হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-১০

0
1655

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১০

আবার পর্যায়ক্রমে সবার সিরিয়াল আসতে লাগলো, যার যার মতো স্টেজে পারফরমেন্স করে যাচ্ছে।একটা সময় ফুলের নাম এলো।গত রাতে রিহার্সালে ফুল নাচের স্টেপ গুলো উল্টা পাল্টা দিচ্ছিলো বলে অনুর সাথে যৌথভাবে নাচ শেখানো হয় এতে ফুল ভালো মতো নাচতে পারে লাস্টে ফুল মনস্থির করলো ওর বান্ধুবী আর অনুকে নিয়ে নাচবে,সেভাবেই শেখানো হয় ওদের।

তিনজনে স্টেজে গিয়ে গানের তালে তালে নেচে যাচ্ছে আর এপাশে অভ্র অপলক হয়ে তাকিয়ে আছে, ফুলের নাচ দেখে কল্পনা করছে অভ্রও ফুলের সাথে নাচছে,কিন্তু বাস্তবে দুর্ভাগ্য বশত অভ্র ভালো গান পারলেও নাচ মোটেও পারে না।

ফুল নাচতে নাচতে হাঁপিয়ে গেছে।নাচ শেষে স্টেজ থেকে বেরিয়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে একা একাই বলতে লাগলো,
-তওবা করলাম আর জীবনে নাচবো না, নাচলেও আর এই ঝাকানাকা গানে ভুলেও নাচবো না।ওরি বাবারে কোমর শেষ আমার।

ফুলের পেছন থেকে অভ্র বলে উঠলো,
-কি বলছো! আমি এতোক্ষণ ভরে প্ল্যান করছি ওদের সাথে তোমার নাচটা হয়ে গেলে আমি আর তুমি দিলবার দিলবার গানে নাচবো।
-ইহহহ পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি। যেটা সেটাতেই পারি না ইনি এসেছে দিলবার দিলবার নিয়ে।

-এরকম করে বলো না , খুব ইচ্ছে।
ফুল হাঁপাতে হাঁপাতে ভেংচি দিলো
-হেত।
অভ্র কিছু না বলে চেয়ার নিয়ে ফুল আর ওর মাঝখানে রাখলো,
-বসো,দাঁড়িয়ে থাকলে খারাপ লাগবে।
ফুল বসে পড়লো,বসার সাথে সাথে অভ্র ফুলের সামনে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল ধরলো।বোতল হাতে না নিয়ে অভ্রর মুখের দিকে চেয়ে রইলো,প্রচন্ড জল তৃষ্ণা পেয়েছিলো ফুলের অভ্র কি করে বুঝলো, সেটাই ভাবছে ফুল।
-কি হলো নাও এটা খাও।অস্থিরতা কমবে,আর নিশ্বাস টা কম কম নাও আস্তে ধীরে তাহলে ক্লান্তি কম লাগবে।
ফুল হাতে নিয়ে বোতল খোলে অনেকটা খেয়ে নিলো,এবার স্বস্তি লাগছে।

-থ্যাংকস!
অভ্র কিছু না বলে চুপচাপ রইলো।কিছুক্ষণ থেমেই রইলো,স্টেজে পারফর্মেন্স দেখছে।অভ্রর মাথায় আবার দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।
-হুর যাবে আমার সাথে?
ফুল চোখ বড় বড় করে অভ্রর দিকে তাকালো,
-আরে আমি বললাম আমার সাথে নাচতে যাবে নাকি,তুমি ব্যাপারটা অন্যভাবে নিচ্ছো মেবি।

ফুল দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-আসেন নাচবো চলেন চলেন,অই যে কিছুক্ষণ আগে বাজছিলো হায় গারমী গান ওটাতে নাচবো আসেন।
ফুল উঠে দাঁড়িয়ে অভ্রর হাত ধরে টানতে লাগলো, ফুলকে খেপাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলো।
অভ্র কোনো রকম বাহানা দিয়ে কথা ঘুরিয়ে ফুলকে থামিয়ে দিলো।আর দুষ্টুমি করবেনা বলে প্রমিস করলো,

ফুল চেয়ারে বসে পড়লো আবার,অভ্র ওদের পেছনে থাকা স্ট্যান্ড ফ্যানটা ফুলের দিকে এংগেল করে দিলো যাতে ওর গায়ে বাতাস লাগে ঠিক মতো।তারপর চুপচাপ ওর পাশে বসে রইলো। মীরা, আর অয়নী এসে ফুলের নাচের খুব প্রশংসা করলো নাচটা বেশ ভালো হয়েছে। সত্যি বলতে ফুল আগে কখনো নাচেনি এভাবে ছোটো বেলায় হয়তো একটা একটু নাচতো।সব ভাইয়ের বিয়ের মধ্যে আশিকের বিয়েতে সব থেকে বেশি মজা হচ্ছে।হয়তো অভ্রদের কারণেই জমে উঠেছে সবটা।

অনু এসে অভ্রর ডান পাশে বসলো,ফুল অভ্রর বাম পাশে। অনু অভ্রর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-ভাইয়া আমি কিছু আন্দাজ করতে পারছি মনে হয়!
-চুপ চুপ চুপ আস্তে,এটা যেনো তিন কান না হয়।
-ও হো তাহলে আমার মুখ বন্ধ রাখার জন্য আমায় সন্তুষ্ট করতে হবে!
-ঢাকায় ফিরে আপনাকে সন্তুষ্ট করছি শাহজাদী!
-ওকে।চালিয়ে যাও তাহলে আর হেল্প লাগলে বলো।
-হেল্প তো লাগবেই। তবে এখন না সময়
হলে জানাবো।
-ওকে।

ওদিকে অনুষ্ঠান তো খুব মতো চলছে, এবার আকাশ, কাব্য,সমুদ্র,অয়ন,আবীর অভ্র এই ছয়জন মিলে নাচ দিতে গেলো সেই বিখ্যাতো গানে,
আখ ক্ষেতে ছাগল বন্দী, জলে বন্দী মাছ।
পুরুষ বন্দী নারীর ফাঁন্দে ঘুরায় বারোমাস……..

ওদের নাচ দেখে একেকজন জ্ঞান হারা অবস্থা,কাব্য, আকাশ,আবীর মেয়ে মেয়ে হয়ে নাচছে আর বাকী তিনজন ছেলে হয়েই।

ওদের নাচের কোরিওগ্রাফার ওরা নিজেরাই। মীরা বৃষ্টি অনেক বলেছিলো একটা ভালো গানে নাচ শেখাতে ওরা শুনেই নি।

রাত প্রায় বারোটা অব্ধি এই অনুষ্ঠান চললো,এর থেকে বেশি রাত আর সাউন্ড বক্স বাজালো না।কারণ আশে পাশের প্রতিবেশীরা হয়তো বিরক্ত হচ্ছে।আরো কিছুক্ষণ এরকম চললে হয়তো বাড়িতে পুলিশ এসে উঠবে।আসর ভেঙে সবাই বাড়িতে ঢুকতে লাগলো।

কিন্তু এখনো একটা কাজ বাকি আছে সেটা হলো আশিকের হাতে মেহেদী দেয়া।আশিক মেহেদী দিতে না চাইলেও ওকে জোর করে রাজি করানো হয়।সবাই যার যার মতো বাড়িতে ঢুকে পড়ে।সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলেও, আকাশদের প্ল্যান ছিলো অন্য কিছু ওরা রাত জাগবে আর গল্প করবে সবাই মিলে

গল্পের আসরে উপস্থিত আশিক আশিকের বন্ধু বান্ধব, পলাশ,আকাশ, কাব্য, সমুদ্র, আবির,অভ্র, মীরা, বর্ষা, অনু,অয়নী,ফুল আর এক করে কফি যাতে রাত জাগতে সুবিধে হয়।মীরা আশিকের এক হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে আর অয়নী আরেক হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।

অভ্র ফুলের থেকে দূরে বসেছে , অনেকটা ফুলের মুখোমুখি বসে আছে যেনো ফুলকে সহজে দেখতে পারে।এতো বেশি টানছে মেয়েটার মায়া! গালে হাত দিয়ে বসে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
-এই অভ্র একটা গান গাও না, তোমার ভয়েস কিন্তু মারত্মক লেভেলের আর গান গুলো যে গাও তীর্যকভাবে বুকে লাগে।

আড্ডার মাঝে আশিকের বন্ধু এই আবদার করে বসলো,তার সাথে সবাই প্রেশার দিতে লাগলো বাধ্য হয়ে অভ্র আবার গিটারে সুর তুলে গান গায়তে লাগলো,

“তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ে সুখের দোলা”…..(!!)
নিজেকে আমি ভুলতে পারি
তোমাকে যাবে না ভোলা

তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ে সুখের দোলা

হাজার তারের বীণা তুমি
তুমি সুরের ঝংকার
তুমি আমার আষাঢ়-শ্রাবণ
তুমি বসন্ত বাহার
রাগ-রাগিনীর ফুল-কলিতে
কন্ঠে পড়াবো মালা……

গানটা শেষ হতে না হতেই পলাশ বলে উঠলো,
-আরে এই গানের সুর তো পুতুল বেহালাতে তুলতে পারিস,প্লিজ বোন বেহালাটা বাজা নারে।
অভ্রর গান শেষ হতে না হতেই প্রেশার এখন ফুলের দিকে কনভার্ট হলো, ওর বেহালাটা এনে দেয়া হলো সবার কথা মতো ফুল বেহালা বাজানো শুরু করলো, বেহালা বাম কাঁধেচাপা দিয়ে চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে সুর তুলে যাচ্ছে।অভ্র চোখ বন্ধ করে সুরটার মাঝে ডুব দিচ্ছে।ফিল করছে প্রতিটা শব্দধ্বনিকে। সুরের সাথে সাথে ফুলের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে আরো গাঢ়ভাবে।

আড্ডা গান বাজনা চলছেই,
আশিকের হাতে মেহেদী দেয়া কমপ্লিট হতেই উঠে চলে যায়। বেচারার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। আশিকের সাথে ওর বন্ধুরাও চলে যায়।

আর বাকিরা নিজেদের মতো করে গল্প করতে লাগলো, আজ কনের বাড়িতে গিয়ে কি কি ঘটেছে সেগুলো শেয়ার করছে হাসাহাসি করছে।

রাতভর গল্পগুজব করে ওরা দু’টোর দিকে আসর ছেড়ে যার যার মতো ঘুমানোর উদ্দ্যেশে চলে গেলো।

অনু আর ফুল ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বিছানায় গা ছেড়ে দিলো।

ফুল আগের রাতের মতো জানালা দিয়ে উঁকি মারতে লাগলো যেনো অভ্রকে দেখা যায়।

অনেক চেষ্টার পরও অভ্রর দেখা মিলে না আজকে আকাশের রুমের লাইট অফ।
হতাশা বালিশে মাথা রাখলো,
অনেকটা ক্লান্তি ভর করেছে। মাথার নিচে বালিশ পড়তেই ঘুমিয়ে যায় ফুল।

ওদিকে অভ্রকে অনু বলে দিয়েছে গত রাতে ফুল অভ্রকে দেখার জন্য জানালা দিয়ে উঁকি মারছিলো।যার কারণে অভ্র আজকে রুমে গিয়েই লাইট অফ করে জানালার পাশে
বসে ব্যাপারটা যাচাই করতে লেগে যায়।ফোন টেপার ছুতোয় অভ্র আড়চোখে দেখে ফুল কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি মেরে অভ্রকে দেখতে না পেয়ে ঘুমিয়ে যায়।অভ্র মুচকি হেসে দিয়ে মোবাইল রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

দুজনের মনে অনুভুতি গুলো তো একই ছন্দ গাইছে।কিন্তু কি আছে এদের ভবের লিখনে কে জানে।

বেলা প্রায় এগারোটা বাজে আকাশ সকালে ঘুম থেকে উঠলেও কাব্য আর অভ্র এখনো ঘুমিয়েই আছে আর সমুদ্র আবীর অয়ন ওরা তো রুমটাই লক করে ঘুমিয়ে আছে।
যদিও ওদের কাউকে ডাকা হয় নি।অভ্র ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে। ওয়েদারটা মেঘলা মেঘলা আর প্রচন্ড বাতাস যার ফলে ঘুমটাও খুব বেগে এসেছে।

ফুল তো সেই সকালে উঠে পুরো রোজ প্যাটেল রাউন্ড দেয়া শেষ,ওদিকে অনুও ঘুম থেকে উঠেনি এখনো।
ফুল ওর গ্যাং নিয়ে কিছু একটা নিয়ে মিটিং করছে। মিটিং শেষে বাড়ির ভেতরে যেতেই ফুলের সামনে মামী এসে দাঁড়ালো,
-পরীমা তোর জন্য একটা জিনিস রেখেছি চল নিবি নাকি।
-কি রেখেছো?
-আয় আমার সাথে।

ফুলকে সাথে করে তাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলো । সোজা কিচেনে ঢুকে ফ্রিজ থেকে একটা মিষ্টির বক্স বের করে ফুলের হাতে দিলো।
-এটাতে বিলপাড়ার চমচম আছে।তুই তো বিলপাড়ার চমচম ভীষণ পছন্দ করিস আমি কাল তোর জন্য আমাদের বাড়িতে এনে রেখে দিয়েছিলাম।যা বসে বসে খা।
আরো আছে, এগুলো আগে খেয়ে শেষ কর,আবার নিবি।

ফুল ঠোঁটে হাসি লাগিয়ে উত্তর দিলো,
-ঠিক আছে মামী।

ফুল এমনিতেও প্রচুর মিষ্টি খেতে পারে।আর সেখানে যদি পছন্দের মিষ্টি হয় তাহলে তো কথায় নেই!
ড্রয়িংরুমে বসে বসে মিষ্টি খাচ্ছিলো, এক বসায় পুরো ছয়টা খেয়ে ফেললো।আকাশ উপর থেকে ফুলের মিষ্টি খাওয়া দেখে নিচে এলো।
-কিরে বোন একা একা মিষ্টি খাচ্ছিস,ভাইকে দিবি না?
-কাল রাতে যে হলুদের স্টেজে বসে তোমরা মিষ্টি খেয়েছো আমি কি তোমার কাছে চেয়েছি?
-ওখানে মাত্র কয়টা মিষ্টি ছিলো, আর কয়জন মিলে খেয়েছি দেখতে হবে না!

আকাশের মা ওদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো আকাশকে ফুলের কাছে দেখেই ওমনি বলে উঠলো।
-এই আকাশ খবরদার পরীকে বিরক্ত করবি না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পেট পুজো করে নিয়েছিস।এখন ছোটো বোনের পিছু নিয়েছিস।
-মা তুমি আমাকে অন্য মিষ্টি দিয়েছিলে।সব ভালো মিষ্টি তুমি পুতুলকে দিয়ে দিয়েছো।
-এগুলো পরীর পছন্দের মিষ্টি ভালো না খারাপ অতো কিছু জানি না।যেটা পরীর পছন্দের সেটা পরীর ই হবে।
-সবাই শুধু পরীর দিকেই নজর।আমিওতো বাড়ির সব থেকে ছোটো ছেলে।আমার কোনো কদর নেই এ বাড়িতে।একটা কেউ একজন থাকলে তাও কদর করতো আমার!

আকাশের মা মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে থেকে চলে গেলো।
ফুল আকাশের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসি দিয়ে আকাশকে বললো,
-আমি কিন্তু জানি নানা, তুমি কোন কথা থেকে কোন কথার টোনে নিলে।মামী না বুঝলেও আমি বুঝেছি।
-বুঝেছিস যখন তাহলে বুঝে কি লাভ বল বোন?এই সিজনটা এলেই আমার কেমন জানি বিয়ে করতে ইচ্ছে করে।আশিক ভাইয়ার বিয়েটা হওয়াই কিছুটা শান্তি।
এখন মাথার উপর একটা বড় ভাই আছে। সামনের বছর তোর পলাশ নানাকে বিয়ে করিয়ে দেবো তার পরের বছর আমি আইডিয়াটা কেমন?
ফুল বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বললো,
-আই এপ্রিশিয়েট!
আকাশ ফুলের গাল টেনে বললো,
-লক্ষ্মী বোন আমার!
ফুল হেসে দিয়ে মিষ্টির বক্সটা আকাশের দিকে ধরলো,
-নাও খাও।
-না তুই খা বোন,আমি খেয়েছি।
-ঠিক আছে খাচ্ছি আমি।
ফুল একটা মিষ্টি তোলে মুখে দিতে যাবে ওমনি কেউ একজন পেছন থেকে ফুলের হাত থেকে মিষ্টির বক্সটা চিলের মতো তোলে নিলো মাথা উঁচু করে ফুল তাকিয়ে দেখলো,এটা অভ্র।
-কিসের একা একা মিষ্টি খাবে।একজন খাবে না বলে কি বাকিরা হাওয়া হয়ে গেছে নাকি!

ফুল অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-মিষ্টি নেবেন নিন বক্স টা দিন না।
-বক্স লাগবে তোমার? ওয়েট কয়টা মিষ্টি আছে দেখে নেই।ওয়ান টু থ্রী………………………..১২ টা আছে।তোমার কি বক্সটা ইমার্জেন্সি দরকার?তাহলে আমি মিষ্টি গুলো একটা প্লেটে ঢেলে নিচ্ছি।আর বক্সটা তোমায় দিচ্ছি।আর খুব বেশি দরকার না হলে ৫ মিনিট ওয়েট করো আমি মিষ্টি গুলো খেয়ে দিচ্ছি।

ফুল কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আকাশের দিকে ফিরে বললো,
-নানা কিছু বলো না তোমার বন্ধুকে!আমার মিষ্টি!
আকাশ হেসে দিয়ে বললো,
-ভাই রং জায়গায় ভাগ ধরেছিস। দিয়ে দে।
-এতো গুলো মিষ্টি একা একা খাবে কি করে?আমি খেয়ে এগিয়ে দেই?

ফুল শান্তস্বরে বললো,
-ঠিক আছে কিন্তু বক্সটা আমার হাতে থাকবে।
-কি আছে এই বক্সে তুমি ঘুরে ফিরে শুধু এই বক্সটা চাইছো!
-ওটাই মিষ্টি আছে।
-50/50 ওকে?
ফুল উত্তর না দিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে রইলো।অভ্র মুচকি হেসে দিয়ে মিষ্টির বক্স ফুলের হাতে দিলো।
-মিষ্টি খুব পছন্দ তোমার?
-হুম অনেক বেশি।

আকাশ অভ্রকে বললো,
-ভাইরে বোন আমার এইটা মিষ্টি খাওয়াই ওস্তাদ, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি অভ্র তুই ও যে এতো মিষ্টি খেতে পারিস, তাও ওর সাথে মিষ্টি খাওয়াই পারবি না।
-কি বলিস এটা সম্ভব নাকি।তাহলে ফুল চলো দুজনের একটা কম্পিটিশন হয়ে যাক?কে বেশি খেতে পারে হ্যাঁ?
-এখন? আমার পেট তো ভরে গেছে প্রায়।
-কয়টা খেয়েছো?
-এই যে হাতের টা খেলে ৮ টা হবে।
-ওকে পরে হবে তাহলে।
-ওকে ডান।

অভ্রও ফুলের মতো প্রচুর মিষ্টি খেতে পারে।সব কিছুতে বিপরীত বিপরীত হলেও একটা ব্যাপারে হুবুহু মিলে গেলো দুজনের।

বেলা পেরিয়ে যোহরের আজান দিয়ে দিলো, সবাই জুম্মার নামাজের জন্য গেলো,নামাজ পড়ে এসেই বর যাত্রী বের হবে।

আজকে ভাবীদের মধ্যে কেউ যাবে না আশিকের সাথে।কারণ সুমাইয়াকে রেখে সবাই মজা করবে এটা কোনো বউয়ের মনে টিকছে না, বাড়ির চার বউ একদম আপন বোনের মতো থাকে।একজন আরেকজনকে ছাড়া গলা শুকিয়ে যায়।
গায়ে হলুদে সুমাইয়ার অনুরোধে কবিতা, ঐশী,সুলতানা গেলেও আজ যাবে না।সুমাইয়া অনেক করে বলছে কিন্তু কে শুনে কার কথা।ভাবী রা যাবে না বলে ফুলও যাবে না বলে বায়না করলো।কিন্তু সবাই মিলে বলে কয়ে ফুলকে রাজি করালো।

ঐশী আর সুলতানা মিলে ফুলকে সাজিয়ে দিচ্ছে।একটা লাল রঙের গাউন পড়েছে ফুল,হাতে কালো রঙের চুড়ি,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।বেশ মানিয়েছে! চোখ দুটো বড় বড় হওয়াই কাঁজলে যেনো আরো বেশি ফুটে উঠে চোখের সুন্দর্য্য।চোখের কালো মনি দুটো যেনো এক্সট্রা জ্যোতি নিয়ে জ্বলজ্বল করছে।

আড়াইটার দিকে বর যাত্রী বেরিয়ে পড়লো। বরের গাড়ীতে আশিকের সাথে নিজাম,ওর ছেলে নিয়াজ আর আয়মান গেলো শুধু, ফুলকে নিতে চাইলেও আকাশ যেতে দেয় না।আকাশদের সাথে যেতে বলে ফুলকে। আকাশরা পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল পলাশ অনু আর ফুল এই কয়জন একটা হাইসে গেলো। একদম পেছনের সীটে অনু, ফুল আর অভ্র বসলো।ফুল আর অভ্রর মাঝখানে বসেছে অনু।অভ্র আগেই পেছনে বসে ছিলো অনুকে ইশারা করতেই অনু চালাকি করে ফুলকে নিয়ে পেছনে বসে।

গাড়িতে বসে বসে কাব্য আর আবির সমুদ্র গলা ছেড়ে গান গায়তে শুরু করলো। বাকিরা হাত তালি দিয়ে ওদের গানের সাথে তাল মেলাচ্ছে। সবাই এমন ভাবে মজা করতে করতে যাচ্ছে। যেনো ওরা পিকনিকে যাচ্ছে। মীরা বৃষ্টিও তালে মেলালো ওদের গানে, আস্তে আস্তে সবাই ওদের গানের গলার সাথে গলা মেলাচ্ছে।কিন্তু আজ অভ্র গান গায়ছে না,পেছনের দিকে হেলান দিয়ে আড়চোখে শুধু ফুলকে দেখে যাচ্ছে।
– এতো সুন্দর কেনো এই মেয়ে!চোখের সামনে এভাবে যদি দেখতে থাকিই কখন যে জ্ঞান হারা হয়ে পড়ে যাবো!একে হুর বললেও কম পড়বে,হুরের রাণী পারফেক্ট আছে।

ওপাশে ফুলও আড়চোখে একটু পর পর অভ্রকে দেখছে।
– রাজপুত্রটাকে কি সুইট লাগছে! যখন যা পড়ে তাতেই খুব বেশি মানায় উনাকে।আচ্ছা এটা কি কালারের শার্ট পড়েছে উনি?ধুর আমি এমন কেনো?লাল- নীল, সাদা- কালো ছাড়া আর কোনো কালার ই চিনি না। আজ অব্ধি হলুদ আর বাসন্তী রঙের ডিফারেন্সটাই বুঝলাম না আর তো! এ জীবন এমন কেনো আমার? থাক আমি কালার চিনে কি করবো!রাজপুত্রের চেহারার কাটিংটা কতো মায়াবী, আমার থেকেও সরু নাক উনার!হয়তো ছেলে বলেই।কিন্তু চোখটাতে মায়া নেই,তবুও কেনো এতো টানে ! চুল গুলো একটু সাইজে বড় বড়ই মনে হচ্ছে কিন্তু বেশ লাগছে,আরেকটু বড় হলে চুলগুলো পেছনে ঝুটিই হবে।আচ্ছা রাজপুত্র চুলে ঝুটি করলে কেমন লাগবে?

গালে হাত দিয়ে কল্পনা করলো ব্যাপারটা।
মনে মনে ফুল নানান রকম কথা চিন্তা করছে অভ্রকে নিয়ে।এমন সময় কানের মধ্যে কেউ একজন ফুঁ দিলো,ফুলের ঘোর কাটলো। পাশ ফিরে দেখে অভ্র অনুকে ক্রস করে ফুলের কানের কাছে মাথা এনে বললো,
-অবশেষে যাচ্ছো তাহলে আমার সাথে? গাড়িটা এখন ঢাকার দিকে নিলেই কেচ্ছা খতম।
-একদম ই না।গাড়ি ঢাকা যাক বা চিটাগাং, আমি তো অনুর সাথে যাচ্ছি।দেখুন আমার পাশে অনু আপনার সাথে যাচ্ছি না।
অভ্র হেসে দিয়ে বললো,
-অনুর রুমটা কিন্তু আমার রুমের পেছনের রুম! ওর রুমে যেতে হলে আমার রুমের সামনের করিডোরটা ক্রস করে যেতে হবে।
-আচ্ছা আপনার সাথে কখনো কথায় পারি না কেনো আমি?
অভ্র উত্তর না দিয়ে মাথা সরিয়ে আনলো।আর ফুলের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।
অনুর পেছন দিয়ে ডান কাঁধে হাত রেখে, মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে অভ্র বললো,
-এমন দিন আসবে যেদিন আমি আর ফুল পাশাপাশি বসবো, আর তুই সেদিন সাইডে তো দূরে থাক সেই গাড়িতেও জায়গা পাবি না, মনে রাখিস।
-ওপস ভাইয়া,ফুলের পাশে বসতে দেই নি বলে তুমি আমায় খোঁটা দিয়ে যাচ্ছো !
-না আমি তার জন্য কথা শুনাচ্ছি না।কথা শুনাচ্ছি এর জন্য যে আমি যতবার ফুলের দিকে তাকাচ্ছি তুই হেসে হেসে ফ্রিতে এন্টারটেইনমেন্ট নিচ্ছিস।এই যে ফুলের সাথে কথা বললাম সেটাও কান পেতে শুনলি।তাই সেই প্রেক্ষিতেই কথা গুলো বললাম।
-ওকে আমি চোখ ও বন্ধ করছি, কানও বন্ধ করছি।আমি আর কিছু দেখে হাসবোও না শুনবোও না।
-হুম তাই ই কর।আর তুই ওকে নাম ধরে ডাকবি না।
-কেনো?
-কারণ ও তোর ভাবী হবে।বড় ভাইয়ের বউকে নাম ধরে ডাকে কেউ?
অনু হেসে দিয়ে বললো,
-ভাইয়া আগে বিয়ে করো তারপর দেখা যাবে।
অভ্র ভ্রু বাঁকিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে রইলো।
একটু পর পর পেছনের দিকে হেলান দিয়ে দিয়ে দুজনে চোখা চোখি করেই যাচ্ছে।
খুব দ্রুত হলেও দুজনের ভেতরের অনুভুতি গুলো সত্য।যত সময় যাচ্ছে একজন আরেকজনের অনুভুতির গভীরে চলে যাচ্ছে।মুখ ফুটে বলতে না পারলেও চোখ গুলো কথা লুকায় না।

তিনটার পরে বরযাত্রী কনের বাড়ি পৌঁছালো। গাড়ি থেকে নামতেই বিয়েবাড়ির চাঁদা দেয়ার জন্য আটক হলো বরযাত্রী। মানে সামনে গেট আটকে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তীর বান্ধুবী কাজিনরা।
আশিকের পাশে ওর বন্ধুরা আর আকাশরা সবাই দাঁড়ালো,আশিকের এক বন্ধু কনে পক্ষের মেয়েদের টিজ করে বললো,
-দেশ টা উন্নত হয়েছে ঠিকি কিন্তু কুসংস্কার গুলো এখনো দূর হয় নি।এগুলোর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া দরকার।

অপর পাশ থেকে এক মেয়ে বললো,
-তা কি অ্যাকশন নেবেন বেয়াই? বলেন দেখি শুনি আমরা।
-ভালোই ভালোই ভেতরে ঢুকতে দাও না হলে,এই যে গেটের সামনে তোমরা যতোগুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছো,সব কটাকে আমরা ছেলেরা তোলে নিয়ে যাবো।
-ইম্মম্মহ বললেই হলো,আমরা কতো জন মেয়ে দেখেছেন?
আকাশ উত্তরে বললো,
-আমরা কতোজন ছেলে সেটা দেখেছো?
-ও বেয়াই কিপ্টামী কইরেন না।আমাদের হক দিয়ে দেন না হলে যেতে দেবো না।
-যেতে দেবে কি করে? আমরা তো তোমাদের তুলেই নিয়ে যাবো!তুলবো?
-তুলে কোথায় নিয়ে যাবেন?
-কেনো তোমাদের বোনকে যেখানে নেয়া হবে সেখানেই নিয়ে যাবো। গণবিবাহ হবে আজকে।
-তারপর গিয়ে দেখবো সতীন দাঁড়া করে রেখেছেন।
-সমস্যা নেই আমরা সবাই ই সিংগেল । বিয়ে তো দূরে থাক কেউ প্রেম ও করিনি একটা।
-হয়েছে হয়েছে চাপাবাজি থামিয়ে কাজের কাজ করুন।

একের পর কথায় কথায় মেয়েদের সাথে তর্কাতর্কি করার পর দশ হাজার টাকা হাতে দিয়ে বরকে নানান রকম মিষ্টি শরবত খাইয়ে আপ্যায়ন করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হলো বরযাত্রীকে।

ভেতরে প্রবেশ করার পর সবার আদর আপ্যায়ন শুরু হয়ে গেলো।ফুল ওর ফুপি বড়মা,মামীর সাথে গিয়ে প্রথমেই অবন্তীর সাথে দেখা করে এলো।অবন্তী সেজেগুজে বসে আছে,তবে একটু মন মরা হয়ে। ফুলকে দেখে ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা গেলো।

বর পক্ষের মেহমানদের খাবার দাবারের আয়োজনটা বেশ রমরমা করেছে,তাদের তদারকি ছেলেরা করলেও আশিক আর ওর ভাই ব্রাদারদের জন্য আলাদা রকম আয়োজন। আশিকের শালীরা সমস্ত কাজ কর্ম করে যাচ্ছে, বরের হাত ধোয়ানো থেকে শুরু করে খাবার সার্ভ করা।

ফুল আশিকের পাশে বসে আছে নিজে আগে না খেয়ে বোনকে খাইয়ে দিচ্ছে আশিক।ফুল বসে বসে খাচ্ছে এমন সময় খেয়াল করলো অভ্র খাওয়া বাদ দিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।ফুল কিছু না বলে নজর ফিরিয়ে নিলো।

বিকেল সাড়ে চারটা বাজে, কেউ কেউ গল্প করছে কেউ আবার বাড়ির বাইরে গিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে।কিছুক্ষণ পর বিয়ে পড়ানো হবে।

ফুল চেয়ারের মধ্যে জোড়াশীন পেতে বসে আছে পাশেই অনু বর্ষা, মিনা ।কিছুক্ষণ পর অভ্র আর কাব্য এসে ওদের সামনে বসলো।
ফুল অভ্রর দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেনো?
-কখন?
-খাওয়ার সময়।
অভ্র উত্তর দিতে গিয়েও থেমে গেলো, কি মনে করে যেনো অভ্র যেটা বলার সেটা না বলে অন্যরকম উত্তর দিলো,
-না দেখলাম তোমার লিপস্টিকটার মধ্যে কি উপকরণ আছে তুমি খাবার খাওয়ার সময় ওটা যেমনকার তেমনই ছিলো!
– ওহ এটাতে বার্জার ওয়াল পেন্টিং কালার মেশানো তাই কিছু হয় নি।

অনু ফিক করে হেসে দিলো,অভ্র চোখ ঘুরিয়ে অনুর দিকে তাকালো।পাশে কাব্য কিছুই বুঝলো না মাথার উপর দিয়ে গেলো সব।অভ্র ফুলের সাথে এতো ফ্রিলি কথা বলছে ভেবে! মনে একটু সন্দেহ হলো কেমন যেনো,

-অভ্রর দিকে কড়া নজর রাখতে হবে তো।ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছো ভায়া!টাংগাইল আসার আগ অব্ধিও অন্য অভ্র ছিলো।যা এক্সপ্রেশন দেয়ার কথা সেটা দেখতে পারছি না।আর কাল সকাল থেকে খেয়াল করছি অভ্র বাবু ফুলের এক্টিভিটিস গুলো ভালোই ফলো করছে।আমাদের অভ্র বাবুতো মেয়েদের দিকে নজর দেয়ার লোক না। এখন আবার পুতুলের লিপস্টিক নিয়ে পড়েছে।বাপরে কত গভীরে! অনুর দিকে তাকালে ওকেও সন্দেহ হচ্ছে। অনু সব সময় ফুলের সাথেই থাকে,আর ফুলের সাথে অভ্রর বিহেভিয়ার গুলো অই ই ভালো নোটিস করেছে ।অনু প্রচন্ড চালাক মেয়ে,কিছু বুঝলেও না বুঝার ভান করে থাকতে পারে এমন নিখুঁত ভাবে কেউ কিচ্ছুটি বুঝতে পারে না।আর ওর সামনে থেকে কোনো কিছু এড়িয়ে যাওয়ার না।আই থিংক অনু সবটা জানে। খুব বেশি চালাক মানুষ গুলো ভাবে তাদের চালাকি কেউ বুঝে না!অনুকে ধরলেই অভ্রর ভেতরের কাহিনী জানতে পারবো।ভাই অভ্র তোমার মুখ দিয়ে তো আমি স্বীকার করাবোই তোমার ভেতরর কি চলছে!(মনে মনে)

-ভাই কাব্য জানি তোমার মনে সন্দেহের কুশিকাটা বুনছো!বুনো বুনো যতো সন্দেহ করবে ততো ভালো একটা পর্যায় সত্যিটা জেনে যাবে। আমার কষ্ট করে কিছু বলতে হবে না।আর অনুর পেটে পাথর রেখেও কিচ্ছুটি বের করতে পারবে না,কারণ অনু আমার বোন!সব প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং তোমার সামনে দিয়ে ঘুরবে কাব্য ।লাভ ইউ ব্রো তোমার সাথে টাংগাইলে না এলে আমি তো আমার হুরের দেখা পেতাম ই না।আর সরি এতো বছর আমার হুরের টপিক শুনে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আর বিরক্ত হওয়ার জন্য!

কাব্যর তাকিয়ে থাকার ধরণ দেখেই অভ্র বুঝে গেছে কাব্য মনে মনে কি ভাবছে।আর ঠোঁটে বাঁকা হাসি লাগিয়ে মনে মনে কথা গুলো সাজালো অভ্র ।

বিকেল পাঁচটার দিকে আসরের নামাজের পর আশিকের বিয়ে পড়ানো হলো।বর কনে কবুল বলে বিয়ে পর্ব শেষ হতেই মোনাজাত শুরু হলো। এবার অভ্র আর ফুল পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে।খানিকটা ফুলের দিকে ঘাড় হেলান দিয়ে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে মোনাজাত তোলে অভ্র বলতে লাগলো
-হে আল্লাহ নেক্সট যেনো নিজের বিয়ে খেতে পারি একটু দেখো ।বছর বছর পরের বিয়ের দাওয়াত খেতে ভালো লাগে না।

ফুল অভ্রর প্রত্যেক কথা মজার ছলেই নিচ্ছে, ওর ধারণা অভ্র এগুলো মজা করে ফুলকে খেপানোর জন্য বলছে।তাই প্রতিবারই হেসে দেয় খিলখিল করে । কিন্তু অভ্র তো ওকে ইন্ডাইরেক্টলি প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে একটু মজার ছলে, যাতে ফুল অভ্রকে পছন্দ না করলেও কিছু বলতে না পারে।

সন্ধ্যার পর কনে বিদায় হলো।সবাই টাংগাইলে যাওয়ার পথে রওনা হলো।আগের নিয়মেই গাড়িতে বসলো।তবে এবার একটু উল্টা পাল্টা হলো,ফুল অনু দুজনেই বায়না ধরেছে জানালার পাশে বসবে,কারণ রাতের বেলা এলাঙ্গা থেকে ফেরার রাস্তা টা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর লাগে।বাধ্য হয়ে অভ্র ওদের মাঝখানে বসে। অভ্র পাশে বসার পর থেকে কেনো জানি ফুলের ভেতরটাতে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।অভ্রর ভেতরেও কেমন আন ইজি ফিল হচ্ছে নিজের অজান্তেই ।যদিও কারো গায়ের সাথে কারো টাচ লাগছে না তারপরেও দুজনের ভেতর এক রকম নার্ভাস ফিল হচ্ছে।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here