাকা শুরু করলো…..
জান্নাত: হায় হ্যায় ভাইয়া তো দেখছি ইসু পাখি কে এখন না দেখে থাকতেই পারে না (চোখ টিপ দিয়ে)
জান্নাতের কথা শুনে ইসরাত বিষণ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো….
দাদিমা: জান্নাত আমার বোন টাকে আর লজ্জা দিস না। ইসরাত যা গিয়ে দেখে আয় কেনো ডাকছে।
ইসরাত: হুম…আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু
দাদিমা ও জান্নাত: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু,,,,আল্লাহ হাফেজ ইসু পাখি…
ইসরাত: আল্লাহ হাফেজ…
না জানি কেনো ডাকছে , আবার কি কোনো মতলব আছে । নাকি আমাকে আরো কিছু বলবে এইসব ভাবতে ভাবতে ইসরাত রুমে প্রবেশ করলো…..
ইসরাত: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু…..
ঈশান: ওই তুমি আমার জিনিস পত্রে হাত দিলে কেনো। তোমায় এ সাহস কে দিলো(খুব রেগে)
ইসরাত: আগে সালামের উত্তর দিন পরে আমি বলবো….
ঈশান: ওই তুই কি এখন আমার সাথে মজা করছিস(ইসরাতের হাত ধরে টান দিয়ে)
ইসরাত: আমি তো আগেই বলেছি যে আগে সালামের উত্তর দিবেন পরে আমি বলবো….
ঈশান: তোর মতো ঘাড় তেড়া মেয়ে কে কিভাবে সোজা করতে হয় এই ঈশানের খুব ভালো করেই জানা আছে।
এই কথাটা বলে আশে পাশে কি যেনো খুঁজতে লাগলো। পরে টেবিল থেকে দুইটা কলম এনে ইসরাতের হাত ধরে দুই আঙ্গুলের মাঝে দুইটা কলম রেখে জোরে চাপ দিলো সাথে সাথে ইসরাত….
ইসরাত: আহা লাগছে আমার দোয়া করে থামুন আপনি(কান্না করে)
ঈশান: তাহলে আগে বল আমার জিনিসে হাত দিছিস কেনো?
ইসরাত: বলছি আপনি হাত টা সরান
ঈশান কলম দুইটা সরিয়ে ….
ঈশান: বল এখন….
ইসরাত: আমি আপনার বিবাহিতা স্ত্রী আমার তো অধিকার আছেই আপনার প্রতি আর আপনার ভালো বা মন্দ টা দেখার দায়িত্ব আমার। বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। তাই তো আমি আপনার জিনিস পত্র গুলো ধরেছি। আর অপ্রয়োজনীয় যা সব ফেলে দিয়েছি।
ঈশান: ওই তুই কিভাবে বুঝলি যে ওই জিনিস আমার অপ্রয়োজনীয় (দাতে দাত চেপে)
ইসরাত: আপনি হইতো ভুলে গেছেন যে আমি অশিক্ষিত নয়…
ঈশান: তুই আমার আর আমার মেরির পিক কই রাখছিস সেইটা বল(আবারো দুই বাহু চেপে ধরে)
ইসরাত: আমার লাগছে(নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)আর ওই পিক টা খুব বাজে ছিলো তাই আমি ওটা ফেলে দিয়েছি…
ঈশান: তুই আমার অনুমতি ছাড়া আমার জিনিসে হাত দিস আবার টা ফেলে ও দেস তোর সাহস তো কম না…
ইসরাত: সাহসের কি আছে, এইটা আমার দায়িত্ব,কর্তব্য, অধিকার
ঈশান: এই অধিকার কি আমি তোকে দিয়েছি।
ইসরাত: অধিকার দিতে হয় না নিজের অধিকার নিজেরেই নিতে হয়। কেননা, মহান আল্লাহ তায়ালা স্বামী স্ত্রীর এই অধিকার দিয়ে দিছে।
বিয়ে হচ্ছে এমন একটি সম্পর্ক যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই পারস্পরিক অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই অধিকারগুলো হচ্ছে শারীরিক অধিকার, সামাজিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক অধিকার। এ কারণেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের এটা অবশ্য কর্তব্য যে, তারা সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবন যাপন করবে এবং কোনো প্রকার মানসিক অসন্তুষ্টি ও দ্বিধা ব্যাতিরেকেই তাদের যা কিছু আছে একে অন্যের জন্য অকাতরে ব্যয় করবে! আল্লাহ তাআলা এরশাদ করে ۚ“আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম ব্যবহার কর।” [সূরা আন-নিসা: ১৯] স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পোশাকের মতো। পোশাক যেমন আমাদের ইজ্জত-সম্মান হেফাজত করে ও আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, ঠান্ডা ও গরম থেকে রক্ষা করে, স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকাও তেমনি। স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হবে, একজন আরেকজনকে নেকীর কাজে সাহায্য করবে তাহলেই সম্ভব একটা সুখী পরিবার গড়ে তোলা। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন:“যেমন নারীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, তেমন তোমাদের উপরও তাদের অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [বাকারা : ২২৮]রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন….(আর কিছু বলার আগেই)
ঈশান: ঠাস ঠাস…(চড় মেরে) তুই এত ঘেনোর ঘেনোর করছ কেন তোর এই মুখেই তো আজ (বলেই জোরে চেপে ধরে) ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলো…. ওই কোথায় ওই পিক…
ইসরাত: ঝু ঝুড়ি,, ময়লা ঝুরি (হাতে ইশারা করে)
ঈশান এই কথাটা শুনে ইসরাত কে ছেরে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো… আর এইদিকে ইসরাত…
ইসরাত: আল্লাহ এইসব কি হচ্ছে আমার সাথে,,,, কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো তুমি আমায়। (কান্নায় ভেংগে পড়ে)
অন্যদিকে….
কোথায় যে পিক ইসসসসসস আজ যদি এই পিক না পাই তাহলে মেরি আমাকে ভুল বুঝবে কেননা এই পিক টা ও আমায় দিয়েছিলো আর আজ কেনোই বা এই পিক টা দেখতে চাচ্ছে হইতো ও বুঝতে পেরেছি যে ওর পিকের ভালোবাসার মর্যাদা আমি রক্ষা করতে পারছি না এইসব বলে পিক টা খুঁজতে লাগলো আর দেখতে ফেলে ময়লার ঝুড়ি তে এক পাশে পড়ে আছে তো পিক টা হাতে নিয়ে দেখলো….
এইতো ওইদিনের পিক যেদিন মেরির সাথে ফাস্ট কথা হইছিলো আর পিক টাই ঈশান একপাশে বসে আছে আর মেরি তার গালে ঠোট রেখে,,,,,ঈশান অনেক বাধা দিয়েছিলো কিন্তু মেরির নাকি এই রকম একটা পিক তুলার ইচ্ছা ছিলো তাই আর সে না করতে পারে নাই….ভাবতে ভাবতে ঈশানের মনে পড়লো আজ সে ইসরাতের সাথে কি করেছে তাই সে ……
ইসরাত: হাতের আঙ্গুল ফুলে উঠেছে বিশেষ করে সব্বহুম(তর্জনী) সাব্বা(মধ্যমা) কেননা এই দুই আঙ্গুলে ঈশান কলম দিয়ে চাপ দিছে….ইসরাত কান্না করছে হটাৎ মনে হলো কেউ ওর পিছনে দাড়িয়ে আছে সে ভাবলো হইতো জান্নাত…..
জান্নাত আমার কিছু হয় নি চোখে যে কি পড়ছে আর হাতে একটু ব্যাথা পাইছি (না দেখেই)
আর মিথ্যা বলতে হবে না । ইসরাত কণ্ঠ শুনেই পিছনে তাকিয়ে দেখলো ঈশান….
ঈশান: আপনি জানেন না ইসলামে মিথ্যা বলা পাপ। আপনি এত নেকদার মেয়ে হয়েও মিথ্যা বলছে স্ট্রেঞ্জ….
ইসরাত মনে হচ্ছে ওর বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে চুপচাপ কান্না করেই যাচ্ছে…..
ঈশান: দেখি তো হাত টা…
ইসরাত: না তেমন কিছু হয় নি আপনি ঘুমিয়ে পড়েন রাত তো অনেক হয়েছে(হালকা হেসে)
ঈশান: এই হাসিটা যেনো একদম বুকে তীরের মতো লেগেছে। একটা মেয়ের হাসি এতটা সুন্দর । আর হাসলে যখন ওই বাঁকা দাঁত গুলা বের হয় তখন তো মনে হয় কোনো পরী (এইসব ভাবতে ভাবতে একটা ঘোরে চলে গেলো ঈশান)
ইসরাত: ওনার তাকানো টা কেমন যেনো লাগছে তাই বললাম….ঘুমিয়ে পড়েন।
ঈশান: হুস ফিরে আসাতে….এইসব আমি কি ভাবছি এইটা অন্যায় কাজ ,আই লাভ মেরি। কিন্তু এই মেয়েটার কাছে সব যেনো ভুলে যায়। নাহ আমাকে দুর্বল হলে হবে না কেননা মেরি হচ্ছে আমার লাইফ তাই যতটা পারি এই মেয়ের কাছে থেকে নিজেকে দূরে রাখা….(মনে মনে)
ইসরাত: কি এত ভাবছেন?
ঈশান: কিছু না । আপনার হাত টা দেখি (বলেই জর করে হাত টা ওর হাতে রাখলো) ও মাই গড এত দেখছি অনেক ফুলে গেছে আর আপনি ও বা কেমন এত হাদীস হাদীস করেন একটু আইস কিউব দিবেন সেটা পারেন না। এইসব পাগল খালি আমার কপালেই আসে।(বলে হাতে বরফ দিতে লাগলো)
হটাৎ পিছন থেকে জান্নাত এসে বলে উঠলো….
জান্নাত: হায় হায় কি ভালোবাসা। কি রোমান্টিক দৃশ্য।
জান্নাতের কথা শুনে ঈশান ও ইসরাত দুইজনেই ওর দিকে তাকালো…..
ঈশান: ওই তুই এইখানে কেনো এসেছিস ?
জান্নাত: কেনো এসে বুঝি তোদের প্রবলেম করে ফেলছি
ঈশান: হো। তুই তো কাবাব মে হাড্ডি। যা ভাগ
জান্নাত: আমি তোর কাছে আসি নাই যে চলে যাবো। ফাজিল অ্যানাকোন্ডা
ঈশান: তো কার কাছে এসেছিস। আমার রুমে এসে বলছে সে নাকি আমার কাছে আসে নাই। একটা গল্প ছিলো যে… আমার ঘরে কেরে,,,,আমি তো কলা খাই না। এমন হয়ে গেছে।
জান্নাত: তুই হইতো ভুলে গেছিস এই রুমে একটা জঙ্গি ছাড়াও একটা ভালো মেয়ে থাকে। আমি সেই ভালো মেয়েটার সাথে কথা বলতে এসেছিলাম কোনো জঙ্গির সাথে না।
ঈশান: তাই না (বলে কান ধরলো জান্নাতের) ডেড কে আগামীকাল বলবো তোর বিয়ে দিয়ে দিতে বড্ড পাকনী হয়ে গেছিস।
জান্নাত: ওই কান ছার বলছি
ইসরাত এইসব দেখে হু হু করে কান্না করে দিলো….
জান্নাত আর ঈশান তো কিছুই বুঝতে পারলো না এইখানে কান্না করার কি আছে।
জান্নাত: ওই ইসু পাখি কান্না করছিস কেনো?
ইসরাত কিছুই বলছে না শুধু কান্না করেই যাচ্ছে….
জান্নাত: এই দেখ আমার কিন্তু এখন খুব ভয় করছে প্লিজ বল না কি হয়েছে?
ঈশান: ওই জান্নাত এই মেয়েকে মে বী ভুতে ধরছে তাড়াতাড়ি ঝাড়ু টা আনতো (মজা করে)
জান্নাত: ভাইয়াআআআআ(দাতে দাত চেপে) …..
চলবে …..
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন