পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব-১৯

0
1408

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_১৯

অর্নিল: হুম… একজন চাষী বা লোক ছিলো । সে মাঠের কাজ করে বাসায় ফিরতেই লোকটির স্ত্রী বললো…

স্ত্রী: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু…

স্বামী: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু….তুমি কি কিছু বলবে আমায়?

স্ত্রী: জ্বি,,,,, আজ ধান ভাঙ্গতে হবে কেননা রাতে রান্না করার জন্য পরিমাণ মতো চাল নেই।

স্বামী: ও আচ্ছা,,,, দেও আমি ধান ভেঙ্গে নিয়ে আসি।

অতঃপর লোকটি ধান ভাঙ্গানোর জন্য কলে (ধান ভাঙার মেশিন) গেলো। লোকটি ধান ওইখানে রেখে তার ক্ষেতে চলে আসলো কারণ ধান ভাঙতে দেরি হবে তাই। মাঝ রাস্তায় আসতেই লোকটি শুনতে পেলো আযান দিচ্ছে। এখন লোকটি ভাবছে….

আমি যদি এখন নামাজ পড়ি তাহলে ক্ষেতে পানি দিতে পারবো না আর যদি ও বা পানি দেই তাহলে সময় মত মেশিন থেকে চাল আনতে পারবো না আর মেশিন তো পরে বন্ধ করে দিবে তখন তো আমাদের রাতে না খেয়ে থাকতে হবে। আবার যদি নামাজ ও না পড়ি তাহলে আল্লাহ তায়ালা অসুন্তোষ্ট হবে।

লোকটির কানে বার বার আযানের ধ্বনি আসছে। তো লোকটি আর কিছু না ভেবেই ওইখানেই পাশে থাকা মসজিদে নামাজ আদায় করে আসলো আর বললো….

হে আল্লাহ আপনি তো দয়াবান। আপনি পারেন না এমন কোনো কাজ নেই। আপনার কাছে তো কোনো কিছুই লুকানো না। আপনি তো জানেন আপনার এই বান্দার সমস্যা। আমি জানি আপনি যা করবেন বা চাইবেন সব আমাদের পুরো মানব জাতির ভালোর জন্যই করবেন।

লোকটি দোয়া শেষ করে তার জমিতে গিয়ে দেখলো পুরো ক্ষেত পানিতে ভরপুর লোকটি এইটা দেখে খুশি হওয়ার পাশাপাশি অনেক অবাক ও হলো তখন সে তার পাশে অন্য একজন চাষী কে দেখে বললো…..

ভাই আমার ক্ষেতে পানি কিভাবে আসলো…?

আমি আমার ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন হইতো ভুলে আমার ক্ষেতের পানি বেশি হয়ে আপনার ক্ষেতে চলে এসেছে লোকটি বললো….

এই কথা শুনে লোকটি আল্লাহ তায়ালা কে অনেক শুকরিয়া জানালো আর বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো কেননা এই সময় মেশিন বন্ধ করে দেয় তাই লোকটি ভাবলো আজ না হোক উপবাসেই থাকবে। লোকটি বাড়িতে এসে দেখলো তাদের চালের বস্তা বারান্দায় পরে আছে তা দেখে সে তার স্ত্রী কে ডাক দিলো….

স্ত্রী: জ্বি বলেন…

আমি চালের বস্তা আনি নাই তাহলে কে দিয়ে গেলো এই বস্তা।

স্ত্রী: কিছুক্ষন আগে একটি লোক এসে আপনাকে ডাক দিছিলো তখন আমি ঘর থেকেই বলে ছিলাম যে আপনি বাড়িতে নেই তখন ওই লোকটি বললো….

আমি আমার চালের বস্তা মনে করে আপনাদের চালের বস্তা নিয়ে এসেছি তাই এখন আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম আর আমার টা নিতে আসি এই কথা বলে লোকটি চালের বস্তা বারান্দায় রেখে গেলো…..

চাষী বুঝতে পারলো এইটা মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে পেয়েছে আর সে এইটা ও বুঝতে পেরেছে নামাজ কোনোদিন কোনো কিছু আটকে রাখে না। যে ব্যাক্তি নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালা কে মন থেকে ডাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তার ডাক শুনে এবং তাকে সাহায্য করে….

অর্নিল: এখন বুঝতে পেরেছিস নামাজ কোনোদিন কোনো কাজ আটকায় না বরং আমরা কাজের অজুহাত দিয়ে নামাজ না পড়ার অজুহাত দেই।

তিয়াস : হুম বুঝছি। চল তাহলে নামাজ আদায় করে আসি। আর ঈশানের কপাল সত্যিই খুব ভালো এমন একজন সহধর্মিণী পেয়ে বাট হালায় তা বুঝে না।

অর্নিল: হুম…তো চল এখন…..

ওরা দুইজন নামাজের উদ্দেশে মসজিদে যেতে লাগলো আর বললো…..

নামাজ কে বলো না কাজ আছে, কাজ কে বলো আমার নামাজ আছে।

নামাজ কে বলো না কাজ আছে, কাজ কে বলো আমার নামাজ আছে।

নামাজ বিহীন পরপারে কি জবাব দিবে তুমি প্রভুর কাছে

নামাজ কে বলো না কাজ আছে, কাজ কে বলো আমার নামাজ আছে।

দুইজন একসাথে বলতে বলতে চলে গেলো….

অন্যদিকে….

ইসরাত: জান্নাত তোর ভাই কে ফোনে পেয়েছিস ?

জান্নাত: নাহ। শুধু মাত্র তোর জন্যই আমি ভাইয়া কে ফোন দিচ্ছে। আমার জানিস লজ্জা লাগছে যে ও আমার ভাই। যে কিনা বউয়ের গায়ে হাত তুলে।

ইসরাত: এইভাবে বলিস না। হাজার হোক তোর ভাই তো….

জান্নাত: এমন ভাই থাকার চেয়ে না থাকা ভালো (রাগে)

এই কথাটা শুনে ইসরাত জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো আর ওর কানে বার বার এই শব্দ টা আসছে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। ওর দুই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো আর হাত পা কাঁপতে লাগলো….

জান্নাতের এতক্ষণ পর মনে পড়েছে যে ও কি বলেছে তাই সে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ইসরাত কান্না করছে।

জান্নাত: ইসু পাখি প্লিজ কান্না করিস না ওইটা আমি ভুলে বলে ফেলেছি। আর বলবো না কোনোদিন প্লিজ পাখি কান্না করিস না।

ইসরাত কান্না করেই যাচ্ছে ঠিক এমন সময় ঈশান বাসায় আসলো। আর ওকে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না যে গতকাল রাত থেকে আজ সকাল অবধি কিছু ঘটেছে আর ইসরাত তো ঈশান কে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরলো…

ইসরাত: আপনি ঠিক আছে। জানেন কত ভয় পেয়েছিলাম। আর আপনি এমন কেনো হুট করেই কোথায় চলে যান। আপনাকে জান্নাত কত ফোন দিয়েছে আপনি ফোন ধরলেন না কেনো।

ইসরাতের এই কথা গুলো ঈশানের কানে যেনো বিষের মতো লাগছে তাই সে ইসরাত কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো…

ঈশান: ওই তুই আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কোথাও পেয়েছিস। তোকে কিন্তু আমি আগেই বলে দিয়েছি যে আমার কাছে অধিকার নিতে আসবি না। তোকে জাস্ট বিয়ে করেছি ডেড এর কথায়। তুই হলি আমার কাছে একটা কার্টুন। যার সাথে কোনোদিন সংসার করা যায় না। এই কথা বলেই ঈশান হনহন করে রুমের ভিতর চলে গেলো।
আর এইদিকে ইসরাত মনে মনে অনেক শান্তি পেয়েছে কেননা তার স্বামী যে ভালো আছে সুস্থ্য আছে তাই… আর এইদিকে জান্নাতের বাবা এইসব দেখে ঈশানের কাছে যেতেই….

ইসরাত: বাবা ওনাকে কিছু বলবেন না। হাজার হোক আপনার ছেলে আর এই পরিবারের ছেলে । আর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তো জগরা হয়েই থাকে তাই না…..

জান্নাতের বাবা: কিন্তু এইটা তো…

ইসরাত: বাবা আমার জন্য (করুন গলায়) দোয়া করে ওনাকে কিছু বলবেন না। একদিন আল্লাহ তায়ালা দেখবেন ওনাকে ঠিকই ঠিক পথ দেখাবে এই বিশ্বাস মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি আমার আছে।

জান্নাতের বাবা আর কিছু বলতে পারলো না সে চলে গেলো ঠিক তখনই….

জান্নাত: ইসু পাখির এখন মন ভালো নেই তাই ওকে মন ভালো করানোর জন্য কিছু তো একটা করতেই হবে (ভাবতে লাগলো) কি করবো কি করবো…. তখন সে ইসরাত কে টেনে এনে ইসরাত কে ওর পাশে বসালো আর বললো….

একটি শিক্ষনীয় গল্প বলছি
ইন-শা-আল্লাহ তোর মন ভালো হয়ে যাবে।

গল্প টি হলো স্বামী আর স্ত্রীর

তো একদিন এক স্বামী ও স্ত্রী বেড়াতে গেলো চিড়িয়াখানায়। তারা দেখল একটি বানর তার সঙ্গীনির সাথে খেলছে, খুনসুটি করছে।স্ত্রী দৃশ্যটা দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বামীকে বললো…
কী চমৎকার ভালোবাসার দৃশ্য

এরপর তারা গেল সিংহদের খাঁচার কাছে দেখল….

সিংহ খাঁচার একপাশে চুপচাপ বসে আছে।সিংহীটাও অদূরে অন্য দিকে ফিরে বসে আছে।স্ত্রী দেখে বলল

আহ!ভালোবাসার কী নির্মম পরিণতি!

স্বামী এতক্ষণ চুপচাপ স্ত্রীর পাশে হাঁটছিল।এবার নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন…

ধরো! এই কাঁচের টুকরোটা সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারো, আর দেখো কী ঘটে! মহিলাটি যখন কাঁচের টুকরোটা ছুঁড়ে মারল,

সিংহ ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।সঙ্গীনিকে বাঁচানোর জন্য গর্জে উঠল।

এবার যেয়ে বানরটার দিকে ছুঁড়ে মারো। দেখ কী ঘটে।(স্বামী বললো)পুরুষ বানরটার আচরণ লক্ষ্য কর।

স্ত্রী কাঁচের টুকরোটা বানরীর দিকে ছুঁড়ে মারল। দেখা গেল
ছুঁড়ে মারার আগেই বানরটা আত্মরক্ষার্তে ছুটে পালিয়ে গেল।সঙ্গীনির দিকে ফিরেও তাকাল না।


স্বামী বলল: মানুষ তোমার সামনে যা প্রকাশ করে তা দেখে প্রভাবিত হয়ে যেয়ো না। অনেক মানুষ আছে যারা তাদের বানোয়াট লোক দেখানো আবেগ- অনুভূতি প্রকাশ
করে অন্যকে প্রতারিত করে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা তাদের ভেতরে গভীর অনুরাগ-ভালবাসা লুকিয়ে রাখে।আর এখন বর্তমানে সিংহদের চেয়ে বানরদের সংখ্যাই বেশি।

এই টুকু বলার পর জান্নাত বললো…

কিরে ইসু পাখি কিছু বুঝতে পেরেছিস….

ইসরাত তখন মাথা দিতে হ্যাঁ বুঝালো আর জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে বললো…..

ইসরাত: আমার এই নোনদিনি ও যে এত সুন্দর করে বুঝাতে পারে আগে জানতাম না তো ঠিক তখনই ঈশান জোরে জোরে জান্নাত কে ডাকছে…..

চলবে…..

বানান ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

(শিক্ষণীয় কিছু কথা: নামাজ কিন্তু আমাদের কোনো কাজ আটকিয়ে রাখে না বরং আমরা কাজের অজুহাত দিয়ে নামাজ পড়ি না। আর স্বামী ও স্ত্রীর গল্পে বুঝানো হয়েছে স্বামীর যতই রাগ থাকুক সে কিন্তু মনে মনে স্ত্রী কে ভালোবাসে স্ত্রীর কিছু হলে তাকে বাঁচানোর জন্য জাপিয়ে পড়ে। আমরা সমাজে এমন অনেক মানুষ কেই দেখি তারা মানুষের সামনে স্ত্রী কে খুব ভালোবাসে কিন্তু তারা মনে মনে কিন্তু অন্য রকম(কথাটা সবার ক্ষেত্রে না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here