পবিত্র ভালোবাসা❣️পর্ব-২০

0
1380

#পবিত্র_ভালোবাসা ❣️
#Writer_ইসরাত_জাহান_মাওয়া
#পর্ব_২০

ইসরাত: আমার এই নোনদিনি ও যে এত সুন্দর করে বুঝাতে পারে আগে জানতাম না তো ঠিক তখনই ঈশান জোরে জোরে জান্নাত কে ডাকছে…..

জান্নাত ঈশানের ডাক শুনে বিরক্তি নিয়ে ঈশানের কাছে গিয়ে….

জান্নাত: কি হয়েছে এত ডাকছিস কেনো? বাসায় কি চোর এসেছে নাকি। যে এইভাবে ডাকছিস মনে হচ্ছে চোর না ডাকাত আসছে।

ঈশান: তোকে এত কথা কি বলতে বলেছি। তোকে জাস্ট ডেকেছি ওই মেয়ে কে সাবধান করার জন্য। ওই মেয়ে কে বলবি যেনো আমার জিনিস পত্রে না ধরে।

জান্নাত: একশো বার ধরবে হাজার বার ধরবে কজ ইসু পাখি তোর বউ । তোর জিনিসে সম্পূর্ণ ধরার অধিকার ওর আছে।

ঈশান: সেই অধিকার আমি কি ওই মেয়ে কে দিয়েছি? এই অধিকার জাস্ট মেরির।

জান্নাত মেরি নাম শুনে অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো

জান্নাত: মেরি 😯। ভাইয়া তুই কি মেরি মেরিলের কথা বলছিস? এই মেরিল তোর জিনিসে কিভাবে অধিকার ফলাবে। (অবাক হয়ে)

ঈশান: ওর নাম মারিয়া।

জান্নাত: মারিয়া থেকে মেরি ও আল্লাহ কোথায় তুমি দড়ি পালাও উঠে যাই(হাসতে হাসতে) নামের কি বাহার মেরি। জানিস ভাইয়া এই নাম শুনে একটা গান মনে পড়ছে তেরি মেরি মেরি তেরি,,,আরেকটা আছে বেবি মেরি হায় হায় গুলি মারে(বলেই হাসতে লাগলো)

এমন সময় ইসরাত আসলো….

ইসরাত: জান্নাত কারো নাম নিয়ে মজা করা ভালো না।

জান্নাত: ওহহ সরি সরি (হাসির জন্য কথা বলতে পারছে না কিন্তু ইসরাতের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাই হাসি থামিয়ে) আমি যাই এখন তোরা কথা বল(বলেই আবার হাসতে হাসতে চলে গেলো)

ঈশান তো এইসব দেখে রাগে গজগজ করছে….

ঈশান: শুধু মাত্র তোমার জন্য জান্নাত মেরি কে নিয়ে হাসছে। তুমি তো একটা কালনাগিনী এসেই আমার বাসায় রাজত্ব শুরু করে দিছো(এই কথা বলেই চলে যেতে নিলো)

ইসরাত: কোথায় যাচ্ছেন?…

ঈশান: তার কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?

ইসরাত: যেহেতু এখনও আমি আপনার স্ত্রী তাই এই টুকু জানার অধিকার অবশ্যই আমার আছে।

ঈশান মনে মনে ভাবলো এই মেয়ে যেহেতু ধার্মিক ওর সামনে ইসলাম বিরোধী কাজ আর মেরির সাথে কথা বললে এই মেয়ে হইতো এইসব সহ্য করবে না পরে নিচ্শয় চলে যাবে তাই সে বললো….

ঈশান: আমি ক্লাবে যাচ্ছি….

ইসরাত: এইসব তো ভালো না।

ঈশান: তুমি কি বুজবে ক্লাব সম্পর্কে জিবনে কি দেখেছো। সারাজীবন তো ওই ঘরের এক কুটিরে বসে বসে ধ্যান করো। জীবনের ইঞ্জয় সম্পর্কে কি কিছু জানো। কোনোদিন কি উপভোগ করেছো। জীবন মানে কি?

ইসরাত: আচ্ছা আমি জাস্ট আপনাকে কিছু কথা বলবো শুধু একটু মনোযোগ দিতে শুনবেন।(করুন গলায়)

ঈশান: ওই আমাকে কি পাগলা কুকুরে কামড় দিয়েছে যে তোমাকে বলার সুযোগ দেই আর তুমি পুরো হিস্টরি বলা শুরু করো।

ইসরাত: আপনাকে এত কিছু বলবো না শুধু কিছু কথা বলবো। কারণ আপনি জানতে চেয়েছেন আমি জিবনে কোনো ইঞ্জয় করি নাই জীবন মানে কি বুঝি না তাই শুধু কিছু বলবো দোয়া করে একটু শুনুন।( ছলছল চোখে বললো)

ঈশান ইসরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো কি মায়া চোখ গুলোতে। এই চোখ দুটি যেনো কত নিষ্পাপ। তাই ঈশান আর না করতে পারলো না।

ঈশান: হুম শুনবো বাট আগেই বলে রাখছি হিস্টরি বললে তোমাকে আজ আমার সাথে নিয়ে যাবো ক্লাবে আর ওইখানে আমি আমার হিস্টরি দেখাবো(ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে)

ইসরাত: আপনি যদি আপনার স্ত্রীর সাথে এমন করতে পারেন তাহলে আর কি বলবো। এইসব বলে কথা না বাড়িয়ে যেটা বলতে চাচ্ছি বলছি….

ঈশান: বলে ফেলো আমার এত সময় নাই।

ইসরাত: হুম। বলছি শুনুন , একটা ছেলে গাড়ি ড্রাইভ করছে।কিছুদুর যাওয়ার পর সে সামনে কিছু একটা দেখতে পেল।তখন সে বলল -তুমি কে ?
-সে বলল আমি ইসলাম। আমাকে নিয়ে নাও।তোমার জীবনের পথ চলাতে আমি পথ প্রদর্শক।
-ছেলেটি বলল, না। আমার তোমাকে লাগবেনা।তারপর আবার ড্রাইভ করছে। এবারও কিছু দেখল,বলল
-তুমি কে ?
-সে বলল আমি তোমার এস.এস.সি.সার্টিফিকেট আমাকে তুলে নাও।তুমি সফলতা অর্জন করবে।সে তাকে তুলে নিল। আবার কিছুদুর যাওয়ার পর কেউ তাকে বলছে আমি তোমার এইচ.এস.সি সার্টিফিকেট আমাকে তুলে নাও। জীবনে সফল হবে।সে তাকে তুলে নিল।তারপর আবার চলল। চলতে চলতে পেল হায়ার এডুকেশন।
তাকেও তুলে নিল।এরপর পেল চাকরী, প্রতিপত্তি।জীবনে চলার পথে হঠাৎ কে যেন এসে তার গাড়িটা থামিয়ে দিল।ছেলেটি বলল,
-তুমি কে ?
-সে বলল……….আজরাইল।তোমার সময় শেষ।বল জীবনে কি অর্জন করেছ।
-ছেলেটি বলল এই তো আমার সার্টিফিকেট,আমার প্রতিপত্তি।
-আজরাইল বলল, এসবে তুমি সফল হবে না।
-ছেলেটি বলল, তাহলে কিসে ?
-সে বলল, ইসলাম।
-ছেলেটি বলল, আমি তো সেটা ফেলে এসেছি।এখন কি করব ?
-সে বলল, এখন তোমার কর্মফল (শাস্তি) ভোগ কর।

এখন কথা হলো গাড়িটা হচ্ছে ছেলেটির জীবন।
আর পথ হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা।
;
ছেলেটির সময় ফুড়িয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আমাদের হয়তো
এখনও সময় আছে।অথবা কে জানে কবে কার কখন সময় ফুড়িয়ে যায়!আসুন তার আগে আমরা ফিরে যাই শান্তির ছায়া তলে, ইসলামের দিকে।আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।নিয়মিত ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।আল্লাহ এবং রসূল (স)এর দেখানো পথে চলি।আল্লাহ সবাইকে হিদায়াত
দিন।
আমিন। এই কথা বলে ইসরাত ঈশানের দিকে তাকালো….

ঈশান: তোমার কথা শেষ এখন আমি যাই(বলেই কান থেকে ইয়ারফোন খুলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ইসরাত একটা দীরঘনিশ্বাস ফেললো….

অন্যদিকে…..

তিয়াস ভাইয়া কে খুব ভালো লাগে। তিয়াস ভাইয়া কে তো অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি আচ্ছা এইটা ভালোবাসা না কি ভালোলাগা। আচ্ছা ইসলামে কি প্রেম করা যায়। আচ্ছা ইসরাতের থেকে জেনে আসি। না থাক এখন হইতো ওরা কথা বলছে বাট এখন কি করবো (ভাবতে ভাবতে) পাইছি ইসরাত না আমায় একটা বই দিয়েছে দেখি তো ওইটাই….

তো জান্নাত বই টা খুলে খুঁজতে লাগলো প্রেম করা কি হারাম নাকি… তখন সে দেখলো….

ওইখানে লেখা ছিলো…

প্রেম মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, যা কারো প্রতি আবেগ, গভীর অনুভূতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। প্রকৃত প্রেম হলো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রেম, যা ছাড়া অন্য কোনো মানুষ ঈমানদার হতে পারবে না। দুনিয়ায় কাউকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাস। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মা ও রক্তের আত্মীয়দের প্রতি প্রেমও মহান আল্লাহ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সওয়াবের আশায় কোনো মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (মুসলিম : ১২/১৪, হাদিস : ১০০২)

বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম পিরিত হারাম। ইসলামে প্রেম জায়েজ তবে সেটা আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে। কিন্তু সেই প্রেম হতে হবে বাবার প্রতি সন্তানের যে প্রেম থাকে, প্রতিবেশির প্রতি প্রতিবেশির যে প্রেম থাকে। যদি আপনার কোন যুবতী মেয়ের প্রতি যৌন উত্তেজিত প্রেম থাকে তাহলে সেই প্রেম একেবারেই জায়েজ নয়। বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। “স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না” (সূরা আল মায়িদা: ৫) এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। ৩১ নং আয়াতে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম। জিনা তথা অবৈধ শারীরীক সম্পর্ক হারাম। (সূরা ইসরা আয়াতঃ ৩২) (সূরা ফুরকানঃ ৬৮) জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুণাহ।বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। (সূরা বাকারাঃ১৬৫) শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত নং ৯০ থেকে ৯১। আসলে ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন উপায় বলে দেয়।প্রেম করলে শয়তান অবশ্যই জিনা করতে প্রলুব্ধ করবে। ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম।

এইটা পড়ে জান্নাত বুঝলো এই ভাবে ভালোবাসলে ও তার সাথে কথা বলা দেখা করা পাপ। আর বিয়ের পর যত পারে প্রেম করা যাবে তাই সে ভাবলো তিয়াস ভাইয়া যদি আমায় পছন্দ করে তাহলে হইতো ভাইয়া কে বলবে আর ভাইয়া আমার কাছ থেকে এসে জানতে চাইবে আমি পছন্দ করি নাকি তখন আমি হ্যা বললে আব্বুর কাছে বলবে আর পরেই আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে আর বিয়ের পর তো প্রেম করতেই পারবো এই কথা বলে মন খুলে একটা নিঃশ্বাস নিলো জান্নাত আর শুয়ে পড়লো…..

অন্যদিকে…..

মেরি: হেই ঈশান তোমার দুই ফ্রেন্ড অর্নিল আর তিয়াস কোথায়? অর্ণিল তো আসে নাই বুঝতে পারছি কিন্তু তিয়াস ও কোথায়?

ঈশান আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই তিয়াস বা অর্নিল নেই…

মেরি: আমার মনে হয়….

চলবে…..

বানান ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

আমি অসুস্থ্য তাই গল্প টা একদিন পর পর দিচ্ছি ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here